কে
১।
সকাল ৭টা বাজার একটু পরেই দোকানে পৌঁছে গেল প্রীতম। আজ একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছে সে, কারণ ঘরে বৌয়ের মেজাজ তিন-চার রকম হয়ে আছে, এখন ঘরে থাকা আর বাঘের খাঁচায় থাকা প্রায় সমান কথা। এমনিতে ওর বৌয়ের মতো ভাল মানুষ খুব কম আছে বলেই ওর ধারনা, কিন্তু রেগে গেলে এ ভাল মানুষটাই এমন বাঘিনী হয়ে যায় কি করে, সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেনা সে।
.
লন্ড্রির দোকান। সব কাজ ও একাই করে। বিশ্বস্ত লোক পাচ্ছেনা বলে কোন কাজের ছেলে রাখতে পারছেনা ও। আবার নিজের ছেলেটারও এসব কাজে টান নেই। পৃথিবীটা চোখের সামনেই তরতর করে বদলে যাচ্ছে। আজকালকার ছেলেমেয়েদের বাবা-মায়ের প্রতি ভক্তি বলে কিছু নেই।
.
বাইরের লোহার গেটটার তালা খুলে ভিতরের ছোট গেটটাও খুলল ও। মেঝেটা ফুল-ঝাড়ু দিয়ে সাফ-সুতরো করে নিয়ে ক্যাশে বসবে ঠিক এমন সময় একজন কাস্টমার আসল দোকানে। সোহেল ভাই। পরনে টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট আর মাথায় একটা ক্যাপ পরে আছেন ওনি। রোগা আর দুর্বল মনে হচ্ছে ওনাকে।
.
আমার শার্টগুলো কি নিতে পারব? জানতে চাইলেন সোহেল ভাই।
.
"আমি মাত্র দোকান খুলতেছি সোহেল ভাই।" প্রিতম বলল,"কাপড় ডেলিভারি দেয়ার ডেইট কখন?"
.
"আজ"
.
পরীক্ষা করে প্রিতম দেখল, সোহেল ভাইয়ের কথা ঠিকই আছে। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, কাপড় ডেলিভারির ডেট। কাপড় ধোলাই এর দামও আগাম পরিশোধ করেছেন সোহেল ভাই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে শার্টগুলো দোকানে আসবে বিকেল ৪টার পর। তাই তাঁকে ৪টার পরে যোগাযোগ করতে বলল প্রিতম।
.
"পুরো রাত হেঁটে হেঁটে অনেক কষ্ট করে এসেছি। আবার আসা সম্ভব হবে না আমার পক্ষে।" হতাশ কণ্ঠে বললেন সোহেল ভাই।
.
সোহেল ভাইয়ের কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেল প্রিতম! পুরো রাত হাঁটার কি আছে? ওনার বাসা থেকে লন্ড্রিতে হেঁটে আসতে সময় লাগে বড়জোর তিন মিনিট। 'আবার আসা সম্ভব হবে না' এর মানেই বা কী? পাগল-টাগল হয়ে গেলেন নাকি সোহেল ভাই!
.
প্রিতমের সবকিছু কেমন অদ্ভুত লাগছে। সোহেল ভাই যে টাইপের মানুষ এগারোটা বাজার আগে ঘুম ভাঙারই কথা না, অথচ সকাল সাতটায় এসে কী সব উল্টো পালটা বকছেন।
.
সোহেল ভাই যখন দোকান ছেড়ে যাচ্ছেন তখন প্রিতম জানতে চাইল,শার্টগুলো পৌছলে ফোন করতে হবে কিনা? কিন্তু কোন উত্তর না দিয়েই চলে গেলেন সোহেল ভাই।
২।
বিকেল ৪ টার দিকে আজকের তারিখের ডেলিভারির কাপড় গুলো এসে পৌছল। প্রিতম প্রথমেই সোহেল ভাইয়ের কাপড়গুলো ইস্ত্রি করে নিল। সোহেল ভাই হচ্ছে এলাকার বড় ভাই টাইপ মানুষ। ওনাদের কাজগুলো আগেভাগে ঠিকঠাক করে রাখতে হয়।
.
ইস্ত্রি করা শেষ হলে সোহেল ভাইয়ের নাম্বারে একটা ফোন করল ও। কিন্তু ফোন রিসিভ করল রুবেল ভাই। রুবেল সোহেল ভাইয়ের আপন ছোট ভাই।
.
"আমি প্রিতম বলছি। সোহেল ভাইয়ের কাপড়গুলো রেডি হইছে, ওনি চাইলে নিয়ে যেতে পারেন"
.
"ভাইয়া তো এখন ক্লিনিকে!
.
"ক্যান কি হইছে! সকালেই তো তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে!
.
"আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে" বলল রুবেল ভাই, "গতকাল রাতে এগারোটার দিকে ওনাকে আমরা ক্লিনিকে নিয়ে আসি। হার্ট এটাক। কন্ডিশন সিরিয়াস। আপনার সাথে সকালে দেখা হওয়াটা একেবারেই সম্ভব নয়।"
হতভম্ব হয়ে গেল প্রিতম। এটা কী করে সম্ভব? রুবেল ভাই সত্য বলছেন, কিন্তু সকালবেলা সোহেল ভাইয়ের সাথে তার দেখা হওয়াটাও মিথ্যা নয়। ঘটনাটিকে যদি প্রিতম সত্যি হিসাবে মেনে নেয় তবে এর যুক্তিসংগত কোনো ব্যাখ্যা নেই।
৩।
রাত ১২টা।
নিজের বিছানায় শুয়ে আছে প্রিতম। গভীর চিন্তায় মগ্ন। স্কুলে পড়ার সময় গণিতের শিক্ষক নরেন স্যার কথায় কথায় বলতেন "বিপুলা এ ধরণীর কতটুকু জানি!" প্রিতমেরও মনে হচ্ছে মানুষ আসলে কিছুই জানতে পারেনি এ রহস্যময় পৃথিবীটা সম্পর্কে।
.
সোহেল ভাই মারা যান রাত নয়টার দিকে! বেঁচে থাকলে সোহেল ভাইয়ের সাথে এ ঘটনাটা নিশ্চয় আলোচনা করতো সে। কিন্তু সে সুযোগ পরম করুণাময় কোন এক রহস্যময় কারনে দেননি ওদের।
.
সকালে প্রিতমের সঙ্গে কে দেখা করেছে তা এক রহস্য হয়েই রয়ে গেল। বিভিন্ন পরিচিত মানুষ নিশ্চিত করেছেন শরীরের ওই অবস্থায় বিছানা ছেড়ে লন্ড্রিতে আসা সোহেল ভাইয়ের পক্ষে ছিল একেবারেই অসম্ভব।
.
প্রিতমের মাথার ভিতর বাজতেছে সোহেল ভাইয়ের বলা কথাগুলো - "পুরো রাত হেঁটে হেঁটে অনেক কষ্ট করে এসেছি। আবার আসা সম্ভব হবে না আমার পক্ষে।"
.
সত্যি কথাই বলেছিলেন সোহেল ভাই!
সকাল ৭টা বাজার একটু পরেই দোকানে পৌঁছে গেল প্রীতম। আজ একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছে সে, কারণ ঘরে বৌয়ের মেজাজ তিন-চার রকম হয়ে আছে, এখন ঘরে থাকা আর বাঘের খাঁচায় থাকা প্রায় সমান কথা। এমনিতে ওর বৌয়ের মতো ভাল মানুষ খুব কম আছে বলেই ওর ধারনা, কিন্তু রেগে গেলে এ ভাল মানুষটাই এমন বাঘিনী হয়ে যায় কি করে, সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেনা সে।
.
লন্ড্রির দোকান। সব কাজ ও একাই করে। বিশ্বস্ত লোক পাচ্ছেনা বলে কোন কাজের ছেলে রাখতে পারছেনা ও। আবার নিজের ছেলেটারও এসব কাজে টান নেই। পৃথিবীটা চোখের সামনেই তরতর করে বদলে যাচ্ছে। আজকালকার ছেলেমেয়েদের বাবা-মায়ের প্রতি ভক্তি বলে কিছু নেই।
.
বাইরের লোহার গেটটার তালা খুলে ভিতরের ছোট গেটটাও খুলল ও। মেঝেটা ফুল-ঝাড়ু দিয়ে সাফ-সুতরো করে নিয়ে ক্যাশে বসবে ঠিক এমন সময় একজন কাস্টমার আসল দোকানে। সোহেল ভাই। পরনে টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট আর মাথায় একটা ক্যাপ পরে আছেন ওনি। রোগা আর দুর্বল মনে হচ্ছে ওনাকে।
.
আমার শার্টগুলো কি নিতে পারব? জানতে চাইলেন সোহেল ভাই।
.
"আমি মাত্র দোকান খুলতেছি সোহেল ভাই।" প্রিতম বলল,"কাপড় ডেলিভারি দেয়ার ডেইট কখন?"
.
"আজ"
.
পরীক্ষা করে প্রিতম দেখল, সোহেল ভাইয়ের কথা ঠিকই আছে। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, কাপড় ডেলিভারির ডেট। কাপড় ধোলাই এর দামও আগাম পরিশোধ করেছেন সোহেল ভাই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে শার্টগুলো দোকানে আসবে বিকেল ৪টার পর। তাই তাঁকে ৪টার পরে যোগাযোগ করতে বলল প্রিতম।
.
"পুরো রাত হেঁটে হেঁটে অনেক কষ্ট করে এসেছি। আবার আসা সম্ভব হবে না আমার পক্ষে।" হতাশ কণ্ঠে বললেন সোহেল ভাই।
.
সোহেল ভাইয়ের কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেল প্রিতম! পুরো রাত হাঁটার কি আছে? ওনার বাসা থেকে লন্ড্রিতে হেঁটে আসতে সময় লাগে বড়জোর তিন মিনিট। 'আবার আসা সম্ভব হবে না' এর মানেই বা কী? পাগল-টাগল হয়ে গেলেন নাকি সোহেল ভাই!
.
প্রিতমের সবকিছু কেমন অদ্ভুত লাগছে। সোহেল ভাই যে টাইপের মানুষ এগারোটা বাজার আগে ঘুম ভাঙারই কথা না, অথচ সকাল সাতটায় এসে কী সব উল্টো পালটা বকছেন।
.
সোহেল ভাই যখন দোকান ছেড়ে যাচ্ছেন তখন প্রিতম জানতে চাইল,শার্টগুলো পৌছলে ফোন করতে হবে কিনা? কিন্তু কোন উত্তর না দিয়েই চলে গেলেন সোহেল ভাই।
২।
বিকেল ৪ টার দিকে আজকের তারিখের ডেলিভারির কাপড় গুলো এসে পৌছল। প্রিতম প্রথমেই সোহেল ভাইয়ের কাপড়গুলো ইস্ত্রি করে নিল। সোহেল ভাই হচ্ছে এলাকার বড় ভাই টাইপ মানুষ। ওনাদের কাজগুলো আগেভাগে ঠিকঠাক করে রাখতে হয়।
.
ইস্ত্রি করা শেষ হলে সোহেল ভাইয়ের নাম্বারে একটা ফোন করল ও। কিন্তু ফোন রিসিভ করল রুবেল ভাই। রুবেল সোহেল ভাইয়ের আপন ছোট ভাই।
.
"আমি প্রিতম বলছি। সোহেল ভাইয়ের কাপড়গুলো রেডি হইছে, ওনি চাইলে নিয়ে যেতে পারেন"
.
"ভাইয়া তো এখন ক্লিনিকে!
.
"ক্যান কি হইছে! সকালেই তো তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে!
.
"আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে" বলল রুবেল ভাই, "গতকাল রাতে এগারোটার দিকে ওনাকে আমরা ক্লিনিকে নিয়ে আসি। হার্ট এটাক। কন্ডিশন সিরিয়াস। আপনার সাথে সকালে দেখা হওয়াটা একেবারেই সম্ভব নয়।"
হতভম্ব হয়ে গেল প্রিতম। এটা কী করে সম্ভব? রুবেল ভাই সত্য বলছেন, কিন্তু সকালবেলা সোহেল ভাইয়ের সাথে তার দেখা হওয়াটাও মিথ্যা নয়। ঘটনাটিকে যদি প্রিতম সত্যি হিসাবে মেনে নেয় তবে এর যুক্তিসংগত কোনো ব্যাখ্যা নেই।
৩।
রাত ১২টা।
নিজের বিছানায় শুয়ে আছে প্রিতম। গভীর চিন্তায় মগ্ন। স্কুলে পড়ার সময় গণিতের শিক্ষক নরেন স্যার কথায় কথায় বলতেন "বিপুলা এ ধরণীর কতটুকু জানি!" প্রিতমেরও মনে হচ্ছে মানুষ আসলে কিছুই জানতে পারেনি এ রহস্যময় পৃথিবীটা সম্পর্কে।
.
সোহেল ভাই মারা যান রাত নয়টার দিকে! বেঁচে থাকলে সোহেল ভাইয়ের সাথে এ ঘটনাটা নিশ্চয় আলোচনা করতো সে। কিন্তু সে সুযোগ পরম করুণাময় কোন এক রহস্যময় কারনে দেননি ওদের।
.
সকালে প্রিতমের সঙ্গে কে দেখা করেছে তা এক রহস্য হয়েই রয়ে গেল। বিভিন্ন পরিচিত মানুষ নিশ্চিত করেছেন শরীরের ওই অবস্থায় বিছানা ছেড়ে লন্ড্রিতে আসা সোহেল ভাইয়ের পক্ষে ছিল একেবারেই অসম্ভব।
.
প্রিতমের মাথার ভিতর বাজতেছে সোহেল ভাইয়ের বলা কথাগুলো - "পুরো রাত হেঁটে হেঁটে অনেক কষ্ট করে এসেছি। আবার আসা সম্ভব হবে না আমার পক্ষে।"
.
সত্যি কথাই বলেছিলেন সোহেল ভাই!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
গোলাম মুস্তাফা ১১/১০/২০১৮ভাল
-
সালমা হক কলি ০৫/১০/২০১৮অসম্ভব ভালো লাগলো লেখাটি
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ০২/১০/২০১৮দারুণ !!!
-
ন্যান্সি দেওয়ান ৩০/০৯/২০১৮Nice poem.
-
আব্দুল হক ৩০/০৯/২০১৮বেশ লিখেছেন।
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ৩০/০৯/২০১৮ভালো।