www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রমিজ

১।
রাত ১২টা।

ইরার ফোনটা বেজে উঠল। ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে ভ্রুটা কুঁচকে উঠল ওর। আবার ঐ বিরক্তিকর ছেলেটা! ছেলেটার প্রবলেম কী! ঠিক রাত ১২টায় ফোন করতে হবে কেন? আশ্চর্য! তবে ছেলেটার ভয়েসটা শুনতে খারাপ না! মনে মনে হাসল ও।

কলটা রিসিভ করে বিরক্ত কন্ঠে বলল, "কেন প্রতিদিন ঠিক এ সময়ে আমাকে ফোন করে বিরক্ত করেন বলুন তো?"

"অন্যসময় আপনাকে নিরিবিলি পাওয়া যায়না, তাই এ সময় কল করি'' ছেলেটা বলল।"

'কতবড় বদমাইশ!' মনে মনে ভাবছে ইরা। নিরিবিলি পাওয়ার জন্য ফোন করা হচ্ছে!

ইরা যথাসম্ভব রাগী কন্ঠে বলল, "আমাকে নিরিবিলি পাওয়াটা আপনার দরকার কেন! কে আপনি?"

"আমি একজন মানুষ"

"সস্তা ফিলসফি আমার সঙ্গে কপচাবেন না। রাত ১২ টায় কল করে একটা মেয়েকে ডিস্টার্ব করছেন। আপনি মানুষ হন কি করে?"

"আপনি তো দেখছি প্রচুর রেগে আছেন। আমি অতোটা খারাপ মানুষ নয়, যতোটা ভাবছেন।"

"আমার ধারণা, আপনি অত্যন্ত খারাপ মানুষ, নইলে এত মানা করা সত্তেও প্রতিরাতে আপনি আমাকে এভাবে ডিস্টার্ব করতে পারতেন না।"

"আসলে আপনার সঙ্গে কথা বললে আমার ভাল, লাগে। কথা বলার পর শান্তির ঘুম হয়, আপনি আমার কাছে অনেকটা স্লিপিং পিলের মত,যে স্লিপিং পিলের কোন সাইড ইফেক্ট নেই"

ঠোঁট চেপে হাসল ও, মানতে হবে কথা বলতে জানে ছেলেটা। নইলে কবেই ব্লক করে দিত ব্যাটাকে। মুখে বলল, "কিন্তু আমি খুবই বিরক্ত হই আপনি কল করলে, প্লিজ আর কোনদিন এ সময় ফোন করবেন না।"

"তাহলে বলুন কখন ফোন করলে আপনি বিরক্ত হবেন না?"

"কোন সময়েই ফোন না করলে খুশি হব"

"কিন্তু আপনার সঙ্গে কথা না বললে যে আমার দিন কাটবেনা, পড়াশুনা হবেনা। সারারাত একটুও ঘুম হবেনা।"

"আমরা কেউ কাউকে চিনিনা জানিনা, তবু এরকম কথা বলছেন কেন?"

"আপনি আমাকে না চিনলেও না জানলেও আমি আপনার সবকিছু জানি"

চমকে উঠলো ইরা। ওর ধারণা ছিল ও এতদিন ধরে একটা অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলে আসছে। কিন্তু ছেলেটা বলছে ছেলেটা ওকে চেনে! এখন আফসোস হচ্ছে ওর। এ ছেলেটার সঙ্গে আরো সতর্ক হয়ে কথা বলা উচিৎ ছিল ওর। ইরা জিজ্ঞেস করল "কী জানেন, বলুন তো?"

"আপনার পুরো নাম নিশাত জাহান, ডাক নাম ইরা। আপনি ইকনমিকস নিয়ে সেকন্ড ইয়ার পড়ছেন। আপনার বাবার নাম 'আবুল মফিজ'। "পূর্ব-পশ্চিম" ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি পড়ান। তিনি একই সাথে আবুল এবং মফিজ হওয়া সত্ত্বেও অত্যন্ত বিদ্বান লোক!"

বাবার নাম নিয়ে রসিকতা করার সত্ত্বেও ছেলেটার বলার ভঙ্গীতে ইরার হাসি পেল। অনেক কষ্টে সে হাসি চেপে ধরে আছে।

কিন্তু ছেলেটার সবকথা মিলে যাচ্ছে দেখে ইরা অবাক হয়ে ভাবল, ছেলেটা তাদের সবকিছু জানে! কিন্তু কে হতে পারে? ইরা জিজ্ঞেস করল "এবার আপনার পরিচয় বলুন।"
"বলা যাবেনা"
"কেন?"
"সময় হলে বলব"
ইরার খুব রাগ হল। বলল "আপনি একজন কাপুরুষ"
ওপাশে চুপচাপ। ইরা বুঝতে পারছে ছেলেটা একটু কষ্ট পেয়েছে। তা পাক, তার সম্পর্কে সব জেনে বসে আছে অথচ নিজের সম্পর্কে কিছুই বলবেনা! - ফাইজলামি?

কিছুক্ষণ পর ইরা নরোম সুরে বলল, "আপনার নাম কী?

"ফয়সাল, ফয়সাল আহমেদ"

"বাবার নাম?

"বলা যাবেনা"

"ঠিকানা?"

"তাও বলা যাবেনা।"

"কেন?"

"বললাম তো বলা যাবেনা।"

"আপনি কি করেন?"

"আমি একজন এডভোকেট"

"আপনার বাবা কি করেন?"

"ওনিও একজন এডভোকেট। বাবার সাথে প্র‍্যাক্টিস করতেছি।"

"আপনি তো আইন পড়ছেন। আপনার কি মনে হয়? একটা মেয়েকে রাতে ফোন করে ডিস্টার্ব করা বেআইনি নয়?"

ওপাশে কিছুক্ষণ চুপচাপ। ইরা বলল, "কি ব্যাপার? চুপ করে আছেন যে?

ফয়সাল বলল, "আমার মনে হয় আপনাকে সত্য কথাটা বলার সময় এসে গেছে।"

"কী সত্য কথা?"

"আসলে আমি প্রায় দুবছর ধরে আপনাকে ভালবেসে আসছি। এবং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ে যদি করতে হয় আপনাকেই করব। জীবনসাথী বেছে নেয়া বেআইনি নয়।"

ইরা হতভম্ব হয়ে পড়েছে ছাগলটা বলে কী! ডাইরেক্ট বিয়ের কথা বলতেছে! ছেলেটার সাথে ফোনে কথা বলছে সাতদিনও হয়নি, অথচ এরই মধ্যে সে বিয়ের কথা বলে ফেলেছে! সাংঘাতিক ছেলে তো! অবশ্য ছেলেটা বলছে, দু'বছর ধরে ভালবেসে আসছে। তার মানে কথাটা যদি সত্যি হয়, ছেলেটা ভাল করেই চেনে ওকে! কিন্তু কে এই ছেলেটা?

২।

ইরা বলল, "আপনি আমাকে ভালবাসেন?"

"হ্যা, বাসি"

"বিয়ে করতে চান?"

"হ্যাঁ চাই।"

"ওকে। ভাল কথা, কোন সমস্যা নাই। এখন কথা হচ্ছে ফয়সাল সাহেব, আপনি আমাকে চিনেন, জানেন, দেখেছেনও - আমাকে আপনার ভাল লাগতেও পারে। কিন্তু আপনাকেও তো আমার ভাল লাগতে হবে নাকি? আপনার আইন কি বলে?"

"অফকোর্স। আমাকেও আপনার পছন্দ হতে হবে।"

"ধরেন যদি না হয়।"

"হবে।"

"কিভাবে বুঝলেন যে হবে?"

"কারন অলরেডি তুমি আমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছো। রাত ১২ বাজার আগে থেকেই তুমি আমার কলের জন্য অপেক্ষা করে থাকো। কল করতে না করতেই তুমি রিসিভ করে ফেলো ..."

ফয়সাল ছেলেটা যা বলছে তা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি, কিন্তু এমনটি হওয়ার তো কথা নয়! ও খুব বাস্তববাদী মেয়ে। যে সকল মেয়েরা এভাবে অজানা অচেনা ছেলের প্রেমে পড়ে যায়, তাদের সে স্রেফ ইডিয়ট মনে করত। ভাবতো এ মেয়েগুলো এত বোকা কেন? অথচ ও নিজেই এখন সেই একই রকম বোকামি করছে।

ইরার বলল, "হ্যা, আপনার কথা ঠিক, কিন্তু এটা স্রেফ নারীসুলভ কৌতুহলও হতে পারে। পারেনা?"

"হ্যাঁ পারে। কিন্তু তবুও আমার মন বলছে তুমি আমাকে পছন্দ কর কিংবা করতে শুরু করেছো।"

"ওকে! ধরা যাক আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ফয়সাল সাহেব - আপনি আমাকে দেখে শুনে ও সবকিছু জেনে পছন্দ করেছেন, এবং বিয়ে করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন বললেন। আমারও কী উচিৎ নয় আপনাকে দেখে এবং আপনার সবকিছু জেনে পছন্দ করা?"

"অফকোর্স।"

"আপনাকে দেখে যদি আমার ভাল না লাগে?"

"ভাল লাগবে।"

"এত কনফিডেন্স?"

"নিজের প্রশংসা করা ঠিক নয়। তবু বলছি, আমি সত্যিই হ্যান্ডসাম একটা ছেলে।"

ইরা মনে মনে বলল "কত বড় ছাগল নিজেকে নিজে হ্যান্ডসাম বলে"

ওপাশে হেসে উঠলো ফয়সাল।

"কি ব্যাপার হাসলেন কেন?"

"তুমি আমাকে ছাগল বলেছো আমি শুনে ফেলেছি।"

লজ্জা পেল ইরা। মনে মনে বলা কথাগুলো একটু জোরেই বলে ফেলেছিল সে।

ইরা বলল, "তাহলে বলুন স্বঘোষিত হ্যান্ডসাম ছেলেটার সাথে কখন ও কোথায় দেখা হবে?"

"কাল বলব। আজ অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পড়ুন। রাখছি।" তারপর ইরাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই লাইন কেটে দিল ফয়সাল।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে নানা কথা ভাবছে ইরা। প্রায় একমাস হয়ে গেছে কথা বলছে ছেলেটার সাথে। দু একটা মামুলি তথ্য ছাড়া তেমন কিছুই জানতে পারেনি ছেলেটা সম্পর্কে। কোন সন্দেহ নেই ছেলেটা চার্মিং। আর এটাই ভয়ের কথা। সকল চার্মিং ছেলে ফ্রড নয় এটা সত্যি, কিন্তু কেন কে জানে ফ্রড ছেলেগুলো বেশ চার্মিং হয়!

ফয়সাল ছেলেটাকে ফ্রড মনে হচ্ছে ওর। না, ঐ ছেলের সাথে দেখা করা উচিৎ হবে না।

৩।

মাঝারি মানের একটা রেস্টুরেন্ট, তবে নতুন। ইরা ফয়সালের জন্য ওয়েট করছে। আজই ওদের প্রথম দেখা হবে। আসলে ভুল বলা হল, ফয়সাল তো আগেই দেখেছে। এটা আসলে ইরার ক্ষেত্রে প্রথম দেখা।

কোথায়, কখন কিভাবে দেখা হবে সব ব্যাপারে ইরাই ডিসিশন নিছে। ইরা একজন বন্ধু সাথে করে আনবে বলেছিল, ফয়সাল তাতে আপত্তি করেনি। কিন্তু ইরা সঙ্গে করে কাওকে আনেনি। কাওকে যে আনবে না সেটা ফয়সালকে জানায়ওনি।

ফোনে ফেসবুকে ঘটে যাওয়া প্রেমের গল্পগুলো ওর পছন্দ হত না। কিন্তু নিজের জীবনেই এ অপছন্দের গল্পটা ঘটে গেল। মাঝে মাঝে বিশ্বাসই হতে চায়না একটা মানুষকে না দেখেই সে শতবার "আই লাভ ইউ" বলে ফেলেছে। অন্য কেউ এ গল্প তাকে শুনালে সে চুড়ান্ত বিরক্ত হত।

ইরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে যে ফয়সাল দেখতে যেমনই হোক সে মেনে নেবে। তাছাড়া চোখের ভাল লাগাটা আকর্ষণ মাত্র, ভালবাসা নয়। আর যেভাবেই ঘটুক না কেন, ফয়সালকে এখন সে ভালবেসে ফেলেছে।


রেস্টুরেন্টে একটা যুবককে ঢুকতে দেখা গেল। যুবকটি ইরার দিকে তাকিয়ে হাসতেই ইরা বুঝে গেল এই ফয়সাল। নিজের সম্পর্কে একটুও বাড়িয়ে বলেনি ফয়সাল, বরং কমই বলেছে।ফয়সাল সুঠামদেহী, দীর্ঘকায়, ঋজু এক যুবক - দেখতে ভারি সুদর্শন। আর কি চমৎকারভাবেই না হাসল ফয়সাল! ওর সাথে ফোনে কথা না হয়েও এমনিতেই যদি দেখা হত, প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যেত ইরা।

ফয়সাল বেশ স্বতঃস্ফুর্ত ভাবেই ইরার সামনের চেয়ারে গিয়ে বসল। এতক্ষণ ইরা একটু অভিভূত হয়ে ছিল। ঘোরটা কেটে গেলে পর ওর একটু একটু লজ্জা লজ্জা লাগছে। ফয়সালের চোখের দিকে তাকাতেই পারছেনা ও।

"কি ব্যাপার এত লজ্জা পাচ্ছো কেন। আমরা অপরিচিত নই। নাকি অপরিচিত?" ফয়সাল বলল।

"না, তা নয়। মানে... এভাবে কোন ছেলের সাথে এই প্রথম..."

"কেন? ভার্সিটিতে তো তুমি অনেকের সাথেই কথা বল।"

"এটা আর ওটা এক হল?... বাহবা এত খবর রাখো।"

"রাখতে তো হয়। হবু বৌ বলে কথা।"

ইরা অবাক না হয়ে পারেনা, ফয়সাল কত সহজে ওকে বৌ বলে ফেলেছে।

"এখনো বিয়ে করোনি"

"মা বাবার একমাত্র ছেলে আমি ওরা জাস্ট আমার একটা হ্যার অপেক্ষা করছে। বুঝছো? কালই মাকে তোমার ছবি দেখাবো। ধরে নাও আগামী মাসে আমাদের বিয়ে! বিয়ের তারিখ হবে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি। আর দেড় মাসের মতো আছে মনে হয়।"

"তোমার ফ্যামিলি যদি পছন্দ না করে?"

"তোমাকে পছন্দ না করাটা পসিবল না। তুমি হচ্ছো আমার দেখা দ্বিতীয় সুন্দরতম নারী।"

"প্রথম কে!?"

"প্রথমও তুমি, তবে যখন হাসো শুধু তখন। না হাসলে দ্বিতীয়।"

"ইন্টারনেট থেকে লাভ এস এম এস কপি করছো না?"

"হ্যা, বাট অনেস্ট কপি।"

"একটা কথা তোমাকে বলা দরকার" একটু হেসিটেট করছে ইরা, "তুমি তো জানো আমাদের হোমটাওন নোয়াখালী। আমি যতদূর জানি চট্টগ্রামের লোকেরা আমাদের পছন্দ করেনা। বইঙ্গা বলে। তোমাদের ফ্যামিলিতে সত্যি প্রবলেম হবে না তো? তুমি কি তাদের জানিয়েছ ব্যাপারটা?"

"আরে জানানোর কী আছে। আমাদের ফ্যামিলি যথেষ্ট ব্রড-মাইন্ডেড। টেনশন করো না তো!

"প্লিজ তবু তুমি তোমাদের ফ্যামিলিকে ব্যাপারটা জানাও"

"ওকে, জানাবো!"

৪।

ফয়সাল তার ফোনে ইরার ছবি দেখাচ্ছিল মা বাবাকে। মা বাবা দুজনই খুশি। বাবা বলল, "মেয়ে তো মাশাল্লা খুবই সুন্দর!"

মা বলল, "আমার ফয়সাল কম সুন্দর নাকি?... ওদেরকে বেশ মানাবে।"

বাবা বললেন, "ইরার বাবার নাম কি? কি করেন?"

ফয়সাল বলল, "ওনার নাম আবুল মফিজ। "পূর্ব পশ্চিম ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি পড়ান"

"আবুল মফিজ? মানে অধ্যাপক আবুল মফিজ?"

"হ্যা বাবা। তুমি চেন নাকি?"

"ওরা তো নোয়াখালীর লোক!" বাবার চেহেরা পাল্টে গেল।

"নোয়াখালীর লোক তো কি হয়েছে?" ফয়সাল বলল

"কি হয়েছে মানে? মা মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন, "এ মেয়ের সাথে তোর বিয়ে হবেনা। তোর বাবা চিটাগাং বার এসোসিয়েশনের সভাপতি,এরকম একজন স্বনামধন্য এডভোকেটের ছেলে যদি নোয়াখালীর মেয়ে বিয়ে করবে মান সম্মান কিছু থাকবে?"

"এখানে মান সম্মানের কি আছে বুঝলাম না? ইরার বাবাও একজন সম্মানিত লোক।"

"সবাই বলবে ফয়সাল একটা বইঙ্গা বিয়ে করছে!"

"এসব কি ধরনের শব্দ মা! আর লোকে তো কত কিছুই বলে তাতে কি আসে যায়?"

"আমাদের আসে যায়। এ বিয়ে হবেনা"

"মা আমি ইরাকে কথা দিসি"

বাবা বললেন, "এ বয়সে এরকম কথা দেয়া নেয়া চলতে থাকে। আর আজকালকার ছেলেমেয়েদের জন্য এসব কোন ব্যাপার না।"

"আমার জন্য ব্যাপার বাবা। আমি অন্যদের মত নই।"
.

ইরার আশংকা এভাবে সত্যি হয়ে যাবে কল্পনাও করতে পারেনি ফয়সাল। বাবা মাকে অত্যন্ত আধুনিক আর ব্রড-মাইন্ডেড ভাবতো সে। অথচ সামান্য নোয়াখালী-চিটাগাং ইস্যু নিয়ে ওনারা যে এত হৈচৈ বাঁধিয়ে ফেলবে তা কে জানতো? গত সাতদিন ধরে বাবা-মাকে নানাভাবে বুঝিয়েছে ও, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। ওনার ওনাদের সিদ্ধান্তে অটল।

কিন্তু ফয়সালও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। বিয়ে যদি করতেই হয়, সে ইরাকেই করবে। এ ফেব্রুয়ারিতেই ইরাকে বিয়ে করবে ও। বিয়ের তারিখ ১৪-ই ফেব্রুয়ারি!

৫।

১৪ই ফেব্রুয়ারি।
ধানমন্ডি লেক, ঢাকা।

শেষ বিকেলের আকাশে ফিকে গোলাপি মেঘের ভেলা। চুপিচুপি সন্ধ্যা নামছে। গোলচত্বরের ওদিকে লেকের ধারে বসে আছে ওরা দুজন।

ইরা এখনো বিশ্বাসই করতে পারছেনা ওদের বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা মা ছাড়া ও বিয়ে করতে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলনা। কিন্তু ফয়সালকেও হারাতে চাচ্ছিল না ও। শেষে ফয়সালের সিদ্ধান্তই ওর সিদ্ধান্ত হল। ঢাকা পৌছার পর মাকে ফোনে সব জানিয়ে দিয়েছে ও। মা বাবার মনের এখন কি অবস্থা তা ভেবে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ওর।

ঢাকাতে ফয়সালের প্রচুর বন্ধু বান্ধব। বলতে গেলে ওরাই সব ব্যবস্থা করল। যতোটা সাদামাটা বিয়ে হবে ভেবেছিল ততটা হয়নি। আগেভাগেই বাফেট রেস্টুরেন্টে ১৫০ জন লোকের পার্টি আয়োজন করার ব্যবস্থা করেছে ওর বন্ধুরা। সুবাই খুব হৈচৈ করল। হুলুস্থুল ব্যাপার!

বেশ অনেক্ষন হয় আড়ালে চলে গেছে সূর্য। লোকজনও কমে এসেছে এদিকটায় এখন। চারদিকে একধরনের নিস্তব্ধতা। এমন সময় ইরার চোখে জল এল। বাবা মাকে খুব মনে পড়ছে ওর।

ফয়সাল ওর হাত মুঠোয় পুরে নিল, বলল, "বাবা মার জন্য খারাপ লাগছে?"

ইরা জবাব দিলনা, তবে ফয়সাল যে ওর মনের কথা পড়তে পেরেছে তা জেনে ভাল লাগল ওর।

ফয়সাল বলল, "সব ঠিক হয়ে যাবে ... নিজেরা নিজেরা বিয়ে করছি তো - অনেক ঝামেলা ফেস করতে হবে। তবে আমি কথা দিচ্ছি কোন সমস্যাই তোমাকে একা ফেস করতে হবেনা। আমি তোমার পাশে থাকবো। সমস্ত জীবন পাশে থাকবো।"

ইরা ফয়সালের কাঁধে মাথা রাখল। ফয়সাল ইরার হাত এখনো মুঠো করে ধরে আছে।ফয়সাল মনে মনে বলল,
"Someday,
Even If The Sun Forgets To Rise
Or The Flowers Forget To Bloom
I Will Be There For You.
This Is My Promise To You!"
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৩৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৮/০৯/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast