এক্সপ্লয়টেশন
১।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা।
আবছা আলো আছে এখনো, তবে ঝুপ করে অন্ধকার নামতে আর দেরি নেই। আশেপাশের দোকানগুলোতে বাতি জ্বলে উঠেছে অনেক আগেই।
রাস্তা থেকে তিন/চার হাত দূরে একজন অন্ধলোক দাঁড়িয়ে আছেন। পরনে সাদা পাঞ্জাবী-পাজামা, ডানহাতে সাদা ছড়ি, চোখে কালো চশমা। লোকটার দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গী বলে দেয়, লোকটা রাস্তা পার হতে চাচ্ছে। অপেক্ষা করছে - একজন দয়ালু মানুষ হয়তো এগিয়ে আসবে আর ওনার হাত ধরে পার করিয়ে দেবে রাস্তাটা।
রাস্তাটা অবশ্য তেমন বিপজ্জনক নয়, দুদিকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বিকিকিনি হয় বলে মানুষজনের ভীড় লেগেই থাকে। এ রোডে গাড়ির স্পিড তাই কমিয়েই রাখে ড্রাইভাররা। তবু অন্ধ মানুষ বলে কথা - রাস্তা পার হতে গেলে কারো না কারো সাহায্য লাগেই।
বেশিরভাগ মানুষের অবজার্বেশন ক্ষমতা খুবই কম, দয়া মায়া আরো কম। অন্ধ লোকটাকে কেউ যেন দেখছেইনা। এমনকি কেউ খেয়ালই করছেনা যে এই এলাকায় এ অন্ধ লোকটাকে আগে কখনো দেখাই যায়নি!
একুশ/বাইশ বছরের এক তরুণ অন্ধ লোকটার কাছে এসে দাঁড়ালো। বলল, "আপনি কি রাস্তা পার হবেন? আমি আপনাকে হেল্প করি?"
"না, না হেল্প লাগবেনা। আপনাকে ধন্যবাদ। আসলে আমার একজন বন্ধু আসবে, ওর জন্য অপেক্ষা করছি আমি।"
"ও আচ্ছা, আচ্ছা! তাহলে তো ভালই হল। আমি আসি তাহলে, ভাল থাকবেন।"
অন্ধ লোকটি দাঁড়িয়েই আছে, কারো জন্য অপেক্ষা করছে ...
২।
চারপাশটা অন্ধকার হয়ে গেছে অনেক আগেই। অন্ধ লোকটা দাঁড়িয়ে আছে এখনো।
নবারুণ পত্রিকার রিপোর্টার ওসমান দূর থেকে খেয়াল করল - একজন অসহায় অন্ধ লোক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন অথচ কেউ তাকে সাহায্য করছেনা। মানুষের নিষ্ঠুরতায় বিরক্ত হল ও।
অন্ধ লোকটির কাছাকাছি এসে একটু অবাক হল ওসমান। ঢিলেঢালা পাঞ্জাবী-পাজামাতেও অন্ধ লোকটির শরীরের মজবুত কাঠামোটা টের পাওয়া যাচ্ছে। দাঁড়ানোর ভঙ্গীতেও সৈনিকদের মতো কেমন যেন দৃঢ় একটা ভাব।
ওসমান অন্ধ লোকটির কাছে এসে বলল, "আপনি কি রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছেন?"
"হ্যাঁ"
ওসমান অন্ধ লোকটির বাম হাত ধরে বলল, "চলুন আমার সঙ্গে।"
অন্ধ লোকটি খুশি হল, বলল, "চলুন, আসলে দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। অপেক্ষা করছিলাম কেউ এসে যদি হেল্প করে!"
"আপনি মুখে বললেও তো পারতেন "
"তা পারতাম। কিন্তু যেচে হেল্প চাইতে আমার সঙ্কোচ হয়।"
কথা বলতে বলতে হাঁটছিল ওরা। রাস্তা পার হয়ে যাওয়ার পর ওসমান বলল, "এই তো আমরা এসে গেছি।"
"কিছু মনে করবেননা" বললেন অন্ধ লোকটি, "আসলে বৃষ্টি হয়েছে তো গত দুদিন। এখানে ওখানে নানা গর্তে পানি জমে গেছে। এই গলি দিয়ে মিনিট পাঁচেক এর পথ। বাসা পর্যন্ত যদি এগিয়ে দিতেন। যদি আপত্তি না থাকে আর কি।"
সাদা ছড়ি দিয়ে দেখিয়ে দেয়া অন্ধকার গলিটা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওসমান ভাবছে অন্ধ লোকটির সিক্স সেন্সের কথা। তার চোখে দৃষ্টি আছে তবুও এই গলি দিয়ে হাঁটতে মুশকিল হয়ে যাচ্ছে ওর, অথচ অন্ধ লোকটি নির্বিকার হেঁটে চলেছে। কেমন সুন্দর করে পানি-ভর্তি গর্তগুলো থেকে পা বাঁচিয়ে হাঁটছেন ওনি, যেন ওসমানের সাহায্য না পেলেও খুব একটা সমস্যা হতনা অন্ধ লোকটার।
কিছুদূর হেঁটে যাওয়ার পর রাস্তাটা হঠাৎ একটু বেশিই নির্জন হয়ে পড়েছে। কোন মানুষজন নেই, দোকান-পাট নেই। কেমন গা-ছমছমে পরিবেশ। ওসমান এই ভুতুড়ে পরিবেশকে একটু উষ্ণ করে তোলার জন্য বলল, "আপনার সিক্স সেন্স অনেক ভাল, আমি দেখে যতোটা না পথ চলতে পারছি, আপনি না দেখেও...
কথাটা শেষ করতে পারেনি ও, ওসমান লক্ষ্য করল, অন্ধ লোকটির ডান হাতে সাদা ছড়ির বদলে সাইলেন্সার লাগানো একটা পিস্তল। সে কিছু বুঝে উঠবার আগেই অন্ধ লোকটি ওসমানের মাথায় ঢুকিয়ে দিল পরপর তিনটে বুলেট। পুরো ঘটনাটা ঘটতে সময় লেগেছে মাত্র কয়েকটা সেকেন্ড!
রাস্তায় পড়ে থাকা ওসমানের মৃতদেহটার দিকে তৃপ্তির চোখে তাকিয়ে থাকল অন্ধ লোকের অভিনয় করা খুনীটা!
৩।
খুনের স্পট থেকে বেশ কিছুদূর হেঁটে এসে একটা সস্তা হোটেলে ঢুকে পড়ল খুনীটা। বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মেকাপের আলগা আবরণ টেনে খুলে নিল। পাঞ্জাবি পাজামা খুলে পরে নিল লেদার জ্যাকেট আর জিন্স প্যান্ট। মোবাইলে ডায়াল করল একটা বিশেষ নম্বরে।
"হ্যা কাজ হয়ে গেছে। দশদিন? হ্যা মানছি সময় একটু বেশি লেগেছে, কিন্তু আপনার ক্ষতি হওয়ার আগেই কাজটা শেষ করেছি; তাই না? তাছাড়া এ ধরণের কাজে প্রচুর ইনফরমেশন লাগে জানেন তো? যা হোক ডিল কমপ্লিট, কন্ট্রাক্টের বাকি টাকা আমার একাউন্টে জমা করে দেবেন।"
মনে মনে হাসছে খুনীটা। অন্ধ সাজার প্ল্যানটা কাজে লেগেছে। ওসমানকে ভাগে পাওয়া সহজ হচ্ছিল না। নানা রকম তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে ওকে - কোথায় যায় কখন যায়, কখন একা থাকে ইত্যাদি।
বিভিন্ন তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে আইডিয়াটা ক্লিক করে উঠে ওর মাথায়। তারপর যেমন প্ল্যান তেমন কাজ। খুনের স্পটে নিয়ে যাওয়াটা কঠিন হবে ভেবেছিল, কিন্তু হয়নি। অনায়াসে ওসমান চলে আসে ওর সাথে।
অন্ধের অভিনয় করাটা যে এভাবে কাজে লেগে যাবে সেটা ভেবে ক্রুর হাসি ফুটে উঠল ওর ঠোঁটে। কারণ ও খবর নিয়ে জেনেছিল ওসমান খুবই পরোপকাকারী আর প্রতিবন্ধীদের প্রতি সফটকর্নার আছে ওর, বিশেষ করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের প্রতি; কেননা রিপোর্টার ওসমানের বাবা ছিলেন অন্ধ!
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা।
আবছা আলো আছে এখনো, তবে ঝুপ করে অন্ধকার নামতে আর দেরি নেই। আশেপাশের দোকানগুলোতে বাতি জ্বলে উঠেছে অনেক আগেই।
রাস্তা থেকে তিন/চার হাত দূরে একজন অন্ধলোক দাঁড়িয়ে আছেন। পরনে সাদা পাঞ্জাবী-পাজামা, ডানহাতে সাদা ছড়ি, চোখে কালো চশমা। লোকটার দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গী বলে দেয়, লোকটা রাস্তা পার হতে চাচ্ছে। অপেক্ষা করছে - একজন দয়ালু মানুষ হয়তো এগিয়ে আসবে আর ওনার হাত ধরে পার করিয়ে দেবে রাস্তাটা।
রাস্তাটা অবশ্য তেমন বিপজ্জনক নয়, দুদিকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বিকিকিনি হয় বলে মানুষজনের ভীড় লেগেই থাকে। এ রোডে গাড়ির স্পিড তাই কমিয়েই রাখে ড্রাইভাররা। তবু অন্ধ মানুষ বলে কথা - রাস্তা পার হতে গেলে কারো না কারো সাহায্য লাগেই।
বেশিরভাগ মানুষের অবজার্বেশন ক্ষমতা খুবই কম, দয়া মায়া আরো কম। অন্ধ লোকটাকে কেউ যেন দেখছেইনা। এমনকি কেউ খেয়ালই করছেনা যে এই এলাকায় এ অন্ধ লোকটাকে আগে কখনো দেখাই যায়নি!
একুশ/বাইশ বছরের এক তরুণ অন্ধ লোকটার কাছে এসে দাঁড়ালো। বলল, "আপনি কি রাস্তা পার হবেন? আমি আপনাকে হেল্প করি?"
"না, না হেল্প লাগবেনা। আপনাকে ধন্যবাদ। আসলে আমার একজন বন্ধু আসবে, ওর জন্য অপেক্ষা করছি আমি।"
"ও আচ্ছা, আচ্ছা! তাহলে তো ভালই হল। আমি আসি তাহলে, ভাল থাকবেন।"
অন্ধ লোকটি দাঁড়িয়েই আছে, কারো জন্য অপেক্ষা করছে ...
২।
চারপাশটা অন্ধকার হয়ে গেছে অনেক আগেই। অন্ধ লোকটা দাঁড়িয়ে আছে এখনো।
নবারুণ পত্রিকার রিপোর্টার ওসমান দূর থেকে খেয়াল করল - একজন অসহায় অন্ধ লোক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন অথচ কেউ তাকে সাহায্য করছেনা। মানুষের নিষ্ঠুরতায় বিরক্ত হল ও।
অন্ধ লোকটির কাছাকাছি এসে একটু অবাক হল ওসমান। ঢিলেঢালা পাঞ্জাবী-পাজামাতেও অন্ধ লোকটির শরীরের মজবুত কাঠামোটা টের পাওয়া যাচ্ছে। দাঁড়ানোর ভঙ্গীতেও সৈনিকদের মতো কেমন যেন দৃঢ় একটা ভাব।
ওসমান অন্ধ লোকটির কাছে এসে বলল, "আপনি কি রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছেন?"
"হ্যাঁ"
ওসমান অন্ধ লোকটির বাম হাত ধরে বলল, "চলুন আমার সঙ্গে।"
অন্ধ লোকটি খুশি হল, বলল, "চলুন, আসলে দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। অপেক্ষা করছিলাম কেউ এসে যদি হেল্প করে!"
"আপনি মুখে বললেও তো পারতেন "
"তা পারতাম। কিন্তু যেচে হেল্প চাইতে আমার সঙ্কোচ হয়।"
কথা বলতে বলতে হাঁটছিল ওরা। রাস্তা পার হয়ে যাওয়ার পর ওসমান বলল, "এই তো আমরা এসে গেছি।"
"কিছু মনে করবেননা" বললেন অন্ধ লোকটি, "আসলে বৃষ্টি হয়েছে তো গত দুদিন। এখানে ওখানে নানা গর্তে পানি জমে গেছে। এই গলি দিয়ে মিনিট পাঁচেক এর পথ। বাসা পর্যন্ত যদি এগিয়ে দিতেন। যদি আপত্তি না থাকে আর কি।"
সাদা ছড়ি দিয়ে দেখিয়ে দেয়া অন্ধকার গলিটা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওসমান ভাবছে অন্ধ লোকটির সিক্স সেন্সের কথা। তার চোখে দৃষ্টি আছে তবুও এই গলি দিয়ে হাঁটতে মুশকিল হয়ে যাচ্ছে ওর, অথচ অন্ধ লোকটি নির্বিকার হেঁটে চলেছে। কেমন সুন্দর করে পানি-ভর্তি গর্তগুলো থেকে পা বাঁচিয়ে হাঁটছেন ওনি, যেন ওসমানের সাহায্য না পেলেও খুব একটা সমস্যা হতনা অন্ধ লোকটার।
কিছুদূর হেঁটে যাওয়ার পর রাস্তাটা হঠাৎ একটু বেশিই নির্জন হয়ে পড়েছে। কোন মানুষজন নেই, দোকান-পাট নেই। কেমন গা-ছমছমে পরিবেশ। ওসমান এই ভুতুড়ে পরিবেশকে একটু উষ্ণ করে তোলার জন্য বলল, "আপনার সিক্স সেন্স অনেক ভাল, আমি দেখে যতোটা না পথ চলতে পারছি, আপনি না দেখেও...
কথাটা শেষ করতে পারেনি ও, ওসমান লক্ষ্য করল, অন্ধ লোকটির ডান হাতে সাদা ছড়ির বদলে সাইলেন্সার লাগানো একটা পিস্তল। সে কিছু বুঝে উঠবার আগেই অন্ধ লোকটি ওসমানের মাথায় ঢুকিয়ে দিল পরপর তিনটে বুলেট। পুরো ঘটনাটা ঘটতে সময় লেগেছে মাত্র কয়েকটা সেকেন্ড!
রাস্তায় পড়ে থাকা ওসমানের মৃতদেহটার দিকে তৃপ্তির চোখে তাকিয়ে থাকল অন্ধ লোকের অভিনয় করা খুনীটা!
৩।
খুনের স্পট থেকে বেশ কিছুদূর হেঁটে এসে একটা সস্তা হোটেলে ঢুকে পড়ল খুনীটা। বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মেকাপের আলগা আবরণ টেনে খুলে নিল। পাঞ্জাবি পাজামা খুলে পরে নিল লেদার জ্যাকেট আর জিন্স প্যান্ট। মোবাইলে ডায়াল করল একটা বিশেষ নম্বরে।
"হ্যা কাজ হয়ে গেছে। দশদিন? হ্যা মানছি সময় একটু বেশি লেগেছে, কিন্তু আপনার ক্ষতি হওয়ার আগেই কাজটা শেষ করেছি; তাই না? তাছাড়া এ ধরণের কাজে প্রচুর ইনফরমেশন লাগে জানেন তো? যা হোক ডিল কমপ্লিট, কন্ট্রাক্টের বাকি টাকা আমার একাউন্টে জমা করে দেবেন।"
মনে মনে হাসছে খুনীটা। অন্ধ সাজার প্ল্যানটা কাজে লেগেছে। ওসমানকে ভাগে পাওয়া সহজ হচ্ছিল না। নানা রকম তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে ওকে - কোথায় যায় কখন যায়, কখন একা থাকে ইত্যাদি।
বিভিন্ন তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে আইডিয়াটা ক্লিক করে উঠে ওর মাথায়। তারপর যেমন প্ল্যান তেমন কাজ। খুনের স্পটে নিয়ে যাওয়াটা কঠিন হবে ভেবেছিল, কিন্তু হয়নি। অনায়াসে ওসমান চলে আসে ওর সাথে।
অন্ধের অভিনয় করাটা যে এভাবে কাজে লেগে যাবে সেটা ভেবে ক্রুর হাসি ফুটে উঠল ওর ঠোঁটে। কারণ ও খবর নিয়ে জেনেছিল ওসমান খুবই পরোপকাকারী আর প্রতিবন্ধীদের প্রতি সফটকর্নার আছে ওর, বিশেষ করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের প্রতি; কেননা রিপোর্টার ওসমানের বাবা ছিলেন অন্ধ!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
নির্ঘুম মিশ্র ১৪/০৯/২০১৮দারুণ লিখেছেন ।
-
পি পি আলী আকবর ১৪/০৯/২০১৮ভালো লাগলো
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ১৩/০৯/২০১৮বেশ লাগল
-
রুমা চৌধুরী ১৩/০৯/২০১৮খুব সুন্দর ভাবে শেষ হল গল্প টা। শুভেচ্ছা রইল।