প্রফেশনাল কিলার
ল্যাম্পপোস্টের অপজিটে, রাস্তা থেকে ১০/১২ গজ দূরে একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে পজিশন নিল ফয়সাল। অপেক্ষা করছে। ওর কালো জ্যাকেটের আড়ালে কোমরে একটা পিস্তল লুকনো আছে। চারপাশটা ঘুটঘুটে অন্ধকার আর কুয়াশায় ঢাকা। কাজেই গাছটার আড়াল না নিলেও অন্য আরো গাছ-পালার ফাঁকে তাকে দেখতে পাওয়াটা একপ্রকার অসম্ভবই বলা চলে। কিন্তু ল্যাম্পপোস্টের আলোয় রাস্তাটা মোটামুটি আলোকিত। তাই কোন রকম রিস্ক নিলনা সে। রাস্তাটা সে ভালোভাবে দেখতে পাবে, কিন্তু রাস্তা থেকে কেউ তাকে দেখতে পাবেনা। পথচারী খুন করার জন্য একেবারে আদর্শ স্পট।
রেডিয়াম-রিস্টওয়াচে চোখ বুলাল সে। এগারোটা তিরিশ। ইনফরমেশন অনুযায়ী ইরফানের এতক্ষনে "নবারুণ ক্লাব" থেকে বেরিয়ে পড়বার কথা। সে হিসেবে আর ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই কাজটা সেরে ফেলতে পারবে সে।
ইরফান তার বর্তমান শিকার। তাকে মারার কন্ট্রাক্টটা ফয়সাল পায় মনসুর চৌধুরী নামের এক ব্যাবসায়ীর কাছে থেকে। ৫ লাখ টাকার কন্ট্রাক্ট। দু লাখ টাকা এডভান্স নেয়া হয়ে গেছে, বাকিটা কাজ হয়ে যাওয়ার পর পাবে। কি জন্য ইরফানকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন মনসুর সাহেব, তা নিয়ে কোন কৌতুহল ফয়সাল দেখায়নি। এ লাইনে ক্লাইন্টের ব্যাপারে নাক গলাতে যাওয়ার ঝক্কি অনেক। মনসুর সাহেবও বেশি কথাবার্তা বলেননি। প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন, দু লাখ টাকা আর ইরফানের একটা "ফটো" দিয়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
ফটোটা দেখে একটু চমকে গিয়েছিল ফয়সাল। কারণ ইরফান আর কেউ নয় ওরই একসময়কার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন! বেশ ভাল সসম্পর্ক ছিল ওদের মধ্যে। বছর পাঁচেক হচ্ছে ওর সাথে কোন রকম যোগাযোগ নেই। ওই কারো সাথে যোগাযোগ রাখেনি আসলে। প্রথমবার জেলে যাওয়ার পর, ফিরে এসে জীবনটা বদলে যায় ওর। তখন থেকে আগের সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে অন্ধকার জগতের মানুষদের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে সে। এক সময়কার বন্ধুকে মারতে হবে এটা ভেবে ও একটুও 'হেসিটেট' করেনি। অন্যান্য এসাইনমেন্টের মতোই ইরফানকেও একটা "শিকার" হিসেবেই ভেবেছে সে। তাছাড়া 'পাঁচ লাখ' কম টাকা নয়।
রাস্তার অপর প্রান্তে একটা মানুষের অবয়ব দেখা যাচ্ছে! মুহুর্তেই বিদ্যুৎ খেলে গেল ফয়সালের শরীরে। পিস্তলটা দ্রুত বের করে হাতে নিয়ে নিল ও। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চোখ রাখছে অবয়বটার উপর। অবয়বটা এগিয়ে আসছে। আর একটু এগিয়ে আসতেই চেহারাটা স্পষ্ট হয়ে উঠল - ইরফান! ফয়সালের "কাজ" সারার সময় হয়ে গেছে।
যথেষ্ট কাছে চলে এসেছে ইরফান। মাথা বা হৃৎপিন্ড টার্গেট করে ট্রিগার টেনে দিলেই কাজ শেষ। এলাকার লোকজন এই খুনের খবর যতক্ষনে পাবে ততক্ষনে সে অনেক দূরে চলে যেতে পারবে। কাজ সেরে ফয়সাল যাতে দ্রুত সরে যাতে পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছেন মনসুর সাহেব।
ইরফানের কপাল বরাবর পিস্তল তাক করল ফয়সাল। শরীর টানটান হয়ে আছে ওর। কম করে হলেও ১৫ টা মানুষ খুন করেছে ও। কিন্তু শুট করার ঠিক আগের মুহুর্তের উত্তেজনাটা প্রতিবারই একইরকমভাবেই শিরা-উপশিরা বেয়ে প্রবাহিত হয়।
ট্রিগার টানতে যাবে এমন সময় ওর হৃৎপিন্ডে একটা অদ্ভুত তরঙ্গ বয়ে গেল। ঝড়ের গতিতে মগজে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল - ইরফানকে কেন খুন করতে যাচ্ছে সে? ও না তার বন্ধু? নাইবা থাকল যোগাযোগ, কিন্তু এক সময়কার চমৎকার সম্পর্কটা কি খুন না করার জন্য যথেষ্ট অজুহাত নয়? টাকাটাই কি সব? এই তরঙ্গটাকেই কি লোকেরা 'বিবেক' বলে?"
কোনদিন যা হয়নি তাই ঘটল। একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গেল ও। কি করবে ও এখন? খুন না করেই চলে যাবে? তাহলে মনসুর সাহেবকেই বা কি জবাব দেবে? আর পাঁচ লাখ টাকা? সেটার কি হবে?এদিকে টার্গেটও আরো কাছে চলে আসতে শুরু করেছে। বেশি দেরি করলে মিস হয়ে যাবে টার্গেট। ব্যর্থ হয়ে যাবে 'এসাইনমেন্ট'।
কিন্তু কয়েকটা মুহুর্ত মাত্র, তারপর মাথা থেকে 'ভাবনার ঝড়' ঝেরে ফেলে দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল ও। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি ফুটে উঠল ওর ঠোঁটে। ইরফানের কপাল লক্ষ্য করে আবারো তাক করল পিস্তলটা। এবার কোন দ্বিধা নয়, টেনে দিল ট্রিগার - ঠুশ! গুলির তীক্ষ্ণ শব্দে ডানা ঝাপটা দিয়ে নড়েচড়ে উঠল গাছের ডালে আশ্রয় নেয়া কয়েকটা আতংকিত পাখি।
ধপাস করে পরে গেল ইরফান। ফয়সালের নিশানা খুবই নিখুঁত। ইরফানের কপালে কয়েন-সাইজের একটা ফুটো। গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছে। স্পট ডেথ।
সন্তর্পণে হাঁটতে শুরু করল ফয়সাল। পেছন দিকে তাকাচ্ছেও না। চেনা হোক কিংবা অচেনা, বন্ধু হোক কিংবা শত্রু ; তাতে তার কি আসে যায়? কাজটা করার জন্য মনসুর সাহেব তাকে "মজুরী" দিয়েছে আর কাজটা সে ঠিকঠাকভাবে করে দিয়েছে; ব্যস কথা শেষ। আফাটার অল সে একজন কিলার - প্রফেশনাল কিলার!
রেডিয়াম-রিস্টওয়াচে চোখ বুলাল সে। এগারোটা তিরিশ। ইনফরমেশন অনুযায়ী ইরফানের এতক্ষনে "নবারুণ ক্লাব" থেকে বেরিয়ে পড়বার কথা। সে হিসেবে আর ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই কাজটা সেরে ফেলতে পারবে সে।
ইরফান তার বর্তমান শিকার। তাকে মারার কন্ট্রাক্টটা ফয়সাল পায় মনসুর চৌধুরী নামের এক ব্যাবসায়ীর কাছে থেকে। ৫ লাখ টাকার কন্ট্রাক্ট। দু লাখ টাকা এডভান্স নেয়া হয়ে গেছে, বাকিটা কাজ হয়ে যাওয়ার পর পাবে। কি জন্য ইরফানকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন মনসুর সাহেব, তা নিয়ে কোন কৌতুহল ফয়সাল দেখায়নি। এ লাইনে ক্লাইন্টের ব্যাপারে নাক গলাতে যাওয়ার ঝক্কি অনেক। মনসুর সাহেবও বেশি কথাবার্তা বলেননি। প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন, দু লাখ টাকা আর ইরফানের একটা "ফটো" দিয়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
ফটোটা দেখে একটু চমকে গিয়েছিল ফয়সাল। কারণ ইরফান আর কেউ নয় ওরই একসময়কার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন! বেশ ভাল সসম্পর্ক ছিল ওদের মধ্যে। বছর পাঁচেক হচ্ছে ওর সাথে কোন রকম যোগাযোগ নেই। ওই কারো সাথে যোগাযোগ রাখেনি আসলে। প্রথমবার জেলে যাওয়ার পর, ফিরে এসে জীবনটা বদলে যায় ওর। তখন থেকে আগের সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে অন্ধকার জগতের মানুষদের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে সে। এক সময়কার বন্ধুকে মারতে হবে এটা ভেবে ও একটুও 'হেসিটেট' করেনি। অন্যান্য এসাইনমেন্টের মতোই ইরফানকেও একটা "শিকার" হিসেবেই ভেবেছে সে। তাছাড়া 'পাঁচ লাখ' কম টাকা নয়।
রাস্তার অপর প্রান্তে একটা মানুষের অবয়ব দেখা যাচ্ছে! মুহুর্তেই বিদ্যুৎ খেলে গেল ফয়সালের শরীরে। পিস্তলটা দ্রুত বের করে হাতে নিয়ে নিল ও। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চোখ রাখছে অবয়বটার উপর। অবয়বটা এগিয়ে আসছে। আর একটু এগিয়ে আসতেই চেহারাটা স্পষ্ট হয়ে উঠল - ইরফান! ফয়সালের "কাজ" সারার সময় হয়ে গেছে।
যথেষ্ট কাছে চলে এসেছে ইরফান। মাথা বা হৃৎপিন্ড টার্গেট করে ট্রিগার টেনে দিলেই কাজ শেষ। এলাকার লোকজন এই খুনের খবর যতক্ষনে পাবে ততক্ষনে সে অনেক দূরে চলে যেতে পারবে। কাজ সেরে ফয়সাল যাতে দ্রুত সরে যাতে পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছেন মনসুর সাহেব।
ইরফানের কপাল বরাবর পিস্তল তাক করল ফয়সাল। শরীর টানটান হয়ে আছে ওর। কম করে হলেও ১৫ টা মানুষ খুন করেছে ও। কিন্তু শুট করার ঠিক আগের মুহুর্তের উত্তেজনাটা প্রতিবারই একইরকমভাবেই শিরা-উপশিরা বেয়ে প্রবাহিত হয়।
ট্রিগার টানতে যাবে এমন সময় ওর হৃৎপিন্ডে একটা অদ্ভুত তরঙ্গ বয়ে গেল। ঝড়ের গতিতে মগজে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল - ইরফানকে কেন খুন করতে যাচ্ছে সে? ও না তার বন্ধু? নাইবা থাকল যোগাযোগ, কিন্তু এক সময়কার চমৎকার সম্পর্কটা কি খুন না করার জন্য যথেষ্ট অজুহাত নয়? টাকাটাই কি সব? এই তরঙ্গটাকেই কি লোকেরা 'বিবেক' বলে?"
কোনদিন যা হয়নি তাই ঘটল। একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গেল ও। কি করবে ও এখন? খুন না করেই চলে যাবে? তাহলে মনসুর সাহেবকেই বা কি জবাব দেবে? আর পাঁচ লাখ টাকা? সেটার কি হবে?এদিকে টার্গেটও আরো কাছে চলে আসতে শুরু করেছে। বেশি দেরি করলে মিস হয়ে যাবে টার্গেট। ব্যর্থ হয়ে যাবে 'এসাইনমেন্ট'।
কিন্তু কয়েকটা মুহুর্ত মাত্র, তারপর মাথা থেকে 'ভাবনার ঝড়' ঝেরে ফেলে দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল ও। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি ফুটে উঠল ওর ঠোঁটে। ইরফানের কপাল লক্ষ্য করে আবারো তাক করল পিস্তলটা। এবার কোন দ্বিধা নয়, টেনে দিল ট্রিগার - ঠুশ! গুলির তীক্ষ্ণ শব্দে ডানা ঝাপটা দিয়ে নড়েচড়ে উঠল গাছের ডালে আশ্রয় নেয়া কয়েকটা আতংকিত পাখি।
ধপাস করে পরে গেল ইরফান। ফয়সালের নিশানা খুবই নিখুঁত। ইরফানের কপালে কয়েন-সাইজের একটা ফুটো। গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছে। স্পট ডেথ।
সন্তর্পণে হাঁটতে শুরু করল ফয়সাল। পেছন দিকে তাকাচ্ছেও না। চেনা হোক কিংবা অচেনা, বন্ধু হোক কিংবা শত্রু ; তাতে তার কি আসে যায়? কাজটা করার জন্য মনসুর সাহেব তাকে "মজুরী" দিয়েছে আর কাজটা সে ঠিকঠাকভাবে করে দিয়েছে; ব্যস কথা শেষ। আফাটার অল সে একজন কিলার - প্রফেশনাল কিলার!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রুমা চৌধুরী ০৯/০৯/২০১৮
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ০৯/০৯/২০১৮বেশ লাগল
প্রফেশনাল কিলার নামটা খুবই উপযুক্ত।