কমনসেন্স
১।
রাত ১২ টা।
ফয়সাল তার রিডিং টেবিলে বসে পড়ায় মনযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু পাশের বিল্ডিং থেকে আসা হাতুড়ি আর ড্রিল মেশিনের একটানা অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক শব্দে একটা লাইনও পড়তে পারছেনা। অথচ সামনে সেমিস্টার ফাইনাল, যেভাবেই হোক নোটস গুলো পড়ে শেষ করতে হবে।
পাশের বেডে অনেকক্ষণ এপাশওপাশ করছিলেন কবির ভাই। শেষে আর না পেরে শোয়া থেকে উঠে ফয়সালের দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললেন, "এসব কী ভাই! কাজগুলো কি দিনে করা যেতনা। রাত ১২ টার পরই করতে হবে?"
ফয়সাল বলল, "আর দেখেন আপনি, আশেপাশের কোন মানুষ কিছুই বলছেনা। আমদের কথা আলাদা, একে তো ভাড়াটিয়া তারউপর মেসের ছেলেপিলে, কিন্তু মালিকপক্ষ তো বলতে পারে, নাকি?
কিছুক্ষণ পর অন্যান্য মেসমেম্বার ওদের রুমে এসে হাজির। শফিক বলল, "দেখছেন অবস্থা? গত ১৫ দিন ধরে এগুলো হজম করতেছি। আপনাদের রুমটা তাও তুলনামূলক ভাল। শব্দ কম আসে।"
আসাদ বলল, "আপনি মেসে-পরিচালক কবির ভাই, আপনি গিয়ে কিছু বলেন না কেন?"
"মাথা খারাপ তোমার?" কবির ভাই বললেন, "ওনারা মালিক পক্ষ। আমি গিয়ে কিছু বললে শুনবে মনে করেছো? উল্টো দুই মালিকপক্ষ মিলে মেসই বন্ধ করে দিতে পারে"
ফয়সাল বিজ্ঞের মতো বলল, "আনিসুজ্জামান নামে আমাদের একজন স্যার আছেন। হেভী জ্ঞানী। ওনি প্রায়ই একটা কথা বলেন, কমনসেন্স ইজ ভেরি আনকমন। এই যে রাত ১২ টার পর কনস্ট্রাকশন এর কাজ করতেছে। মানুষের ঘুম, রোগ-শোক এসব নিয়ে ভাবছেনা। এর কারণ কি জানেন? এর একমাত্র কারণ হচ্ছে ওই বিল্ডিং এর মানুষগুলোর কোন কমনসেন্স নেই।"
ওর কথাতে একমত হল সবাই। আসলেই ওই বিল্ডিং এর মানুষগুলোর কোন কমনসেন্স নেই!
২।
১ মাস পর।
কবির ভাইয়ের মেস।
১২ টা বাজা মাত্রই হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে মেসে।ফয়সালের জন্মদিন সেলিব্রেট করা হচ্ছে। মেসের পক্ষ থেকে কেক কেনা হয়েছে। তবে রাতের খাবারের খরচ পুরোটাই ফয়সালের। রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে আনা হয়েছে চিকেন ফ্রাই, খিচুড়ি আর ড্রিংক্স। কেক কাটার পর যতোটা না গলায় গিয়েছে,তার চেয়ে বেশি গালে লেগেছে।
নানা রঙের বেলুন দিয়ে রুমটা সাজানো হয়েছিল। বেলুনগুলো এখন ফাটানো হচ্ছে, একটা বেলুন ফাটছে আর সবাই হৈহৈ করে উঠছে।
কম্পিউটারে "নাগিন নাগিন" হিন্দি গানটা বাজতেছে। মিউজিকের তালে তালে নাচতেছে ওরা সবাই। ফয়সাল বলল ভলিউম বাড়িয়ে দিতে। একজন ভলিউম বাড়িয়ে দিল। এখন মনে হচ্ছে মিউজিকের তালে তালে দেয়ালগুলোও কাঁপছে।
ঠিক তখন পাশের বিল্ডিংটার একজন মানুষ দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সামলাচ্ছে। ঘরে তার স্ত্রী অসুস্থ। আর এ বদমাইশগুলোর জ্বালায় ঘুমের বড়ি খেয়েও ঘুমাতে পারছেনা বেচারি।
ওনার মেয়ে এসে বলল, "বাবা তুমি গিয়ে ওদেরকে কিছু বলনা কেন? মায়ের তো অসুখ বেড়ে যাবে!"
"মাথা খারাপ তোর?" বাবা বলল,"নম্র-ভদ্র ছেলে হলে ওদেরকে বুঝানো যায়। বেয়াদবকে কখনো বুঝানো যায়না। হয়তো দেখা যাবে ওর মদ-টদ খেয়ে হৈচৈ করছে। অথবা হয়ত তারা গুন্ডা প্রকৃতির, তাদের হাতে অস্ত্র আছে! এই যে রাত ১২ টার পর হৈচৈ করছে, হাই ভলিউমে গান শুনতেছে; মানুষের ঘুম, রোগ-শোক এসব নিয়ে ভাবছেনা। এর কারণ কি জানিস? এর একমাত্র কারণ হচ্ছে ওই মেসের ছেলেগুলোর কোন কমনসেন্স নেই।"
বাবার কথাতে একমত হল ও, আসলেই ওই মেসের ছেলেগুলোর কোন কমনসেন্স নেই!
রাত ১২ টা।
ফয়সাল তার রিডিং টেবিলে বসে পড়ায় মনযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু পাশের বিল্ডিং থেকে আসা হাতুড়ি আর ড্রিল মেশিনের একটানা অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক শব্দে একটা লাইনও পড়তে পারছেনা। অথচ সামনে সেমিস্টার ফাইনাল, যেভাবেই হোক নোটস গুলো পড়ে শেষ করতে হবে।
পাশের বেডে অনেকক্ষণ এপাশওপাশ করছিলেন কবির ভাই। শেষে আর না পেরে শোয়া থেকে উঠে ফয়সালের দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললেন, "এসব কী ভাই! কাজগুলো কি দিনে করা যেতনা। রাত ১২ টার পরই করতে হবে?"
ফয়সাল বলল, "আর দেখেন আপনি, আশেপাশের কোন মানুষ কিছুই বলছেনা। আমদের কথা আলাদা, একে তো ভাড়াটিয়া তারউপর মেসের ছেলেপিলে, কিন্তু মালিকপক্ষ তো বলতে পারে, নাকি?
কিছুক্ষণ পর অন্যান্য মেসমেম্বার ওদের রুমে এসে হাজির। শফিক বলল, "দেখছেন অবস্থা? গত ১৫ দিন ধরে এগুলো হজম করতেছি। আপনাদের রুমটা তাও তুলনামূলক ভাল। শব্দ কম আসে।"
আসাদ বলল, "আপনি মেসে-পরিচালক কবির ভাই, আপনি গিয়ে কিছু বলেন না কেন?"
"মাথা খারাপ তোমার?" কবির ভাই বললেন, "ওনারা মালিক পক্ষ। আমি গিয়ে কিছু বললে শুনবে মনে করেছো? উল্টো দুই মালিকপক্ষ মিলে মেসই বন্ধ করে দিতে পারে"
ফয়সাল বিজ্ঞের মতো বলল, "আনিসুজ্জামান নামে আমাদের একজন স্যার আছেন। হেভী জ্ঞানী। ওনি প্রায়ই একটা কথা বলেন, কমনসেন্স ইজ ভেরি আনকমন। এই যে রাত ১২ টার পর কনস্ট্রাকশন এর কাজ করতেছে। মানুষের ঘুম, রোগ-শোক এসব নিয়ে ভাবছেনা। এর কারণ কি জানেন? এর একমাত্র কারণ হচ্ছে ওই বিল্ডিং এর মানুষগুলোর কোন কমনসেন্স নেই।"
ওর কথাতে একমত হল সবাই। আসলেই ওই বিল্ডিং এর মানুষগুলোর কোন কমনসেন্স নেই!
২।
১ মাস পর।
কবির ভাইয়ের মেস।
১২ টা বাজা মাত্রই হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে মেসে।ফয়সালের জন্মদিন সেলিব্রেট করা হচ্ছে। মেসের পক্ষ থেকে কেক কেনা হয়েছে। তবে রাতের খাবারের খরচ পুরোটাই ফয়সালের। রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে আনা হয়েছে চিকেন ফ্রাই, খিচুড়ি আর ড্রিংক্স। কেক কাটার পর যতোটা না গলায় গিয়েছে,তার চেয়ে বেশি গালে লেগেছে।
নানা রঙের বেলুন দিয়ে রুমটা সাজানো হয়েছিল। বেলুনগুলো এখন ফাটানো হচ্ছে, একটা বেলুন ফাটছে আর সবাই হৈহৈ করে উঠছে।
কম্পিউটারে "নাগিন নাগিন" হিন্দি গানটা বাজতেছে। মিউজিকের তালে তালে নাচতেছে ওরা সবাই। ফয়সাল বলল ভলিউম বাড়িয়ে দিতে। একজন ভলিউম বাড়িয়ে দিল। এখন মনে হচ্ছে মিউজিকের তালে তালে দেয়ালগুলোও কাঁপছে।
ঠিক তখন পাশের বিল্ডিংটার একজন মানুষ দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সামলাচ্ছে। ঘরে তার স্ত্রী অসুস্থ। আর এ বদমাইশগুলোর জ্বালায় ঘুমের বড়ি খেয়েও ঘুমাতে পারছেনা বেচারি।
ওনার মেয়ে এসে বলল, "বাবা তুমি গিয়ে ওদেরকে কিছু বলনা কেন? মায়ের তো অসুখ বেড়ে যাবে!"
"মাথা খারাপ তোর?" বাবা বলল,"নম্র-ভদ্র ছেলে হলে ওদেরকে বুঝানো যায়। বেয়াদবকে কখনো বুঝানো যায়না। হয়তো দেখা যাবে ওর মদ-টদ খেয়ে হৈচৈ করছে। অথবা হয়ত তারা গুন্ডা প্রকৃতির, তাদের হাতে অস্ত্র আছে! এই যে রাত ১২ টার পর হৈচৈ করছে, হাই ভলিউমে গান শুনতেছে; মানুষের ঘুম, রোগ-শোক এসব নিয়ে ভাবছেনা। এর কারণ কি জানিস? এর একমাত্র কারণ হচ্ছে ওই মেসের ছেলেগুলোর কোন কমনসেন্স নেই।"
বাবার কথাতে একমত হল ও, আসলেই ওই মেসের ছেলেগুলোর কোন কমনসেন্স নেই!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাঁঝের তারা ০৭/০৯/২০১৮অপূর্ব