www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বাংলা সংস্কৃতি বিকাশে নববর্ষ

সংস্কৃতি ছাড়া সমাজ, জাতি ও দেশ গড়ে ওঠে না। একমাত্র সংস্কৃতি চিন্নিত করে কে কোন গোষ্ঠী, জাতি বা দেশের। মানবজাতির সৃষ্টিলগ্ন যেমন কমবেশি সবাই জানি, তেমনি বাংলা সংস্কৃতির কথা বলতে গেলে সংস্কৃতির সৃষ্টিলগ্ন জানা অপরিহার্য। বাংলা সংস্কৃতি বিকাশে নববর্ষের ভুমিকা বা অবদান কতুটুকু বা আদৌও আছে কি-না এই বিষটি তুলে ধরাই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য।

সংস্কৃতি হলো মানুষের আত্মপরিচয় বা ব্যবহারিক রূপ। সমাজ পরিবার,তথা মানুষের অস্তিত্বের সাথে সংস্কৃতি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। মানুষের বেড়ে ওঠা, চালচলন, কথাবার্তা, খাদ্যাভাস, আমোদপ্রমোদ, বিবাহ অনুষ্ঠান সবই সংস্কৃতির অংশ এবং অঞ্চলভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন রূপে আবিষ্কৃত হয়। আর এর বিবিধ প্রকাশ এবং নির্যাস একটি সংস্কৃতি থেকে অন্য সংস্কৃতির মধ্যে যথেষ্ট পৃথক। হাজার হাজার বছর ধরে প্রাকৃত সংস্কৃতি ও প্রাকৃত অপভ্রংশ থেকেই বঙ্গীয় সংস্কৃতির জন্ম। পরস্পর বিরোধী উপাদানে সহাবস্থানের এবং সমন্বয়ের ফলে বঙ্গীয় অঞ্চলে বিশেষ এক বৈশিষ্ট্যে গড়ে উঠেছে বঙ্গীয় সংস্কৃতি। যাকে বলা যেতে পারে বঙ্গদেশ বা বাংলাভাষীদের সংস্কৃতি। সামাজিক গঠনে বাঙালি সমাজ আগাগোড়াই পিতৃতান্ত্রিক এবং সোপানভিত্তিক। আর এখান থেকেই বাংলা সংস্কৃতির সামাজিক কাঠামোর গোড়াপত্তন।

'সংস্কৃতি মানে সুন্দর ভাবে, বিচিত্র ভাবে, মহৎ ভাবে বাঁচা ; প্রকৃত-সংসার ও মানব-সংসারের মধ্যে অসংখ্য অনুভূতির শিকড় চালিয়ে দিয়ে বিচিত্র রস টেনে নিয়ে বাঁচা; কাব্য পাঠের মারফতে ফুলের ফোটায়, নদীর ধাওয়ায়, চাঁদের চাওয়ায় বাঁচা ; আকাশের নীলিমায়, তৃণগুলোর শ্যামলীমায় বাঁচা ; চিরহীর নয়নজলে, মহতের জীবনদানে বাঁচা ; গল্পকাহিনীর মারফতে নর-নারীর বিচিত্র সুখ-দুঃখে বাঁচা ; ভ্রমণ কাহিনীর মারফতে, বিচিত্র দেশ ও বিভিত্র জাতির অন্তরঙ্গ সঙ্গী হয়ে বাঁচা ; ইতিহাসের মারফতে মানব-সভ্যতার ক্রমবিকাশে বাঁচা; জীবনকাহিনীর মারফতে দুঃখীজনের দুঃখ নিবারণের অঙ্গীকারে বাঁচা। বাঁচা, বাঁচা বাঁচা। প্রচুরভাবে, গভীরভাবে বাঁচা। বিশ্বের বুকে বুক লাগিয়ে বাঁচা।'১

সংস্কৃতি জীবন ও সমাজকে নিস্কলুষভাবে এগিয়ে নিয়ে যায় সামনের দিকে বা আধুনিকত্বে। সংস্কৃতি মানব মনে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলে। সংস্কৃতি চর্চা না থাকলে কোনো জাতি কখনো মানবিক বিকাশ ও উন্নতি সাধান করতে পারে না। সেটা মানসিক কিংবা অর্থনৈতিক। বিভিন্ন রাজ্য বা বিভিন্ন ধর্ম যেমন-হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও ইসলাম ধর্মের আচার অনুষ্ঠান এবং সামাজিক রীতিনীতির মধ্যেও রয়েছে বঙ্গীয় সংস্কৃতির প্রাদুর্ভাব। সংস্কৃতিই একমাত্র মানবজীবনের মূল্য নিরুপণ করে।

পালরাজত্বের চারশো বছরের মধ্যেই গড়ে ওঠেছিল বাঙালির এক জাতীয়ত্বের ভিত্তি। এই চারশো বছর বাঙালির ইতিহাসে এক স্মরণীয় যুগ। এই যুগেই গোড়াপত্তন হয়েছে বাঙালি জাতি এবং আজকের বাংলাদেশের। এই যুগেই বাঙালীর সংস্কৃতির ভিত্তি তৈরি হয় আর্যপূর্ব ও আর্য সংস্কৃতি মিলিয়ে। ২

তথাকথিত বাংলাভাষা বা সংস্কৃতির উদ্ভব হলেও তখন তার প্রতি রাষ্ট্র কিংবা উচ্চ স্তরের লোকদের মধ্যে কোনো উদারতা বা যত্ন দেখা যায়নি। অনেক গবেষণা এবং অনেক বিদ্রোহ, ত্যাগতীতিক্ষার পর বাংলাভাষা তথা বাংলা সংস্কৃতির মুক্তিলাভ হয়।

'খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে চারটি প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ করে আনেন ‌; চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, সরহপাদের দোঁহা, কাহ্নপাদের দোঁহা ও ডাকার্ণব। এই পুঁথিগুলির মধ্যে প্রথমটিতে আছে পাচীনতম বাংলাভাষার নমুনা। শেষের তিনটি শৌরসেনী অপভ্রংশ লেখা। চর্চাচর্যবিনিশ্চয় বা চর্যাগীতির গানগুলিতে যে বাগ্ ভঙ্গী ও ব্যাককরণরীতি দেখা যা তা পুরোপুরি বাংলা ; বাংলাভাষায় তা স্বীকৃত ও প্রচলিত।'৩ চতুর্দশ শতকের শেষাশেষি অপভ্রংশ ভাষায় লেখা গীতি- কবিতার একটি সংকল করা হয়। প্রাকৃত ছন্দের বিভিন্ন রূপ ও প্রকৃতির কিছুটা নমুনা দেওয়াই ছিল এই সংকলনের উদ্দেশ্য। এর মধ্যে একাদশ থেকে চতুর্দশ শতকের শৌরসেনী অপভ্রংশে লেখা কয়েকটি এমন পদ আছে যার মধ্যে কিছু কিছু বাংলা শব্দ ও ধরণ - ধারণ দেখা যায়। যেমন ;

সো মহ কান্তা দূর দিগন্তা।

পাউস আএ চেউ চলাএ‌; ৪

এভাবেই বাংলা সংস্কৃতি বা সাহিত্যে অর্থাৎ গান, কবিতা, ছড়ায় ছন্দ এবং পঙক্তির শেষে মিল এবং পয়ার বা লাচাড়ীর সৃষ্টি চর্যা গীতির থেকেই। জীবনবোধের ছন্দও এখানে দেখতে পাওয়া যায়। আর এই ছন্দ, অন্তমিল দিয়ে বতর্মান সময়ের কবি, গীতিকার, ছড়াকাররা লিখে চলছে অসংখ্য লেখা যা সাহিত্য ভাণ্ডারে বিশাল সমৃদ্ধি বয়ে আনছে। আর এই বাংলা সংস্কৃতিতে নববর্ষের উদ্ভব হয় ভারতবর্ষের মোঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর। তখন সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় এই নিয়ম কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে কৃষকরা বিপাকে পরত এবং সম্রাটের খাজনা আদায়ে বিঘ্ন ঘটত। তাই খাজনা আদায়ের সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে প্রচলিত হিজরি চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রুপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্রাট আকবর ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরি চান্দ্র বর্ষপঞ্জি বা পঞ্জিকাকে সৌর বর্ষপঞ্জিতে রুপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ফতুল্লাহ শিরাজীর সুপারিশে পারস্যে প্রচলিত সৌর বর্ষপঞ্জির অনুকরণে ৯৯২ হিজরি মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর হিজরি সৌর বর্ষপঞ্জি বা পঞ্জিকার প্রচলন করেন। তবে তিনি ২৯ বছর পূর্বে তাঁর সিংহাসনে আরোহনের বছর থেকে এই পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এ জন্য ৯৬৩ হিজরি সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ৯৬৩ হিজরি সালের মুহররম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এ জন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জিকার প্রথম মাস এবং পহেলা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়। আর উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবেরও আয়োজন করতেন। যা সর্বজনবিদিত। আর সেই থেকে এটা কোনো গোষ্ঠী বা জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নববর্ষকে স্বাগত জানায়। উৎসবে মেতে ওঠে দেশের সকলেই। শুধু তাই নয় সীমানা পেরিয়ে নববর্ষ অন্য দেশেও আনন্দের ঢেউ তুলে বাঙালি এবং অবাঙালিদের মাঝেও।

বিগত সরকারের আমলে এই দিনটি অর্থাৎ নববর্ষের দিনটি সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। সেই থেকে পহেলা বৈশাখে যেন একটি নতুন মাত্রা যোগ হয়। চাকুরিজীবীরাও আনন্দে মেতে ওঠে নাচ, গান, খেলাধুলা ও যে যার সামর্থ অনুযায়ী নতুন পোশাক, খাবারদাবারে। সকলের পাতে ইলিশ-পান্তা না জুটলেও কোনো আক্ষেপ ছিল না মনে। তারা তৈরি করত নানান ধরনের ভর্তা যেমন- শুটকি ভর্তা, আলুর ভর্তা, তিলের ভর্তা, সরিষার ভর্তা, বাদামের ভর্তা টাকি মাছের ভর্তা এবং কেউ কেউ সাধারণ মাছের ভাজাও রাখে সাথে।

অবশ্য বর্তমান সরকার এই নববর্ষকে আরও জাকজমকপূর্ণ করে তোলার জন্যে এবং বাংলা সংস্কৃতিকে আরও বিকাশের লক্ষ্যে বৈশাখী ভাতা প্রদান করেন। সেটা প্রবর্তন হওয়ায় সরকার এক নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেন। ''সরকার জাতীয় বেতনস্কেলের আওতাভুক্ত সকল সামরিক/বেসামরিক কর্মচারীর জন্য " বাংলা নববর্ষ ভাতা" প্রবর্তনের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ;
০১/ আগামী ১৪২৩ বঙ্গাব্দ হতে " বাংলা নববর্ষ ভাতা" প্রবর্তিত হবে ;
০২/ জাতীয় বেতনস্কেলের আওতাভুক্ত সকল কর্মচারী (সামরিক / বেসামরিক) প্রতিবছর মার্চ মাসে আহরিত মূল বেতনের ২০% হারে "বাংলা নববর্ষ ভাতা" প্রাপ্য হবেন;
০৩/ মাসিক নীট পেনশন গ্রহনকারীগণ এবং আজীবন পারিবারিক পেনশন ভোগীগণ তাঁদের মাসিক নীট পেনশনের ২০% হারে এ ভাতা প্রাপ্য হবেন ; এবং
০৪/ ১০০% পেনশন সমর্পণকারীগণের ক্ষেত্রে এ ভাতা প্রযোজ্য হবে না।
এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।"৪

এই থেকে সর্বজনীন এই উৎসবটি বাঙালির জনজীবনে ধর্ম নিরপেক্ষ,অসাম্প্রদায়ক চিন্তা -চেতনা ও বাংলা সংস্কৃতির স্বাক্ষর বহন করে চলছে । ব্যাপকভাবে চলে আড়ম্বরপূর্ণ অঞ্চলভিত্তিক সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাঙালির লোকসংস্কৃতির সাথে বাংলা নববর্ষ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর এই লোকজ- সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখে মূল্যবান অনুষঙ্গ। শুরু হয় গ্রামে গ্রামে যাত্রাগান, পালাগান,পুতুলনাচ, হালখাতা, খেলাধুলা -নৌকাবাইচ, কাবাডি, হাডুডু, ইত্যাদি। এ ছাড়াও গ্রামীণমেলা। এই গ্রামীনমেলা বৈশাখ উপলক্ষে যেমন ফিরে পায় তার প্রাণ তেমনই ফিরে পায় বাংলার ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প, মৃৎশিল্প।
এই পহেলা বৈশাখকে ঘিরে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। তবে পহেলা বৈশাখে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চারুকলা শিল্পী এস এম সুলতানের নেতৃত্বে ১৯৮৬ সাল থেকে নড়াইলে। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রাটি ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এই মঙ্গল শোভাযাত্রাতেও গ্রামীণজীবন এবং আবহমান বাংলা বা বাংলা সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলা হয়। বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ যেন এই মঙ্গল শোভাযাত্রাটি। সকল শ্রেণি, পেশা, বিভিন্ন বয়সের মানুষ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করেন। এই মঙ্গল শোভাযাত্রাটি পহেলা বৈশাখ উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়াও এই মঙ্গলশোভা যাত্রা আস্তে আস্তে বিভিন্ন জেলা শহর,উপজেলা শহর,গ্রামগেঞ্জ ছড়িয়ে পরে। ষাটের দশক থেকে পহেলা বৈশাখে রাজধানী ঢাকার রমনা পার্কের বটমূলে 'ছায়ানট' এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাঙালি সংস্কৃতির এক বিশেষ ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। পহেলা বৈশাখে বাঙালি জাতি প্রাণের স্পন্দনে সমস্বরে গেয়ে ওঠে বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথের সাড়াজাগানো গান :

এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।

তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,

বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক।।

যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি,

অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।।

মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,

অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।

রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি,

আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ।

মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।।

রবীন্দ্রনাথ যেন এই গানের মাধ্যমে পুরাতন সব জরাজীর্ণ দূর করে ধরাকে অগ্নিস্নানে সুচি করার প্রার্থনা করে বিশুদ্ধ সংস্কৃতির মাধ্যমে। এখানেও দেখছি সংস্কৃতির মাধ্যমে নববর্ষকে পরম উৎসাহে বরণ করে নেওয়া হয়।

বাঙালি জাতির আজ এক খুবই আনন্দের বিষয়। সেটা হলো যে ২০১৬ সালে ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক নববর্ষের আয়োজিত এই উৎসব শোভাযাত্রাকে মানবতার মূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করে।

সকল মানবজাতি দুঃখ কষ্টকে পেছনে ফেলে নতুনভাবে নববর্ষে একটি শুভ জীবনের প্রার্থনায় নিজেকে ভাসিয়ে দেয় একটি আনন্দমুখর পরিবেশে।

'ঝড় এসেছে ঝড় এসেছে কাহারা যেন ডাকে

বেরিয়ে এলো নতুন পাতা পল্লবহীন শাখে।।

ক্ষুদ্র আমার শুকনো ডালে

দুঃসাহসের রুদ্র ভালে

কচি পাতার লাগলো নাচন ভীষণ ঘূর্ণিপাকে।।

স্তবির আমার ভয় টুটেছে গভীর শঙ্খ্-রবে,

মন মেতেছে আজ নতুনের ঝড়ের মহোৎসবে।

কিশলয়ের জয়-পতাকা

অন্তরে আজ মেললো পাখানা

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই কবিতাতেও ঝড় এসেছে,কাহারা যেন ডাকে, নতুন পাতা বেরিয়ে এলো পল্লবহীন শাখে, কচি পাতায় লাগল নাচন ভীষণ ঘুর্ণিপাকে, মন মেতেছে আজ নতুন ঝড়ের মহোৎসবে,কিশলয়ের জয় পতাকা, অন্তরে আজ মেলল পাখনা। এখানে ঝড়েও কবি ডাকছে নতুন পাতার সাথে সাথে নতুন বর্ষের কথাই তিনি বলেছেন। কচিকাঁচারা এই ঝড়কে উপেক্ষা করে সবুজ পাতার মতই নাচছে বর্ষ বরণে তাদের মন মেতে ওঠেছে এই মহামিলন উৎসবে। এতে করে বোঝ যায় নববর্ষ উপলক্ষে বহুগুণ বেড়ে যায় সাহিত্যকর্ম। বড় বড় কবিরাও লিখে গেছেন, এখনও লিখছেন যে যার মত বর্ষবরণে অসংখ্য গান,কবিতা ছড়া,গল্প,ফিচার,প্রবন্ধ ইত্যাদি।

তাই নিঃসন্দেহে বাংলা যায় বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশে নববর্ষ অবশ্যই অপরিহার্য এবং গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিকল্প ভাবনার কোনো অবকাশ নেই।

তথ্যসূত্র :

১/ মোতাহের হোসেন চৌধুরী, প্রবন্ধ সমগ্র, প্রথম প্রকাশ,জুন ২০০৮, প্রকাশক, কল্লোল প্রকাশনী, নীলক্ষেত, ঢাকা, পৃ. ১৩

২/ সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বাঙালীর ইতিহাস, তৃতীয় প্রকাশ, আগস্ট ২০১৪,প্রকাশক,বিজলী প্রভা সাহা,ঢাকা, পৃ. ১০১

০৩/ ঐ, পৃ. ১৬৫

৪/ ঐ পৃ. ৬৫-৬৭

৫/ প্রবিধি -৩ অধিশাখা - প্রজ্ঞাপন, তারিখ ১৪/১০/২০১৫ খ্রী;
--------------------------
২৯/০৬/১৪২২ বঃ প্রজ্ঞাপন নং-০৭.০০.০০০০.১৭৩.৪৪.০১৮.১৪-৭৮
পরিচিতি :
লেখক
বাংলাদেশ।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৫৬৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/০৫/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সাঞ্জু ০৪/০৬/২০২১
    প্রবন্ধটিতে অনেক কিছু জ্ঞানের আধার আছে
  • সুন্দর।
  • ভালো লিখেছেন।
    অভিনন্দন।
  • well and good
  • ফয়জুল মহী ০২/০৫/২০২১
    বেশ ভালো লাগলো পাঠে I
 
Quantcast