সমাজব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি এবং তরুণ প্রজন্ম
সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন দিক থেকে আমি শুধু একটি দিক
সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করছি সেটা হলো আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে।
আর এই একটি দিক আলোচোনা করতে গিয়ে আমাকে
দু'টো বিষয়ের উপরে বলতে হবে কারণ একটার সাথে আর একটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
আমাদের তরুণ প্রজন্মরা চোখের সামনে যেভাবে
বিভিন্ন ধরনের মাদক, মেয়েদের উত্যক্ত করা, ধর্ষণ করার নেশায় মেতে উঠছে এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়।
ধর্ষণ আর মাদকাসক্ত নিয়ে সমাজ আজ যেভাবে আতঙ্কিত বা বিপদগ্রস্ত তাতে সমাজের গরিব, নিম্নবৃত্ত ও মধ্যবৃত্তের কিছু শ্রেণির মানুষ চলার পথে থমকে যাচ্ছেন।
আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অনেকেই নাবালিকা মেয়েদেরকে বিয়ে
দিয়ে দিচ্ছেন তাদের স্বপ্ন এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ভাসিয়ে দিচ্ছেন বিভীষিকার জলে। অশ্রুতে পরিণত হয়ে জীবন হচ্ছে শৃঙ্খল। পদদলিত করছেন তাদের আশা আকাঙ্খা। বড় হয়ে লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছাকে "বিয়ে "নামক একটি শব্দে তাদের দাঁড়ানোর পা-টাই পঙ্গু করে দিচ্ছেন। এটা একটা বিড়াট ঝুঁকি আর এই ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন সেই মেয়েটি তথা পরিবার তথা দেশ।
এভাবে চলতে থাকলে হয়তো সেই গরীব বা নিম্বমধ্যবিত্ত
বা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো তাদের নিজেদের স্বপ্নকে হারিয়ে ফেলবেন। বেঁচে থাকবেন বুকে মৃত স্বপ্ন লালন
করে।
কোনো বাবা-মায়েরাই চায় না তাদের সন্তান ধর্ষক হউক বা বিপথে যাক বরং স্বপ্ন দেখেন তাদেরকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার।
তবুও দেখা যায় নিজস্ব এলাকায়, খবরের কাগজ খুললে, টিভির চ্যানেলেগুলোতে এবং আরও ভিবিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় অগণিত ধর্ষণের খবর। আর এই ধর্ষণগুলো কারো না কোরো ছেলের দ্বারা কিংবা পুরুষের দ্বারা সংগঠিত হচ্ছে। কিন্তু ইচ্ছে করে কেউ নিজের ছেলেকে ধর্ষক বানায় না। তাই কোনো ধর্ষক কোনো বাবা-মায়ের ছেলে নয় বা হতে পারে না। তাই তার চরম শাস্তির দাবি করতে পারি বা করছি রাষ্ট্রের কাছে। এখন কথা হচ্ছে যে, প্রায় শুনতে পাওয়া যায় ধর্ষণের জন্য নাকি নারীরাই দায়ী। তাই ধর্ষণকারীর আর শাস্তিটা ঠিকঠাক হচ্ছে না বা এগুচ্ছে না। আইনের বহু ফাঁকফোকর দিয়ে গলে পড়ছে শাস্তি ব্যবস্থা। হ্যাঁ আমিও বলছি নারীরা কিছুটা দায়ি কিন্তু সর্বক্ষত্রে নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে নয় সে বিষটি অবশ্যই জানতে পারব এই শিরোনামের লেখাটির মাঝে।
প্রথমেই বলি নারীদের বেপর্দা কিছুটা দায়ি। এখন কথা হলো বেপর্দা কাকে বলব তাই না? হ্য্যাঁ সেটাই। কিন্তু আমার মনে হয় কোরান এবং হাদিসে এর বিস্তারিত বর্ননা রয়েছে। শুধুই বোরখাকেই পর্দা বলা ঠিক হবে না
আসল পর্দা হলো চোখের পর্দা এবং সমস্ত শরীর ঢেকে
রাখার মতো ঢিলেঢালা পোশাক। সেদিক দিয়ে ভাবলে সকল নারী বেপর্দা নয়।
আবার অনেক নারীই হয়তো একটু বেপর্দা তবে উলঙ্গ নয়। কারণ অনেকেই সবসময় হয়ত বোরখায় নিজেকে আবৃত করে রাখতে পারে না। আর কেন পারে না সে ব্যপারে সৃষ্টিকর্তা অবগত রয়েছেন। তাই এই একটু কেন বেপর্দা এটা সমাজকেও একটু ভাবতে হবে বৈকি।
ধর্মের গোড়ামি দিয়ে সবকিছু নারীদের প্রতি চাপিয়ে দেওয়া আমার মতে মোটেও উচিত নয় এবং এটা অমানবিক কাজ। পুরুষ এবং নারী আমরা চলার পথে অনেকেই অনেক পাপ করছি। সেগুলোও একটু সকলকে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি শুধু পর্দা পর্দা না করে। আর আমরা প্রায়শই দেখেছি ঘোমটার আড়ালে খেমটা নাচতে। এখানে এই কথাটা আমি এজন্যই বলছি যে অনেকেই বোরখার আড়ালে মাদক পাচার থেকে অনেক কুকর্ম করে থাকেন এটাও কিন্তু কোনো পুরুষ দ্বারা চালিত বা স্বীকার। এ ধরণের পর্দা কি সমাজের জন্য মঙ্গলজনক?
পরকালের কথাটা নাই বললাম। তার চেয়ে আমরা যদি সৎ এবং স্বচ্ছ থাকি এবং অন্যান্য পাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি তাহলে হয়ত এই একটু বেপর্দায় থেকে বা যারা দেখে পাপ করছেন তা ওই ঘোমটার আড়ালে খেমটা নাচার থেকে অনেক ভালো নয় কী ? তবে আমি পর্দার বিপক্ষে অবশ্যই বলছি না। পর্দাই নারীকে হেফাজত করে এটাই সত্যি তবে কিছু নরপশুদের কাছে পর্দাও হার মানে। তাই আমার মনে হয় নারীর পর্দার সাথে সাথে পুরুষকেও তার চোখের পর্দা ও নিজেকে সংযত রাখতে হবে। এটা আমার কথা নয় এটাও কোরান, হাদিসে এবং প্রতি ধর্মের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে বর্ণনা রয়েছে।
তবে হ্যাঁ ধর্ষণের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে এটা কিছুটা হলেও একটি শিশুর লালন-পালন ও সামাজিক রীতিনীতি বিচার ব্যাবস্থা, পৃষ্টপোষকতা এবং নারীর বেপর্দার উপরেও বর্তায়।
তাই এই বিষয়গুলো আমাদের ভাববার এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন।
দেশের একটি বড় আয়ের উৎস যেন নারীকে পণ্য করে গড়ে উঠছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পর্দায় থাকলে সে তার ক্যারিয়ার গঠনে তেমন এগুতে পারে না যতই সে দক্ষ থাকুক। তাই কিছু নারী নিজ ইচ্ছায় একটু বেপর্দা হয়ে পড়ছে। শুধু ক্যারিয়ারকে ঠিক কিংবা উপরের সিঁড়িতে উঠার জন্য।
এখন বলুন এটার জন্য দায়ী কে? আপনারা কি বলতে
পারবেন? তবে আমার মনে হয় কিছুটা সমাজ ব্যাবস্থা ও কতিপয় পুরুষমানুষ।
আবার দেখতে পাই নারীদেরকে পণ্য হিসেবে আয় করার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। কতিপয় নারীও টাকার লোভে নেমে পড়ছে সেই খেলায়। তাই সেই নারীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই দয়া করে, যা আয় করবেন নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখে করবেন। কতিপয় পুরুষের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেকে উলঙ্গভাবে পরিবেশন করবেন না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় আপনাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অর্থাৎ নাভিমূল, স্তন্যদ্বয় পিঠ অর্ধেক খোলা। নামে মাত্র গায়ে কাপড় থাকে।
এখন কথা হলো, এখানে পুরুষেরা চোখের পর্দা ও নিজেকে কতটুকু সংযত রাখতে পারবে? এখন ইন্টারনেটের যুগে বিভিন্ন মাধ্যমে এসব এবং নোংরা ভিডিও দেখে কিশোররা কামুকপ্রবণ হয়ে উঠছে। কিশোরই বা কেন বলছি কিশোর ছাড়াও যুবক বৃদ্ধ সকলেই কামুক প্রবণ হয়ে উঠছে।
এছাড়াও রয়েছে নেশাজাতীয় দ্রব্য -ভাঙ, গাজা, ইয়াবা দেশি -বিদেশি মদ হিরোইন আরও হয়ত অনেককিছু যা গ্রাম-গঞ্জে অর্থাৎ সমাজের কোণে কোণে ছিটিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে।
নোংরা ভিডিও বলেন বা নেশাজাতীয় দ্রব্যই বলেন যা এখন রয়েছে কিশোর ও যুবসমাজের হাতের নাগালে। আর এসবই ধর্ষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে সমাজের বিড়াট একটা অংশ দাবি করে।
তাই নারীদের পর্দা আর ঘোরাফেরার কথা বলে আসল কারণকে কি নিবারিত করা যাবে ? যদি না দেশ থেকে, সমাজ থেকে এই নিষিদ্ধ দ্রব্যগুলো বা বিষয়গুলো একেবারে প্রতিরোধ বা এটার একটা সুষ্ট সঠিক নিয়ম করা না যায় ?
এখন একবার ভাবুন তো এভাবেই আমরা আমাদের সোনার টুকরো ছেলেদেরকে নষ্ট করছি না কী ? তাদের ভবিষ্যৎ জীবন একটা অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছি না কী? পাশাপাশি আমাদের মা-বোনেরা ধর্ষণ হচ্ছে এবং সাথে কাউকে মেরেও ফেলা হচ্ছে।
এখন আপনারাই বলুন লালনপালন বা পরিবারকে কতটা দায়ী করা যায় ?
তবে হ্যাঁ স্কুলের কথাটা একটু ভাববার বিষয় কারণ কিশোর-কিশোরীরা দিনের বেশিরভাগ সময়টাই স্কুলে কাটায়। তাই সেখানে তাদের সচেতনতামূলক এবং এ ধরণের কাজগুলো সংগঠিত করলে তার পরিণতি কি হতে পারে সে বিষয়ে একটা এসট্রা ক্লাশ সংযোজন করলে ভালো হয়। অনৈতিক বা নীতিবিরুদ্ধ সমসাময়িক ঘটনাগুলো তাদের মাঝে আলোচনা করলে ভুল পথ বেছে নেওয়ার আশংকা কম থাকবে। কিন্তু এসব কথা যেন এখন উলু বনে মুক্তো ছড়ানোর মতই।বরং মাঝে মাঝে এর উল্টোটাই চোখে পড়ে যেমন কিছু স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই নেশাজাতীয় দ্রব্যের আদানপ্রদান দিব্যি চলছে রীতিমতো।
বর্তমান যুগে প্রায় প্রতিটি নারীই নিজ যোগ্যতানুযায়ী শ্রেণীভেদে কর্মজীবী। এই নারীরা একদিকে যেমন সন্তানকে একা ছেড়ে কর্মে মনোনিবেশ করতে পারেন না অপরপক্ষে সন্তানদেরকেও নিবিড় পরিচর্যায় রাখতে পারেন না বিধায় বাড়িতে অন্যান্য সদস্য এবং কর্মস্থলেও কর্মকর্তাদের কাছে লাঞ্চিত হতে হয়। এরপরেও কি সেই কর্মীদের বা নারীদের মনের অবস্থা ভালো থাকতে পারে আপনারাই বলুন? তাহলে এখন আপনারাই বলুন পরিবার কতটুকু দায়ী এই কিশোর কিংবা যুবসমাজ বিপদের মুখে পতিত হওয়ার জন্য?
এখানে আরও একটি প্রশ্ন উঠতে পারে নারীরা কেন বাইরে কাজ করবেন ?
হ্যাঁ সেটাই। কিন্তু ভেবে দেখেছেন বর্তমান বাজার মূল্য যেভাবে বেড়েই চলছে একজন নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা গরিব যাই বলুন একজনের ইনকামের টাকায় সংসার চালিয়ে সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া আদৌও কী বর্তমান যুগে সম্ভব?
তাছাড়া মা খাদিজাও বিড়াট বড় ব্যবসা চালাতেন। তাহলে এ যুগের নারীরা কেন পারবেন না
অবশ্যই পারবেন শুধু সমাজের চোখের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। আর এর জন্য চাই আমাদের সমাজব্যবস্থায় স্বছতা ও নিরাপত্তা। আপনারাই বলুন এটার প্রয়োজন নয় কী? যেন আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এভাবে আর আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে না থাকি।
অপরপক্ষে শিশুকন্যা এবং বৃদ্ধারা কোন অপরাধে ধর্ষণ হচ্ছে? এটা কি আপনারা বলতে পারবেন?
নারীর পর্দা, নাকি লালনপালন না আইনব্যাবস্থা,না অন্যকিছু? এটাও খতিয়ে দেখার বিষয়।
আমার মনে হয় যারা এই কাজ করে তারা হয়ত মানুষরূপে জানোয়ার এবং এই জানোয়ার হওয়ার সাহস হয়ত পায় তাদের পাশে থাকা গডফাদারদের জন্য আর এই সমাজব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়া।
তাই আসুন এই বিষয়গুলো ভেবে দেখে আমরা নিজ নিজ সামাজিক অবস্থান থেকে দৃষ্টিভঙ্গি একটু পরিবর্তন করি করণ নারীজাতির ইজ্জত ও সম্মানের সাথে দেশের সম্মান জড়িত।
তাই এর প্রতিকার শুধুই রাষ্ট্রের কাছে নয় দেশের সকলের কাছে আশা করছি বিনীতভাবে অনুরোধ জানিয়ে।
না হলে নারীজাতিকে আর থামানো যাবে না। কারণ
নারীরা আজ বড় ক্ষুব্ধ এবং খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং নারীদের পিঠ আজ দেওয়ালে ঠেকে গেছে।
এমনভাবে যদি চলতেই থাকে হয়ত দেখা যাবে
প্রসবিতারা তাদের সন্তানকে সুষ্ঠুভাবে ও সুন্দর মননের মানুষ হিসেবে জন্ম দিতে অপারগ হবেন আর ক্রমে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কেমন হবেন এটাও ভেবে দেখার বিষয়। কিংবা নিজেই তাদের ভূমিষ্ঠ কন্যাশিশুকে শ্বাসরুদ্ধ করে হয়ত আতুরঘরেই মেরে ফেলবেন। আর কন্যাশিশুই বা বলছি কেন, কন্য -পুত্র যাই বলুন সকলকে নিয়েই আজ আমরা আতংকিত।
তাই ধর্ষক আর নারীদেরকে দোষারোপ না করে বরং
এই সোনার দেশকে ও সোনার ছেলেমেয়েদেরকে
কিভাবে রক্ষা করতে পারা যায় সেটার একটা সঠিক আইনব্যবস্থা এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। তাই দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা এই দাবিটুকু করছি
সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে।
লেখক
হাবিবা বেগম
সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করছি সেটা হলো আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে।
আর এই একটি দিক আলোচোনা করতে গিয়ে আমাকে
দু'টো বিষয়ের উপরে বলতে হবে কারণ একটার সাথে আর একটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
আমাদের তরুণ প্রজন্মরা চোখের সামনে যেভাবে
বিভিন্ন ধরনের মাদক, মেয়েদের উত্যক্ত করা, ধর্ষণ করার নেশায় মেতে উঠছে এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়।
ধর্ষণ আর মাদকাসক্ত নিয়ে সমাজ আজ যেভাবে আতঙ্কিত বা বিপদগ্রস্ত তাতে সমাজের গরিব, নিম্নবৃত্ত ও মধ্যবৃত্তের কিছু শ্রেণির মানুষ চলার পথে থমকে যাচ্ছেন।
আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অনেকেই নাবালিকা মেয়েদেরকে বিয়ে
দিয়ে দিচ্ছেন তাদের স্বপ্ন এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ভাসিয়ে দিচ্ছেন বিভীষিকার জলে। অশ্রুতে পরিণত হয়ে জীবন হচ্ছে শৃঙ্খল। পদদলিত করছেন তাদের আশা আকাঙ্খা। বড় হয়ে লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছাকে "বিয়ে "নামক একটি শব্দে তাদের দাঁড়ানোর পা-টাই পঙ্গু করে দিচ্ছেন। এটা একটা বিড়াট ঝুঁকি আর এই ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন সেই মেয়েটি তথা পরিবার তথা দেশ।
এভাবে চলতে থাকলে হয়তো সেই গরীব বা নিম্বমধ্যবিত্ত
বা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো তাদের নিজেদের স্বপ্নকে হারিয়ে ফেলবেন। বেঁচে থাকবেন বুকে মৃত স্বপ্ন লালন
করে।
কোনো বাবা-মায়েরাই চায় না তাদের সন্তান ধর্ষক হউক বা বিপথে যাক বরং স্বপ্ন দেখেন তাদেরকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার।
তবুও দেখা যায় নিজস্ব এলাকায়, খবরের কাগজ খুললে, টিভির চ্যানেলেগুলোতে এবং আরও ভিবিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় অগণিত ধর্ষণের খবর। আর এই ধর্ষণগুলো কারো না কোরো ছেলের দ্বারা কিংবা পুরুষের দ্বারা সংগঠিত হচ্ছে। কিন্তু ইচ্ছে করে কেউ নিজের ছেলেকে ধর্ষক বানায় না। তাই কোনো ধর্ষক কোনো বাবা-মায়ের ছেলে নয় বা হতে পারে না। তাই তার চরম শাস্তির দাবি করতে পারি বা করছি রাষ্ট্রের কাছে। এখন কথা হচ্ছে যে, প্রায় শুনতে পাওয়া যায় ধর্ষণের জন্য নাকি নারীরাই দায়ী। তাই ধর্ষণকারীর আর শাস্তিটা ঠিকঠাক হচ্ছে না বা এগুচ্ছে না। আইনের বহু ফাঁকফোকর দিয়ে গলে পড়ছে শাস্তি ব্যবস্থা। হ্যাঁ আমিও বলছি নারীরা কিছুটা দায়ি কিন্তু সর্বক্ষত্রে নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে নয় সে বিষটি অবশ্যই জানতে পারব এই শিরোনামের লেখাটির মাঝে।
প্রথমেই বলি নারীদের বেপর্দা কিছুটা দায়ি। এখন কথা হলো বেপর্দা কাকে বলব তাই না? হ্য্যাঁ সেটাই। কিন্তু আমার মনে হয় কোরান এবং হাদিসে এর বিস্তারিত বর্ননা রয়েছে। শুধুই বোরখাকেই পর্দা বলা ঠিক হবে না
আসল পর্দা হলো চোখের পর্দা এবং সমস্ত শরীর ঢেকে
রাখার মতো ঢিলেঢালা পোশাক। সেদিক দিয়ে ভাবলে সকল নারী বেপর্দা নয়।
আবার অনেক নারীই হয়তো একটু বেপর্দা তবে উলঙ্গ নয়। কারণ অনেকেই সবসময় হয়ত বোরখায় নিজেকে আবৃত করে রাখতে পারে না। আর কেন পারে না সে ব্যপারে সৃষ্টিকর্তা অবগত রয়েছেন। তাই এই একটু কেন বেপর্দা এটা সমাজকেও একটু ভাবতে হবে বৈকি।
ধর্মের গোড়ামি দিয়ে সবকিছু নারীদের প্রতি চাপিয়ে দেওয়া আমার মতে মোটেও উচিত নয় এবং এটা অমানবিক কাজ। পুরুষ এবং নারী আমরা চলার পথে অনেকেই অনেক পাপ করছি। সেগুলোও একটু সকলকে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি শুধু পর্দা পর্দা না করে। আর আমরা প্রায়শই দেখেছি ঘোমটার আড়ালে খেমটা নাচতে। এখানে এই কথাটা আমি এজন্যই বলছি যে অনেকেই বোরখার আড়ালে মাদক পাচার থেকে অনেক কুকর্ম করে থাকেন এটাও কিন্তু কোনো পুরুষ দ্বারা চালিত বা স্বীকার। এ ধরণের পর্দা কি সমাজের জন্য মঙ্গলজনক?
পরকালের কথাটা নাই বললাম। তার চেয়ে আমরা যদি সৎ এবং স্বচ্ছ থাকি এবং অন্যান্য পাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি তাহলে হয়ত এই একটু বেপর্দায় থেকে বা যারা দেখে পাপ করছেন তা ওই ঘোমটার আড়ালে খেমটা নাচার থেকে অনেক ভালো নয় কী ? তবে আমি পর্দার বিপক্ষে অবশ্যই বলছি না। পর্দাই নারীকে হেফাজত করে এটাই সত্যি তবে কিছু নরপশুদের কাছে পর্দাও হার মানে। তাই আমার মনে হয় নারীর পর্দার সাথে সাথে পুরুষকেও তার চোখের পর্দা ও নিজেকে সংযত রাখতে হবে। এটা আমার কথা নয় এটাও কোরান, হাদিসে এবং প্রতি ধর্মের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে বর্ণনা রয়েছে।
তবে হ্যাঁ ধর্ষণের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে এটা কিছুটা হলেও একটি শিশুর লালন-পালন ও সামাজিক রীতিনীতি বিচার ব্যাবস্থা, পৃষ্টপোষকতা এবং নারীর বেপর্দার উপরেও বর্তায়।
তাই এই বিষয়গুলো আমাদের ভাববার এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন।
দেশের একটি বড় আয়ের উৎস যেন নারীকে পণ্য করে গড়ে উঠছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পর্দায় থাকলে সে তার ক্যারিয়ার গঠনে তেমন এগুতে পারে না যতই সে দক্ষ থাকুক। তাই কিছু নারী নিজ ইচ্ছায় একটু বেপর্দা হয়ে পড়ছে। শুধু ক্যারিয়ারকে ঠিক কিংবা উপরের সিঁড়িতে উঠার জন্য।
এখন বলুন এটার জন্য দায়ী কে? আপনারা কি বলতে
পারবেন? তবে আমার মনে হয় কিছুটা সমাজ ব্যাবস্থা ও কতিপয় পুরুষমানুষ।
আবার দেখতে পাই নারীদেরকে পণ্য হিসেবে আয় করার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। কতিপয় নারীও টাকার লোভে নেমে পড়ছে সেই খেলায়। তাই সেই নারীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই দয়া করে, যা আয় করবেন নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখে করবেন। কতিপয় পুরুষের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেকে উলঙ্গভাবে পরিবেশন করবেন না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় আপনাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অর্থাৎ নাভিমূল, স্তন্যদ্বয় পিঠ অর্ধেক খোলা। নামে মাত্র গায়ে কাপড় থাকে।
এখন কথা হলো, এখানে পুরুষেরা চোখের পর্দা ও নিজেকে কতটুকু সংযত রাখতে পারবে? এখন ইন্টারনেটের যুগে বিভিন্ন মাধ্যমে এসব এবং নোংরা ভিডিও দেখে কিশোররা কামুকপ্রবণ হয়ে উঠছে। কিশোরই বা কেন বলছি কিশোর ছাড়াও যুবক বৃদ্ধ সকলেই কামুক প্রবণ হয়ে উঠছে।
এছাড়াও রয়েছে নেশাজাতীয় দ্রব্য -ভাঙ, গাজা, ইয়াবা দেশি -বিদেশি মদ হিরোইন আরও হয়ত অনেককিছু যা গ্রাম-গঞ্জে অর্থাৎ সমাজের কোণে কোণে ছিটিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে।
নোংরা ভিডিও বলেন বা নেশাজাতীয় দ্রব্যই বলেন যা এখন রয়েছে কিশোর ও যুবসমাজের হাতের নাগালে। আর এসবই ধর্ষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে সমাজের বিড়াট একটা অংশ দাবি করে।
তাই নারীদের পর্দা আর ঘোরাফেরার কথা বলে আসল কারণকে কি নিবারিত করা যাবে ? যদি না দেশ থেকে, সমাজ থেকে এই নিষিদ্ধ দ্রব্যগুলো বা বিষয়গুলো একেবারে প্রতিরোধ বা এটার একটা সুষ্ট সঠিক নিয়ম করা না যায় ?
এখন একবার ভাবুন তো এভাবেই আমরা আমাদের সোনার টুকরো ছেলেদেরকে নষ্ট করছি না কী ? তাদের ভবিষ্যৎ জীবন একটা অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছি না কী? পাশাপাশি আমাদের মা-বোনেরা ধর্ষণ হচ্ছে এবং সাথে কাউকে মেরেও ফেলা হচ্ছে।
এখন আপনারাই বলুন লালনপালন বা পরিবারকে কতটা দায়ী করা যায় ?
তবে হ্যাঁ স্কুলের কথাটা একটু ভাববার বিষয় কারণ কিশোর-কিশোরীরা দিনের বেশিরভাগ সময়টাই স্কুলে কাটায়। তাই সেখানে তাদের সচেতনতামূলক এবং এ ধরণের কাজগুলো সংগঠিত করলে তার পরিণতি কি হতে পারে সে বিষয়ে একটা এসট্রা ক্লাশ সংযোজন করলে ভালো হয়। অনৈতিক বা নীতিবিরুদ্ধ সমসাময়িক ঘটনাগুলো তাদের মাঝে আলোচনা করলে ভুল পথ বেছে নেওয়ার আশংকা কম থাকবে। কিন্তু এসব কথা যেন এখন উলু বনে মুক্তো ছড়ানোর মতই।বরং মাঝে মাঝে এর উল্টোটাই চোখে পড়ে যেমন কিছু স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই নেশাজাতীয় দ্রব্যের আদানপ্রদান দিব্যি চলছে রীতিমতো।
বর্তমান যুগে প্রায় প্রতিটি নারীই নিজ যোগ্যতানুযায়ী শ্রেণীভেদে কর্মজীবী। এই নারীরা একদিকে যেমন সন্তানকে একা ছেড়ে কর্মে মনোনিবেশ করতে পারেন না অপরপক্ষে সন্তানদেরকেও নিবিড় পরিচর্যায় রাখতে পারেন না বিধায় বাড়িতে অন্যান্য সদস্য এবং কর্মস্থলেও কর্মকর্তাদের কাছে লাঞ্চিত হতে হয়। এরপরেও কি সেই কর্মীদের বা নারীদের মনের অবস্থা ভালো থাকতে পারে আপনারাই বলুন? তাহলে এখন আপনারাই বলুন পরিবার কতটুকু দায়ী এই কিশোর কিংবা যুবসমাজ বিপদের মুখে পতিত হওয়ার জন্য?
এখানে আরও একটি প্রশ্ন উঠতে পারে নারীরা কেন বাইরে কাজ করবেন ?
হ্যাঁ সেটাই। কিন্তু ভেবে দেখেছেন বর্তমান বাজার মূল্য যেভাবে বেড়েই চলছে একজন নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা গরিব যাই বলুন একজনের ইনকামের টাকায় সংসার চালিয়ে সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া আদৌও কী বর্তমান যুগে সম্ভব?
তাছাড়া মা খাদিজাও বিড়াট বড় ব্যবসা চালাতেন। তাহলে এ যুগের নারীরা কেন পারবেন না
অবশ্যই পারবেন শুধু সমাজের চোখের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। আর এর জন্য চাই আমাদের সমাজব্যবস্থায় স্বছতা ও নিরাপত্তা। আপনারাই বলুন এটার প্রয়োজন নয় কী? যেন আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এভাবে আর আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে না থাকি।
অপরপক্ষে শিশুকন্যা এবং বৃদ্ধারা কোন অপরাধে ধর্ষণ হচ্ছে? এটা কি আপনারা বলতে পারবেন?
নারীর পর্দা, নাকি লালনপালন না আইনব্যাবস্থা,না অন্যকিছু? এটাও খতিয়ে দেখার বিষয়।
আমার মনে হয় যারা এই কাজ করে তারা হয়ত মানুষরূপে জানোয়ার এবং এই জানোয়ার হওয়ার সাহস হয়ত পায় তাদের পাশে থাকা গডফাদারদের জন্য আর এই সমাজব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়া।
তাই আসুন এই বিষয়গুলো ভেবে দেখে আমরা নিজ নিজ সামাজিক অবস্থান থেকে দৃষ্টিভঙ্গি একটু পরিবর্তন করি করণ নারীজাতির ইজ্জত ও সম্মানের সাথে দেশের সম্মান জড়িত।
তাই এর প্রতিকার শুধুই রাষ্ট্রের কাছে নয় দেশের সকলের কাছে আশা করছি বিনীতভাবে অনুরোধ জানিয়ে।
না হলে নারীজাতিকে আর থামানো যাবে না। কারণ
নারীরা আজ বড় ক্ষুব্ধ এবং খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং নারীদের পিঠ আজ দেওয়ালে ঠেকে গেছে।
এমনভাবে যদি চলতেই থাকে হয়ত দেখা যাবে
প্রসবিতারা তাদের সন্তানকে সুষ্ঠুভাবে ও সুন্দর মননের মানুষ হিসেবে জন্ম দিতে অপারগ হবেন আর ক্রমে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কেমন হবেন এটাও ভেবে দেখার বিষয়। কিংবা নিজেই তাদের ভূমিষ্ঠ কন্যাশিশুকে শ্বাসরুদ্ধ করে হয়ত আতুরঘরেই মেরে ফেলবেন। আর কন্যাশিশুই বা বলছি কেন, কন্য -পুত্র যাই বলুন সকলকে নিয়েই আজ আমরা আতংকিত।
তাই ধর্ষক আর নারীদেরকে দোষারোপ না করে বরং
এই সোনার দেশকে ও সোনার ছেলেমেয়েদেরকে
কিভাবে রক্ষা করতে পারা যায় সেটার একটা সঠিক আইনব্যবস্থা এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। তাই দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা এই দাবিটুকু করছি
সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে।
লেখক
হাবিবা বেগম
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শ.ম.ওয়াহিদুজ্জামান ২৩/১০/২০২০সুন্দর লেখা।
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৮/১০/২০২০কী চমৎকার!