ত্যাগের মহিমায় খুশি
একটি কবিতা লিখছিলাম বসে বসে। বাসায় কেউ ছিল না একদম নিরিবিলি।ক'দিন বাদে ইদুল- আযহা। ইদের কেনাকাটা করার জন্য খুশি ওর বাবা ও ভাইয়ের সাথে বাজারে গেল। একটা রিফরিজারেটরও কিনবে মাংস রাখার জন্য। আমার আর আমার মেয়ের এ ব্যাপারে অবশ্য আপত্তি ছিল।
আমাকে আজ কেমন জানি অজানা এক শূন্যতা
কুঁড়ে কুঁড়ে কাচ্ছে। সেই তাগিদেই লিখতে বসা। অনেক সময় মন খারাপ থাকলে দুই একটা কবিতা লিখলেই মনটা ফ্রেস লাগে কিন্তু আজ তবুও শূন্যতা যাচ্ছে না বুকের ভিতরটা হু হু করে উঠছে।
এমন সময় মোবাইলে ক্রিং ক্রিং শব্দ। দেখি ইনবক্সে ম্যাসেজ। ম্যাসেজটি ম্যাগাজিন সম্পাদকের । উনাকে হয়ত অনেকেই চিনেন। উনি বর্তমানে নামকরা মাসিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক। ভারি ভালো মানুষ। অমায়িক ব্যবহার।
উনার ম্যাসেজ;- আপা পাঁচ'শত শব্দের ইদ উপলক্ষ্যে
একটি গল্প লেখার কথা ছিল, লিখেছেন?
রিপ্লাই;- ব্যস্ততার কারণে লিখা হয়ে উঠেনি আপা।
আসলে ব্যাপারটা শুধুমাত্র ব্যস্ততা ছিল না। ওই বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে আমি লিখতে পারি না বা আমার ইচ্ছেও হয় না, ভাবতে ভাবতেই আবার উনার ম্যাসেজ।
ম্যাসেজ;- আপা দুদিন সময় দেওয়া হল লিখে ফেলুন।
রিপ্লাই;- দেখি চেষ্টা করে।
শ্রাবণের আকাশে কালো মেঘের সাথে দমকা
হাওয়ায় তাড়াতাড়ি বৃষ্টি শুরু হয় আবার তাড়াতাড়ি থেমেও যায়।
আমার অবস্থাটাও ঠিক সেরকমই দাঁড়ালো। ঝরের গতিতে লিখতে শুরু করলাম আর অমনি খুশিরা বাজার
থেকে ফিরে আসল।অগ্যতা কলমের মাথাটা কলমে
পরিয়ে দিতে হল। লেখা আর হল না।
আমার মেয়ে- ছেলে একটু দয়ালু টাইপের।
নিজের জন্য কাপড় না কিনে গরিব পাড়া- প্রতিবেশি
এবং গরিব বন্ধুদের জন্য কিনে এনেছে।
জিজ্ঞেস করায় বলল;- আমরা তো প্রায় নতুন কাপড়
কিনি মা ওরা নতুন কাপড় পড়ার তেমন সুযোগ পায়
না। তাই ওদের জন্য এনেছি।তুমি খুশি হউনি মা?
হয়েছি, অনেক খুশি হয়েছি মা।
তোমাদের জন্য আজ গর্বে আমার বুক ভরে গেল আর মহান আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করছি এরকম ছেলে-মেয়ে
যেন ঘরে ঘরে জন্ম নেয়।
একঝাঁক পাখিকে ঘরের দরজা বন্ধ করে কিছুদিন রেখে ছেড়ে দিলে ঝাকবেঁধে ঝাপটাতে ঝাপটাতে ডানা
মেলে উড়ে যায় আকাশপানে। আমারও বুকের ভেতরে
সুখপাখিগুলো যেন তেমন করেই উড়ছে খুশিতে।
ইদের দিনে সকালে সবাই ব্যস্ত স্নান সেরে ইদের
জামাতে যাবে নামাজ আদায় করার জন্য। কারণ
কোরবানি ইদের জামাত একটু সকাল সকাল হয়। আমি
রান্নায় ব্যস্ত। আমাকেও রান্না সেরে নামাজ আদায়
করতে হবে। খুশিও আমার সাথে নামাজ আদায় করে।
তাই ওর খোঁজ করছিলাম। দেখি মেয়ে ঘরে কোণে মুখ ঝুলিয়ে বসে রয়েছে।
জিজ্ঞেস করি কি ব্যাপার, কি হয়েছে কেন
এভাবে বসে আছো মা? স্নান সেরে এসো নামাজ আদায়
করব। কিন্তু খুশি কোনো উত্তর দিচ্ছে না।
বারবার জিজ্ঞেস করায়, এবারে সে কাঁদতে কাঁদতে বলে-, আমি কিন্তু কোরবানির মাংস খাবো না মা।
কেন খাবে না মা কি হয়েছে বলো ? না বললে কি করে
বুঝব কেন খাবে না,
কই বলছ না কেন? কী সমস্যা? কেন খাবে না বলো? চুপ করে থাকলে কী আর চলে।
এবারে সে চোখ মুছতে মুছতে বলল; কোরবানির মাংস না কী তিন দিনের বেশি খাওয়ায় যায় না মৌলানা চাচাকে সেদিন বলতে শুনেছি। খেলে না কি অনেক পাপ হয়, ওটা না কি হারাম খাওয়ায় হয়ে যায়। তাই খাবো না। আর তোমরাও আমাকে খাওয়াইও না মা। আমি সেজন্য তখন আব্বুকে রিফরিজারেটর কিনতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু আব্বু শোনেনি।
ওহ্ এই কথা।
আগেভশোন আমার কথা..
তারপর যদি মনে হয় তোমার খাবো না তাহলে খেয়ো না
আর আমি জোরও করব না।
তুমি হয়ত সেদিন সসম্পূর্ণ কথাটা হয়তো শোনো নাই। ওই হাদিসকে রহিত করেছেন । নিজের ভাগের মাংস তুমি যতদিন স্বাস্থ্যসন্মত উপায় সংরক্ষণ করতে পারবে ততদিন খেতে পারবে। অর্থাৎ তোমার কোরবানি দেওয়া
মাংসকে তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ ফকির-মিছকিনকে, এক ভাগ প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনকে আর এক ভাগের অধিকার সম্পূর্ণ তুমি ।
এবার বলো তুমি খাবে? না তোমাকে প্রতিদিন সবজি করে দিব।
খুশির ছোটো ভাই দুষ্টুমি করে বলছে, বুবু সবজিই খাবে
বুবুর ভাগের মাংসটা আমি খাবো।
খুশি ছুটল ভাইয়ের পেছনে। শুরু হয় ওদের খুনসুটি।
ওদের বাদরামি থামিয়ে মেয়ের গলা জড়িয়ে আদর করে বললাম, তুমি এ নিয়ে চিন্তা করো না। তোমার মনের ইচ্ছাই পূর্ণ করব। একদিনের বেশি আমরা এবার মাংস খাবো না। আমাদের নিজের ভাগের মাংসগুলোও বিলিয়ে দিব। এবার কেন বলছি, ইচ্ছে আছে প্রতিবারেই আমরা এই কাজটা করব।
কী খুশি এবার খুশি তো? খাবে তো মাংস? মেয়ে
সহাস্যমুখে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,- মা তুমি
খুব খুব ভালো, বলে স্নান সেরে আমার সাথে নামাজ
আদায় করলো তারপর সবাই একসাথে খেয়ে খুশি
ওর বাবাকে সাথে নিয়ে পাড়া- প্রতিবেশী, বন্ধু এবং গরিবদের মাঝে মাংস বিলানো শুরু করে।
প্রজাপতির ডানার সব রং যেন খুশির চোখে- মুখে ভিড় জমিয়েছে আজ।
আমাকে আজ কেমন জানি অজানা এক শূন্যতা
কুঁড়ে কুঁড়ে কাচ্ছে। সেই তাগিদেই লিখতে বসা। অনেক সময় মন খারাপ থাকলে দুই একটা কবিতা লিখলেই মনটা ফ্রেস লাগে কিন্তু আজ তবুও শূন্যতা যাচ্ছে না বুকের ভিতরটা হু হু করে উঠছে।
এমন সময় মোবাইলে ক্রিং ক্রিং শব্দ। দেখি ইনবক্সে ম্যাসেজ। ম্যাসেজটি ম্যাগাজিন সম্পাদকের । উনাকে হয়ত অনেকেই চিনেন। উনি বর্তমানে নামকরা মাসিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক। ভারি ভালো মানুষ। অমায়িক ব্যবহার।
উনার ম্যাসেজ;- আপা পাঁচ'শত শব্দের ইদ উপলক্ষ্যে
একটি গল্প লেখার কথা ছিল, লিখেছেন?
রিপ্লাই;- ব্যস্ততার কারণে লিখা হয়ে উঠেনি আপা।
আসলে ব্যাপারটা শুধুমাত্র ব্যস্ততা ছিল না। ওই বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে আমি লিখতে পারি না বা আমার ইচ্ছেও হয় না, ভাবতে ভাবতেই আবার উনার ম্যাসেজ।
ম্যাসেজ;- আপা দুদিন সময় দেওয়া হল লিখে ফেলুন।
রিপ্লাই;- দেখি চেষ্টা করে।
শ্রাবণের আকাশে কালো মেঘের সাথে দমকা
হাওয়ায় তাড়াতাড়ি বৃষ্টি শুরু হয় আবার তাড়াতাড়ি থেমেও যায়।
আমার অবস্থাটাও ঠিক সেরকমই দাঁড়ালো। ঝরের গতিতে লিখতে শুরু করলাম আর অমনি খুশিরা বাজার
থেকে ফিরে আসল।অগ্যতা কলমের মাথাটা কলমে
পরিয়ে দিতে হল। লেখা আর হল না।
আমার মেয়ে- ছেলে একটু দয়ালু টাইপের।
নিজের জন্য কাপড় না কিনে গরিব পাড়া- প্রতিবেশি
এবং গরিব বন্ধুদের জন্য কিনে এনেছে।
জিজ্ঞেস করায় বলল;- আমরা তো প্রায় নতুন কাপড়
কিনি মা ওরা নতুন কাপড় পড়ার তেমন সুযোগ পায়
না। তাই ওদের জন্য এনেছি।তুমি খুশি হউনি মা?
হয়েছি, অনেক খুশি হয়েছি মা।
তোমাদের জন্য আজ গর্বে আমার বুক ভরে গেল আর মহান আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করছি এরকম ছেলে-মেয়ে
যেন ঘরে ঘরে জন্ম নেয়।
একঝাঁক পাখিকে ঘরের দরজা বন্ধ করে কিছুদিন রেখে ছেড়ে দিলে ঝাকবেঁধে ঝাপটাতে ঝাপটাতে ডানা
মেলে উড়ে যায় আকাশপানে। আমারও বুকের ভেতরে
সুখপাখিগুলো যেন তেমন করেই উড়ছে খুশিতে।
ইদের দিনে সকালে সবাই ব্যস্ত স্নান সেরে ইদের
জামাতে যাবে নামাজ আদায় করার জন্য। কারণ
কোরবানি ইদের জামাত একটু সকাল সকাল হয়। আমি
রান্নায় ব্যস্ত। আমাকেও রান্না সেরে নামাজ আদায়
করতে হবে। খুশিও আমার সাথে নামাজ আদায় করে।
তাই ওর খোঁজ করছিলাম। দেখি মেয়ে ঘরে কোণে মুখ ঝুলিয়ে বসে রয়েছে।
জিজ্ঞেস করি কি ব্যাপার, কি হয়েছে কেন
এভাবে বসে আছো মা? স্নান সেরে এসো নামাজ আদায়
করব। কিন্তু খুশি কোনো উত্তর দিচ্ছে না।
বারবার জিজ্ঞেস করায়, এবারে সে কাঁদতে কাঁদতে বলে-, আমি কিন্তু কোরবানির মাংস খাবো না মা।
কেন খাবে না মা কি হয়েছে বলো ? না বললে কি করে
বুঝব কেন খাবে না,
কই বলছ না কেন? কী সমস্যা? কেন খাবে না বলো? চুপ করে থাকলে কী আর চলে।
এবারে সে চোখ মুছতে মুছতে বলল; কোরবানির মাংস না কী তিন দিনের বেশি খাওয়ায় যায় না মৌলানা চাচাকে সেদিন বলতে শুনেছি। খেলে না কি অনেক পাপ হয়, ওটা না কি হারাম খাওয়ায় হয়ে যায়। তাই খাবো না। আর তোমরাও আমাকে খাওয়াইও না মা। আমি সেজন্য তখন আব্বুকে রিফরিজারেটর কিনতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু আব্বু শোনেনি।
ওহ্ এই কথা।
আগেভশোন আমার কথা..
তারপর যদি মনে হয় তোমার খাবো না তাহলে খেয়ো না
আর আমি জোরও করব না।
তুমি হয়ত সেদিন সসম্পূর্ণ কথাটা হয়তো শোনো নাই। ওই হাদিসকে রহিত করেছেন । নিজের ভাগের মাংস তুমি যতদিন স্বাস্থ্যসন্মত উপায় সংরক্ষণ করতে পারবে ততদিন খেতে পারবে। অর্থাৎ তোমার কোরবানি দেওয়া
মাংসকে তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ ফকির-মিছকিনকে, এক ভাগ প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনকে আর এক ভাগের অধিকার সম্পূর্ণ তুমি ।
এবার বলো তুমি খাবে? না তোমাকে প্রতিদিন সবজি করে দিব।
খুশির ছোটো ভাই দুষ্টুমি করে বলছে, বুবু সবজিই খাবে
বুবুর ভাগের মাংসটা আমি খাবো।
খুশি ছুটল ভাইয়ের পেছনে। শুরু হয় ওদের খুনসুটি।
ওদের বাদরামি থামিয়ে মেয়ের গলা জড়িয়ে আদর করে বললাম, তুমি এ নিয়ে চিন্তা করো না। তোমার মনের ইচ্ছাই পূর্ণ করব। একদিনের বেশি আমরা এবার মাংস খাবো না। আমাদের নিজের ভাগের মাংসগুলোও বিলিয়ে দিব। এবার কেন বলছি, ইচ্ছে আছে প্রতিবারেই আমরা এই কাজটা করব।
কী খুশি এবার খুশি তো? খাবে তো মাংস? মেয়ে
সহাস্যমুখে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,- মা তুমি
খুব খুব ভালো, বলে স্নান সেরে আমার সাথে নামাজ
আদায় করলো তারপর সবাই একসাথে খেয়ে খুশি
ওর বাবাকে সাথে নিয়ে পাড়া- প্রতিবেশী, বন্ধু এবং গরিবদের মাঝে মাংস বিলানো শুরু করে।
প্রজাপতির ডানার সব রং যেন খুশির চোখে- মুখে ভিড় জমিয়েছে আজ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২৭/০৭/২০২০প্রানীত হলাম।
-
কুমারেশ সরদার ২৭/০৭/২০২০খুব ভালো
-
ফয়জুল মহী ২৭/০৭/২০২০সুন্দর একটি পোস্ট