এটা গল্প নয়
রক্তাত্ত দেহটি হাসপাতালের বিছানায় পড়ে রয়েছে।
চারপাশ লোকের সমাগম । বাড়ির লোকজন আর
বাইরের লোকজন মিশে একাকার হয়ে গেছে। তবু আমি
একটু ঠেলে ঢোকার চেষ্টা করছি;
-- প্লিজ আমাকে একটু যেতে দিন।
পাশে একটি ছেলে দেখলাম, রোগা ধরণের, চুলগুলো খাড়া খাড়া, দেখে মনে হচ্ছে নেশাটেশা করে।
চেচিয়ে উঠে বলছে-----
-- - আপনাকে যেতে দিব কেন ? আপনি কে ? সাংবাদিক না ডাক্তার ?
--- না-না ভাই , আমি কিছুই না।
-- তাহলে?
-- তাহলে কিছু নয়, ওই মেয়েটিও মানুষ আমিও মানুষ
তাই মনটা ছটফট করছে একটু দেখার জন্যে।
-- ভাই কি হয়েছে মেয়েটির ?
-- জানি না, তবে মারা গেছে মনে হয়!
ইস! মানুষগুলো যে কেন এমন হয়ে যাচ্ছে। মায়া দয়া নাই বললেই চলে। কেমন করে শিয়র না হয়েই
বলছে মারা গেছে মনে হয়। বলার আগে বুকটা একটুও
কেঁপে উঠে না ওদের।
এক পর্যায় আমি ঠেলে না ঠেলা খেয়ে তা বুঝতে পারিনি তবে মেয়েটির বিছানার কাছে পৌঁছে যাই।
মেয়েটিকে দেখে বুকের ভেতরটা ফেটে চৌচির হয়ে গেল। কারণ ওই বয়সে আমারও একটি ছোটো বোন
মারা গিয়েছে । তাই হয়ত আমি বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে উকঠেছি। মেয়েটির বয়স তের থেকে চৌদ্দ বছর হবে। বিছানার পাশে একটি বয়স্ক মহিলা দেখছি। খুব কাঁদছে তার মাথায় হাত রেখে সাথে বিলাপও করছে কিন্তু কিছু বুঝা যাচ্ছে না। আমারও মনের ভেতরটা হু হু করে কেঁদে উঠল তারপরেও বিলাপ শুনে বুঝার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।
এমন সময় ওয়ার্ডবয় দুটো হাত দিয়ে সকলকে সরিয়ে
দিচ্ছে আর মুখে বলছে সরো সরো ডাক্তার স্যার এসেছেন।
স্যারকে দেখতে দিন।
- আহহা! আপনারাই তো ডাক্তার হয়ে গেছেন ?
কানে কথা কী ঢুকছে না আপনাদের? সরছেন না কেন ?
ছোটোবেলায় বলতে শুনতাম হোকার থেকে বোতার বেশি গরম।
- এখানেও তাই দেখলাম ডাক্তারের থেকে ওই ওয়ার্ডবয়টার বেশি গরম।
- ডাক্তার তো কিছুই বলছে না। কত ভদ্র নম্র দেখতেও
অনেক সুন্দর এবং ব্যবহারও অমায়িক ডাক্তারবাবুর।
লোকজন সবাই একটু সরে গেল। সবাই ডাক্তারের মুখের দিকে চেয়ে আছে। কেউ আল্লাহকে ডাকছে,কেউ ভগবানকে ডাকছে, কেউ যীশু ডাকছে আর বলছে রক্ষা করো এই ফুলের মতো ছোট্টো মেয়েটিকে। এমন গুঞ্জন শুনতে পাওয়া যাচ্ছে মাঝে মাঝে। যে বয়স্ক মহিলা কাঁদছিল সম্ভবত মেয়েটির দাদী।
উনি খপ করে ডাক্তারের হাতটি দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলছে;
--স্যার তোহমরায় হামার ভগবান। হামার নাতিনিটাক খালি এইবারের মতো বাঁচায় দাও। মুই তোহমার গোলাম
হয়া থাকিম স্যার।
-- ডাক্তার সাহেব বৃদ্ধাকে আস্বস্ত করে চুপ করতে বললেন। আর জিজ্ঞেস করলেন;
-- বাড়ি কোথায় আপনাদের?
-- চাঁন্দমারি, রাস্তা থেকে ভেলদূর ভিতরত যাবার লাগিবে।
-- ওহ, ঠিক আছে। আপনার সাথে পুরুষমানুষ কে আছে একটু দেখা করতে বলেন।
-- আপনি আর কাঁদবেন না চুপ করুন। আমরা শুধু চেষ্টা করব বাকিটা উপরে ভগবান আছেন উনি দেখবেন । ভগবানকে ডাকুন।
বলেই ডাক্তার সাহেব চলে গেলেন।
মেয়েটি তখনও অবচেতন অবস্থায় রয়েছে। জ্ঞান ফিরছে না। এদিকে শরীরর থেকে প্রায় সব রক্ত বের হয়ে যাচ্ছে । তাই অনেক রক্তের প্রয়োজন।
আমি একটু অবাক হয়েই ওই অচেতন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। যে কি-না মৃত্যুর সাথে এখন পাঞ্জা লড়ছে আদৌ মরবে না বাঁচবে সেই নিশ্চয়তা পাইনি তার অভিভাবক। তারপরও মেয়েরটির রূপ যেন হীরার মতো ঝক্ মক্ করছে। বড় বড় দুটো টানা কালো চোখ
এবং রাঙা ঠোঁটে মৃদু হাসি মাখিয়ে যেন আমাকেই ইশারা করে ডেকে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে।
আমি খুব ইমোশনাল হয়ে উঠি। ছুটাছুটি করি একবার ব্লাড ব্যাংকে একবার ডাক্তারে কাছে। ভাবি এত সুন্দর একটি নিস্পাপ মেয়ে কুড়ি থেকে প্রস্ফুটিত হতে না হতেই বিধাতা এমন কী রোগ দিল যে, যখন তার নানান স্বপ্ন চোখে মেখে প্রজাপতির ডানায় করে ছুটে বেড়ানোর কথা তখন সে বাঁচবার লড়াইয়ে ব্যস্ত।
খুব জানার ইচ্ছে নিয়ে মেয়েটির বাড়ির লোকজনের কাছে ভিড়ার চেষ্টা করি, কথা বলার চেষ্টা করি কিন্তু
বার বার ব্যার্থ হই। সেই খাড়া খাড়া চুলওয়ালা ছেলেটি
তার চোখ দু'টো যেন আমার পাহাড়ায় বসিয়েছে। কেউ
কিচ্ছু বলছে না। শুধু একটা চাপা গুঞ্জন চলছে। তবে
এ-ই টুকুন জানতে পারলাম ছেলেটি মেয়েটির বড় ভাই
বিরেন্দ্র নাম। ডাক্তার নার্স তারাও খুব ছুটাছুটি করছে।
বিফল হয়ে বাড়িতে ফিরে আসি কারণ বাবা বেশি রাত্রে বাইরে থাকতে দেয় না। আর আজ একটু রাত বেশি হওয়ায় বার বার ফোনে তাগাদা বাড়ি ফেরার।
আসলে তাগাদাটা এজন্য যে ভার্সিটি বন্ধ হলেও বাড়ি আসা হয় না। অনেকদিন পর এবারে বাড়ি এসেছি। দু'দিন থেকেই চলে যাবো তাই বাবা ছেলেকে যেন
চোখে হারাচ্ছে। আমি যে অনেকটা বড় হয়েছি বুঝতেই চায় না বাবা। তাই আর কী অগ্যতা ফিরতেই হলো।
কিন্তু আমার এই মস্তিষ্ক সেই হাসপাতালে বিছানায় পড়ে থাকা মেয়েটির কথাই ভাবছে।
ফ্রেশ হয়ে খাওয়া সেরে মশারী টাঙিয়ে শুয়ে পড়লাম কিন্তু ঘুমের কোনো বালাই নেই দু'চোখে। কোলবালিশটা
নিয়ে এপাস আর ওপাশ করে যাচ্ছি শুধু।
হঠাৎ শুনি আমাকে ডাকছে কে জানি -----
ভাইয়া ? ভাইয়া?
কে? কে ওখানে?
আমি পুস্প। হাসপাতালের ওই মেয়েটি। আমাকে ফেলে
চলে এলেন কেন? আমি আপনার চোখে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছি।
আমি জানতে পেরেছি আপনি লিখালিখি করেন আর
আপনি আমাকে আপনার লেখার মাঝেই বাঁচিয়ে রাখবেন। কী ভাইয়া রাখবেন তো?
ধুর এ-কী আগডুমবাগডুম ভাবছি আমি ! তাছাড়া পুস্প
এখানে কিভাবে আসবে ? এটা হয়ত আমার ওকে
নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার কারণে নিদ্রাহীন মস্তিষ্কের কল্পনা। আবার চোখ দুটো বন্ধ করার চেষ্টা করি। নাহ্
এটা আমার কল্পনা নয়, সত্যি সত্যি মশারিটা তোলে
আমার শিয়রের পাশে এসে বলছে---
ভাইয়া আপনার পাশে একটু বসতে পারি?
আমি একটু ইতস্তত করেই বললাম বসো, আর বসতে বলেই আমার গা ভয়ে ছমছম করা শুরু করে।
ভাইয়া আপনি কী আমাকে ভয় পাচ্ছেন ?
না, কেন ভয় পাবো। পাচ্ছি না তো।
আমি বুঝেছি আপনি ভয় পাচ্ছেন। ভয় পাবেন না। আমি শুধু কয়েকটি কথা বলেই চলে যাবো। কারণ আমি দেখেছি আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা মায়া
এবং আমার কী হয়েছে সে সম্পর্কে জানার ইচ্ছা। কেন ওভাবে অচেতন হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছি। কিন্তু আপনি জানতে পারেননি মানে আপনাকে জানতে দেওয়া হয়নি। আপনি অদম্য জানার আগ্রহ ও অশান্ত
মন নিয়ে ফিরে এসেছেন বাড়িতে ।
ঠিক না ভাইয়া?
ভাইয়া শোনছেন?
হ্যাঁ শুনছি--,--
বলেই আবার শিউরে উঠে আমার শরীর। এ কি করে
সম্ভব ? এটা কি হচ্ছে আমার সাথে। আর আমি ভার্সিটির পত্রিকায়, খবরের কাগজে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক লিখি পুস্পই বা জানল কিভাবে। একটু
শীত পড়েছে তারপরেও আমি পুস্পের কথায় ঘেমে নেয়ে যাচ্ছি যেন?
আমি তো কোনকিছুকেই ভয় করি না। তবে আজ কেন
আমার মনের মধ্যে এই মানুষিক চাঞ্চল্যতা?
ভাইয়া ওরা আমার বিষয়টি কাউকে জানতে দিতে চায়নি কারণ বাইরে প্রকাশ হলে ওদের হয়ত একটু সমস্যা হতে পারে আবার ওরা এটাও জানে ওদের কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। তবু, কথায় বলে না " সাবধানের মার নেই "
আপনি কী পারবেন আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে ? আমার কৈশোর ফিরিয়ে দিতে। আমারও ইচ্ছে ছিল অনেক লেখাপড়া করে বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু
করে সমাজে চলাফেরা করব।
হ্যাঁ ঠিক, তুমি তাই করবে।
ভাইয়া আগে আমার কথাগুলো শুনুন তারপর বলবেন
আমি কী করব।
আপনার ভালো লাগছে না শোনতে ?
হ্যাঁ লাগছে বলো? তোমার মতো একটা মিষ্টি মেয়ের কথা সারাজীবন শুনতে ভালো লাগবে। কিন্তু তুমি আগে বলো তো, হাসপাতালের বিছানা থেকে আমার বাড়িতে
কেন এলে অসুস্থ শরীর নিয়ে?
ভাইয়া আগে শুনুন তারপর আপনার কিন্তুর উত্তর পেয়ে
যাবেন। আমার হাতে সময় নেই।
আচ্ছা, ঠিক আছে বলো---
আমরা দুই বোন এক ভাই। আমি সবার ছোটো আমার দিদি সবার বড়। আমার বাবা গরিব মানুষ। আমরা দুই বোনই খুব সুন্দরী। তাই আমাদের বিপদও
অনেক। পাশের গ্রামের চলতি মেম্বারের সাথে আমার
দিদির বিয়ে হয়। জামাইবাবু খুব প্রভাবশালী। দিদিকে
উঠতে বসতে নির্যাতন করে। আমার ভাইকেও রাজনীতি তে ঢুকিয়ে মাস্তান বানিয়েছে নিজের স্বার্থে। ভাইটা সবসময় নেশাজাতীয় জিনিস খেয়ে মাস্তানি করে বেড়ায়। বাবা-মা, দিদি কারুর কথা সে শোনে না। দিদি বাধা করলে দিদিকে ধরে প্রচণ্ড মারধর করে জামাইবাবু। আমার দাদাও জামাইবাবুর কথায় উঠে
আর বসে এক কথায় জামাইবাবুর উপরে কথা বলার সাহস কারো নেই ওই গ্রামে।
আমার পড়াশোনা আমি বেশিদূর করতে পারিনি কারণ জামাইবাবু একদিন আমার বাবাকে বলে, মেয়েদের অত পড়ে লাভ নেই। কী লাভ বলুন? স্বশুর বাড়িতে গিয়ে হাড়ি তো ঠেলতেই হবে। তাই পুস্পকে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন। ওর দিদির হাতে হাতে কাজ করে
দিবে ওরও কাজ শেখা হবে তারপর ভালো পাত্র দেখে আমি একটা বিয়ের ব্যবস্থা করে দিব। তারপর থেকেই
আমি দিদির বাড়ি। জামাইবাবু চরিত্র ভালো না। দিদির
সামনেই কত মেয়ে মানুষের সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে তা আমি বুঝেছিলাম একটু করে । কিন্তু দিদি কিছু বলতে গেলেই মার খায়।
জামাইবাবুর চোখ যখন আমার উপরে পড়ল তখন
আরও ভালো করে বুঝতে পারলাম। আমার গায়ে,
আমার ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে বলবে এত রূপবতী
মেয়েটাকে কী মানুষে ভোগ করবে আমি থাকতে।
দিদি এই কথা শুনে আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে চাইলে
আবার দিদিকে ধরে মারে। এভাবেই চলত।
তারপর একদিন আমি কলিকা থেকেই ঝরে গেলাম প্রস্ফুটিত হতে দেওয়া হলো না আমাকে। জামাইবাবু প্রায় প্রতিদিন আমাকে ভোগ করে তার স্বাদ মেটাতে
থাকে। দিদি বোবার মতো চেয়ে দেখে আমাকে আর
জড়িয়ে ধরে কাঁদে এবং বিড়বিড় করে বলে তোকে
বাঁচাতে পারলাম নারে বোন আমাকে মাপ করিস।
আমিও ধীরে ধীরে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ি। খেতে পারি না, ঘন ঘন বমি করা শুরু করি। শরীটা বলহীন
হয়ে পড়ে ।তখন গ্রাম্য ডাক্তারের কাছ থেকে ঔষধ এনে
খাওয়ায় কিন্তু আমার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হয়ে আরও অবনতি ঘটে। তাখন এক গ্রাম্য দাই ডেকে এনে
নিশ্চিত হলো আমি পোয়াতি হয়েছি চার মাসের।
জামাইবাবু তখন ওই বাচ্চার দায় এড়ানোর জন্য দাইকে
দিয়ে আবার ঔষধ খাওয়ালো আর কী জানি করল
আমি প্রায় বেহুশের মতো হয়ে গেলাম। তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থা
বুঝতে পারছি দাইয়ের মুখ কিছু টাকা আর ভয় দেখিয়ে
বন্ধ করে দেয় । তারপর আমি সম্পূর্ণভাবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি তাই আর কিছু জানি না।
ভাইয়া শোনছেন ?
হ্যাঁ শুনছি, তবে তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
হ্যাঁ করুন
তুমি কেন তোমার জামাইবাবুকে বাধা দাওনি বা ওখান থেকে পালিয়ে আসনি?
ভাইয়া আপনি কী আমার সব কথা শোনেননি? শোনলে তো এ কথা আমাকে জিজ্ঞেস করতেন না।
হ্যাঁ শুনেছি। তবু করলাম।
ওহ।
তারপর থেকেই এই যে আমি হাসপাতালের বিছানায়।
আমি চমকে উঠে বলি ----
তুমি তো এখন আমার বাড়িতে। হাসপাতালের বিছানায় বলছ কেন?
পুস্প?
পুস্প কোথায় গেলে?
কয়েকবার ডাকার পরেও সাড়া না পেয়ে তাড়াতাড়ি মশারি তুলে সমস্ত ঘর খুঁজে দেখি পুস্প কোথাও নেই।
আমার নাকের চারপাশে আবার বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে আর খুব অস্থির লাগছে। কখনো আমার সাথে এরকম
ঘটনা ঘটেনি।
আমি তাহলে এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলাম। তবে
এগুলো কী আমার কল্পনা ছিল। না বাবা আমি আর
কল্পনা বা ভাবনার মধ্যে থাকতে চাই না। আমাকে এবার সত্যিটা জানতেই হবে নাহলে আমিই পাগল হয়ে যাব।
আমি চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে ছুটি হাসপাতালে।
তারপর সেই বিছানার কাছে গিয়ে দেখি মেয়েটা নাই।
এদিকওদিক ছুটাছুটি করে খুঁজেও যখন পেলাম না তখন ডিউটিরত সিস্টারকে জিজ্ঞেস করাতে বলল---
মেয়েটি গতকাল মধ্যরাতেই মারা গিয়েছে।
শুনেই আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আমার সাথে
এটা কী হলো! এতো স্বপ্ন ছিল না, আমি তার উপস্থিতি অনুভব করেছি, দু'জনে কথা বলেছি। না আমাকে জানতেই হবে পুস্পের কী হয়েছিল আর আমিই বা রাতে এসব কী দেখলাম বা কী শুনলাম!
সিস্টারের কাছে জানতে চাইলে, জানে না বলে বিষয়টা
এড়িয়ে যায়।
তারপর আমি কায়দা করে ওই ওয়ার্ডবয়কে অনুরোধ করে পুস্পের ভর্তি ফাইলটা একটু দেখতে চাইলাম।
যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ওয়ার্ডবয়কে ততটা খারাপ নয়।
পুস্পের ভর্তি ফাইলে চোখ বুলিয়েই আমি চমকে উঠি।
এটা কী করে সম্ভব! মহূর্তেই আমার হাত- পা যেন অসার হয়ে পড়ে।
চারপাশ লোকের সমাগম । বাড়ির লোকজন আর
বাইরের লোকজন মিশে একাকার হয়ে গেছে। তবু আমি
একটু ঠেলে ঢোকার চেষ্টা করছি;
-- প্লিজ আমাকে একটু যেতে দিন।
পাশে একটি ছেলে দেখলাম, রোগা ধরণের, চুলগুলো খাড়া খাড়া, দেখে মনে হচ্ছে নেশাটেশা করে।
চেচিয়ে উঠে বলছে-----
-- - আপনাকে যেতে দিব কেন ? আপনি কে ? সাংবাদিক না ডাক্তার ?
--- না-না ভাই , আমি কিছুই না।
-- তাহলে?
-- তাহলে কিছু নয়, ওই মেয়েটিও মানুষ আমিও মানুষ
তাই মনটা ছটফট করছে একটু দেখার জন্যে।
-- ভাই কি হয়েছে মেয়েটির ?
-- জানি না, তবে মারা গেছে মনে হয়!
ইস! মানুষগুলো যে কেন এমন হয়ে যাচ্ছে। মায়া দয়া নাই বললেই চলে। কেমন করে শিয়র না হয়েই
বলছে মারা গেছে মনে হয়। বলার আগে বুকটা একটুও
কেঁপে উঠে না ওদের।
এক পর্যায় আমি ঠেলে না ঠেলা খেয়ে তা বুঝতে পারিনি তবে মেয়েটির বিছানার কাছে পৌঁছে যাই।
মেয়েটিকে দেখে বুকের ভেতরটা ফেটে চৌচির হয়ে গেল। কারণ ওই বয়সে আমারও একটি ছোটো বোন
মারা গিয়েছে । তাই হয়ত আমি বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে উকঠেছি। মেয়েটির বয়স তের থেকে চৌদ্দ বছর হবে। বিছানার পাশে একটি বয়স্ক মহিলা দেখছি। খুব কাঁদছে তার মাথায় হাত রেখে সাথে বিলাপও করছে কিন্তু কিছু বুঝা যাচ্ছে না। আমারও মনের ভেতরটা হু হু করে কেঁদে উঠল তারপরেও বিলাপ শুনে বুঝার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।
এমন সময় ওয়ার্ডবয় দুটো হাত দিয়ে সকলকে সরিয়ে
দিচ্ছে আর মুখে বলছে সরো সরো ডাক্তার স্যার এসেছেন।
স্যারকে দেখতে দিন।
- আহহা! আপনারাই তো ডাক্তার হয়ে গেছেন ?
কানে কথা কী ঢুকছে না আপনাদের? সরছেন না কেন ?
ছোটোবেলায় বলতে শুনতাম হোকার থেকে বোতার বেশি গরম।
- এখানেও তাই দেখলাম ডাক্তারের থেকে ওই ওয়ার্ডবয়টার বেশি গরম।
- ডাক্তার তো কিছুই বলছে না। কত ভদ্র নম্র দেখতেও
অনেক সুন্দর এবং ব্যবহারও অমায়িক ডাক্তারবাবুর।
লোকজন সবাই একটু সরে গেল। সবাই ডাক্তারের মুখের দিকে চেয়ে আছে। কেউ আল্লাহকে ডাকছে,কেউ ভগবানকে ডাকছে, কেউ যীশু ডাকছে আর বলছে রক্ষা করো এই ফুলের মতো ছোট্টো মেয়েটিকে। এমন গুঞ্জন শুনতে পাওয়া যাচ্ছে মাঝে মাঝে। যে বয়স্ক মহিলা কাঁদছিল সম্ভবত মেয়েটির দাদী।
উনি খপ করে ডাক্তারের হাতটি দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলছে;
--স্যার তোহমরায় হামার ভগবান। হামার নাতিনিটাক খালি এইবারের মতো বাঁচায় দাও। মুই তোহমার গোলাম
হয়া থাকিম স্যার।
-- ডাক্তার সাহেব বৃদ্ধাকে আস্বস্ত করে চুপ করতে বললেন। আর জিজ্ঞেস করলেন;
-- বাড়ি কোথায় আপনাদের?
-- চাঁন্দমারি, রাস্তা থেকে ভেলদূর ভিতরত যাবার লাগিবে।
-- ওহ, ঠিক আছে। আপনার সাথে পুরুষমানুষ কে আছে একটু দেখা করতে বলেন।
-- আপনি আর কাঁদবেন না চুপ করুন। আমরা শুধু চেষ্টা করব বাকিটা উপরে ভগবান আছেন উনি দেখবেন । ভগবানকে ডাকুন।
বলেই ডাক্তার সাহেব চলে গেলেন।
মেয়েটি তখনও অবচেতন অবস্থায় রয়েছে। জ্ঞান ফিরছে না। এদিকে শরীরর থেকে প্রায় সব রক্ত বের হয়ে যাচ্ছে । তাই অনেক রক্তের প্রয়োজন।
আমি একটু অবাক হয়েই ওই অচেতন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। যে কি-না মৃত্যুর সাথে এখন পাঞ্জা লড়ছে আদৌ মরবে না বাঁচবে সেই নিশ্চয়তা পাইনি তার অভিভাবক। তারপরও মেয়েরটির রূপ যেন হীরার মতো ঝক্ মক্ করছে। বড় বড় দুটো টানা কালো চোখ
এবং রাঙা ঠোঁটে মৃদু হাসি মাখিয়ে যেন আমাকেই ইশারা করে ডেকে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে।
আমি খুব ইমোশনাল হয়ে উঠি। ছুটাছুটি করি একবার ব্লাড ব্যাংকে একবার ডাক্তারে কাছে। ভাবি এত সুন্দর একটি নিস্পাপ মেয়ে কুড়ি থেকে প্রস্ফুটিত হতে না হতেই বিধাতা এমন কী রোগ দিল যে, যখন তার নানান স্বপ্ন চোখে মেখে প্রজাপতির ডানায় করে ছুটে বেড়ানোর কথা তখন সে বাঁচবার লড়াইয়ে ব্যস্ত।
খুব জানার ইচ্ছে নিয়ে মেয়েটির বাড়ির লোকজনের কাছে ভিড়ার চেষ্টা করি, কথা বলার চেষ্টা করি কিন্তু
বার বার ব্যার্থ হই। সেই খাড়া খাড়া চুলওয়ালা ছেলেটি
তার চোখ দু'টো যেন আমার পাহাড়ায় বসিয়েছে। কেউ
কিচ্ছু বলছে না। শুধু একটা চাপা গুঞ্জন চলছে। তবে
এ-ই টুকুন জানতে পারলাম ছেলেটি মেয়েটির বড় ভাই
বিরেন্দ্র নাম। ডাক্তার নার্স তারাও খুব ছুটাছুটি করছে।
বিফল হয়ে বাড়িতে ফিরে আসি কারণ বাবা বেশি রাত্রে বাইরে থাকতে দেয় না। আর আজ একটু রাত বেশি হওয়ায় বার বার ফোনে তাগাদা বাড়ি ফেরার।
আসলে তাগাদাটা এজন্য যে ভার্সিটি বন্ধ হলেও বাড়ি আসা হয় না। অনেকদিন পর এবারে বাড়ি এসেছি। দু'দিন থেকেই চলে যাবো তাই বাবা ছেলেকে যেন
চোখে হারাচ্ছে। আমি যে অনেকটা বড় হয়েছি বুঝতেই চায় না বাবা। তাই আর কী অগ্যতা ফিরতেই হলো।
কিন্তু আমার এই মস্তিষ্ক সেই হাসপাতালে বিছানায় পড়ে থাকা মেয়েটির কথাই ভাবছে।
ফ্রেশ হয়ে খাওয়া সেরে মশারী টাঙিয়ে শুয়ে পড়লাম কিন্তু ঘুমের কোনো বালাই নেই দু'চোখে। কোলবালিশটা
নিয়ে এপাস আর ওপাশ করে যাচ্ছি শুধু।
হঠাৎ শুনি আমাকে ডাকছে কে জানি -----
ভাইয়া ? ভাইয়া?
কে? কে ওখানে?
আমি পুস্প। হাসপাতালের ওই মেয়েটি। আমাকে ফেলে
চলে এলেন কেন? আমি আপনার চোখে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছি।
আমি জানতে পেরেছি আপনি লিখালিখি করেন আর
আপনি আমাকে আপনার লেখার মাঝেই বাঁচিয়ে রাখবেন। কী ভাইয়া রাখবেন তো?
ধুর এ-কী আগডুমবাগডুম ভাবছি আমি ! তাছাড়া পুস্প
এখানে কিভাবে আসবে ? এটা হয়ত আমার ওকে
নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার কারণে নিদ্রাহীন মস্তিষ্কের কল্পনা। আবার চোখ দুটো বন্ধ করার চেষ্টা করি। নাহ্
এটা আমার কল্পনা নয়, সত্যি সত্যি মশারিটা তোলে
আমার শিয়রের পাশে এসে বলছে---
ভাইয়া আপনার পাশে একটু বসতে পারি?
আমি একটু ইতস্তত করেই বললাম বসো, আর বসতে বলেই আমার গা ভয়ে ছমছম করা শুরু করে।
ভাইয়া আপনি কী আমাকে ভয় পাচ্ছেন ?
না, কেন ভয় পাবো। পাচ্ছি না তো।
আমি বুঝেছি আপনি ভয় পাচ্ছেন। ভয় পাবেন না। আমি শুধু কয়েকটি কথা বলেই চলে যাবো। কারণ আমি দেখেছি আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা মায়া
এবং আমার কী হয়েছে সে সম্পর্কে জানার ইচ্ছা। কেন ওভাবে অচেতন হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছি। কিন্তু আপনি জানতে পারেননি মানে আপনাকে জানতে দেওয়া হয়নি। আপনি অদম্য জানার আগ্রহ ও অশান্ত
মন নিয়ে ফিরে এসেছেন বাড়িতে ।
ঠিক না ভাইয়া?
ভাইয়া শোনছেন?
হ্যাঁ শুনছি--,--
বলেই আবার শিউরে উঠে আমার শরীর। এ কি করে
সম্ভব ? এটা কি হচ্ছে আমার সাথে। আর আমি ভার্সিটির পত্রিকায়, খবরের কাগজে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক লিখি পুস্পই বা জানল কিভাবে। একটু
শীত পড়েছে তারপরেও আমি পুস্পের কথায় ঘেমে নেয়ে যাচ্ছি যেন?
আমি তো কোনকিছুকেই ভয় করি না। তবে আজ কেন
আমার মনের মধ্যে এই মানুষিক চাঞ্চল্যতা?
ভাইয়া ওরা আমার বিষয়টি কাউকে জানতে দিতে চায়নি কারণ বাইরে প্রকাশ হলে ওদের হয়ত একটু সমস্যা হতে পারে আবার ওরা এটাও জানে ওদের কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। তবু, কথায় বলে না " সাবধানের মার নেই "
আপনি কী পারবেন আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে ? আমার কৈশোর ফিরিয়ে দিতে। আমারও ইচ্ছে ছিল অনেক লেখাপড়া করে বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু
করে সমাজে চলাফেরা করব।
হ্যাঁ ঠিক, তুমি তাই করবে।
ভাইয়া আগে আমার কথাগুলো শুনুন তারপর বলবেন
আমি কী করব।
আপনার ভালো লাগছে না শোনতে ?
হ্যাঁ লাগছে বলো? তোমার মতো একটা মিষ্টি মেয়ের কথা সারাজীবন শুনতে ভালো লাগবে। কিন্তু তুমি আগে বলো তো, হাসপাতালের বিছানা থেকে আমার বাড়িতে
কেন এলে অসুস্থ শরীর নিয়ে?
ভাইয়া আগে শুনুন তারপর আপনার কিন্তুর উত্তর পেয়ে
যাবেন। আমার হাতে সময় নেই।
আচ্ছা, ঠিক আছে বলো---
আমরা দুই বোন এক ভাই। আমি সবার ছোটো আমার দিদি সবার বড়। আমার বাবা গরিব মানুষ। আমরা দুই বোনই খুব সুন্দরী। তাই আমাদের বিপদও
অনেক। পাশের গ্রামের চলতি মেম্বারের সাথে আমার
দিদির বিয়ে হয়। জামাইবাবু খুব প্রভাবশালী। দিদিকে
উঠতে বসতে নির্যাতন করে। আমার ভাইকেও রাজনীতি তে ঢুকিয়ে মাস্তান বানিয়েছে নিজের স্বার্থে। ভাইটা সবসময় নেশাজাতীয় জিনিস খেয়ে মাস্তানি করে বেড়ায়। বাবা-মা, দিদি কারুর কথা সে শোনে না। দিদি বাধা করলে দিদিকে ধরে প্রচণ্ড মারধর করে জামাইবাবু। আমার দাদাও জামাইবাবুর কথায় উঠে
আর বসে এক কথায় জামাইবাবুর উপরে কথা বলার সাহস কারো নেই ওই গ্রামে।
আমার পড়াশোনা আমি বেশিদূর করতে পারিনি কারণ জামাইবাবু একদিন আমার বাবাকে বলে, মেয়েদের অত পড়ে লাভ নেই। কী লাভ বলুন? স্বশুর বাড়িতে গিয়ে হাড়ি তো ঠেলতেই হবে। তাই পুস্পকে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন। ওর দিদির হাতে হাতে কাজ করে
দিবে ওরও কাজ শেখা হবে তারপর ভালো পাত্র দেখে আমি একটা বিয়ের ব্যবস্থা করে দিব। তারপর থেকেই
আমি দিদির বাড়ি। জামাইবাবু চরিত্র ভালো না। দিদির
সামনেই কত মেয়ে মানুষের সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে তা আমি বুঝেছিলাম একটু করে । কিন্তু দিদি কিছু বলতে গেলেই মার খায়।
জামাইবাবুর চোখ যখন আমার উপরে পড়ল তখন
আরও ভালো করে বুঝতে পারলাম। আমার গায়ে,
আমার ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে বলবে এত রূপবতী
মেয়েটাকে কী মানুষে ভোগ করবে আমি থাকতে।
দিদি এই কথা শুনে আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে চাইলে
আবার দিদিকে ধরে মারে। এভাবেই চলত।
তারপর একদিন আমি কলিকা থেকেই ঝরে গেলাম প্রস্ফুটিত হতে দেওয়া হলো না আমাকে। জামাইবাবু প্রায় প্রতিদিন আমাকে ভোগ করে তার স্বাদ মেটাতে
থাকে। দিদি বোবার মতো চেয়ে দেখে আমাকে আর
জড়িয়ে ধরে কাঁদে এবং বিড়বিড় করে বলে তোকে
বাঁচাতে পারলাম নারে বোন আমাকে মাপ করিস।
আমিও ধীরে ধীরে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ি। খেতে পারি না, ঘন ঘন বমি করা শুরু করি। শরীটা বলহীন
হয়ে পড়ে ।তখন গ্রাম্য ডাক্তারের কাছ থেকে ঔষধ এনে
খাওয়ায় কিন্তু আমার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হয়ে আরও অবনতি ঘটে। তাখন এক গ্রাম্য দাই ডেকে এনে
নিশ্চিত হলো আমি পোয়াতি হয়েছি চার মাসের।
জামাইবাবু তখন ওই বাচ্চার দায় এড়ানোর জন্য দাইকে
দিয়ে আবার ঔষধ খাওয়ালো আর কী জানি করল
আমি প্রায় বেহুশের মতো হয়ে গেলাম। তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থা
বুঝতে পারছি দাইয়ের মুখ কিছু টাকা আর ভয় দেখিয়ে
বন্ধ করে দেয় । তারপর আমি সম্পূর্ণভাবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি তাই আর কিছু জানি না।
ভাইয়া শোনছেন ?
হ্যাঁ শুনছি, তবে তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
হ্যাঁ করুন
তুমি কেন তোমার জামাইবাবুকে বাধা দাওনি বা ওখান থেকে পালিয়ে আসনি?
ভাইয়া আপনি কী আমার সব কথা শোনেননি? শোনলে তো এ কথা আমাকে জিজ্ঞেস করতেন না।
হ্যাঁ শুনেছি। তবু করলাম।
ওহ।
তারপর থেকেই এই যে আমি হাসপাতালের বিছানায়।
আমি চমকে উঠে বলি ----
তুমি তো এখন আমার বাড়িতে। হাসপাতালের বিছানায় বলছ কেন?
পুস্প?
পুস্প কোথায় গেলে?
কয়েকবার ডাকার পরেও সাড়া না পেয়ে তাড়াতাড়ি মশারি তুলে সমস্ত ঘর খুঁজে দেখি পুস্প কোথাও নেই।
আমার নাকের চারপাশে আবার বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে আর খুব অস্থির লাগছে। কখনো আমার সাথে এরকম
ঘটনা ঘটেনি।
আমি তাহলে এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলাম। তবে
এগুলো কী আমার কল্পনা ছিল। না বাবা আমি আর
কল্পনা বা ভাবনার মধ্যে থাকতে চাই না। আমাকে এবার সত্যিটা জানতেই হবে নাহলে আমিই পাগল হয়ে যাব।
আমি চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে ছুটি হাসপাতালে।
তারপর সেই বিছানার কাছে গিয়ে দেখি মেয়েটা নাই।
এদিকওদিক ছুটাছুটি করে খুঁজেও যখন পেলাম না তখন ডিউটিরত সিস্টারকে জিজ্ঞেস করাতে বলল---
মেয়েটি গতকাল মধ্যরাতেই মারা গিয়েছে।
শুনেই আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আমার সাথে
এটা কী হলো! এতো স্বপ্ন ছিল না, আমি তার উপস্থিতি অনুভব করেছি, দু'জনে কথা বলেছি। না আমাকে জানতেই হবে পুস্পের কী হয়েছিল আর আমিই বা রাতে এসব কী দেখলাম বা কী শুনলাম!
সিস্টারের কাছে জানতে চাইলে, জানে না বলে বিষয়টা
এড়িয়ে যায়।
তারপর আমি কায়দা করে ওই ওয়ার্ডবয়কে অনুরোধ করে পুস্পের ভর্তি ফাইলটা একটু দেখতে চাইলাম।
যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ওয়ার্ডবয়কে ততটা খারাপ নয়।
পুস্পের ভর্তি ফাইলে চোখ বুলিয়েই আমি চমকে উঠি।
এটা কী করে সম্ভব! মহূর্তেই আমার হাত- পা যেন অসার হয়ে পড়ে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জানবক্স খান ১২/০৭/২০২০শেষ হলেও শেষ নেই আমাদের এইসব জীবনের গল্প।
-
ফয়জুল মহী ১২/০৭/২০২০Good post