ধাঁধাঁ
এই গেলো গেলো গেলো!ও শংকর তোর সাইকেলের দিকে তাকা।চায়ের দোকানদার সমরেশ ওঝা হাঁক ছেড়ে বললেন।
শংকর তখনও নতুন ধাঁধাঁ তৈরিতে মত্ত।তার হাতের পাঁচটি আঙুল নতুন চিন্তার সাথে নৃত্য করছে।সমরেশ ওঝার হাঁক ছাড়ার কারণটা হচ্ছে,এই মাত্র একটা ফাঁকা লড়ির চাকা শংকরের সাইকেলের উপর দিয়ে চলে গেছে চোখের নিমেষে।তাতেই সাইকেল টা ফটাস!আরো দু-চারজন লোকের ডাকাডাকি,বকাবকিতে শংকরের ভাবনায় ছেদ পড়ল।সে পাঁচিলের দিকে তাকিয়ে ছিল।উষ্ণ প্রসবন সেই কখন হয়ে গেছে কিন্তু ওই ধাঁধাঁটাই খেল এই যা!পাঁচিল থেকে মুখ ঘুরিয়ে বলেই বসল,ও হরি!আমার সাইকেল!
তখন জনা দুই এগিয়ে এসে বলল,তুমি দিনে দিনে যা হয়ে যাচ্ছ।রাচীতে না পাঠাতে হয়।শংকর ভাঙা সাইলেকের টায়ার ধরে বসে পড়ল।
"দুই চক্র পাশাপাশি
হর্ণ দিলে সরে আসি
মালিকের পায়ের জোরে
যায় সে দৌড়ে দৌড়ে।"
বাহ্ কী শান্তি!এর চেয়ে শান্তির আর কিছু আছে নাকি।চুলোয় যাক সাইকেল।শংকরের মনটা হঠাৎ চমক দিয়ে উঠল নতুন ধাঁধাঁ মাথায় আসায়।সে নতুন যত ধাঁধাঁ পায় সেগুলো খাতায় লিখে ফেলে।এদিকে বউ চিনি,ডাল ইত্যাদি ইত্যাদি আনতে বাজারে পাঠিয়েছে এগুলো না কিনেই সে সোজা ছুট।সাইকেল পরম যত্নে ওখানেই পড়ে থাকল।
ঘরে ঢোকা মাত্রই ছেলে বলে বসল,বাবা আমার খাতা।
খাতা আনবো।তার আগে একটা উত্তর দেতো চিন্টু।
কী?ধাঁধাঁ?
হ্যাঁ।বল এটা কী হবে?
"দুই চক্র পাশাপাশি
হর্ণ দিলে সরে আসি
মালিকের পায়ের জোরে
যায় সে দৌড়ে দৌড়ে"
চিন্টু এমনিতে রোগা পটকা হলে কি হবে।মাথায় বাবার চেয়ে বুদ্ধিতে কম যায়না।সে চটজলদি উত্তর করল,সাইকেল।
এইত হয়েছে।গুড বয়।
গুড বয় ফুড বয় বাদ।আমার অংক খাতা কোথায়?
বাবা বলল,আনছি আগে লিখে নেই।
বলি তোমাকে যে বাজারে পাঠালাম লিস্ট দিয়ে,বাজার কোথায়?
শংকর এবার বুঝতে পারল, আবহাওয়া খুব খারাপ।মেঘে মেঘে গর্জনে বজ্রপাত শুরু হয়।সে বজ্রপাত চায়না।সে পুরোপুরি ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,ভুলে গেছি।টেনশান মাত কারো।এই ধাঁধাঁটা লিখেই বাজার করে আনছি।শংকরের সাইকেল লড়ির নিচে ফটাস হওয়ার ব্যাপারটা চেপে গেলো।নিজে থেকে এব্যাপারে কিছুই বলবে না।এমনিতেই সে জানে সংসার তার বউ চালায়।বাপের বাড়ির টাকা থেকে সংসার চলে।সাইকেল টাও তার শ্বশুরের টাকায়।নিজের বলতে একখানা একতলা পলেস্তারা খসা বাড়ি।এমনিতেও বউকে এক আধটু ভয়ও পায় সে।একটা ছোট চাকরিও করত সে।কিন্তু ওই ধাঁধাঁ টাই চাকরিটা খেল।শংকর খাতা খুলে যেই লিখতে বসল তখনই তার ছেলে এসে বলল,বাবা তোমার সাইকেল কোথায়?দেখছিনা তো।
শংকর ছেলে কে কোলে নিল।আট বছরের ছেলেকে কোলে নেওয়াই যায়।
মাকে বলিস না।সাইকেলটা না ভেঙে গেছে।
ছেলে চোখে বিস্ময় নিয়ে বলল,কিভাবে?
লড়িতে ভেঙে গেছে।
ছেলে একদৌড়ে মার কাছে গেল।ছেলে যে মায়ের একান্ত বাধ্যগত।ছেলের দৌড়েই বেচারা শংকর বুঝতে পারল ব্যাপারখানা কি হতে পারে।সেও তড়িঘড়ি করে রান্না ঘরের দিকে গেল।বউ রান্নাঘরে।
মা মা বাবার সাইকেলটা না লড়িতে ভেঙে গেছে।
কি?বউয়ের এই একটি মাত্র বাক্য খুব ঝাঁঝালো হয়ে ফুটল।
বউ তাকিয়ে দেখল অপরাধী তার সামনেই কাঁচুমাচু হয়ে আছে।
ওগো তুমি এটা কি শুরু করলে?শেষমেষ সাইকেলটাও....
না না।সাইকেলটা বিক্রি করে দিয়েছি।
ফের মিথ্যে কথা।
মিথ্যে না সত্যি বলছি।
তা কত টাকায় বিক্রি করলে?
আটশ টাকা।
টাকাটা দাও।
শংকর এবার ঢোক গিলল।না মানে টাকাটা বিকেলে দিতে চেয়েছে।
বউ এবার সুর করে বলল,তাই....
হ্যাঁ।
তা তুমি কি কি মিথ্যে আর বলতে পারো?
শংকরের মাথায় একটা ধাঁধাঁ খেলে গেল।সে টার বউকে বলল,আচ্ছা বলতো চিন্টুর মা এটা কী হবে?
"পাতার উপর হরেক রঙ
সংখ্যা দিয়ে চেনাজানা সারাদুনিয়ায় ঘুরছে সেটা
বল দেখি কার ঢং"
জানিনা।এইসব বাচলামো আমার সাথে করবেনা।ঢং দেখে আর বাঁচিনে।কি আমার মহাপুরুষ।ধাঁধাঁ ধাঁধা অসহ্য!
চিন্টু সেখানেই ছিল,সে বলে উঠল,বাবা এটা হবে টাকা।
চিন্টুর বাবা বলল,ভেরি গুড বয়।
তুমি এই ছেলেটারও মাথা খাচ্ছ।
কোনো উপায় নেই সুদীপা।এটা আমাদের বংশগত জিনিস।জিন ফ্যাক্টর।আমার বাবা,বাবার বাবা সবাই এই ধাঁধাঁর রাজ্যে থাকতো।আমার বাবা যখন ধাঁধাঁ ধরত তখন আমিও ঝটপট....
সুদীপা স্বামীর কথা পুরোটা বলার সুযোগ না দিয়েই চোখ কপালে তুলে বলল,তারমানে তুমি চিন্টুর লাইফটাও নষ্ট করতে চাইছো?
এতে নষ্টর কী আছে সুদীপা?এটা তো খারাপ কিছুই না।
চুপ করো।যত্তসব উল্টোপাল্টা বলছো।সুদীপা ছেলেটিকে কাছে টেনে নিয়ে বলল,এই এটা তোর নষ্ট বাবা বুঝেছিস।তোকে চুলোয় যাওয়ার পথ খুঁজছে তোর বাবা।
শংকর এবার মুখটা বেজায় কালো করে বলল,ছি ছি তুমি বাচ্চাটাকে কী শেখাচ্ছ?আমি নষ্ট বাবা।এটা কতটা পাপের কথা তুমি জানো?
আমার জানতে হবেনা।তুমি নিজেই ভেবে দেখো।
শংকর বাকবিতণ্ডা একেবারেই পছন্দ করেনা।সে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল।অমনি তার বউ আরেকটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,তুমি এই সংসারটার কী হাল করেছো একবার দেখেছো?
শংকর চুপ।
এর আগে বাজারে গিয়ে পাঁচশ টাকার একটা কচকচে নোট হারালে।
আমি কি করে বুঝবো যে প্যান্টের পকেট ছেঁড়া ছিল।
তা সেটা কি আমি বুঝবো? তোমার প্যান্ট কি আমি পড়ি?
পড়না কেন?
দেখ আমাকে হাসানোর চেষ্টা করবেনা।এইসব বোকাবোকা কথা বলে আমাকে হাসাতে পারবেনা।এখন যাও বাজার টা অন্তত করে আসো।
ঠিক আছে।
"ধরা যায়না ছোঁয়া যায়না
অনুভব করতে হয়
বাসা খানা প্রত্যেকেরই খাসা হতে হয়"
এই ধাঁধাঁটা কি লিখে যাবে সে।নাকি বাজার করে এসে লিখবে।শংকর কিছুক্ষণ ভাবলো।না এখন কোনোমতেই লেখা যাবেনা।তাহলেই ঘুর্ণিঝড় শুরু হবে।নয় নম্বর বিপদ সংকেত।
বাজারের কিছু লোক তাকে ধাঁধাঁভাই,ধাঁধাঁকাকু বলে ডাকে।এতে সে ভেতরে ভেতরে বেশ গর্বিত হয়ে যায়।আরে এরাই তো তার অনুপ্রেরণা।
রাতের বেলা শংকর বেচারা একটা ভয়ানক কাণ্ড করে বসল।রাত দুটোর সময় ঘর খোলা রেখে সে বাড়ির পেছনটায় বসে রইল।সুদীপার যখন ঘুম ভাঙল তখন সে স্বামীটাকে বিছানায় না দেখতে পেয়ে যেই উঠে স্বামীকে খুঁজতে গেল অমনি দরজা খোলা দেখে ভেতরটা নড়ে উঠল।একা বাইরে বেরুতে ভয় পেলেও সে বেরুলো এবং অবশেষে তাকে আবিষ্কার করল বাড়ির পেছনে।শংকর তখন বিড়বিড় করছিল।সুদীপা তার বিড়বিড় করার ভাব দেখেই বুঝতে পারল,সে ধাঁধাঁ বাঁধছে।সে স্বামীকে নিয়ে ঘরে ঢুকল কিছুক্ষণ বাদেই।রাতেই সিদ্ধান্ত নিল সুদীপা,আর যাই হোক পাগল নিয়ে সংসার করা যায়না।?
স্বামীটা যে রীতিমত পাগল হয়ে যাচ্ছে তা সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।না হলে রাতের বেলা ঘরের পেছনে কেন?
রাতেই মোটামুটি একপ্রকারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল,চিন্টুকে নিয়ে সে বাবার বাড়ি চলে যাবে।সেখানে থাকবে।যতদিন না স্বামীর এই সব চিন্তাভাবনা না যায় আর সুস্থ স্বাভাবিক না হয় ততদিনে সে ওই বাড়ি থেকে আসবে না।
সকালবেলা বউয়ের কাপড় গোছানো দেখে শংকর বুঝতে পারল,বউ বাবার বাড়ি যাচ্ছে।আর আসবে বলে মনে হয়না।বউ কাপড় গুছিয়েই যাচ্ছে একটাও কথা বলছেনা।
কি হয়েছে?তুমি কোথায় যাচ্ছ?
বাবার বাড়ি।
কেন?
কেন সেটা তুমি ভালো করেই জানো।
না জানিনা।বলো সুদীপা।
সুদীপার বলার মত কিছুই নেই।
শংকরের গতকাল রাতের ঘটনাটা মনে পড়তেই সে বুঝে নিল কেন বউ তার বাবার বাড়ি যাচ্ছে।
কিন্তু শংকর কালকে রাত্রে এমনি এমনি যায়নি।সে স্বপ্ন দেখেছিল তার বাবা ঘরের পেছন দিকটায় বসে আছে আর তাকে ডাকছে,বাবা তুই কোথায়?ধাঁধাঁ লিখিছিস না কেন?
শংকর বলছিল,বাবা আমি লিখিতো।
এখন পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস যে।
তার ঘুম ভাঙলে সে ঘরের পেছন দিকটায় গিয়েছিল।বাবা কি সত্যি বসে আছে কিনা?শংকরের তখন একবারের জন্যেও মনে হয়নি যে বাবা অনেক আগেই মারা গেছে।এই ঘটনা বউকে বলবে কি?বললে কি ইফেক্ট আসতে পারে?সেটাই ভাবছে সে।
এদিকে বউ প্রায় রেডী বাবার বাড়ি যাবার জন্যে।শংকর ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।সে কী তাহলে ধাঁধাঁ বানানো বন্ধ করে দেবে।কিন্তু পারবে কি?এদিকে বাবা যে কেন স্বপ্নে এই কথাটা বলল তাই ভাবছে সে।হঠাৎ মাথায় আরেকটা ধাঁধাঁ মাথাচাড়া দিচ্ছে-
"সবার আছে সবার থাকে
ঘরের লক্ষ্মী যেয়ে থাকে
রাগলে পরে তারাই যায়
স্বামীরা করুণ মুখে তাকায়"
এর উত্তরটা তার বউয়ের হয়তো জানা।সে বলবে কি তার বউকে এই ধাঁধাঁটা?
ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে আরেকটা চমক।কতটা রাগী হবে সুদীপা?আবার হেসেও ফেলতে পারে।হাসার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ।শংকর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ধাঁধাঁটা কি বলেই দেবে নাকি?
শংকর তখনও নতুন ধাঁধাঁ তৈরিতে মত্ত।তার হাতের পাঁচটি আঙুল নতুন চিন্তার সাথে নৃত্য করছে।সমরেশ ওঝার হাঁক ছাড়ার কারণটা হচ্ছে,এই মাত্র একটা ফাঁকা লড়ির চাকা শংকরের সাইকেলের উপর দিয়ে চলে গেছে চোখের নিমেষে।তাতেই সাইকেল টা ফটাস!আরো দু-চারজন লোকের ডাকাডাকি,বকাবকিতে শংকরের ভাবনায় ছেদ পড়ল।সে পাঁচিলের দিকে তাকিয়ে ছিল।উষ্ণ প্রসবন সেই কখন হয়ে গেছে কিন্তু ওই ধাঁধাঁটাই খেল এই যা!পাঁচিল থেকে মুখ ঘুরিয়ে বলেই বসল,ও হরি!আমার সাইকেল!
তখন জনা দুই এগিয়ে এসে বলল,তুমি দিনে দিনে যা হয়ে যাচ্ছ।রাচীতে না পাঠাতে হয়।শংকর ভাঙা সাইলেকের টায়ার ধরে বসে পড়ল।
"দুই চক্র পাশাপাশি
হর্ণ দিলে সরে আসি
মালিকের পায়ের জোরে
যায় সে দৌড়ে দৌড়ে।"
বাহ্ কী শান্তি!এর চেয়ে শান্তির আর কিছু আছে নাকি।চুলোয় যাক সাইকেল।শংকরের মনটা হঠাৎ চমক দিয়ে উঠল নতুন ধাঁধাঁ মাথায় আসায়।সে নতুন যত ধাঁধাঁ পায় সেগুলো খাতায় লিখে ফেলে।এদিকে বউ চিনি,ডাল ইত্যাদি ইত্যাদি আনতে বাজারে পাঠিয়েছে এগুলো না কিনেই সে সোজা ছুট।সাইকেল পরম যত্নে ওখানেই পড়ে থাকল।
ঘরে ঢোকা মাত্রই ছেলে বলে বসল,বাবা আমার খাতা।
খাতা আনবো।তার আগে একটা উত্তর দেতো চিন্টু।
কী?ধাঁধাঁ?
হ্যাঁ।বল এটা কী হবে?
"দুই চক্র পাশাপাশি
হর্ণ দিলে সরে আসি
মালিকের পায়ের জোরে
যায় সে দৌড়ে দৌড়ে"
চিন্টু এমনিতে রোগা পটকা হলে কি হবে।মাথায় বাবার চেয়ে বুদ্ধিতে কম যায়না।সে চটজলদি উত্তর করল,সাইকেল।
এইত হয়েছে।গুড বয়।
গুড বয় ফুড বয় বাদ।আমার অংক খাতা কোথায়?
বাবা বলল,আনছি আগে লিখে নেই।
বলি তোমাকে যে বাজারে পাঠালাম লিস্ট দিয়ে,বাজার কোথায়?
শংকর এবার বুঝতে পারল, আবহাওয়া খুব খারাপ।মেঘে মেঘে গর্জনে বজ্রপাত শুরু হয়।সে বজ্রপাত চায়না।সে পুরোপুরি ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,ভুলে গেছি।টেনশান মাত কারো।এই ধাঁধাঁটা লিখেই বাজার করে আনছি।শংকরের সাইকেল লড়ির নিচে ফটাস হওয়ার ব্যাপারটা চেপে গেলো।নিজে থেকে এব্যাপারে কিছুই বলবে না।এমনিতেই সে জানে সংসার তার বউ চালায়।বাপের বাড়ির টাকা থেকে সংসার চলে।সাইকেল টাও তার শ্বশুরের টাকায়।নিজের বলতে একখানা একতলা পলেস্তারা খসা বাড়ি।এমনিতেও বউকে এক আধটু ভয়ও পায় সে।একটা ছোট চাকরিও করত সে।কিন্তু ওই ধাঁধাঁ টাই চাকরিটা খেল।শংকর খাতা খুলে যেই লিখতে বসল তখনই তার ছেলে এসে বলল,বাবা তোমার সাইকেল কোথায়?দেখছিনা তো।
শংকর ছেলে কে কোলে নিল।আট বছরের ছেলেকে কোলে নেওয়াই যায়।
মাকে বলিস না।সাইকেলটা না ভেঙে গেছে।
ছেলে চোখে বিস্ময় নিয়ে বলল,কিভাবে?
লড়িতে ভেঙে গেছে।
ছেলে একদৌড়ে মার কাছে গেল।ছেলে যে মায়ের একান্ত বাধ্যগত।ছেলের দৌড়েই বেচারা শংকর বুঝতে পারল ব্যাপারখানা কি হতে পারে।সেও তড়িঘড়ি করে রান্না ঘরের দিকে গেল।বউ রান্নাঘরে।
মা মা বাবার সাইকেলটা না লড়িতে ভেঙে গেছে।
কি?বউয়ের এই একটি মাত্র বাক্য খুব ঝাঁঝালো হয়ে ফুটল।
বউ তাকিয়ে দেখল অপরাধী তার সামনেই কাঁচুমাচু হয়ে আছে।
ওগো তুমি এটা কি শুরু করলে?শেষমেষ সাইকেলটাও....
না না।সাইকেলটা বিক্রি করে দিয়েছি।
ফের মিথ্যে কথা।
মিথ্যে না সত্যি বলছি।
তা কত টাকায় বিক্রি করলে?
আটশ টাকা।
টাকাটা দাও।
শংকর এবার ঢোক গিলল।না মানে টাকাটা বিকেলে দিতে চেয়েছে।
বউ এবার সুর করে বলল,তাই....
হ্যাঁ।
তা তুমি কি কি মিথ্যে আর বলতে পারো?
শংকরের মাথায় একটা ধাঁধাঁ খেলে গেল।সে টার বউকে বলল,আচ্ছা বলতো চিন্টুর মা এটা কী হবে?
"পাতার উপর হরেক রঙ
সংখ্যা দিয়ে চেনাজানা সারাদুনিয়ায় ঘুরছে সেটা
বল দেখি কার ঢং"
জানিনা।এইসব বাচলামো আমার সাথে করবেনা।ঢং দেখে আর বাঁচিনে।কি আমার মহাপুরুষ।ধাঁধাঁ ধাঁধা অসহ্য!
চিন্টু সেখানেই ছিল,সে বলে উঠল,বাবা এটা হবে টাকা।
চিন্টুর বাবা বলল,ভেরি গুড বয়।
তুমি এই ছেলেটারও মাথা খাচ্ছ।
কোনো উপায় নেই সুদীপা।এটা আমাদের বংশগত জিনিস।জিন ফ্যাক্টর।আমার বাবা,বাবার বাবা সবাই এই ধাঁধাঁর রাজ্যে থাকতো।আমার বাবা যখন ধাঁধাঁ ধরত তখন আমিও ঝটপট....
সুদীপা স্বামীর কথা পুরোটা বলার সুযোগ না দিয়েই চোখ কপালে তুলে বলল,তারমানে তুমি চিন্টুর লাইফটাও নষ্ট করতে চাইছো?
এতে নষ্টর কী আছে সুদীপা?এটা তো খারাপ কিছুই না।
চুপ করো।যত্তসব উল্টোপাল্টা বলছো।সুদীপা ছেলেটিকে কাছে টেনে নিয়ে বলল,এই এটা তোর নষ্ট বাবা বুঝেছিস।তোকে চুলোয় যাওয়ার পথ খুঁজছে তোর বাবা।
শংকর এবার মুখটা বেজায় কালো করে বলল,ছি ছি তুমি বাচ্চাটাকে কী শেখাচ্ছ?আমি নষ্ট বাবা।এটা কতটা পাপের কথা তুমি জানো?
আমার জানতে হবেনা।তুমি নিজেই ভেবে দেখো।
শংকর বাকবিতণ্ডা একেবারেই পছন্দ করেনা।সে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল।অমনি তার বউ আরেকটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,তুমি এই সংসারটার কী হাল করেছো একবার দেখেছো?
শংকর চুপ।
এর আগে বাজারে গিয়ে পাঁচশ টাকার একটা কচকচে নোট হারালে।
আমি কি করে বুঝবো যে প্যান্টের পকেট ছেঁড়া ছিল।
তা সেটা কি আমি বুঝবো? তোমার প্যান্ট কি আমি পড়ি?
পড়না কেন?
দেখ আমাকে হাসানোর চেষ্টা করবেনা।এইসব বোকাবোকা কথা বলে আমাকে হাসাতে পারবেনা।এখন যাও বাজার টা অন্তত করে আসো।
ঠিক আছে।
"ধরা যায়না ছোঁয়া যায়না
অনুভব করতে হয়
বাসা খানা প্রত্যেকেরই খাসা হতে হয়"
এই ধাঁধাঁটা কি লিখে যাবে সে।নাকি বাজার করে এসে লিখবে।শংকর কিছুক্ষণ ভাবলো।না এখন কোনোমতেই লেখা যাবেনা।তাহলেই ঘুর্ণিঝড় শুরু হবে।নয় নম্বর বিপদ সংকেত।
বাজারের কিছু লোক তাকে ধাঁধাঁভাই,ধাঁধাঁকাকু বলে ডাকে।এতে সে ভেতরে ভেতরে বেশ গর্বিত হয়ে যায়।আরে এরাই তো তার অনুপ্রেরণা।
রাতের বেলা শংকর বেচারা একটা ভয়ানক কাণ্ড করে বসল।রাত দুটোর সময় ঘর খোলা রেখে সে বাড়ির পেছনটায় বসে রইল।সুদীপার যখন ঘুম ভাঙল তখন সে স্বামীটাকে বিছানায় না দেখতে পেয়ে যেই উঠে স্বামীকে খুঁজতে গেল অমনি দরজা খোলা দেখে ভেতরটা নড়ে উঠল।একা বাইরে বেরুতে ভয় পেলেও সে বেরুলো এবং অবশেষে তাকে আবিষ্কার করল বাড়ির পেছনে।শংকর তখন বিড়বিড় করছিল।সুদীপা তার বিড়বিড় করার ভাব দেখেই বুঝতে পারল,সে ধাঁধাঁ বাঁধছে।সে স্বামীকে নিয়ে ঘরে ঢুকল কিছুক্ষণ বাদেই।রাতেই সিদ্ধান্ত নিল সুদীপা,আর যাই হোক পাগল নিয়ে সংসার করা যায়না।?
স্বামীটা যে রীতিমত পাগল হয়ে যাচ্ছে তা সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।না হলে রাতের বেলা ঘরের পেছনে কেন?
রাতেই মোটামুটি একপ্রকারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল,চিন্টুকে নিয়ে সে বাবার বাড়ি চলে যাবে।সেখানে থাকবে।যতদিন না স্বামীর এই সব চিন্তাভাবনা না যায় আর সুস্থ স্বাভাবিক না হয় ততদিনে সে ওই বাড়ি থেকে আসবে না।
সকালবেলা বউয়ের কাপড় গোছানো দেখে শংকর বুঝতে পারল,বউ বাবার বাড়ি যাচ্ছে।আর আসবে বলে মনে হয়না।বউ কাপড় গুছিয়েই যাচ্ছে একটাও কথা বলছেনা।
কি হয়েছে?তুমি কোথায় যাচ্ছ?
বাবার বাড়ি।
কেন?
কেন সেটা তুমি ভালো করেই জানো।
না জানিনা।বলো সুদীপা।
সুদীপার বলার মত কিছুই নেই।
শংকরের গতকাল রাতের ঘটনাটা মনে পড়তেই সে বুঝে নিল কেন বউ তার বাবার বাড়ি যাচ্ছে।
কিন্তু শংকর কালকে রাত্রে এমনি এমনি যায়নি।সে স্বপ্ন দেখেছিল তার বাবা ঘরের পেছন দিকটায় বসে আছে আর তাকে ডাকছে,বাবা তুই কোথায়?ধাঁধাঁ লিখিছিস না কেন?
শংকর বলছিল,বাবা আমি লিখিতো।
এখন পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস যে।
তার ঘুম ভাঙলে সে ঘরের পেছন দিকটায় গিয়েছিল।বাবা কি সত্যি বসে আছে কিনা?শংকরের তখন একবারের জন্যেও মনে হয়নি যে বাবা অনেক আগেই মারা গেছে।এই ঘটনা বউকে বলবে কি?বললে কি ইফেক্ট আসতে পারে?সেটাই ভাবছে সে।
এদিকে বউ প্রায় রেডী বাবার বাড়ি যাবার জন্যে।শংকর ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।সে কী তাহলে ধাঁধাঁ বানানো বন্ধ করে দেবে।কিন্তু পারবে কি?এদিকে বাবা যে কেন স্বপ্নে এই কথাটা বলল তাই ভাবছে সে।হঠাৎ মাথায় আরেকটা ধাঁধাঁ মাথাচাড়া দিচ্ছে-
"সবার আছে সবার থাকে
ঘরের লক্ষ্মী যেয়ে থাকে
রাগলে পরে তারাই যায়
স্বামীরা করুণ মুখে তাকায়"
এর উত্তরটা তার বউয়ের হয়তো জানা।সে বলবে কি তার বউকে এই ধাঁধাঁটা?
ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে আরেকটা চমক।কতটা রাগী হবে সুদীপা?আবার হেসেও ফেলতে পারে।হাসার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ।শংকর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ধাঁধাঁটা কি বলেই দেবে নাকি?
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সোলাইমান ০৪/০৯/২০১৬Nice, very nice
-
জয়শ্রী রায় মৈত্র ২১/০৮/২০১৬ভালো লাগলো । অনেকটা উপন্যাসের মত ।
-
স্বপ্নময় স্বপন ০৬/০৮/২০১৬অনবদ্য!
-
তুষার অপু ০৬/০৮/২০১৬দারুণ ।