একজন ভালোমানুষ
হুঁসহাঁস করে গাড়িগুলো চলে যাচ্ছে।রাস্তার নিয়ন আলোর নিচে দাঁড়িয়ে সব্যসাচী হাতে সিগারেট নিয়ে গাড়িগুলোর চলাচল দেখছে।রাতের স্নিগ্ধতায় বেশ ফুরফুরে লাগছে তার।সে ঘড়ি দেখল,রাত সাড়ে ন'টা।বড় শহরের জন্য এমন কোনো রাত না।সে এই মুহূর্তে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে বেশ মনোযোগ দিয়ে।বড় বড় লড়িগুলো যেভাবে যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে যেন কোনো দৈত্য বড় বড় পা ফেলে দৌড়াচ্ছে রাস্তার ওপর।মানুষ জনও রাস্তায় খুব একটা নেই।
স্যার বাঁশি শুনবে?
সব্যসাচীর গাড়ি দেখার মনোযোগে একটু ব্যাঘাত ঘটল।সে পেছন ঘুরল।একটি ছেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটির চেহারা উস্কখুস্ক।খালি গা।হাফ প্যান্ট পরে আছে একটা।প্যান্টের জিপার খোলা।প্যান্টের হুঁকও খোলা।একটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে প্যান্ট।এই সব ছেলেদের প্যান্টের নিচে সাধারণত ছেঁড়া থাকে।বসলেই সব দেখা যাবে।আর এই ব্যাপারে এই বয়েসী ছেলেদের কোনো ভ্রুক্ষেপ থাকেনা।তারই বা ছিল কি?ক্লাশ ফাইভে যখন সে পড়ত তখনও তার হাফপ্যান্টের নিচে ছেঁড়া থাকত।এই ছেলের ক্লাশ ফাইভে পড়ার মতই বয়েস।ইদানিং সব্যসাচী এই সব হাবিজাবি ভাবনাটাই ভাবে।এই সব হাবিজাবি ভাবনাগুলোকে পাত্তা না দিয়ে সে বলল,তোর হাতে কী?
ছেলেটি হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,পাতা।
পাতা দিয়ে কি বাঁশি বাজাবি?
হ্যাঁ।শুনবে স্যার?
সব্যসাচীর ছোটবেলার একটা স্মৃতি মনে পড়ে গেল।তার বাবার এই গুণটা ছিল।তার বাবাও খুব সুন্দর বাঁশি বাজাতে পারত।সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনত।যেকোনো সুর তুলতে পারতেন তিনি।রবীন্দ্র কি নজরুল সব সুরই পারতেন তিনি।আরেকটা গুণও অবশ্য ছিল।পশুপাখির কণ্ঠস্বরও দিতে পারতেন তিনি।পাখির ডাক দিলে মনে হত সত্যিকারের পাখিই ডাকছে।অল্প বয়েসেই বাবাটা হারিয়ে গেল আকাশে।তার যখন বাবা মারা যায় তখন তার বয়েস চৌদ্দ কি পনেরো বছর হবে।এখন বয়েস তার চল্লিশ।ঘরে বউ আছে।বাচ্চা নেই।দশ বছরের দাম্পত্য জীবনে বাচ্চার মুখ দেখেনি তারা।ডাক্তার অবশ্য বলে দিয়েছে দোষটা তার।তার মানে সব্যসাচীর।সব্যসাচীর ইদানিং বাবার কথা বড্ড মনে পড়ে।সে ছেলেটিকে বলল,হ্যাঁ শোনা।
ছেলেটি মাটির ওপর বসে পড়ে বলল,স্যার বসে বাজাই?
সেও মাটিতে বসে পড়ে বলল,হ্যাঁ বাজা শুনব।দেখি কেমন বাজাস তুই?
না ছেলেটির প্যান্টের তলায় ফুটো নেই।শরীরের নিষিদ্ধ যায়গায় সবারই চোখ আগে যায়।তারও গেল এবং দেখে নিল।
স্যার তুমিও মাটিতে বসে পড়লে?
তাতে কি?আমার গায়ে দামি জামাকাপড় দেখে ভাবছিস আমি এখানটায় বসতে পারবনা।আরে মাটি হল মা।এই মায়ের কাছে সন্তান যখন তখন বসতে পারেরে।
ছেলেটি তার কথার ভাবার্থ বুঝল বলে মনে হলনা।সে পাতাটি ঠোটে রেখে বাঁশি বাজানো শুরু করল।
সব্যসাচী চোখ বুজে আছে।মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছে বাঁশি বাজানো।এতো সুন্দর বাজাচ্ছে ছেলেটা!কী সুন্দর!কী সুন্দর!তার মনে হচ্ছে বাবা বাঁশিটা বাজাচ্ছেন।তার চোখের কোণায় জল চলে এল।ছেলেটা বেশ কিছুক্ষণ বাঁশি বাজিয়ে এবার একটু থামল।
সে চোখ খুলল।বিস্মিত স্বরে বলল,কে শেখালো তোকে?
একা একাই শিখেছি।
তোর পকেটে কি সবসময় পাতা থাকে?
হ্যাঁ।ছেলেটি প্যান্টের পকেট হাতরিয়ে কতগুলো পাতা বের করে দেখালো।
বাহ্!চমৎকার।তোর প্রতিভা আছে।
আমি পশুপাখির ডাকও দিতে জানি।শুনবে স্যার?
আজ তার বাবার কথা বড্ড মনে পড়ছে।সেই পশুপাখির ডাক।এই ছেলেটির জন্যই আজ স্মৃতি বেশি মাথায় খেলছে।পাটপাট করে মাথার নিউরন থেকে পুরোনো স্মৃতি ভেসে আসছে।
পশুপাখির ডাক শোনাবি?শোনা....
ছেলেটা মুখটা বিকৃতি করে বাঘের ডাক দিল।তারপর একে একে সিংহ,হাতি,মোরগ-মুরগী,দোয়েল এদের ডাকও দিল।
এটাও কি নিজে থেকেই শিখেছিস?
হ্যাঁ।
তোর বাবা মা আছে তো?
মা নেই।বাবা আছে।বাবা আমাকে দেখেনা।
দেখেনা মানে?
আরেকটা বিয়ে করেছে।ভাল মা আমায় ভাত দেয়না।ছেলেটার কথাগুলো বলতে যেয়ে গলাটা ধরে এল।
তুই থাকিস কোথায়?
ওই তো এই রাস্তা ধরে নেমে যেতে হয়।ওখানে একটা স্কুল আছে, ওখানটায়।
বাড়িতে থাকিস না?
তাড়িয়ে দিয়েছে বাড়ি থেকে।
কিছু খেয়েছিস কি?
হ্যাঁ।রুটি খেয়েছি।
টাকা পাস্ কোথায়?
কেন?বাঁশি বাজিয়ে।পশুপাখির ডাক দিয়ে।
সব্যসাচী খেয়াল করল অনেকক্ষণ ধরে এই ছেলেটির সাথে আছে সে কিন্তু তার নামটাই সে এখন পর্যন্ত জানেনি।
কি নামরে তোর?
রাদু।
সব্যসাচী কিছুক্ষণ ভেবে ছন্দ করে বলল,নাম তোর রাদু
জানিস তুই জাদু!
রাদু হিহি করে হেসে ফেলল।
সব্যসাচী বলল,আচ্ছা তুই রাস্তায় এতো লোক থাকতে আমাকেই ধরলি কেন বাঁশি শোনাতে?
আমি অনেকক্ষণ ধরে দেখে আসছি তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ।তাই ভাবলাম।
বাহ্!তুই তো খুব ভাবুক।
সব্যসাচী সিদ্ধান্ত নিল রাদুকে তার সাথে নিয়ে যাবে।একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে।পড়াশুনো শিখবে।টাকা পয়সার তো কোনো কমতি নেই তার।সুলেখাও খুশি হবে।সুলেখা তার বউয়ের নাম।তাছারা ছেলেটির অনেক গুণ আছে ঠিক তার বাবার মতই।সকলের পছন্দ হবার মতই ছেলে সে।আজ সারাটা দিন বউয়ের সাথে বাক-বিতন্ডা হয়েছে তার।তাই সে সন্ধের পর থেকেই এখানে।সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল আজ আর বাড়ি ফিরবেনা,ফোন করলেও না।এর আগে অনেকবার এরকম হয়েছে কিন্তু বউয়ের ফোনে সে বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে পারেনি।সে জানে বউ তার ঠিকই ফোন করবে।একা একা রাত কাটানোর মত সাহস নেই সুলেখার।তার ইচ্ছে করছে আরো কিছুক্ষণ গল্প করে ছেলেটিকে সাথে নিয়ে যাবে।তারপর নতুন জীবন শুরু হবে রাদুর।সে আরেকবার বিড়বিড় করে বলল,
নাম তোর রাদু
জানিস তুই জাদু!
দাও আমার বকশিস দাও।
কত?
কুঁড়ি টাকা দাও।
হ্যাঁ দেবো।সব্যসাচী এক গাল হেসে বলল,আমার সাথে চল।এখন থেকে আমার সাথেই থাকবি।
আগে টাকা দাও।তারপর দেখি।
ছেলেটি বোধহয় তার কথাটা বিশ্বাস করছেনা।বিশ্বাস করবেই বা কি করে?কেউ আগে এমন কথা বলেছে বলে মনে হয়না।সে খেয়াল করল,রাদুর চেহারার ভেতর একটা মায়া মায়া ভাব আছে।
সে দাঁড়ালো।রাদুও সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ল।
পেছনের পকেট থেকে যেই মানিব্যাগটা বের করল অমনি রাদু মানিব্যাগটা এক থাবা মেরে এক ছুটে দৌড় লাগাল।ছেলেটি মুহূর্তের মধ্যে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
সে হাঁ করে তাকিয়ে রইল,এটা কী হল?এরকম ঘটনার জন্যে সে প্রস্তুত ছিলনা।কেইবা থাকে।
সে একটা সিগারেট ধরালো।ভাবতে লাগল ব্যাপারটা।কি বিচ্ছু ছেলেরে বাবা।কী সাহস!এ ছেলেতো বড় হলে মস্তান হয়ে যাবে।সব্যসাচী সিগারেটে লম্বা লম্বা টান মারল আর ভুসভুস করে ধোঁয়া ছেড়ে রাস্তার দিকে তাকাল। গাড়িগুলোর দাপট রাস্তায় কিছুটা কমে এসেছে।হঠাৎ মোবাইলে রিং বাজল।সে ফোনটা বের করে দেখল সুলেখা ফোনটা করেছে।রাগটা পড়েছে কিনা কে জানে!
হ্যাঁ বলো।
তুমি কি রাতে আসবে না বাড়ি?
রাগটা কমেছে কি তোমার?
সে কখন।আসো বাড়ি আসো।ভাত বেড়ে বসে আছি।
এখন আসতে পারবনা।
কেন?
আমার বাবাকে খুঁজে পেয়েছি।বাবাকে সাথে নিয়ে আসছি।
ওপাশ থেকে সুলেখা বলল,তোমার কথার মাথামুন্ডুতো কিছুই বুঝছিনা।
বুঝতে হবেনা।একটা সারপ্রাইজ নিয়ে ঘরে ঢুকব।
ধুর!তুমি কি দিনদিন পাগল হয়ে যাচ্ছ?
হয়ত তাই।নো টেনশন।খেয়ে নাও।আমি বাবাকে সাথে নিয়েই আসছি।
সব্যসাচী ফোনটা কেটে দিল।সে সিদ্ধান্ত নিল রাদুকে না নিয়ে বাড়ি ঢুকবেনা।একটা ছেলে রাস্তায় রাস্তায় থেকে থেকে নষ্ট হয়ে যাবে তা হতে দেয়া যায়না।সবকিছু কেন নষ্টদের দখলে যাবে?একটা প্রতিভা এভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারেনা।এটা হতে দেয়া যায়না।সব্যসাচী আরেকটা সিগারেট ধরাল।সোজা রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগল সে।স্কুলটার দিকে যেতে হবে তাকে তাহলেই হয়ত পাওয়া যাবে পাতার বংশীবাদককে।
স্যার বাঁশি শুনবে?
সব্যসাচীর গাড়ি দেখার মনোযোগে একটু ব্যাঘাত ঘটল।সে পেছন ঘুরল।একটি ছেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটির চেহারা উস্কখুস্ক।খালি গা।হাফ প্যান্ট পরে আছে একটা।প্যান্টের জিপার খোলা।প্যান্টের হুঁকও খোলা।একটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে প্যান্ট।এই সব ছেলেদের প্যান্টের নিচে সাধারণত ছেঁড়া থাকে।বসলেই সব দেখা যাবে।আর এই ব্যাপারে এই বয়েসী ছেলেদের কোনো ভ্রুক্ষেপ থাকেনা।তারই বা ছিল কি?ক্লাশ ফাইভে যখন সে পড়ত তখনও তার হাফপ্যান্টের নিচে ছেঁড়া থাকত।এই ছেলের ক্লাশ ফাইভে পড়ার মতই বয়েস।ইদানিং সব্যসাচী এই সব হাবিজাবি ভাবনাটাই ভাবে।এই সব হাবিজাবি ভাবনাগুলোকে পাত্তা না দিয়ে সে বলল,তোর হাতে কী?
ছেলেটি হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,পাতা।
পাতা দিয়ে কি বাঁশি বাজাবি?
হ্যাঁ।শুনবে স্যার?
সব্যসাচীর ছোটবেলার একটা স্মৃতি মনে পড়ে গেল।তার বাবার এই গুণটা ছিল।তার বাবাও খুব সুন্দর বাঁশি বাজাতে পারত।সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনত।যেকোনো সুর তুলতে পারতেন তিনি।রবীন্দ্র কি নজরুল সব সুরই পারতেন তিনি।আরেকটা গুণও অবশ্য ছিল।পশুপাখির কণ্ঠস্বরও দিতে পারতেন তিনি।পাখির ডাক দিলে মনে হত সত্যিকারের পাখিই ডাকছে।অল্প বয়েসেই বাবাটা হারিয়ে গেল আকাশে।তার যখন বাবা মারা যায় তখন তার বয়েস চৌদ্দ কি পনেরো বছর হবে।এখন বয়েস তার চল্লিশ।ঘরে বউ আছে।বাচ্চা নেই।দশ বছরের দাম্পত্য জীবনে বাচ্চার মুখ দেখেনি তারা।ডাক্তার অবশ্য বলে দিয়েছে দোষটা তার।তার মানে সব্যসাচীর।সব্যসাচীর ইদানিং বাবার কথা বড্ড মনে পড়ে।সে ছেলেটিকে বলল,হ্যাঁ শোনা।
ছেলেটি মাটির ওপর বসে পড়ে বলল,স্যার বসে বাজাই?
সেও মাটিতে বসে পড়ে বলল,হ্যাঁ বাজা শুনব।দেখি কেমন বাজাস তুই?
না ছেলেটির প্যান্টের তলায় ফুটো নেই।শরীরের নিষিদ্ধ যায়গায় সবারই চোখ আগে যায়।তারও গেল এবং দেখে নিল।
স্যার তুমিও মাটিতে বসে পড়লে?
তাতে কি?আমার গায়ে দামি জামাকাপড় দেখে ভাবছিস আমি এখানটায় বসতে পারবনা।আরে মাটি হল মা।এই মায়ের কাছে সন্তান যখন তখন বসতে পারেরে।
ছেলেটি তার কথার ভাবার্থ বুঝল বলে মনে হলনা।সে পাতাটি ঠোটে রেখে বাঁশি বাজানো শুরু করল।
সব্যসাচী চোখ বুজে আছে।মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছে বাঁশি বাজানো।এতো সুন্দর বাজাচ্ছে ছেলেটা!কী সুন্দর!কী সুন্দর!তার মনে হচ্ছে বাবা বাঁশিটা বাজাচ্ছেন।তার চোখের কোণায় জল চলে এল।ছেলেটা বেশ কিছুক্ষণ বাঁশি বাজিয়ে এবার একটু থামল।
সে চোখ খুলল।বিস্মিত স্বরে বলল,কে শেখালো তোকে?
একা একাই শিখেছি।
তোর পকেটে কি সবসময় পাতা থাকে?
হ্যাঁ।ছেলেটি প্যান্টের পকেট হাতরিয়ে কতগুলো পাতা বের করে দেখালো।
বাহ্!চমৎকার।তোর প্রতিভা আছে।
আমি পশুপাখির ডাকও দিতে জানি।শুনবে স্যার?
আজ তার বাবার কথা বড্ড মনে পড়ছে।সেই পশুপাখির ডাক।এই ছেলেটির জন্যই আজ স্মৃতি বেশি মাথায় খেলছে।পাটপাট করে মাথার নিউরন থেকে পুরোনো স্মৃতি ভেসে আসছে।
পশুপাখির ডাক শোনাবি?শোনা....
ছেলেটা মুখটা বিকৃতি করে বাঘের ডাক দিল।তারপর একে একে সিংহ,হাতি,মোরগ-মুরগী,দোয়েল এদের ডাকও দিল।
এটাও কি নিজে থেকেই শিখেছিস?
হ্যাঁ।
তোর বাবা মা আছে তো?
মা নেই।বাবা আছে।বাবা আমাকে দেখেনা।
দেখেনা মানে?
আরেকটা বিয়ে করেছে।ভাল মা আমায় ভাত দেয়না।ছেলেটার কথাগুলো বলতে যেয়ে গলাটা ধরে এল।
তুই থাকিস কোথায়?
ওই তো এই রাস্তা ধরে নেমে যেতে হয়।ওখানে একটা স্কুল আছে, ওখানটায়।
বাড়িতে থাকিস না?
তাড়িয়ে দিয়েছে বাড়ি থেকে।
কিছু খেয়েছিস কি?
হ্যাঁ।রুটি খেয়েছি।
টাকা পাস্ কোথায়?
কেন?বাঁশি বাজিয়ে।পশুপাখির ডাক দিয়ে।
সব্যসাচী খেয়াল করল অনেকক্ষণ ধরে এই ছেলেটির সাথে আছে সে কিন্তু তার নামটাই সে এখন পর্যন্ত জানেনি।
কি নামরে তোর?
রাদু।
সব্যসাচী কিছুক্ষণ ভেবে ছন্দ করে বলল,নাম তোর রাদু
জানিস তুই জাদু!
রাদু হিহি করে হেসে ফেলল।
সব্যসাচী বলল,আচ্ছা তুই রাস্তায় এতো লোক থাকতে আমাকেই ধরলি কেন বাঁশি শোনাতে?
আমি অনেকক্ষণ ধরে দেখে আসছি তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ।তাই ভাবলাম।
বাহ্!তুই তো খুব ভাবুক।
সব্যসাচী সিদ্ধান্ত নিল রাদুকে তার সাথে নিয়ে যাবে।একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে।পড়াশুনো শিখবে।টাকা পয়সার তো কোনো কমতি নেই তার।সুলেখাও খুশি হবে।সুলেখা তার বউয়ের নাম।তাছারা ছেলেটির অনেক গুণ আছে ঠিক তার বাবার মতই।সকলের পছন্দ হবার মতই ছেলে সে।আজ সারাটা দিন বউয়ের সাথে বাক-বিতন্ডা হয়েছে তার।তাই সে সন্ধের পর থেকেই এখানে।সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল আজ আর বাড়ি ফিরবেনা,ফোন করলেও না।এর আগে অনেকবার এরকম হয়েছে কিন্তু বউয়ের ফোনে সে বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে পারেনি।সে জানে বউ তার ঠিকই ফোন করবে।একা একা রাত কাটানোর মত সাহস নেই সুলেখার।তার ইচ্ছে করছে আরো কিছুক্ষণ গল্প করে ছেলেটিকে সাথে নিয়ে যাবে।তারপর নতুন জীবন শুরু হবে রাদুর।সে আরেকবার বিড়বিড় করে বলল,
নাম তোর রাদু
জানিস তুই জাদু!
দাও আমার বকশিস দাও।
কত?
কুঁড়ি টাকা দাও।
হ্যাঁ দেবো।সব্যসাচী এক গাল হেসে বলল,আমার সাথে চল।এখন থেকে আমার সাথেই থাকবি।
আগে টাকা দাও।তারপর দেখি।
ছেলেটি বোধহয় তার কথাটা বিশ্বাস করছেনা।বিশ্বাস করবেই বা কি করে?কেউ আগে এমন কথা বলেছে বলে মনে হয়না।সে খেয়াল করল,রাদুর চেহারার ভেতর একটা মায়া মায়া ভাব আছে।
সে দাঁড়ালো।রাদুও সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ল।
পেছনের পকেট থেকে যেই মানিব্যাগটা বের করল অমনি রাদু মানিব্যাগটা এক থাবা মেরে এক ছুটে দৌড় লাগাল।ছেলেটি মুহূর্তের মধ্যে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
সে হাঁ করে তাকিয়ে রইল,এটা কী হল?এরকম ঘটনার জন্যে সে প্রস্তুত ছিলনা।কেইবা থাকে।
সে একটা সিগারেট ধরালো।ভাবতে লাগল ব্যাপারটা।কি বিচ্ছু ছেলেরে বাবা।কী সাহস!এ ছেলেতো বড় হলে মস্তান হয়ে যাবে।সব্যসাচী সিগারেটে লম্বা লম্বা টান মারল আর ভুসভুস করে ধোঁয়া ছেড়ে রাস্তার দিকে তাকাল। গাড়িগুলোর দাপট রাস্তায় কিছুটা কমে এসেছে।হঠাৎ মোবাইলে রিং বাজল।সে ফোনটা বের করে দেখল সুলেখা ফোনটা করেছে।রাগটা পড়েছে কিনা কে জানে!
হ্যাঁ বলো।
তুমি কি রাতে আসবে না বাড়ি?
রাগটা কমেছে কি তোমার?
সে কখন।আসো বাড়ি আসো।ভাত বেড়ে বসে আছি।
এখন আসতে পারবনা।
কেন?
আমার বাবাকে খুঁজে পেয়েছি।বাবাকে সাথে নিয়ে আসছি।
ওপাশ থেকে সুলেখা বলল,তোমার কথার মাথামুন্ডুতো কিছুই বুঝছিনা।
বুঝতে হবেনা।একটা সারপ্রাইজ নিয়ে ঘরে ঢুকব।
ধুর!তুমি কি দিনদিন পাগল হয়ে যাচ্ছ?
হয়ত তাই।নো টেনশন।খেয়ে নাও।আমি বাবাকে সাথে নিয়েই আসছি।
সব্যসাচী ফোনটা কেটে দিল।সে সিদ্ধান্ত নিল রাদুকে না নিয়ে বাড়ি ঢুকবেনা।একটা ছেলে রাস্তায় রাস্তায় থেকে থেকে নষ্ট হয়ে যাবে তা হতে দেয়া যায়না।সবকিছু কেন নষ্টদের দখলে যাবে?একটা প্রতিভা এভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারেনা।এটা হতে দেয়া যায়না।সব্যসাচী আরেকটা সিগারেট ধরাল।সোজা রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগল সে।স্কুলটার দিকে যেতে হবে তাকে তাহলেই হয়ত পাওয়া যাবে পাতার বংশীবাদককে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জয়শ্রী রায় মৈত্র ২১/০৮/২০১৬খুব সুন্দর ... ।
-
বিশ্বামিত্র ৩০/০৭/২০১৬বাস্তবের মাটিতে দেখা কাহিনী যে কত নির্মম তা এই ছোট গল্পই প্রমাণ করে দিল।খুব ভাললাগল ,শুভেচ্ছা রইল।
-
মোং নাজিম উদ্দিন ২৭/০৭/২০১৬balo
-
স্বপ্নময় স্বপন ২৭/০৭/২০১৬" সৎ মানুষের খোঁজে মোরা হলেম হন্নহারা "
ভাষাতীত সুন্দর! -
মেহেদী হাসান (নয়ন) ২৬/০৭/২০১৬khub valo laglo