www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফ্ল্যাশব্যাক

রাত বারোটা বাজে।চোখ ভেঙে ঘুম আসছে।কিন্তু ঘুমোতে ইচ্ছে করছে না।মনে হচ্ছে আরো কিছুক্ষন জেগে থাকি।কিন্তু বেশীক্ষণ বোধহয় জেগে থাকতে পারবনা।আমার ঘুম নিয়ে একটু আধটু প্রবলেম আছে।যখন ঘুমোতে ইচ্ছে করে তখন ঘুমই আসেনা।আর আজ ঘুম আসছে কিন্তু ঘুমোতে ইচ্ছে করছেনা।তারপর কাল আবার রোববার।ছুটির দিন।দেরী করে উঠলেও কোনো প্রবলেম হবেনা।একা মানুষ।রান্না নিজেই করে খাই।সকালে অবশ্য কাজের এক মাসী এসে রান্না চড়িয়ে যায়।তাই সকাল দুপুর খাই।আর রাতে নিজেই রান্না করি।রক্তপাতের ভেতর খুব একটা যাইনা।সেদ্ধ ভাতেই রাত কাভার।আজ অবশ্য এক যায়গায় নেমন্তন্ন ছিল।চৌরঙ্গীতে আমার অফিসের এক কলিগের ম্যারিজ এনিভারসারিতে গিয়েছিলাম।সন্ধে সাতটার দিকে গিয়েছিলাম।বাড়িটা সাজিয়েছে বেশ করে।চারপাশে লাল-নীল-বেগুনী হরেক আলোর বাহার।অনেক বাবু-বিবিরা এসেছে।মেয়েদের শরীরে অলংকারের খনি।এক বুড়োমতন ভদ্রমহিলা লাল শাড়ি,লাল লিপস্টিক,হাতে লাল নেইলপলিস দিয়ে এসেছে।মহিলাটি বোধহয় লাল পছন্দ করে।বয়স আন্দাজ করলাম পঞ্চাশ হবে হয়ত।ওনার হাসব্যান্ডকেউ আবিষ্কার করলাম লাল জামা পরা অবস্থায়।আমি শিওর হয়ে গেলাম এ মহিলার রাশিতে লালরং ম্যাচিং করেছে।আমি মোটামুটি একা একা একটা চেয়ারে বসে ছিলাম।হাতে একটা রজনীগন্ধার তোড়া নিয়ে গিয়েছিলাম।দিয়েছিলাম বৌদির হাতেই মানে শুভর বউয়ের হাতে।আমার কলিগের নাম শুভময় বিশ্বাস।শুভ বলতেই আমরা অভ্যস্ত।আমার বয়েসী সবাই প্রায় বউ নিয়ে এসেছে।শুধু আমি কুমারবেশে বসে আছি।জামাই বউদের রঙ ঢং দেখছি।খারাপ লাগছেনা একেবারে।সবার চাইতে আমার পোশাক বড্ড বেশী সিম্পল।তারপর কুঁচকানো ছিল খানিকটা।ইস্ত্রি করা ভুলে গিয়েছিলাম।বেশ আয়েশ করেই খেলাম।দশ বারো আইটেম হবে।ফ্রাইড রাইচ,মুরগীর মাংস,সাদাভাত,ডাল,লর্ড চমচম,জেলি আরো কত কী!আমি একটু পেটুক আছি খাওয়ার বেপারে।অনেকের বাটারফ্লাই গোফের মত আমার বাটারফ্লাই ভুরি আছে একটা।এই গোফটা অনেকের যেমন পছন্দের আমার কাছে আমার ভুরিটা তেমন পছন্দের।তুলনাটা খুব একটা যুতসই হইনি আমি বুঝি।চোখ ভেঙে ঘুম আসছে কিন্তু ঘুমোতে ইচ্ছে করছেনা।আমি সেকেলে টাইপ মানুষ।ফেসবুক-টেসবুক কিছু করিনা।টিভি দেখি কম,যাও দেখি খবর,ডিটেকটিভ এইসব।নায়ক নায়িকাদের প্রতি অরুচি।বিছানায় শুয়ে মনে হচ্ছে কোনো অতল গর্ভে তলিয়ে যাবো।একা আছি বেশ আছি জীবনটা খারাপ চলছে না।বিয়ে যে করবনা তা নয়।আরেকটু গুছিয়ে নিয়ে তারপর ছাদনাতলায় মালা বদল।যাও এবার ভুগো সাংসারিক নির্যাতনে!তারপরও বিয়ে করতে হবে।বউ না পেলে পুরুষ হব কী করে।সবাই বলবে ছেলেমানুষ,ভবঘুরে,হাড়হাভাতে, বাউণ্ডুলে,ব্যচেলর ইত্যাদি ইত্যাদি।ব্যচেলর শব্দটা এই শব্দগুলোর সাথে খুব একটা মানায় না।ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে।চোখে জল দিতে ইচ্ছে করছে।চিত হয়ে শুয়ে পা দুটো নাড়াচ্ছি আর ভাবছি আহা কী প্রশান্তি!
"এমনও দিনে তারে বলা যায় এমনও ঘন ঘোর বরিষায়...."
অবশ্য এখন বসন্তকাল।হালকা একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে দিয়েছি।ঘরের লাইট অফ করে রেখেছি।হাতের কাছেই বেডসুইচ।এক টিপে ঘরটাকে সকাল করে ফেলা।এখন রাতটা অনেকই হয়েছে।রাস্তায় গাড়ীঘোড়ার আওয়াজ আসছেনা।দু চারটে গাড়ির হর্ণ আসছে কানে।শুনতে মিষ্টি লাগছে কেন কে জানে?মনে হচ্ছে এই মিষ্টি শব্দটাই ঘুমের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে আমাকে।মনে হচ্ছে গাড়ির হর্ণ বলছে,আয় ঘুম আয়....
আমি এই মূহুর্তে ব্যালকনিতে বসে আছি।ঘুম দূর করার এটাই এই মূহুর্তে মোক্ষম অস্ত্র।দেশলাইয়ে ফস করে আলো জ্বালিয়ে একটা সস্তা দরের সিগারেট ধরিয়ে টানছি।আজ কেন জানি অনেক দেরিতে ঘুমোতে ইচ্ছে করছে।ঘুমোলেই তো সকাল,হোক না একটু জেগে জেগে শহরটাকে দেখা।রাতের শহর দেখার মাঝে একটা আলাদা অনুভূতি আছে।মনে হচ্ছে শহরটা একটু জিরিয়ে নিচ্ছে।আবার তো সকাল হবে তারপর আবার সেই ব্যস্ত রাস্তা।এটাই তো উন্নতির পথ।কেউ কাওকে পাত্তা দেবেনা রাস্তায়।কারো মুখে কারুর চাওয়ার অবকাশ নেই।
এই যে দাদা!
আমার ধ্যানভঙ্গ হল।আমি তাকিয়ে দেখলাম একটা আমারি বয়সিছেলে তার সাথে একটা মেয়ে। মেয়েটা ছেলেটার সমবয়সীই হবে বা হলেও দু বছরের ছোট হবে।ছেলেটা হাত ইশারা দিয়ে আমাকে ডাকছে নিচ থেকে।আমি দোতলায় বসে খুব মনোযোগে দেখছি ব্যাপারটা।
এই যে দাদা,এই দিকে....
হ্যাঁ শুনছি দাদা,বলুন
বলছি কি খুব বিপদে পড়ে গেছি,আজ রাতটা কি একটু থাকতে দেবেন গো দাদা।
আমি বুঝতে পারলাম ছেলেটা মহাবিপদে আছে।মেয়েটা ছেলেটার সাথে পালিয়ে এসেছে বুঝতে আমার বাকি রইল না।মেয়েটার দিকে খুব মনোযোগে তাকালাম।আরে মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছে।হ্যাঁ চিনিত।হঠাৎ বুকের ভেতরতা মোচড় দিয়ে উঠল।মেয়েটা এদিকওদিক চাইছে।মনে হচ্ছে ওদের ত্রিশঙ্কু অবস্থা।আমি শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে ওদের কিছু করলে মন্দ হয়না।
হ্যাঁ দাঁড়াও।আসছি।আমি চাবির গোছাটা টেবিলের উপর থেকে নিয়ে ওদের বললাম,এই নাও চাবি।বলেই চেলে দিলাম।
ছেলেটা চাবিটা একবারেই ক্যাচ হিসেবে ধরল।ভাল ক্রিকেট খেলে বোধহয় ছেলেটা।
এসো এই গেট দিয়ে এসো।ছেলেটা হাঁ করে তাকিয়ে আছে।মেয়েটাও আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।বোধহয় আমাকে চিনে ফেলেছে মেয়েটি।চিনবেই তো।বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠছে।
ছেলেটি আর মেয়েটি আমার বিছানায় বসে আছে।ছেলেটি বড্ড বেশি সুপুরুষ।সে পা দোলাচ্ছে বসে বসে।চোখে কেমন উৎকন্ঠা।মেয়েটি বসে আছে মাথা নিচু করে।
বল তোমাদের কাহিনি শুনি।
দাদা আমার নাম মাধব চক্রবর্তী।আর ওর নাম সুপ্রিয়া।
হ্যাঁ সুপ্রিয়াই তো।এই নামটা শুনলেই সেই কলেজ বয়েসে বুকে ঝড় উঠে যেতো।এভাবে দেখা হবে ভাবতেই পারছিনা।
দাদা আমরা একে অন্যকে ভালোবাসি।ওর বিয়ে ঠিকঠাক।আশীর্বাদ আজগে।তাই আমি ওকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।আমরা বিয়ে করব ভাবছি।
আজ রাত থাকবে এখানে তাই তো!
হ্যাঁ দাদা প্লিজ।
আরে থাকবে থাকোনা।একদিন কেন দু চার দিন থাকলেও কিছু হবেনা।থাকো।
ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরতে গেল।
আরে ঠিক আছে।আমি ওকে জড়িয়ে ধরতে দিলাম না।আমার এই কোলাকুলি ব্যাপারটা ভাললাগেনা।সেটা তো ডাইরেক্ট বলতে পারবোনা ওদের।
কিছু খেয়েছো কী?
হ্যাঁ দাদা খেয়েছি।আপনাকে খুব বিপদে ফেললাম।কাল সকালেই আমরা ট্রেন চেপে বীরভুম চলে যাব।
তোমার বাড়ি বীরভুমে?
হ্যাঁগো দাদা।
ওর বাড়ি শোভাবাজারে তাইনা?
ছেলেটা চোখে একরাশ বিস্ময় নিয়ে বলল,আপনি চেনেন নাকি?
আমি সুপ্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,না আন্দাজ করেছি।
সুপ্রিয়া একঝলক আমার দিকে তাকিয়ে আবার লজ্জায় মাথা নিচু করল।
মাধব বলল,আপনিতো দাদা ব্যোমকেশ বক্সীর চেয়ে কম না।
আমি হাসলাম।শোভাবাজারে ওদের বাড়িটাও চিনি আমি।সেই কলেজ লাইফে কতই না পাগলামি করেছি ওকে পেতে।কতভাবেই না প্রপোজ করেছিলাম ওকে।ও আমার দু ক্লাশ নিচে পড়ত।সাবজেক্ট ছিল হিস্ট্রি।আমার সাবজেক্ট বাংলা ছিল।খুব সুন্দর রবীন্দ্রসংগীত গাইত সুপ্রিয়া।কলেজ ফাংশানে প্রথম ভালোলাগা ওকে।হারমোনিয়াম বাজিয়ে সেই রবীন্দ্রজয়ন্তীতে গেয়েছিল একটা গান।হ্যাঁ,সেই গানটা এখনো অমলিন হয়ে আছে আমার বুকে।সেই সুর এখনো ভুলতে পারিনা!
"প্রাণ চায় চক্ষু না চায়
মরি একি তোর দুস্তর লজ্জা...."
দাদা তোমার নামটাই তো জানা হলনা।ছেলেটি এবার আমাকে তুমি করেই বলছে।তারমানে আপন করে নিয়েছে আমাকে বোঝা যাচ্ছে।
আমি সুপ্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,আবীর সরকার।
আমি জানি সুপ্রিয়া নাম বলার পর আমার দিকে তাকাবে।আমার ধারণা ভুল হলনা।আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল।আমি এবার অন্যদিকে মনোযোগ দিলাম।সুপ্রিয়ার দিকে তাকালে দুঃখ বাড়বে ছাড়া কমবে না।ওকে প্রায় ভুলেই ছিলাম।এভাবে হঠাৎ দেখা হবে তাও আমার ঘরেতে একেবারে প্রেমিককে নিয়ে!
আমি পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে বললাম,খাও নাকি?
মাধব সঙ্গে সঙ্গে বলল,নানা দাদা থ্যাংকস।
আমি সিগারেট ধরিয়ে টানছি বেশ আয়েশ করেই।ঘুম চোখ থেকে পুরো উধাও।মেয়েটার সিগারেটের গন্ধে একটু কষ্ট হচ্ছে মনে হয়।হোক গে তাতে আমার কী।আমার ঘরে আমি যা খুশি তাই করব।ন্যংটো হয়ে নাচলেই বা কী।আমাকে কম কষ্ট দিয়েছে নাকি মেয়েটা।কত ভাবেই না ওকে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে ওকে কত্ত ভালোবাসি।ও পাত্তাই দিলনা।
আমি সিগারেট খাওয়া শেষ করে ওদের বললাম,ঘুমোও আমি যাচ্ছি অন্যখানে।
কোথায় যাবে দাদা?
এই পাশেই আছি।দরজা আটকে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
সুপ্রিয়া আমার দিকে চেয়েই আছে।ছেলেটি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,তোমার মত মানুষই হয়না,তুমি খুব ভালমানুষ।
আমি রেগে গিয়ে বললাম,কিভাবে বুঝলে আমি ভালমানুষ।আমি যদি এখন পুলিস ডেকে আনি।
সুপ্রিয়া এবার মুখ খুলল,প্লিজ ডাকবেন না।আমরা সকালেই চলে যাব।
আমি একদৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইলাম।
সুপ্রিয়া বলল,আমি জানি আপনি এই কাজ কক্ষনো করবেন না।
আমি ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।এই মূহুর্তে আমি এখন চিলেকোঠায় বল্টুদার সাথে আছি।একই খাটে দুজন শুয়ে আছি।ছোট খাট।গাদাগাদি করেই আছি আমরা দুজন।বল্টুদা ঘুমোনোর আগে বলে দিয়েছে,বিড়ি সিগারেট খাবিনা কিন্তু।
আমি তাকে সায় দিয়ে বলেছি,ঠিক আছে তুমি ঘুমোও তো দাদা।
বল্টুদা আরো বলেছে,এতো রাতে কোন গেস্ট এলো তোর?
আমি এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেইনি।
সুপ্রিয়া আমার হলেও হতে পারতো।অবশ্য না ভালোবেসে ভালোই করেছে।আমি বিড়ি সিগারেট খাই।চালচুলোহীন গোছের মানুষ আমি।আমার চোখে একফোঁটাও ঘুম নেই।কানে সেই গানের সুর ভেসে আসছে এখনো।আহ!কী প্রশান্তি গানটার ভেতরে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭২২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০৬/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • বেশ লাগল
  • অঙ্কুর মজুমদার ১৭/০৬/২০১৬
    nice
  • পরশ ১৫/০৬/২০১৬
    সুন্দর
  • পরশ ১২/০৬/২০১৬
    ভাল
  • পরশ ১১/০৬/২০১৬
    ভাল
  • এতো জীবনের জয়গান!!!!
 
Quantcast