ঝগড়া
বউটি ভারী লক্ষ্মী।কিন্তু এই লক্ষ্মী বউটির আজ মন খারাপ।তার স্বামীর উপর রাগ করে বসে আছে।এইটুকু বয়েসে কিছু সখ আহ্লাদ থাকে সেটা পূরন করছেনা স্বামীটি।বউটি একটু কেনাকাটার বায়না ধরেছে কিন্তু স্বামীটি আজ যাবনা কাল করে করে দিন পার করছে।বউটির কিচ্ছু ভাল্লাগেনা।বয়স টাও বড্ড কম।বেশী হলে আঠারোই না হয় হবে।ছ' মাস হল বিয়ে হয়েছে।পরিবার থেকেই বিয়েটা হয়েছে।বিয়ের আগে ওরা প্রায় চার মাস চুটিয়ে ফোনে কথা বলেছে।কত মিষ্টি মিষ্টি কথা স্বামিটির।হ্যান কারেগা ত্যান কারেগা।কিন্তু বউটি এখন ভাবছে কচু করবে তার জন্যে।স্বামীটিই বা করবে কী।ছোট একটা কোম্পানীতে চাকরি করে সে।যা মাইনে পায় তা দিয়ে কোনরকমে চলে যায়।স্বামীটি অনেক হিসেবি।তাই টিপেটিপে খরচা করে সে।বউটি এম্নিতে অনেক লক্ষ্মী।ঘর গোছগাছ করে রাখে।সিঁথিতে অনেকটা সিঁদুর দেয়।বড় একটা লাল টিপ।দেখতেও লক্ষ্মীপ্রতিমার মত।মা আছে বউটির,বাবা ছোটবেলায় আকাশে হারিয়ে গেছে।অভাবের সংসারে মামা বাড়ি মানুষ।কোনো ভাল আবদার কারো কাছে করেনি লক্ষ্মী বউটি।কিন্তু স্বামীটি কথা দিয়েছিল মাসে মাসে শাড়ি,নেইল পালিশ,লিপস্টিক পাউডার কিনে দেবে।কিন্তু ব্যঙ দিচ্ছে।ব্লাউজটাও ছিঁড়ে গেছে একপাশ।একটা ব্লাউজও আজ কিনবে বলে ঠিক করে রেখেছিল।কিন্তু স্বামীটা যে কিনা মোবাইলে কল দিচ্ছে সে কখন থেকে একবারের জন্য ধরছে না।মনটা খুব খারাপ লক্ষ্মী বউটার।তারপর সারাদিন একা একাই থাকে।ঘর গোছগাছ করে,দুটো পদের রান্না করে,সময় পেলে বই পড়ে।স্বামীটি অবশ্য বইপাগল।অনেক বই আছে শেলফে।প্রতিমাসেই হয় সুনীল না হয় সমরেশ,শীর্ষেন্দুর বই কিনে আনে।বউটি তা বসে বসে পড়ে সময় কাটায়।
বউটির নাম স্নেহা।স্নেহ আছে সবার প্রতি।স্বামীটাকে অনেক ভালবাসে সে।এ জীবনে স্বামী ছাড়া তার আপন বলতে কেই বা আছে।মা মামাবাড়িতেই থাকে।মাঝে সাঝে আসে এখানে।মোবাইলে রোজ কথা হয়।এখন রাত প্রায় সাতটা।কিরণ এখনো এলনা।স্বামীটির নাম কিরণ।ডাকনাম ঘেন্টু।বউটি বড্ড মজা পায় এই নামটা মুখে আনলে।ঘেন্টুকে মাঝেমধ্যে রাগানোর জন্য স্নেহা ঘেন্টু বলে খেপায়।স্বামীটি ওকে বলে দিয়েছে এই নামে ডাকবেনা তুমি।
বেশ ডাকব,তাতে তোমার কী?ঘেন্টু ঘেন্টু....
ঘেন্টু নামের স্বামীটি তখন রাগে কানে বালিশ দিয়ে শুয়ে থাকে।বউটিকে খুব করে শাসাতে পারেনা।বড্ড ভালবাসে কিনা।তারপর লক্ষ্মীপ্রতিমার মত দেখতে তার বউটি।
আজ স্নেহা অনেক ঝগড়া করবে ঘেন্টুর সাথে।ঝগড়া করার কতগুলো কারণ আছে।কারণগুলো সে একে একে খাতায় লিখবে।তারপর ওকে শোনাবে।একটা খাতা আর কলম নিয়ে লিখতে বসল লক্ষ্মী বউটি
১.মোবাইল ধরলেনা কেন?
২.আমাকে বাজারে নিয়ে যাওনি কেন?
৩.সকালবেলা আমাকে চুমু খেয়ে অফিসে যাওনি কেন
৪.আমাকে না বলেই ঘর খোলা রেখেই চলে গেলে কেন
আর কিছু এই মূহুর্তে আসছেনা।মাথায় আর কোনো ঝগড়ার টপিকস আসছেনা।হঠাৎ মোবাইলে কল আসল।স্নেহা দৌড়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গেল।মোবাইলটা ওখানেই রাখা।ঘেন্টু কল করেছে।করুক গে আমার বয়েই গেছে কল ধরতে,নিজের মনে এরকম কথা বলে একটা ভেংচি কাটলো মুখে।তারপর মোবাইলটা না ধরেই রেখে দিল।পরপর দুবার কল আসল।
ধরলনা।
স্নেহা খুব রাগ করে আছে।আজ স্বামীর সাথে ঝগড়া করবে সে।শুরুটা করবে মোবাইল ধরা নিয়ে।কেন মোবাইল ধরলনা।ও জানেনা যে বউটি ঘরে একা থাকে।যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়।অঘটন একটা ঘটে গেল।মোবাইলে মেসেজ এসেছে ঘেন্টুর কাছ থেকে-
"ওগো সুইটহার্ট আমি বিপদে আছি।মোবাইল ধর শিগগির"
বউটি দ্রুত তড়িঘড়ি করে মোবাইলে নিজেই কল দিল-
হ্যালো কি হয়েছে তোমার ওগো,কোথায় আছো?
কল ধরছনা কেন?স্বামীটির প্রশ্ন
তুমিও তো ধরলে না।কী বিপদ তারাতারি বল প্লিজ....
ঘোড়ারডিম বিপদ।কোনো বিপদ হয়নি।তুমি কল ধরলে না তাই বললাম।বলেই কলটা কেটে দিল।
স্নেহা আরেকটা ক্লু পেল ঝগড়া করার।সেটা হল মিথ্যে বলা।ছোটবেলায় ও রাখালের গল্পটি পড়েনি।মিথ্যে বলার জন্য বাঘের পেটে চলে গেল।আজ ওকে সব হাড়েহাড়ে বোঝাবে।স্নেহা খাতায় মিথ্যে বলার কারণটা ও লিখল।বউটি খুব রেগে আছে।আজ কোনো আদিখ্যেতা শুনবেনা লক্ষ্মী বউটি।স্নেহা চা চড়িয়ে দিল গ্যাসের উনুনে।এখন চা খেয়ে আর একটা নোনতা বিস্কিট খেয়ে সময়টা পার করবে।একটু খিদেও লেগেছে তার।কিরণ যে কেন এতো দেরি করে আসে।রোজ সাতটার সময় ঘরে ঢুকে।এখন ৭ টা ৪৫ বেজে গেছে।আসার কোনো নামগন্ধই নেই।স্বামীটা যে কেন এতো লেট করে।বউটি শুধু ভাবে আর নিজের মনে কথা আঁকিবুঁকি করে।চায়ে জল বেশি করে দিয়েছে।স্নেহার ধারণা চা করতে করতে স্বামী ঘরে চলে আসবে।তারপর ওকে চাটা দিবে।চা খাওয়া হলেই ঝগড়া শুরু হবে।হঠাৎ ঘরের সামনে পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল।কলিং বেলটাও বেজে উঠল।বউটা শাড়ির আচল কোমরে গুজে দরজার সামনে গেল।
কে?
আমি।খোলো ময়নাপাখি।
ময়নাপাখি দরজাটা খুলল।
কোনো কথা বললনা।দরজাটা খুলেই চলে গেল রান্নাঘরে।চা দুটো কাপে ঢালল।এরপর চা নিয়ে ঘরে ঢুকল।কিরণের চা রান্না ঘরেই রেখে দিল।আনল না।নিজেই এনে খাক না।
স্নেহা একা বসে বসে চা আর নোনতা বিস্কিট খাচ্ছে।
কিরন ড্রেস চেঞ্জ করতে করতে বলল,কিগো সিংগারা এনেছি দুটো তোমার জন্য।বিস্কিট খাচ্ছ কেন?
স্নেহা কুটকুট করে বিস্কিটই খেয়ে গেল।ওদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।
কিরণ বাথরুমে ফ্রেশ হতে গেল।
স্নেহা জামাটা আলনায় গুছিয়ে রাখল,পেন্ট,জাঙিয়াও।নাহ!এতো আগোছালো লোকটা!স্নেহা বিরক্ত হয়ে চা খেয়েই গেল।
আমার চা আনোনি গো তুমি?
কোনো উত্তর নেই।
কি হল ময়নাপাখি রাগ করেছো?
স্নেহা সামান্য একটু হাসল কিন্তু কিরণকে বুঝতে দিলনা।
কিরণ সিংগারার প্যাকেট টা স্নেহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,একটা খেয়ে দেখো।ওই ভ্যাবলার দোকানের সিংগারা।তোমার ফেভারিট।
স্নেহা এবার বলল,চা রান্নাঘরে খেয়ে আমায় উদ্ধার কর।
ঠিক আছে যাচ্ছি রান্নাঘরে।
স্নেহা আজ সিংগারা কোনোমতেই খাবেনা।আজ রাগটা কোনো মতেই কমাবে না।কথা দিয়ে কথা রাখেনা।কী আমার সুপুরুষ রে!
আচ্ছা ময়নাপাখি তোমাকে এই সামনের রোববার বাজারে নিয়ে যাবক্ষন।যা কিনতে চাও কিনে দেব।ওক্কে?
স্নেহা আজ কথাই বলবেনা।কোনো উত্তরও দেবেনা।
কি হল কথা না বললে চলে।কিছু তো বল।
কিরণ স্নেহার কাছে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে।স্নেহা কোনো পাত্তা দেয়না।
কি হয়েছে বল?
স্নেহা এবার কথা না বলে থাকতে পারবেনা।ঝগড়া করতে হলে কথা তো বলতেই হবে।
চা খাওয়া হয়েছে তোমার?
উঁহু
আগে চা খাও।
কিরণ একচুমুকে চা টা খেল।
স্নেহা কাপটা হাতে নিয়ে একটা আছার দিল ফ্লোরে।কাপটা ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো।
কিরণ হাঁ করে তাকিয়ে আছে লক্ষ্মী বউটির দিকে।
সে কাপ ভাঙা নিয়ে কিছুই বললনা।শুধু বলল,রাগটা কমেছে?
আজ কী রাঁধলে গো?
স্নেহা রাগে গজগজ করছে।সে খাতাটি নিয়ে কিরণের সামনে দাঁড়াল।
মোবইলে কল ধরলেনা কেন?
ও আচ্ছা ইন্টারভিউ দিতে হবে।ওয়াও!ক্যায়া বাত হে।ওকে ময়নাপাখি বলছি তখন বস ছিল।মিটিং ছিল একটা।
ঢপের চপ!
সত্যি বলছি গো!মাইরি....
বিশ্বাস করলাম যাও।
আজ বাজারে নেওয়ার কথা ছিল।সেটার কী হবে?
ওই যে রোববার।রোববার ফাইনাল।
আমাকে চুমু খাওনি কেন?স্নেহা এবার হেসে ফেলল।
কিরণ জড়িয়ে ধরে ওকে চুমু খেতে গেল।কিন্তু স্নেহা দূরত্ব খানিকটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,টাইমওভার হয়ে গেছে।
আমাকে না বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলে কেন তুমি?
ভুল করেছি।আর হবেনা।
মিথ্যে বললে কেন তুমি?
কিরণ এবার বিছানায় শুয়ে টিভি চালিয়ে দিয়ে বলল,আর উত্তর দিতে পারবোনা।আসো সিরিয়াল দেখি।
আমার সিরিয়ালের আগে উত্তর দাও....
ওকে সরি।আর বলব না।
তুমি জানোনা আমি মিথ্যে লাইক করিনা।
বললাম তো আর হবেনা।
স্নেহা আর কথা না বলে পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল।সিদ্ধান্ত নিল আজ আর ওর সাথে ঘুমোবেনা।স্নেহা ওর মামীকে দেখত এমন টা করতে।তাই আজ ও কোনোমতেই ওর সাথে ঘুমোবেনা।মামীর পথ অবলম্বন করবে।অবশ্য কখনো ওকে ছাড়া একা ঘুমোয় নি স্নেহা।আজ ঘুমোবে।একটু ভয় করবে তাতে কী?ডন্ট কেয়ার!
ভেতর থেকে দরজা দিয়েই শুয়ে পড়ল স্নেহা।অবশ্য লাইট জ্বালিয়েই রেখে শুয়ে পড়েছে সে।কিরণ টিভি দেখায় ব্যাস্ত।সারাদিনের ক্লান্তি টিভি দেখে পূরণ করে সে।
এই ভাবে বেশ কিছুক্ষন গেলো।কিরণের খেয়াল হল অনেকক্ষণ হল বউটি তার পাশের রুমে আছে।
কিরণ দরজার সামনে দাঁড়াল,কি হল ঘুমিয়ে গেলে নাকি?
কোনো উত্তর নেই।
এবার দরজাটা ঠেলা দিয়ে দেখল ভেতর থেকে নক করা।কিরণ দরজায় ঠকঠক করল আর বলল,আরে খিদে লেগেছে তো।এসো খেয়ে নি।দরজাটা খোলো।
তুমি খাও আমি খাবোনা।
তাহলে কিন্তু আমিও খাবনা এই বলে দিলাম।
সে তোমার ব্যাপার।ভেতর থেকে স্নেহার উত্তর।
তুমি কি আজ এখানেই ঘুমোবে?
হ্যাঁ।আমি এখন থেকে এই ঘরেই ঘুমোবো।
কিরণ বুঝতে পারল বউটি তার উপর অনেক রেগে আছে।আসলেই তো রাগ করারই কথা।মেয়েটা কে কি দিয়েছে সে।ঠিকমত একটা মনের মত কিছু দেয়া হয়না।অথচ ওর মত অল্পবয়সী মেয়েরা কত কি বা আহ্লাদ করে,এটা কেনো,ওটা কেনো,এটা খাবো,ওটা খাবো,চল রাতে বাইরে কোথাও খেয়ে আসি।ও তো এসবের কিছুই করেনা।প্রয়োজনের জন্য একটা শাড়ি,ব্লাউজ কিনবে ও।সেটা কেনার অবশ্যই অধিকার আছে।কিরণ এই কথাগুলোই ভাবল।
কিরণও না খেয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়।স্নেহাকে নিয়ে ভাবছে সে,আচ্ছা মেয়েটি বিয়ের পর একা একা ঘুমোয় নি।একা ঘুমোতে পারবে তো।ভয় পাবেনা তো।কিরণ বিছানা থেকে উঠল।স্নেহার রুমের সামনেটায় গেল।দরজায় নক করলনা।এখন রুমের ভেতর আলো দেখা যাচ্ছেনা।তারমানে ঘুমিয়ে পড়েছে লক্ষ্মী বউটা।
কিরণ রাতে ডাইরি লিখে ঘুমোয়।সে ডাইরি লিখতে বসল।খিদেই পেট চোঁ চোঁ করছে।করুক চোঁ চোঁ।আজ ও না খেলে সেও খাবেনা।কিরণ ডাইরিটা লিখে শুয়ে পড়ল লাইটটা নিভিয়ে।
বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেল।দুটো প্রাণিই ঘুমিয়ে গেল।রাত প্রায় দেড়টা।
হঠাৎ একটা চিৎকারে কিরণের ঘুম ভাঙে।সে বুঝতে পারে এটা স্নেহার কণ্ঠ।আবার চিৎকার আসল।বাথরুম থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসছে।
কিরণ ঝড়ের বেগে বাথরুমে গেল।
বউটি ওকে দেখামাত্রই জড়িয়ে ধরল।
কি দেখে ভয় পেয়েছো গো।ভূত!
না,আরশোলা গো।আমি একা ঘুমোতে পারবোনা।
তোমাকে আমি বলেছি ঘুমোতে একা?
স্নেহা এখনো কিরণকে জড়িয়ে ধরে আছে।বেচারি বড্ড ভয় পেয়েছে!কিরণ তার হাতের পাঁচিল দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেই আছে।এটাই বোধহয় ভালবাসা।
স্নেহার খুব ইচ্ছে করছে আবার ঝগড়া করে।
এই তুমি ভাত খেলেনা কেন?
তুমিও তো খেলেনা।
আমি না খেলে তুমিও খাবেনা?
অফকোর্স তাই।
আমাকে আর ডাকলে না কেন?
আমি জানি তোমাকে আমার সাথেই ঘুমোতে হবে।
বাব্বা এতো সিওর হউ কিভাবে গো?ফের ঢপ দিচ্ছ নাকি?
বিশ্বাস হচ্ছেনা এইতো?
হুঁ।
কিরণ ওকে বাহুডোরে মুক্ত করে ওদের শোবার রুমে ঢুকল।
হাতে নিল ডাইরিটা।একটা পৃষ্ঠা বের করে দিয়ে বলল,নাও পড়।
স্নেহা লেখাটা পড়ল
"আজ ময়নাপাখি অভিমান করে অন্য রুমে ঘুমিয়ে পড়েছে।আমি জানি ওকে আমার সাথেই ঘুমোতে হবে।একা একা ঘুমোতে পারবেনা।ভয় পেলেও পেতে পারে।"
স্নেহার প্রচুর খিদে লেগেছে।
আমার সিংগারা কোথায়?
খেয়ে ফেলেছি।
তুমি আমার সিংগারা খেলে কেন?যাও তোমার সাথে ঘুমোবো না।টাটা বাই বাই.....
আরে যাও কোথায়।এইতো তোমার সিংগারা।বউটি একগাল হেসে ফেলল,সিংগারা খেতে হবেনা।ভাত খাবে এসো।
রাত প্রায় দুটো।দুটো প্রাণি হাসাহাসি করে ঘরটাকে আলোকিত করছে।
বউটির নাম স্নেহা।স্নেহ আছে সবার প্রতি।স্বামীটাকে অনেক ভালবাসে সে।এ জীবনে স্বামী ছাড়া তার আপন বলতে কেই বা আছে।মা মামাবাড়িতেই থাকে।মাঝে সাঝে আসে এখানে।মোবাইলে রোজ কথা হয়।এখন রাত প্রায় সাতটা।কিরণ এখনো এলনা।স্বামীটির নাম কিরণ।ডাকনাম ঘেন্টু।বউটি বড্ড মজা পায় এই নামটা মুখে আনলে।ঘেন্টুকে মাঝেমধ্যে রাগানোর জন্য স্নেহা ঘেন্টু বলে খেপায়।স্বামীটি ওকে বলে দিয়েছে এই নামে ডাকবেনা তুমি।
বেশ ডাকব,তাতে তোমার কী?ঘেন্টু ঘেন্টু....
ঘেন্টু নামের স্বামীটি তখন রাগে কানে বালিশ দিয়ে শুয়ে থাকে।বউটিকে খুব করে শাসাতে পারেনা।বড্ড ভালবাসে কিনা।তারপর লক্ষ্মীপ্রতিমার মত দেখতে তার বউটি।
আজ স্নেহা অনেক ঝগড়া করবে ঘেন্টুর সাথে।ঝগড়া করার কতগুলো কারণ আছে।কারণগুলো সে একে একে খাতায় লিখবে।তারপর ওকে শোনাবে।একটা খাতা আর কলম নিয়ে লিখতে বসল লক্ষ্মী বউটি
১.মোবাইল ধরলেনা কেন?
২.আমাকে বাজারে নিয়ে যাওনি কেন?
৩.সকালবেলা আমাকে চুমু খেয়ে অফিসে যাওনি কেন
৪.আমাকে না বলেই ঘর খোলা রেখেই চলে গেলে কেন
আর কিছু এই মূহুর্তে আসছেনা।মাথায় আর কোনো ঝগড়ার টপিকস আসছেনা।হঠাৎ মোবাইলে কল আসল।স্নেহা দৌড়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গেল।মোবাইলটা ওখানেই রাখা।ঘেন্টু কল করেছে।করুক গে আমার বয়েই গেছে কল ধরতে,নিজের মনে এরকম কথা বলে একটা ভেংচি কাটলো মুখে।তারপর মোবাইলটা না ধরেই রেখে দিল।পরপর দুবার কল আসল।
ধরলনা।
স্নেহা খুব রাগ করে আছে।আজ স্বামীর সাথে ঝগড়া করবে সে।শুরুটা করবে মোবাইল ধরা নিয়ে।কেন মোবাইল ধরলনা।ও জানেনা যে বউটি ঘরে একা থাকে।যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়।অঘটন একটা ঘটে গেল।মোবাইলে মেসেজ এসেছে ঘেন্টুর কাছ থেকে-
"ওগো সুইটহার্ট আমি বিপদে আছি।মোবাইল ধর শিগগির"
বউটি দ্রুত তড়িঘড়ি করে মোবাইলে নিজেই কল দিল-
হ্যালো কি হয়েছে তোমার ওগো,কোথায় আছো?
কল ধরছনা কেন?স্বামীটির প্রশ্ন
তুমিও তো ধরলে না।কী বিপদ তারাতারি বল প্লিজ....
ঘোড়ারডিম বিপদ।কোনো বিপদ হয়নি।তুমি কল ধরলে না তাই বললাম।বলেই কলটা কেটে দিল।
স্নেহা আরেকটা ক্লু পেল ঝগড়া করার।সেটা হল মিথ্যে বলা।ছোটবেলায় ও রাখালের গল্পটি পড়েনি।মিথ্যে বলার জন্য বাঘের পেটে চলে গেল।আজ ওকে সব হাড়েহাড়ে বোঝাবে।স্নেহা খাতায় মিথ্যে বলার কারণটা ও লিখল।বউটি খুব রেগে আছে।আজ কোনো আদিখ্যেতা শুনবেনা লক্ষ্মী বউটি।স্নেহা চা চড়িয়ে দিল গ্যাসের উনুনে।এখন চা খেয়ে আর একটা নোনতা বিস্কিট খেয়ে সময়টা পার করবে।একটু খিদেও লেগেছে তার।কিরণ যে কেন এতো দেরি করে আসে।রোজ সাতটার সময় ঘরে ঢুকে।এখন ৭ টা ৪৫ বেজে গেছে।আসার কোনো নামগন্ধই নেই।স্বামীটা যে কেন এতো লেট করে।বউটি শুধু ভাবে আর নিজের মনে কথা আঁকিবুঁকি করে।চায়ে জল বেশি করে দিয়েছে।স্নেহার ধারণা চা করতে করতে স্বামী ঘরে চলে আসবে।তারপর ওকে চাটা দিবে।চা খাওয়া হলেই ঝগড়া শুরু হবে।হঠাৎ ঘরের সামনে পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল।কলিং বেলটাও বেজে উঠল।বউটা শাড়ির আচল কোমরে গুজে দরজার সামনে গেল।
কে?
আমি।খোলো ময়নাপাখি।
ময়নাপাখি দরজাটা খুলল।
কোনো কথা বললনা।দরজাটা খুলেই চলে গেল রান্নাঘরে।চা দুটো কাপে ঢালল।এরপর চা নিয়ে ঘরে ঢুকল।কিরণের চা রান্না ঘরেই রেখে দিল।আনল না।নিজেই এনে খাক না।
স্নেহা একা বসে বসে চা আর নোনতা বিস্কিট খাচ্ছে।
কিরন ড্রেস চেঞ্জ করতে করতে বলল,কিগো সিংগারা এনেছি দুটো তোমার জন্য।বিস্কিট খাচ্ছ কেন?
স্নেহা কুটকুট করে বিস্কিটই খেয়ে গেল।ওদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।
কিরণ বাথরুমে ফ্রেশ হতে গেল।
স্নেহা জামাটা আলনায় গুছিয়ে রাখল,পেন্ট,জাঙিয়াও।নাহ!এতো আগোছালো লোকটা!স্নেহা বিরক্ত হয়ে চা খেয়েই গেল।
আমার চা আনোনি গো তুমি?
কোনো উত্তর নেই।
কি হল ময়নাপাখি রাগ করেছো?
স্নেহা সামান্য একটু হাসল কিন্তু কিরণকে বুঝতে দিলনা।
কিরণ সিংগারার প্যাকেট টা স্নেহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,একটা খেয়ে দেখো।ওই ভ্যাবলার দোকানের সিংগারা।তোমার ফেভারিট।
স্নেহা এবার বলল,চা রান্নাঘরে খেয়ে আমায় উদ্ধার কর।
ঠিক আছে যাচ্ছি রান্নাঘরে।
স্নেহা আজ সিংগারা কোনোমতেই খাবেনা।আজ রাগটা কোনো মতেই কমাবে না।কথা দিয়ে কথা রাখেনা।কী আমার সুপুরুষ রে!
আচ্ছা ময়নাপাখি তোমাকে এই সামনের রোববার বাজারে নিয়ে যাবক্ষন।যা কিনতে চাও কিনে দেব।ওক্কে?
স্নেহা আজ কথাই বলবেনা।কোনো উত্তরও দেবেনা।
কি হল কথা না বললে চলে।কিছু তো বল।
কিরণ স্নেহার কাছে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে।স্নেহা কোনো পাত্তা দেয়না।
কি হয়েছে বল?
স্নেহা এবার কথা না বলে থাকতে পারবেনা।ঝগড়া করতে হলে কথা তো বলতেই হবে।
চা খাওয়া হয়েছে তোমার?
উঁহু
আগে চা খাও।
কিরণ একচুমুকে চা টা খেল।
স্নেহা কাপটা হাতে নিয়ে একটা আছার দিল ফ্লোরে।কাপটা ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো।
কিরণ হাঁ করে তাকিয়ে আছে লক্ষ্মী বউটির দিকে।
সে কাপ ভাঙা নিয়ে কিছুই বললনা।শুধু বলল,রাগটা কমেছে?
আজ কী রাঁধলে গো?
স্নেহা রাগে গজগজ করছে।সে খাতাটি নিয়ে কিরণের সামনে দাঁড়াল।
মোবইলে কল ধরলেনা কেন?
ও আচ্ছা ইন্টারভিউ দিতে হবে।ওয়াও!ক্যায়া বাত হে।ওকে ময়নাপাখি বলছি তখন বস ছিল।মিটিং ছিল একটা।
ঢপের চপ!
সত্যি বলছি গো!মাইরি....
বিশ্বাস করলাম যাও।
আজ বাজারে নেওয়ার কথা ছিল।সেটার কী হবে?
ওই যে রোববার।রোববার ফাইনাল।
আমাকে চুমু খাওনি কেন?স্নেহা এবার হেসে ফেলল।
কিরণ জড়িয়ে ধরে ওকে চুমু খেতে গেল।কিন্তু স্নেহা দূরত্ব খানিকটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,টাইমওভার হয়ে গেছে।
আমাকে না বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলে কেন তুমি?
ভুল করেছি।আর হবেনা।
মিথ্যে বললে কেন তুমি?
কিরণ এবার বিছানায় শুয়ে টিভি চালিয়ে দিয়ে বলল,আর উত্তর দিতে পারবোনা।আসো সিরিয়াল দেখি।
আমার সিরিয়ালের আগে উত্তর দাও....
ওকে সরি।আর বলব না।
তুমি জানোনা আমি মিথ্যে লাইক করিনা।
বললাম তো আর হবেনা।
স্নেহা আর কথা না বলে পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল।সিদ্ধান্ত নিল আজ আর ওর সাথে ঘুমোবেনা।স্নেহা ওর মামীকে দেখত এমন টা করতে।তাই আজ ও কোনোমতেই ওর সাথে ঘুমোবেনা।মামীর পথ অবলম্বন করবে।অবশ্য কখনো ওকে ছাড়া একা ঘুমোয় নি স্নেহা।আজ ঘুমোবে।একটু ভয় করবে তাতে কী?ডন্ট কেয়ার!
ভেতর থেকে দরজা দিয়েই শুয়ে পড়ল স্নেহা।অবশ্য লাইট জ্বালিয়েই রেখে শুয়ে পড়েছে সে।কিরণ টিভি দেখায় ব্যাস্ত।সারাদিনের ক্লান্তি টিভি দেখে পূরণ করে সে।
এই ভাবে বেশ কিছুক্ষন গেলো।কিরণের খেয়াল হল অনেকক্ষণ হল বউটি তার পাশের রুমে আছে।
কিরণ দরজার সামনে দাঁড়াল,কি হল ঘুমিয়ে গেলে নাকি?
কোনো উত্তর নেই।
এবার দরজাটা ঠেলা দিয়ে দেখল ভেতর থেকে নক করা।কিরণ দরজায় ঠকঠক করল আর বলল,আরে খিদে লেগেছে তো।এসো খেয়ে নি।দরজাটা খোলো।
তুমি খাও আমি খাবোনা।
তাহলে কিন্তু আমিও খাবনা এই বলে দিলাম।
সে তোমার ব্যাপার।ভেতর থেকে স্নেহার উত্তর।
তুমি কি আজ এখানেই ঘুমোবে?
হ্যাঁ।আমি এখন থেকে এই ঘরেই ঘুমোবো।
কিরণ বুঝতে পারল বউটি তার উপর অনেক রেগে আছে।আসলেই তো রাগ করারই কথা।মেয়েটা কে কি দিয়েছে সে।ঠিকমত একটা মনের মত কিছু দেয়া হয়না।অথচ ওর মত অল্পবয়সী মেয়েরা কত কি বা আহ্লাদ করে,এটা কেনো,ওটা কেনো,এটা খাবো,ওটা খাবো,চল রাতে বাইরে কোথাও খেয়ে আসি।ও তো এসবের কিছুই করেনা।প্রয়োজনের জন্য একটা শাড়ি,ব্লাউজ কিনবে ও।সেটা কেনার অবশ্যই অধিকার আছে।কিরণ এই কথাগুলোই ভাবল।
কিরণও না খেয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়।স্নেহাকে নিয়ে ভাবছে সে,আচ্ছা মেয়েটি বিয়ের পর একা একা ঘুমোয় নি।একা ঘুমোতে পারবে তো।ভয় পাবেনা তো।কিরণ বিছানা থেকে উঠল।স্নেহার রুমের সামনেটায় গেল।দরজায় নক করলনা।এখন রুমের ভেতর আলো দেখা যাচ্ছেনা।তারমানে ঘুমিয়ে পড়েছে লক্ষ্মী বউটা।
কিরণ রাতে ডাইরি লিখে ঘুমোয়।সে ডাইরি লিখতে বসল।খিদেই পেট চোঁ চোঁ করছে।করুক চোঁ চোঁ।আজ ও না খেলে সেও খাবেনা।কিরণ ডাইরিটা লিখে শুয়ে পড়ল লাইটটা নিভিয়ে।
বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেল।দুটো প্রাণিই ঘুমিয়ে গেল।রাত প্রায় দেড়টা।
হঠাৎ একটা চিৎকারে কিরণের ঘুম ভাঙে।সে বুঝতে পারে এটা স্নেহার কণ্ঠ।আবার চিৎকার আসল।বাথরুম থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসছে।
কিরণ ঝড়ের বেগে বাথরুমে গেল।
বউটি ওকে দেখামাত্রই জড়িয়ে ধরল।
কি দেখে ভয় পেয়েছো গো।ভূত!
না,আরশোলা গো।আমি একা ঘুমোতে পারবোনা।
তোমাকে আমি বলেছি ঘুমোতে একা?
স্নেহা এখনো কিরণকে জড়িয়ে ধরে আছে।বেচারি বড্ড ভয় পেয়েছে!কিরণ তার হাতের পাঁচিল দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেই আছে।এটাই বোধহয় ভালবাসা।
স্নেহার খুব ইচ্ছে করছে আবার ঝগড়া করে।
এই তুমি ভাত খেলেনা কেন?
তুমিও তো খেলেনা।
আমি না খেলে তুমিও খাবেনা?
অফকোর্স তাই।
আমাকে আর ডাকলে না কেন?
আমি জানি তোমাকে আমার সাথেই ঘুমোতে হবে।
বাব্বা এতো সিওর হউ কিভাবে গো?ফের ঢপ দিচ্ছ নাকি?
বিশ্বাস হচ্ছেনা এইতো?
হুঁ।
কিরণ ওকে বাহুডোরে মুক্ত করে ওদের শোবার রুমে ঢুকল।
হাতে নিল ডাইরিটা।একটা পৃষ্ঠা বের করে দিয়ে বলল,নাও পড়।
স্নেহা লেখাটা পড়ল
"আজ ময়নাপাখি অভিমান করে অন্য রুমে ঘুমিয়ে পড়েছে।আমি জানি ওকে আমার সাথেই ঘুমোতে হবে।একা একা ঘুমোতে পারবেনা।ভয় পেলেও পেতে পারে।"
স্নেহার প্রচুর খিদে লেগেছে।
আমার সিংগারা কোথায়?
খেয়ে ফেলেছি।
তুমি আমার সিংগারা খেলে কেন?যাও তোমার সাথে ঘুমোবো না।টাটা বাই বাই.....
আরে যাও কোথায়।এইতো তোমার সিংগারা।বউটি একগাল হেসে ফেলল,সিংগারা খেতে হবেনা।ভাত খাবে এসো।
রাত প্রায় দুটো।দুটো প্রাণি হাসাহাসি করে ঘরটাকে আলোকিত করছে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অঙ্কুর মজুমদার ১৮/০৬/২০১৬sundor
-
আজকের চাকরির বাজার বিডি.কম ০৯/০৬/২০১৬wow!!
romance have there
Like-100 -
পরশ ০৯/০৬/২০১৬সুন্দর
-
সালাম আলী আহসান ০৯/০৬/২০১৬হাঁসির