রহস্যময় চিত্রশিল্পী
স্যার আমি একজন চিত্রশিল্পী।
আচ্ছা ভাল।তারপর বলুন আপনার সমস্যা
কী?
ছেলেটি একটু উদাসীন হয়ে বসে রইল।
ডাক্তার সুবিমল চ্যাটার্জী
ছেলেটির দিকে তাকিয়ে
বললেন,নাম কী আপনার?
ইমন। ইমন ওঝা।
তোমার সমস্যাটা এবার বল।শুনি।তুমি
করেই বলি তোমায়।বয়সেও অনেক
ছোট তুমি।আমার ছেলের বয়সি হবে।
আর আসলে আমি তুমি করে কথা
বলতেই বেশি অভ্যস্ত।আর
সাইক্রিয়াটিস্টরা তুমি করে কথা না
বললে পেশেন্টরা খোলাখুলি করে
কিছু বলতেও পারেনা।এটা আমার
লজিক।
ইমন ওঝা ডাক্তারবাবুর দিকে চাইল।
ডাক্তারবাবুর বয়সটা একটু বেশি তা
আন্দাজ করা যায়।গোঁফ পেকে সাদা
হয়ে গেছে।চুল অবশ্য হালকা পেকে
গেছে।কানের দুপাশের জুলফিও
সাদা হয়ে গেছে
চশমা পরার কারণে বেশ বিজ্ঞ
বিজ্ঞই লাগছে তাকে।চেহারারর
সাথে চশমাটাও ম্যাচিং করেছে
বেশ।মুখটা গোলগাল।
স্যার আমি কী বলব বুঝে উঠতে
পারছিনা।
এবার ডাক্তার সুবিমল বাবু একটু
চিন্তিত হয়ে বললেন,তুমি নার্ভাস হচ্ছ
কেন?নো টেন্সড।চা খাবে?কিংবা
কফি?
নো স্যার থ্যাংকস।
ডাক্তার সুবিমলবাবু ইমনের কথার
কর্ণপাত না করে বেল চাপলেন।একজন
রোগামতন ভদ্রলোক ঘরে ঢুকল।
দু’কাপ কফি আনোতো সুরেশ।
সুরেশ যন্ত্রের মত ঘর সবটা শুনে ঘর
থেকে বের হয়ে গেল।
হ্যা বল,কি তোমার প্রবলেম?শুনি
আগে।
ইমন বলল,স্যার আমি যার ছবি আঁকি
তার স্বপ্ন রাতে দেখি।আর যা স্বপ্নে
দেখি তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবে
মিলে যায়।এটা কি প্রবলেম কিনা
বুঝতে পারছিনা।
মানে তুমি বলতে চাইছ যা স্বপ্নে
দেখ তা সত্যি হয়ে যায়
হ্যাঁ স্যার।
ডাক্তারবাবু ভ্রু কুঁচকে রয়েছেন।এ কী
রোগীরে বাবা।তিনি বেশ কিছুক্ষণ
ভাবলেন তারপর
বললেন,স্ট্রেঞ্জ,ভেরি স্ট্রেঞ্জ,তা
এরকম কতদিন ধরে চলছে।
এই ধরুন ছ সাত মাস।
স্বপ্নগুলো খারাপ নাকি ভালো দেখ
তুমি?
ইমন কফির কাপে হালকা একটা চুমুক
দিয়ে বলল,দু ধরনেরই স্বপ্ন দেখি।ভাল
দেখলে খুব ভাল লাগে।কিন্তু দুঃস্বপ্ন
দেখলে মনটা খারাপ হয়ে যায়।
প্যারানরমাল কেস।এরকম পেশেন্ট এই
ফার্স্ট পেলাম।অবশ্য তুমি পেশেন্টও
না।তবে খুব ভাবনার বিষয়।
স্যার আমার আর ছবি আঁকতে ভাল
লাগেনা।অনেক মানুষই ছবি নিয়ে
আসে একে দিতে বলে।
তুমি না বলে দিতে পারো
না বলেই দিই।বাট অনেকে খুব
চাপাচাপি করে তাই আঁকতে হয়।
তুমি কিভাবে বোঝো যে স্বপ্নটা
সত্যি হয়েছে?
যারা ছবি আঁকতে বলে ওদের কন্টাক্ট
এড্রেস টা রেখে দিই।তারপর কল করে
মিলিয়ে নিই ওরকম কিছু হয়েছে
কিনা?তারপর বুঝতে পারি
ব্যাপারটা সত্যি কিনা।
ডাক্তারবাবু মাথা চুলকিয়ে
বললেন,রাতে ভাল ঘুম হয়?
হুম।
ওয়েল,আমি তোমার এই স্বপ্নের একটা
এক্সাম নিতে চাই।তারপর ভাববো
সলুশনটা কী?
ডাক্তার সুবিমল টেবিলের ড্রয়ার
খুলে একটা মেয়ের 4R সাইজ ছবি বের
করলেন,এই মেয়েটির ছবি আঁকবে।
তারপর কী স্বপ্ন দেখলে সেটা
আমাকে বলবে
ওকে স্যার।এটা কি আপনার মেয়ে?
হ্যাঁ।আমার মেয়ে।নাম মিথিলা।
ওকে স্যার।তবে স্বপ্নটা আমি যেদিন
আঁকি সেদিনই দেখিনা।দু চার দিন
দেরিও হতে পারে।
ডাক্তারবাবু একটু হাসলেন,আচ্ছা তুমি
যেদিন দেখবে তারপর দিনই চলে
আসবে।
ইমন ডাক্তারের ভিজিট দিয়ে উঠে
দাঁড়াল।ডাক্তারবাবু ছেলেটিকে
বেশ মনোযোগে দেখলেন,মাথায়
একগোছা চুল,চুলগুলো এলোমেলো
তবে বেশ ভালোই লাগছে
ছেলেটিকে।রোগা লিকলিকে
শরীরের গঠন।উচ্চতা ছ’ ফুটের মতই হবে।
মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।
ডাক্তার সুবিমল চ্যাটার্জী ইমন
নামের ছেলেটিকে প্রায় ভুলেই
গেলেন।মাত্র চারদিনের মাথায়
তাকে একপ্রকার ভুলেই গেলেন।অনেক
রোগী দেখতে দেখতে তিনি
ক্লান্ত।তবে ইদানীং দ্বিতীয়
সাক্ষাতেই তিনি তার রোগীদের
মনে করতে পারেন না।প্রায় ভুলেই
থাকেন।এই ভুল রোগটা তার সম্প্রতি
হয়েছে।একদিন সন্ধ্যেবেলা
ডাক্তারবাবু তার চেম্বারের পেছনে
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট
খাচ্ছেন।ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ছে।
তিনি সিগারেট খাওয়া শেষ করে
চেম্বারে ঢুকলেন।তাকে
দেখামাত্রই ইমন দাঁড়িয়ে গেল।
বসুন বসুন।কী প্রবলেম বলুন?
স্যার আমি ইমন
কোন্ ইমন?
ইমন তার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।
ডাক্তারবাবু মুখে হাত দিয়ে
বললেন,ও।আচ্ছা চিত্রশিল্পী।
হুম স্যার।
তা কি খবর তোমার বল।স্বপ্নটপ্ন কি
দেখলে?স্বপ্ন কিন্তু একটা মজার
জিনিস।কি বল!পৃথিবীর প্রায় সব
প্রাণিই কিন্তু স্বপ্ন দেখে।আমিও স্বপ্ন
দেখি কিন্তু তা একেবারে
এলোমেলো।সকালে কিছুই মনে
করতে পারিনা।হা হা হা….
তিনি হড়বড় করে কথা বলেই গেলেন।
বেল চাপলেন।
দু কাপ কফি।
সেই সুরেশ নামের লোকটি রোবটের
মত দু কাপ কফি এনে চলে গেলেন।
যাওয়ার সময় দরজায় একটা ধাক্কা
খেলেন।ডাক্তার আর ইমন দুজনেই
কেঁপে উঠল।
স্যার আপনার মনটা কী আজগে অনেক
ভাল?
হুম বেশ ভালো।বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।
বৃষ্টি আমার খুব ফেভারিট।আচ্ছা তুমি
বৃষ্টিতে ভেজোনি?ছাতা এনেছো
কি?ছাতা তো দেখছিনা।
স্যার বৃষ্টি আসার আগেই আমি আপনার
এখানে এসেছি।
ও আচ্ছা।
বসে বসে পত্রিকা পড়ছিলাম।
বেশ ভাল।এবারে তোমার প্রসঙ্গে
আসি,তা কী স্বপ্ন দেখলে তুমি?
স্যার আজ উঠি।
কেন।বোসো।খুব বিজি নাকি?
না স্যার।তাহলে বোসো।তোমার
হাতে কী?
ইমন বসতে বসতে বলল,স্যার যে ছবিটা
দিয়েছেন।সেই ছবিটা এঁকেছি।
দেখি।
ইমন ডাক্তারবাবুর দিকে বিশাল
ক্যানভাসের আর্ট পেপারটা এগিয়ে
দিল।
বাহ্ চমৎকার।এতো সুন্দর আঁকো তুমি?
একেবারে জীবন্ত।হোয়াট এ নাইচ
ড্রয়িং!
ডাক্তারবাবু আর্টপেপারটা
টেবিলের উপর রাখলেন।
এবার কী স্বপ্ন দেখলে বল?
স্যার আপনার মেয়ের কি বিয়ে
ঠিকঠাক?
ডাক্তারবাবু হ্যাঁ-সূচক মাথা
নাড়লেন।তারপর নিজেই
বললেন,বিয়ে ঠিকঠাক।জামাই
আমেরিকা থাকে।আমেরিকান
ডাক্তার।টেক্সাস থাকে।বিশাল
ধনী আর দেখতেও সুপুরুষ।
স্যার এ বিয়েটা হচ্ছেনা,ইমন মাথা
নিচু করে আছে।
মানে?
মানে বিয়েটা হচ্ছেনা স্যার।
তুমি কি এই স্বপ্নই দেখেছ?
হুম।
কি বলছ ইডিয়েটের মত।আশীর্বাদ হয়ে
গেছে।এংগেজমেন্ট সবকিছু
পাকাপাকি।ডাক্তার সুবিমলবাবু
বেশ রেগে গেলেন।তিনি সামান্য
কাঁপছেন।ভ্রু কুঁচকে আছেন বেশ
খানিকটা।
ইমন একটা দীর্ঘনিশ্বাস গোপন করল।
স্যার উঠি।আপনার ভিজিট।ইমন
টাকাটা টেবিলের উপর রাখল।
ডাক্তার সুবিমল চ্যাটার্জী ভালমন্দ
আর কিছুই বললেন না।
ইমন রুম থেকে বের হতে না হতেই
তিনি বিড়বিড় করে
বললেন,ইডিয়েটের বাচ্চা!
হঠাৎ মোবাইলে ফোন আসল।তিনি
ফোনটা দেখলেন।তার স্ত্রী ফোন
করেছেন।
হ্যাঁ বল।
ওই ছেলেটির সাথে মিথিলার
বিয়েটা হচ্ছেনা।
ডাক্তার সুবিমল চ্যাটার্জী কোনো
কথা বললেন না।সবকিছু মিলে
যাচ্ছে।তিনি শুধু শুনে যাচ্ছেন….
ওই ছেলেটির এর আগে বিয়ে
হয়েছিল।ডিভোর্স হয়ে গেছে।একটা
ছোট মেয়েও আছে।তুমি বাড়ি আস
সবটা ডিটেল বলছি।
ডাক্তারবাবু ফোনটা কেটে দিলেন।
হাতে সিগারেট নিয়ে
ব্যালকনিতে দাঁড়ালেন।সিগারেটে
লম্বা টান দিয়ে চোখ মেলে দিলেন
বাইরে।ল্যমপোস্টের আলোয় রাতের
শহরটাকে কী দারুণই না লাগছে!
(বিঃদ্রঃএই গল্পটি দুটো ব্লগে ছাপা হয়েছে।সেখানে যায়গাটার নাম দেয়া হয়েছিল টরেন্টো।টরেন্টো কানাডায় অবস্থিত।যায়গাটার নাম হবে টেক্সাস।টাইপিং মিসটেক হয়েছে।এখানে যায়গাটা প্রুফ করে দিয়েছি।লেখকবন্ধু ও পাঠকবন্ধুদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী)
আচ্ছা ভাল।তারপর বলুন আপনার সমস্যা
কী?
ছেলেটি একটু উদাসীন হয়ে বসে রইল।
ডাক্তার সুবিমল চ্যাটার্জী
ছেলেটির দিকে তাকিয়ে
বললেন,নাম কী আপনার?
ইমন। ইমন ওঝা।
তোমার সমস্যাটা এবার বল।শুনি।তুমি
করেই বলি তোমায়।বয়সেও অনেক
ছোট তুমি।আমার ছেলের বয়সি হবে।
আর আসলে আমি তুমি করে কথা
বলতেই বেশি অভ্যস্ত।আর
সাইক্রিয়াটিস্টরা তুমি করে কথা না
বললে পেশেন্টরা খোলাখুলি করে
কিছু বলতেও পারেনা।এটা আমার
লজিক।
ইমন ওঝা ডাক্তারবাবুর দিকে চাইল।
ডাক্তারবাবুর বয়সটা একটু বেশি তা
আন্দাজ করা যায়।গোঁফ পেকে সাদা
হয়ে গেছে।চুল অবশ্য হালকা পেকে
গেছে।কানের দুপাশের জুলফিও
সাদা হয়ে গেছে
চশমা পরার কারণে বেশ বিজ্ঞ
বিজ্ঞই লাগছে তাকে।চেহারারর
সাথে চশমাটাও ম্যাচিং করেছে
বেশ।মুখটা গোলগাল।
স্যার আমি কী বলব বুঝে উঠতে
পারছিনা।
এবার ডাক্তার সুবিমল বাবু একটু
চিন্তিত হয়ে বললেন,তুমি নার্ভাস হচ্ছ
কেন?নো টেন্সড।চা খাবে?কিংবা
কফি?
নো স্যার থ্যাংকস।
ডাক্তার সুবিমলবাবু ইমনের কথার
কর্ণপাত না করে বেল চাপলেন।একজন
রোগামতন ভদ্রলোক ঘরে ঢুকল।
দু’কাপ কফি আনোতো সুরেশ।
সুরেশ যন্ত্রের মত ঘর সবটা শুনে ঘর
থেকে বের হয়ে গেল।
হ্যা বল,কি তোমার প্রবলেম?শুনি
আগে।
ইমন বলল,স্যার আমি যার ছবি আঁকি
তার স্বপ্ন রাতে দেখি।আর যা স্বপ্নে
দেখি তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবে
মিলে যায়।এটা কি প্রবলেম কিনা
বুঝতে পারছিনা।
মানে তুমি বলতে চাইছ যা স্বপ্নে
দেখ তা সত্যি হয়ে যায়
হ্যাঁ স্যার।
ডাক্তারবাবু ভ্রু কুঁচকে রয়েছেন।এ কী
রোগীরে বাবা।তিনি বেশ কিছুক্ষণ
ভাবলেন তারপর
বললেন,স্ট্রেঞ্জ,ভেরি স্ট্রেঞ্জ,তা
এরকম কতদিন ধরে চলছে।
এই ধরুন ছ সাত মাস।
স্বপ্নগুলো খারাপ নাকি ভালো দেখ
তুমি?
ইমন কফির কাপে হালকা একটা চুমুক
দিয়ে বলল,দু ধরনেরই স্বপ্ন দেখি।ভাল
দেখলে খুব ভাল লাগে।কিন্তু দুঃস্বপ্ন
দেখলে মনটা খারাপ হয়ে যায়।
প্যারানরমাল কেস।এরকম পেশেন্ট এই
ফার্স্ট পেলাম।অবশ্য তুমি পেশেন্টও
না।তবে খুব ভাবনার বিষয়।
স্যার আমার আর ছবি আঁকতে ভাল
লাগেনা।অনেক মানুষই ছবি নিয়ে
আসে একে দিতে বলে।
তুমি না বলে দিতে পারো
না বলেই দিই।বাট অনেকে খুব
চাপাচাপি করে তাই আঁকতে হয়।
তুমি কিভাবে বোঝো যে স্বপ্নটা
সত্যি হয়েছে?
যারা ছবি আঁকতে বলে ওদের কন্টাক্ট
এড্রেস টা রেখে দিই।তারপর কল করে
মিলিয়ে নিই ওরকম কিছু হয়েছে
কিনা?তারপর বুঝতে পারি
ব্যাপারটা সত্যি কিনা।
ডাক্তারবাবু মাথা চুলকিয়ে
বললেন,রাতে ভাল ঘুম হয়?
হুম।
ওয়েল,আমি তোমার এই স্বপ্নের একটা
এক্সাম নিতে চাই।তারপর ভাববো
সলুশনটা কী?
ডাক্তার সুবিমল টেবিলের ড্রয়ার
খুলে একটা মেয়ের 4R সাইজ ছবি বের
করলেন,এই মেয়েটির ছবি আঁকবে।
তারপর কী স্বপ্ন দেখলে সেটা
আমাকে বলবে
ওকে স্যার।এটা কি আপনার মেয়ে?
হ্যাঁ।আমার মেয়ে।নাম মিথিলা।
ওকে স্যার।তবে স্বপ্নটা আমি যেদিন
আঁকি সেদিনই দেখিনা।দু চার দিন
দেরিও হতে পারে।
ডাক্তারবাবু একটু হাসলেন,আচ্ছা তুমি
যেদিন দেখবে তারপর দিনই চলে
আসবে।
ইমন ডাক্তারের ভিজিট দিয়ে উঠে
দাঁড়াল।ডাক্তারবাবু ছেলেটিকে
বেশ মনোযোগে দেখলেন,মাথায়
একগোছা চুল,চুলগুলো এলোমেলো
তবে বেশ ভালোই লাগছে
ছেলেটিকে।রোগা লিকলিকে
শরীরের গঠন।উচ্চতা ছ’ ফুটের মতই হবে।
মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।
ডাক্তার সুবিমল চ্যাটার্জী ইমন
নামের ছেলেটিকে প্রায় ভুলেই
গেলেন।মাত্র চারদিনের মাথায়
তাকে একপ্রকার ভুলেই গেলেন।অনেক
রোগী দেখতে দেখতে তিনি
ক্লান্ত।তবে ইদানীং দ্বিতীয়
সাক্ষাতেই তিনি তার রোগীদের
মনে করতে পারেন না।প্রায় ভুলেই
থাকেন।এই ভুল রোগটা তার সম্প্রতি
হয়েছে।একদিন সন্ধ্যেবেলা
ডাক্তারবাবু তার চেম্বারের পেছনে
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট
খাচ্ছেন।ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ছে।
তিনি সিগারেট খাওয়া শেষ করে
চেম্বারে ঢুকলেন।তাকে
দেখামাত্রই ইমন দাঁড়িয়ে গেল।
বসুন বসুন।কী প্রবলেম বলুন?
স্যার আমি ইমন
কোন্ ইমন?
ইমন তার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।
ডাক্তারবাবু মুখে হাত দিয়ে
বললেন,ও।আচ্ছা চিত্রশিল্পী।
হুম স্যার।
তা কি খবর তোমার বল।স্বপ্নটপ্ন কি
দেখলে?স্বপ্ন কিন্তু একটা মজার
জিনিস।কি বল!পৃথিবীর প্রায় সব
প্রাণিই কিন্তু স্বপ্ন দেখে।আমিও স্বপ্ন
দেখি কিন্তু তা একেবারে
এলোমেলো।সকালে কিছুই মনে
করতে পারিনা।হা হা হা….
তিনি হড়বড় করে কথা বলেই গেলেন।
বেল চাপলেন।
দু কাপ কফি।
সেই সুরেশ নামের লোকটি রোবটের
মত দু কাপ কফি এনে চলে গেলেন।
যাওয়ার সময় দরজায় একটা ধাক্কা
খেলেন।ডাক্তার আর ইমন দুজনেই
কেঁপে উঠল।
স্যার আপনার মনটা কী আজগে অনেক
ভাল?
হুম বেশ ভালো।বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।
বৃষ্টি আমার খুব ফেভারিট।আচ্ছা তুমি
বৃষ্টিতে ভেজোনি?ছাতা এনেছো
কি?ছাতা তো দেখছিনা।
স্যার বৃষ্টি আসার আগেই আমি আপনার
এখানে এসেছি।
ও আচ্ছা।
বসে বসে পত্রিকা পড়ছিলাম।
বেশ ভাল।এবারে তোমার প্রসঙ্গে
আসি,তা কী স্বপ্ন দেখলে তুমি?
স্যার আজ উঠি।
কেন।বোসো।খুব বিজি নাকি?
না স্যার।তাহলে বোসো।তোমার
হাতে কী?
ইমন বসতে বসতে বলল,স্যার যে ছবিটা
দিয়েছেন।সেই ছবিটা এঁকেছি।
দেখি।
ইমন ডাক্তারবাবুর দিকে বিশাল
ক্যানভাসের আর্ট পেপারটা এগিয়ে
দিল।
বাহ্ চমৎকার।এতো সুন্দর আঁকো তুমি?
একেবারে জীবন্ত।হোয়াট এ নাইচ
ড্রয়িং!
ডাক্তারবাবু আর্টপেপারটা
টেবিলের উপর রাখলেন।
এবার কী স্বপ্ন দেখলে বল?
স্যার আপনার মেয়ের কি বিয়ে
ঠিকঠাক?
ডাক্তারবাবু হ্যাঁ-সূচক মাথা
নাড়লেন।তারপর নিজেই
বললেন,বিয়ে ঠিকঠাক।জামাই
আমেরিকা থাকে।আমেরিকান
ডাক্তার।টেক্সাস থাকে।বিশাল
ধনী আর দেখতেও সুপুরুষ।
স্যার এ বিয়েটা হচ্ছেনা,ইমন মাথা
নিচু করে আছে।
মানে?
মানে বিয়েটা হচ্ছেনা স্যার।
তুমি কি এই স্বপ্নই দেখেছ?
হুম।
কি বলছ ইডিয়েটের মত।আশীর্বাদ হয়ে
গেছে।এংগেজমেন্ট সবকিছু
পাকাপাকি।ডাক্তার সুবিমলবাবু
বেশ রেগে গেলেন।তিনি সামান্য
কাঁপছেন।ভ্রু কুঁচকে আছেন বেশ
খানিকটা।
ইমন একটা দীর্ঘনিশ্বাস গোপন করল।
স্যার উঠি।আপনার ভিজিট।ইমন
টাকাটা টেবিলের উপর রাখল।
ডাক্তার সুবিমল চ্যাটার্জী ভালমন্দ
আর কিছুই বললেন না।
ইমন রুম থেকে বের হতে না হতেই
তিনি বিড়বিড় করে
বললেন,ইডিয়েটের বাচ্চা!
হঠাৎ মোবাইলে ফোন আসল।তিনি
ফোনটা দেখলেন।তার স্ত্রী ফোন
করেছেন।
হ্যাঁ বল।
ওই ছেলেটির সাথে মিথিলার
বিয়েটা হচ্ছেনা।
ডাক্তার সুবিমল চ্যাটার্জী কোনো
কথা বললেন না।সবকিছু মিলে
যাচ্ছে।তিনি শুধু শুনে যাচ্ছেন….
ওই ছেলেটির এর আগে বিয়ে
হয়েছিল।ডিভোর্স হয়ে গেছে।একটা
ছোট মেয়েও আছে।তুমি বাড়ি আস
সবটা ডিটেল বলছি।
ডাক্তারবাবু ফোনটা কেটে দিলেন।
হাতে সিগারেট নিয়ে
ব্যালকনিতে দাঁড়ালেন।সিগারেটে
লম্বা টান দিয়ে চোখ মেলে দিলেন
বাইরে।ল্যমপোস্টের আলোয় রাতের
শহরটাকে কী দারুণই না লাগছে!
(বিঃদ্রঃএই গল্পটি দুটো ব্লগে ছাপা হয়েছে।সেখানে যায়গাটার নাম দেয়া হয়েছিল টরেন্টো।টরেন্টো কানাডায় অবস্থিত।যায়গাটার নাম হবে টেক্সাস।টাইপিং মিসটেক হয়েছে।এখানে যায়গাটা প্রুফ করে দিয়েছি।লেখকবন্ধু ও পাঠকবন্ধুদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অঙ্কুর মজুমদার ১৬/০৬/২০১৬khub sundor
-
পরশ ০৯/০৬/২০১৬অসাধারন
-
সালাম আলী আহসান ০৯/০৬/২০১৬হিঃ হিঃ