এই শীতে খেজুর রস
এই শীতে খেজুর রস
>> শীতের আগমনঃ হালকা কুয়াশা আর হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীত আসছে। ঋতু পরিক্রমায় প্রতি বছরই আসে শীতকাল। তবে শীতের আমেজই ভিন্ন। গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় এই বাংলাদেশের মানুষ প্রতীক্ষায় থাকে। প্রতি সময়টির জন্যে। শীতের সময়টা তুলনামূলকভাবে অন্য সময়ের চেয়ে স্বাস্থ্যকর। ছয় ঋতুর এই দেশে বিভিন্ন সময়ে নানান অসুখ-বিসুখের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। কিন্তু শীতের সময় অসুখ বিসুখ তেমন হয় না। একমাত্র ঠান্ডাজনিত অসুস্থ ছাড়া। শীতের রূপ বড় সুন্দর শহরে একরূপ গ্রামে ভিন্নরূপ। এরূপ আগে ছিল আরো অপরূপ। কালের চাকায় পিষ্ট হয়ে এই সব রূপ যেন হারিয়ে যাচ্ছে।
>> শীতের মিষ্টি রোদঃ প্রভাতে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গ্রামে গঞ্জের ছেলেমেয়েরা রোদের তাপে স্নান করে। শাড়ি বা লুঙ্গি দিয়ে বাবা মারা তাদের শিশু-সন্তানদের শরীর পেচিয়ে দেয়। পেঙ্গুইন পাখির মত সারিবদ্ধভাবে ছেলে মেয়েরা রোদ পোহায়।আর সকলের হাতে হাতে খোরা/ ডালা/প্লেট ভর্তি সর্ষের তেলে মাখা মুড়ি।বেশি শীত পড়লে খড়েড় আগুণ জ্বালিয়ে আগুনের চারপাশে গোল হয়ে বসে আগুনের তাপে শীত নিবারণ।সেই সব দৃশ্য আজকাল আর দেখা যায় না। এখন গায়ে উঠেছে পুরানো সোয়েটার। রূপই যেন বদলে গেছে।
>> খেজুর গাছঃ (সংস্কৃত: खर्जूरम्); (ইংরেজি: Date Palm) এক ধরনের তালজাতীয় শাখাবিহীন বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা (Phoenix dactylifera)।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে সুমিষ্ট ফল হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় অনেক বছর পূর্ব থেকেই এর চাষাবাদ হয়ে আসছে। এ গাছটি প্রধানতঃ মরু এলাকায় ভাল জন্মে। খেজুর গাছের ফলকে খেজুররূপে আখ্যায়িত করা হয়। মাঝারী আকারের গাছ হিসেবে খেজুর গাছের উচ্চতা গড়পড়তা ১৫ মিটার থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর লম্বা পাতা রয়েছে যা পাখির পালকের আকৃতিবিশিষ্ট। দৈর্ঘ্যে পাতাগুলো ৩ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত হয়। পাতায় দৃশ্যমান পত্রদণ্ড রয়েছে। এক বা একাধিক বৃক্ষ কাণ্ড রয়েছে যা একটিমাত্র শাখা থেকে এসেছে।খেজুর গাছের দ্বিপদ নামের প্রজাতিক অংশ dactylifera এর অর্থ "খেজুর বহনকারী"। নামটি প্রথম অংশ প্রাচীন গ্রীক ভাষা dáktulos থেকে এসেছে যার অর্থ "খেজুর" (এর আরেক অর্থ "আঙুল")। আর পরবর্তী অংশ ferō এসেছে ল্যাটিন ভাষা থেকে যার অর্থ "আমি বহন করি"।
কচি খেজুর পাতা সব্জী হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। এছাড়াও, খেজুরের ফুলও খাবার উপযোগী। সনাতনী ধাঁচে স্ত্রী ফুল ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনে বিক্রয় করা হয়। ফুলের কুঁড়ি দিয়ে সালাদ কিংবা শুকনো মাছ বা শুঁটকী দিয়ে চাটনী তৈরী করে রুটির সাহায্যে খাওয়া হয়।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসঃ
জগৎ/রাজ্য:------------------Plantae
বিভাগ:----------------------Magnoliophyta
শ্রেণী:------------------------Liliopsida
বর্গ:-------------------------Arecales
পরিবার:--------------------Arecaceae
গণ:-------------------------Phoenix
প্রজাতি-------------------P. dactylifera
দ্বিপদী নামঃ------------Phoenix dactylifera
>> খেজুর রসঃ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর আফ্রিকা, ঘানা, আইভরীকোস্টে খেজুর গাছের অংশ কেটে সুমিষ্ট রস বের করা হয়, যা খেজুরের রস নামে পরিচিত। রসকে পরবর্তীতে গুড়ে অথবা নেশাজাতীয় পানীয়ে রূপান্তরিত করা হয়। উত্তর আফ্রিকায় এ প্রক্রিয়াকে লাগবি বলা হয়। রস আহরণের জন্যে অনেক সময়ের প্রয়োজন যা তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। গাছ কেটে রস আহরণের জন্যে দক্ষতার প্রয়োজন নতুবা খেজুর গাছ মারা যাবে।
>>>বাংলাদেশে শীত কালের ঐতিহ্য খেজুর রসঃ শীতের ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে খেজুরের রস, নানা রকমের পিঠা, পাটালী গুড়ের দুধ, পিঠার কথাতো ভুলতেই বসেছে মানুষ। অর্থনৈতিক কারণে শীতের পিঠা প্রায় বিদায় লগ্নে এসে ঠেকেছে। টিমটিম করে টিকে আছে সামান্য কিছু অধিকাংশ মানুষের সামর্থ্যে নেই। এক সময় যাদের সামর্থ্য ছিল তারা আজ স্মৃতি রোমন্থন করেই সেই স্বাদ গ্রহণ করেছে। শীতের মৌসুমকে পিঠার মওসুমও বলা হতো। নানা বাড়ি বেড়ানোর ধুম পড়ে যেতো শীতের সময়। এখন আর সেই উচ্ছ্বাস দেখা যায় না। এছাড়া একটা সময় ছিল যখন কার্তিক অগ্রহায়ণ মাস এলে কাকডাকা ভোরে কিংবা ভর দুপুরে গাছিদের কর্মতৎপরতা চোখে পড়ত।
>>>গাছ তৈরিঃ শীতের আগমনীতে ব্যস্ত হয়ে উঠে গাছিরা। সারা বছর অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীতকালে খেজুর গাছের কদর বেড়ে যায়। কারণ এ গাছ দিচ্ছে মিষ্টি রস। গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহে হাঁসুরা, দড়ি, বাঁশের জিহ্বা( রস পড়ার এক প্রকার নল) ও মাটির কলসি/হাঁড়ি কাঁধে ঝুলিয়ে বের হত। একজন দক্ষ গাছি অতি যত্ন ও সতর্কতার সঙ্গে গাছ কাটে। এক্ষেত্রে যার নৈপুণ্য অধিক সেই বেশি রস সংগ্রহ করতে পারে। অদক্ষ গাছির হাঁসুয়ার আঘাতে অনেক সময় খেজুর গাছ মারা যায়। গাছিরা শুরুতে গাছের মাথার পাতা/ডাল কেটে পরিষ্কার করে নেয়। এর পর রস নামানোর স্থানটি পরিস্কার করে নেয়।এর পর সেখান
হাঁসুরা (ধারালো অস্ত্র) দিয়ে কেটে গাছের উপরের ছাল পরিমাণ মত তুলে ঠিক লাভ চিহ্নের মত করা হয়। এর পর লাভের নিচের সরু অংশে বাঁশের জিহ্বা/নলি( রস পড়ার এক প্রকার নল) পিটিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর দড়ি দিয়ে মাটির ঠিলা/ হাড়ি/কলসি বেধে দেওয়া হয়।এর পর সমস্ত রাতে রস জিহ্বা/নলি দিয়ে সারারাত টুপ টুপ করে রস পড়ত মাটির হাড়িতে। দুপুরের পর থেকে কলসি বা হাঁড়ি লাগানো শুরু হত। ভোরে এসে রসভর্তি হাঁড়ি নিয়ে যেত গাঁছিরা।একটি খেজুর গাছ থেকে প্রতিদিন রস পাওয়া যায় না। তিনদিন রস নেয়ার পর তিনদিন অবসর দিতে হয়। এর ফলে পরের তিনদিন ভালও বেশি রস পাওয়া যায়। কয়েক বছর আগেও গাছিরা প্রতিটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ এবং পাটালী বিক্রি করে বছরে প্রচুর টাকা আয় করত।
>> পেশাঃ গ্রামাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ এ পেশায় নিয়োজিত ছিল। খেজুরের রস থেকে যে অর্থ উপার্জন হত তা গ্রামীণ অর্থনীতিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। পুরো শীতকাল ছিল খেজুরের গাছ থেকে অর্থ উপার্জনের সুন্দর সময়।তারা দিনে ২৫ থেকে ৩০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেত। বর্তমানে যে পরিমাণ খেজুর গাছ গ্রামাঞ্চলে টিকে আছে তা থেকেও অর্থ উপার্জনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা এসব গাছ থেকে সংগৃহীত রস বা পাটালী বিক্রি করে ৪/৬ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। খেজুর গাছের চাষের জন্য তেমন কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। এর কাঠ দিয়ে ঘরের বর্গা তৈরি করা যায়। খেজুর পাতার পাটি ও হাত পাখা এখন ও গ্রাম বাংলায় বহুল ব্যবহৃত হয়। পাকা খেজুর একটি পুষ্টিকর ফল। এর মাধ্যমে ও আয় করা সম্ভব। পুকুর পাড়ে বা পতিত জমিতে পরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ রোপণ করা যায়। শুধু খেজুর গাছ লাগানো চলবে না। সুন্দরভাবে যত্ন ও নিতে হবে।
>>রসঃ খেজুর রসে রয়েছে প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণ। সারা শীতকাল ছিল খেজুরের রসের প্রাচুর্য আর এ রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া। সারারাত তা গাছের সঙ্গে আটকানো থাকে। গাছ থেকে ফোঁটা ফোটা রস পড়ে এক সময় হাঁড়ি ভরে যায়। অনেক সময় রস উপচে পড়ে। সূর্য উঠতে না উঠতেই গাছিরা রস জমানো শুরু করে। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। একটি টিনের পাত্রে রস ঢেলে বৃহদাকার চুলায় জাল দিতে হয়। চুলোর ওপর এক সময় রস আঠালো হয়ে ওঠে। তখন নামিয়ে কোন পাত্রের ওপর পরিস্কার কাপড় বিছিয়ে তাতে ঢালতে হয়। শীতল হলে পরে একে পাটালি বলে।
>> রস দিয়ে বানানো খাদ্যঃ শীতে খেজুরের রসে গ্রামের বধূরা মজাদার রসালো পিঠা, পায়েস বানাত। তৈরি হত প্রসিদ্ধ সুঘ্রাণযুক্ত পাটালি গুড়া।এই নতুন পাটালি দিয়েও তৈরি হত মজাদার সব শীতকালীন খাবার।খেজুর রস জ্বালিয়ে/ জ্বালদিয়ে ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। খেজুরের গুড় থেকে এক সময় বাদামি চিনিও তৈরি করা হতো। যার সাধ ও ঘ্রাণ সর্ম্পূণ ভিন্ন। খেজুর গাছের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে। পুরো মৌসুমজুড়ে চলবে রস, গুড়, পিঠা-পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। নতুন গুড়ের মিষ্টি গন্ধে ধীরে ধীরে আমোদিত হয়ে উঠবে গ্রাম-বাংলা।
খেজুর রসের পিঠে নিয়ে একটি গ্রামীণ ছড়া-----
খেজুর রসে বানায় পিঠা
খেতে লাগে বেজায় মিঠা।
>> খেজুর রসের তৈরি জনপ্রিয় কিছু খাবারঃ
১।খেজুর রসে ভাপাপিঠাঃ
উপকরণ: ঘন খেজুরের রস আধা কাপ, পাতলা খেজুরের রস ২ কাপ, মিহি কুরানো নারকেল ১ কাপ, সেদ্ধ চালের গুঁড়া ২ কাপ, আতপ চালের গুঁড়া আধা কাপ, লবণ এক চিমটি (একটি ভাপাপিঠার উপকরণ)।
প্রণালি: সেদ্ধ ও আতপ চালের গুঁড়া, লবণ ও ঘন রস আস্তে আস্তে মাখাতে হবে, যাতে পুরো মিশ্রণ ঝরঝরে থাকে। তারপর ভাপাপিঠার মতোই এ পিঠাকে তৈরি করতে হবে। চাইলে পিঠাতে নারকেল দিতে পারেন। সব পিঠা বানানো হলে ঠাণ্ডা করে পাতলা খেজুর রসে ভিজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার এ পিঠা।
২।লাল পুয়াপিঠাঃ
উপকরণ: আতপ চালের গুঁড়া ৩ কাপ, মিহি করে বাটা নারকেল আধা কাপ, ময়দা ১ টেবিল-চামচ, বেকিং পাউডার আধা চা-চামচ, খেজুরের গুঁড় বা রস মিষ্টি অনুযায়ী, পানি পরিমাণমতো, ডিম ২টি, এক চিমটি লবণ এবং তেল ১ কাপ।
প্রণালি: তেল ছাড়া সবকিছু মিশিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এবার তেল গরম হলে গোল চামচে গোলা নিয়ে একটা একটা করে ভেজে তুলুন।
৩।মালপোয়াঃ
উপকরণ : খেজুর রস ১ কেজি, ময়দা ২৫০ গ্রাম, ক্ষীর ১ কাপ, খাবার সোডা ১ চিমটি, মৌরি আধা চামচ, লবণ স্বাদমতো, ঘি ২৫০ গ্রাম।
প্রস্তুত প্রণালি : রস জাল দিয়ে ঘন করে নিন। ময়দা, ক্ষীর, মৌরি, খাবার সোডা, লবণ ও পানি দিয়ে ঘন গোলা তৈরি করুন। চুলার হাড়িতে দেওয়া ঘি গরম হলে পিঠা ভেজে গরম গরম খেজুর রসে চুবিয়ে নিন।
৪।সিদ্ধ পুলিঃ
উপকরণ : চালের গুঁড়া ৪ কাপ, নারকেল ১টা, খেজুর রস ২ লিটার।
যেভাবে করবেন : ভেজে চালের গুঁড়ায় অল্প লবণ মেখে গরম পানিতে ময়দা মথ মেখে নিন। এবার নারকেল কুড়ে ঘন সিরা দিয়ে পুর তৈরি করে নিন। লেচি কেটে নারকেলের পুর ভরে পিঠা তৈরি করুন। এবার পাতিলে পানি গরম করে পিঠা ছেড়ে দিন। সিদ্ধ পিঠা ঘন সিরায় দিয়ে পরিবেশন করুন।
৫।খেজুর রসের চিতইঃ
উপকরণ : চাল ১ কেজি, খেজুর রস ২ লিটার, লবণ ১ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি : চাল লবণ পানি দিয়ে গোলা তৈরি করে চিতই পিঠা বানাতে। খেজুর রস ১ ঘণ্টা ধরে জাল করে ঘন রস তৈরি করে পিঠার সঙ্গে মিলিয়ে অথবা আলাদা পরিবেশন করুন।
৬।বড়াঃ
উপকরণ : খেজুরের রস ২ কেজি, চালের গুঁড়া ৩০০ গ্রাম, তেল ৩০০ গ্রাম।
প্রস্তুত প্রণালি : খেজুর রস জ্বাল দিয়ে ঘন করুন। এবার ঘন রস চালের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। কড়াইতে তেল দিন এবং তেল গরম হলে ওই মাখা গোল গোল পিঠা তেলে ছেড়ে দিন। লাল করে ভেজে নিন।
৭।পায়েসঃ
উপকরণ : আতপ চাল ১ কেজি, খেজুর রস ৫ কেজি, এলাচ-৬/৭টি, কিশমিশ আধাকাপ।
প্রস্তুত প্রণালি : আতপ চাল ১ ঘণ্টা আগে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন। হাতে কচলিয়ে চালটা একটু ভাঙা ভাঙা করে নিন। এবার খেজুর রসসহ সব উপকরণ চুলায় বসিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। ঘন হয়ে চাল ফুটে গেলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করুন।
এই শীতে উপকরণগুলো কিন্তু আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে। তৈরি করুন আর সবাইকে নিয়ে খান।
>> আমার জীবনে শীতঃ শীত আর খেজুর রস যেন আঙ্গাআঙ্গি ভাবে জড়িত ছিল আমার জীবনে । সারা শীতকাল কাটত খেজুর রসে । সে সময় যা তৈরি হত তাঁর সাথে থাকত খেজুর রসের সম্পর্ক । আমাদের ৫-৭ টি গাছে। এই গাছ গুলি আমাদের কাজের লোকরা সুন্দর করে শীতের শুরতে তৈরি করত। এর পর গাছে রাতে মাটির হাড়ি লাগিয়ে দিত। সকলে ঐ রস ভর্তি হাড়ি নামিয়ে আনত।ঘুম চোখে কাচা রস খেতে কি যে ভাল লাগত, তা বলে প্রকাশ করা যাবে না।আমরা সকলে আচ্ছা করে রস মুড়ির নাস্তা খেতাম। মাঝে মাঝে চুরি হয়ে যেত রস ভর্তি হাড়ি। এই অকামটা করত গ্রামের পোলাপানরা। মাঝে মাঝে রাত ৯-১০ টার সময় টাটকা রসের হাড়ি পেড়ে গ্লাস গ্লাস রস খেতাম।
খাওয়ার পরেও অনেক রস থাকত। মা ঐ রস বড় হাড়িতে/কড়াইতে করে রস জ্বাল দিয়ে শুরু করত গুঁড় তৈরির তোড়জোড়।বিকাল বেলা মা তৈরই করতেন চিতাই পিঠা । গরম গরম চিতাই পিঠা খেজুরের গুঁড় দিয়ে খেতে অমৃতর মত লাগত ।মাঝে মাঝে রসে ভিজা চিতাই পিঠা ও ভাপা পিঠা । এটাও তৈরি হত খেজুরের গুঁড় দিয়ে । মাঝে মাঝে তৈরি হত আতপ চালের পায়েস ।
বিঃ দ্রঃ খেজুর রসে এখন বাদুড় বাহিত নিপা ভাইরাসের প্রকোপ মাঝে মাঝে দেখা দেয়। রাতে রস খেতে এসে এই ভাইরাসের জীবাণু রসে দিয়ে যায় বাদুড়। তবে গাছ জাল দিয়ে ঘিরে দিলে বাদুড় আর বসতে পারে না গাছে। ভয়ও থাকে না। এ জন্য কাচা রস না খাওয়ায় ভাল। তবে এ জন্য গরম করে/ সেদ্ধ করে খেলে কোন বিপদের সম্ভাবনা থাকে না। তাপে এই ভাইরাসের জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়।
>> শীতের আগমনঃ হালকা কুয়াশা আর হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীত আসছে। ঋতু পরিক্রমায় প্রতি বছরই আসে শীতকাল। তবে শীতের আমেজই ভিন্ন। গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় এই বাংলাদেশের মানুষ প্রতীক্ষায় থাকে। প্রতি সময়টির জন্যে। শীতের সময়টা তুলনামূলকভাবে অন্য সময়ের চেয়ে স্বাস্থ্যকর। ছয় ঋতুর এই দেশে বিভিন্ন সময়ে নানান অসুখ-বিসুখের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। কিন্তু শীতের সময় অসুখ বিসুখ তেমন হয় না। একমাত্র ঠান্ডাজনিত অসুস্থ ছাড়া। শীতের রূপ বড় সুন্দর শহরে একরূপ গ্রামে ভিন্নরূপ। এরূপ আগে ছিল আরো অপরূপ। কালের চাকায় পিষ্ট হয়ে এই সব রূপ যেন হারিয়ে যাচ্ছে।
>> শীতের মিষ্টি রোদঃ প্রভাতে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গ্রামে গঞ্জের ছেলেমেয়েরা রোদের তাপে স্নান করে। শাড়ি বা লুঙ্গি দিয়ে বাবা মারা তাদের শিশু-সন্তানদের শরীর পেচিয়ে দেয়। পেঙ্গুইন পাখির মত সারিবদ্ধভাবে ছেলে মেয়েরা রোদ পোহায়।আর সকলের হাতে হাতে খোরা/ ডালা/প্লেট ভর্তি সর্ষের তেলে মাখা মুড়ি।বেশি শীত পড়লে খড়েড় আগুণ জ্বালিয়ে আগুনের চারপাশে গোল হয়ে বসে আগুনের তাপে শীত নিবারণ।সেই সব দৃশ্য আজকাল আর দেখা যায় না। এখন গায়ে উঠেছে পুরানো সোয়েটার। রূপই যেন বদলে গেছে।
>> খেজুর গাছঃ (সংস্কৃত: खर्जूरम्); (ইংরেজি: Date Palm) এক ধরনের তালজাতীয় শাখাবিহীন বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা (Phoenix dactylifera)।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে সুমিষ্ট ফল হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় অনেক বছর পূর্ব থেকেই এর চাষাবাদ হয়ে আসছে। এ গাছটি প্রধানতঃ মরু এলাকায় ভাল জন্মে। খেজুর গাছের ফলকে খেজুররূপে আখ্যায়িত করা হয়। মাঝারী আকারের গাছ হিসেবে খেজুর গাছের উচ্চতা গড়পড়তা ১৫ মিটার থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর লম্বা পাতা রয়েছে যা পাখির পালকের আকৃতিবিশিষ্ট। দৈর্ঘ্যে পাতাগুলো ৩ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত হয়। পাতায় দৃশ্যমান পত্রদণ্ড রয়েছে। এক বা একাধিক বৃক্ষ কাণ্ড রয়েছে যা একটিমাত্র শাখা থেকে এসেছে।খেজুর গাছের দ্বিপদ নামের প্রজাতিক অংশ dactylifera এর অর্থ "খেজুর বহনকারী"। নামটি প্রথম অংশ প্রাচীন গ্রীক ভাষা dáktulos থেকে এসেছে যার অর্থ "খেজুর" (এর আরেক অর্থ "আঙুল")। আর পরবর্তী অংশ ferō এসেছে ল্যাটিন ভাষা থেকে যার অর্থ "আমি বহন করি"।
কচি খেজুর পাতা সব্জী হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। এছাড়াও, খেজুরের ফুলও খাবার উপযোগী। সনাতনী ধাঁচে স্ত্রী ফুল ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনে বিক্রয় করা হয়। ফুলের কুঁড়ি দিয়ে সালাদ কিংবা শুকনো মাছ বা শুঁটকী দিয়ে চাটনী তৈরী করে রুটির সাহায্যে খাওয়া হয়।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসঃ
জগৎ/রাজ্য:------------------Plantae
বিভাগ:----------------------Magnoliophyta
শ্রেণী:------------------------Liliopsida
বর্গ:-------------------------Arecales
পরিবার:--------------------Arecaceae
গণ:-------------------------Phoenix
প্রজাতি-------------------P. dactylifera
দ্বিপদী নামঃ------------Phoenix dactylifera
>> খেজুর রসঃ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর আফ্রিকা, ঘানা, আইভরীকোস্টে খেজুর গাছের অংশ কেটে সুমিষ্ট রস বের করা হয়, যা খেজুরের রস নামে পরিচিত। রসকে পরবর্তীতে গুড়ে অথবা নেশাজাতীয় পানীয়ে রূপান্তরিত করা হয়। উত্তর আফ্রিকায় এ প্রক্রিয়াকে লাগবি বলা হয়। রস আহরণের জন্যে অনেক সময়ের প্রয়োজন যা তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। গাছ কেটে রস আহরণের জন্যে দক্ষতার প্রয়োজন নতুবা খেজুর গাছ মারা যাবে।
>>>বাংলাদেশে শীত কালের ঐতিহ্য খেজুর রসঃ শীতের ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে খেজুরের রস, নানা রকমের পিঠা, পাটালী গুড়ের দুধ, পিঠার কথাতো ভুলতেই বসেছে মানুষ। অর্থনৈতিক কারণে শীতের পিঠা প্রায় বিদায় লগ্নে এসে ঠেকেছে। টিমটিম করে টিকে আছে সামান্য কিছু অধিকাংশ মানুষের সামর্থ্যে নেই। এক সময় যাদের সামর্থ্য ছিল তারা আজ স্মৃতি রোমন্থন করেই সেই স্বাদ গ্রহণ করেছে। শীতের মৌসুমকে পিঠার মওসুমও বলা হতো। নানা বাড়ি বেড়ানোর ধুম পড়ে যেতো শীতের সময়। এখন আর সেই উচ্ছ্বাস দেখা যায় না। এছাড়া একটা সময় ছিল যখন কার্তিক অগ্রহায়ণ মাস এলে কাকডাকা ভোরে কিংবা ভর দুপুরে গাছিদের কর্মতৎপরতা চোখে পড়ত।
>>>গাছ তৈরিঃ শীতের আগমনীতে ব্যস্ত হয়ে উঠে গাছিরা। সারা বছর অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীতকালে খেজুর গাছের কদর বেড়ে যায়। কারণ এ গাছ দিচ্ছে মিষ্টি রস। গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহে হাঁসুরা, দড়ি, বাঁশের জিহ্বা( রস পড়ার এক প্রকার নল) ও মাটির কলসি/হাঁড়ি কাঁধে ঝুলিয়ে বের হত। একজন দক্ষ গাছি অতি যত্ন ও সতর্কতার সঙ্গে গাছ কাটে। এক্ষেত্রে যার নৈপুণ্য অধিক সেই বেশি রস সংগ্রহ করতে পারে। অদক্ষ গাছির হাঁসুয়ার আঘাতে অনেক সময় খেজুর গাছ মারা যায়। গাছিরা শুরুতে গাছের মাথার পাতা/ডাল কেটে পরিষ্কার করে নেয়। এর পর রস নামানোর স্থানটি পরিস্কার করে নেয়।এর পর সেখান
হাঁসুরা (ধারালো অস্ত্র) দিয়ে কেটে গাছের উপরের ছাল পরিমাণ মত তুলে ঠিক লাভ চিহ্নের মত করা হয়। এর পর লাভের নিচের সরু অংশে বাঁশের জিহ্বা/নলি( রস পড়ার এক প্রকার নল) পিটিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর দড়ি দিয়ে মাটির ঠিলা/ হাড়ি/কলসি বেধে দেওয়া হয়।এর পর সমস্ত রাতে রস জিহ্বা/নলি দিয়ে সারারাত টুপ টুপ করে রস পড়ত মাটির হাড়িতে। দুপুরের পর থেকে কলসি বা হাঁড়ি লাগানো শুরু হত। ভোরে এসে রসভর্তি হাঁড়ি নিয়ে যেত গাঁছিরা।একটি খেজুর গাছ থেকে প্রতিদিন রস পাওয়া যায় না। তিনদিন রস নেয়ার পর তিনদিন অবসর দিতে হয়। এর ফলে পরের তিনদিন ভালও বেশি রস পাওয়া যায়। কয়েক বছর আগেও গাছিরা প্রতিটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ এবং পাটালী বিক্রি করে বছরে প্রচুর টাকা আয় করত।
>> পেশাঃ গ্রামাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ এ পেশায় নিয়োজিত ছিল। খেজুরের রস থেকে যে অর্থ উপার্জন হত তা গ্রামীণ অর্থনীতিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। পুরো শীতকাল ছিল খেজুরের গাছ থেকে অর্থ উপার্জনের সুন্দর সময়।তারা দিনে ২৫ থেকে ৩০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেত। বর্তমানে যে পরিমাণ খেজুর গাছ গ্রামাঞ্চলে টিকে আছে তা থেকেও অর্থ উপার্জনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা এসব গাছ থেকে সংগৃহীত রস বা পাটালী বিক্রি করে ৪/৬ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। খেজুর গাছের চাষের জন্য তেমন কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। এর কাঠ দিয়ে ঘরের বর্গা তৈরি করা যায়। খেজুর পাতার পাটি ও হাত পাখা এখন ও গ্রাম বাংলায় বহুল ব্যবহৃত হয়। পাকা খেজুর একটি পুষ্টিকর ফল। এর মাধ্যমে ও আয় করা সম্ভব। পুকুর পাড়ে বা পতিত জমিতে পরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ রোপণ করা যায়। শুধু খেজুর গাছ লাগানো চলবে না। সুন্দরভাবে যত্ন ও নিতে হবে।
>>রসঃ খেজুর রসে রয়েছে প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণ। সারা শীতকাল ছিল খেজুরের রসের প্রাচুর্য আর এ রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া। সারারাত তা গাছের সঙ্গে আটকানো থাকে। গাছ থেকে ফোঁটা ফোটা রস পড়ে এক সময় হাঁড়ি ভরে যায়। অনেক সময় রস উপচে পড়ে। সূর্য উঠতে না উঠতেই গাছিরা রস জমানো শুরু করে। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। একটি টিনের পাত্রে রস ঢেলে বৃহদাকার চুলায় জাল দিতে হয়। চুলোর ওপর এক সময় রস আঠালো হয়ে ওঠে। তখন নামিয়ে কোন পাত্রের ওপর পরিস্কার কাপড় বিছিয়ে তাতে ঢালতে হয়। শীতল হলে পরে একে পাটালি বলে।
>> রস দিয়ে বানানো খাদ্যঃ শীতে খেজুরের রসে গ্রামের বধূরা মজাদার রসালো পিঠা, পায়েস বানাত। তৈরি হত প্রসিদ্ধ সুঘ্রাণযুক্ত পাটালি গুড়া।এই নতুন পাটালি দিয়েও তৈরি হত মজাদার সব শীতকালীন খাবার।খেজুর রস জ্বালিয়ে/ জ্বালদিয়ে ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। খেজুরের গুড় থেকে এক সময় বাদামি চিনিও তৈরি করা হতো। যার সাধ ও ঘ্রাণ সর্ম্পূণ ভিন্ন। খেজুর গাছের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে। পুরো মৌসুমজুড়ে চলবে রস, গুড়, পিঠা-পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। নতুন গুড়ের মিষ্টি গন্ধে ধীরে ধীরে আমোদিত হয়ে উঠবে গ্রাম-বাংলা।
খেজুর রসের পিঠে নিয়ে একটি গ্রামীণ ছড়া-----
খেজুর রসে বানায় পিঠা
খেতে লাগে বেজায় মিঠা।
>> খেজুর রসের তৈরি জনপ্রিয় কিছু খাবারঃ
১।খেজুর রসে ভাপাপিঠাঃ
উপকরণ: ঘন খেজুরের রস আধা কাপ, পাতলা খেজুরের রস ২ কাপ, মিহি কুরানো নারকেল ১ কাপ, সেদ্ধ চালের গুঁড়া ২ কাপ, আতপ চালের গুঁড়া আধা কাপ, লবণ এক চিমটি (একটি ভাপাপিঠার উপকরণ)।
প্রণালি: সেদ্ধ ও আতপ চালের গুঁড়া, লবণ ও ঘন রস আস্তে আস্তে মাখাতে হবে, যাতে পুরো মিশ্রণ ঝরঝরে থাকে। তারপর ভাপাপিঠার মতোই এ পিঠাকে তৈরি করতে হবে। চাইলে পিঠাতে নারকেল দিতে পারেন। সব পিঠা বানানো হলে ঠাণ্ডা করে পাতলা খেজুর রসে ভিজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার এ পিঠা।
২।লাল পুয়াপিঠাঃ
উপকরণ: আতপ চালের গুঁড়া ৩ কাপ, মিহি করে বাটা নারকেল আধা কাপ, ময়দা ১ টেবিল-চামচ, বেকিং পাউডার আধা চা-চামচ, খেজুরের গুঁড় বা রস মিষ্টি অনুযায়ী, পানি পরিমাণমতো, ডিম ২টি, এক চিমটি লবণ এবং তেল ১ কাপ।
প্রণালি: তেল ছাড়া সবকিছু মিশিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এবার তেল গরম হলে গোল চামচে গোলা নিয়ে একটা একটা করে ভেজে তুলুন।
৩।মালপোয়াঃ
উপকরণ : খেজুর রস ১ কেজি, ময়দা ২৫০ গ্রাম, ক্ষীর ১ কাপ, খাবার সোডা ১ চিমটি, মৌরি আধা চামচ, লবণ স্বাদমতো, ঘি ২৫০ গ্রাম।
প্রস্তুত প্রণালি : রস জাল দিয়ে ঘন করে নিন। ময়দা, ক্ষীর, মৌরি, খাবার সোডা, লবণ ও পানি দিয়ে ঘন গোলা তৈরি করুন। চুলার হাড়িতে দেওয়া ঘি গরম হলে পিঠা ভেজে গরম গরম খেজুর রসে চুবিয়ে নিন।
৪।সিদ্ধ পুলিঃ
উপকরণ : চালের গুঁড়া ৪ কাপ, নারকেল ১টা, খেজুর রস ২ লিটার।
যেভাবে করবেন : ভেজে চালের গুঁড়ায় অল্প লবণ মেখে গরম পানিতে ময়দা মথ মেখে নিন। এবার নারকেল কুড়ে ঘন সিরা দিয়ে পুর তৈরি করে নিন। লেচি কেটে নারকেলের পুর ভরে পিঠা তৈরি করুন। এবার পাতিলে পানি গরম করে পিঠা ছেড়ে দিন। সিদ্ধ পিঠা ঘন সিরায় দিয়ে পরিবেশন করুন।
৫।খেজুর রসের চিতইঃ
উপকরণ : চাল ১ কেজি, খেজুর রস ২ লিটার, লবণ ১ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি : চাল লবণ পানি দিয়ে গোলা তৈরি করে চিতই পিঠা বানাতে। খেজুর রস ১ ঘণ্টা ধরে জাল করে ঘন রস তৈরি করে পিঠার সঙ্গে মিলিয়ে অথবা আলাদা পরিবেশন করুন।
৬।বড়াঃ
উপকরণ : খেজুরের রস ২ কেজি, চালের গুঁড়া ৩০০ গ্রাম, তেল ৩০০ গ্রাম।
প্রস্তুত প্রণালি : খেজুর রস জ্বাল দিয়ে ঘন করুন। এবার ঘন রস চালের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। কড়াইতে তেল দিন এবং তেল গরম হলে ওই মাখা গোল গোল পিঠা তেলে ছেড়ে দিন। লাল করে ভেজে নিন।
৭।পায়েসঃ
উপকরণ : আতপ চাল ১ কেজি, খেজুর রস ৫ কেজি, এলাচ-৬/৭টি, কিশমিশ আধাকাপ।
প্রস্তুত প্রণালি : আতপ চাল ১ ঘণ্টা আগে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন। হাতে কচলিয়ে চালটা একটু ভাঙা ভাঙা করে নিন। এবার খেজুর রসসহ সব উপকরণ চুলায় বসিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। ঘন হয়ে চাল ফুটে গেলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করুন।
এই শীতে উপকরণগুলো কিন্তু আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে। তৈরি করুন আর সবাইকে নিয়ে খান।
>> আমার জীবনে শীতঃ শীত আর খেজুর রস যেন আঙ্গাআঙ্গি ভাবে জড়িত ছিল আমার জীবনে । সারা শীতকাল কাটত খেজুর রসে । সে সময় যা তৈরি হত তাঁর সাথে থাকত খেজুর রসের সম্পর্ক । আমাদের ৫-৭ টি গাছে। এই গাছ গুলি আমাদের কাজের লোকরা সুন্দর করে শীতের শুরতে তৈরি করত। এর পর গাছে রাতে মাটির হাড়ি লাগিয়ে দিত। সকলে ঐ রস ভর্তি হাড়ি নামিয়ে আনত।ঘুম চোখে কাচা রস খেতে কি যে ভাল লাগত, তা বলে প্রকাশ করা যাবে না।আমরা সকলে আচ্ছা করে রস মুড়ির নাস্তা খেতাম। মাঝে মাঝে চুরি হয়ে যেত রস ভর্তি হাড়ি। এই অকামটা করত গ্রামের পোলাপানরা। মাঝে মাঝে রাত ৯-১০ টার সময় টাটকা রসের হাড়ি পেড়ে গ্লাস গ্লাস রস খেতাম।
খাওয়ার পরেও অনেক রস থাকত। মা ঐ রস বড় হাড়িতে/কড়াইতে করে রস জ্বাল দিয়ে শুরু করত গুঁড় তৈরির তোড়জোড়।বিকাল বেলা মা তৈরই করতেন চিতাই পিঠা । গরম গরম চিতাই পিঠা খেজুরের গুঁড় দিয়ে খেতে অমৃতর মত লাগত ।মাঝে মাঝে রসে ভিজা চিতাই পিঠা ও ভাপা পিঠা । এটাও তৈরি হত খেজুরের গুঁড় দিয়ে । মাঝে মাঝে তৈরি হত আতপ চালের পায়েস ।
বিঃ দ্রঃ খেজুর রসে এখন বাদুড় বাহিত নিপা ভাইরাসের প্রকোপ মাঝে মাঝে দেখা দেয়। রাতে রস খেতে এসে এই ভাইরাসের জীবাণু রসে দিয়ে যায় বাদুড়। তবে গাছ জাল দিয়ে ঘিরে দিলে বাদুড় আর বসতে পারে না গাছে। ভয়ও থাকে না। এ জন্য কাচা রস না খাওয়ায় ভাল। তবে এ জন্য গরম করে/ সেদ্ধ করে খেলে কোন বিপদের সম্ভাবনা থাকে না। তাপে এই ভাইরাসের জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
אולי כולנו טועים ১৮/১২/২০১৩
-
প্রবাসী পাঠক ১৮/১২/২০১৩আপনার সবগুলো লেখাই খুব চমৎকার তথ্যবিন্যাসে ভরপুর। অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
লোভনীয় খাবার দেখে বড্ড লোভ লাগছে খাওয়ার জন্য। কতদিন খেজুরের রস, ভাপা পিঠা খাওয়া হয় না।
খেজুরের গুড় খুব প্রিয় ছিল ছেলেবেলায়।