শাপলা -সালুক-ভেট ও সিংড়া
✔✔ ✔ শাপলা -সালুক-ভেট ও সিংড়া( সিংগড়/পানিফল)✔ ✔✔ ✔
ஜ۩۞۩ஜ এই ঢাকা শহরে এসে আমি দেখেছি মানুষ কি না খাচ্ছে। আমরা গ্রামে যে সব সবুজ শাক সবজি জীবনে দু একবার খেয়েছি এই ঢাকা শহরে তা রীতি মত ভাল স্ট্যান্ডার সবজি এবং খাদ্য। তেমনি একটা খাদ্যের কথা আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরব। আর সেটি শাপলা ও শালুক। শাপলা, ভেট ও সালুক এর নাম শোনেননি এমন বাঙ্গালি মনে হয় খুব কময় আছে। আমিও তো শাপলা সেই ছোট কাল হতেই গ্রামের পুকুরে দেখে দেখে বড় হয়েছি। আর শাপলা এবং শালুক খাবার হিসেবে আমাদের অঞ্চলে ভালয় প্রচলিত। সেই ছোট কালে দুরন্ত শৈশবে বন্ধুরা মিলে শাপলা তুলতে যেতাম সঙ্গে ফাও হিসেবে শাপলার ফল ভেট তুলে তুলে খেতাম। শাপলার ডাটার তরকারী ও আর সেদ্ধ শালুক খেতাম মাঝে মাঝে।
ஜ۩۞۩ஜ পরিচিতিঃ আমাদের দেশে স্বাদু পানি জলাশয়ে অতি গুরুত্বপূর্ন প্রধান কয়েকটি জলজ উদ্ভিদের মধ্যে প্রধান হল শাপলা-শালুক, পদ্ম, সিংড়া( সিংগড়/পানিফল)। জলের উপরে ফুটে থাকা শাপলা ফুলের দৃষ্টি কাড়া সৌন্দর্য সত্যিই যে কোন মানুষকে মুগ্ধ করে। শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। আমাদের দেশে স্বাদু পানি জলাশয়ে শাপলা ও শালুক জন্মায়। শাপলার কন্দ কে বলে শালুক এবং শাপলা ফুল ফুটে আর এক ধরনের গোল ফলে পরিণত হয় একে বলে ভেট। শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকে পানি শুকিয়ে গেলেও এই গাছের কন্দ দীর্ঘকাল টিকে থাকতে পারে। বর্ষাকালে নদীতে পানি ফিরে আসলে কন্দ থেকে পাতা ও ফুল বের হয়।শাপলা গাছ বা ডাটা পানির গভীরতায় ৫ থেকে ২০ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়।
সিংড়া( সিংগড়/পানিফল)নাম হয়েছে মনে হয় এই ফল সুস্বাদু খাদ্য সিংগাড়ার মত দেখতে বা উল্টাটাও হতে পারে। পানিতে জন্মে বলে এর এর এক নাম পানি ফল। আমরা এখন যে সিংড়া খায় তা আমাদের দেশী যাতের না। আমাদের দেশী যাতের সিংড়া ফল হয় একটু ছোট আকারের এবং রঙ কালচে সবুজ এবং ধারালো কাটা যুক্ত। যে পুকুরে এগুলি জন্মাত সে পুকুরে মাছ মারতে গেলে খবর হয়ে যেত যে কারও। পুকুরের কাদায় পড়ে যাওয়া সিংড়ার ধারালো কাটার আঘাতে জেরবার হত পা। আমাদের দেশি সিংড়া কে অনেক জায়গায় বলা হত বুন সিংড়া। এই যাতের সিংড়া আজ বিলুপ্ত।
শাপলা শালুক সম্পর্কে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবির কবিতা না পড়লেই নয়............
যেদিন আমি হারিয়ে যাব,
বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায়
আমার খবর পুছবে -
ভোরে ঝিলের জলে
শালুক পদ্ম তোলে
কে ভ্রমর-কুন্তলা কিশোরী।
ফুল দেখে বেভুল সিনান্ বিসরি।।
একি নূতন লীলা আঁখিতে দেখি ভুল
কমল ফুল যেন তোলে কমল ফুল
ভাসায়ে আকাশ গাঙে অরুণ-গাগরি।।
ঝিলের নিথর জলে আবেশে ঢল ঢল
গ’লে পড়ে শত সে তরঙ্গে,
শারদ আকাশে দলে দলে আসে
মেঘ, বলাকার খেলিতে সঙ্গে।
আলোক-মঞ্জুরী প্রভাত বেলা
বিকশি’ জলে কি গো করিছে খেলা
বুকের আঁচলে ফুল উঠিছে শিহরি।।
ஜ۩۞۩ஜ শাপলার বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসঃ
জগৎ/রাজ্য: Plantae
বিভাগ: Magnoliophyta
শ্রেণী: Magnoliopsida
বর্গ: Nymphaeales
পরিবার: Nymphaeaceae
গণ: Nymphaea
প্রজাতি: N. capensis
দ্বিপদী নামঃ Nymphaea capensis Thunb.
ஜ۩۞۩ஜ বিলুপ্তির পথে শাপলা-শালুক-ভেট ও সিংড়া
এখন আর গ্রামবাংলার বিলঝিল, ডোবানালায় চোখে পড়ে না বাংলাদেশের জাতীয় ফুল ‘শাপলা’। পানিফল, শালুক, ভেট আর সিংড়া। জমিতে অতি মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলাই নয়, বিলুপ্তির পথে অনেক পানিফুল ও ফল। আজ থেকে মাত্র পাঁচ-দশ বছর আগেও বর্ষা মৌসুমে উপজেলার নদীনালা, খালবিল এবং জলাশয়ে ব্যাপকভাবে শাপলা দেখা যেত। কিন্তু এখন আর তা যেন দেখাই যায় না। এমনিতেই জন্মাতো এসব শাপলা ফুলসহ পানিফল।
বর্তমানে শাপলা ফুলসহ পানি ফলগুলো যেন হারিয়ে গেছে। বলতে গেলে চোখেই পড়ে না! সাধারণত বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত নদীনালা, খালবিল, জলাশয় এবং নিচু জমিতে এমনিতেই প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতো প্রচুর শাপলা-শালুক, ভেট ও সিংড়া। তখন অনেকেই এসব পানি ফলকে রেখেছিল খাদ্য তালিকায়ও। এসব পানিফলের গাছগুলো যেন মাথা উঁচু করে জানান দিত, ‘আমি শাপলা, শালুক, ভেট, সিংড়া।’ ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তো বটেই, সব বয়সী মানুষই রঙ-বেরঙের শাপলার বাহারি রূপ দেখে ব্যাকুল হয়ে যেত। যেন প্রাণটা জুড়িয়ে যেত চিরচেনা শাপলা ফুল দেখে। কিন্তু অধিক ফসলের আশায় জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার-কীটনাশক ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সেই শাপলা আর শাপলা ফুল আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমনি বিলুপ্তির পথে শালুক, ভেট ও সিংড়া।
প্রবীণ লোকদের মতে, এসব পানিফলে রয়েছে প্রচুর ভেষজ গুণাগুণ। শালুক শুধু সহজ পাচ্যই নয়, হজমশক্তি বৃদ্ধি করে দ্রুত ক্ষুধা নিবারণ করে শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি ও জোগায়। শালুক আগুনে পুড়িয়ে কিংবা সেদ্ধ করে ও খাওয়া যায়। শালুক পোড়া এখনো প্রবীণদের সেই শৈশবকালের কথা মনে করিয়ে দেয় অনেকের। পোড়া শালুক খেতে সেদ্ধ কাঁঠাল বিচির মত। প্রথমে শালুক উত্তম ভাবে ধুয়ে লবণ পানিতে সেদ্ধ করতে হবে। এটি সেদ্ধ হতে অনেক সময় নেয়। এর পর সেদ্ধ শালুকে আলুর মত খোসা ছড়িয়ে খেতে হয়। পোড়া বা সেদ্ধ শালুক খেতে সেদ্ধ কাঁঠাল বিচির মত।
শাপলা সাধারণত লাল এবং সাদা ফুলবিশিষ্ট এবং তা অনেকের কাছে খুবই ভালো সবজি হিসেবেও সমাদ্রিত। তাছাড়া লাল রঙের শাপলা ব্যবহার করা হয় ঔষধি হিসেবে। অনেকেই চুলকানি এবং রক্ত আমাশয়ের জন্য এখনো লাল শাপলা খুঁজে ফেরে। আজ থেকে মাত্র ১০-১৫ বছর আগেও বিলের বুকজুড়ে শাপলা ফুলের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ছিল চোখে পড়ার মতো। সে সময় শরত্কালে যেন বিলের প্রকৃতিই অন্যরকম সাজে সজ্জিত হয়ে উঠত। শাপলা ফুলসহ এসব পানিফল যে শুধু পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করত তা কিন্তু নয়, এসবের রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। এ ছাড়া শাপলার ফুলের গাছ, গোড়া ও মাথা—সবকিছুই নরম ডাঁটা বা লাইল মাথায় ও গোড়ায় জন্ম নেয়া ভেট এবং শালুক সবগুলোই মুখরোচক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য উপাদানও বটে।
শাপলা ফুলের গাছের গোড়ার দিকে যে একাধিক গুটির জন্ম হয় তাকেই গ্রাম্য ভাষায় ভেট বলা হয়। গুটিগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, যাকে বলা হয় শালুক। একেক শালুকের ওজন সাধারণত ৩০ গ্রাম থেকে ৫০ গ্রাম। গ্রামের মানুষের কাছে শালুক অত্যন্ত সুস্বাদু ও লোভনীয় খাদ্য। এর আগে গ্রামে অভাবের সময় অতিদরিদ্র শ্রেণীর মানুষ বিল থেকে এসব শালুক তুলে এনে সেদ্ধ করে খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতেন ভাতের বিকল্প হিসেবে। শালুক এবং ভেট একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছা করে।তাছাড়াও বিলগুলোতে পাওয়া যেতো পর্যপ্ত সিংড়া। সিংড়া নামের ফলটির গায়ে ছিল কমপে তিন/চারটি কাঁটা। কাঁটা ছাড়িয়ে তার ভেতরে পাওয়া যেতো সুস্বাদু এক দুর্লভ খাদ্যের ফল। সুস্বাদু আর প্রোটিনযুক্ত ফল যা খেয়ে গ্রাম-গঞ্জের লোকরা নানা অসুখ-বিসুখ থেকে রা পাওয়া যেতো বলে প্রবিণ ডাক্তারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়। সিংড়া খাওয়া হতো কাঁচা অথবা সেদ্ধ করে। বর্তমানে এসব পানীয় ফল আগের মতো আর চোখে না, পড়লেও শাপলা-শালুক আর মৌসুম অনুযায়ী সিংড়া কালে-ভদ্রে গ্রামগঞ্জের হাটবাজারগুলোতে চোখে পড়লেও দাম অনেক চড়া, যা সাধারণ্যের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। মোট কথা, এসব জলজ উদ্ভিদ আজ বলতে গেলে বিলুপ্তই হয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে এখন আর আগের মতো সময়মতো বন্যাও হচ্ছে না। বন্যার পানি যতটুকু হওয়ার দরকার তাও হচ্ছে না। এ ছাড়া আবাদি জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলেও মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা শালুক বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন করে আর শাপলা গাছ জন্মাছে না।
ஜ۩۞۩ஜ এই ঢাকা শহরে এসে আমি দেখেছি মানুষ কি না খাচ্ছে। আমরা গ্রামে যে সব সবুজ শাক সবজি জীবনে দু একবার খেয়েছি এই ঢাকা শহরে তা রীতি মত ভাল স্ট্যান্ডার সবজি এবং খাদ্য। তেমনি একটা খাদ্যের কথা আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরব। আর সেটি শাপলা ও শালুক। শাপলা, ভেট ও সালুক এর নাম শোনেননি এমন বাঙ্গালি মনে হয় খুব কময় আছে। আমিও তো শাপলা সেই ছোট কাল হতেই গ্রামের পুকুরে দেখে দেখে বড় হয়েছি। আর শাপলা এবং শালুক খাবার হিসেবে আমাদের অঞ্চলে ভালয় প্রচলিত। সেই ছোট কালে দুরন্ত শৈশবে বন্ধুরা মিলে শাপলা তুলতে যেতাম সঙ্গে ফাও হিসেবে শাপলার ফল ভেট তুলে তুলে খেতাম। শাপলার ডাটার তরকারী ও আর সেদ্ধ শালুক খেতাম মাঝে মাঝে।
ஜ۩۞۩ஜ পরিচিতিঃ আমাদের দেশে স্বাদু পানি জলাশয়ে অতি গুরুত্বপূর্ন প্রধান কয়েকটি জলজ উদ্ভিদের মধ্যে প্রধান হল শাপলা-শালুক, পদ্ম, সিংড়া( সিংগড়/পানিফল)। জলের উপরে ফুটে থাকা শাপলা ফুলের দৃষ্টি কাড়া সৌন্দর্য সত্যিই যে কোন মানুষকে মুগ্ধ করে। শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। আমাদের দেশে স্বাদু পানি জলাশয়ে শাপলা ও শালুক জন্মায়। শাপলার কন্দ কে বলে শালুক এবং শাপলা ফুল ফুটে আর এক ধরনের গোল ফলে পরিণত হয় একে বলে ভেট। শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকে পানি শুকিয়ে গেলেও এই গাছের কন্দ দীর্ঘকাল টিকে থাকতে পারে। বর্ষাকালে নদীতে পানি ফিরে আসলে কন্দ থেকে পাতা ও ফুল বের হয়।শাপলা গাছ বা ডাটা পানির গভীরতায় ৫ থেকে ২০ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়।
সিংড়া( সিংগড়/পানিফল)নাম হয়েছে মনে হয় এই ফল সুস্বাদু খাদ্য সিংগাড়ার মত দেখতে বা উল্টাটাও হতে পারে। পানিতে জন্মে বলে এর এর এক নাম পানি ফল। আমরা এখন যে সিংড়া খায় তা আমাদের দেশী যাতের না। আমাদের দেশী যাতের সিংড়া ফল হয় একটু ছোট আকারের এবং রঙ কালচে সবুজ এবং ধারালো কাটা যুক্ত। যে পুকুরে এগুলি জন্মাত সে পুকুরে মাছ মারতে গেলে খবর হয়ে যেত যে কারও। পুকুরের কাদায় পড়ে যাওয়া সিংড়ার ধারালো কাটার আঘাতে জেরবার হত পা। আমাদের দেশি সিংড়া কে অনেক জায়গায় বলা হত বুন সিংড়া। এই যাতের সিংড়া আজ বিলুপ্ত।
শাপলা শালুক সম্পর্কে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবির কবিতা না পড়লেই নয়............
যেদিন আমি হারিয়ে যাব,
বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায়
আমার খবর পুছবে -
ভোরে ঝিলের জলে
শালুক পদ্ম তোলে
কে ভ্রমর-কুন্তলা কিশোরী।
ফুল দেখে বেভুল সিনান্ বিসরি।।
একি নূতন লীলা আঁখিতে দেখি ভুল
কমল ফুল যেন তোলে কমল ফুল
ভাসায়ে আকাশ গাঙে অরুণ-গাগরি।।
ঝিলের নিথর জলে আবেশে ঢল ঢল
গ’লে পড়ে শত সে তরঙ্গে,
শারদ আকাশে দলে দলে আসে
মেঘ, বলাকার খেলিতে সঙ্গে।
আলোক-মঞ্জুরী প্রভাত বেলা
বিকশি’ জলে কি গো করিছে খেলা
বুকের আঁচলে ফুল উঠিছে শিহরি।।
ஜ۩۞۩ஜ শাপলার বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসঃ
জগৎ/রাজ্য: Plantae
বিভাগ: Magnoliophyta
শ্রেণী: Magnoliopsida
বর্গ: Nymphaeales
পরিবার: Nymphaeaceae
গণ: Nymphaea
প্রজাতি: N. capensis
দ্বিপদী নামঃ Nymphaea capensis Thunb.
ஜ۩۞۩ஜ বিলুপ্তির পথে শাপলা-শালুক-ভেট ও সিংড়া
এখন আর গ্রামবাংলার বিলঝিল, ডোবানালায় চোখে পড়ে না বাংলাদেশের জাতীয় ফুল ‘শাপলা’। পানিফল, শালুক, ভেট আর সিংড়া। জমিতে অতি মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলাই নয়, বিলুপ্তির পথে অনেক পানিফুল ও ফল। আজ থেকে মাত্র পাঁচ-দশ বছর আগেও বর্ষা মৌসুমে উপজেলার নদীনালা, খালবিল এবং জলাশয়ে ব্যাপকভাবে শাপলা দেখা যেত। কিন্তু এখন আর তা যেন দেখাই যায় না। এমনিতেই জন্মাতো এসব শাপলা ফুলসহ পানিফল।
বর্তমানে শাপলা ফুলসহ পানি ফলগুলো যেন হারিয়ে গেছে। বলতে গেলে চোখেই পড়ে না! সাধারণত বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত নদীনালা, খালবিল, জলাশয় এবং নিচু জমিতে এমনিতেই প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতো প্রচুর শাপলা-শালুক, ভেট ও সিংড়া। তখন অনেকেই এসব পানি ফলকে রেখেছিল খাদ্য তালিকায়ও। এসব পানিফলের গাছগুলো যেন মাথা উঁচু করে জানান দিত, ‘আমি শাপলা, শালুক, ভেট, সিংড়া।’ ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তো বটেই, সব বয়সী মানুষই রঙ-বেরঙের শাপলার বাহারি রূপ দেখে ব্যাকুল হয়ে যেত। যেন প্রাণটা জুড়িয়ে যেত চিরচেনা শাপলা ফুল দেখে। কিন্তু অধিক ফসলের আশায় জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার-কীটনাশক ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সেই শাপলা আর শাপলা ফুল আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমনি বিলুপ্তির পথে শালুক, ভেট ও সিংড়া।
প্রবীণ লোকদের মতে, এসব পানিফলে রয়েছে প্রচুর ভেষজ গুণাগুণ। শালুক শুধু সহজ পাচ্যই নয়, হজমশক্তি বৃদ্ধি করে দ্রুত ক্ষুধা নিবারণ করে শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি ও জোগায়। শালুক আগুনে পুড়িয়ে কিংবা সেদ্ধ করে ও খাওয়া যায়। শালুক পোড়া এখনো প্রবীণদের সেই শৈশবকালের কথা মনে করিয়ে দেয় অনেকের। পোড়া শালুক খেতে সেদ্ধ কাঁঠাল বিচির মত। প্রথমে শালুক উত্তম ভাবে ধুয়ে লবণ পানিতে সেদ্ধ করতে হবে। এটি সেদ্ধ হতে অনেক সময় নেয়। এর পর সেদ্ধ শালুকে আলুর মত খোসা ছড়িয়ে খেতে হয়। পোড়া বা সেদ্ধ শালুক খেতে সেদ্ধ কাঁঠাল বিচির মত।
শাপলা সাধারণত লাল এবং সাদা ফুলবিশিষ্ট এবং তা অনেকের কাছে খুবই ভালো সবজি হিসেবেও সমাদ্রিত। তাছাড়া লাল রঙের শাপলা ব্যবহার করা হয় ঔষধি হিসেবে। অনেকেই চুলকানি এবং রক্ত আমাশয়ের জন্য এখনো লাল শাপলা খুঁজে ফেরে। আজ থেকে মাত্র ১০-১৫ বছর আগেও বিলের বুকজুড়ে শাপলা ফুলের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ছিল চোখে পড়ার মতো। সে সময় শরত্কালে যেন বিলের প্রকৃতিই অন্যরকম সাজে সজ্জিত হয়ে উঠত। শাপলা ফুলসহ এসব পানিফল যে শুধু পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করত তা কিন্তু নয়, এসবের রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। এ ছাড়া শাপলার ফুলের গাছ, গোড়া ও মাথা—সবকিছুই নরম ডাঁটা বা লাইল মাথায় ও গোড়ায় জন্ম নেয়া ভেট এবং শালুক সবগুলোই মুখরোচক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য উপাদানও বটে।
শাপলা ফুলের গাছের গোড়ার দিকে যে একাধিক গুটির জন্ম হয় তাকেই গ্রাম্য ভাষায় ভেট বলা হয়। গুটিগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, যাকে বলা হয় শালুক। একেক শালুকের ওজন সাধারণত ৩০ গ্রাম থেকে ৫০ গ্রাম। গ্রামের মানুষের কাছে শালুক অত্যন্ত সুস্বাদু ও লোভনীয় খাদ্য। এর আগে গ্রামে অভাবের সময় অতিদরিদ্র শ্রেণীর মানুষ বিল থেকে এসব শালুক তুলে এনে সেদ্ধ করে খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতেন ভাতের বিকল্প হিসেবে। শালুক এবং ভেট একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছা করে।তাছাড়াও বিলগুলোতে পাওয়া যেতো পর্যপ্ত সিংড়া। সিংড়া নামের ফলটির গায়ে ছিল কমপে তিন/চারটি কাঁটা। কাঁটা ছাড়িয়ে তার ভেতরে পাওয়া যেতো সুস্বাদু এক দুর্লভ খাদ্যের ফল। সুস্বাদু আর প্রোটিনযুক্ত ফল যা খেয়ে গ্রাম-গঞ্জের লোকরা নানা অসুখ-বিসুখ থেকে রা পাওয়া যেতো বলে প্রবিণ ডাক্তারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়। সিংড়া খাওয়া হতো কাঁচা অথবা সেদ্ধ করে। বর্তমানে এসব পানীয় ফল আগের মতো আর চোখে না, পড়লেও শাপলা-শালুক আর মৌসুম অনুযায়ী সিংড়া কালে-ভদ্রে গ্রামগঞ্জের হাটবাজারগুলোতে চোখে পড়লেও দাম অনেক চড়া, যা সাধারণ্যের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। মোট কথা, এসব জলজ উদ্ভিদ আজ বলতে গেলে বিলুপ্তই হয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে এখন আর আগের মতো সময়মতো বন্যাও হচ্ছে না। বন্যার পানি যতটুকু হওয়ার দরকার তাও হচ্ছে না। এ ছাড়া আবাদি জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলেও মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা শালুক বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন করে আর শাপলা গাছ জন্মাছে না।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জি,মাওলা ২৯/১১/২০১৩ধ ন্যবাস সুলতান ভাই এবং খান ভাই। খান ভায়ের দাওয়াত গ্রহণ করলাম
-
সুলতান মাহমুদ ২৮/১১/২০১৩সময়োপযোগী লেখা
-
সায়েম খান ২৮/১১/২০১৩ভাল লাগল লেখাটি। আমার বাসায়(ব্লগে) দাওয়াত রইল।