www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

জুকি

জুকি
 শাফকাত শফিক
ছেলেটা বেশ পাকা। সবধরণের গাছে উঠতে পারে। সাদা স্যান্ডোগেঞ্জি আর বাদামি রঙয়ের হাফপ্যান্ট পরে আমার দিকে ভ্যাবলাচোখে তাকিয়ে রয়েছে।
আমি বললাম “কী হলো, আম পাড়বে না?” সে আবারো কেমন করে একটা তাকিয়ে রইলো ।আমি আর কথা বাড়ালাম না । ঘরে ঢুকে সোজাসোজি খাবার টেবিলে বসে আমের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । ছেলেটা আম দিয়ে গেলো। কাঁচাপাকা আম ।কী যে মিষ্টি খেতে!
আমাদের পাড়ার কয়েকজন মিলে সেই ভ্যাবলা ছেলেটার নাম রেখেছিলাম। মিমি নামের এক মেয়েই শেষে একটা ছড়া বুনে জুকি নাম রেখেছে ।

ছড়াটা হলো এইরকম-
“গাছে দেয় উঁকি
করে আঁকিবুকি,
সে বড় সুখিই
আমাদের জুকি।”


জুকি ছেলেটা কেমন যেনো ভাবুক আর একটু পাগলাটে ধরণের । তার কাছ থেকে কেউ কিছু খুঁজলেই কেমন যেনো গোলাবারুদের নলের অনুরূপ চোখ দুখানি বৃত্তের মতো করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।সন্দেহ নেই তার চোখের সামনে সারাদিন থাকলে সে সারাদিন তাকিয়ে থাকবে ।
একদিন তুনু আর টুম্পা দুজনে হাত ধরাধরি করে খেলছিলো। জুকি সেখানে হাঁটতে-হাঁটতে পৌঁছে গেলো।
হঠাৎ,কী হল কে জানে ?টুম্পার চুল ধরে সে হ্যাঁচকা এক টান দিল। জুকির এই চুল টানবার ফলে টুম্পার দুই হাত পরিমান চুল মাথা থেকে ছিঁড়ে কেমন করে জানি জুকির হাতে চলে এলো। “ টুম্পার মতো এতো সুন্দর একটা কেশবতী কন্যা টাক্কু হয়ে গেলো ?এই বলে আমরা টুম্পাকে ব্যাঙ্গাতে লাগলাম।”

জুকির চুল ছেড়ার এই ধরণের পাগলামিতে আমরা সবাই হতবাক।জুকিকে আর কোনো কিছু জিজ্ঞাসার সাহস খুঁজে পেলাম না। টুম্পাও কিছু বললো না ।
আমাদের বাসায় অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ে থাকে। দিঘী,মিনু,বিসাল,জয়,জিশান আরো অনেকে।

জুকির করা মজার একটা ঘটনা-
একদিন আমাদের বাসায় এক ভদ্রলোক এলো । এই লোকটিকে আমরা মোটেই পছন্দ করতাম না।এমনকি আমার মাও পছন্দ করতেন না।জুকি সেটা কোনোভাবে জানতে পেরেছিলো। আমরা বসে বসে পরিকল্পনা করছিলাম কীভাবে তাকে বাড়ি থেকে সরানো যায়।
আমাদের কোনো পরিকল্পনাই সফল হচ্ছিলো না ।
এবার,
জুকি গিয়ে ভালো করে চা বিস্কিট বানিয়ে আমাদের সামনে অতিথিকে পরম আপ্যায়ন করতে লাগলো।আমাদের রাগে মাথা শেষ হয়ে যাচ্ছিলো ।কারণ , আমাদের বাড়িতে বসে আমাদের অপছন্দের লোকটিকেই ও আপ্যায়ন করছে? তবু আমরা নিজেদেরকে স্থির করলাম। পরে যখন আমরা বুঝতে পারলাম যে, জিকু কী করতে চলেছে ,তখন আমাদের মুখটা একশো ওয়াট বাতির মতো জ্বলে উঠেছিল।
জিকু যখন ভদ্রলোকটির চায়ের কাপে অজান্তে হাত ধরে ভদ্রুলোকটির সাথে কথা বলার ভান করে কাপটুকু ধাক্কা দিয়ে শরীরে ফেলে দিইয়ে তার মিশন শেষ করলো তার আনন্দ আর দেখে কে!তখন জুকির সাথে সাথে আমরাও এক ধরণের পৈশাচিক খুশি অনুভব করলাম। একবার ও ভাবলাম না 43`C তাপে পুড়ে যাওয়া পরিধানকৃত কাপড়ের মালিকটির কথা। লোকটা হয়তোবা মুখে কিছু বললো না কিন্তু মনে মনে অনেক কষ্ট পাবে । আমাদের সেসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমরা যে শেষ পর্যন্ত লোকটাকে বিদায় দিলাম তাতেই আমরা খুশি। জুকি আমাদের গর্ব।জুকি আমাদের অহঙ্কার ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৭৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০৫/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast