www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

দর্শন পড়ে কোথায় চাকরি করবো

অনার্সে পড়ার ক্ষেত্রে বিষয় হিসেবে দর্শনকে আপনার পছন্দের প্রায় শেষ তালিকাতেই রেখেছিলেন, জানা কথা। চাকরীর বাজারে দর্শনের কদর নেই, এই ভেবেই আমরা এটা করি।

অথচ দর্শন বিশ্বনন্দিত শাস্ত্র। সেই প্রাচীন কাল থেকেই দর্শনের জ্ঞান মানুষকে সভ্য করতে, উন্নত ও কলাকুশলী করতে, চিন্তাধারাকে শাণিত করতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। দর্শনকে বলা হচ্ছে Mother of all sciences. জ্ঞান-বিজ্ঞানের শুরু যেই শাস্ত্র থেকে সেই বিষয়ে পড়াশোনা করে বাংলাদেশের কতিপয় ছাত্রছাত্রীকে হাহাকার করতে দেখা যায়। অপছন্দের তালিকায় থাকা এই বিষয়টি যখন তার অনার্স পাঠ্য বিষয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় তখন সে হতাশায় ভুগতে থাকে যে, দর্শনে পড়ে ভবিষ্যতে আমি কি চাকরী করব?

আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও চাকরীর বাজারের ধরণই মূলত আমাদের এই হতাশার জন্য দায়ী, বিষয় হিসেবে দর্শন না।
বহির্বিশ্বে যে দেশ যত ধনী এবং যত শিক্ষিত সেই দেশে বর্তমানে দর্শন বিষয়ের কদর তত বেশি। দর্শনকে এসব দেশ সব শিক্ষার মাতৃরূপে গ্রহণ করেছে। তাই আমরা দেখি যেসব দেশের দর্শন চর্চা যত বেশি সেসব দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও মানবিকতা তত বেশি উন্নত।

আসলে আমাদের দেশে সাবজেক্ট ভিত্তিক যে মান নির্ণয় করার প্রবণতা শুরু হয়েছে তার জন্য দর্শনের ছাত্রছাত্রীদের হতাশা আসতেই পারে। কিন্তু তার মাঝেও দর্শনের ছাত্রছাত্রীদের চাকরীর ক্ষেত্রের কমতি নেই। চাকরি পাওয়ার অনেক সুযোগ আছে এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের।

আমার এই লেখাটি মূলত দর্শন পড়ে কোথায় কোথায় চাকরি করতে পারবেন সেইসব ক্ষেত্র নিয়ে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।


১. বিসিএস:
বর্তমান বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস চাকরি হচ্ছে বিসিএস। অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের প্রতিপাদ্য হলো সরকারি এই শীর্ষ পর্যায়ের চাকরি। আর সরকারি এই শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করতে কোনো নির্দিষ্ট সাবজেক্টের স্নাতকদের অগ্রাধিকার দেয়া হয় না। ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, ব্যবসায় কিংবা দর্শন, যে সাবজেক্টেই আপনি পড়ুন না কেনো আপনার জন্য বিসিএসের দ্বার উন্মুক্ত। যদিও বিসিএসে প্রতিযোগীর সংখ্যা ও কোটাধারীদের প্রতাপে যুদ্ধজয় অসম্ভব অনেকের মতে, তবুও আপনার আত্মবিশ্বাস আর প্রয়োজনের তাগিদ আপনাকে পৌছে দিতে পারে স্বপ্নের শিখরে


২. অন্যান্য সরকারি চাকরি:

অন্যসব সরকারী চাকরির ক্ষেত্রেও একই ব্যাখ্যা প্রযোজ্য। পিএসসি’র সার্কুলারগুলোতে খেয়াল করলে দেখবেন, সেখানে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় চাওয়া হয় না। অতএব, আপনি দর্শনে পড়েও সরকারি বিভিন্ন চাকরিতে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

৩. শিক্ষকতা:
দর্শন পড়ে এই বিভাগে যেকোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার আছে সুবর্ণ সুযোগ। দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় দর্শন বিষয়। ভালো রেজাল্ট করে তাই আপনি করতে পারেন শিক্ষকতা।

তাছাড়া, সরকারি বা বেসরকারি কলেজে HSC লেভেলে লেকচারার পদেও আপনি স্নাতক পাশ করেই যোগদান করতে পারেন শিক্ষক হিসাবে।

৪. সাংবাদিকতা:
দর্শন মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছে। যুক্তি, বুদ্ধি, বিশ্লেষণী চিন্তার ধারাই হলো দর্শনের উপজীব্য।
দর্শন পড়ে আমরা বাড়তি সুবিধা হিসাবে চিন্তার স্বাধীনতা অর্জন করি। এ বিষয়ে পড়াশুনা করলে লেখালিখির ওপর দখল আনা জন্য অনেক সহজ হয়ে উঠবে।

ফলে জনপ্রিয় প্রিন্ট মিডিয়ায় চ্যালেঞ্জিং পেশায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকছে দর্শনের শিক্ষার্থীদের জন্য।

৫. গবেষক:
দেশে ও দেশের বাইরের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোয় গবেষক হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

ভাল ছাত্রের পক্ষে এখনও গবেষণার অনেক সুযোগ রয়েছে আমাদের দেশে এবং বিদেশে। ভাষার দর্শন, সমাজের দর্শন, মনের দর্শন, সংযোগের দর্শন, এমনকী ইতিহাস, সংস্কৃতি বা বিজ্ঞানের দর্শন নিয়ে কাজ করার জন্য দেশে কিংবা বিদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে দর্শনের শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি গবেষণা করতে পারেন। কগ্নিটিভ সায়েন্সের মতো বিষয়ে দর্শনের জন্য নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। যেখানেও অনেক সুযোগ রয়েছে।

একটু চোখ-কান খোলা রাখলে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে যাওয়ার সুযোগও হাতছানি দিচ্ছে দর্শনের শিক্ষার্থীদের।

৬. কন্সালটেন্ট:
ব্যবসায়ীক নীতি নির্ধারণ, ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধান ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিজেই খুলে ফেলতে পারেন একটি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান।

৭. আইনজীবী:
আপনি চাইলে পাশাপাশি আইন পড়াশুনার মাধ্যমে একজন আইনজীবী হতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার দর্শন বিষয়ের জ্ঞান আপনাকে অনেকটাই সাহায্য করবে।

৮. সরকারি ব্যাংক:
ব্যাংকার হতে চান? ভাবছেন দর্শন পড়ে কিভাবে ব্যাংকার হবেন? কোনো ব্যাপারই নয়। চাইলেই সম্ভব।

সরকারি ব্যাংকগুলোতে দর্শন পড়েও চাকরির সুযোগ রয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোতে নিয়োগের সময় যেকোন বিষয়ে স্নাতক চাওয়া হয়। তাই হতে পারেন ব্যাংকার।

৯. বেসরকারি প্রতিষ্ঠান:
যেকোন বেসরকারি জনকল্যাণমূলক সংস্থাগুলোতে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে। দেশে এখন অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা এনজিও ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে চাকরির ক্ষেত্রে দর্শন কোন প্রতিবন্ধকতা হিসেবে আসেনা বরং সুযোগ হয়ে আসে। তাই আপনি এখানেও আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

১০. অন্যান্য:
এছাড়াও যেসকল চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগের সময় কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর স্নাতক চাওয়া হয় না সেসব চাকরিও করার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে, সাবজেক্ট এর তুলনায় লক্ষ্য পূরনের পরিকল্পনা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

তাছাড়া, প্রত্যেকটা মানুষের ভিতরেই এমন কিছু আলাদা প্রতিভা বা ম্যাটার থাকে, যা দ্বারা সে পরবর্তী জীবনে উন্নতি করতে পারে সহজেই।কেউ রাইটার, কেউ ফটোগ্রাফার, চিত্রনির্মাতা, মডেল, অভিনেতা, আঁকিয়ে ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই হতাশা নয়, বরং আত্মবিশ্বাস ও প্রয়োজনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

পড়াশুনা কখনই বিফলে যায় না। আপনি যে বিষয়েই পড়াশুনা করেন না কেন তা কতটুকু কাজে লাগাতে পারছেন, সেটাই মুখ্য।

শুধুমাত্র ইংরেজি,গনিত, কমার্স ও বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করলেই যে আপনার চাকরির নিশ্চয়তা রয়েছে এমনও কিন্তু নয়। বিষয়ের পাশাপাশি আপনার বাস্তবিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাও একটা বড় প্রভাবক।

কারণ আপনার চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার ব্যাবহারিক জ্ঞান ও সৃজনশীলতা দেখেই আপনাকে নির্বাচন করা হবে। স্বপ্ন দেখুন, আত্মবিশ্বাস গড়ুন, সাফল্য আসবেই।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ১৮০৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/১১/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ভাল লাগল।
  • সোলাইমান ১৮/১১/২০১৭
    অনেক অনেক সুন্দর উপস্থাপনা .. অনেক ভালো লাগলো। . শুভেচ্ছা জানবেন প্রিয়
  • সুজয় সরকার ১৭/১১/২০১৭
    মূল্যবান পরামর্শ
  • অনেক যুক্তিনির্ভর লেখা।
  • Aoushnik ১৭/১১/২০১৭
    Bhalo ekta lekha,bondhu.
 
Quantcast