শীতের মিষ্টি রোদ
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় "একটি শীতের দৃশ্য" কবিতায় শীতের রোদের কথা বলতে গিয়ে বলেন
"মায়ামমতার মতো এখন শীতের রোদ
মাঠে শুয়ে আছে
আর কেউ নেই "
মায়ামমতাই বটে শীতের রোদ। বাংলার চলমান সৌন্দর্য আর ঋতুবদলের পটকালে যখন শীতের হাওয়া আমাদের গাঁয়ে এসে লাগে, তখন একটুখানি উষ্ণতার জন্য আমরা কত কি-ই না করি। শীত আসার আগেভাগেই মোটামোটা গরম কাপড় মার্কেটে আসতে থাকে আর আমরা শীত তাড়াতে সেগুলো কিনে ফেলি। লেপ-কম্বলের তলে দিনের অধিকাংশ সময় পার করে দেই শীতের ভয়ে। বেচারা শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে শহুরবাসী তো কোন ছাড়, গ্রামের মানুষেরা শীত আসার অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে দেয়। শীতে পিঠা-চিড়া বানাতে হবে, তার জন্য ধান,চাল,আটা মজুত করা শুরু হয়। প্রতি শীতের সকালে উঠে উঠোনে আগুন জ্বালিয়ে পোহাতে হবে, তার জন্য শুকনো লাকড়ির জোগাড় করতে হয়। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে ও শীতকে উপভোগ্য করতে আমরা বাঙ্গালীরা অনেক কিছুই করে থাকি।
একটুখানি ঠাণ্ডাঠাণ্ডা আবহাওয়া দেখলেই আমরা যেটা করি তা হলো শীতকালের মায়ামমতার মত মিষ্টি রোদ পোহানো। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে যেখানে রোদ আসে সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রোদ পোহাই। দুপুরবেলা গোসলের পর একটু রোদে না দাঁড়ালে জীবন সাথে থাকে না বোধহয়, এমন লাগে আমাদের। বিকালে শেষবেলাকার সুর্যতাপ গাঁয়ে না মাখালে রাতটা যে শীতে কাহিল হবো, তাই রোদের মিষ্টি আমেজ গাঁয়ে মেখে শীতের সুখে মেতে উঠি আমরা।
আমরা শীতকালে হরহামেশাই দেখি যে, কেউ রাস্তা দিয়ে হাটার সময় যে পাশে রোদ থাকে সেই পাশ দিয়েই হাটে। মোবাইল ফোনে কথা বলতেছে, রোদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। রিকশায় কেউ কোথায় যাচ্ছে, হুডটা না নামিয়ে বরং রোদ মাখাতে মাখাতে যেতেই ভালো লাগে।
শীতের সকালে চায়ের পেয়ালা হাতে অনেককেই বারান্দায় বসে থাকতে দেখি একটু উষ্ণতার জন্য। কেউ কেউ পেপার নিয়ে রোদে বসে পড়েন। গ্রামে দেখা যায় শীতের রোদে বসে লোকজন জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিচ্ছে, মায়েরা তাদের সন্তানদের রোদে বসিয়ে রাখে এবং দুপুরে বাচ্চাদের গোসল করিয়ে দেয়ার পর তেল মাখিয়ে দিয়ে রোদে দাড়া করিয়ে রাখা হয়। শীতের এসব দৃশ্যের পেছনে কারণ একটাই, আর তা হচ্ছে শীতের মিষ্টি রোদ থেকে উষ্ণতা আরোহণের আকাঙ্ক্ষা। আমরা বাঙ্গালীরা একটু শীতেই কাবু হয়ে যাই, তাই শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে শীতের মিষ্টি রোদ গাঁয়ে মাখাতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
কিন্তু শীতের এই মিষ্টি রোদ কি আসলেই মিষ্টি? এরকম প্রশ্নের জবাবে কি বলবো আমরা? না, শীতের এই উপভোগ্য রোদ শুধু উপকারীই নয় বরং ক্ষতিকর।
আমরা জানি এমনিতেই রোদ ত্বকের অন্যতম শত্রু। রোদ ত্বককে পুড়িয়ে দেয়। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতের সময় রোদের ক্ষতিকর প্রভাব বেশি থাকে। যদিও শীতের সময় রোদের প্রখরতা কম থাকে, কিন্তু বায়ুমন্ডলে ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি যাকে বাংলায় বলে অতিবেগুনি রশ্মি এটার পরিমান তখন বেশি থাকে।
শীতের সময় বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকার কারণেই আলট্রাভায়োলেট রশ্মি তুলনামূলক কম জলীয়বাষ্পের বাধা অতিক্রম করে ত্বকের সংস্পর্শে পৌছে। বছরের অন্যান্য সময় বাতাসের জলীয়বাষ্পের পরিমান বেশি থাকার কারণে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি জলীয়বাষ্পের বাধা অতিক্রম করে আসার ফলে এর তেজ অনেকটা কমে যায়।
আর শীতে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি অনেকটা সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসে। তাই শীতের রোদে ত্বকের ক্ষতিও বেশি হয় । ত্বক মলিন ও গাড় হয়ে যায়। কাজেই শীতের সময় রোদের মধ্যে বেশি থাকার জন্য ত্বকের ক্ষতি আরও বেশি হয়।
অন্য দিকে গরমকালে রোদের প্রখরতা বেশি থাকে বলে লোকজন এমনিতেই রোদ এরিয়ে চলে এবং তখন রোদের আলট্রাভায়োলেট রশ্মির তেজও থাকে কম। ফলে গরমকালে রোদে ঘুরলে ত্বক শীতের সময়ের চেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের শীতের রোদ হলো মায়ামমতার মত, উষ্ণতায় আগলে রাখে শীতল জীবন। কিন্তু এই মায়ামমতার পিছনে রাক্ষুসে রুপটাও এবার দেখতে হবে যে। কারণ, শীতকালের রোদের এই আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এই রশ্মি থেকে ত্বককে যত দূরে রাখা যাবে, ততই মঙ্গল। ত্বকের সজীবতা ও হালকা বর্ণ ধরে রাখার জন্য শীতের সময় রোদ এরিয়ে চলায় ভাল। শীতের রোদকে যতই আরামের মনে হোক না কেন, তা আসলেই ত্বকের ক্ষতি করছে।
"মায়ামমতার মতো এখন শীতের রোদ
মাঠে শুয়ে আছে
আর কেউ নেই "
মায়ামমতাই বটে শীতের রোদ। বাংলার চলমান সৌন্দর্য আর ঋতুবদলের পটকালে যখন শীতের হাওয়া আমাদের গাঁয়ে এসে লাগে, তখন একটুখানি উষ্ণতার জন্য আমরা কত কি-ই না করি। শীত আসার আগেভাগেই মোটামোটা গরম কাপড় মার্কেটে আসতে থাকে আর আমরা শীত তাড়াতে সেগুলো কিনে ফেলি। লেপ-কম্বলের তলে দিনের অধিকাংশ সময় পার করে দেই শীতের ভয়ে। বেচারা শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে শহুরবাসী তো কোন ছাড়, গ্রামের মানুষেরা শীত আসার অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে দেয়। শীতে পিঠা-চিড়া বানাতে হবে, তার জন্য ধান,চাল,আটা মজুত করা শুরু হয়। প্রতি শীতের সকালে উঠে উঠোনে আগুন জ্বালিয়ে পোহাতে হবে, তার জন্য শুকনো লাকড়ির জোগাড় করতে হয়। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে ও শীতকে উপভোগ্য করতে আমরা বাঙ্গালীরা অনেক কিছুই করে থাকি।
একটুখানি ঠাণ্ডাঠাণ্ডা আবহাওয়া দেখলেই আমরা যেটা করি তা হলো শীতকালের মায়ামমতার মত মিষ্টি রোদ পোহানো। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে যেখানে রোদ আসে সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রোদ পোহাই। দুপুরবেলা গোসলের পর একটু রোদে না দাঁড়ালে জীবন সাথে থাকে না বোধহয়, এমন লাগে আমাদের। বিকালে শেষবেলাকার সুর্যতাপ গাঁয়ে না মাখালে রাতটা যে শীতে কাহিল হবো, তাই রোদের মিষ্টি আমেজ গাঁয়ে মেখে শীতের সুখে মেতে উঠি আমরা।
আমরা শীতকালে হরহামেশাই দেখি যে, কেউ রাস্তা দিয়ে হাটার সময় যে পাশে রোদ থাকে সেই পাশ দিয়েই হাটে। মোবাইল ফোনে কথা বলতেছে, রোদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। রিকশায় কেউ কোথায় যাচ্ছে, হুডটা না নামিয়ে বরং রোদ মাখাতে মাখাতে যেতেই ভালো লাগে।
শীতের সকালে চায়ের পেয়ালা হাতে অনেককেই বারান্দায় বসে থাকতে দেখি একটু উষ্ণতার জন্য। কেউ কেউ পেপার নিয়ে রোদে বসে পড়েন। গ্রামে দেখা যায় শীতের রোদে বসে লোকজন জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিচ্ছে, মায়েরা তাদের সন্তানদের রোদে বসিয়ে রাখে এবং দুপুরে বাচ্চাদের গোসল করিয়ে দেয়ার পর তেল মাখিয়ে দিয়ে রোদে দাড়া করিয়ে রাখা হয়। শীতের এসব দৃশ্যের পেছনে কারণ একটাই, আর তা হচ্ছে শীতের মিষ্টি রোদ থেকে উষ্ণতা আরোহণের আকাঙ্ক্ষা। আমরা বাঙ্গালীরা একটু শীতেই কাবু হয়ে যাই, তাই শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে শীতের মিষ্টি রোদ গাঁয়ে মাখাতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
কিন্তু শীতের এই মিষ্টি রোদ কি আসলেই মিষ্টি? এরকম প্রশ্নের জবাবে কি বলবো আমরা? না, শীতের এই উপভোগ্য রোদ শুধু উপকারীই নয় বরং ক্ষতিকর।
আমরা জানি এমনিতেই রোদ ত্বকের অন্যতম শত্রু। রোদ ত্বককে পুড়িয়ে দেয়। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতের সময় রোদের ক্ষতিকর প্রভাব বেশি থাকে। যদিও শীতের সময় রোদের প্রখরতা কম থাকে, কিন্তু বায়ুমন্ডলে ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি যাকে বাংলায় বলে অতিবেগুনি রশ্মি এটার পরিমান তখন বেশি থাকে।
শীতের সময় বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকার কারণেই আলট্রাভায়োলেট রশ্মি তুলনামূলক কম জলীয়বাষ্পের বাধা অতিক্রম করে ত্বকের সংস্পর্শে পৌছে। বছরের অন্যান্য সময় বাতাসের জলীয়বাষ্পের পরিমান বেশি থাকার কারণে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি জলীয়বাষ্পের বাধা অতিক্রম করে আসার ফলে এর তেজ অনেকটা কমে যায়।
আর শীতে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি অনেকটা সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসে। তাই শীতের রোদে ত্বকের ক্ষতিও বেশি হয় । ত্বক মলিন ও গাড় হয়ে যায়। কাজেই শীতের সময় রোদের মধ্যে বেশি থাকার জন্য ত্বকের ক্ষতি আরও বেশি হয়।
অন্য দিকে গরমকালে রোদের প্রখরতা বেশি থাকে বলে লোকজন এমনিতেই রোদ এরিয়ে চলে এবং তখন রোদের আলট্রাভায়োলেট রশ্মির তেজও থাকে কম। ফলে গরমকালে রোদে ঘুরলে ত্বক শীতের সময়ের চেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের শীতের রোদ হলো মায়ামমতার মত, উষ্ণতায় আগলে রাখে শীতল জীবন। কিন্তু এই মায়ামমতার পিছনে রাক্ষুসে রুপটাও এবার দেখতে হবে যে। কারণ, শীতকালের রোদের এই আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এই রশ্মি থেকে ত্বককে যত দূরে রাখা যাবে, ততই মঙ্গল। ত্বকের সজীবতা ও হালকা বর্ণ ধরে রাখার জন্য শীতের সময় রোদ এরিয়ে চলায় ভাল। শীতের রোদকে যতই আরামের মনে হোক না কেন, তা আসলেই ত্বকের ক্ষতি করছে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।