www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পথশিশু ও আমরা

আশিক গত ভোর বেলা থেকেই সামান্য খাবারের আশায় অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। কিন্তু তার ভাগ্যে জোটেনি সামান্য খাবার। সে রাস্তার একপাশ ধরে হাটছে, আর কি জানি বিড়বিড় করছে আপন মনে। আজও দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো প্রকৃতির নিয়মে। খাবার খুঁজতে খুঁজতে আশিক আরও ক্লান্ত হয়ে যায়। ক্ষিধের জ্বালা চেপে রেখেই, পানি খেয়ে পেটকে সান্ত্বনা দিয়ে সে ফুটপাতের উপর শুয়ে পড়ে।
আর তার স্মৃতিপটে ১ টা ঘটনা ভেসে ওঠে।
সে যে এলাকায় থাকে,ঐ এলাকার এক মহিলাকে সে খাবার চাওয়ার সুবাদে খালাম্মা ডাকে। তো ঐ খালাম্মা তাকে রোজ ২ বেলা খেতে দিত, তিনি তাকে একদিন খুব যত্নের সহিত নিজ হাতে খাইয়েছিলেন । আশিক খুব তৃপ্তির সাথে খেয়েছিল ঐদিন। খাওয়া শেষে আশিক খালাম্মাকে প্রশ্ন করে, আচ্ছা খালাম্মাঃ পৃথিবীতে সব প্রাণী একসঙ্গে থাকে, এই যেমন মাছের সাথে মাছ, পাখির সাথে পাখি। তাদের খাবারের ব্যবস্থাও আছে। তাহলে আমি খাবার পাইনা কেন?? আমি কেন মানুষদের থেকে আলাদা?
খালাম্মা কোনো উত্তর খুঁজে পান না।
বেশ কিছুদিন হয়েছে, আশিকের ডাকা সেই খালাম্মা ঐ বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। হয়তো দূরে অন্য কোথাও থাকেন তিনি। আশিক তখন নিজেকেই প্রবোধ দেয়ঃ আমি যদি ঐ খালাম্মার আত্মীয়স্বজন কেউ হতাম, তাহলে হয়তো তিনি আমার খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়ে যেতেন।
কথাগুলো চিন্তা করতে করতে আশিক ঘুমিয়ে পড়ে।
ভোর হয়, ফজরের আযানের ধ্বনিতে আশিকের ঘুম ভাঙ্গে।
প্রচন্ড ক্ষিধে নিয়ে আশিক ঘুম থেকে ওঠে। হাটতে হাটতে সে হাজির হয় শহরের ময়লা ফেলার স্থানে।
ময়লা ফেলার স্থানে গিয়ে রোজকার মতো আজও সে বাসি খাবারের সন্ধান করতে থাকে। হঠাত একটি কুকুর, তার পাশে দেখতে পায় সে। আশিক লক্ষ্য করে, কুকুরটিও খাবারের সন্ধানেই এখানে এসেছে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে আশিক একটি বিরিয়ানির প্যাকেট পায়। প্যাকেট খুলে দেখে যথেষ্ট খাবার প্যাকেটে রয়েছে। আশিকের চোখে প্রাপ্তির অনাবিল হাসি ফুটে ওঠে। প্যাকেট নিয়ে ময়লার স্থান ত্যাগ করার সময় কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। কুকুরের ডাকে আশিক মোটেও ভয় পায়নি। কারণ সে বুঝতে পেরেছে, কুকুরটিও তার মতো ক্ষুধার্ত। তাই সে কুকুরটিকে আয় আয় বলে কাছে ডাকে।
আশিক প্যাকেট থেকে অর্ধেক পরিমাণ বাসি বিরিয়ানী কুকুরটিকে খেতে দেয়, এবং বাকিটুকু সে নিজে খাওয়া শুরু করে। খাওয়ার একপর্যায়ে আশিক লক্ষ্য করে, কুকুরটির দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে। আশিক বুঝতে পারে অনাহারে থাকার পর খাবার পেয়ে খুশিতে কান্না করছে কুকুরটি। তখন সে কুকুরটির পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়, আর বলতে থাকেঃ আমরা পঁচা বাসি খাবারের জন্যই জন্মেছি হয়তো। আমার ক্ষিধের জ্বালা অন্য কেউ বুঝতে না পারলেও আমি তোর কষ্টটুকু বুঝেছি "।
কথা বলতে বলতেই খাওয়া শেষ করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে আশিক। হয়তো তাকে আগামীকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আরেকটি বাসি পঁচা খাবারের জন্য। হয়তো কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব হবেনা আশিকের মত পথশিশুদের এক বেলা খাবার দেওয়ার। তবুও আশিকেরা বেঁচে থাকুক, ভাল থাকুক।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১০৯৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০৭/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast