বৈচিত্র্যময় জীবন
বৈচিত্র্যময় জীবন
________________
আসমার চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক কেঁদেছে সে। নবম শ্রেনীতে থাকতে বছর পাঁচেক আগে দু কদম দূরের পাশের বাড়ির গ্রামের সর্দারের বড় ছেলের সাথে বিয়ে হয় তার। মেয়ে ছোট হলেও তারা এমন একটা সম্ভ্রান্ত পরিবারের প্রস্তাব হাতছাড়া করতে চাইল না। একে-ত তাদের বংশও খারাপ না, আর ছেলেও স্মার্ট চরিত্রও ভাল, আর তাদের পরিবার প্রভাবশালীও বটে, আবার তাদের কোন দাবিও নেই। এমন সুযোগ বারবার আসেনা তাই দেরী না করে ধুমধাম করে মেয়েটাকে তুলে দিল তাদের কাছে। প্রথম ক'মাস ভালই চলল কিন্তু মাসকয়েক পরেই শুরু হল অশান্তি। আসলে মেয়েটা ছোট বিধায় সংসার সম্বন্ধে তেমন কিছু বুঝত-না, তাই অনেক কিছুই উল্টাপাল্টা করে ফেলতো। প্রথম ক'মাস এসব মেনে নিলেও পরে তাকে এসবের জন্য অনেক বকা শুনতে হত। সে এসব সহ্য করে থাকত আবার লুকিয়ে লুকিয়ে কান্নাও করতো। এভাবেই কেটে যেতে লাগল তার দিন। দিন যতই যাচ্ছে তার বকা শুনার মাত্রাও ক্রমাগত বাড়ছে। তবুও সব সহ্য করে থাকত এই ভেবে যে বিয়ে তো একবারই হয়। প্রায় সময় তার শাশুড়ি তাকে বকে। মেয়ে বাড়ি থেকে যৌতুক নেয়নি বলে তার গলার আওয়াজ আরো বড়। কিছু চেয়ে নেয়নি ঠিকই কিন্তু মেয়ের বাবা মেয়ের প্রয়োজনীয় সবই দিয়েছে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে। একটা মেয়ে কতক্ষণ আর শুনে থাকতে পারে তার বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা অভিযোগ, রাগের বশে যদি কোন কথার প্রতিবাদ করে তাহলে, ছেলে সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে স্ত্রীর মুখের মিষ্টি কথা শুনার আগেই তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচার দেয় মা। আরো কিছু বাড়িয়ে বলে, বাড়িয়ে বলাই তো মানুষের স্বভাব। ছেলেও মা'র কথা শুনে স্ত্রীর সাথে মুখ কাল করে রাখে, ভালো করে কথাও বলেনা। এমনিতেই বাড়ির কেউ ভালো করে কথা বলেনা তার উপর স্বামীও মুখ কাল করে রাখে; ব্যাপার-টা খুব কষ্ট দিত তাকে। কিছুদিন পর মুখ কাল করে থাকাটা আর মুখ কালোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা নেমে আসে চড় থাপ্পড়ের উপর। এভাবেই দিন কাটতে থাকে আসমার। এর মধ্যেই কোল জুড়ে নেমে আসে ফুটফুটে একটা ছেলে। ছেলেটার প্রতি কারো আদরের কমতি নেই কিন্তু ছেলের মা যে দিনের পর দিন না খেয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে সেদিকে কারো লক্ষ্য নেই। কোন কিছুর কমতি নেই ঠিকই কিন্তু আসমার গলা দিয়ে যযে নিচে নামেনা খানাগুলো। এত কিছুর মাঝে কি করে ঢুকবে খানা!!? বাড়িটাকে তার জাহান্নামের মত মনে হয়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এই বাড়ি ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতে যেখানে কেউ তাকে চিনবেনা, বকবেনা মিথ্যা দোষারোপ করবেনা। আবার মাঝে মাঝে আত্মহত্যা করার কথাও ভাবে কিন্তু ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুই করতে পারেনা সে। সব ভুলে আবার নতুন জীবন শুরু করতে চায়। কিন্তু দুদিন পর আবার অসহ্য হয়ে উঠে।
একদিন দুষ্টুমি করে ননদটিকে আস্তে একটা থাপ্পড় দেয়, কিন্তু এই থাপ্পড়টিই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। ননদটি এমনিতে ভাবির জান প্রানের বান্ধবী হলেও মা'র কাছে বিচার দিতে ভুলল না ঠিকই। মা দিল ছেলের কানে সব। আর ছেলেও তার বোনকে মারার অপরাধে ডিভোর্স দিয়ে দিল আসমাকে। যার জন্য সে এত কষ্ট সহ্য করল সে একবারও ভাবল-না যার সাথে এতদিন সংসার করল তার কথা। অন্তত ছেলের কথা তো ভাবার উচিৎ ছিল। ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিল দুটি জীবন।
শাশুড়ি আর ননদের কারণে ভেঙ্গে গেল একটা সোনার সংসার। এভাবে কত শত সংসার ভেঙ্গেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।
আসমা চলে গেল তার বাবার বাড়ি। এভাবেই হয়ে গেল একটি সোনার সংসারের সমাপ্তি।
আসমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় ঝিলিক বাতি জ্বলছে ঝিকমিক করে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দুষ্টুমি করছে সেখানে। আসমা ডুবে আছে চিন্তার সাগরে। ফিরে গেছে পাঁচ বছর আগের এই দিনটিতে। সেদিনও এরূপ ঝিকমিক বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছিল রাস্তাটা। তবে সেদিন আর আজকের দিনের পার্থক্য হল সেদিন আসমার মুখে ছিল হাসি আর আজ তার মুখটা বৈশাখের কাল মেঘের ন্যায় আঁধার হয়ে আছে। সেদিন তার দু গন্ডদেশ বেয়ে গড়িয়ে পরেছিল আনন্দাশ্রু আর আজ...। সেদিন এই রাস্তা দিয়ে বরের গাড়ি এসেছিল তাদের বাড়ি আর আজ যাবে অন্য কারো বাড়িতে।
ক'দিন পর হয়ত আসমারও বিয়ে হয়ে যাবে বিপুল পরিমান যৌতুকের বিনিময়ে। বিয়ে হওয়া না হওয়া উভয়কূলেই সংকট, যদি তার বিয়ে হয়ে যায় তাহলে তার ছেলেটি মাতৃপিতৃর পরিচয়হীন বড় হয়ে হয়ত বখাটে হয়ে যাবে। আমরাই এদের তৈরি করি আর তাই আমরাই এর ভুক্তভোগী। আর যদি সে বিয়ে না করে তাহলে হয়ত একসময় তার আদরের ছোট ভাই যে এখন তার জন্য জানপ্রান সেই হয়ত একদিন তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবে কারণ এখন তার বাবা মা আছে তাই কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা কিন্তু মা বাবাতো আর চিরদিন থাকবেনা।
তার যত্ন করে সাজানো ঘরে তার পরিবর্তে অন্য কোন মেয়ে ফুলসজ্জার রাত কাটাবে।
আসমারও এতদিনে বিয়ে হয়ে যেত যদি সে না খেয়ে, না কান্না করে তার আকর্ষনীয় শরীর নষ্ট না করত। আজ তার মনে প্রশ্ন জাগে কেন সে তার জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিল তার জন্য; যে তার ভালবাসার মূল্য দিতে জানেনা!!?? আর কেনই বা আমাদের সুশীল সমাজ ছেলে আর মেয়ের মাঝে এত পার্থক্য করে??
একটা ছেলের কেন দ্বিতীয় বিয়ে করতে তেমন কোন ভোগান্তি পোহাতে হয়না? বিপরীত পক্ষে একটা মেয়ের কেন এতসব ভোগান্তি পোহাতে হয়!!?
কোন উত্তর-ই আজ তার বুকের আগুন নিভাতে পারবেনা তবে সে অশ্রুর বন্যা বইয়ে বুকের আগুন নিভানোর বৃথা চেষ্টা করবে।
সে জানে তার এই চোখের জলের মূল্য কেউ না দিলেও একজন দিবে। তাই সে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর "জাযাকুমুল্লাহ" (আল্লাহ তোমাদের এর প্রতিদান দিক) বলে দুআ করে। তার চোখের পানি মিশ্রিত দুআ বুঝি একবারও আল্লাহর দরবারে কবুল হবেনা??
শাশুড়িরা কেন পারেনা ছেলের বউকে মেয়ের মত করে মেনে নিতে!!? মেয়েটাও তো তার মা- বাবা আত্মীয়স্বজন সব ছেড়ে আপনাকে নিজের মা মনে করে এ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
আপনার নিজেরও তো মেয়ে আছে, সেও তো একদিন পরের বাড়ি যাবে যদি সেও এরকম ফিরে আসে একদিন আপনি পরবেন তা মেনে নিতে??
আপনি নিজেও তো একদিন এভাবে পরের বাড়ি এসেছিলেন তারা যদি আপনার সাথে এরূপ আচরন করতো!!??
আসমার গন্ডদেশ বেয়ে এখনো অশ্রু গড়িয়ে পরছে। চেহারাটাও আগের মত ভরাট নেই কেমন জানি উচু নিচু মনে হচ্ছে। কতদিন না খেয়ে ছিল কে জানে!!?
দাদু-নানু অনেকেই কত বুঝিয়েছে যে, "টাকা থাকলে ছেলের অভাব হয়না, আমরা তোকে আরো ভাল যায়গায় বিয়ে দিব তোর ছেলেটা আর একটু বড় হলে।"
কোন সান্ত্বনাই আজ তার মনের আগুন নেভাতে পারছেনা, ধীরে ধীরে রাত যত গভীর হচ্ছে তার কষ্টও আরো বেড়ে যাচ্ছে। নতুন মেয়েটার প্রতি তার খুব হিংসা হয়, সে তার যায়গা-টা দখল করে নিবে বলে।
উভয়েই থাকবে আজ নির্ঘুম। তবে কেউ জেগে জেগে নতুন সঙ্গিকে নিয়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখে দেখে জোৎস্নাভরা রাতটা কাটিয়ে সকাল করবে আর অন্যজনকে জাগিয়ে রাখবে তার পাহাড়সম একবুক কষ্টগুলো।
কিছুদিন পর হয়ত ঘটবে নতুন কোন গল্পের সূচনা। এভাবেই এই জীবনের সাঙ্গ ঘটবে একদিন, নিথর পড়ে রবে দেহটা। কিছুদিন পর সবাই ভুলে যাবে তাকে। আবার ব্যস্ত হয়ে যাবে যে যার স্বার্থ উদ্ধারে। কতই না বৈচিত্র্যময় এই জীবন!!!
________________
আসমার চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক কেঁদেছে সে। নবম শ্রেনীতে থাকতে বছর পাঁচেক আগে দু কদম দূরের পাশের বাড়ির গ্রামের সর্দারের বড় ছেলের সাথে বিয়ে হয় তার। মেয়ে ছোট হলেও তারা এমন একটা সম্ভ্রান্ত পরিবারের প্রস্তাব হাতছাড়া করতে চাইল না। একে-ত তাদের বংশও খারাপ না, আর ছেলেও স্মার্ট চরিত্রও ভাল, আর তাদের পরিবার প্রভাবশালীও বটে, আবার তাদের কোন দাবিও নেই। এমন সুযোগ বারবার আসেনা তাই দেরী না করে ধুমধাম করে মেয়েটাকে তুলে দিল তাদের কাছে। প্রথম ক'মাস ভালই চলল কিন্তু মাসকয়েক পরেই শুরু হল অশান্তি। আসলে মেয়েটা ছোট বিধায় সংসার সম্বন্ধে তেমন কিছু বুঝত-না, তাই অনেক কিছুই উল্টাপাল্টা করে ফেলতো। প্রথম ক'মাস এসব মেনে নিলেও পরে তাকে এসবের জন্য অনেক বকা শুনতে হত। সে এসব সহ্য করে থাকত আবার লুকিয়ে লুকিয়ে কান্নাও করতো। এভাবেই কেটে যেতে লাগল তার দিন। দিন যতই যাচ্ছে তার বকা শুনার মাত্রাও ক্রমাগত বাড়ছে। তবুও সব সহ্য করে থাকত এই ভেবে যে বিয়ে তো একবারই হয়। প্রায় সময় তার শাশুড়ি তাকে বকে। মেয়ে বাড়ি থেকে যৌতুক নেয়নি বলে তার গলার আওয়াজ আরো বড়। কিছু চেয়ে নেয়নি ঠিকই কিন্তু মেয়ের বাবা মেয়ের প্রয়োজনীয় সবই দিয়েছে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে। একটা মেয়ে কতক্ষণ আর শুনে থাকতে পারে তার বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা অভিযোগ, রাগের বশে যদি কোন কথার প্রতিবাদ করে তাহলে, ছেলে সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে স্ত্রীর মুখের মিষ্টি কথা শুনার আগেই তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচার দেয় মা। আরো কিছু বাড়িয়ে বলে, বাড়িয়ে বলাই তো মানুষের স্বভাব। ছেলেও মা'র কথা শুনে স্ত্রীর সাথে মুখ কাল করে রাখে, ভালো করে কথাও বলেনা। এমনিতেই বাড়ির কেউ ভালো করে কথা বলেনা তার উপর স্বামীও মুখ কাল করে রাখে; ব্যাপার-টা খুব কষ্ট দিত তাকে। কিছুদিন পর মুখ কাল করে থাকাটা আর মুখ কালোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা নেমে আসে চড় থাপ্পড়ের উপর। এভাবেই দিন কাটতে থাকে আসমার। এর মধ্যেই কোল জুড়ে নেমে আসে ফুটফুটে একটা ছেলে। ছেলেটার প্রতি কারো আদরের কমতি নেই কিন্তু ছেলের মা যে দিনের পর দিন না খেয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে সেদিকে কারো লক্ষ্য নেই। কোন কিছুর কমতি নেই ঠিকই কিন্তু আসমার গলা দিয়ে যযে নিচে নামেনা খানাগুলো। এত কিছুর মাঝে কি করে ঢুকবে খানা!!? বাড়িটাকে তার জাহান্নামের মত মনে হয়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এই বাড়ি ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতে যেখানে কেউ তাকে চিনবেনা, বকবেনা মিথ্যা দোষারোপ করবেনা। আবার মাঝে মাঝে আত্মহত্যা করার কথাও ভাবে কিন্তু ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুই করতে পারেনা সে। সব ভুলে আবার নতুন জীবন শুরু করতে চায়। কিন্তু দুদিন পর আবার অসহ্য হয়ে উঠে।
একদিন দুষ্টুমি করে ননদটিকে আস্তে একটা থাপ্পড় দেয়, কিন্তু এই থাপ্পড়টিই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। ননদটি এমনিতে ভাবির জান প্রানের বান্ধবী হলেও মা'র কাছে বিচার দিতে ভুলল না ঠিকই। মা দিল ছেলের কানে সব। আর ছেলেও তার বোনকে মারার অপরাধে ডিভোর্স দিয়ে দিল আসমাকে। যার জন্য সে এত কষ্ট সহ্য করল সে একবারও ভাবল-না যার সাথে এতদিন সংসার করল তার কথা। অন্তত ছেলের কথা তো ভাবার উচিৎ ছিল। ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিল দুটি জীবন।
শাশুড়ি আর ননদের কারণে ভেঙ্গে গেল একটা সোনার সংসার। এভাবে কত শত সংসার ভেঙ্গেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।
আসমা চলে গেল তার বাবার বাড়ি। এভাবেই হয়ে গেল একটি সোনার সংসারের সমাপ্তি।
আসমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় ঝিলিক বাতি জ্বলছে ঝিকমিক করে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দুষ্টুমি করছে সেখানে। আসমা ডুবে আছে চিন্তার সাগরে। ফিরে গেছে পাঁচ বছর আগের এই দিনটিতে। সেদিনও এরূপ ঝিকমিক বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছিল রাস্তাটা। তবে সেদিন আর আজকের দিনের পার্থক্য হল সেদিন আসমার মুখে ছিল হাসি আর আজ তার মুখটা বৈশাখের কাল মেঘের ন্যায় আঁধার হয়ে আছে। সেদিন তার দু গন্ডদেশ বেয়ে গড়িয়ে পরেছিল আনন্দাশ্রু আর আজ...। সেদিন এই রাস্তা দিয়ে বরের গাড়ি এসেছিল তাদের বাড়ি আর আজ যাবে অন্য কারো বাড়িতে।
ক'দিন পর হয়ত আসমারও বিয়ে হয়ে যাবে বিপুল পরিমান যৌতুকের বিনিময়ে। বিয়ে হওয়া না হওয়া উভয়কূলেই সংকট, যদি তার বিয়ে হয়ে যায় তাহলে তার ছেলেটি মাতৃপিতৃর পরিচয়হীন বড় হয়ে হয়ত বখাটে হয়ে যাবে। আমরাই এদের তৈরি করি আর তাই আমরাই এর ভুক্তভোগী। আর যদি সে বিয়ে না করে তাহলে হয়ত একসময় তার আদরের ছোট ভাই যে এখন তার জন্য জানপ্রান সেই হয়ত একদিন তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবে কারণ এখন তার বাবা মা আছে তাই কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা কিন্তু মা বাবাতো আর চিরদিন থাকবেনা।
তার যত্ন করে সাজানো ঘরে তার পরিবর্তে অন্য কোন মেয়ে ফুলসজ্জার রাত কাটাবে।
আসমারও এতদিনে বিয়ে হয়ে যেত যদি সে না খেয়ে, না কান্না করে তার আকর্ষনীয় শরীর নষ্ট না করত। আজ তার মনে প্রশ্ন জাগে কেন সে তার জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিল তার জন্য; যে তার ভালবাসার মূল্য দিতে জানেনা!!?? আর কেনই বা আমাদের সুশীল সমাজ ছেলে আর মেয়ের মাঝে এত পার্থক্য করে??
একটা ছেলের কেন দ্বিতীয় বিয়ে করতে তেমন কোন ভোগান্তি পোহাতে হয়না? বিপরীত পক্ষে একটা মেয়ের কেন এতসব ভোগান্তি পোহাতে হয়!!?
কোন উত্তর-ই আজ তার বুকের আগুন নিভাতে পারবেনা তবে সে অশ্রুর বন্যা বইয়ে বুকের আগুন নিভানোর বৃথা চেষ্টা করবে।
সে জানে তার এই চোখের জলের মূল্য কেউ না দিলেও একজন দিবে। তাই সে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর "জাযাকুমুল্লাহ" (আল্লাহ তোমাদের এর প্রতিদান দিক) বলে দুআ করে। তার চোখের পানি মিশ্রিত দুআ বুঝি একবারও আল্লাহর দরবারে কবুল হবেনা??
শাশুড়িরা কেন পারেনা ছেলের বউকে মেয়ের মত করে মেনে নিতে!!? মেয়েটাও তো তার মা- বাবা আত্মীয়স্বজন সব ছেড়ে আপনাকে নিজের মা মনে করে এ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
আপনার নিজেরও তো মেয়ে আছে, সেও তো একদিন পরের বাড়ি যাবে যদি সেও এরকম ফিরে আসে একদিন আপনি পরবেন তা মেনে নিতে??
আপনি নিজেও তো একদিন এভাবে পরের বাড়ি এসেছিলেন তারা যদি আপনার সাথে এরূপ আচরন করতো!!??
আসমার গন্ডদেশ বেয়ে এখনো অশ্রু গড়িয়ে পরছে। চেহারাটাও আগের মত ভরাট নেই কেমন জানি উচু নিচু মনে হচ্ছে। কতদিন না খেয়ে ছিল কে জানে!!?
দাদু-নানু অনেকেই কত বুঝিয়েছে যে, "টাকা থাকলে ছেলের অভাব হয়না, আমরা তোকে আরো ভাল যায়গায় বিয়ে দিব তোর ছেলেটা আর একটু বড় হলে।"
কোন সান্ত্বনাই আজ তার মনের আগুন নেভাতে পারছেনা, ধীরে ধীরে রাত যত গভীর হচ্ছে তার কষ্টও আরো বেড়ে যাচ্ছে। নতুন মেয়েটার প্রতি তার খুব হিংসা হয়, সে তার যায়গা-টা দখল করে নিবে বলে।
উভয়েই থাকবে আজ নির্ঘুম। তবে কেউ জেগে জেগে নতুন সঙ্গিকে নিয়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখে দেখে জোৎস্নাভরা রাতটা কাটিয়ে সকাল করবে আর অন্যজনকে জাগিয়ে রাখবে তার পাহাড়সম একবুক কষ্টগুলো।
কিছুদিন পর হয়ত ঘটবে নতুন কোন গল্পের সূচনা। এভাবেই এই জীবনের সাঙ্গ ঘটবে একদিন, নিথর পড়ে রবে দেহটা। কিছুদিন পর সবাই ভুলে যাবে তাকে। আবার ব্যস্ত হয়ে যাবে যে যার স্বার্থ উদ্ধারে। কতই না বৈচিত্র্যময় এই জীবন!!!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এম এস সজীব ১৬/০১/২০১৫খাৱাপ না
-
অ ০৪/০১/২০১৫বেস ভালো ।