আমার একলা আমি
আমার একলা আমি
31 July 2014 at 18:13
একা থাকাটা এখন আর খারাপ লাগে না , নিজের ছোট্ট পৃথিবীটা যদিও ছোট রয়ে গেছে তবু এখন আর নিজেকে আবে গে বাঁধা মনে হয় না ... গাদা গাদা গল্পের বই পড়ে , বিকেলের চায়ে অথবা কফিতে , বারান্দায় দাড়িয়ে কাঠবিড়ালির পেয়ারা খাওয়া দেখে সময়টা বেশ ভালোই কেটে যায় , মাঝে মাঝে বিষণ্ণতা চেপে বসে , নিজের ভেতরকার সেই পুরনো হৃদিটা বরাবরই জেগে ওঠে , তখন নিজের অজান্তেই মন নিজেকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে না তুমি এখন সেই পুরনো হৃদি নও , তুমি এখন অনেক বড় আর অনেক পরিনত , ছোট বালিকার মত কারো কথা মনে করে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলাটা তোমার সাজে না ...
দুই বছর তো কম কথা নয় , এক একটা দিন এক একটা মুহূর্ত কিভাবে কেটেছে তা তো আমার অজানা নয় তবে কেন এই বিষণ্ণতা ? কারো জন্য নিস্তব্দ চিত্তে দাড়িয়ে থাকার সময়টার কথাও তো ভুলে যাই নি তবে কেন তবে কেন গুনগুন করে পুরানো গানটা গাইব ? কেনই বা চিৎকার করে বলব চলে যেও না আমি এখনো তোমারি ?
নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আবার সেই পাতাটা খুজতে থাকি যেটা পড়তে গিয়ে অর্ণবের কথা মনে পড়ে গেল ,
কত দিন তাকে দেখা হয়নি, না জানি কেমন আছে , নিজের পরিবর্তনটা ভালো ভাবেই বুঝতে পাড়ি এখন আর তার ছবি গুলো দেখে ছলছল করে ওঠে না অবাধ্য চোখ দুটো , গলার স্বর ভারী হয়ে ওঠে না তার নাম শুনতেই , জীবন এখন অনেক বদলে গেছে সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝে কাউকে নিয়ে ভাবার সময়টা হয়ে ওঠে না ...
হটাৎ চোখ পড়লো পুরানো সেলফটার দিকে , যার এক কোনায় ভাজ করা আছে অর্ণবের সেই ছয়টা চিঠি , আগে কখনোই কাউকে চিঠি লিখিনি কিভাবে প্রেমের চিঠি লিখতে হয় তাও জানা ছিল না , প্রথম চিঠিটা অর্ণব দেয় , তারপর থেকে শুরু হয় ঘ্যানঘ্যান আমার চিঠি কই আমার চিঠি কই ? তারপর থেকেই শুরু হয় চিঠি চালাচালি , একটা দুইটা তিনটা করে শুরু এর পর যে কয়টা চিঠি লিখেছি নিজেও জানি না , চিঠি গুলো এক পাতায় শেষ হলে অভিযোগ আসতো ঐ পাশ থেকে , এত ছোট চিঠি দেও কেন ? তুমি জানো না আমি তোমার বড় বড় চিঠি পড়তে চাই , মাত্র এক পাতা ? এই তোমার অনুভূতি ! এই ভালবাসা ?
আর তার চলে যাওয়ার পর কত শত চিঠি দিলাম কিন্তু একটারও জবাব আসে নি ...।
ফেসবুকে আর ইমেইলে লেখা চিঠিগুলো !!! সেগুলো দিলে রিপ্লাই তো দুরের কথা ''সিন'' করে রেখে দিত , কয়টা কত মিনিটে পড়লো চিঠিটা সেই সময়টা দেখেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম এই বলে যে যাক বাবা ধৈর্য নিয়ে পড়েছে তো ...।
আর মুঠোফোনে কল দিয়েই চলতাম দিয়েই চলতাম ভাবতাম এই বোধয় ঐ পাশ থেকে ভরাট কণ্ঠ ভেসে আসবে . বলবে এই হৃদিটা তুমি এত জ্বালাও কেন ? তুমি কি আমাকে ঘুমুতেও দিবে না ?.. কিন্তু না একটা ফোনও রিসিভ হত না ... মাঝে মাঝে দেখা যেত ওয়েটিং , ভাবতাম এতক্ষণ বোধয় দেখেনি কোন কাজে বিজি ছিল এখন নিশ্চয়ই ধরবে ... নাহ পরের বার ওয়েটিং এ না থেকেও ফোন ধরার সামান্য দয়াটা অর্ণবের হতো না ... তখন বুকের বাম পাশটায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভুত হত নিজেকে খুব তুচ্ছ আর বেহায়া মনে হত ।। অল্প সময় রাগ করে থাকতাম তারপর আবারও সেই পুরানো কাশন্ধি ...।
রিকশায় উঠলে মনের অজান্তেই ডান পাশটা খালি রেখে বসতাম , যদি হটাৎ করে ছুটে আসে আর বলে ''হৃদি'' বসছ তো বসছ কিন্তু আমার জায়গাটা কোথায় ?
একা রিকশায় বারবার হুড তোলা অবস্থায় ডান পাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম মনে হত তার ছায়া অনুভব করছি ...
পেছন থেকে মা ডেকে উঠলো হৃদি হৃদি , আবারও নিজের মধ্যে ফিরে আসা । আয়নার সামনে দাড়িয়ে আস্তে করে বলতে থাকি
''হৃদি তুমি তো সেই ছোট্ট মেয়েটি নও তুমি এখন অনেক বড় অনেক পরিনত, তুমি এখন কারো ইচ্ছার গোলাম নও , জীবন তোমার হাতের মুঠোয় ।
প্রান খুলে হাসার চেষ্টা করি তবু কেন জানি গাল বেয়ে চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসে অনুভূতির নোনতা জল ''
_ফাহমিদা ফাম্মী
গল্প : আমার একলা আমি
31 July 2014 at 18:13
একা থাকাটা এখন আর খারাপ লাগে না , নিজের ছোট্ট পৃথিবীটা যদিও ছোট রয়ে গেছে তবু এখন আর নিজেকে আবে গে বাঁধা মনে হয় না ... গাদা গাদা গল্পের বই পড়ে , বিকেলের চায়ে অথবা কফিতে , বারান্দায় দাড়িয়ে কাঠবিড়ালির পেয়ারা খাওয়া দেখে সময়টা বেশ ভালোই কেটে যায় , মাঝে মাঝে বিষণ্ণতা চেপে বসে , নিজের ভেতরকার সেই পুরনো হৃদিটা বরাবরই জেগে ওঠে , তখন নিজের অজান্তেই মন নিজেকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে না তুমি এখন সেই পুরনো হৃদি নও , তুমি এখন অনেক বড় আর অনেক পরিনত , ছোট বালিকার মত কারো কথা মনে করে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলাটা তোমার সাজে না ...
দুই বছর তো কম কথা নয় , এক একটা দিন এক একটা মুহূর্ত কিভাবে কেটেছে তা তো আমার অজানা নয় তবে কেন এই বিষণ্ণতা ? কারো জন্য নিস্তব্দ চিত্তে দাড়িয়ে থাকার সময়টার কথাও তো ভুলে যাই নি তবে কেন তবে কেন গুনগুন করে পুরানো গানটা গাইব ? কেনই বা চিৎকার করে বলব চলে যেও না আমি এখনো তোমারি ?
নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আবার সেই পাতাটা খুজতে থাকি যেটা পড়তে গিয়ে অর্ণবের কথা মনে পড়ে গেল ,
কত দিন তাকে দেখা হয়নি, না জানি কেমন আছে , নিজের পরিবর্তনটা ভালো ভাবেই বুঝতে পাড়ি এখন আর তার ছবি গুলো দেখে ছলছল করে ওঠে না অবাধ্য চোখ দুটো , গলার স্বর ভারী হয়ে ওঠে না তার নাম শুনতেই , জীবন এখন অনেক বদলে গেছে সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝে কাউকে নিয়ে ভাবার সময়টা হয়ে ওঠে না ...
হটাৎ চোখ পড়লো পুরানো সেলফটার দিকে , যার এক কোনায় ভাজ করা আছে অর্ণবের সেই ছয়টা চিঠি , আগে কখনোই কাউকে চিঠি লিখিনি কিভাবে প্রেমের চিঠি লিখতে হয় তাও জানা ছিল না , প্রথম চিঠিটা অর্ণব দেয় , তারপর থেকে শুরু হয় ঘ্যানঘ্যান আমার চিঠি কই আমার চিঠি কই ? তারপর থেকেই শুরু হয় চিঠি চালাচালি , একটা দুইটা তিনটা করে শুরু এর পর যে কয়টা চিঠি লিখেছি নিজেও জানি না , চিঠি গুলো এক পাতায় শেষ হলে অভিযোগ আসতো ঐ পাশ থেকে , এত ছোট চিঠি দেও কেন ? তুমি জানো না আমি তোমার বড় বড় চিঠি পড়তে চাই , মাত্র এক পাতা ? এই তোমার অনুভূতি ! এই ভালবাসা ?
আর তার চলে যাওয়ার পর কত শত চিঠি দিলাম কিন্তু একটারও জবাব আসে নি ...।
ফেসবুকে আর ইমেইলে লেখা চিঠিগুলো !!! সেগুলো দিলে রিপ্লাই তো দুরের কথা ''সিন'' করে রেখে দিত , কয়টা কত মিনিটে পড়লো চিঠিটা সেই সময়টা দেখেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম এই বলে যে যাক বাবা ধৈর্য নিয়ে পড়েছে তো ...।
আর মুঠোফোনে কল দিয়েই চলতাম দিয়েই চলতাম ভাবতাম এই বোধয় ঐ পাশ থেকে ভরাট কণ্ঠ ভেসে আসবে . বলবে এই হৃদিটা তুমি এত জ্বালাও কেন ? তুমি কি আমাকে ঘুমুতেও দিবে না ?.. কিন্তু না একটা ফোনও রিসিভ হত না ... মাঝে মাঝে দেখা যেত ওয়েটিং , ভাবতাম এতক্ষণ বোধয় দেখেনি কোন কাজে বিজি ছিল এখন নিশ্চয়ই ধরবে ... নাহ পরের বার ওয়েটিং এ না থেকেও ফোন ধরার সামান্য দয়াটা অর্ণবের হতো না ... তখন বুকের বাম পাশটায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভুত হত নিজেকে খুব তুচ্ছ আর বেহায়া মনে হত ।। অল্প সময় রাগ করে থাকতাম তারপর আবারও সেই পুরানো কাশন্ধি ...।
রিকশায় উঠলে মনের অজান্তেই ডান পাশটা খালি রেখে বসতাম , যদি হটাৎ করে ছুটে আসে আর বলে ''হৃদি'' বসছ তো বসছ কিন্তু আমার জায়গাটা কোথায় ?
একা রিকশায় বারবার হুড তোলা অবস্থায় ডান পাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম মনে হত তার ছায়া অনুভব করছি ...
পেছন থেকে মা ডেকে উঠলো হৃদি হৃদি , আবারও নিজের মধ্যে ফিরে আসা । আয়নার সামনে দাড়িয়ে আস্তে করে বলতে থাকি
''হৃদি তুমি তো সেই ছোট্ট মেয়েটি নও তুমি এখন অনেক বড় অনেক পরিনত, তুমি এখন কারো ইচ্ছার গোলাম নও , জীবন তোমার হাতের মুঠোয় ।
প্রান খুলে হাসার চেষ্টা করি তবু কেন জানি গাল বেয়ে চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসে অনুভূতির নোনতা জল ''
_ফাহমিদা ফাম্মী
গল্প : আমার একলা আমি
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ২২/১২/২০১৪
-
অনিরুদ্ধ বুলবুল ১৬/১২/২০১৪বেদনাদায়ক অথচ 'মর্মান্তিক সুন্দর' অনুভুতির ঘাড় ধরে এনে কবিতার পাতায় দাঁড় করিয়েছেন!
এই পাতায় আমি নতুন, আজই আপনার কয়েকটা কবিতা পড়লাম। দেখলাম অনেকদিন হল নিবন্ধিত হয়েছেন কিন্তু পোস্ট হাতে গোনা ৪২টি কিন্তু প্রতিটি গুণে মানে অনন্য। এটা ভাল; পোস্টের সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিযোগীতা না করে মানসম্মত লেখা উপহার দিতে পোস্ট কম হলেও ক্ষতি নেই।
আপনার লেখার চুম্বকীয় আকর্ষণ আছে। ধানাই পানাই চলে না; পাঠককে পড়িয়েই ছাড়ে।
শুভেচ্ছা জানবেন। -
ইবাদ বিন সিদ্দিক ১১/০৯/২০১৪আপনি খুব ভালো লিখেন আর তা আজই জানলাম। শুভেচ্ছা সতত।
-
সহিদুল হক ১০/০৮/২০১৪হৃদয়স্পর্শী কাহিনী। ভাল লাগা জানালাম বোন ফাহমিদা।
কেমন আছো? -
ইমন শরীফ ১০/০৮/২০১৪স্মৃতিতে ভরপুর তবে বিরহের ও হাতছানি।
একলা নও........আমরা আছিনা!!!!! -
আসোয়াদ লোদি ১০/০৮/২০১৪হৃদয় ছুঁয়ে গেল । বেশ মার্জিত লেখনি ।
-
নীরব আদি ১০/০৮/২০১৪আপু আপনি একা নন, আমরা আছি আপনার সাথে...
-
ইমন শরীফ ০৭/০৮/২০১৪অসাধারণ গল্প। ভাল লাগলো
-
আসগার এইচ পারভেজ ০৫/০৮/২০১৪ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম....
-
রাধাশ্যাম জানা ০৪/০৮/২০১৪অসাধারন লেখনী…
-
আবু সঈদ আহমেদ ০৪/০৮/২০১৪ভালো লাগল, আরো চাই।
-
Shopnil Shishir(MD.Shariful Hasan) ০২/০৮/২০১৪nice
-
আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ ০১/০৮/২০১৪অসাধারণ! মন ছুঁয়ে গেল।
-
সাইদুর রহমান ৩১/০৭/২০১৪সুন্দর হয়েছে গল্পটি।
শুভ কামনা সতত। -
মঞ্জুর হোসেন মৃদুল ৩১/০৭/২০১৪বাহ বেশ লাগল।
-
অপূর্ব দেব ৩১/০৭/২০১৪ঐ যে বললাম না আপনি একজন খুব ভাল মনের মানুষ । দুর্দান্ত লেখা ।
-
কোয়েল ৩১/০৭/২০১৪যেকোনো অনুভূতির ব্যর্থতার পরিসমাপ্তি বুঝি ঐ ননাজলেই।অন্তত সাধারণ ব্যক্তি হৃদয় তো সেখানেই খুঁজে পায় তার পরিতৃপ্তি।কিন্তু জীবনে মৃত্যুর আগে কোথাও থামতে নেই, বরং জীবনকে বদলানোর ব্রিথা প্রচেষ্টা না করে তাকে আরো একটু সময় দিয়ে,মন থেকে নঞর্থক ভাবানা গুলো ধুয়ে-মুছে সাফ করে এগিয়ে চলাই কাম্য।
লেখাটা কিন্তু দুর্দান্ত হয়েছে।মন দিয়ে পড়েছি। -
সাস্টিয়ান সঞ্জয় ৩১/০৭/২০১৪দারুণ লিখছস দোস্ত
ভালোবাসা আর আবেগ.....................