www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রাত তিন টা ৪৫ মিনিট

হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেল, ডিপ লাইটের আলোয় আপসা দেখা যাচ্ছে হালকা বাতাস শোভার ঘরে আসতেছে, জানালাটা বন্ধ করতে মনে ছিল না, প্রথমে জানালাটা বন্ধ করে দিল, ঘড়িতে কয়টা বাজে ভাল করে দেখা যাচ্ছে না তাই লাইট জ্বালিয়ে দেখলো রাসেল রাত ০৩ টা ৫৫ মিনিট। আজ রাসেল একা বাসায়, বাসার সবাই গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছে। রাসেল এবার এস,এস,সি দেবে ঢাকা কলেজ থেকে লেখা পড়ার চাপ তাই গ্রামের বাড়ীতে যাওয়া হয়নি, আজ রাত ১টায় বই এর পাতায় থেকে চোখ সরিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিল।
রান্না ঘরে গিয়ে পানি পান করলো, বাথরুম সেরে আবার ঘুমাতে যাবে তখনই খেয়াল করলো তার ছাদের ফ্যানে কলেজ বন্ধু রাহুল জুলতেছে গলায় ফাঁস লাগানো, রাসেল বসে পড়লো এই কি হলো রাহুল এখানে আর ফাঁস কেন লাগালো কখন লাগালো বা কেন লাগালো এই সব ভাবার সময়ও যেন পাচ্ছে না কি করবে ভাবতে পারছেনা, রাহুলের পা ধরে উপরের দিকে ধরে রাখার চেষ্টা করতেছে, আর চিৎকার করতে লাগলো বাসায় কেউ নেই তাই তার শব্দ কেউ শোনতে পারছেনা, গলা শোকিয়ে গেছে। অনুভব করলো রাহুল বেঁচে নেই, বাসায় একা সে কি করবে কোন রকমে চেয়ারের উপর উঠে রাহুলের গলা থেকে রশিটা খুলতেই রাহুল নিচে পরে গেল, রাসেল পাশে বসে দেখতেছে নাক কান থেকে রক্ত ঝরছে তোয়ায়ে দিয়ে মুছে দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে প্রায় ১৫/২০ মিনিট হবে এই সময়ের মধ্যে রাহুল কি করে তার রুমে এলো আবার গলায় ফাঁস জড়ানো। মাথায় কোন কিছু আসতেছেনা। কাকে ফোন করবে, পুলিশ ? না; পুলিশ তার কথা বিশ্বাস করবে না। এখন মৃত দেহ কোথায় রাখবে চিন্তায় পরে গেল। দরজায় গিয়ে দেখে দরজা লক খোলা, আজ মনের ভুলে দরজা বন্ধই করেনি। বাহিরে দেখলো দারোয়ান ঘুমিয়ে আছে। মাথায় ভাবনা এলো রাহুলের মৃত দেহটা কোন মতে বাহিরে রেখে আসতে পারলেই ভাল হয়। রান্না ঘর থেকে চাউলের খালি একটা বস্তা পেয়ে গেল, তাতে রাহুলের মৃত দেহটা রেখে কাঁধে তোলে গাড়ী পাকিং এর চলে গিয়ে গাড়ির ডিকিতে রেখে বাহিরে চলে গেল, গাড়ীর শব্দ শোনে দারোয়ানের ঘুম ভেঙ্গে গেল এবং বাহিরে এসে সে রাসেলকে দেখলো এবং পিছন থেকে জোরে জোরে “স্যার এতো রাতে কোথায় যাচ্ছেন, কেউ কি অসুস্থ ?”
রাসেল খেয়াল করেনি দ্রুত গাড়ী চালিয়ে চলে গেল প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে রাস্তার পাশে রাহুলের মৃত্য দেহ রেখে চলে আসলো, দারোয়ানের কথা শোনে পাশের বাসার কাশেম সাহেব উঠে আসে এবং তারা এই নিয়ে আলোচনা করতেছেন তখনই রাসেল ফিরে আসে। কাশেম সাহেব “রাসেল এতো রাতে কোথায় গিয়েছে ? সব ঠিক আছে তো”
“জ্বী আঙ্কেল সব ঠিক আছে আমি একটু বাহিরে গিয়েছি”
“ঠিক আছে যাও ঘুমিয়ে পড়”
এই বলে সবাই চলে গেল, দারোয়ানের মনে একটু সন্দেহ জাগলো “এইতো দ্রুত গেল এবং ফিরে এলো কোথায় গেল”?
রাসেলের আর ঘুম হচ্ছে না সকালে উঠেই গাড়ী চালিয়ে আস্তে আস্তে চলতে লাগলো যেখানে মৃত্য দেহ রাখেছে ওখানে মানুষের ভিড় হতে লাগলো এবং পুলিশ এসে গেছে সবাইকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো কেউ কোন জবাব দিতে পারলোনা, খালি চাউলের বস্তার উপর রাসেলদের বাসায় ঠিকানা লেখা আছে, পুলিশ ভাবতে লাগলো এই ঠিকানায় গিয়ে দেখা যাক, কেউ কি এই মৃত্য দেহকে চিনে কিনা, বা এই বাস্তার মালিকই হয়তো ওকে হত্যা করেছে। লাশ মর্গে পাঠিয়ে দেয়া হলো। রাসেল দ্রুত বাসায় ফিরে এলো এবং গ্রামের বাড়ীতে থাকা বাবা মাকে ফোন করলো কিন্তু কিছু বলতে পারলোনা। সকাল-সকাল কলেজে চলে গেল রাসেল, সব বন্ধু রাহুলকে খুঁজতে লাগলো কেউ কোন জবাব দিতে পারলো না কলেজ শেষে সবাই মিলে রাহুলের বাসায় গিয়ে হাজির রাসেলও যেতে বাধ্য হলো, রাহুলের বাবা কে দেখে সবাই বলতে লাগলো “আঙ্কেল রাহুল কোথায়? রাহুলকে ডেকে দিন”
কেন রাহুল তোমাদের সাথে নেই? ওতো কাল বিকেলে রাসেলের বাসায় যাবে বলে বাসা থেকে বাহির হয়, কই রাসেল রাহুল তোমার বাসায় যায়নি”
“না আঙ্কেল আমার সাথে দেখা হয়নি”
“কি বল আমরা তো ভাবছি তোমার সাথে আছে, এই ভাবে তো কোথাও যায়না আর মিথ্যে কথা বলে বাহির হয় না, ঠিক আছে তোমার এখন বাসায় যাও, রাহুল আসলে আমি বলে দেব।
এই বলে সবাই বাসায় ফিরে আসে। রাসেলের বাবা মাও বাড়ী থেকে ফিরে আসে, রাসেল বাসায় গিয়ে কিছু বলতে পারছে না কেন ফোন করেছে বা কি সমস্যা এমন সময় দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো, রাসেলের বাবা রহমান সাহেব দরজা খুলে দেখে পুলিশ।
“স্যার এইটা কি রহমান সাহেবের বাসা ?”
“জ্বী আমিই রহমান”
“স্যার এই বস্তাটি কি চিনতে পারছেন?”
জ্বী আমাদের চাউল এর খালি বস্তা, আমরা সব সময় এক দোকান থেকে চাউল ক্রয় করি আর দোকানদার ভ্যান দিয়ে পাঠিয়ে দেন। তাই ঠিকানা লেখা আছে।
জ্বী স্যার এই বস্তায় ভরা একটা মৃত দেহ পাওয়া গেছে আজ সকালে রাস্তার পাশে তাই বস্তার মালিককে খুঁজ করতেছি, এখন মৃত্য দেহ কার তা সনাক্ত করা যায়নি”
আমি তো গ্রামের বাড়ীতে ছিলাম এইতো একটু আগে আসলাম, চলুন দেখি কার মৃত্য দেহ”
এই বলে রহমান সাহের নিজের গাড়ীতে করে আর পেছন থেকে পুলিশের গাড়ী চলতে লাগলো
রহমান সাহের মৃত্য দেহ দেখেই চিনে পেলে “এই তো আমাদের রাসেলের বন্ধু রাহুল” কি ভাবে হলো ?
“এখন জানা যায়নি তদন্ত চলছে, দ্রুত বের হয়ে যাবে ?
“আমি রাহুলের বাবাকে ফোন করে নেই”
“জ্বী ফোন করে খবর দিন মৃত্য দেহ গ্রহণ করতে হবে”
রাহুলের বাবা আরিফ সাহেব এসে সাক্ষর করে মৃত্যদেহ গ্রহণ করে নিল এবং বলতে লাগলো
“কাল বিকেলে রাসেলের বাসায় যাবে বলে বাসা থেকে বাহির হয়, কে এমন করলো আমার ছেলেকে কারও সাথে দুষমনি ছিল না, নিষ্পাপ ছেলেটাকে মেরে ফেললো”
পুলিশের রহমান সাহেবের উপর সন্দেহ শুরু হলো, স্যার আপনার বাসায় কে ছিল?
আমরা সবাই গ্রামের বাড়ী চলে গিয়েছি রাসেল একা বাসায় ছিল, আজ সকালে রাসেল ফোন করে কিন্তু কিছু বলতে পারেনি তার কন্ঠে ভয় অনুভব করলাম তাই আমরা চলে আসি।
“স্যার ফোন করে রাসেলকে এখানে ডাকুন, কিছু জিজ্ঞাসা করতে হবে?”
“রাসেলতো রাহুলের বেষ্ট ফেন্ডস্‌ ওকে আমি ফোন করতেছি এই বলে রহমান সাহের বাহিরে এসে ফোন দিল বাসায়, এরই মধ্যে একজন পুলিশ দেখলো রহমান সাহেবের গাড়ীর পেছনের দিকে রক্ত লেগে আছে।
দ্রুত পুলিশ এসিপি, রহমান সাহেব আরিফ সাহেব সহ ২/৩ জন পুলিশ আসলো গাড়ীর কাছে এবং ডিকি খুলেতো অবাক গাড়ীতে রক্ত লেগে আছে।
এসিপি আরিফ সাহেবকে “স্যার আপনার ছেলেকে খুন করে এই গাড়ীর ডিকিতে বস্তায় ভরে রাস্তার পাশে ফেলে আসে উনার ছেলে রাসেল”
রহমান সাহেব “থ” হয়ে গেলেন না তা হতে পারেনা আমার ছেলে এমন করতে পারে না।
এমন সময় রাসেল এসে পৌছে যায় এবং পুলিশ তাকে এরেস্ট করে নেয়, রাসেল সব খুলে বলেছে কেউ বিশ্বাস করতেছেনা।
এসিপি “তুমি পুলিশকে ফোন করতে, তা না করে লাশ বস্তা ভরে রাস্তার পাশে পেলে আসলে কেন?”
“স্যার আমি ভয় পেয়ে গেয়েছিলাম, আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না বলে আমি ফোন করিনি সত্যি বলছি আমি রাহুলকে খুন করিনি, সে আমার বেষ্ট ফেন্ডস”
“রহমান সাহেব যতো আলামত দেখলেন তাতে প্রমাণ হয় রাসেলই রাহুলকে মেরেছে, যান আপনি একজন উকিল ঠিক করেন, আর আগামী কাল আদালতে আসুন”
রহমান সাহেব সাবেক সরকারী কর্মকর্তা এবং উনার অনেক উকিল বন্ধু আছে ছুটলেন ছেলেকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার জন্য, রহমান সাহেবের বিশ্বাস তার ছেলে খুন করতে পারেনা।
সেলিম ভূইয়া একজন নামী উকিল, উনি আবার রহমান সাহেবের বেষ্ট ফেন্ডস সেলিম ভূইয়ার সাথে বিস্তারিত কথা-বার্তা বলে সেলিম ভূইয়া সহ রহমান সাহেবের বাসায় গেলেন, এবং উকিল সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে লাগলেন, সেই দিন রাত ৩.৪৫ মিনিটের সময় রাহুলকে দু’জন দুই পাশে দুই হাত কাঁধে রেখে যেন টেনে হিছরে নিয়ে আসছে, ভিডিও ফুটেজে বুঝা যাচ্ছে রাহুলের তখন হুঁশ ছিল না, উকিলের প্রশ্ন রাসেলের বাবাকে “এই দুইজন কে” ?
রহমান সাহেব ‘আমি চিনি না ওরা কারা এবং রাহুলকে আমাদের বিল্ডি এর কেন এই ভাবে নিয়ে আসতেছে’।
উকিল বললেন ‘চলুন আবার থানায় গিয়ে দেখি রাসেল ওদের কাউকে ছিনতে পারে কিনা’ ?
ভিডিও ফুটেজ সাথে ল্যাপটপ নিয়ে থানায় গেল, প্রথমে পুলিশ দেখা করতে দিতে চাচ্ছিল না অবশেষে রাজি হলো। ভিডিও ফুটেজ দেখে রাসেল একজনকে ছিলতে পারলো সেই অনন্যার বড় ভাই – বাবু ভাই।
“কে এই অনন্যা” ?
অনন্যা আমাদের কলেজে পড়ে, রাহুল অনন্যাকে ভালবাসতো, আমি আর রাহুলের সাথে এই নিয়ে বাবু ভাই এর ঝগড়া হয়ে ছিল।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১০৩৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৪/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • লিখন মাহমুদ ১৪/০৪/২০১৮
    অনন্য!!

    শুভ নববর্ষ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ!
    বাংলা নববর্ষ আমাদের জন্য বয়ে আনুক সুখ−শান্তি−সমৃদ্ধি।
 
Quantcast