প্রবাসে জুতো পালিশ গর্বের কাজ
এক.
জন্মের পর থেকে ২৪ বছর বয়স পযর্ন্ত দেশে ছিলাম তখন স্কুল কলেজ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেক হাজার বার জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছি বা শোনেছি, তখন সাধারণ দেশ প্রেমের দেখা পেয়েছি। যখন থেকে প্রবাস জীবন শুধু হয় তখন থেকে এখনো জাতীয় সঙ্গীত কোথাও বাজলেই কেন যেন আমার চোখের কোণে জল এসে যায়, প্রবাসে এসে দেশ প্রেম কাকে বলে তা বুঝতে পারলাম।
দুই.
যখন দেশে ছিলাম কখনো রান্না ঘরে গিয়ে দেখিনি কি রান্না হচ্ছে কিংবা নিজে নিয়ে খাওয়া হয়নি আম্মা খাবার পরিবেশন করে দিতেন। প্রবাসে আছি দীর্ঘ ১১ বছর, প্রথম দিকে হোটেলের খাবার খেতাম অল্প কিছু দিনের মধ্যে অনেকটা মোটা হয়ে গেলাম, তখন সিদ্ধান্ত নিলাম আর হোটেলে নয় নিজে রান্না করবো, কিন্তু গ্যাসে আগুন ধরানোটাও জানতাম না, আস্তে আস্তে শিখে ফেললাম। বর্তমানে বিরিয়ানী সহ সব ধরণের রান্না করতে জানি। (প্রবাসী বেশির ভাগে ব্যাচেলর নিজের রান্না নিজে করতে হয়)
অতএর, আমি একজন বাবুচী, রান্না করি।
তিন.
প্রবাসে আসার কিছুদিন পর জুতোজোড়া পালিশ করা ছিল না হঠাৎ কোথায় যেন যাব, অনেক গুলো মার্কেট ঘুরলাম কিন্তু জুতো পালিশ করাতে পারলাম না, নতুন জুতো ক্রয় করে নিতে হলো এবং সে দোকান থেকে (পালিশ করার জিনিসপত্র) কিনে নিলাম তখন থেকে নিজেই জুতোপালিশ করি।
অতএব, আমি প্রবাসে জুতোপালিশ করি।
চার.
এখানে প্রায় সবাই কাপড়-ছোপড় ধোপার দোকানেই পরিস্কার করায় আমি সব সময় ধোপার দোকানেই দিয়ে দেই, তবু মাঝে মধ্যে নিজের কাপড়-ছোপড় নিজেকেই ধোত করতে হয়।
অতএব, আমি একজন ধোপা।
পাঁচ.
প্রবাসীরা কেউ ৮ ঘণ্টা কেউ ১২ ঘন্টা কেউ ১৬ ঘন্টা কাজ (ডিউটি) করে থাকে। তারপর নিজের কাজ ৩/৪ ঘন্টা আর তার আয়ের বেশির ভাগ দেশে পাঠিয়ে দেন। আমার হিসেবে প্রকৃত দেশ প্রেমিক প্রবাসীরাই।
ছয়.
সিডরে আক্রন্ত মানুষের জন্য নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সিডর আক্রান্তদের সহায়তার জন্য ১৩ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ৪৬ কোটি টাকা) দান করলেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো ব্যক্তির সর্বোচ্চ দান। ঐ সাহায্যকারীর ব্যক্তির জুতো জোড়া পালিশ করার সুযোগ পেলে করতাম এবং বাংলাদেশের কিছুটা ঋণ শোধ করা যেত।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অনির্বাণ সূর্যকান্ত ১৪/০৯/২০১৭
-
শ.ম. শহীদ ০৫/০৯/২০১৭সুন্দর উপস্থাপন।
শেখার অনেক কিছুই আছে।
কারন আমাদের মধ্যে ছোট বেলা থেকেই এই কাজ গুলোর প্রাধান্য কি তা বুঝিয়ে দেওয়া হয় না। পরিবারে সেই সংস্কৃতি নেই।
লিঙ্গ বৈষম্যও আমাদের ( পুরুষদের) রাজা রাজা ভাবতে শেখায়।
আমরা সব দিক থেকেই অনেক কিছু থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখি।