রোজা-ইসলামও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ
রোজার সংজ্ঞা:
------------------------
রোজা ( روزہ) ফার্সিভাষা থেকে বাংলাভাষায় প্রবেশকৃত একটি বিদেশি শব্দ।
শাব্দিকঅর্থে রোজার বাংলা হচ্ছে 'দিন'। যদিও এটা সরাসরি আরবিশব্দ সাউম ( صوم ) এর অর্থ প্রকাশ করে না,কিন্তু রোজার দ্বারা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ সাওমই উদ্দেশ্য।
আরবিব্যাকরণ অনুযায়ীصومশব্দটি বাবে নাসারার ক্রিয়ামূল।
অভিধানিক অর্থ 'ইমসাক' অর্থাৎ কোন কিছু থেকে বিরত থাকা, কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা কথাবলা থেকে বিরত থাকা।
আল্লামা রাগেব ইস্পাহানী এর মতে, কাজ থেকে বিরত থাকা। সিয়াম হচ্ছে তার বহুবচন।
তবে আরবি ক্রিয়ামূলের বহুলপরিচিত গ্রন্থ "আরবি ছাফওয়াতুল মাছাদির" প্রণেতা সরাসরি আস-সাওমু মাছদারের অর্থ সরাসরি রোজারাখাই বলেছেন।
ইংরেজিতে যাকে Fastingবা Islamic Fasting অথবা Holy Fastইত্যাদি বলা হয়।
পারিভাষিক সংজ্ঞায় আল্লামা মুহাম্মদ আলী সুবনী তার রওয়িউল বয়ান গ্রন্থে বলেন, "ইবাদতের নিয়তে ফজরের উদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং স্ত্রী সহবাস হতে বিরত থাকাকে রোজা বলা হয়।"
রোজা কীভাবে সাওমের সমার্থক:
---------------------------------------------
সুবহেসাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যস্ত যেহেতু দিনের অংশ, সেহেতু সাওমকে ফার্সিভাষায় রোজা বলা হয়।
কেননা রোজা অর্থ দিন, আর সাওমের বর্ণিত নিষিদ্ধবিষয়গুলো থেকে বিরত থাকার সময়সীমা হচ্ছে, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত; যা দিনের অংশের মধ্যে পড়ে। সুতরাং সাওম এর শাব্দিক অর্থ সরাসরি রোজা না হলেও সঙ্গতকারণে ফার্সিভাসায় রোজা শব্দদ্বারা সাওমই বুঝানো হয়।
সাধারণ অর্থে সাওম:
-----------------------------
সাওম শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা। তাইতো চুপ বা নিস্তব্ধ থাকাকে সিয়াম বলে। আর যে ব্যক্তি চুপ থাকে তাকে সায়েম বলে।
পবিত্র কুরআনের সুরা মারইয়ামে আল্লাহ তায়ালা হযরত মরিয়ম (আঃ)এর বিনাপিতায় হযরত ঈসা(আঃ)এর জন্ম সম্পর্কিত ঘটনা তুলে ধরে বর্ণনা করেন, "ফাইম্মা তারাইন্না মিনাল বাশারি আহাদান ফাকুলি ইন্নি নাজারতু লির রাহমানি সাওমান ফালান উকাল্লিমাল ইয়াওমা ইনসিয়ান।" (সুরা মারইয়াম আয়াত ২৬)
অর্থ : (সন্তান ভূমিষ্ঠের পর) যদি মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখ (কোনো প্রশ্ন বা কৈফিয়ত করতে) তবে তুমি বলো, ‘আমি দয়াময় আল্লাহর উদ্দেশে সাওম বা রোজা (কথা বলা থেকে বিরত থাকতে) মানত করছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলবো না। (সুরা মারইয়াম : আয়াত ২৬)
কোরআন কারিমের এ আয়াতের শিক্ষনীয় ঘটনা : হযরত মরিয়ম আলাইহি ওয়া সাল্লামের গর্ভে সন্তান জন্ম লাভের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, শিশুর ব্যাপারে তোমার কিছু বলার প্রয়োজন নেই। তার জন্মের ব্যাপারে যে কেউ আপত্তি তুলবে তার জবাব দেবার দায়িত্ব এখন আমার (আল্লাহর)। উল্লেখ্য, বনি ইসরাঈলের মধ্যে মৌনতা বা কথা বলা থেকে বিরত থাকার পদ্ধতি অবলম্বনের রোজা রাখার রীতি ছিল।]
বলা বাহুল্য এখানে ‘সওম’ এর অর্থ হলো কথা বলা থেকে বিরত থাকা।
কারণ প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম নয়; বরং অসারতা ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকার নামই হলো (প্রকৃত) সিয়াম। সুতরাং যদি তোমাকে কেউ গালাগালি করে অথবা তোমার প্রতি মুর্খতা দেখায়, তাহলে তুমি (তার প্রতিকার বা প্রতিশোধ না নিয়ে) তাকে বলো যে, আমি সায়েম, আমি রোযা রেখেছি, আমি রোযা রেখেছি। (মুস্তাদরেকে হাকেম, ইবনে হিব্বান)
রোজার প্রকার:
---------------------
রোজা মোট ছয় প্রকার ১. ফরজ রোজা,
যেমন রমজান মাসের ।
২. ওয়াজিব রোজা, যেমন মান্নতের রোজা ।
৩. সুন্নত রোজা, যেমন, আশুরার রোজা
৪. মুস্তহাব রোজা, যেমন আইয়ামে বীজের রোজা প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা। রাখা। ৫. মাকরুহ রোজা, আশুরার ১টি রোজা রাখা।
৬. হারাম রোজা, যেমন দুই ঈদের দিনে রোজা এবং কুরবানির ঈদের পরের তিন দিন রোজা রাখা।
রোজা কখন ফরজ হয়:
--------------------------------
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগেও রোজা ফরজ ছিল, তবে কোন রোজা ফরজ ছিল এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন ১০ মহররম অর্থাৎ আশুরার রোজা ফরজ ছিল, আবার কারও কারও মতে, ‘আইয়ামুল বিজ’ অর্থাৎ প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা ফরয ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করলেন তখন আইয়ামুল বিজের রোজা রাখতেন। হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে অর্থাৎ দ্বিতীয় হিজরিতে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য রোজা ফরজ করে এ এ আয়াত নাজিল হয় ‘রমজান মাস, এ মাসেই নাজিল করা হয়েছে কোরআন মানুষের জন্য হেদায়েত, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। তবে কেউ রোগাক্রান্ত হলে অথবা সফরে থাকলে এ সংখ্যা অন্য সময় পূরণ করবে। আল্লাহ চান তোমাদের জন্য যা সহজ তা, আর তিনি চান না তোমাদের জন্য যা কষ্টকর তা, যেন তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করো এবং আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো, তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার জন্য এবং যেন তোমরা শোকর করতে পার।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)।
এ আয়াত নাজিলের পর আশুরার রোজা অথবা আইয়ামুল বিজের রোজা পালনের ফরজিয়াত মানসুখ(রহিত) হয়ে যায়।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আব্বাস (রা.) এর বর্ণনা থেকে জানা যায়, আগে রোজা ছিল এক সন্ধ্যা থেকে আরেক সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাতে ঘুমানোর পরে পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ করা বৈধ ছিল না।
রোজার ইতিহাস:
------------------------
মানুষের জন্য রমজান মাসের সিয়াম বা রোজাই প্রথম রোজা নয়। কারণ, সিয়াম বা রোজা হলো এমন এক ইবাদত, যা মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই আল্লাহ তায়ালা বান্দার জন্য ফরজ করেছে
বস্তুত রোজা রাখার বিধাণ সর্বযুগে ছিল । হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আখিরী নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলগণের যুগেই রোজার বিধান ছিল ।
এদিকে ইঙ্গিত করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে ইমানদারগণ ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল যাতে তোমাদের পরহেয্গারী অর্জিত হয় ;
( সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)
এ আয়তের ব্যখ্যায় আল্লামা আলূসী (রঃ) স্বীয় তাফসীর গ্রন্থ ‘রুহুল মাআনী’ তে উল্লেখ করেছেন যে এখানে ‘মিন ক্বাবলিকুম’ দ্বারা হযরত আদম (আঃ) হতে শুরু করে হযরত ঈসা (আঃ) এর যুগ পর্যন্ত সকল যুগের মানুষকে বুঝানো হয়েছে । এতে এ কথা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, রোযা কেবল আমাদের উপরই ফরয করা হয়নি বরং আদম (আঃ) এর যুগ হতেই চলে এসেছে । অন্যান্য তাফসীর বিশারদগণও অনুরূপ মতামত ব্যক্ত করেছেন । শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (রঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ
রোযার হুকুম হযরত আদম (আঃ) এর যুগ হতে বর্তমান কাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলে এসেছে
(ফাওয়াইদে উসমানী)
কোনো কোনো তাফসিরের বর্ণনায় রয়েছে, আদম (আ.)-এর সৃষ্টির পর তাঁকে 'নিষিদ্ধ ফল' আহার বর্জনের যে আদেশ দিয়েছেন- এটাই মানব ইতিহাসের প্রথম সিয়াম সাধনা। ইতিহাসে আরো পাওয়া যায়, আদম (আ.) সেই রোজা ভাঙার কাফ্ফারাস্বরূপ ৪০ বছর রোজা রেখেছিলেন।
আর ওই নিষিদ্ধ ফলের প্রভাব আদম (আ.)-এর পেটে ৩০ দিন বিদ্যমান ছিল বলে আদম (আ.)-এর শ্রেষ্ঠ সন্তান মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতকে আল্লাহ তাআলা এক মাস রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিহাসে এ-ও পাওয়া যায়, ওই ফলের প্রভাবে হজরত ইব্রাহিম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব যুগে ৩০টি রোজা ফরজ ছিল।
তবে হযরত আদম (আঃ) এর রোযার ধরন কেমন ছিল তা সঠিকভাবে বলা যায় না । আল্লামা ইমাদুদ্দীন ইবন কাশীর (রঃ) বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখার বিধান ছিল । পরে রমজানের রোযা ফরয হলে তা রহিত হয়ে যায় । হযরত মু’আয, ইবন মাসউদ, ইবন আব্বাস, আতা, কাতাদা এবং যাহ্হাক (রাঃ) এর মতে তিন দিন রোযা রাখার বিধান হযরত নূহ (আঃ) এর যুগ হতে শুরু করে নবী করিম (সঃ) এর জামানা পর্যন্ত বলবৎ ছিল । পরে আল্লাহ্ তা’আলা রামাযানের রোযা ফরজ করে ঐ বিধান রহিত করে দেন ।
তাফসীরে রুহুলমাআনীতে একথাও উল্লেখ আছে যে,
‘যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল’ বলে যে তুলনা করা হয়েছে তা শুধু ফরয হওয়ার ব্যাপারে প্রযোজ্য হতে পারে । অর্থাৎ তোমাদের উপর যেমন রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও রোযা ফরজ করা হয়েছিল । যদিও নিয়ম এবং সময়ের দিক থেকেও এ তুলনা প্রযোজ্য হতে পারে । তাই বলা হয়যে, কিতাবিদের উপরও রামাযানের রোযা ফরজ ছিল । তারা তা বর্জন করে বছরে ঐ একদিন উপবাসব্রত পালন করে, যেদিন ফির’আউন নীলনদে নিমজ্জিত হয়েছিল । এরপর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও উক্ত দিনে রোজা রাখে । অবশ্য তারা এর সাথে আগে-পিছে আরো দুইদিন সংযোজন করে নেয় । এভাবে বাড়াতে বাড়াতে তারা রোজার সংখ্যা পঞ্চাশের কোটায় পৌঁছে দেয় । গরমের দিন এ রোজা তাঁদের জন্য দুঃসাধ্য হলে তারা তা পরিবর্তন করে শীতের মৌসুমে নিয়ে আসে ।
মুগাফ্ফাল ইব্ন হানযালা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেন খৃষ্টান সম্প্রদায়ের উপর রামাযানের একমাস রোযা ফরয করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে তাঁদের জনৈক বাদশাহ অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা এ মর্মে মানত করে যে, আল্লাহ্ তাঁকে রোগমুক্ত করলে রোযার মেয়াদ আরো দশ দিন বাড়িয়ে দেব । এরপর পরবর্তী বাদশাহর আমলে গোস্ত খাওয়ার কারনে বাদশাহর মুখে রোগব্যধি দেখা দিলে তারা আবারো মানত করে যে, আল্লাহ্ যদি তাঁকে সুস্থ করে দেন তবে আমরা অতিরিক্ত আরো সাতদিন রোযা রাখব । তারপর আরেক বাদশাহ সিংহাসনে সমাসীন হয়ে তিনি বললেন, তিন দিন আর ছাড়বো কেন ? এবং তিনি এও বলেন যে, এ রোযাগুলো আমরা বসন্তকালে পালন করব । এভাবে রোযা ত্রিশের সংখ্যা অতিক্রম করে পঞ্চাশের কোটায় পৌঁছে যায়
(রুহুল মাআনি, ২য় খন্ড)
হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীরা আশুরার দিন সাওম পালন করে । তিনি জিজ্ঞাসা করালেন কি ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে সাওম পালন কর কেন?) তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন । এ দিনে আল্লাহ্ তা’আলা বনী ইসরাইলকে তাঁদের শত্রুর কবল থেকে নাজাত দান করেন, ফলে এ দিনে মুসা (আঃ) সাওম পালন করেন । রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসার অধিক হকদার । এরপর তিনি এ দিন পালন করেন এবং সাওম পালনের নির্দেশ দেন
(বুখারী, সাওম অধ্যায়)
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, হযরত মুসা ও হযরত ঈসা (আঃ) এবং তাঁদের উম্মাতগণ সকলেই সাম পালন করেছেন । নবীগণের মধ্যে হযরত দাউদ (আঃ) এর রোযা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্নিত । তিনি বলেন, নবী (সঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি সবসময় রোযা রাখ এবং রাতভর নামায আদায় কর । আমি বললাম জী, হ্যাঁ । তিনি বললেনঃ তুমি এরূপ করলে তোমার চোখ বসে যাবে এবং শরীর দূর্বল হয়ে পড়বে । যে ব্যক্তি সারা বছর রোযা রাখল সে যেন রোযাই রাখলনা । (প্রতি মাসে) তিনি দিন রোযা রাখা সারা বছর রোযা রাখার সমতুল্য । আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী রাখার সামর্থ রাখি । তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি ‘সাওমে দাঊদী’ পালন কর । তিনি একদিন রোযা রাখতেন আর একদিন ছেড়ে দিতেন । (ফলে তিনি দূর্বল হতেন না) এবং যখন তিনি শত্রুর সম্মুখীন হতেন তখন পলায়ন করতেন না ।
(বুখারী, সাওম অধ্যায়)
এতে একথা প্রমাণিত হয় যে, হযরত দাউদ (আঃ) ও সিয়াম পালন করেছেন । মোটকথা হযরত আদম (আঃ) এর যুগ থেকেই রোযা রাখার বিধান ছিল । কিন্তু পরবর্তীকালে আদর্শচ্যুত হয়ে লোকেরা আল্লাহ্র বিভিন্ন বিধানকে যেভাবে পরিবর্তন ও বিকৃত করেছিল অনুরূপভাবে রোযার ধর্মীয় তাৎপর্য ও বৈশিষ্ট্য শেষ হয়ে একটি নিছক প্রথায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল ।
এহেন অবস্থা হতে রোযাকে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের দিকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এবং একে অত্মিক, নৈতিক ও চারিত্রিক কল্যাণের ধারক বানানোর নিমিত্তে মহান রাব্বুল আলামিন দ্বিতীয় হিজরিতে রামাযানের মাসের রোযাকে এ উম্মাতের উপর ফরয করে দেন । এভাবেই রোজার ধারাবাহিকতা রক্ষাপায়।
রমজানের রোজার ফজিলত:
------------------------------------------
আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে কুদ্সীতে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘আদম সন্তানের প্রতিটি আমলের ছাওয়াবই দ্বিগুণ করে দেয়া হয়। প্রতিটি সৎকাজ দশগুণ থেকে সাতশগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: তবে রোজা ব্যতীত; কেননা রোজা কেবল আমার এবং আমিই এর প্রতিদান দিই। রোজাদার আমার জন্য তার লালসা ও খাদ্য পরিত্যাগ করে। রোজাদারের দুটি আনন্দ রয়েছে: একটি হলো রোজা ছাড়ার সময়, আর অন্যটি হলো তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়। আর রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট কস্তুরির সুগন্ধি থেকেও প্রিয়। ( বুখারী ও মুসলিম।)
আবু হুরায়রা (রা.) আরো বলেছেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম)
অপর হাদিসে এসেছে, হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)
রমজানের ফজিলত নিয়ে আরো অনেক হাদিস বিভিন্ন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে।
এই মাসে যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে ১টি নফল আমল করল সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি এই মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করলো।
এসব শুনে সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তো এমন সামর্থ্য রাখে না যে রোজাদারকে (তৃপ্তি সহকারে) ইফতার করাবে? রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহ পাক এই সওয়াব দান করবেন যে রোজাদারকে ইফতার করায় এক চুমুক দুধ দিয়ে, অথবা একটি খেজুর দিয়ে, অথবা এক চুমুক পানি দিয়ে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়ায় আল্লাহ তায়ালা তাকে হাউজে কাউছার থেকে পানি পান করাবেন যার পর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে পুনরায় তৃষ্ণার্ত হবে না।
এটা এমন পবিত্র মাসের প্রথম দিক রহমত, মাঝের দিক মাগফিরাত, আর শেষ দিক হচ্ছে দোযখ থেকে মুক্তির। যে ব্যক্তি এই মাসে আপন অধীনস্থ দাস-দাসীদের কাজের বোঝা হালকা করে দেবে মহান আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন এবং তাকে দোযখ থেকে মুক্তি দান করবেন। (বায়হাকী)
নবীর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু ওবায়দা (রা.) রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে আরেকটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরুপ যতক্ষণ পর্যন্ত তা ফেড়ে না ফেলা হয় (অর্থাৎ রোজা মানুষের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তা নিয়ম অনুযায়ী পালন করা হয়)। (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)
সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেছেন, হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, অনেক রোজাদার ব্যক্তি এমন রয়েছে যাদের রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ব্যতিত আর কিছুই লাভ হয় না। আবার অনেক রাত জাগরণকারী এমন রয়েছে যাদের রাত জাগার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না। (নেক আমল যদি এখলাস ও আন্তরিকতার সঙ্গে না হয়ে লোক দেখানোর উদ্দেশে হয় তাহলে এর বিনিময়ে কোনো সওয়াব পাওয়া যায় না)। (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) আরো বলেছেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে শরীয়ত সম্মত কোনো কারণ ছাড়া রমজানের একটি রোজাও ভাঙে সে রমজানের বাইরে সারাজীবন রোজা রাখলেও এর বদলা হবে না। (তিরমিযী, আবু দাউদ)
রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, রমজানের জন্য বেহেশত সাজানো হয় বছরের প্রথম থেকে পরবর্তী বছর পর্যন্ত। তিনি বলেন, যখন রমজান মাসের প্রথম দিন উপস্থিত হয় বেহেশতের গাছের পাতা হতে আরশের নিচে বড় বড় চোখ বিশিষ্ট হুরদের প্রতি বিশেষ হাওয়া প্রবাহিত হয়। তখন তারা বলে, হে পালনকর্তা! আপনার বান্দাদের মধ্য হতে আমাদের জন্য এমন স্বামী নির্দিষ্ট করুন যাদের দেখে আমাদের চোখ জুড়াবে এবং আমাদের দেখে তাদের চোখ জুড়াবেে।
পবিত্র রমজানের রোজার পালনীয় দিক সমূহ:
----------------------------------------
★চাঁদ দেখে রোজা রাখা,
★সকাল হওয়ার আগে রোজার জন্য নিয়ত করা,
★ পানাহার ও জৈবিক বিশেষ করে যৌন চাহিদা পূরণ করা থেকে বিরত থাকা,
★ইচ্ছাকৃত বমি করা থেকে নিবৃত্ত থাকা ও
★রোজার পবিত্রতা রক্ষাকরা।
রোজার রুকনসমূহ:
----------------------------
★সুবেহ সাদেক উদয় হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজাভঙ্গকারী বিষয় থেকে বিরত থাকা।
কেননা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
(وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ثُمَّ أَتِمُّواْ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيۡلِۚ)
অর্থাৎ: এবং তোমরা আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। (সূরা আল বাকারা:১৮৭)
সাদা ও কালো রেখার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, দিনের শুভ্রতা ও রাতের কৃষ্ণতা।
★ নিয়ত
অর্থাৎ রোজাদার ব্যক্তি রোজাভঙ্গকারী-বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার নিয়ত করবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় সকলকাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল, আর প্রত্যেকের জন্য তাই নির্ধারিত যা সে নিয়ত করেছে।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
কেননা যে ব্যক্তি ভুল করে রোজা ভঙ্গ করল,
সূর্যাস্ত সম্পন্ন হয়েছে অথবা সুবেহ সাদেক উদয় হয়নি বলে ধারণা করে যে ব্যক্তি খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করল, কিন্তু পরবর্তীতে প্রকাশ পেল যে তার ধারণা ভুল ছিল, এমতাবস্থায় ওই রোজা কাজা করা আবশ্যক হবে না। এর প্রমাণ আল্লাহ তাআলার বাণী:
(وَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٞ فِيمَآ أَخۡطَأۡتُم بِهِۦ وَلَٰكِن مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوبُكُمۡۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا ٥ )
অর্থাৎ: আর এ বিষয়ে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোনো পাপ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)। আর আল্লাহ অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আল আহযাব:৫)
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মাতের ওপর ভুল ও ভুলে যাওয়া ও বাধ্য হয়ে-কৃত বিষয়গুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ (বর্ণনায় ইবনে মাজাহ)
রোজা ফরজ হওয়ার শর্তসমূহ:
--------------------------------------------------
★মুসলিম হওয়া।
তাই অমুসলিমের ওপর রোজার বিধান নেই।
★প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ের ওপর রোজা ফরজ নয়।
★জ্ঞান সম্পর্ণ হওয়া। অর্থাৎ মস্তিষ্ক বিকৃত (পাগল) লোকের ওপর রোজা ফরজ নয়।
★আজাদ বা স্বাধীন হওয়া
★.ত্বাহিরা(এটা মহিলাদের জন্য)
হায়েয তথা ঋতুকাল এবং নিফাস তথা সন্তান জন্মদান পরবর্তী সময়ে পবিত্র থাকা
হায়েযের সংজ্ঞা
---------
নারীর যৌনাঙ্গ থেকে কোনো কারণ ছাড়া নির্দিষ্ট সংখ্যক দিন যে রক্ত বের হয়-তাকে হায়েয বা মাসিক বলে।
তার সর্বনিম্ন মেয়াদ ৩দিনও সর্বোচ্চ মেয়াদ১০দিন।
নেফাসের সংজ্ঞা
-----------
আর সন্তান প্রসবের পর নারীর জরায়ূ থেকে যে রক্ত বের হয় তাকে নেফাস বলে।
নেফাসের সর্বনিম্ম কোনো মেয়াদ নেই,তবে সর্বোচ্চ মেয়াদ৪০দিন।
হাফেজ ও নিফাসের সময়ে মহিলাদের রোজা রাখা নিষিদ্ধ । তবে হায়েজ-নিফাসের কারণে যে কয়টা রোজা ভঙ্গ হবে, তা পরবর্তীতে কাজা করে নিতে হবে।
★ শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়া:
এমন অসুখ হলে যখন অভিজ্ঞ ডাক্তার রোজা রাখতে নিষেদ করেন,তার জন্য রোজা রাখার বিধান শিথিল।
তবে সাধারণ অসুখের ক্ষেত্রে রোজা রাখা জরুরি।
★মুকিম অর্থাৎ স্থায়ীবাসিন্দা হওয়া।
মুসাফিরের ওপর রোজা ফরজের ব্যপারে একটু ভিন্নতা আছে। যেমন কষ্টসাধ্য ভ্রমন হলে পরবর্তীতে রোজা আদায়ের বিধান আছে। আমি মনে করি বর্তমানে সফর অনেক আরামের সাথে করা যায় তাই সফর অবস্থায় একমাত্র কাহিল হয়ে না পড়লে রোজা রাখা উচিত।
রোজার আধুনিক কয়েকটি মাসআলা
--------------------------------------------------
★ইনজেকশন (Injection): ইনজেকশন নিলে রোযা ভাঙ্গবে না। (জাওয়াহিরুল ফতওয়া)
★ইনহেলার (Inhaler): শ্বাসকষ্ট দূর করার লক্ষ্যে তরল জাতীয় একটি ঔষধ স্প্রে করে মুখের ভিতর দিয়ে গলায় প্রবেশ করান হয়, এভাবে মুখের ভিতর ইনহেলার স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভেঙ্গে যাবে। (ইমদাদুল ফতওয়া)
★এনজিও গ্রাম (Angio Gram): হার্ট ব্লক হয়ে গেলে উরুর গোড়া দিয়ে কেটে বিশেষ রগের ভিতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয় তার নাম এনজিও গ্রাম। এযন্ত্রটিতে যদি কোন ধরনের ঔষধ লাগানো থাকে তারপরেও রোজা ভাঙ্গবে না। (ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা)
★এন্ডোস কপি (Endos Copy): চিকন একটি পাইপ যার মাথায় বাল্ব জাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলিতে ঢুকানো হয় এবং বাইরে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্নয় করা হয়। এ নলে যদি কোন ঔষধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভিতর দিয়ে পানি/ঔষধ ছিটানো হয়ে থাকে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে, আর যদি কোন ঔষধ লাগানো না থাকে তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
★নাইট্রো গ্লিসারিন (Nitro Glycerin): এরোসল জাতীয় ঔষধ, যা হার্টের জন্য দুই-তিন ফোটা জিহ্বার নীচে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে।ঔষধটি শিরার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিশে যায় এবং ঔষধের কিছু অংশ গলায় প্রবেশ করার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। অতএব- এতে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
★লেপারোসকপি(Laparoscopy): শিক্ জাতীয় একটি যন্ত্র দ্বারা পেট ছিদ্র করে পেটের ভিতরের কোন অংশ বা গোশত ইত্যাদি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের করে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র। এতে যদি ঔষধ লাগানো থাকে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে অন্যস্থায় রোযা ভাঙ্গেব না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)
★অক্সিজেন (Oxygen): রোজা অবস্থায় ঔষধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোযা ভাঙ্গবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
★মস্তিষ্ক অপারেশন (Brain Operation): রোজা অবস্থায় মস্তিস্ক অপারেশন করে ঔষধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক রোজা ভাঙ্গবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)
রক্ত নেয়া বা দেয়া : রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের করলে বা শরীরে প্রবেশ করালে রোজা ভাঙ্গবে না। (আহসানুল ফতওয়া)
★সিস্টোসকপি (cystoscopy): প্রসাবের রাস্তা দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয় এর দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না। (হেদায়া)
★প্রক্টোসকপি(proctoscopy): পাইলস, পিসার, অর্শ, হারিশ, বুটি ও ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপ বলে।মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যাতে ব্যথা না পায় সে জন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় কোন পিচ্ছল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরী ভিতরে প্রবেশ করে না। চিকিৎসকদের মতানুসারে ঐ পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সাথে মিশে থাকে এবং নলের সাথেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। আর থাকলেও তা পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে। যদিও শরীর তা চোষে না কিন্তু ঐ বস্তুটি ভিজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙ্গে যাবে।(ফতওয়া শামী)
★কপার-টি(Coper-T): কপার-টি বলা হয় যোনিদ্বারে প্লাস্টিক লাগানোকে, যেন সহবাসের সময় বীর্যপাত হলে বীর্য জরায়ুতে পৌছাতে না পারে। এ কপার-টি লাগিয়েও সহবাস করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।কাযা কাফফারা উভয়টাই ওয়াজিব হবে।
★সিরোদকার অপারেশন(Shirodkar Operation):সিরোদকার অপারেশন হল অকাল গর্ভপাত হওয়ার আশংখা থাকলে জরায়ুর মুখের চতুষ্পার্শ্বে সেলাই করে মুখকে খিচিয়ে রাখা।এতে অকাল গর্ভপাত রোধ হয়।যেহেতু এতে কোন ঔষধ বা বস্তু রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি স্থানে পৌছে না তাই এর দ্বারা রোযা ভাঙ্গবে না।
★ডি এন্ড সি (Dilatation and Curettage): ডি এন্ড সি হল আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্য Dilator এর মাধ্যমে জীবত কিংবা মৃত বাচ্চাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে নিয়ে আসা। এতে রোযা ভেঙ্গে যাবে। অযথা এমন করলে কাযা কাফফারা উভয়টি দিতে হবে এবং তওবা করতে হবে।(হেদায়া)
★এম আর(M.R): এম আর হল গর্ভ ধারণের পাঁচ থেকে আঁট সপ্তাহের মধ্যে যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ুতে এম,আর সিরন্জ প্রবেশ করিয়ে জীবত কিংবা মৃত ভ্রণ নিয়ে আসা। যারপর ঋতুস্রাব পুনরায় হয়। অতএব মাসিক শুরু হওয়ার কারণে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। কিন্তু যদি রাতের বেলা করা হয় তাহলে দিনের রোজা কাযা করতে হবে না। (ফতহুল কাদীর)
★আলট্রাসনোগ্রাম(Ultrasongram): আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষায় যে ঔষধ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সবই চামড়ার উপরে থাকে, তাই আলট্রাসনোগ্রাম করলে রোযা ভাঙ্গবে না। (হেদায়া)
★স্যালাইন(Saline): স্যালাইন নেয়া হয় রগে, আর রগ যেহেতু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়, তাই স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না, তবে রোজার কষ্ট লাঘবের জন্য স্যালাইন নেয়া মাকরূহ। (ফতওয়ায়ে দারাল উলূম)
★টিকা নেয়া (Vaccine) : টিকা নিলে রোজা ভাঙ্গবে না। কারণ, টিকা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তায় ব্যবহার করা হয় না। (আপকে মাসায়াল)
★ইনসুলিন গ্রহণ করা: (Insulin): ইনসুলিন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না। কারণ, ইনসুলিন রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে না এবং গ্রহণযোগ্য খালী জায়গায় প্রবেশ করে না।(জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
দাঁত তোলা রোজা অবস্থায় একান্ত প্রয়োজন হলে দাঁত তোলা জায়েয আছে। তবে অতি প্রয়োজন না হলে এমনটা করা মাকরূহ। ঔষধ যদি গলায় চলে যায় অথবা থুথু থেকে বেশী অথবা সমপরিমান রক্ত যদি গলায় যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (আহসানুল ফতওয়া)
পেস্ট, টুথ পাউডার ব্যবহার করা : রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথ পাউডার, পেস্ট, মাজন ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরূহ। কিন্তু গলায় পৌঁছালে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
★মুখে ঔষধ ব্যবহার করা : মুখে ঔষধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে বা ঔষধ অংশ বিশেষ গলায় প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। গলায় প্রবেশ না করলে রোজা ভাঙ্গবে না। (ফতওয়া শামী)
*রক্তপরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। তবে খুব বেশী পরিমাণে রক্ত দেয়া যার দ্বারা শরীরে দুর্বলতা আসে, তা মাকরূহ।
★ ডায়বেটিকসের সুগার মাপার জন্য সুচ ঢুকিয়ে যে একফোটা রক্ত নেয়া হয়, এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না।
★নাকে ঔষধ দেয়া : নাকে পানি বা ঔষধ দিলে যদি তা খাদ্য নালীতে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। (ফতওয়া রাহমানিয়া)
★চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করা : চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করার দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় অনুভব হয়। (হেদায়া)
★কানে ঔষধ প্রদান করা : কানে ঔষধ, তেল ইত্যাদি ঢুকালে রোযা ভাঙ্গবে না।
যেসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যায়:
--------------------------------------------
★ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু পানাহার করা।
★ স্ত্রী চুম্বন বা সহবাস দ্বারা বীর্যপাত হওয়া।
★ইচ্ছাকরে মুখভর্তি বমি করা। ★
★ পাথর লোহার টুকরা বা ফলের আটি ইত্যাদি গিলে ফেলা।
★ইচ্ছাকৃতভাবে গুহ্যদ্বার বা ও যৌন পথ দিয়ে যৌন সঙ্গম করা বা ঢুস নেয়া।
★ ইচ্ছাপূর্বক এমন জিনিস পানাহার করা যা খাদ্য বা ওষুধ রুপে ব্যবহার হয়।
যেসব কারণে রোজা ভাঙলে কাযা ওয়াজিব হয়:
-------------------------------------------
★ইচ্ছাকরে মুখভর্তি বমি করা।
★কোনো অখাদ্য বস্তু খেয়ে ফেলা।
★স্ত্রীকে চুম্বন বা স্পর্শে বীর্যপাত হওয়া।
★কুলি করার সময় অনিচ্ছায় পানি পেটে চলে গেলে।
★ সন্ধ্যা বিবেচনায় সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে।
★ঢুস নেয়া।
★জোরপূর্বক রোযাদারকে কেউ পানাহার করালে।
★ কেউ যৌনাঙ্গ ব্যতিরেকে সঙ্গম করায় তাতে বীর্যপাত হলে।
★ তরল ওষুধ লাগানোর কারনে তা পেটে বা মস্তিষ্কে পৌঁছে গেলে।
★সুবহে সাদেক মনে করে ভোরে পানাহার করলে।
★ ঘুমন্ত অবস্থায় কিছু খেয়ে ফেললে।
★ দাঁত থেকে ছোলা পরিমান কোনো কিছু বের করে গিলে ফেললে।
★ভুলবশত কিছু খেয়ে রোযা ভঙ্গ হয়েছে ধারনা করে ইচ্ছাপূর্বক আবার খেলে।
যেসব কারণে রোযা ভাঙলে কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব :
-------------------------------------------------
★ রোযা অবস্থায় ইচ্ছাপূর্বক স্ত্রী সহবাস করলে।
★ইচ্ছাপূর্বক পুং মৈথুন ও হস্ত মৈথুন করা বীর্যপাত করলে। ★ইচ্ছাপূর্বক কোনো খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করলে।
★শিঙ্গা নিয়ে এ ধারনায় ইচ্ছাপূর্বক পানাহার করলে যে, এখন তো রোযা নষ্ট হয়ে গেছে।
রোযাদারের জন্য যা জায়েয:
-----------------------------------------
★স্ত্রীর সঙ্গে স্বাভাবিক মেলামেশা করা বা চুমু দেওয়া। যদি বীর্যপাতের আশঙ্কা না থাকে।
★গোফে তেল ব্যবহার করা।
★চোখে সুরমা লাগানো।
★মেসওয়াক করা।
★এমনভাবে কুলি করা যাতে পেটে পানি প্রবেশের আশঙ্কা না থাকে।
★সাবধানতায় নাকে পানি দেওয়া যাতে ভেতরে
পানি চলে না যায়।
★গোসল করা।
★শিঙ্গা লাগানো, যদি এর দ্বারা রোজাদার দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকে।
★শরীরে ঢুস ব্যবহার করা।
★স্বামীর অশালীন কথাবার্তা শুনার আশঙ্কা থাকলে তরকারীর স্বাদ গ্রহণ করা।
★মুসাফির অবস্থায় অসহ্য কষ্ট হলে রোযা ছেড়ে দেওয়া।
★সন্তানকে দুধ পান না করালে যদি সন্তানের স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে রোযা ছেড়ে দেয়া বৈধ: কিন্তু পরবর্তীতে কাযা আদায় করতে হবে।
★প্রয়োজন মনে করলে সন্তানের মুখে খাবার চিবিয়ে দেওয়া। ★অনিচ্ছাকৃত বমি করা।
রোজাদারের জন্য নাজায়েয কাজ:
-------------------------------------------------
★যৌন সম্ভোগ ও হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটানো। ★ইচ্ছাকৃত পানাহার করা।
★শিঙ্গা লাগিয়ে রোযা নষ্ট হয়েছে মনে করে পানাহার করা। ★দাঁত থেকে কোনো খাদ্যকনা বের করে গিলে ফেলা। ★প্রয়োজন ছাড়া সন্তানের মুখে খাদ্য চিবিয়ে দেওয়া।
★মিথ্যা বলা, অশ্লীল কথা বা গালিগালাজ করা।
★ ভুলক্রমে কিছু পানাহার শুরু করে রোযা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে পেট পুরে পানাহার করা।
★সারাদিন রোযা শেষে ইফতারের সময় ইফতার না করা।
রোজা মাকরূহ হওয়ার কারণ:
------------------------------------------
★গড়গড়িয়ে কুলি করা। কেননা এতে পেটে পানি প্রবেশের আশঙ্কা থাকে।
★শরীরে তেল ব্যবহার করা। কেননা এত পশমের গোড়া দিয়ে তেল শরীরের অভ্যন্তরে ঢুকতে পারে।
★ শিঙ্গা লাগানো।
★ স্ত্রীকে চুম্বন করা। কেননা অনেক সময় এটা রোযাদারকে সঙ্গমের প্রতি ধাবিত করে।
★দাঁত থেকে বের করে কিছু চিবিয়ে খাওয়া।
★মিথ্যা কথা বলা। কেননা হাদিসে এসেছে মিথ্যা সকল পাপের মূল।
★অশ্লীল কথাবার্তা বলা।
★কাউকে গালি দেওয়া।
★ অন্যের দোষ ত্রোটি বর্ণনা করা।
★মুখ দিয়ে কোনো বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করা।
★গরম বা রোদে বারবার কুলি করা।
★অধিক উষ্ণতার কারণে গায়ে ভেজা কাপড় জড়িয়ে রাখা।
সাহরি খাওয়ার বিধান:
--------------------------------
রোজা রাখার নিয়তে শেষ রাতে বরকত লাভের জন্য কিছু খাওয়াকে সাহরি বলা হয়। ইমাম তাবারানী (রহ.) বর্ণনা করেছেন রাসুল (সা.) বলেন, ‘সাহরি গ্রহণকারীর খাবারের হিসাব হবে না’। তাছাড়া সাহরি খাওয়া রাসুল (সা.) এর একটি সুন্নত। রাসুল (সা.) এর হাদীস শরীফে সাহরি খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। হজরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাহরি খাও, কেননা তাতে বরকত রয়েছে’। (বোখারী: ১৯২৩) রোজাদারের জন্য বরকতময় খাবার হল সাহরি খাওয়া। সাহরি খাওয়া সুন্নত। কোন কারণে সাহরি খেতে না পারলে সাহরি খাওয়া ছাড়াই রোযার নিয়ত করবেন। এতে রোজার ক্ষতি হবে না। অর্ধ রাতের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যে কোনো সময়ে সাহরি খাওয়া হলে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। শেষ রাতে সাহরি খাওয়াই উত্তম। রাসুল (সা.) সাধারণত দেরি করে সাহরি খেতেন, তাই রাতের শেষ প্রহরে সাহরি খাওয়া সুন্নাত। রাসুল (স.) বলেন, ‘আমার উম্মত কল্যাণের সাথে থাকবে যতদিন তারা তাড়াতাড়ি ইফতারি করবে এবং সাহরি দেরি করে করবে’। (আহমদ)
ইফতারের বিধান:
-------------------------
ইফতার শব্দের অর্থ ভঙ্গ করা বা ভেঙ্গে ফেলা। আমিমুল ইহসান (র:) বলেন, রোজাদারের জন্য ইফতার হল তার পানাহার করা। শরীয়তের পরিভাষায় সারাদিন রোজা পালন শেষে সূর্যাস্ত হওয়ার পর পর পানি, শরবত, খেজুরসহ প্রয়োজনীয় খাবারের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলা হয়। রাসুল (সা.) বলেন, রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে ১. ইফতারের সময় ২. আখারাতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়’। (বোখারী ও মুসলিম) ইফতার খেজুর দিয়ে করা সুন্নাত। আবু ইয়ালা (রহ.) বলেন, “রাসুল (সা:) তিনটি খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। খেজুর ব্যতিত অন্যান্য ফলমূল দ্বারা ইফতার করা যাবে তবে খেজুর দ্বারা ইফতার করা ভাল। রাসুল (সা:) বলেন, “তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে সে যেন খেজুর দিয়ে করে কেননা তা বরকতময় যদি খেজুর না থাকে তবে পানি দিয়ে কেননা তা পবিত্র”। (আবু দাউদ, ২৩৫৬-পৃষ্ঠা)
ইফতারির পূর্বে রোজাদারের দোয়া মহান আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। হজরত ওমর (রা:) হতে বর্ণিত রাসুল (সা:) বলেন, “ ইফতারির সময় রোজাদারের দোয়া কবুল করা হয়। তাই ইফতারির সময় দোয়া পড়তে হয় “আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়াআলা রিযকিকা আফতারতু”। (আবু দাউদ)
তারাবির বিধান:
------------------------
তারাবি পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আর তারাবির নামাজ জামাতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। যে ব্যক্তি পরে যোগ দেয়ার কারণে কিছু তারাবিহ রয়ে গেছে তিনি ইমামের সাথে বিতর পরে নিবেন, অতপর অবশিষ্ট তারাবির নামাজ আদায় করবেন। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে হাফেজ হোক বা না হোক ইমাম বানানো ঠিক নয়। বালেগ ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করতে হবে। যে তারাবি পড়াবে তার নিকট থেকে আয়াতের অর্থ কিংবা সারসংক্ষেপ জেনে নেওয়া ভাল। যখন থেকে সাহাবিরা এই পড়া শুরু করেন তখন থেকে তারা দুই সালামের পর অর্থাৎ চার রাকাত নামাজের পর বিশ্রাম নিতেন। তাই এই নামাজের নাম তারাবি নামাজ করা হয়েছে। (ফতহুল বারী)
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রোজা:
-----------------------------------
হিন্দু বা বৌদ্ধরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় উপবাস,মুসলিমরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় সিয়াম। খ্রিস্টানরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় ফাস্টিং। বিপ্লবীরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় অনশন। আর ,মেডিক্যাল সাইন্সে উপবাস করলে তাকে বলা হয়-”অটোফেজি“।
রোজা কি? রোজা শব্দের অর্থ বিরত থাকা! সুবেহ সাদিক থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত কে পানাহার থেকে বিরত থাকাকে আমরা সাধারনভাবে রোজা বলে থাকি।
বেলজিক কোষ বিশেষজ্ঞ ক্রিসচিয়ান‘ডে দুভে আবিষ্কার করেন লাইসোজোমের। তার আবিষ্কার থেকেই ১৯৫৫ সালে লাইসোজোম শব্দের উৎপত্তি।
ডে দুভের আবিষ্কারের হাত ধরে ১৯৬৩ সালে অটোফেজি শব্দের উৎপত্তি হয়। অটোফেজি হল সে কৌশল যার মাধ্যমে জীবকোষ আভ্যন্তরীণ পরিবেশের আবর্জনা পরিষ্কার করে।
জাপানী বিজ্ঞানী Yoshinori Ohsumi ২০১৬ সালে নোবেল পান অটোফেজির উপরে কাজ করে।
এবার নিশ্চই প্রশ্ন আসে অটোফেজি জিনিষটা কি?
আমাদের শরীরের সুস্থ কোষগুলো যখন অসুস্থ কোষগুলোকে খেয়ে দেহকে সুস্থ রাখে একেই অটোফেজি বলে।
এবার নিশ্চই প্রশ্ন আসবে কিভাবে মানুষের অটোফেজি হয়?
অটোফেজি এর কারণ হচ্ছে মানুষের দেহকে অতিরিক্ত চাপে রাখা! আর মানুষের দেহকে অতিরিক্ত চাপে রাখতে সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল “অটোফেজি” বা “রোজা” বা “উপবাস”।
এছাড়া এক্সারসাইজের মাধ্যমেও কিছুটা অটোফেজি হয়।
এখন দেখা যাক অটোফেজি কেনো দরকার?
আমাদের শরীরের নষ্ট হয়ে যাওয়া বা অসুস্থ কোষগুলোকে পরিষ্কার করাটা জরুরি। অটোফেজি ছাড়া শরীরের নষ্ট হয়ে যাওয়া কোষ পরিষ্কারের আর কোন পদ্ধতি নেই। অটোফেজি ক্যানসার হওয়া থেকে বিরত রাখে, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে কাজ করে, পারকিনসন ডিজিজ প্রতিরোধ করে এছাড়াও নানা উপকারে আসতে পারে!
ওসুমির গবেষণার ফলশ্রুতিতে অটোফেজি নিয়ে গবেষণার দ্বার উন্মোচিত হয়। পরবর্তী গবেষকগণ অটোফেজি প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাতের সাথে পারকিন্স, আ্যলজাইমারস, ক্যান্সারের মত রোগের সূত্রপাত জড়িত তা প্রমাণ করেন। ওসুমির মূল্যবান গবেষণা ছাড়া এই দুরারোগ্য ব্যাধিগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আমাদের এখনও হয়ত অজানা থেকে যেত। তিনি অটোফেজি গবেষণা ক্ষেত্রের জনক হিসেবেই বর্তমানে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছেন। বিজ্ঞানে অটোফিজের এই ধারণাটা প্রকৃতপক্ষে রোজাকেই সমর্থন করে।
তাছাড়া প্রখ্যাত জার্মান চিকিৎসাবিদ ড. হেলমুট লুটজানার-এর The Secret of Successful Fasting অর্থাৎ উপবাসের গোপন রহস্য। এই বইটিতে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের গঠন ও কার্যপ্রণালী বিশ্লেষণ করে নিরোগ, দীর্ঘজীবী ও কর্মক্ষম স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে বছরের কতিপয় দিন উপবাসের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ড. লুটজানারের মতে, খাবারের উপাদান থেকে সারাবছর ধরে মানুষের শরীরে জমে থাকা কতিপয় বিষাক্ত পদার্থ (টকসিন), চর্বি ও আবর্জনা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র সহজ ও স্বাভাবিক উপায় হচ্ছে উপবাস। উপবাসের ফলে শরীরের অভ্যন্তরে দহনের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে শরীরের ভিতর জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থসমূহ দগ্ধীভূত হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, ‘রমযান' শব্দটি আরবির ‘রমজ' ধাতু থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ দহন করা, জ্বালিয়ে দেয়া ও পুড়িয়ে ফেলা। এভাবে ধ্বংস না হলে, ঐসব বিষাক্ত পদার্থ শরীরের রক্তচাপ, একজিমা, অন্ত্র ও পেটের পীড়া ইত্যাদি বিভিন্ন রোগব্যাধির জন্ম দেয়। এছাড়াও উপবাস কিড্নী ও লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরে নতুন জীবনীশক্তি ও মনে সজীবতার অনুভূতি এনে দেয়।
রোজা পালনের ফলে মানুষের শরীরে কোন ক্ষতি হয় না বরং অনেক কল্যাণ সাধিত হয়, তার বিবরণ কায়রো থেকে প্রকাশিত 'Science Calls for Fasting' গ্রন্থে পাওয়া যায়। পাশ্চাত্যের প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদগণ একবাক্যে স্বীকার করেছেন, "The power and endurance of the body under fasting conditions are remarkable : After a fast properly taken the body is literally born afresh."
অর্থাৎ রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের ক্ষমতা ও সহ্যশক্তি উল্লেখযোগ্য : সঠিকভাবে রোজা পালনের পর শরীর প্রকৃতপক্ষে নতুন সজীবতা লাভ করে।
রোজা একই সাথে দেহে রোগ প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। রোজাব্রত পালনের ফলে দেহে রোগ জীবাণুবর্ধক জীর্ণ অন্ত্রগুলো ধ্বংস হয়, ইউরিক এসিড বাধাপ্রাপ্ত হয়। দেহে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন প্রকার নার্ভ সংক্রান্ত রোগ বেড়ে যায়। রোজাদারের শরীরের পানির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার ফলে চর্মরোগ বৃদ্ধি পায় না।
আধুনিক যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার ব্যবহারিক তাৎপর্য উপলব্ধি করেই জার্মান, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে ব্যবস্থাপত্রে প্রতিবিধান হিসেবে এর উল্লেখ করা হচ্ছে।
ডা. জুয়েলস এমডি বলেছেন, ‘‘যখনই একবেলা খাওয়া বন্ধ থাকে, তখনই দেহ সেই মুহূর্তটিকে রোগমুক্তির সাধনায় নিয়োজিত করে।’’
ডক্টর ডিউই বলেছেন, ‘‘রোগজীর্ণ এবং রোগক্লিষ্ট মানুষটির পাকস্থলী হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেল, দেখবে রুগ্ন মানুষটি উপবাস থাকছে না, সত্যিকাররূপে উপবাস থাকছে রোগটি।’’
তাই একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার রোগীদের তিন সপ্তাহের জন্য উপবাস পালনের বিধান দিতেন।
রমযান মাসে অন্যমাসের তুলনায় কম খাওয়া হয় এবং এই কম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে দীর্ঘজীবন লাভের জন্যে খাওয়ার প্রয়োজন বেশি নয়। কম ও পরিমিত খাওয়াই দীর্ঘজীবন লাভের চাবিকাঠি। বছরে একমাস রোজা রাখার ফলে শরীরের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিশ্রাম ঘটে। এটা অনেকটা শিল্প-কারখানায় মেশিনকে সময়মত বিশ্রাম দেয়ার মত। এতে মেশিনের আয়ুষ্কাল বাড়ে। মানবদেহের যন্ত্রপাতিরও এভাবে আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায়।
ডা. আলেক্স হেইগ বলেছেন, ‘‘রোজা হতে মানুষের মানসিক শক্তি এবং বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়। স্মরণশক্তি বাড়ে, মনোসংযোগ ও যুক্তিশক্তি পরিবর্ধিত হয়। প্রীতি, ভালোবাসা, সহানুভূতি, অতীন্দ্রিয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে। ঘ্রাণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি প্রভৃতি বেড়ে যায়। এটা খাদ্যে অরুচি ও অনিচ্ছা দূর করে। রোজা শরীরের রক্তের প্রধান পরিশোধক। রক্তের পরিশোধন এবং বিশুদ্ধি সাধন দ্বারা দেহ প্রকৃতপক্ষে জীবনীশক্তি লাভ করে। যারা রুগ্ন তাদেরকেও আমি রোজা পালন করতে বলি।’’
বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড নারায়াড বলেন, ‘রোজা মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্ক রোগ নির্মূল করে দেয়। মানবদেহের আবর্তন-বিবর্তন আছে। কিন্তু রোজাদার ব্যক্তির শরীর বারংবার বাহ্যিক চাপ গ্রহণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। রোজাদার ব্যক্তি দৈহিক খিচুনী এবং মানসিক অস্থিরতার মুখোমুখি হয় না।’’
ডাঃ এ, এম গ্রিমী বলেন, ‘‘রোজার সামগ্রিক প্রভাব মানব স্বাস্থ্যের উপর অটুটভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে এবং রোজার মাধ্যমে শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে।’’
ডাঃ আর, ক্যাম ফোর্ডের মতে, ‘‘রোজা হচ্ছে পরিপাক শক্তির শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।’’
ডাঃ বেন কিম বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে উপবাসকে চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ (হাঁপানী), শরীরের র্যাশ, দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা, অন্ত্রনালীর প্রদাহ, ক্ষতিকর নয় এমন টিউমার ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে তিনি বলেন, উপবাসকালে শরীরের যেসব অংশে প্রদাহ জনিত ঘা হয়েছে তা পূরণ এবং সুগঠিত হতে পর্যাপ্ত সময় পেয়ে থাকে। বিশেষত খাদ্যনালী পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাওয়াতে তার গায়ে ক্ষয়ে যাওয়া টিস্যু পুনরায় তৈরি হতে পারে। সাধারণত দেখা যায় টিস্যু তৈরি হতে না পারার কারণে অর্ধপাচ্য আমিষ খাদ্যনালী শোষণ করে দূরারোগ্য সব ব্যাধির সৃষ্টি করে ডাঃ বেন কিম আরো বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন উপবাস কিভাবে দেহের সবতন্ত্রে স্বাভাবিকতা রক্ষা করে।
প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ জন ফারম্যান সুস্বাস্থ্য রক্ষায় উপবাস এবং খাবার গ্রহণের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে উপবাসের স্বপক্ষে মত দিয়েছেন।
এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় রমযানের রোজা রাখার সুফল পাওয়া যায় না মূলত খাদ্যাভ্যাস ও রুচির জন্য।
বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ নূরুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘রোজা মানুষের দেহে কোন ক্ষতি করে না। ইসলামে এমন কোন বিধান নেই, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। গ্যাষ্ট্রিক ও আলসার এর রোগীদের রোজা নিয়ে যে ভীতি আছে তা ঠিক নয়। কারণ রোজায় এসব রোগের কোন ক্ষতি হয় না বরং উপকার হয়। রমযান মানুষকে সংযমী ও নিয়মবদ্ধভাবে গড়ে তুলে।
১৯৫৮ইং সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাঃ গোলাম মুয়াযযম সাহেব কর্তৃক ‘‘মানব শরীরের উপর রোজার প্রভাব’’ সম্পর্কে যে গবেষণা চালানো হয়, তাতে প্রমাণিত হয় যে, রোযার দ্বারা মানব শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। কেবল ওজন সামান্য কমে। তাও উল্লেখযোগ্য কিছুই নহে, বরং শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে এরূপ রোজা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অপেক্ষা বহুদিক দিয়েই শ্রেষ্ঠ। ১৯৬০ ইং সালে তার গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করে রোজা দ্বারা পেটের শূলবেদনা বেড়ে যায়, তাদের এ ধারণা নিতান্ত অবৈজ্ঞানিক। কারণ উপবাসে পাকস্থলীর এসিড কমে এবং খেলেই এটা বাড়ে। এ অতি সত্য কথাটা অনেক চিকিৎসকই চিন্তা না করে শূলবেদনার রোগীকে রোজা রাখতে নিষেধ করেন। ১৭ জন রোজাদারের পেটের রস পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যাদের পাকস্থলীতে এসিড খুব বেশি বা খুব কম রোজার ফলে তাদের এ উভয় দোষই নিরাময় হয়েছে। এ গবেষণায় আরো প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করেন রোজা দ্বারা রক্তের পটাসিয়াম কমে যায় এবং তাতে শরীরের ক্ষতি সাধন হয়, তাদের এ ধারণাও অমূলক। কারণ পটাসিয়াম কমার প্রতিক্রিয়া প্রথমে দেখা যায় হৃদপিন্ডের উপর অথচ ১১ জন রোজাদারের হৃদপিন্ড অত্যাধুনিক ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম যন্ত্রের সাহায্যে (রোজার পূর্বে ও রোজা রাখার ২৫ দিন পর) পরীক্ষা করে দেখা গেছে রোজা দ্বারা তাদের হৃদপিন্ডের ক্রিয়ার কোনই ব্যতিক্রম ঘটে নাই।
সুতরাং বুঝা গেল যে, রোজার দ্বারা রক্তের যে পটাসিয়াম কমে তা অতি সামান্য এবং স্বাভাবিক সীমারেখার মধ্যে। তবে রোজা দ্বারা কোন কোন মানুষ কিছুটা খিট খিটে মেজাজী হয়। এর কারণ সামান্য রক্ত শর্করা কমে যায় যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ক্ষতিকর নয়। অন্য কোন সময় ক্ষিধে পেলেও এরূপ হয়ে থাকে।
রোজা থেকে শারীরিক ফায়দা লাভের জন্যে রোজাদারদের প্রতি ডাঃ আমীর আই, আহমদ আনকাহর কতিপয় মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলো নীচে দেয়া হলো
★যদি আপনি বিত্তবান হোন তবে অধিক ভোজন ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করে চলুন। রোজা রেখে সুস্থ থাকুন- এ প্রতীক গ্রহণ করুন।
★সহায় সম্বলহীন আপন ভাইকে সাহায্য করুন।
★ রমযান মাস সম্পদশালীদের জন্যে নিবেশ আর গরীবদের জন্য ভালো খাবার মাস মনে করুন।
★দিনের বেলা ক্ষুৎপিপাসার তাড়না থেকে মুক্তি পেতে হলে রাতে অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করুন।
★খাদ্য ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
★খাবার ব্যবস্থা করতে না পারলে শুধুমাত্র দুধের উপর নির্ভর করতে পারেন।
★ যথাসম্ভব ইফতার তাড়াতাড়ি আর সেহেরী দেরীতে খাওয়া ভালো।
★সেহরী খেয়ে সটান না হয়ে বিনিদ্র রজনী যাপন করুন। তাতে খাদ্য ঠিকমত হজম হয়।
★ইফতারের পর চটপটি জাতীয় এবং ঠান্ডা জিনিস অধিক পরিমাণে গ্রহণ করবেন না।
★সারাদিন কাজে লিপ্ত থাকুন। ক্ষুৎপিপাসা ভুলতে চেষ্টা করবেন না।
★রমযান মাসে নেক কাজ ও ত্যাগ তিতিক্ষার যে অভ্যাস আপনার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে, তা সবসময় চালু রাখুন।
★জীবনের চড়াই উৎরাই সবসময় রোজার দাবিকে সমুন্নত রাখুন।
★কু-চিন্তা ও ধ্যান-ধারণা থেকে মুক্ত থাকুন। কুচিন্তা বিষসদৃশ যা স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে দেয়। কুচিন্তা ও কুধারণার উপশম না ওষুধে হয় না খাদ্যে।
★মুসলমান নিজেদের জীবনে স্বল্পতুষ্টি, তাওয়াক্কুল শান্তি ও মনের সন্তুষ্টির মত বেশিষ্ট্যসমূহ বাস্তবায়িত করার মধ্য দিয়ে রমযানের বরকতের পর্যবেক্ষণ করবে। এর মধ্যেই সাহসের বিস্তৃতি ও মনের শান্তি এবং এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানুষের আরোগ্য লাভের গুপ্ত রহস্য।
★রমযানের সিয়াম সাধনায় মুসলমান হবে স্বাস্থ্যবান এবং পুণ্য ও পবিত্র আত্মার অধিকারী।
উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের মানুষ ইফতার ও সাহরীতে সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ না করে মুখরোচক মশলাদার খাবার গ্রহণ করে। এতে পাকস্থলীর এসিডিটি, আলসার, বদহজম আরো বেড়ে যায়।
তিরমিজি শরীফে এসেছে রাসূল (সা.) মাগরিবের নামাজের পূর্বে কয়েকটি তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। খেজুর না থাকলে কয়েক কোশ পানিই পান করতেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেন না এতে বরকত রয়েছে। যদি খেজুর না পায় তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কারণ পানি হলো পবিত্রকারী।'
উপমহাদেশে ইফতারের রকমারি আয়োজন থাকলেও তাদের সারাবিশ্বের মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা উচিৎ। সাধারণত পানি, খেজুর, মুড়ি, ফলের রস, চিড়ার পানি, (বা এ দ্বারা তৈরি খাবার), দুধ ইত্যাদি দিয়ে ইফতারের আয়োজন করা যেতে পারে।
রমযানে দুই খাবার গ্রহণের মধ্যবর্তী সময় কম থাকায় পাকস্থলী গুরুপাক খাবার দিয়ে বোঝাই না করাই উত্তম। আসল বিষয় হলো রমযানের উদ্দেশ্য পূরণে রকমারি খাবার আয়োজন রোজার সুফলকে ম্লান করে দেয়।
রোযা রাখার ব্যাপারে বিধি নিষেধ :
-------------------------------------------------
রোযা রাখার ব্যাপারে আমরা মাঝে মাঝে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এমন অনেক অসুস্থ্য ব্যক্তি আছেন যাদের রোযা রাখলে আরো অসুস্থ্য হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তাদের রোজা রাখার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়।
আবার ঠিক ততটা অসুস্থ্য নয় কিন্তু অসুস্থ্যতার উল্লেখ করে রাযা না রাখাও বৈধ নয়। কুরআনে রয়েছে, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত অথবা সফরে থাকে, সে যেন অন্য দিনসমূহে এই সংখ্যা পূর্ণ করে। (সূরা বাকারাহ)
রাসূল (সা.) সফররত রোজাদারদেরকে কখনো কখনো তিরস্কার করেছেন। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখা দরকার, প্রয়োজনীয় ও জরুরি ক্ষেত্রে সফর হলে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। শুধুমাত্র বেড়ানোর উদ্দেশ্যে এই নিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়।
বিশেষ কিছু রোগে যেমন-উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে রোজা রাখতে হবে। কেননা এসব এমন ধরনের অসুস্থতা যা সম্পূর্ণ আরোগ্য হয় না। ফলে রোগী রমযান ছাড়া অন্যসময় এসব রোজা পূর্ণ করতে পারে না।
ডা. ফারাদেই আজিজি এবং ডা. শিয়াকোলা ডায়াবেটিস রোগীদের উপর এক বিশেষ জরিপ চালান। সেখানে কিছু রোগীকে রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয় এবং কিছু রোগীকে অনুৎসাহিক করা হয়। Šটবটঢটভ এর্ট্রধভথ টভঢ ঊধটঠর্ণণ্র বণফফর্ধল্র' এ শিারোনামে ওয়েব সাইটে তারা এ রোগীদের জন্য বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।
যে সব ডায়াবেটিক রোগী ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল নয় অর্থাৎ মুখে ওষুধ এবং পরিমিত খাদ্যাভ্যাস এবং শরীর চর্চা করে থাকেন তাদের রোজা রাখতে তেমন কোন অসুবিধা হয় না, এক্ষেত্রে সাহরীর কিছু সময় পূর্বে ওষুধ সেবন করতে হবে এবং ইফতারের তালিকায় শর্করা ও স্নেহ জাতীয়ত খাদ্যের পরিমাণ কম রাখতে হবে। এছাড়া তাদের নিয়মিত গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে হবে যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার তারতম্য অস্বাভাবিক না হয়ে যায়।
যে সব রোগী শুধুমাত্র ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল অর্থাৎ এ ছাড়া অন্যকোন উপায়ে রক্তের চিনির মাত্র নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না তাদের খুবই সতর্কতার সাথে রোজা রাখতে হবে। এসব রোগীর চিনির মাত্রা খুব নিচে নেমে গিয়ে রোগী শকে চলে যেতে পারে। সেজন্য শকের যে সব লক্ষণ রয়েছে সেগুলো রোগীকে খুব সাবধানতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেমন-অনেক ঘামতে থাকা, অস্থিরতা অনুভব করা, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি। এসব রোগীর যেকোন সময় এধরনের সমস্যা হতে পারে বিধায় সবসময় ডায়াবেটিক রোগীর অঊ কার্ড বহন করতে হবে। নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা করা ও সব সময় একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। এইসব রোগীকে রোযা রাখতে উৎসাহিত করা হয় না।
যাদের রোজা না রাখাই ভালো
---------------------------
★শুধুমাত্র ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগী।
★ খুব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না (রক্তের গ্লুকোজ) এমন রোগীর
★ যে সব ডায়াবেটিক রোগী অন্যকোন জটিল রোগে আক্রান্ত যেমন-বুকে ব্যথা এবং অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ
★ যাদের ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা রয়েছে
★সন্তান সম্ভাবা ডায়াবেটিক মা।
★যাদের ডায়াবেটিসের সাথে ঘন ঘন ইনফেকশনের ইতিহাস রয়েছে
★এমন বয়স্ক রোগী যারা ডায়াবেটিসজনিত অসুস্থতা ব্যাখ্যা করতে পারেন না।
★ রমযান মাসেই যদি দুই থেকে তিনবার রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা খুব কম বা বেশি হয়ে থাকে
অনেক রোগী রয়েছে যারা অধিক ওজন সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছে তারাও রোজা রাখার ক্ষেত্রে অনেক সাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। রমযান শুধু দৈহিক অসুস্থতাই নয়, যারা অনেকদিন ধরে মানসিক অবসন্নতা বা বিভিন্ন রকম দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত তাদের জন্যও চিকিৎসা হিসেবে কাজ করছে। এরকম একটি জরিপে দেখা গেছে রোজা রাখার কারণে যেসব রোগী তাদের কথাবার্তা এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম নিময়-শৃক্মখলার মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে তাদের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করা গেছে।
তাই বলা যায়,কুরআনের প্রতিটি বিধানই মানব জাতির জন্যে কল্যাণকর। গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে রোজার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
২৭-০৪-২০১৯ইং
------------------------
রোজা ( روزہ) ফার্সিভাষা থেকে বাংলাভাষায় প্রবেশকৃত একটি বিদেশি শব্দ।
শাব্দিকঅর্থে রোজার বাংলা হচ্ছে 'দিন'। যদিও এটা সরাসরি আরবিশব্দ সাউম ( صوم ) এর অর্থ প্রকাশ করে না,কিন্তু রোজার দ্বারা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ সাওমই উদ্দেশ্য।
আরবিব্যাকরণ অনুযায়ীصومশব্দটি বাবে নাসারার ক্রিয়ামূল।
অভিধানিক অর্থ 'ইমসাক' অর্থাৎ কোন কিছু থেকে বিরত থাকা, কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা কথাবলা থেকে বিরত থাকা।
আল্লামা রাগেব ইস্পাহানী এর মতে, কাজ থেকে বিরত থাকা। সিয়াম হচ্ছে তার বহুবচন।
তবে আরবি ক্রিয়ামূলের বহুলপরিচিত গ্রন্থ "আরবি ছাফওয়াতুল মাছাদির" প্রণেতা সরাসরি আস-সাওমু মাছদারের অর্থ সরাসরি রোজারাখাই বলেছেন।
ইংরেজিতে যাকে Fastingবা Islamic Fasting অথবা Holy Fastইত্যাদি বলা হয়।
পারিভাষিক সংজ্ঞায় আল্লামা মুহাম্মদ আলী সুবনী তার রওয়িউল বয়ান গ্রন্থে বলেন, "ইবাদতের নিয়তে ফজরের উদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং স্ত্রী সহবাস হতে বিরত থাকাকে রোজা বলা হয়।"
রোজা কীভাবে সাওমের সমার্থক:
---------------------------------------------
সুবহেসাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যস্ত যেহেতু দিনের অংশ, সেহেতু সাওমকে ফার্সিভাষায় রোজা বলা হয়।
কেননা রোজা অর্থ দিন, আর সাওমের বর্ণিত নিষিদ্ধবিষয়গুলো থেকে বিরত থাকার সময়সীমা হচ্ছে, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত; যা দিনের অংশের মধ্যে পড়ে। সুতরাং সাওম এর শাব্দিক অর্থ সরাসরি রোজা না হলেও সঙ্গতকারণে ফার্সিভাসায় রোজা শব্দদ্বারা সাওমই বুঝানো হয়।
সাধারণ অর্থে সাওম:
-----------------------------
সাওম শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা। তাইতো চুপ বা নিস্তব্ধ থাকাকে সিয়াম বলে। আর যে ব্যক্তি চুপ থাকে তাকে সায়েম বলে।
পবিত্র কুরআনের সুরা মারইয়ামে আল্লাহ তায়ালা হযরত মরিয়ম (আঃ)এর বিনাপিতায় হযরত ঈসা(আঃ)এর জন্ম সম্পর্কিত ঘটনা তুলে ধরে বর্ণনা করেন, "ফাইম্মা তারাইন্না মিনাল বাশারি আহাদান ফাকুলি ইন্নি নাজারতু লির রাহমানি সাওমান ফালান উকাল্লিমাল ইয়াওমা ইনসিয়ান।" (সুরা মারইয়াম আয়াত ২৬)
অর্থ : (সন্তান ভূমিষ্ঠের পর) যদি মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখ (কোনো প্রশ্ন বা কৈফিয়ত করতে) তবে তুমি বলো, ‘আমি দয়াময় আল্লাহর উদ্দেশে সাওম বা রোজা (কথা বলা থেকে বিরত থাকতে) মানত করছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলবো না। (সুরা মারইয়াম : আয়াত ২৬)
কোরআন কারিমের এ আয়াতের শিক্ষনীয় ঘটনা : হযরত মরিয়ম আলাইহি ওয়া সাল্লামের গর্ভে সন্তান জন্ম লাভের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, শিশুর ব্যাপারে তোমার কিছু বলার প্রয়োজন নেই। তার জন্মের ব্যাপারে যে কেউ আপত্তি তুলবে তার জবাব দেবার দায়িত্ব এখন আমার (আল্লাহর)। উল্লেখ্য, বনি ইসরাঈলের মধ্যে মৌনতা বা কথা বলা থেকে বিরত থাকার পদ্ধতি অবলম্বনের রোজা রাখার রীতি ছিল।]
বলা বাহুল্য এখানে ‘সওম’ এর অর্থ হলো কথা বলা থেকে বিরত থাকা।
কারণ প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম নয়; বরং অসারতা ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকার নামই হলো (প্রকৃত) সিয়াম। সুতরাং যদি তোমাকে কেউ গালাগালি করে অথবা তোমার প্রতি মুর্খতা দেখায়, তাহলে তুমি (তার প্রতিকার বা প্রতিশোধ না নিয়ে) তাকে বলো যে, আমি সায়েম, আমি রোযা রেখেছি, আমি রোযা রেখেছি। (মুস্তাদরেকে হাকেম, ইবনে হিব্বান)
রোজার প্রকার:
---------------------
রোজা মোট ছয় প্রকার ১. ফরজ রোজা,
যেমন রমজান মাসের ।
২. ওয়াজিব রোজা, যেমন মান্নতের রোজা ।
৩. সুন্নত রোজা, যেমন, আশুরার রোজা
৪. মুস্তহাব রোজা, যেমন আইয়ামে বীজের রোজা প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা। রাখা। ৫. মাকরুহ রোজা, আশুরার ১টি রোজা রাখা।
৬. হারাম রোজা, যেমন দুই ঈদের দিনে রোজা এবং কুরবানির ঈদের পরের তিন দিন রোজা রাখা।
রোজা কখন ফরজ হয়:
--------------------------------
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগেও রোজা ফরজ ছিল, তবে কোন রোজা ফরজ ছিল এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন ১০ মহররম অর্থাৎ আশুরার রোজা ফরজ ছিল, আবার কারও কারও মতে, ‘আইয়ামুল বিজ’ অর্থাৎ প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা ফরয ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করলেন তখন আইয়ামুল বিজের রোজা রাখতেন। হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে অর্থাৎ দ্বিতীয় হিজরিতে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য রোজা ফরজ করে এ এ আয়াত নাজিল হয় ‘রমজান মাস, এ মাসেই নাজিল করা হয়েছে কোরআন মানুষের জন্য হেদায়েত, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। তবে কেউ রোগাক্রান্ত হলে অথবা সফরে থাকলে এ সংখ্যা অন্য সময় পূরণ করবে। আল্লাহ চান তোমাদের জন্য যা সহজ তা, আর তিনি চান না তোমাদের জন্য যা কষ্টকর তা, যেন তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করো এবং আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো, তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার জন্য এবং যেন তোমরা শোকর করতে পার।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)।
এ আয়াত নাজিলের পর আশুরার রোজা অথবা আইয়ামুল বিজের রোজা পালনের ফরজিয়াত মানসুখ(রহিত) হয়ে যায়।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আব্বাস (রা.) এর বর্ণনা থেকে জানা যায়, আগে রোজা ছিল এক সন্ধ্যা থেকে আরেক সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাতে ঘুমানোর পরে পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ করা বৈধ ছিল না।
রোজার ইতিহাস:
------------------------
মানুষের জন্য রমজান মাসের সিয়াম বা রোজাই প্রথম রোজা নয়। কারণ, সিয়াম বা রোজা হলো এমন এক ইবাদত, যা মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই আল্লাহ তায়ালা বান্দার জন্য ফরজ করেছে
বস্তুত রোজা রাখার বিধাণ সর্বযুগে ছিল । হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আখিরী নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলগণের যুগেই রোজার বিধান ছিল ।
এদিকে ইঙ্গিত করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে ইমানদারগণ ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল যাতে তোমাদের পরহেয্গারী অর্জিত হয় ;
( সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)
এ আয়তের ব্যখ্যায় আল্লামা আলূসী (রঃ) স্বীয় তাফসীর গ্রন্থ ‘রুহুল মাআনী’ তে উল্লেখ করেছেন যে এখানে ‘মিন ক্বাবলিকুম’ দ্বারা হযরত আদম (আঃ) হতে শুরু করে হযরত ঈসা (আঃ) এর যুগ পর্যন্ত সকল যুগের মানুষকে বুঝানো হয়েছে । এতে এ কথা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, রোযা কেবল আমাদের উপরই ফরয করা হয়নি বরং আদম (আঃ) এর যুগ হতেই চলে এসেছে । অন্যান্য তাফসীর বিশারদগণও অনুরূপ মতামত ব্যক্ত করেছেন । শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (রঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ
রোযার হুকুম হযরত আদম (আঃ) এর যুগ হতে বর্তমান কাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলে এসেছে
(ফাওয়াইদে উসমানী)
কোনো কোনো তাফসিরের বর্ণনায় রয়েছে, আদম (আ.)-এর সৃষ্টির পর তাঁকে 'নিষিদ্ধ ফল' আহার বর্জনের যে আদেশ দিয়েছেন- এটাই মানব ইতিহাসের প্রথম সিয়াম সাধনা। ইতিহাসে আরো পাওয়া যায়, আদম (আ.) সেই রোজা ভাঙার কাফ্ফারাস্বরূপ ৪০ বছর রোজা রেখেছিলেন।
আর ওই নিষিদ্ধ ফলের প্রভাব আদম (আ.)-এর পেটে ৩০ দিন বিদ্যমান ছিল বলে আদম (আ.)-এর শ্রেষ্ঠ সন্তান মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতকে আল্লাহ তাআলা এক মাস রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিহাসে এ-ও পাওয়া যায়, ওই ফলের প্রভাবে হজরত ইব্রাহিম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব যুগে ৩০টি রোজা ফরজ ছিল।
তবে হযরত আদম (আঃ) এর রোযার ধরন কেমন ছিল তা সঠিকভাবে বলা যায় না । আল্লামা ইমাদুদ্দীন ইবন কাশীর (রঃ) বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখার বিধান ছিল । পরে রমজানের রোযা ফরয হলে তা রহিত হয়ে যায় । হযরত মু’আয, ইবন মাসউদ, ইবন আব্বাস, আতা, কাতাদা এবং যাহ্হাক (রাঃ) এর মতে তিন দিন রোযা রাখার বিধান হযরত নূহ (আঃ) এর যুগ হতে শুরু করে নবী করিম (সঃ) এর জামানা পর্যন্ত বলবৎ ছিল । পরে আল্লাহ্ তা’আলা রামাযানের রোযা ফরজ করে ঐ বিধান রহিত করে দেন ।
তাফসীরে রুহুলমাআনীতে একথাও উল্লেখ আছে যে,
‘যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল’ বলে যে তুলনা করা হয়েছে তা শুধু ফরয হওয়ার ব্যাপারে প্রযোজ্য হতে পারে । অর্থাৎ তোমাদের উপর যেমন রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও রোযা ফরজ করা হয়েছিল । যদিও নিয়ম এবং সময়ের দিক থেকেও এ তুলনা প্রযোজ্য হতে পারে । তাই বলা হয়যে, কিতাবিদের উপরও রামাযানের রোযা ফরজ ছিল । তারা তা বর্জন করে বছরে ঐ একদিন উপবাসব্রত পালন করে, যেদিন ফির’আউন নীলনদে নিমজ্জিত হয়েছিল । এরপর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও উক্ত দিনে রোজা রাখে । অবশ্য তারা এর সাথে আগে-পিছে আরো দুইদিন সংযোজন করে নেয় । এভাবে বাড়াতে বাড়াতে তারা রোজার সংখ্যা পঞ্চাশের কোটায় পৌঁছে দেয় । গরমের দিন এ রোজা তাঁদের জন্য দুঃসাধ্য হলে তারা তা পরিবর্তন করে শীতের মৌসুমে নিয়ে আসে ।
মুগাফ্ফাল ইব্ন হানযালা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেন খৃষ্টান সম্প্রদায়ের উপর রামাযানের একমাস রোযা ফরয করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে তাঁদের জনৈক বাদশাহ অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা এ মর্মে মানত করে যে, আল্লাহ্ তাঁকে রোগমুক্ত করলে রোযার মেয়াদ আরো দশ দিন বাড়িয়ে দেব । এরপর পরবর্তী বাদশাহর আমলে গোস্ত খাওয়ার কারনে বাদশাহর মুখে রোগব্যধি দেখা দিলে তারা আবারো মানত করে যে, আল্লাহ্ যদি তাঁকে সুস্থ করে দেন তবে আমরা অতিরিক্ত আরো সাতদিন রোযা রাখব । তারপর আরেক বাদশাহ সিংহাসনে সমাসীন হয়ে তিনি বললেন, তিন দিন আর ছাড়বো কেন ? এবং তিনি এও বলেন যে, এ রোযাগুলো আমরা বসন্তকালে পালন করব । এভাবে রোযা ত্রিশের সংখ্যা অতিক্রম করে পঞ্চাশের কোটায় পৌঁছে যায়
(রুহুল মাআনি, ২য় খন্ড)
হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীরা আশুরার দিন সাওম পালন করে । তিনি জিজ্ঞাসা করালেন কি ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে সাওম পালন কর কেন?) তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন । এ দিনে আল্লাহ্ তা’আলা বনী ইসরাইলকে তাঁদের শত্রুর কবল থেকে নাজাত দান করেন, ফলে এ দিনে মুসা (আঃ) সাওম পালন করেন । রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসার অধিক হকদার । এরপর তিনি এ দিন পালন করেন এবং সাওম পালনের নির্দেশ দেন
(বুখারী, সাওম অধ্যায়)
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, হযরত মুসা ও হযরত ঈসা (আঃ) এবং তাঁদের উম্মাতগণ সকলেই সাম পালন করেছেন । নবীগণের মধ্যে হযরত দাউদ (আঃ) এর রোযা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্নিত । তিনি বলেন, নবী (সঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি সবসময় রোযা রাখ এবং রাতভর নামায আদায় কর । আমি বললাম জী, হ্যাঁ । তিনি বললেনঃ তুমি এরূপ করলে তোমার চোখ বসে যাবে এবং শরীর দূর্বল হয়ে পড়বে । যে ব্যক্তি সারা বছর রোযা রাখল সে যেন রোযাই রাখলনা । (প্রতি মাসে) তিনি দিন রোযা রাখা সারা বছর রোযা রাখার সমতুল্য । আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী রাখার সামর্থ রাখি । তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি ‘সাওমে দাঊদী’ পালন কর । তিনি একদিন রোযা রাখতেন আর একদিন ছেড়ে দিতেন । (ফলে তিনি দূর্বল হতেন না) এবং যখন তিনি শত্রুর সম্মুখীন হতেন তখন পলায়ন করতেন না ।
(বুখারী, সাওম অধ্যায়)
এতে একথা প্রমাণিত হয় যে, হযরত দাউদ (আঃ) ও সিয়াম পালন করেছেন । মোটকথা হযরত আদম (আঃ) এর যুগ থেকেই রোযা রাখার বিধান ছিল । কিন্তু পরবর্তীকালে আদর্শচ্যুত হয়ে লোকেরা আল্লাহ্র বিভিন্ন বিধানকে যেভাবে পরিবর্তন ও বিকৃত করেছিল অনুরূপভাবে রোযার ধর্মীয় তাৎপর্য ও বৈশিষ্ট্য শেষ হয়ে একটি নিছক প্রথায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল ।
এহেন অবস্থা হতে রোযাকে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের দিকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এবং একে অত্মিক, নৈতিক ও চারিত্রিক কল্যাণের ধারক বানানোর নিমিত্তে মহান রাব্বুল আলামিন দ্বিতীয় হিজরিতে রামাযানের মাসের রোযাকে এ উম্মাতের উপর ফরয করে দেন । এভাবেই রোজার ধারাবাহিকতা রক্ষাপায়।
রমজানের রোজার ফজিলত:
------------------------------------------
আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে কুদ্সীতে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘আদম সন্তানের প্রতিটি আমলের ছাওয়াবই দ্বিগুণ করে দেয়া হয়। প্রতিটি সৎকাজ দশগুণ থেকে সাতশগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: তবে রোজা ব্যতীত; কেননা রোজা কেবল আমার এবং আমিই এর প্রতিদান দিই। রোজাদার আমার জন্য তার লালসা ও খাদ্য পরিত্যাগ করে। রোজাদারের দুটি আনন্দ রয়েছে: একটি হলো রোজা ছাড়ার সময়, আর অন্যটি হলো তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়। আর রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট কস্তুরির সুগন্ধি থেকেও প্রিয়। ( বুখারী ও মুসলিম।)
আবু হুরায়রা (রা.) আরো বলেছেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম)
অপর হাদিসে এসেছে, হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)
রমজানের ফজিলত নিয়ে আরো অনেক হাদিস বিভিন্ন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে।
এই মাসে যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে ১টি নফল আমল করল সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি এই মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করলো।
এসব শুনে সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তো এমন সামর্থ্য রাখে না যে রোজাদারকে (তৃপ্তি সহকারে) ইফতার করাবে? রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহ পাক এই সওয়াব দান করবেন যে রোজাদারকে ইফতার করায় এক চুমুক দুধ দিয়ে, অথবা একটি খেজুর দিয়ে, অথবা এক চুমুক পানি দিয়ে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়ায় আল্লাহ তায়ালা তাকে হাউজে কাউছার থেকে পানি পান করাবেন যার পর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে পুনরায় তৃষ্ণার্ত হবে না।
এটা এমন পবিত্র মাসের প্রথম দিক রহমত, মাঝের দিক মাগফিরাত, আর শেষ দিক হচ্ছে দোযখ থেকে মুক্তির। যে ব্যক্তি এই মাসে আপন অধীনস্থ দাস-দাসীদের কাজের বোঝা হালকা করে দেবে মহান আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন এবং তাকে দোযখ থেকে মুক্তি দান করবেন। (বায়হাকী)
নবীর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু ওবায়দা (রা.) রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে আরেকটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরুপ যতক্ষণ পর্যন্ত তা ফেড়ে না ফেলা হয় (অর্থাৎ রোজা মানুষের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তা নিয়ম অনুযায়ী পালন করা হয়)। (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)
সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেছেন, হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, অনেক রোজাদার ব্যক্তি এমন রয়েছে যাদের রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ব্যতিত আর কিছুই লাভ হয় না। আবার অনেক রাত জাগরণকারী এমন রয়েছে যাদের রাত জাগার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না। (নেক আমল যদি এখলাস ও আন্তরিকতার সঙ্গে না হয়ে লোক দেখানোর উদ্দেশে হয় তাহলে এর বিনিময়ে কোনো সওয়াব পাওয়া যায় না)। (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) আরো বলেছেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে শরীয়ত সম্মত কোনো কারণ ছাড়া রমজানের একটি রোজাও ভাঙে সে রমজানের বাইরে সারাজীবন রোজা রাখলেও এর বদলা হবে না। (তিরমিযী, আবু দাউদ)
রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, রমজানের জন্য বেহেশত সাজানো হয় বছরের প্রথম থেকে পরবর্তী বছর পর্যন্ত। তিনি বলেন, যখন রমজান মাসের প্রথম দিন উপস্থিত হয় বেহেশতের গাছের পাতা হতে আরশের নিচে বড় বড় চোখ বিশিষ্ট হুরদের প্রতি বিশেষ হাওয়া প্রবাহিত হয়। তখন তারা বলে, হে পালনকর্তা! আপনার বান্দাদের মধ্য হতে আমাদের জন্য এমন স্বামী নির্দিষ্ট করুন যাদের দেখে আমাদের চোখ জুড়াবে এবং আমাদের দেখে তাদের চোখ জুড়াবেে।
পবিত্র রমজানের রোজার পালনীয় দিক সমূহ:
----------------------------------------
★চাঁদ দেখে রোজা রাখা,
★সকাল হওয়ার আগে রোজার জন্য নিয়ত করা,
★ পানাহার ও জৈবিক বিশেষ করে যৌন চাহিদা পূরণ করা থেকে বিরত থাকা,
★ইচ্ছাকৃত বমি করা থেকে নিবৃত্ত থাকা ও
★রোজার পবিত্রতা রক্ষাকরা।
রোজার রুকনসমূহ:
----------------------------
★সুবেহ সাদেক উদয় হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজাভঙ্গকারী বিষয় থেকে বিরত থাকা।
কেননা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
(وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ثُمَّ أَتِمُّواْ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيۡلِۚ)
অর্থাৎ: এবং তোমরা আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। (সূরা আল বাকারা:১৮৭)
সাদা ও কালো রেখার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, দিনের শুভ্রতা ও রাতের কৃষ্ণতা।
★ নিয়ত
অর্থাৎ রোজাদার ব্যক্তি রোজাভঙ্গকারী-বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার নিয়ত করবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় সকলকাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল, আর প্রত্যেকের জন্য তাই নির্ধারিত যা সে নিয়ত করেছে।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
কেননা যে ব্যক্তি ভুল করে রোজা ভঙ্গ করল,
সূর্যাস্ত সম্পন্ন হয়েছে অথবা সুবেহ সাদেক উদয় হয়নি বলে ধারণা করে যে ব্যক্তি খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করল, কিন্তু পরবর্তীতে প্রকাশ পেল যে তার ধারণা ভুল ছিল, এমতাবস্থায় ওই রোজা কাজা করা আবশ্যক হবে না। এর প্রমাণ আল্লাহ তাআলার বাণী:
(وَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٞ فِيمَآ أَخۡطَأۡتُم بِهِۦ وَلَٰكِن مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوبُكُمۡۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا ٥ )
অর্থাৎ: আর এ বিষয়ে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোনো পাপ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)। আর আল্লাহ অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আল আহযাব:৫)
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মাতের ওপর ভুল ও ভুলে যাওয়া ও বাধ্য হয়ে-কৃত বিষয়গুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ (বর্ণনায় ইবনে মাজাহ)
রোজা ফরজ হওয়ার শর্তসমূহ:
--------------------------------------------------
★মুসলিম হওয়া।
তাই অমুসলিমের ওপর রোজার বিধান নেই।
★প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ের ওপর রোজা ফরজ নয়।
★জ্ঞান সম্পর্ণ হওয়া। অর্থাৎ মস্তিষ্ক বিকৃত (পাগল) লোকের ওপর রোজা ফরজ নয়।
★আজাদ বা স্বাধীন হওয়া
★.ত্বাহিরা(এটা মহিলাদের জন্য)
হায়েয তথা ঋতুকাল এবং নিফাস তথা সন্তান জন্মদান পরবর্তী সময়ে পবিত্র থাকা
হায়েযের সংজ্ঞা
---------
নারীর যৌনাঙ্গ থেকে কোনো কারণ ছাড়া নির্দিষ্ট সংখ্যক দিন যে রক্ত বের হয়-তাকে হায়েয বা মাসিক বলে।
তার সর্বনিম্ন মেয়াদ ৩দিনও সর্বোচ্চ মেয়াদ১০দিন।
নেফাসের সংজ্ঞা
-----------
আর সন্তান প্রসবের পর নারীর জরায়ূ থেকে যে রক্ত বের হয় তাকে নেফাস বলে।
নেফাসের সর্বনিম্ম কোনো মেয়াদ নেই,তবে সর্বোচ্চ মেয়াদ৪০দিন।
হাফেজ ও নিফাসের সময়ে মহিলাদের রোজা রাখা নিষিদ্ধ । তবে হায়েজ-নিফাসের কারণে যে কয়টা রোজা ভঙ্গ হবে, তা পরবর্তীতে কাজা করে নিতে হবে।
★ শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়া:
এমন অসুখ হলে যখন অভিজ্ঞ ডাক্তার রোজা রাখতে নিষেদ করেন,তার জন্য রোজা রাখার বিধান শিথিল।
তবে সাধারণ অসুখের ক্ষেত্রে রোজা রাখা জরুরি।
★মুকিম অর্থাৎ স্থায়ীবাসিন্দা হওয়া।
মুসাফিরের ওপর রোজা ফরজের ব্যপারে একটু ভিন্নতা আছে। যেমন কষ্টসাধ্য ভ্রমন হলে পরবর্তীতে রোজা আদায়ের বিধান আছে। আমি মনে করি বর্তমানে সফর অনেক আরামের সাথে করা যায় তাই সফর অবস্থায় একমাত্র কাহিল হয়ে না পড়লে রোজা রাখা উচিত।
রোজার আধুনিক কয়েকটি মাসআলা
--------------------------------------------------
★ইনজেকশন (Injection): ইনজেকশন নিলে রোযা ভাঙ্গবে না। (জাওয়াহিরুল ফতওয়া)
★ইনহেলার (Inhaler): শ্বাসকষ্ট দূর করার লক্ষ্যে তরল জাতীয় একটি ঔষধ স্প্রে করে মুখের ভিতর দিয়ে গলায় প্রবেশ করান হয়, এভাবে মুখের ভিতর ইনহেলার স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভেঙ্গে যাবে। (ইমদাদুল ফতওয়া)
★এনজিও গ্রাম (Angio Gram): হার্ট ব্লক হয়ে গেলে উরুর গোড়া দিয়ে কেটে বিশেষ রগের ভিতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয় তার নাম এনজিও গ্রাম। এযন্ত্রটিতে যদি কোন ধরনের ঔষধ লাগানো থাকে তারপরেও রোজা ভাঙ্গবে না। (ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা)
★এন্ডোস কপি (Endos Copy): চিকন একটি পাইপ যার মাথায় বাল্ব জাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলিতে ঢুকানো হয় এবং বাইরে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্নয় করা হয়। এ নলে যদি কোন ঔষধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভিতর দিয়ে পানি/ঔষধ ছিটানো হয়ে থাকে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে, আর যদি কোন ঔষধ লাগানো না থাকে তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
★নাইট্রো গ্লিসারিন (Nitro Glycerin): এরোসল জাতীয় ঔষধ, যা হার্টের জন্য দুই-তিন ফোটা জিহ্বার নীচে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে।ঔষধটি শিরার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিশে যায় এবং ঔষধের কিছু অংশ গলায় প্রবেশ করার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। অতএব- এতে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
★লেপারোসকপি(Laparoscopy): শিক্ জাতীয় একটি যন্ত্র দ্বারা পেট ছিদ্র করে পেটের ভিতরের কোন অংশ বা গোশত ইত্যাদি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের করে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র। এতে যদি ঔষধ লাগানো থাকে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে অন্যস্থায় রোযা ভাঙ্গেব না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)
★অক্সিজেন (Oxygen): রোজা অবস্থায় ঔষধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোযা ভাঙ্গবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
★মস্তিষ্ক অপারেশন (Brain Operation): রোজা অবস্থায় মস্তিস্ক অপারেশন করে ঔষধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক রোজা ভাঙ্গবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)
রক্ত নেয়া বা দেয়া : রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের করলে বা শরীরে প্রবেশ করালে রোজা ভাঙ্গবে না। (আহসানুল ফতওয়া)
★সিস্টোসকপি (cystoscopy): প্রসাবের রাস্তা দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয় এর দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না। (হেদায়া)
★প্রক্টোসকপি(proctoscopy): পাইলস, পিসার, অর্শ, হারিশ, বুটি ও ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপ বলে।মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যাতে ব্যথা না পায় সে জন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় কোন পিচ্ছল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরী ভিতরে প্রবেশ করে না। চিকিৎসকদের মতানুসারে ঐ পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সাথে মিশে থাকে এবং নলের সাথেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। আর থাকলেও তা পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে। যদিও শরীর তা চোষে না কিন্তু ঐ বস্তুটি ভিজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙ্গে যাবে।(ফতওয়া শামী)
★কপার-টি(Coper-T): কপার-টি বলা হয় যোনিদ্বারে প্লাস্টিক লাগানোকে, যেন সহবাসের সময় বীর্যপাত হলে বীর্য জরায়ুতে পৌছাতে না পারে। এ কপার-টি লাগিয়েও সহবাস করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।কাযা কাফফারা উভয়টাই ওয়াজিব হবে।
★সিরোদকার অপারেশন(Shirodkar Operation):সিরোদকার অপারেশন হল অকাল গর্ভপাত হওয়ার আশংখা থাকলে জরায়ুর মুখের চতুষ্পার্শ্বে সেলাই করে মুখকে খিচিয়ে রাখা।এতে অকাল গর্ভপাত রোধ হয়।যেহেতু এতে কোন ঔষধ বা বস্তু রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি স্থানে পৌছে না তাই এর দ্বারা রোযা ভাঙ্গবে না।
★ডি এন্ড সি (Dilatation and Curettage): ডি এন্ড সি হল আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্য Dilator এর মাধ্যমে জীবত কিংবা মৃত বাচ্চাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে নিয়ে আসা। এতে রোযা ভেঙ্গে যাবে। অযথা এমন করলে কাযা কাফফারা উভয়টি দিতে হবে এবং তওবা করতে হবে।(হেদায়া)
★এম আর(M.R): এম আর হল গর্ভ ধারণের পাঁচ থেকে আঁট সপ্তাহের মধ্যে যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ুতে এম,আর সিরন্জ প্রবেশ করিয়ে জীবত কিংবা মৃত ভ্রণ নিয়ে আসা। যারপর ঋতুস্রাব পুনরায় হয়। অতএব মাসিক শুরু হওয়ার কারণে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। কিন্তু যদি রাতের বেলা করা হয় তাহলে দিনের রোজা কাযা করতে হবে না। (ফতহুল কাদীর)
★আলট্রাসনোগ্রাম(Ultrasongram): আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষায় যে ঔষধ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সবই চামড়ার উপরে থাকে, তাই আলট্রাসনোগ্রাম করলে রোযা ভাঙ্গবে না। (হেদায়া)
★স্যালাইন(Saline): স্যালাইন নেয়া হয় রগে, আর রগ যেহেতু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়, তাই স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না, তবে রোজার কষ্ট লাঘবের জন্য স্যালাইন নেয়া মাকরূহ। (ফতওয়ায়ে দারাল উলূম)
★টিকা নেয়া (Vaccine) : টিকা নিলে রোজা ভাঙ্গবে না। কারণ, টিকা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তায় ব্যবহার করা হয় না। (আপকে মাসায়াল)
★ইনসুলিন গ্রহণ করা: (Insulin): ইনসুলিন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না। কারণ, ইনসুলিন রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে না এবং গ্রহণযোগ্য খালী জায়গায় প্রবেশ করে না।(জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
দাঁত তোলা রোজা অবস্থায় একান্ত প্রয়োজন হলে দাঁত তোলা জায়েয আছে। তবে অতি প্রয়োজন না হলে এমনটা করা মাকরূহ। ঔষধ যদি গলায় চলে যায় অথবা থুথু থেকে বেশী অথবা সমপরিমান রক্ত যদি গলায় যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (আহসানুল ফতওয়া)
পেস্ট, টুথ পাউডার ব্যবহার করা : রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথ পাউডার, পেস্ট, মাজন ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরূহ। কিন্তু গলায় পৌঁছালে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
★মুখে ঔষধ ব্যবহার করা : মুখে ঔষধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে বা ঔষধ অংশ বিশেষ গলায় প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। গলায় প্রবেশ না করলে রোজা ভাঙ্গবে না। (ফতওয়া শামী)
*রক্তপরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। তবে খুব বেশী পরিমাণে রক্ত দেয়া যার দ্বারা শরীরে দুর্বলতা আসে, তা মাকরূহ।
★ ডায়বেটিকসের সুগার মাপার জন্য সুচ ঢুকিয়ে যে একফোটা রক্ত নেয়া হয়, এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না।
★নাকে ঔষধ দেয়া : নাকে পানি বা ঔষধ দিলে যদি তা খাদ্য নালীতে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। (ফতওয়া রাহমানিয়া)
★চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করা : চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করার দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় অনুভব হয়। (হেদায়া)
★কানে ঔষধ প্রদান করা : কানে ঔষধ, তেল ইত্যাদি ঢুকালে রোযা ভাঙ্গবে না।
যেসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যায়:
--------------------------------------------
★ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু পানাহার করা।
★ স্ত্রী চুম্বন বা সহবাস দ্বারা বীর্যপাত হওয়া।
★ইচ্ছাকরে মুখভর্তি বমি করা। ★
★ পাথর লোহার টুকরা বা ফলের আটি ইত্যাদি গিলে ফেলা।
★ইচ্ছাকৃতভাবে গুহ্যদ্বার বা ও যৌন পথ দিয়ে যৌন সঙ্গম করা বা ঢুস নেয়া।
★ ইচ্ছাপূর্বক এমন জিনিস পানাহার করা যা খাদ্য বা ওষুধ রুপে ব্যবহার হয়।
যেসব কারণে রোজা ভাঙলে কাযা ওয়াজিব হয়:
-------------------------------------------
★ইচ্ছাকরে মুখভর্তি বমি করা।
★কোনো অখাদ্য বস্তু খেয়ে ফেলা।
★স্ত্রীকে চুম্বন বা স্পর্শে বীর্যপাত হওয়া।
★কুলি করার সময় অনিচ্ছায় পানি পেটে চলে গেলে।
★ সন্ধ্যা বিবেচনায় সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে।
★ঢুস নেয়া।
★জোরপূর্বক রোযাদারকে কেউ পানাহার করালে।
★ কেউ যৌনাঙ্গ ব্যতিরেকে সঙ্গম করায় তাতে বীর্যপাত হলে।
★ তরল ওষুধ লাগানোর কারনে তা পেটে বা মস্তিষ্কে পৌঁছে গেলে।
★সুবহে সাদেক মনে করে ভোরে পানাহার করলে।
★ ঘুমন্ত অবস্থায় কিছু খেয়ে ফেললে।
★ দাঁত থেকে ছোলা পরিমান কোনো কিছু বের করে গিলে ফেললে।
★ভুলবশত কিছু খেয়ে রোযা ভঙ্গ হয়েছে ধারনা করে ইচ্ছাপূর্বক আবার খেলে।
যেসব কারণে রোযা ভাঙলে কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব :
-------------------------------------------------
★ রোযা অবস্থায় ইচ্ছাপূর্বক স্ত্রী সহবাস করলে।
★ইচ্ছাপূর্বক পুং মৈথুন ও হস্ত মৈথুন করা বীর্যপাত করলে। ★ইচ্ছাপূর্বক কোনো খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করলে।
★শিঙ্গা নিয়ে এ ধারনায় ইচ্ছাপূর্বক পানাহার করলে যে, এখন তো রোযা নষ্ট হয়ে গেছে।
রোযাদারের জন্য যা জায়েয:
-----------------------------------------
★স্ত্রীর সঙ্গে স্বাভাবিক মেলামেশা করা বা চুমু দেওয়া। যদি বীর্যপাতের আশঙ্কা না থাকে।
★গোফে তেল ব্যবহার করা।
★চোখে সুরমা লাগানো।
★মেসওয়াক করা।
★এমনভাবে কুলি করা যাতে পেটে পানি প্রবেশের আশঙ্কা না থাকে।
★সাবধানতায় নাকে পানি দেওয়া যাতে ভেতরে
পানি চলে না যায়।
★গোসল করা।
★শিঙ্গা লাগানো, যদি এর দ্বারা রোজাদার দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকে।
★শরীরে ঢুস ব্যবহার করা।
★স্বামীর অশালীন কথাবার্তা শুনার আশঙ্কা থাকলে তরকারীর স্বাদ গ্রহণ করা।
★মুসাফির অবস্থায় অসহ্য কষ্ট হলে রোযা ছেড়ে দেওয়া।
★সন্তানকে দুধ পান না করালে যদি সন্তানের স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে রোযা ছেড়ে দেয়া বৈধ: কিন্তু পরবর্তীতে কাযা আদায় করতে হবে।
★প্রয়োজন মনে করলে সন্তানের মুখে খাবার চিবিয়ে দেওয়া। ★অনিচ্ছাকৃত বমি করা।
রোজাদারের জন্য নাজায়েয কাজ:
-------------------------------------------------
★যৌন সম্ভোগ ও হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটানো। ★ইচ্ছাকৃত পানাহার করা।
★শিঙ্গা লাগিয়ে রোযা নষ্ট হয়েছে মনে করে পানাহার করা। ★দাঁত থেকে কোনো খাদ্যকনা বের করে গিলে ফেলা। ★প্রয়োজন ছাড়া সন্তানের মুখে খাদ্য চিবিয়ে দেওয়া।
★মিথ্যা বলা, অশ্লীল কথা বা গালিগালাজ করা।
★ ভুলক্রমে কিছু পানাহার শুরু করে রোযা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে পেট পুরে পানাহার করা।
★সারাদিন রোযা শেষে ইফতারের সময় ইফতার না করা।
রোজা মাকরূহ হওয়ার কারণ:
------------------------------------------
★গড়গড়িয়ে কুলি করা। কেননা এতে পেটে পানি প্রবেশের আশঙ্কা থাকে।
★শরীরে তেল ব্যবহার করা। কেননা এত পশমের গোড়া দিয়ে তেল শরীরের অভ্যন্তরে ঢুকতে পারে।
★ শিঙ্গা লাগানো।
★ স্ত্রীকে চুম্বন করা। কেননা অনেক সময় এটা রোযাদারকে সঙ্গমের প্রতি ধাবিত করে।
★দাঁত থেকে বের করে কিছু চিবিয়ে খাওয়া।
★মিথ্যা কথা বলা। কেননা হাদিসে এসেছে মিথ্যা সকল পাপের মূল।
★অশ্লীল কথাবার্তা বলা।
★কাউকে গালি দেওয়া।
★ অন্যের দোষ ত্রোটি বর্ণনা করা।
★মুখ দিয়ে কোনো বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করা।
★গরম বা রোদে বারবার কুলি করা।
★অধিক উষ্ণতার কারণে গায়ে ভেজা কাপড় জড়িয়ে রাখা।
সাহরি খাওয়ার বিধান:
--------------------------------
রোজা রাখার নিয়তে শেষ রাতে বরকত লাভের জন্য কিছু খাওয়াকে সাহরি বলা হয়। ইমাম তাবারানী (রহ.) বর্ণনা করেছেন রাসুল (সা.) বলেন, ‘সাহরি গ্রহণকারীর খাবারের হিসাব হবে না’। তাছাড়া সাহরি খাওয়া রাসুল (সা.) এর একটি সুন্নত। রাসুল (সা.) এর হাদীস শরীফে সাহরি খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। হজরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাহরি খাও, কেননা তাতে বরকত রয়েছে’। (বোখারী: ১৯২৩) রোজাদারের জন্য বরকতময় খাবার হল সাহরি খাওয়া। সাহরি খাওয়া সুন্নত। কোন কারণে সাহরি খেতে না পারলে সাহরি খাওয়া ছাড়াই রোযার নিয়ত করবেন। এতে রোজার ক্ষতি হবে না। অর্ধ রাতের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যে কোনো সময়ে সাহরি খাওয়া হলে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। শেষ রাতে সাহরি খাওয়াই উত্তম। রাসুল (সা.) সাধারণত দেরি করে সাহরি খেতেন, তাই রাতের শেষ প্রহরে সাহরি খাওয়া সুন্নাত। রাসুল (স.) বলেন, ‘আমার উম্মত কল্যাণের সাথে থাকবে যতদিন তারা তাড়াতাড়ি ইফতারি করবে এবং সাহরি দেরি করে করবে’। (আহমদ)
ইফতারের বিধান:
-------------------------
ইফতার শব্দের অর্থ ভঙ্গ করা বা ভেঙ্গে ফেলা। আমিমুল ইহসান (র:) বলেন, রোজাদারের জন্য ইফতার হল তার পানাহার করা। শরীয়তের পরিভাষায় সারাদিন রোজা পালন শেষে সূর্যাস্ত হওয়ার পর পর পানি, শরবত, খেজুরসহ প্রয়োজনীয় খাবারের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলা হয়। রাসুল (সা.) বলেন, রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে ১. ইফতারের সময় ২. আখারাতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়’। (বোখারী ও মুসলিম) ইফতার খেজুর দিয়ে করা সুন্নাত। আবু ইয়ালা (রহ.) বলেন, “রাসুল (সা:) তিনটি খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। খেজুর ব্যতিত অন্যান্য ফলমূল দ্বারা ইফতার করা যাবে তবে খেজুর দ্বারা ইফতার করা ভাল। রাসুল (সা:) বলেন, “তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে সে যেন খেজুর দিয়ে করে কেননা তা বরকতময় যদি খেজুর না থাকে তবে পানি দিয়ে কেননা তা পবিত্র”। (আবু দাউদ, ২৩৫৬-পৃষ্ঠা)
ইফতারির পূর্বে রোজাদারের দোয়া মহান আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। হজরত ওমর (রা:) হতে বর্ণিত রাসুল (সা:) বলেন, “ ইফতারির সময় রোজাদারের দোয়া কবুল করা হয়। তাই ইফতারির সময় দোয়া পড়তে হয় “আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়াআলা রিযকিকা আফতারতু”। (আবু দাউদ)
তারাবির বিধান:
------------------------
তারাবি পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আর তারাবির নামাজ জামাতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। যে ব্যক্তি পরে যোগ দেয়ার কারণে কিছু তারাবিহ রয়ে গেছে তিনি ইমামের সাথে বিতর পরে নিবেন, অতপর অবশিষ্ট তারাবির নামাজ আদায় করবেন। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে হাফেজ হোক বা না হোক ইমাম বানানো ঠিক নয়। বালেগ ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করতে হবে। যে তারাবি পড়াবে তার নিকট থেকে আয়াতের অর্থ কিংবা সারসংক্ষেপ জেনে নেওয়া ভাল। যখন থেকে সাহাবিরা এই পড়া শুরু করেন তখন থেকে তারা দুই সালামের পর অর্থাৎ চার রাকাত নামাজের পর বিশ্রাম নিতেন। তাই এই নামাজের নাম তারাবি নামাজ করা হয়েছে। (ফতহুল বারী)
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রোজা:
-----------------------------------
হিন্দু বা বৌদ্ধরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় উপবাস,মুসলিমরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় সিয়াম। খ্রিস্টানরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় ফাস্টিং। বিপ্লবীরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় অনশন। আর ,মেডিক্যাল সাইন্সে উপবাস করলে তাকে বলা হয়-”অটোফেজি“।
রোজা কি? রোজা শব্দের অর্থ বিরত থাকা! সুবেহ সাদিক থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত কে পানাহার থেকে বিরত থাকাকে আমরা সাধারনভাবে রোজা বলে থাকি।
বেলজিক কোষ বিশেষজ্ঞ ক্রিসচিয়ান‘ডে দুভে আবিষ্কার করেন লাইসোজোমের। তার আবিষ্কার থেকেই ১৯৫৫ সালে লাইসোজোম শব্দের উৎপত্তি।
ডে দুভের আবিষ্কারের হাত ধরে ১৯৬৩ সালে অটোফেজি শব্দের উৎপত্তি হয়। অটোফেজি হল সে কৌশল যার মাধ্যমে জীবকোষ আভ্যন্তরীণ পরিবেশের আবর্জনা পরিষ্কার করে।
জাপানী বিজ্ঞানী Yoshinori Ohsumi ২০১৬ সালে নোবেল পান অটোফেজির উপরে কাজ করে।
এবার নিশ্চই প্রশ্ন আসে অটোফেজি জিনিষটা কি?
আমাদের শরীরের সুস্থ কোষগুলো যখন অসুস্থ কোষগুলোকে খেয়ে দেহকে সুস্থ রাখে একেই অটোফেজি বলে।
এবার নিশ্চই প্রশ্ন আসবে কিভাবে মানুষের অটোফেজি হয়?
অটোফেজি এর কারণ হচ্ছে মানুষের দেহকে অতিরিক্ত চাপে রাখা! আর মানুষের দেহকে অতিরিক্ত চাপে রাখতে সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল “অটোফেজি” বা “রোজা” বা “উপবাস”।
এছাড়া এক্সারসাইজের মাধ্যমেও কিছুটা অটোফেজি হয়।
এখন দেখা যাক অটোফেজি কেনো দরকার?
আমাদের শরীরের নষ্ট হয়ে যাওয়া বা অসুস্থ কোষগুলোকে পরিষ্কার করাটা জরুরি। অটোফেজি ছাড়া শরীরের নষ্ট হয়ে যাওয়া কোষ পরিষ্কারের আর কোন পদ্ধতি নেই। অটোফেজি ক্যানসার হওয়া থেকে বিরত রাখে, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে কাজ করে, পারকিনসন ডিজিজ প্রতিরোধ করে এছাড়াও নানা উপকারে আসতে পারে!
ওসুমির গবেষণার ফলশ্রুতিতে অটোফেজি নিয়ে গবেষণার দ্বার উন্মোচিত হয়। পরবর্তী গবেষকগণ অটোফেজি প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাতের সাথে পারকিন্স, আ্যলজাইমারস, ক্যান্সারের মত রোগের সূত্রপাত জড়িত তা প্রমাণ করেন। ওসুমির মূল্যবান গবেষণা ছাড়া এই দুরারোগ্য ব্যাধিগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আমাদের এখনও হয়ত অজানা থেকে যেত। তিনি অটোফেজি গবেষণা ক্ষেত্রের জনক হিসেবেই বর্তমানে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছেন। বিজ্ঞানে অটোফিজের এই ধারণাটা প্রকৃতপক্ষে রোজাকেই সমর্থন করে।
তাছাড়া প্রখ্যাত জার্মান চিকিৎসাবিদ ড. হেলমুট লুটজানার-এর The Secret of Successful Fasting অর্থাৎ উপবাসের গোপন রহস্য। এই বইটিতে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের গঠন ও কার্যপ্রণালী বিশ্লেষণ করে নিরোগ, দীর্ঘজীবী ও কর্মক্ষম স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে বছরের কতিপয় দিন উপবাসের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ড. লুটজানারের মতে, খাবারের উপাদান থেকে সারাবছর ধরে মানুষের শরীরে জমে থাকা কতিপয় বিষাক্ত পদার্থ (টকসিন), চর্বি ও আবর্জনা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র সহজ ও স্বাভাবিক উপায় হচ্ছে উপবাস। উপবাসের ফলে শরীরের অভ্যন্তরে দহনের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে শরীরের ভিতর জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থসমূহ দগ্ধীভূত হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, ‘রমযান' শব্দটি আরবির ‘রমজ' ধাতু থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ দহন করা, জ্বালিয়ে দেয়া ও পুড়িয়ে ফেলা। এভাবে ধ্বংস না হলে, ঐসব বিষাক্ত পদার্থ শরীরের রক্তচাপ, একজিমা, অন্ত্র ও পেটের পীড়া ইত্যাদি বিভিন্ন রোগব্যাধির জন্ম দেয়। এছাড়াও উপবাস কিড্নী ও লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরে নতুন জীবনীশক্তি ও মনে সজীবতার অনুভূতি এনে দেয়।
রোজা পালনের ফলে মানুষের শরীরে কোন ক্ষতি হয় না বরং অনেক কল্যাণ সাধিত হয়, তার বিবরণ কায়রো থেকে প্রকাশিত 'Science Calls for Fasting' গ্রন্থে পাওয়া যায়। পাশ্চাত্যের প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদগণ একবাক্যে স্বীকার করেছেন, "The power and endurance of the body under fasting conditions are remarkable : After a fast properly taken the body is literally born afresh."
অর্থাৎ রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের ক্ষমতা ও সহ্যশক্তি উল্লেখযোগ্য : সঠিকভাবে রোজা পালনের পর শরীর প্রকৃতপক্ষে নতুন সজীবতা লাভ করে।
রোজা একই সাথে দেহে রোগ প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। রোজাব্রত পালনের ফলে দেহে রোগ জীবাণুবর্ধক জীর্ণ অন্ত্রগুলো ধ্বংস হয়, ইউরিক এসিড বাধাপ্রাপ্ত হয়। দেহে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন প্রকার নার্ভ সংক্রান্ত রোগ বেড়ে যায়। রোজাদারের শরীরের পানির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার ফলে চর্মরোগ বৃদ্ধি পায় না।
আধুনিক যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার ব্যবহারিক তাৎপর্য উপলব্ধি করেই জার্মান, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে ব্যবস্থাপত্রে প্রতিবিধান হিসেবে এর উল্লেখ করা হচ্ছে।
ডা. জুয়েলস এমডি বলেছেন, ‘‘যখনই একবেলা খাওয়া বন্ধ থাকে, তখনই দেহ সেই মুহূর্তটিকে রোগমুক্তির সাধনায় নিয়োজিত করে।’’
ডক্টর ডিউই বলেছেন, ‘‘রোগজীর্ণ এবং রোগক্লিষ্ট মানুষটির পাকস্থলী হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেল, দেখবে রুগ্ন মানুষটি উপবাস থাকছে না, সত্যিকাররূপে উপবাস থাকছে রোগটি।’’
তাই একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার রোগীদের তিন সপ্তাহের জন্য উপবাস পালনের বিধান দিতেন।
রমযান মাসে অন্যমাসের তুলনায় কম খাওয়া হয় এবং এই কম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে দীর্ঘজীবন লাভের জন্যে খাওয়ার প্রয়োজন বেশি নয়। কম ও পরিমিত খাওয়াই দীর্ঘজীবন লাভের চাবিকাঠি। বছরে একমাস রোজা রাখার ফলে শরীরের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিশ্রাম ঘটে। এটা অনেকটা শিল্প-কারখানায় মেশিনকে সময়মত বিশ্রাম দেয়ার মত। এতে মেশিনের আয়ুষ্কাল বাড়ে। মানবদেহের যন্ত্রপাতিরও এভাবে আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায়।
ডা. আলেক্স হেইগ বলেছেন, ‘‘রোজা হতে মানুষের মানসিক শক্তি এবং বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়। স্মরণশক্তি বাড়ে, মনোসংযোগ ও যুক্তিশক্তি পরিবর্ধিত হয়। প্রীতি, ভালোবাসা, সহানুভূতি, অতীন্দ্রিয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে। ঘ্রাণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি প্রভৃতি বেড়ে যায়। এটা খাদ্যে অরুচি ও অনিচ্ছা দূর করে। রোজা শরীরের রক্তের প্রধান পরিশোধক। রক্তের পরিশোধন এবং বিশুদ্ধি সাধন দ্বারা দেহ প্রকৃতপক্ষে জীবনীশক্তি লাভ করে। যারা রুগ্ন তাদেরকেও আমি রোজা পালন করতে বলি।’’
বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড নারায়াড বলেন, ‘রোজা মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্ক রোগ নির্মূল করে দেয়। মানবদেহের আবর্তন-বিবর্তন আছে। কিন্তু রোজাদার ব্যক্তির শরীর বারংবার বাহ্যিক চাপ গ্রহণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। রোজাদার ব্যক্তি দৈহিক খিচুনী এবং মানসিক অস্থিরতার মুখোমুখি হয় না।’’
ডাঃ এ, এম গ্রিমী বলেন, ‘‘রোজার সামগ্রিক প্রভাব মানব স্বাস্থ্যের উপর অটুটভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে এবং রোজার মাধ্যমে শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে।’’
ডাঃ আর, ক্যাম ফোর্ডের মতে, ‘‘রোজা হচ্ছে পরিপাক শক্তির শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।’’
ডাঃ বেন কিম বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে উপবাসকে চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ (হাঁপানী), শরীরের র্যাশ, দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা, অন্ত্রনালীর প্রদাহ, ক্ষতিকর নয় এমন টিউমার ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে তিনি বলেন, উপবাসকালে শরীরের যেসব অংশে প্রদাহ জনিত ঘা হয়েছে তা পূরণ এবং সুগঠিত হতে পর্যাপ্ত সময় পেয়ে থাকে। বিশেষত খাদ্যনালী পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাওয়াতে তার গায়ে ক্ষয়ে যাওয়া টিস্যু পুনরায় তৈরি হতে পারে। সাধারণত দেখা যায় টিস্যু তৈরি হতে না পারার কারণে অর্ধপাচ্য আমিষ খাদ্যনালী শোষণ করে দূরারোগ্য সব ব্যাধির সৃষ্টি করে ডাঃ বেন কিম আরো বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন উপবাস কিভাবে দেহের সবতন্ত্রে স্বাভাবিকতা রক্ষা করে।
প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ জন ফারম্যান সুস্বাস্থ্য রক্ষায় উপবাস এবং খাবার গ্রহণের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে উপবাসের স্বপক্ষে মত দিয়েছেন।
এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় রমযানের রোজা রাখার সুফল পাওয়া যায় না মূলত খাদ্যাভ্যাস ও রুচির জন্য।
বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ নূরুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘রোজা মানুষের দেহে কোন ক্ষতি করে না। ইসলামে এমন কোন বিধান নেই, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। গ্যাষ্ট্রিক ও আলসার এর রোগীদের রোজা নিয়ে যে ভীতি আছে তা ঠিক নয়। কারণ রোজায় এসব রোগের কোন ক্ষতি হয় না বরং উপকার হয়। রমযান মানুষকে সংযমী ও নিয়মবদ্ধভাবে গড়ে তুলে।
১৯৫৮ইং সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাঃ গোলাম মুয়াযযম সাহেব কর্তৃক ‘‘মানব শরীরের উপর রোজার প্রভাব’’ সম্পর্কে যে গবেষণা চালানো হয়, তাতে প্রমাণিত হয় যে, রোযার দ্বারা মানব শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। কেবল ওজন সামান্য কমে। তাও উল্লেখযোগ্য কিছুই নহে, বরং শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে এরূপ রোজা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অপেক্ষা বহুদিক দিয়েই শ্রেষ্ঠ। ১৯৬০ ইং সালে তার গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করে রোজা দ্বারা পেটের শূলবেদনা বেড়ে যায়, তাদের এ ধারণা নিতান্ত অবৈজ্ঞানিক। কারণ উপবাসে পাকস্থলীর এসিড কমে এবং খেলেই এটা বাড়ে। এ অতি সত্য কথাটা অনেক চিকিৎসকই চিন্তা না করে শূলবেদনার রোগীকে রোজা রাখতে নিষেধ করেন। ১৭ জন রোজাদারের পেটের রস পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যাদের পাকস্থলীতে এসিড খুব বেশি বা খুব কম রোজার ফলে তাদের এ উভয় দোষই নিরাময় হয়েছে। এ গবেষণায় আরো প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করেন রোজা দ্বারা রক্তের পটাসিয়াম কমে যায় এবং তাতে শরীরের ক্ষতি সাধন হয়, তাদের এ ধারণাও অমূলক। কারণ পটাসিয়াম কমার প্রতিক্রিয়া প্রথমে দেখা যায় হৃদপিন্ডের উপর অথচ ১১ জন রোজাদারের হৃদপিন্ড অত্যাধুনিক ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম যন্ত্রের সাহায্যে (রোজার পূর্বে ও রোজা রাখার ২৫ দিন পর) পরীক্ষা করে দেখা গেছে রোজা দ্বারা তাদের হৃদপিন্ডের ক্রিয়ার কোনই ব্যতিক্রম ঘটে নাই।
সুতরাং বুঝা গেল যে, রোজার দ্বারা রক্তের যে পটাসিয়াম কমে তা অতি সামান্য এবং স্বাভাবিক সীমারেখার মধ্যে। তবে রোজা দ্বারা কোন কোন মানুষ কিছুটা খিট খিটে মেজাজী হয়। এর কারণ সামান্য রক্ত শর্করা কমে যায় যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ক্ষতিকর নয়। অন্য কোন সময় ক্ষিধে পেলেও এরূপ হয়ে থাকে।
রোজা থেকে শারীরিক ফায়দা লাভের জন্যে রোজাদারদের প্রতি ডাঃ আমীর আই, আহমদ আনকাহর কতিপয় মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলো নীচে দেয়া হলো
★যদি আপনি বিত্তবান হোন তবে অধিক ভোজন ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করে চলুন। রোজা রেখে সুস্থ থাকুন- এ প্রতীক গ্রহণ করুন।
★সহায় সম্বলহীন আপন ভাইকে সাহায্য করুন।
★ রমযান মাস সম্পদশালীদের জন্যে নিবেশ আর গরীবদের জন্য ভালো খাবার মাস মনে করুন।
★দিনের বেলা ক্ষুৎপিপাসার তাড়না থেকে মুক্তি পেতে হলে রাতে অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করুন।
★খাদ্য ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
★খাবার ব্যবস্থা করতে না পারলে শুধুমাত্র দুধের উপর নির্ভর করতে পারেন।
★ যথাসম্ভব ইফতার তাড়াতাড়ি আর সেহেরী দেরীতে খাওয়া ভালো।
★সেহরী খেয়ে সটান না হয়ে বিনিদ্র রজনী যাপন করুন। তাতে খাদ্য ঠিকমত হজম হয়।
★ইফতারের পর চটপটি জাতীয় এবং ঠান্ডা জিনিস অধিক পরিমাণে গ্রহণ করবেন না।
★সারাদিন কাজে লিপ্ত থাকুন। ক্ষুৎপিপাসা ভুলতে চেষ্টা করবেন না।
★রমযান মাসে নেক কাজ ও ত্যাগ তিতিক্ষার যে অভ্যাস আপনার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে, তা সবসময় চালু রাখুন।
★জীবনের চড়াই উৎরাই সবসময় রোজার দাবিকে সমুন্নত রাখুন।
★কু-চিন্তা ও ধ্যান-ধারণা থেকে মুক্ত থাকুন। কুচিন্তা বিষসদৃশ যা স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে দেয়। কুচিন্তা ও কুধারণার উপশম না ওষুধে হয় না খাদ্যে।
★মুসলমান নিজেদের জীবনে স্বল্পতুষ্টি, তাওয়াক্কুল শান্তি ও মনের সন্তুষ্টির মত বেশিষ্ট্যসমূহ বাস্তবায়িত করার মধ্য দিয়ে রমযানের বরকতের পর্যবেক্ষণ করবে। এর মধ্যেই সাহসের বিস্তৃতি ও মনের শান্তি এবং এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানুষের আরোগ্য লাভের গুপ্ত রহস্য।
★রমযানের সিয়াম সাধনায় মুসলমান হবে স্বাস্থ্যবান এবং পুণ্য ও পবিত্র আত্মার অধিকারী।
উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের মানুষ ইফতার ও সাহরীতে সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ না করে মুখরোচক মশলাদার খাবার গ্রহণ করে। এতে পাকস্থলীর এসিডিটি, আলসার, বদহজম আরো বেড়ে যায়।
তিরমিজি শরীফে এসেছে রাসূল (সা.) মাগরিবের নামাজের পূর্বে কয়েকটি তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। খেজুর না থাকলে কয়েক কোশ পানিই পান করতেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেন না এতে বরকত রয়েছে। যদি খেজুর না পায় তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কারণ পানি হলো পবিত্রকারী।'
উপমহাদেশে ইফতারের রকমারি আয়োজন থাকলেও তাদের সারাবিশ্বের মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা উচিৎ। সাধারণত পানি, খেজুর, মুড়ি, ফলের রস, চিড়ার পানি, (বা এ দ্বারা তৈরি খাবার), দুধ ইত্যাদি দিয়ে ইফতারের আয়োজন করা যেতে পারে।
রমযানে দুই খাবার গ্রহণের মধ্যবর্তী সময় কম থাকায় পাকস্থলী গুরুপাক খাবার দিয়ে বোঝাই না করাই উত্তম। আসল বিষয় হলো রমযানের উদ্দেশ্য পূরণে রকমারি খাবার আয়োজন রোজার সুফলকে ম্লান করে দেয়।
রোযা রাখার ব্যাপারে বিধি নিষেধ :
-------------------------------------------------
রোযা রাখার ব্যাপারে আমরা মাঝে মাঝে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এমন অনেক অসুস্থ্য ব্যক্তি আছেন যাদের রোযা রাখলে আরো অসুস্থ্য হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তাদের রোজা রাখার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়।
আবার ঠিক ততটা অসুস্থ্য নয় কিন্তু অসুস্থ্যতার উল্লেখ করে রাযা না রাখাও বৈধ নয়। কুরআনে রয়েছে, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত অথবা সফরে থাকে, সে যেন অন্য দিনসমূহে এই সংখ্যা পূর্ণ করে। (সূরা বাকারাহ)
রাসূল (সা.) সফররত রোজাদারদেরকে কখনো কখনো তিরস্কার করেছেন। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখা দরকার, প্রয়োজনীয় ও জরুরি ক্ষেত্রে সফর হলে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। শুধুমাত্র বেড়ানোর উদ্দেশ্যে এই নিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়।
বিশেষ কিছু রোগে যেমন-উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে রোজা রাখতে হবে। কেননা এসব এমন ধরনের অসুস্থতা যা সম্পূর্ণ আরোগ্য হয় না। ফলে রোগী রমযান ছাড়া অন্যসময় এসব রোজা পূর্ণ করতে পারে না।
ডা. ফারাদেই আজিজি এবং ডা. শিয়াকোলা ডায়াবেটিস রোগীদের উপর এক বিশেষ জরিপ চালান। সেখানে কিছু রোগীকে রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয় এবং কিছু রোগীকে অনুৎসাহিক করা হয়। Šটবটঢটভ এর্ট্রধভথ টভঢ ঊধটঠর্ণণ্র বণফফর্ধল্র' এ শিারোনামে ওয়েব সাইটে তারা এ রোগীদের জন্য বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।
যে সব ডায়াবেটিক রোগী ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল নয় অর্থাৎ মুখে ওষুধ এবং পরিমিত খাদ্যাভ্যাস এবং শরীর চর্চা করে থাকেন তাদের রোজা রাখতে তেমন কোন অসুবিধা হয় না, এক্ষেত্রে সাহরীর কিছু সময় পূর্বে ওষুধ সেবন করতে হবে এবং ইফতারের তালিকায় শর্করা ও স্নেহ জাতীয়ত খাদ্যের পরিমাণ কম রাখতে হবে। এছাড়া তাদের নিয়মিত গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে হবে যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার তারতম্য অস্বাভাবিক না হয়ে যায়।
যে সব রোগী শুধুমাত্র ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল অর্থাৎ এ ছাড়া অন্যকোন উপায়ে রক্তের চিনির মাত্র নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না তাদের খুবই সতর্কতার সাথে রোজা রাখতে হবে। এসব রোগীর চিনির মাত্রা খুব নিচে নেমে গিয়ে রোগী শকে চলে যেতে পারে। সেজন্য শকের যে সব লক্ষণ রয়েছে সেগুলো রোগীকে খুব সাবধানতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেমন-অনেক ঘামতে থাকা, অস্থিরতা অনুভব করা, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি। এসব রোগীর যেকোন সময় এধরনের সমস্যা হতে পারে বিধায় সবসময় ডায়াবেটিক রোগীর অঊ কার্ড বহন করতে হবে। নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা করা ও সব সময় একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। এইসব রোগীকে রোযা রাখতে উৎসাহিত করা হয় না।
যাদের রোজা না রাখাই ভালো
---------------------------
★শুধুমাত্র ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগী।
★ খুব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না (রক্তের গ্লুকোজ) এমন রোগীর
★ যে সব ডায়াবেটিক রোগী অন্যকোন জটিল রোগে আক্রান্ত যেমন-বুকে ব্যথা এবং অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ
★ যাদের ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা রয়েছে
★সন্তান সম্ভাবা ডায়াবেটিক মা।
★যাদের ডায়াবেটিসের সাথে ঘন ঘন ইনফেকশনের ইতিহাস রয়েছে
★এমন বয়স্ক রোগী যারা ডায়াবেটিসজনিত অসুস্থতা ব্যাখ্যা করতে পারেন না।
★ রমযান মাসেই যদি দুই থেকে তিনবার রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা খুব কম বা বেশি হয়ে থাকে
অনেক রোগী রয়েছে যারা অধিক ওজন সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছে তারাও রোজা রাখার ক্ষেত্রে অনেক সাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। রমযান শুধু দৈহিক অসুস্থতাই নয়, যারা অনেকদিন ধরে মানসিক অবসন্নতা বা বিভিন্ন রকম দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত তাদের জন্যও চিকিৎসা হিসেবে কাজ করছে। এরকম একটি জরিপে দেখা গেছে রোজা রাখার কারণে যেসব রোগী তাদের কথাবার্তা এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম নিময়-শৃক্মখলার মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে তাদের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করা গেছে।
তাই বলা যায়,কুরআনের প্রতিটি বিধানই মানব জাতির জন্যে কল্যাণকর। গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে রোজার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
২৭-০৪-২০১৯ইং
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
নাসরীন আক্তার রুবি ০৬/০৫/২০১৯বেশ।
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৪/০৫/২০১৯ভালো।
-
সাইদুর রহমান ০৪/০৫/২০১৯শিক্ষনীয়। খুব ভালো।