www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গুরুগৃহ হইতে বিশ্ববিদ্যালয়

পাঠশালার গুরু আজিকার দিনে অনাবিষ্কৃত গিরি-গুহায় হারাইয়া গিয়াছে । এখন অত্যাধুনিক গুরুমশাইয়ের বলদমার্কা শিষ্যরা তাই গুরুগৃহের আঙ্গিনাও মাড়ায়না, গোয়াল পরিষ্কার? সেতো বহুদূর ।

বিলেতী মহাপুরুষের আগমনে বাঙ্গালি রাজাবাবুরা সেদিন বেশ গদগদ হইয়া আপ্যায়নে একরকম মস্তকে তুলিয়া রাখিয়াছিলো । তাই অগ্নিমান্দ্যে বিলেতী মহাপুরুষেরা এদেশের রাজাবাবুদের মাথায় চড়িয়া শৌচ কার্য সম্পন্ন করিয়া সিংহাসনে বসিয়া বাঙ্গালী রাজাবাবুদের একরকম নিস্তার দিয়াছিলেন ।

মিশনারীদের তৎপরতা ঐদিকে ব্যাপক রূপ লাভ করিলো । পাঠশালা আর গুরুগৃহ ভাঙ্গিয়া স্কুল তৈয়ার করা হইতেছে । বেশ ঢাকঢোল পিটাইয়া ব্রিটেনের গুণকীর্তন করা হইলো । তাহাতে কিন্তু গুরুমশাইয়ের পেটে আজিকার প্রফেসর সমাজের মতো লাথি পড়িলোনা । কারণ গুরুমশাই যে, অর্থ উপার্জনের জন্য বলদমার্কা শিষ্যদের শিক্ষা দিতেন না । বেশিরভাগ সময়েই তাহারা জীবিকার তাগিতে কৃষিকাজসহ সকল কাজ করিতো । শ্রমের মর্যাদা রচনাখানির যেনো তাঁহারাই উৎকৃষ্ট উদাহরণ ।তাই আজিকার সরকার সমাজের মতো কাহারো কাছে তাঁহারা মাথানত করিতে হইতোনা ।
সত্যিকার অর্থেই তাঁহারা ছিলেন গুরু ।

যাহাই হোক । বিলেতী টাইকোর্ট পড়া স্যারবাবুর আগমনে এদেশের ধুতি পাঞ্জাবী পড়া গুরুমহাশয়েরা শেষমেশ এককালে আদর্শ নীলচাষী হইতে বাধ্য হইয়াছিলো ।
আর ঐদিকে ব্রিটিশ স্যারবাবুরা মিশনারী লইয়া শিক্ষাব্যবস্থাকে কাটছাঁট-বর্ধিত-পরিমার্জিত-সংশোধিত করিয়া তাহাদের মনোপুত করিয়া লইলো ।
একসময়ের শিষ্য তথা আজিকার ছাত্রসমাজের ঘাড়ে পড়িলো পড়ালেখার বিশাল বোঝা । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো জ্ঞানীগুণী লোকেরাও কয়েকদিনে ভূলিয়া গেলো বাঙ্গালী আবহমান শিক্ষাব্যবস্থার মর্মার্থ ।
তাই তিনিও ব্রিটিশবাবুদের দ্বারা প্রভাবিত হইয়া বাঙ্গালি সকল ছাত্রের ঘাড়ে বিশাল পাঠ্যপুস্তক আর সিলেবাসের বোঝা চাপাইয়া দিতে উৎসাহ দিতে লাগিলেন । নিজের মতো সবাইকে একরকম ভাবিতে গিয়া যে তিনি একরকম অন্যায় করিয়াছেন তাহার বোধগম্য আর হইলোনা ।

ধীরে ধীরে বিলেতবাবুদের শিক্ষাব্যবস্থা ভয়ানক রূপ ধারণ করিয়াছে ।
দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষাব্যবস্থার সাথে অর্থনৈতিক সক্ষমতার সংঘর্ষ বাঁধিয়াছে ।
বেকার শব্দের আবিষ্কার হইলো । বিদ্যার্জন রহিলো আর্থিক স্বচ্ছলতাকে কেন্দ্র করিয়া । তাই স্নাতকোত্তর ছাত্রসমাজ অশিক্ষিত কৃষক-শ্রমিক-মেহনতীদের কাতারে নিজেকে লইতে বড়ই সংকোচ করিতে লাগিলো । ইহা যেনো অর্থনৈতিক নহে তাহাদের কাছে । তাহাদের কাছে অর্থনৈতিক হইলো, অফিস আদালতে তাহাকে সবাই স্যার স্যার বলিয়া ডাকিবে । অথচ তাহারা যে কোর্ট-টাইয়ের আড়ালে কেরানি চরিত্র ছাড়া কিছুই নহে, তাহা অফিসের ব্যাগের আড়ালে হরেক সার্টিফিকেটের ধামাচাপা দিয়া ক্ষান্ত করিবার বৃথাচেষ্টাও করিয়া থাকে ।

আর যে শিক্ষিত সমাজটি কেরানি পেশা বাছিয়া না লইয়া শিক্ষকতা করিতে ইচ্ছুক হইলেন, তাহারা শিক্ষক হইয়াছেন বটে, তবে গুরুমশাইয়ের মতো সম্মান তাহার ললাটে জুটিলোনা ।
কী হইবে উচ্চ থেকে উচ্চতর এবিসিডি ডিগ্রী লইয়া? গুরুমশাইয়ের সম্মুখ পিছনে রায়-লক্ষণ ছাড়া কোনো টাইটেল ছিলোনা ।

ছাত্র-শিক্ষক সমাজের সম্পর্ক আজ বড়ই আজব । বিলেতী আন্দোলন করিতে গিয়ে একে আরেকজনের উপর ঝাঁপাইয়া পড়ে ।
বাঙ্গালী গুরুমশাইকে এই দৃশ্য দেখাইলে দুজনের কান ধরে বলিতো, "হ্যারে রাম-যদু, আগামী কাল থাকিয়া আমার গৃহে আসিস, বিদ্যে শিখাবো ।"

দুর্ভাগ্য আমার ! সেই
গুরুমশাইয়ের কানমলাটা আমার ভাগ্যে মেলিলোনা ।

বিলেতী বিদ্যা শিখিতেছি ।
কী শিখিতেছি নিজেই জানিনা !

ওদিকে পরিবার অপেক্ষায় রহিয়াছে, কবে আমি বিদ্যা শিখিয়া কেরানিমার্কা চাকুরী পাইয়া তাহাদের মুখ উজ্জ্বল করিবো!
সৎ অসৎ উপায় ব্যাপার নহে!

কিন্তু মোর চোখে প্রায় ভাসিয়া উঠে সেই করুণ দৃশ্যের-
গুরুমশাইকে ধুতি পাঞ্জাবী খুলিয়া ধর্ষণ করিয়া অতঃপর শার্ট-প্যান্ট-টাই-কোর্ট পড়াইবার দৃশ্য !
তাহার সাথে একখান বিলেতী উপাধি (স্যার) দিবার দৃশ্য ।

গুরুমশাই এহেন লজ্জা সংবরণ না করিতে পারিয়া আত্মহত্যা করিয়াছিলেন । মূলত আত্মহত্যা হইয়াছিলো বাঙ্গালীসত্তার ।
কিন্তু গুরুমশাইয়ের সহোদর ধর্ষণকে সম্মান হিসেবে গ্রহণ করিয়া লইয়াছে । তাই তাহার নামের আগে প্রফেসর, স্যার যোগ হইয়াছে ।

যাই, ক্লাস করিতে যাই ।
বিলেতী শিক্ষাব্যবস্থা ।
সাধু সাধু সাধু!!!
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ১০৫২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৬/০৮/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • বাবা! চমৎকার লিখেছেন বস। শিক্ষা ব্যবস্থা আর বর্তমান শিক্ষা গুরুদের উপর খুব রাগ...........
  • জাজাকাল্লাহ ভাইজান, দারুণ হোইছে।
  • সুন্দর লেখনী। বেশ সুন্দর অনুভুতি পেলাম। আমার নতুন উপন্যাসে আমন্ত্রন রইল।
  • বেশ ভালই বলেছেন,সুন্দর!
  • নাবিক ২৬/০৮/২০১৪
    স্বাগতম নতুন বন্ধু...লেখাটা ভীষণ ভালো লাগলো|
  • Shopnil Shishir(MD.Shariful Hasan) ২৬/০৮/২০১৪
    onek sundor ekti bisoy niye likhlen valo laglo khub
  • সুন্দর বিষয়বস্তু। ভাল লাগল। আমার নতুন উপন্যাসে আমন্ত্রন।
 
Quantcast