বৃষ্টি দিনের বন্ধু
(১)
জীবন! নতুন একটি গল্প কিংবা কবিতা অথবা প্রবন্ধের নাম। যা নিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা যায়। ইচ্ছে মত সাজানো, গোছানো যায়। চেষ্টাই যার মূলমন্ত্র। তবে চেষ্টা প্রচেষ্টাহীনও কিছু জিনিস পাওয়া যায়। তা থাকে কপালে, ভাগ্যে, কর্মে। তা হল বন্ধু। আর মজার বিষয় হচ্ছে যে জীবনকে নিয়ে অতশত লেখা লেখি, অতশত গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধ তার অনেকটা জুরে থাকে বন্ধুত্ব। গাছ, মাছ বা পাখি কিংবা কারো কাজল কালো আঁখিও বাদ যায় না বন্ধুত্বের তালিকা থেকে। তবুও মানুষ প্রজাতি বন্ধুদের বাছাই পর্বে নিতে হয় কিছু ধীর সিদ্ধান্ত। না হলেই প্রশ্চাত মুখি হতে হয় নিজেকে। কিন্তু ভাগ্য কি আর মানুষের মত ভেবে চিন্তে কাজ করে? যখন, যেভাবে পারে একে দেয় চিহ্ন। সেটা বন্ধুত্বের বেলায়ও!
ভাগ্য কর্তার কল্যাণেই যেন দীপ্তের সাথে পরিচয়টা হয় সেদিন। মেঘ ভেঙে নেমে আসা বৃষ্টিতে। বৈশাখের প্রখর রৌদ্রের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি লাভের জন্য যখন সাধারন থেকে অসাধারনেরা পর্যন্ত বুকে হাত রেখে বৃষ্টি চাইছিল প্রভুর কাছে। তখনই প্রভু উজার করে বর্ষিত করেন বারিধারা কিংবা আমার ভাগ্য। আমার ভাগ্য এই কারণেই বলছি কেননা সেই বর্ষিত বৃষ্টিতেই দীপ্তের সাথে আমার প্রথম মোলাকাত। প্রারম্ভের পরিচয়টা ছিল খুব সুখকর, ভালো লাগার মত।
ভার্সিটি থেকে ফিরছিলাম সেদিন। বাসে উঠার তাড়া থাকলেও ঘন কালো আকাশ দেখে বাড়িতে যাওয়া চিন্তা ছেড়ে হাটা ধরেছিলাম শহরের ব্যস্ত রাস্তায়। হটাত মানুষের ছুটে গিয়ে ছাওনিতে দাঁড়ানো দেখে বুঝলাম ঝরঝর করে বারিধারা নেমে আসছে। যে বৃদ্ধ একটু আগেও প্রচন্ড রৌদে ঘামতে ঘামতে বৃষ্টি চাচ্ছিল সেও এখন বৃষ্টি থেকে মুক্তি লাভের আসায় ছুটছে কোনো ছাঁদের উদ্দেশ্যে। “বড্ড অদ্ভুত মানুষের রুচি’’ ভাবতে ভাবতে পরম ছন্দ তোলে নেমে আসা বৃষ্টির ছন্দে ছন্দে হারিয়ে গিয়েছিলাম কোনো এক অজানা জগতে। অন্য একটা মূহুর্তের মাঝে। টেরই পাইনি কখন ঢাকনাহীন ম্যানহোলে পরে গিয়েছি। নির্ঘাত মৃত্যুখাদে পরে গিয়ে বাঁচার ইচ্ছেটা যে আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যায় তা প্রমান হয়েছিল সেদিন। চিৎকার করে সাহায্যের জন্য আকুতি মিনতি করলেও তেমন কোনো ফয়দা হয়নি। ব্যস্ত শহরের এই সময়টায় কারো দেখার সময় নেই, কে বা কারা উন্মুক্ত রাস্তা থেকে হটাত গায়েব হয়ে গিয়েছে। কয়েকটা চিৎকার আর বাঁচার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বাঁচার আশা বাদ দিয়ে স্মরণ করছিলাম সৃষ্টি কর্তাকে। লোকে বলে মৃত্যুর পর, পাপের ক্ষমা চাওয়ার প্রদ্ধতি চালু নেই দেহহীন আত্মার জন্য। তাই সকল পাপের ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছিলাম। এই বুঝি প্রান পাখিটা উড়ে যাবে। দূরে বহু দূরে অজানা দেহহীন আত্মাদের বাসস্থানের উদ্দেশ্যে। চোখ বন্ধ করে যখন অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম তখনই একটি শক্ত হাত মুঠি বদ্ধ করে টেনে তুলছিল আমাকে। আমি বেঁচে যাচ্ছি এই ভেবে হয়তো সেদিন জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম। বেঁচে ফিরে আসার আনন্দে কিংবা জীবনের মত মহা প্রাপ্তিতে।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলাম আমি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি। মাথার পাশে মামনি বসে বসে মাথায় বিনি কেটে দিচ্ছে। তার চোখে জল। পাশেই বসে আছে বাবা, সাথে শেফালী, দাদু এবং বড় ভাইয়ের ছেলে ছুটকু। চোখ মেলতেই ছুটকু চেঁচিয়ে বলতে লাগলো, “দাদু দাদু ফুপির জ্ঞান ফিরেছে।’’ তার কথা শুনার পরেই সবাই যেন আরেকবার চোখের জল খসালো। আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে পরলো সবাই। এখন ভাই, ভাবি এবং পরিবারের সবাই আছে এখানে। ভাবির প্রশ্ন “কি করে হল এসব?” মা হাত তুলে প্রভুর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে তাদের মাঝে আমাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। এই কোলাহলের মাঝেই নতুন একটি মানুষের দিকে চোখ আটকে গেল। এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে একজন সুদর্শন যুবক। তার দিকে আমার স্থীর চাহনী দেখে বাবা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিলে যে, “উনি আমাকে বাঁচিয়ে হসপিটালে নিয়ে এসেছেন। এবং পার্সেলে কাগজে মোড়ানো ফোনটা থেকে বাড়ির নাম্বার কালেকক্ট করেই সবাইকে এখানে ডেকেছে।” ম্যানহোলে পরার সময় পার্সেলটা রাস্তার উপরেই নাকি পরেছিল।
লোকটিকে ধন্যবাদ দেয়ার ইচ্ছে থাকলেও কি কারনে সেসময় দেয়া হয় নি। জ্ঞান ফেরার পরেই ডাক্তার এসে শরীরের হালাত দেখে ওষুদ পানি খেতে দিয়ে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নিতে বলেছিল। এতো ক্লান্ত ছিলাম যে অন্য কোনো দিকে মনোনিবেশ না করে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। ঘুম থেকে উঠে ধন্যবাদ দেয়ার জন্য সৃষ্টি কর্তা থেকে আগত প্রান বাঁচাতে সাহায্যকারী লোকটিকে আর খুজে পাই নি। কি এক অমীমাংসিত কারণে তাকে খুজার চেষ্টাও করিনি। সেদিন বিকেলেই ছাড়া পেয়েছিলাম হসপিটাল থেকে। সৃষ্টি কর্তার দেয়া নতুন প্রানে বেঁচে থাকার তীব্র ইচ্ছে নিয়েই বাড়ি ফিরেছিলাম। আর মনে মনেই ধন্যবাদ জানাচ্ছিলাম তাকে। যে আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা আরো প্রবল করে দিয়েছে। স্রষ্টার দূত হয়ে এসে বাঁচিয়েছে আমাকে।
(২)
আজ বাড়িতে বেশ আয়োজন চলছে। নাহ, কোনো অনুষ্ঠান নয়। তবুও মনের মধ্যে বেশ আত্মতৃপ্তি আমার। কাজ করতেও আগের মত আলসে লাগছে না। কেন এই পরিবর্তন তা জানি বলেই হয়তো এতো উৎকণ্ঠার মধ্যে থেকেও আশ্চর্য বোধ করছি না। কেননা, আজ দীপ্ত নামক ছেলেটির আসবে আমার বাড়িতে। সকাল বেলা বাবার ফোনে ফোন করে জানিয়েছে আমাদের বাড়িতে আসবে সে। বাবার কাছ থেকে শুনেছিলাম, হসপিটালে নাকি দীপ্তকে বাসার ঠিকানা আর ফোন নাম্বার দিয়ে এসেছিল। যে আমার প্রাণ বাঁচালো তার জন্য কিছু তো করতেই হবে। তাই সকাল থেকেই চলছিল আয়োজন। ফোন পাওয়ার পরে বাবা গিয়েছিল বাজারে। ভাগ্য ভালো বিদায় পেয়েছিল দুটি দেশি মুরগি। মায়ের অনুমতি নিয়ে আমিই রাধতে বসলাম। মুরগি, করলা ভাজি, ডাল আর পুলাও হলো। সব কাজ গুছাতে গুছাতে বেলা প্রায় হয়ে এলো। হয়তো কিছুক্ষন পরেই সে চলে আসবে। তা ভাবতে ভাবতেই হাজির হলাম স্নান ঘরে। ইচ্ছে মত গাঁয়ে পানি ঢেলে স্নান সেরে কয়েক মাস আগে কিনে দেয়া ভাবির শাড়িটা গাঁয়ে জড়ালাম। টিপ ততটা পছন্দের না হলেও কি মনে করে যেন কপালে পড়ালাম কালো টিপ। ঠোটে গোলাপি কালারে লিপস্টিক আর কানে মায়ের দেয়া দোল গুলো কানে জড়িয়ে যতটুকু পরিপাটি হওয়া যায় ততটুকু হওয়ার চেষ্টা করলাম। আর অপেক্ষা করতে লাগলাম সেই মানুষটার, যার কারণে আজো বেঁচে আছি। বিচরণ করছি পৃথিবীতে।
দেয়াল ঘড়িতে প্রায় দুটো বেজে পঞ্চাশ মিনিট। সূর্যটা পূর্ব থেকে পশ্চিমে হেলে যাচ্ছে। বিকাল প্রায় ছুঁই ছুঁই। কিন্তু যার জন্য এতো অপেক্ষা সে মানুষটির এখনো দেখা নেই। তার ফোনে কল দিয়েও বন্ধ দেখাচ্ছে। ভাই ভাবি বরাবরের মতই বিরক্ত। যার জন্য পকেটের এতো গুলো টাকা গচ্ছা গেল সে মানুষটি না আসলে তো বিরক্ত হবারই কথা! বাবা মায়ের বিশেষ কোনো কথা নেই। তারা দুজনেরই ধারনা, হয়তো কোনো এক ঝামেলায় ফেসে গেছেন জৈনক সাহায্যকারী! তাই আসতে পারছেন না। ফোন বন্ধ পাওয়ার ব্যাপারটিও লৌকিক। হয়তো কোনো কারণে তার ফোনটিও বন্ধ। কিন্তু আমি ব্যাপারটি তেমন ভালো ভাবে নিতে পারলাম না। যা জন্য অপছন্দের টিপ দিলাম কপালে। এতো আয়োজন করলাম যার জন্য সে ব্যাক্তিটি আজকে অনুপস্থিত! মনটা জানি কেমন অভিমানী হয়ে উঠলো। ঠোট ভেঙ্গে নেমে আসতে চাইলো কান্না। কাজল কালো মেঘলা চোখ দিয়ে বৃষ্টি গড়াবার আগেই মুখে কাপর ঢেকে ড্রয়িং রোম থেকে নিজের রোমে চলে গেলাম। প্রায় অনেক্ষন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম বুঝতেই পারিনি। রাত প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই শুনতে পেলাম মায়ের ডাক। তার আতঙ্কিত কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম, অনেকক্ষন ধরে ডাকছে আমাকে। উঠতি বয়েসের মেয়েদের এভাবে দরজা আটকিয়ে নিশব্দে শুয়ে থাকলে তো পরিবারের টেনশন হবেই। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললাম, কি হয়েছে মা ডাকছো কেন? মায়ের সরাসরি উত্তর, অনেকক্ষন ধরে ডাকছি। সেই যে ঘুমালি আর জাগলি না। আয় খেতে আয়। দুপুরে তো কিছু খেলি না। এখন না খেলে শরীর খারাপ করবে। মাকে বললাম, তোমরা খেয়ে নাও। আমার ভালো লাগছে না। কাল সকালে একবারে ঘুম থেকেই জেগেই খাবো।
মা আর উচ্চবাচ্য করলেন না। আমাকে একাকীত্বের মাঝে থাকতে দিয়ে চলে গেলেন। অন্ধকারে মনে হয় বিশেষ বিশেষ চিন্তা গুলো মাথায় আসে। এখনো তেমন একটি চিন্তা মাথায় আসলো। ইচ্ছে করেই যেন ভাবনা গুলো সব এলোপাতারি ভাবে আমার মনে এসে গেথে যেতে লাগলো। সে কি হয় আমার? তার জন্য আজ মনটা এতো উতলা কেন? শুধু আমাকে বাঁচিয়েছে বলেই কি নিজের মাঝে সে এরকম জায়গা করে নিয়েছে নাকি অন্য কোনো কারণ আছে? ভাবতে ভাবতেই আবার ঘুমিয়ে গেলাম। হারিয়ে গেলাম নতুন একটা জগতে।
(৩)
প্রায় কয়েকটা দিন কেটে গেল। দীপ্ত নামক ছেলেটির কোনো খোজ খবর আর জানা গেল না। তার ফোনটাও বন্ধ। আর তাকে নিয়ে আমার পরিবারে তেমন কথা বার্তাও নেই। সবার মত আমিও কেমন ভুলতে বসেছি তাকে। ভুলতে বসেছি বললে ভুল হবে। বরং তাকে ভুলতে চেষ্টা করছি। ভুলতে পারবো কিনা জানিনা। তবে না ভুলতে পারলে যে জীবনের আনন্দময় মূহুর্ত গুলো মুছে যাবে জীবন থেকে তা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।
অনেক দিন পর ভার্সিটি যাবো আজ। তাই নিজের এলোমেলো জীবনটাকে যতটুকু পরিপাটি করার দরকার ততটুকু চেষ্টা করলাম। ভাবি সাহায্য করলো তাতে। কিছুক্ষন পরেই রওনা হবো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। এমন সময় কলিংবেলটা বেজে উঠলো। এই সময়টাতে কলিংবেল বাজার কোনো কারণ নেই। কেননা পরিবারের সবাই এখন বাসায়। ভোর বেলাতেই পত্রিকা দিয়ে চলে গিয়েছে হকার। ময়লা নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের লোক আরো পরে আসবে। তাহলে কে আসবে এখন? ভাবতে ভাবতেই মা গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে গেলেন। আমিও ব্যাগ গুছিয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য এগিয়ে গেলাম দরজার কাছে। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি আমাকে খুজছে। তার হাতে একটি খাম। আমি যেতেই অপরিচিত লোকটি হাতে খাম গুজে দিয়ে বললো, মেম চিঠিটি আপনার জন্য দীপ্ত নামক জৈনক বদ্রলোক পাঠিয়েছেন। লোকটির কথা শুনতেই মনের ভিতর ছ্যাঁত করে উঠলো। মায়ের দিকে কিছুটা চোখাচোখি করেই আমি হাতের খামটি নিয়ে সুজা ঘরের ভিতর চলে গেলাম। কাপা কাপা হাতে খামটি খুলে পড়তে লাগলাম ছোট্ট চিঠিটি। কম শব্দের চিঠিটিতে তেমন সুন্দর বাক্য না থাকলেও এই চিঠিটি আমার জীবনটাকে সম্পুর্ণ রূপে বদলে দিলো।
প্রিয় রিহানা,
মানুষের সংক্ষিপ্ত জীবনটা যে এতো সংক্ষিপ্ত তা হসপিটালের বিছানায় না এলে হয়তো বুঝতামই না। এই সংক্ষিপ্ত জীবনে তোমার পিছনে নিজেকে নিয়ে চলেছিলাম অনেক আগে থেকে। প্রথম ভার্সিটিতে দেখার পর থেকেই হয়তো তোমার মাঝে হারিয়ে ফেলেছিলাম নিজেকে। অনেকটা সময় তোমার পিছনে ছুটতে ছুটতে হটাত সেদিন তোমার কাছে আসার সুযোগ পেলাম। তোমাকে ম্যানহোল থেকে তুলে হয়তো তোমার তেমন কাছে যেতে পারিনি। কিন্তু এর মাঝেও যে স্বার্থকতা আছে। সেদিন বলেছিলাম আসবো। কিন্তু আসা হলো না। ট্রাকটা বুকের উপর দিয়েই গেল। বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমাকে শেষ কথাটুকু বলার জন্যই হয়তো বিধাতা বাঁচিয়ে রেখেছেন। আজ বিকেলেই অপরেশন। যদি বেঁচে থাকি তাহলে আবার দেখা হবে। আর যদি মরে যাই তাহলে আমাকে বৃষ্টি দিনের বন্ধু ভেবেই আশা করি প্রতিটাক্ষন মনে রাখবে।
ইতি,
তোমার, বৃষ্টি দিনের বন্ধু ‘দীপ্ত’
চিঠিটা পরে যতটুকু কষ্ট পাওয়ার কথা ছিল তা পায়নি। বিধাতার বিধানে হয়তো তাই লেখা ছিল। না হলে জীবনের বদলে জীবন, নতুনত্বের বদলে নতুনত্ব কিভাবে চলে যায় এই ইহজগত থেকে? ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে আবারো মৃদু জল এসে ভীড় করলো। বৃষ্টি দিনের বন্ধুরা হয়তো এভাবেই জীবনে আসে কিছু সময়ের জন্য। নতুন কিছু উপহার দিয়ে অনেক কিছু নিয়ে যেতে। জীবনের বদলে হয়তো জীবন নিয়ে যায় না। তবে কেড়ে নেয় হাসি। এটাও হয়তো বিধাতার বিধানে লেখা!!
জীবন! নতুন একটি গল্প কিংবা কবিতা অথবা প্রবন্ধের নাম। যা নিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা যায়। ইচ্ছে মত সাজানো, গোছানো যায়। চেষ্টাই যার মূলমন্ত্র। তবে চেষ্টা প্রচেষ্টাহীনও কিছু জিনিস পাওয়া যায়। তা থাকে কপালে, ভাগ্যে, কর্মে। তা হল বন্ধু। আর মজার বিষয় হচ্ছে যে জীবনকে নিয়ে অতশত লেখা লেখি, অতশত গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধ তার অনেকটা জুরে থাকে বন্ধুত্ব। গাছ, মাছ বা পাখি কিংবা কারো কাজল কালো আঁখিও বাদ যায় না বন্ধুত্বের তালিকা থেকে। তবুও মানুষ প্রজাতি বন্ধুদের বাছাই পর্বে নিতে হয় কিছু ধীর সিদ্ধান্ত। না হলেই প্রশ্চাত মুখি হতে হয় নিজেকে। কিন্তু ভাগ্য কি আর মানুষের মত ভেবে চিন্তে কাজ করে? যখন, যেভাবে পারে একে দেয় চিহ্ন। সেটা বন্ধুত্বের বেলায়ও!
ভাগ্য কর্তার কল্যাণেই যেন দীপ্তের সাথে পরিচয়টা হয় সেদিন। মেঘ ভেঙে নেমে আসা বৃষ্টিতে। বৈশাখের প্রখর রৌদ্রের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি লাভের জন্য যখন সাধারন থেকে অসাধারনেরা পর্যন্ত বুকে হাত রেখে বৃষ্টি চাইছিল প্রভুর কাছে। তখনই প্রভু উজার করে বর্ষিত করেন বারিধারা কিংবা আমার ভাগ্য। আমার ভাগ্য এই কারণেই বলছি কেননা সেই বর্ষিত বৃষ্টিতেই দীপ্তের সাথে আমার প্রথম মোলাকাত। প্রারম্ভের পরিচয়টা ছিল খুব সুখকর, ভালো লাগার মত।
ভার্সিটি থেকে ফিরছিলাম সেদিন। বাসে উঠার তাড়া থাকলেও ঘন কালো আকাশ দেখে বাড়িতে যাওয়া চিন্তা ছেড়ে হাটা ধরেছিলাম শহরের ব্যস্ত রাস্তায়। হটাত মানুষের ছুটে গিয়ে ছাওনিতে দাঁড়ানো দেখে বুঝলাম ঝরঝর করে বারিধারা নেমে আসছে। যে বৃদ্ধ একটু আগেও প্রচন্ড রৌদে ঘামতে ঘামতে বৃষ্টি চাচ্ছিল সেও এখন বৃষ্টি থেকে মুক্তি লাভের আসায় ছুটছে কোনো ছাঁদের উদ্দেশ্যে। “বড্ড অদ্ভুত মানুষের রুচি’’ ভাবতে ভাবতে পরম ছন্দ তোলে নেমে আসা বৃষ্টির ছন্দে ছন্দে হারিয়ে গিয়েছিলাম কোনো এক অজানা জগতে। অন্য একটা মূহুর্তের মাঝে। টেরই পাইনি কখন ঢাকনাহীন ম্যানহোলে পরে গিয়েছি। নির্ঘাত মৃত্যুখাদে পরে গিয়ে বাঁচার ইচ্ছেটা যে আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যায় তা প্রমান হয়েছিল সেদিন। চিৎকার করে সাহায্যের জন্য আকুতি মিনতি করলেও তেমন কোনো ফয়দা হয়নি। ব্যস্ত শহরের এই সময়টায় কারো দেখার সময় নেই, কে বা কারা উন্মুক্ত রাস্তা থেকে হটাত গায়েব হয়ে গিয়েছে। কয়েকটা চিৎকার আর বাঁচার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বাঁচার আশা বাদ দিয়ে স্মরণ করছিলাম সৃষ্টি কর্তাকে। লোকে বলে মৃত্যুর পর, পাপের ক্ষমা চাওয়ার প্রদ্ধতি চালু নেই দেহহীন আত্মার জন্য। তাই সকল পাপের ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছিলাম। এই বুঝি প্রান পাখিটা উড়ে যাবে। দূরে বহু দূরে অজানা দেহহীন আত্মাদের বাসস্থানের উদ্দেশ্যে। চোখ বন্ধ করে যখন অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম তখনই একটি শক্ত হাত মুঠি বদ্ধ করে টেনে তুলছিল আমাকে। আমি বেঁচে যাচ্ছি এই ভেবে হয়তো সেদিন জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম। বেঁচে ফিরে আসার আনন্দে কিংবা জীবনের মত মহা প্রাপ্তিতে।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলাম আমি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি। মাথার পাশে মামনি বসে বসে মাথায় বিনি কেটে দিচ্ছে। তার চোখে জল। পাশেই বসে আছে বাবা, সাথে শেফালী, দাদু এবং বড় ভাইয়ের ছেলে ছুটকু। চোখ মেলতেই ছুটকু চেঁচিয়ে বলতে লাগলো, “দাদু দাদু ফুপির জ্ঞান ফিরেছে।’’ তার কথা শুনার পরেই সবাই যেন আরেকবার চোখের জল খসালো। আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে পরলো সবাই। এখন ভাই, ভাবি এবং পরিবারের সবাই আছে এখানে। ভাবির প্রশ্ন “কি করে হল এসব?” মা হাত তুলে প্রভুর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে তাদের মাঝে আমাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। এই কোলাহলের মাঝেই নতুন একটি মানুষের দিকে চোখ আটকে গেল। এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে একজন সুদর্শন যুবক। তার দিকে আমার স্থীর চাহনী দেখে বাবা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিলে যে, “উনি আমাকে বাঁচিয়ে হসপিটালে নিয়ে এসেছেন। এবং পার্সেলে কাগজে মোড়ানো ফোনটা থেকে বাড়ির নাম্বার কালেকক্ট করেই সবাইকে এখানে ডেকেছে।” ম্যানহোলে পরার সময় পার্সেলটা রাস্তার উপরেই নাকি পরেছিল।
লোকটিকে ধন্যবাদ দেয়ার ইচ্ছে থাকলেও কি কারনে সেসময় দেয়া হয় নি। জ্ঞান ফেরার পরেই ডাক্তার এসে শরীরের হালাত দেখে ওষুদ পানি খেতে দিয়ে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নিতে বলেছিল। এতো ক্লান্ত ছিলাম যে অন্য কোনো দিকে মনোনিবেশ না করে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। ঘুম থেকে উঠে ধন্যবাদ দেয়ার জন্য সৃষ্টি কর্তা থেকে আগত প্রান বাঁচাতে সাহায্যকারী লোকটিকে আর খুজে পাই নি। কি এক অমীমাংসিত কারণে তাকে খুজার চেষ্টাও করিনি। সেদিন বিকেলেই ছাড়া পেয়েছিলাম হসপিটাল থেকে। সৃষ্টি কর্তার দেয়া নতুন প্রানে বেঁচে থাকার তীব্র ইচ্ছে নিয়েই বাড়ি ফিরেছিলাম। আর মনে মনেই ধন্যবাদ জানাচ্ছিলাম তাকে। যে আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা আরো প্রবল করে দিয়েছে। স্রষ্টার দূত হয়ে এসে বাঁচিয়েছে আমাকে।
(২)
আজ বাড়িতে বেশ আয়োজন চলছে। নাহ, কোনো অনুষ্ঠান নয়। তবুও মনের মধ্যে বেশ আত্মতৃপ্তি আমার। কাজ করতেও আগের মত আলসে লাগছে না। কেন এই পরিবর্তন তা জানি বলেই হয়তো এতো উৎকণ্ঠার মধ্যে থেকেও আশ্চর্য বোধ করছি না। কেননা, আজ দীপ্ত নামক ছেলেটির আসবে আমার বাড়িতে। সকাল বেলা বাবার ফোনে ফোন করে জানিয়েছে আমাদের বাড়িতে আসবে সে। বাবার কাছ থেকে শুনেছিলাম, হসপিটালে নাকি দীপ্তকে বাসার ঠিকানা আর ফোন নাম্বার দিয়ে এসেছিল। যে আমার প্রাণ বাঁচালো তার জন্য কিছু তো করতেই হবে। তাই সকাল থেকেই চলছিল আয়োজন। ফোন পাওয়ার পরে বাবা গিয়েছিল বাজারে। ভাগ্য ভালো বিদায় পেয়েছিল দুটি দেশি মুরগি। মায়ের অনুমতি নিয়ে আমিই রাধতে বসলাম। মুরগি, করলা ভাজি, ডাল আর পুলাও হলো। সব কাজ গুছাতে গুছাতে বেলা প্রায় হয়ে এলো। হয়তো কিছুক্ষন পরেই সে চলে আসবে। তা ভাবতে ভাবতেই হাজির হলাম স্নান ঘরে। ইচ্ছে মত গাঁয়ে পানি ঢেলে স্নান সেরে কয়েক মাস আগে কিনে দেয়া ভাবির শাড়িটা গাঁয়ে জড়ালাম। টিপ ততটা পছন্দের না হলেও কি মনে করে যেন কপালে পড়ালাম কালো টিপ। ঠোটে গোলাপি কালারে লিপস্টিক আর কানে মায়ের দেয়া দোল গুলো কানে জড়িয়ে যতটুকু পরিপাটি হওয়া যায় ততটুকু হওয়ার চেষ্টা করলাম। আর অপেক্ষা করতে লাগলাম সেই মানুষটার, যার কারণে আজো বেঁচে আছি। বিচরণ করছি পৃথিবীতে।
দেয়াল ঘড়িতে প্রায় দুটো বেজে পঞ্চাশ মিনিট। সূর্যটা পূর্ব থেকে পশ্চিমে হেলে যাচ্ছে। বিকাল প্রায় ছুঁই ছুঁই। কিন্তু যার জন্য এতো অপেক্ষা সে মানুষটির এখনো দেখা নেই। তার ফোনে কল দিয়েও বন্ধ দেখাচ্ছে। ভাই ভাবি বরাবরের মতই বিরক্ত। যার জন্য পকেটের এতো গুলো টাকা গচ্ছা গেল সে মানুষটি না আসলে তো বিরক্ত হবারই কথা! বাবা মায়ের বিশেষ কোনো কথা নেই। তারা দুজনেরই ধারনা, হয়তো কোনো এক ঝামেলায় ফেসে গেছেন জৈনক সাহায্যকারী! তাই আসতে পারছেন না। ফোন বন্ধ পাওয়ার ব্যাপারটিও লৌকিক। হয়তো কোনো কারণে তার ফোনটিও বন্ধ। কিন্তু আমি ব্যাপারটি তেমন ভালো ভাবে নিতে পারলাম না। যা জন্য অপছন্দের টিপ দিলাম কপালে। এতো আয়োজন করলাম যার জন্য সে ব্যাক্তিটি আজকে অনুপস্থিত! মনটা জানি কেমন অভিমানী হয়ে উঠলো। ঠোট ভেঙ্গে নেমে আসতে চাইলো কান্না। কাজল কালো মেঘলা চোখ দিয়ে বৃষ্টি গড়াবার আগেই মুখে কাপর ঢেকে ড্রয়িং রোম থেকে নিজের রোমে চলে গেলাম। প্রায় অনেক্ষন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম বুঝতেই পারিনি। রাত প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই শুনতে পেলাম মায়ের ডাক। তার আতঙ্কিত কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম, অনেকক্ষন ধরে ডাকছে আমাকে। উঠতি বয়েসের মেয়েদের এভাবে দরজা আটকিয়ে নিশব্দে শুয়ে থাকলে তো পরিবারের টেনশন হবেই। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললাম, কি হয়েছে মা ডাকছো কেন? মায়ের সরাসরি উত্তর, অনেকক্ষন ধরে ডাকছি। সেই যে ঘুমালি আর জাগলি না। আয় খেতে আয়। দুপুরে তো কিছু খেলি না। এখন না খেলে শরীর খারাপ করবে। মাকে বললাম, তোমরা খেয়ে নাও। আমার ভালো লাগছে না। কাল সকালে একবারে ঘুম থেকেই জেগেই খাবো।
মা আর উচ্চবাচ্য করলেন না। আমাকে একাকীত্বের মাঝে থাকতে দিয়ে চলে গেলেন। অন্ধকারে মনে হয় বিশেষ বিশেষ চিন্তা গুলো মাথায় আসে। এখনো তেমন একটি চিন্তা মাথায় আসলো। ইচ্ছে করেই যেন ভাবনা গুলো সব এলোপাতারি ভাবে আমার মনে এসে গেথে যেতে লাগলো। সে কি হয় আমার? তার জন্য আজ মনটা এতো উতলা কেন? শুধু আমাকে বাঁচিয়েছে বলেই কি নিজের মাঝে সে এরকম জায়গা করে নিয়েছে নাকি অন্য কোনো কারণ আছে? ভাবতে ভাবতেই আবার ঘুমিয়ে গেলাম। হারিয়ে গেলাম নতুন একটা জগতে।
(৩)
প্রায় কয়েকটা দিন কেটে গেল। দীপ্ত নামক ছেলেটির কোনো খোজ খবর আর জানা গেল না। তার ফোনটাও বন্ধ। আর তাকে নিয়ে আমার পরিবারে তেমন কথা বার্তাও নেই। সবার মত আমিও কেমন ভুলতে বসেছি তাকে। ভুলতে বসেছি বললে ভুল হবে। বরং তাকে ভুলতে চেষ্টা করছি। ভুলতে পারবো কিনা জানিনা। তবে না ভুলতে পারলে যে জীবনের আনন্দময় মূহুর্ত গুলো মুছে যাবে জীবন থেকে তা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।
অনেক দিন পর ভার্সিটি যাবো আজ। তাই নিজের এলোমেলো জীবনটাকে যতটুকু পরিপাটি করার দরকার ততটুকু চেষ্টা করলাম। ভাবি সাহায্য করলো তাতে। কিছুক্ষন পরেই রওনা হবো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। এমন সময় কলিংবেলটা বেজে উঠলো। এই সময়টাতে কলিংবেল বাজার কোনো কারণ নেই। কেননা পরিবারের সবাই এখন বাসায়। ভোর বেলাতেই পত্রিকা দিয়ে চলে গিয়েছে হকার। ময়লা নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের লোক আরো পরে আসবে। তাহলে কে আসবে এখন? ভাবতে ভাবতেই মা গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে গেলেন। আমিও ব্যাগ গুছিয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য এগিয়ে গেলাম দরজার কাছে। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি আমাকে খুজছে। তার হাতে একটি খাম। আমি যেতেই অপরিচিত লোকটি হাতে খাম গুজে দিয়ে বললো, মেম চিঠিটি আপনার জন্য দীপ্ত নামক জৈনক বদ্রলোক পাঠিয়েছেন। লোকটির কথা শুনতেই মনের ভিতর ছ্যাঁত করে উঠলো। মায়ের দিকে কিছুটা চোখাচোখি করেই আমি হাতের খামটি নিয়ে সুজা ঘরের ভিতর চলে গেলাম। কাপা কাপা হাতে খামটি খুলে পড়তে লাগলাম ছোট্ট চিঠিটি। কম শব্দের চিঠিটিতে তেমন সুন্দর বাক্য না থাকলেও এই চিঠিটি আমার জীবনটাকে সম্পুর্ণ রূপে বদলে দিলো।
প্রিয় রিহানা,
মানুষের সংক্ষিপ্ত জীবনটা যে এতো সংক্ষিপ্ত তা হসপিটালের বিছানায় না এলে হয়তো বুঝতামই না। এই সংক্ষিপ্ত জীবনে তোমার পিছনে নিজেকে নিয়ে চলেছিলাম অনেক আগে থেকে। প্রথম ভার্সিটিতে দেখার পর থেকেই হয়তো তোমার মাঝে হারিয়ে ফেলেছিলাম নিজেকে। অনেকটা সময় তোমার পিছনে ছুটতে ছুটতে হটাত সেদিন তোমার কাছে আসার সুযোগ পেলাম। তোমাকে ম্যানহোল থেকে তুলে হয়তো তোমার তেমন কাছে যেতে পারিনি। কিন্তু এর মাঝেও যে স্বার্থকতা আছে। সেদিন বলেছিলাম আসবো। কিন্তু আসা হলো না। ট্রাকটা বুকের উপর দিয়েই গেল। বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমাকে শেষ কথাটুকু বলার জন্যই হয়তো বিধাতা বাঁচিয়ে রেখেছেন। আজ বিকেলেই অপরেশন। যদি বেঁচে থাকি তাহলে আবার দেখা হবে। আর যদি মরে যাই তাহলে আমাকে বৃষ্টি দিনের বন্ধু ভেবেই আশা করি প্রতিটাক্ষন মনে রাখবে।
ইতি,
তোমার, বৃষ্টি দিনের বন্ধু ‘দীপ্ত’
চিঠিটা পরে যতটুকু কষ্ট পাওয়ার কথা ছিল তা পায়নি। বিধাতার বিধানে হয়তো তাই লেখা ছিল। না হলে জীবনের বদলে জীবন, নতুনত্বের বদলে নতুনত্ব কিভাবে চলে যায় এই ইহজগত থেকে? ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে আবারো মৃদু জল এসে ভীড় করলো। বৃষ্টি দিনের বন্ধুরা হয়তো এভাবেই জীবনে আসে কিছু সময়ের জন্য। নতুন কিছু উপহার দিয়ে অনেক কিছু নিয়ে যেতে। জীবনের বদলে হয়তো জীবন নিয়ে যায় না। তবে কেড়ে নেয় হাসি। এটাও হয়তো বিধাতার বিধানে লেখা!!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জয়শ্রী রায় ১৭/০৬/২০১৪কাহিনীর গভীরতা আছে । কিন্তু তবুও আমাদের এই জীবনে অনেক কিছুই সাজানো যায়না । এটাই হয়তো বিধাতার বিধান । যাই হোক ভালো লেগেছে ।
-
মল্লিকা রায় ১৭/০৬/২০১৪অন্তমিল পেলাম না----কাহিনী ভাল লাগলো।
-
ডাঃ প্রবীর আচার্য নয়ন ১৭/০৬/২০১৪আমি এমনি করে আসি এমনি করে যাই......খুব ভালো লেগেছে
-
কবি মোঃ ইকবাল ১৩/০৬/২০১৪ভালো লাগলো ভাই।