www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মাইঙ্কা চিপা ডট কম (১)

রাত তিনটে বাজতে আরো ১০ মিনিট বাকি। ফারিহার সাথে চ্যাট করতে করতে কখন যে সময় চলে গেছে টেরই পায়নি অয়ন। দুই দিন হলো মেয়েটার সাথে পরিচয়। এর মধ্যেই এতো ভালো একটা বন্ধু হয়ে গেছে ফারিহা ভাবতে আনন্দে কেঁপে উঠে অয়ন!
“যে কোনো সময় আম্মা ঘুম থেকে উঠে যেতে পারে। আর যদি ঘুম থেকে উঠে দেখে সে এখনো ঘুমায়নি তাহলে আগামিতে রাতের বেলায় আর কখনো ফোন নিজের কাছে রাখতে দিবে না তাকে।” এই ভেবে যখন শেষ বারের মত ফারিহা কে বিদায় মেসেজ দিয়ে কাথা জড়িয়ে যখন ঘুমুতে যাবে তখন ব্রাইবেট করে উঠলো ফোনটা। অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে আশা মেসেজটা দেখে হটাতই ধক করে উঠলো বুকটা।
“ইফ ইউ লাভ মি অর হেইট মি, বোথ স্পেশাল ফর মি। কজ ইফ ইউ লাভ মি আই ইন ইউর হার্ট। অর ইফ ইউ হেইট মি আই ইন ইউর মাইন্ড! ইউর রিয়া” অয়নের বুঝতে বাকি রইলো না এটা কোনো মেয়ের নাম্বার। শর্ট কাট ইংরেজিতে লেখা আবেগজনিত মেসেজটা কোনো এক অপরিচিত নাম্বার থেকে কিভাবে এতো রাতে তার কাছে আসলো ভাবতেই আবারো ছ্যাত করে উঠলো বুকের ভিতর। প্রথম ভেবেছিল কোনো বন্ধু হয়তো মজা নিচ্ছে। কিন্তু এই সময়টাতে সজাগ থাকবে এমন কোনো বন্ধু নেই তার। তাই কিছু না ভেবেই সে মেসেজের উত্তর স্বরূপ লিখলো, “আই লাভ ইউ ডিয়ার!”
মেয়েটা মনে হয় ফিরতে মেসেজের অপেক্ষায় বসে ছিল।  সাথে সাথে উত্তর আসলো, “সত্যি বলছো তুমি আমাকে এখনো ভালোবাস?” এতোক্ষনে মজা পেয়ে বসেছে অয়ন। তাই বাংলালিংক প্লে প্যাকেজে কিনা মেসেজ গুলো খরচ করার মাধ্যমে মজা লুটার কাজটা বেশ পেয়ে বসেছে তাকে। তাই অতি গরমে কাথা গায়ে দিয়েই রিপলাই টেক্স পাঠালো সে, “ভালোবাসি বলেই তো উত্তর দিলাম।”
“সত্যি বলছো? আমি তো বিশ্বাসই করতে পারি নি। তুমি এখনো আমাকে ভালোবাস!”
“ভালোবাসি বলেইতো তোমার অপেক্ষায় এখনো রাত জাগি।’’
“কিন্তু এতো দিন আমাকে ইগনুর করে চলেছো কেন? এমনকি নাম্বারটাও চেঞ্জ করে ফেলেছো আমাকে না জানিয়ে। কেন? কেন এই অবহেলা আমার জন্য।’’
“কি আর বলবো বলো। ফোনটা সেদিন চুরি হয়ে যাওয়ায় তোমার নাম্বারটা হারিয়ে ফেলিছি ডার্লিং। সরি!”
“তুমি না আমার নাম্বার মনের মাঝে সেইভ করে রাখছো! হারালো কিভাবে?”
“কিভাবে হারিয়ে গেছে নিজেও জানিনা। শুধু জানি তোমাকেই ভালোবাসি আমি। তা আমার নাম্বারটা কোথা থেকে পেলে?”
“যদি মনের সাথে মনের মিল থাকে তাহলে নাম্বার কেন সব কিছুই খুজে বের করা যায়।”
“প্লিজ বলো না। কোথায় পেলে নাম্বারটা?”
“একদিন তুমি তোমার বন্ধু রায়হানের নাম্বার দিছিলা না? তার কাছ থেকে পাওয়া।”
“ওহ... তা ঘুমাবা কখন? রাত তো অনেক হলো!”
“আজ সারারাত জেগে জেগে তোমার সাথে গল্প করবো। তোমার কি ঘুম পেয়েছে জানু?”
“না ঘুম পায় নি। কিন্তু আম্মা যে কোনো সময় উঠে যেতে পারে। তাই ঘুমুতে হবে।”
“তুমি না বলছিলা তুমি হোস্টেলে থাকো? আম্মা আসলো কোথা থাইক্যা?”
“হুম, হোস্টেলে থাকি তো কিন্তু কিছুদিন হলো বাসায় আসলাম। তা জানু এখন ঘুমুতে যাই। পরে কথা হবে। লাভয়্যু।”
“ওকে...  হ্যাভ এ ড্রিমি নাইট। লাভয়্যু.....”

“ফহিন্নির ঘরে ফহিন্নি। একটু পর ফজরের আজান দিবে ঐ মাইয়া এখন হ্যাভ এ ড্রিমি নাইট মারায়।” কথা গুলো মনের মধ্য আওরাতে থাকে অয়ন। “তবে ভালোই বিনোদন হলো আজ।” ভাবে সে। এমন সময় মায়ের রোমের টেবিল লাইট অন হয়। চারদিক থেকে ফজরের নামাজের আহ্বান করছে মসজিদের মুয়াজ্জিন। তাই নামাজ পড়তে উঠেছেন তিনি। অয়নের চোখেও রাজ্যের ঘুম উকি দিচ্ছে। তাই কোনো রকমে মোবাইলটা বালিশের তলায় পুরে নিজেকে নিজে “হ্যাভ এ ড্রিমি নাইট” বলেই ঘুমিয়ে পড়লো সে।

ঘড়িতে সময় ১১টা। সকাল গড়িয়ে দুপুর নেমে আসছে। বৈশাখের সূর্যটা এখন অয়নের রোমের জানালা দিয়ে ঠিক তার চোখে এসে লাগছে। রাগ হয় অয়নের। জানা শোনা অনেক গুলো গালি বিড়বিড় করে সূর্যের উদ্দেশ্যে ছাড়ে এতো সকালে ঘুম ভাঙানোর দায়ে। এর মধ্যে সেই কখন থেকে মায়ের ডাক। নিদিষ্ট সময় পরপর এসে ডেকে যাচ্ছে বারবার। শেষবার এসে শরীরে পানি ঢেলে দিবে বলে শাসিয়ে গেছেন তিনি। তবুও অয়নের ঘুম ভাঙতে চায় না। কেননা সে জানে, মা কখনো এই কাজ করতে যাবেন না। তাতে তার নিজেরি ক্ষতি হবে কাথা বালিস ভিজে। তবুও মায়ের বিশ্বাস নেই। কখন যে এসে পানি ঢেলে দেয় বলাই মুশকিল। তাই আরামের ঘুম ছেড়ে বিছানায় উঠে বসলো সে। চোখ বন্ধ করেই বালিশের তলা থেকে ফোনটা হাতে নিল। গত রাতের রিয়া নামক মেয়েটার নাম্বার থেকে একটা মেসেজ এসেছে। মেসেজটা ওপেন করেই যে এতো চমকে উঠতে হবে না বুঝতেই পারে নি সে। মেসেজটা দেখেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। চোখে লেগে থাকা রাজ্যের ঘুম এক পলকেই উধাও হয়ে গেল। নিজেকে মনে হতে লাগলো ফান্দে পরা বকের মত। রিয়া নামক মেয়েটার সাথে মজা করার পরবর্তি সময় এমন একটা ঘটনা ঘটার কথা ছিল তা এখনো ভাবতে পারছে না। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছে ভেবে গায়ে চিমটি কাটলো অয়ন। এর পর বিড়বিড় করে মেসেজটা আবার পড়তে লাগলো, “মাকে অনেক আগেই বলেছিলাম ফোন কিনে না দিতে। আমি জানতাম ফোন কিনে দিলেই তুই বকে যাবি। নাহ শুনলো না আমার কথা। আর তুইও আমার কথা না শুনে নেকামি করে ফোনটা কিনে নিলি। আর সেই কারণেই ফন্দি করে রিয়া সেজে গত রাতে তোর সাথে এই কাজটা করলাম। আগামি কালই বাড়ি ফিরছি। এর পর প্রমান হিসেবে মাকে সব গুলো মেসেজ দেখাবো। এরপর বুঝাচ্ছি আমাকে অবজ্ঞা করে ফোন কিনার সাহসের পরিণাম কি!”  

{বিঃদ্রঃ সামিয়া আফসার অয়নের বোন। পড়া লেখা ইডেনে। সেই কারণেই তার হোস্টেলে থাকা। কিছু দিন আগে অয়ন ফোন কিনতে তার আব্বা আম্মার কাছে বায়না ধরলে সামিয়া তাতে দ্বিমত প্রকাশ করে। সেই সত্তেও ফোনটা পেয়ে যায় অয়ন। আর সেই কারণেই আজকের এই প্রতিশোধ গ্রহন।)

:P
বিষয়শ্রেণী: কৌতুক
ব্লগটি ১৬২৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/০৬/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • চমৎকার লেখা।
  • সালু আলমগীর ০৭/০৭/২০১৪
    চমৎকার।
  • রাধাশ্যাম জানা ০৩/০৭/২০১৪
    বাহ,ভাল...
  • অমর কাব্য ২২/০৬/২০১৪
    খারাপ না
  • আবু সঈদ আহমেদ ১০/০৬/২০১৪
    গেল পোলা গোল্লায়
  • শূন্য ০৮/০৬/২০১৪
    ভালো লাগলো
    • ধন্যবাদ দাদা
  • হাবীব উল্লাহ ০৫/০৬/২০১৪
    অনেক মজা পেলাম...।।
  • এস,বি, (পিটুল) ০৫/০৬/২০১৪
    মজাই মজা,।
    আমার পাতায় আমন্ত্রন রইলো।
  • কবি মোঃ ইকবাল ০৫/০৬/২০১৪
    খুব মজা পেলাম।
    • আপনাদের মজা দেয়ার জন্যই এই লেখনী :)
      • কবি মোঃ ইকবাল ০৫/০৬/২০১৪
        আসলেই খুব ভালো লাগলো।
        • ধন্যবাদ কবি :)
 
Quantcast