মা ছাড়া প্রবাসে ঈদ
মা ছাড়া প্রবাসে ঈদ
আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের যাদের বাবা প্রবাসী তাদের মা অথবা বড় ভাই হয় সংসারের কর্তা ।আমার ক্ষেত্রে ও তার ব্যতিক্রম হয়নি ।আমার কাছে আমার মা ছিল সর্বেসর্বা ।মায়ের মূখে শুনেছি আমার নানা ব্রিটিশ আমলে তখন কলকাতা তে চাকরি করত ।সেখানে নানা নানীর অনেক চিকিৎসা করার পর ও কোনো সন্তান হয়নি ।আমার মা যখন আমার নানুর গর্ভে আসল তখন তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে ।আমার মা ছিল নানানানীর অনেক আদরের সন্তান ।
আদরের সন্তানদের ইচ্ছা অনিচ্ছার অনেক মুল্য থাকে বাবামায়ের কাছে ।আমার মায়ের ক্ষেত্রে ও তা হল ।তাছাড়া সে সময়ে পড়ালেখার জন্য গ্রাম গুলোতে অতটা সুযোগসুবিধা ও ছিলনা । আমার মা ও গ্রামের অন্যসব মেয়েদের মত পড়ালেখা করতে পারেনি ।কিন্তু মা তার ছেলেমেয়ের পড়ালেখার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে ছিল ।
মা যেমনি আদর করত তেমনি তার শাসন ও ছিল ।অকারনে স্কুলে না গিয়ে আড্ডা দেওয়া ,পড়তে না বসা ,পড়ার সময় টিভি দেখে সময় কাটানো ,সময় মত নামাজ না পড়া ,মায়ের সবচেয়ে কড়া শাসন ছিল সকালে কোরআন পড়ার ব্যাপারে ।মায়ের বকুনি খেতে তখন বিরক্তি লাগত ।কিন্তু মাকে ছাড়া থাকতে পারতাম না ।মা যখন ভীষণ অসুস্থ থাকত তখন মাঝে মাঝে মনে হত মা ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে পৃথিবীতে ।মায়ের জন্য আনমনে ভীষণ কান্না পেত।
ছাত্রবেলায় প্রতিটি ঈদে মায়ের পক্ষথেকে আমার জন্য বিশেষ বাজেট থাকত আমি সবার ছোট বলে ।আর সেটি থাকত সবার অগোচরে ।মায়ের সে বাজেট ছিল সংসারের খরছ থেকে টুকিটাকি জমানো পয়সাগুলো ।আর সে বাজেট থেকে আমি যতটুকু সম্ভব মাকে কিছু একটা গিফট দিতে চেষ্টা করতাম ।আমি মায়ের পক্ষথেকে গিফট পেয়ে খুশি হলে ও মা আমার পক্ষথেকে গিফট পেয়ে ভীষণ রাগ করত ।তার সে রাগের মাঝে ও অন্যরকম এক ভালোলাগা ছিল মায়ের দু চোখে খুশির বন্যা বয়েযেত ।
তারপর ছাত্রজীবনের শেষাধ্যে মাকে যখন বললাম ielts করব বিদেশ যাবো মা ভীষণ রাগ করল ।পরবর্তীতে আমার বড় ভাই বোনেরা মাকে বুঝিয়ে মায়ের সম্মতি নিলো ।তখন প্রথমে এপ্লাই করি সুইডেন এর মালমো ইউনিভার্সিটি তে ,এডমিশন হলে ও ভিসা পেতে লেট হওয়ায় এপ্লাই করি লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি তে তখন দেখি দুই দেশের ভিসা একসাথে পায় ।সে দিনটি ছিল মায়ের আর একটি ভালো লাগার দিন ।মাকে ছেড়ে প্রবাসে প্রায় ১০ টি ঈদ কেটে গেলো ,প্রতিটি ঈদে মায়ের সে বাজেট টা মিস করি ।
এখন মা আর বকা দেয়না ।কত ইচ্ছে করে মায়ের বকা খেতে ,মায়ের হাতের পিটুনি খেতে ।কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে ইচ্ছে করলে অনেক কিছু পাওয়া যায় না ।বাড়িতে বেড়াতে আসলে মায়ের পাশে বসে বসে ভাবি মা কেন বকুনি দেয়না ।মাঝে মাঝে বকুনি খাওয়ার জন্য মায়ের অতি প্রয়োজনীয় জিনিস এদিক সেদিক লুকিয়ে রাখি মা যেনো না পেয়ে বকুনি দেয়।গত ঈদে বাড়িতে ঈদ করেছিলাম মাকে বলেছিলাম মা তুমি তোমার ইচ্ছে মত শপিং করবে কিন্তু মা এখন আর শপিং ও করে না ।মা শুধু একটা কথাই বলে সময় শেষ বাবা এখন আর এ সবের প্রতি আগ্রহ নেই ।
মায়েরা এমনি হয় সারাজীবন সন্তানের জন্য দিয়ে যায় ।আর যখন সন্তান দেওয়ার সময় হয় তখন মায়েদের সে সময় থাকে না ।জগতের সব মায়েরা সুখী হোক।
লেখক -জে আলম দোলন
প্যারিস ,ফ্রান্স
আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের যাদের বাবা প্রবাসী তাদের মা অথবা বড় ভাই হয় সংসারের কর্তা ।আমার ক্ষেত্রে ও তার ব্যতিক্রম হয়নি ।আমার কাছে আমার মা ছিল সর্বেসর্বা ।মায়ের মূখে শুনেছি আমার নানা ব্রিটিশ আমলে তখন কলকাতা তে চাকরি করত ।সেখানে নানা নানীর অনেক চিকিৎসা করার পর ও কোনো সন্তান হয়নি ।আমার মা যখন আমার নানুর গর্ভে আসল তখন তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে ।আমার মা ছিল নানানানীর অনেক আদরের সন্তান ।
আদরের সন্তানদের ইচ্ছা অনিচ্ছার অনেক মুল্য থাকে বাবামায়ের কাছে ।আমার মায়ের ক্ষেত্রে ও তা হল ।তাছাড়া সে সময়ে পড়ালেখার জন্য গ্রাম গুলোতে অতটা সুযোগসুবিধা ও ছিলনা । আমার মা ও গ্রামের অন্যসব মেয়েদের মত পড়ালেখা করতে পারেনি ।কিন্তু মা তার ছেলেমেয়ের পড়ালেখার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে ছিল ।
মা যেমনি আদর করত তেমনি তার শাসন ও ছিল ।অকারনে স্কুলে না গিয়ে আড্ডা দেওয়া ,পড়তে না বসা ,পড়ার সময় টিভি দেখে সময় কাটানো ,সময় মত নামাজ না পড়া ,মায়ের সবচেয়ে কড়া শাসন ছিল সকালে কোরআন পড়ার ব্যাপারে ।মায়ের বকুনি খেতে তখন বিরক্তি লাগত ।কিন্তু মাকে ছাড়া থাকতে পারতাম না ।মা যখন ভীষণ অসুস্থ থাকত তখন মাঝে মাঝে মনে হত মা ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে পৃথিবীতে ।মায়ের জন্য আনমনে ভীষণ কান্না পেত।
ছাত্রবেলায় প্রতিটি ঈদে মায়ের পক্ষথেকে আমার জন্য বিশেষ বাজেট থাকত আমি সবার ছোট বলে ।আর সেটি থাকত সবার অগোচরে ।মায়ের সে বাজেট ছিল সংসারের খরছ থেকে টুকিটাকি জমানো পয়সাগুলো ।আর সে বাজেট থেকে আমি যতটুকু সম্ভব মাকে কিছু একটা গিফট দিতে চেষ্টা করতাম ।আমি মায়ের পক্ষথেকে গিফট পেয়ে খুশি হলে ও মা আমার পক্ষথেকে গিফট পেয়ে ভীষণ রাগ করত ।তার সে রাগের মাঝে ও অন্যরকম এক ভালোলাগা ছিল মায়ের দু চোখে খুশির বন্যা বয়েযেত ।
তারপর ছাত্রজীবনের শেষাধ্যে মাকে যখন বললাম ielts করব বিদেশ যাবো মা ভীষণ রাগ করল ।পরবর্তীতে আমার বড় ভাই বোনেরা মাকে বুঝিয়ে মায়ের সম্মতি নিলো ।তখন প্রথমে এপ্লাই করি সুইডেন এর মালমো ইউনিভার্সিটি তে ,এডমিশন হলে ও ভিসা পেতে লেট হওয়ায় এপ্লাই করি লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি তে তখন দেখি দুই দেশের ভিসা একসাথে পায় ।সে দিনটি ছিল মায়ের আর একটি ভালো লাগার দিন ।মাকে ছেড়ে প্রবাসে প্রায় ১০ টি ঈদ কেটে গেলো ,প্রতিটি ঈদে মায়ের সে বাজেট টা মিস করি ।
এখন মা আর বকা দেয়না ।কত ইচ্ছে করে মায়ের বকা খেতে ,মায়ের হাতের পিটুনি খেতে ।কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে ইচ্ছে করলে অনেক কিছু পাওয়া যায় না ।বাড়িতে বেড়াতে আসলে মায়ের পাশে বসে বসে ভাবি মা কেন বকুনি দেয়না ।মাঝে মাঝে বকুনি খাওয়ার জন্য মায়ের অতি প্রয়োজনীয় জিনিস এদিক সেদিক লুকিয়ে রাখি মা যেনো না পেয়ে বকুনি দেয়।গত ঈদে বাড়িতে ঈদ করেছিলাম মাকে বলেছিলাম মা তুমি তোমার ইচ্ছে মত শপিং করবে কিন্তু মা এখন আর শপিং ও করে না ।মা শুধু একটা কথাই বলে সময় শেষ বাবা এখন আর এ সবের প্রতি আগ্রহ নেই ।
মায়েরা এমনি হয় সারাজীবন সন্তানের জন্য দিয়ে যায় ।আর যখন সন্তান দেওয়ার সময় হয় তখন মায়েদের সে সময় থাকে না ।জগতের সব মায়েরা সুখী হোক।
লেখক -জে আলম দোলন
প্যারিস ,ফ্রান্স
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
হাদী মুহাম্মাদ রকিব উদ্দীন ০৪/০৯/২০১৮জগতের সব মায়েরা সুখী হোক।
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ১৪/০৭/২০১৮অনেক ভাল।
-
Altamas Pasha ২১/০৬/২০১৮খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয়ে লেখা। ভালো লাগলো।
-
পি পি আলী আকবর ১৫/০৬/২০১৮দারুণ হয়েছে
-
পবিত্র চক্রবর্তী ১৫/০৬/২০১৮সুন্দর হয়েছে