এখানেই শুরু
দেখতে দেখতে যেন বহু যুগ কেটে গেলো।কালের গভীরে হারিয়ে গেল আনন্দ ঘন হাজারো মুহূর্ত।পীড়া দেয় শুধু দু'একটা স্মৃতি।নষ্ট স্মৃতি।।আজন্ম শত্রুতা যেন তার আমার উপর।আমি ক্রমাগত মিশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি সময় স্রোতে।আমার যেন এ পৃথিবী থেকে আর কিছুই পাবার নেই।সুখ কিনেছি সস্তায়।দুঃখ কিনেছি চড়া মূল্যে।আর এ বিশাল পৃথিবীকে দেয়ার মতো আমার আদৌ কি কিছু ছিলো!
ভাবনার রাজ্যে ঘুরতে ঘুরতে আমি আবিষ্কার করলাম,আমারও দেবার মতো একটা জিনিস আছে।সূর্য তখন জাগ্রত হবার অপেক্ষায়।আমার ঘুমকাতুরে চোখ গুলো মিটিমিটি করছে।আর ভাবনাগুলো মস্তিষ্ক উচ্চ স্বরে যেন বলছে,এই বার একটা কিছু কর।কিছু দিয়ে যা এ মাটির বুকে,যার প্রতি তোর আজন্ম ঋণ।আমি ছিনা টান করেই যেন প্রতিজ্ঞা করলাম,এই বার নিশ্চয়ই আমি সে ঋণ শোধ করবো।আমি দিয়ে যাব।আমি দিয়ে যাব এ ভুবনকে আমার এ ভারাক্রান্ত ক্লান্ত দেহ।
সময় গড়িয়ে আলোকময় হলো অন্ধকার এ ধরা।জানালার ফাঁক দিয়ে আলোক ছটা যেন আমাকে জানান দিলো,আমার সময় হয়েছে যাবার।বন্ধ ঘরে মিটিমিটি আলো।সাঁ সাঁ শব্দে মুখরিত চার দেয়াল।বিছানার উপর ঘুরছে পাখা।অবিরাম-অবিরত।তার যেন ক্লান্তি নেই।আমার সারারাতের ভাবনার চাক্ষুস প্রমাণ যেন সে! আমি তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি।সেও বোঝে আমার চাহিদার সীমারেখা।আমি নিবিড় মনে বিড়বিড় করে তাকে বলি আমার দেহ দানের কথা। সেও এক পরম বন্ধুর মতো সাড়া দেয় আমাকে।হঠাৎ ই যেন আমার বুকের উপর এসে পড়ে গামছা।গত রাতে বিছানার মশারির স্ট্যান্ডে নেড়ে দিয়েছিলাম বোধ হয়।গামছার আলিঙ্গন পেয়ে যেনো মনটা ভরে উঠলো।আমি উপরে তাকালাম প্রিয় পাখার দিকে।এমনই সে আচমকা থেমে যেতে লাগলো।পাখাটা ক্রমশ ধীর হতে হতে থেমেই গেলো।স্থির হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি গামছাটা হাতে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে জানালাটা খুলতে গেলাম।আবছা আলো ঘরে।হোঁচট খেলাম জানালার পাশে রাখা চেয়ারে।অদ্ভুদ ভাবে আবিষ্কার করলাম,সেও আমাকে সাহায্য করার জন্য ঠাঁয় দাঁড়িয়ে।আমি অবশেষে বুঝেই নিলাম যে এ পৃথিবীকে কিছু একটা দিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যের দিকে এগুচ্ছি।নিরাপত্তার ভয়ে জানালাটা আর খুললাম না।ওসব দু'পেয়ে প্রাণিদের উপর বিশ্বাসটা উঠেই গেছে।আচমককা কেঁপে উঠলাম।গান বেজে উঠলো, " আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে"।না,এটা আমার মুঠোফোনের রিংটোন।কেটে দিলাম।এরকম সময়ে বাক্য বিনিময় অনুচিত।প্রভাবিত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।মুঠোফোনের আলোয় বাকি প্রক্রিয়া সারার বুদ্ধি মাথায় এলো।উফফ এই বুদ্ধির অভাবেই একসময় দুমড়ে-মুচড়ে পড়তে হয়েছিলো।আর এখন?? হঠাৎ মাথায় এলো।ছোটবেলায় পড়েছিলাম,আগুন নেভার আগে ধপ করে জ্বলে উঠে।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আমি এখন আমার দেহখানি এবার মাটির বুকে দান করে যাবোই যাবো।
মনের ভেতরের ক্ষোভগুলো জমাট বাঁধতে বাঁধতে পাথর হয়ে আছে।সারাজীবন যে আমাকে আশ্রয় দিয়েছে সময়ে-অসময়ে,সে বিছানার উপর চেয়ারটা তোলে তাকে কষ্ট দিলাম।সব দেনা-পাওনা চুকানোর পালা এবার।মুঠোফোনের টর্চলাইটের আলোয় পাখার মাঝে বাঁধলাম গামছাটি।খুব শক্ত করে।রিস্ক নিলাম না।বিছানার উপর চেয়ার।চেয়ারের উপর আমি।দাঁড়িয়ে আছি।স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে।অবশেষে পৃথিবীকে কিছু দিয়ে যেতে পারছি! চোখটা বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিতে থাকলাম।আস্তে আস্তে গামছার এক পাশ গলায় প্যাচাতে শুরু করবো এখনই।নিঃশ্বাসগুলো ঘন হতে লাগলো। পায়ের নিচের চেয়ার অপেক্ষায় শেষ তিরষ্কারের।আমি তাকে পদধূলি থেকে বঞ্চিত করবো।তাতেই তার স্বস্তি আর আমার মুক্তি।
কেবল গামছাটা প্যাচানো শুরু করবো।কিন্তু আমার নিষ্ঠুর নিয়তি।আমার এতোদিনের সঙ্গী পাখাটা মুখ সরিয়ে নিলো।সে আচমকা ঘুরতে শুরু করলো।আমি ভয় পেয়ে হাত থেকে গামছা ফসকে পড়ে গেলাম বিছানায়।আমার রক্ত চলাচল বাড়তে লাগলো যেন।আবছা আলোয় হাতরাতে হাতরাতে সুইচ বোর্ডের দিকে গেলাম।পাখার সুইচটা বন্ধ করতে হবে।একটা সুইচ চাপতেই ঘরের বাতি জ্বলে উঠলো।আমি আবারো চমকে গেলাম! চোখ পড়লো দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা আয়নাটার দিকে।আয়নাতে আমি দেখতে পেলাম এক সুঠাম দেহী যুবককে! ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।চোখের নিচে কালি জমে আছে।কালো ঠোঁট।এলো চুল।আমি ভয়ে আয়না থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।এবার চোখে পড়লো একটা ঝুলন্ত গামছা ঘুরছে পাখার সাথে।একটা চেয়ার কাত হয়ে পড়ে আছে বিছানার উপর। আমি আবার আয়নার দিকে তাকালাম।সেই অদ্ভুতুড়ে চেহারা।আমাকে বিড়বিড় করে বলছে, " এ পৃথিবী তোমাকে সত্যিই অনেক দিয়েছে।এবার যদি তুমি তাকে কিছু দিতে চাও তোমার ভারাক্রান্ত নিথর দেহ নয়,এক উচ্ছ্বল--প্রাণবন্ত প্রাণ দাও।তোমার প্রাণের সজীবতায় এ পৃথিবী হয়ে উঠুক নির্মল।"
আমি এখন বসে আছি।খোলা জানালা দিয়ে আসছে সকালের মিষ্টি রোদ আর স্নিগ্ধ হাওয়া।যে আবেগ ভুল পথে প্ররোচিত করে,তা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি আজ।একটা সাদা কাগজ ভরে দিয়েছি লিখে।আর মহাকাল আমাকে যেন বারবার বলছে,
"শোন ছেলে, জীবন এখানেই শেষ নয়,জীবন এখানেই শুরু।।"
ভাবনার রাজ্যে ঘুরতে ঘুরতে আমি আবিষ্কার করলাম,আমারও দেবার মতো একটা জিনিস আছে।সূর্য তখন জাগ্রত হবার অপেক্ষায়।আমার ঘুমকাতুরে চোখ গুলো মিটিমিটি করছে।আর ভাবনাগুলো মস্তিষ্ক উচ্চ স্বরে যেন বলছে,এই বার একটা কিছু কর।কিছু দিয়ে যা এ মাটির বুকে,যার প্রতি তোর আজন্ম ঋণ।আমি ছিনা টান করেই যেন প্রতিজ্ঞা করলাম,এই বার নিশ্চয়ই আমি সে ঋণ শোধ করবো।আমি দিয়ে যাব।আমি দিয়ে যাব এ ভুবনকে আমার এ ভারাক্রান্ত ক্লান্ত দেহ।
সময় গড়িয়ে আলোকময় হলো অন্ধকার এ ধরা।জানালার ফাঁক দিয়ে আলোক ছটা যেন আমাকে জানান দিলো,আমার সময় হয়েছে যাবার।বন্ধ ঘরে মিটিমিটি আলো।সাঁ সাঁ শব্দে মুখরিত চার দেয়াল।বিছানার উপর ঘুরছে পাখা।অবিরাম-অবিরত।তার যেন ক্লান্তি নেই।আমার সারারাতের ভাবনার চাক্ষুস প্রমাণ যেন সে! আমি তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি।সেও বোঝে আমার চাহিদার সীমারেখা।আমি নিবিড় মনে বিড়বিড় করে তাকে বলি আমার দেহ দানের কথা। সেও এক পরম বন্ধুর মতো সাড়া দেয় আমাকে।হঠাৎ ই যেন আমার বুকের উপর এসে পড়ে গামছা।গত রাতে বিছানার মশারির স্ট্যান্ডে নেড়ে দিয়েছিলাম বোধ হয়।গামছার আলিঙ্গন পেয়ে যেনো মনটা ভরে উঠলো।আমি উপরে তাকালাম প্রিয় পাখার দিকে।এমনই সে আচমকা থেমে যেতে লাগলো।পাখাটা ক্রমশ ধীর হতে হতে থেমেই গেলো।স্থির হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি গামছাটা হাতে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে জানালাটা খুলতে গেলাম।আবছা আলো ঘরে।হোঁচট খেলাম জানালার পাশে রাখা চেয়ারে।অদ্ভুদ ভাবে আবিষ্কার করলাম,সেও আমাকে সাহায্য করার জন্য ঠাঁয় দাঁড়িয়ে।আমি অবশেষে বুঝেই নিলাম যে এ পৃথিবীকে কিছু একটা দিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যের দিকে এগুচ্ছি।নিরাপত্তার ভয়ে জানালাটা আর খুললাম না।ওসব দু'পেয়ে প্রাণিদের উপর বিশ্বাসটা উঠেই গেছে।আচমককা কেঁপে উঠলাম।গান বেজে উঠলো, " আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে"।না,এটা আমার মুঠোফোনের রিংটোন।কেটে দিলাম।এরকম সময়ে বাক্য বিনিময় অনুচিত।প্রভাবিত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।মুঠোফোনের আলোয় বাকি প্রক্রিয়া সারার বুদ্ধি মাথায় এলো।উফফ এই বুদ্ধির অভাবেই একসময় দুমড়ে-মুচড়ে পড়তে হয়েছিলো।আর এখন?? হঠাৎ মাথায় এলো।ছোটবেলায় পড়েছিলাম,আগুন নেভার আগে ধপ করে জ্বলে উঠে।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আমি এখন আমার দেহখানি এবার মাটির বুকে দান করে যাবোই যাবো।
মনের ভেতরের ক্ষোভগুলো জমাট বাঁধতে বাঁধতে পাথর হয়ে আছে।সারাজীবন যে আমাকে আশ্রয় দিয়েছে সময়ে-অসময়ে,সে বিছানার উপর চেয়ারটা তোলে তাকে কষ্ট দিলাম।সব দেনা-পাওনা চুকানোর পালা এবার।মুঠোফোনের টর্চলাইটের আলোয় পাখার মাঝে বাঁধলাম গামছাটি।খুব শক্ত করে।রিস্ক নিলাম না।বিছানার উপর চেয়ার।চেয়ারের উপর আমি।দাঁড়িয়ে আছি।স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে।অবশেষে পৃথিবীকে কিছু দিয়ে যেতে পারছি! চোখটা বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিতে থাকলাম।আস্তে আস্তে গামছার এক পাশ গলায় প্যাচাতে শুরু করবো এখনই।নিঃশ্বাসগুলো ঘন হতে লাগলো। পায়ের নিচের চেয়ার অপেক্ষায় শেষ তিরষ্কারের।আমি তাকে পদধূলি থেকে বঞ্চিত করবো।তাতেই তার স্বস্তি আর আমার মুক্তি।
কেবল গামছাটা প্যাচানো শুরু করবো।কিন্তু আমার নিষ্ঠুর নিয়তি।আমার এতোদিনের সঙ্গী পাখাটা মুখ সরিয়ে নিলো।সে আচমকা ঘুরতে শুরু করলো।আমি ভয় পেয়ে হাত থেকে গামছা ফসকে পড়ে গেলাম বিছানায়।আমার রক্ত চলাচল বাড়তে লাগলো যেন।আবছা আলোয় হাতরাতে হাতরাতে সুইচ বোর্ডের দিকে গেলাম।পাখার সুইচটা বন্ধ করতে হবে।একটা সুইচ চাপতেই ঘরের বাতি জ্বলে উঠলো।আমি আবারো চমকে গেলাম! চোখ পড়লো দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা আয়নাটার দিকে।আয়নাতে আমি দেখতে পেলাম এক সুঠাম দেহী যুবককে! ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।চোখের নিচে কালি জমে আছে।কালো ঠোঁট।এলো চুল।আমি ভয়ে আয়না থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।এবার চোখে পড়লো একটা ঝুলন্ত গামছা ঘুরছে পাখার সাথে।একটা চেয়ার কাত হয়ে পড়ে আছে বিছানার উপর। আমি আবার আয়নার দিকে তাকালাম।সেই অদ্ভুতুড়ে চেহারা।আমাকে বিড়বিড় করে বলছে, " এ পৃথিবী তোমাকে সত্যিই অনেক দিয়েছে।এবার যদি তুমি তাকে কিছু দিতে চাও তোমার ভারাক্রান্ত নিথর দেহ নয়,এক উচ্ছ্বল--প্রাণবন্ত প্রাণ দাও।তোমার প্রাণের সজীবতায় এ পৃথিবী হয়ে উঠুক নির্মল।"
আমি এখন বসে আছি।খোলা জানালা দিয়ে আসছে সকালের মিষ্টি রোদ আর স্নিগ্ধ হাওয়া।যে আবেগ ভুল পথে প্ররোচিত করে,তা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি আজ।একটা সাদা কাগজ ভরে দিয়েছি লিখে।আর মহাকাল আমাকে যেন বারবার বলছে,
"শোন ছেলে, জীবন এখানেই শেষ নয়,জীবন এখানেই শুরু।।"
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
তীর্থের কাক ০৮/০৮/২০১৭ভাল
-
সোলাইমান ২৮/০৯/২০১৬যেখানে শুরু তার পরেই শেষ হবে।অনেক অনেক কিছু জানলাম। সত্যি অসাধারণ, আমাদের। জীবনে অনেক ভূল করি যার শুরু বুঝতে পারি না, আর শেষ হয় না। যা কর ভালো করে শুরু কর সমাধান হবেই।তুমিই পার শুরু করতে, তুমিই পার শেষ করতে।
সুন্দর, সুন্দর বেস সুন্দর। -
মেহেদী হাসান (নয়ন) ০৯/০৭/২০১৬valo
-
দেবজ্যোতিকাজল ০৯/০৭/২০১৬অনেককিছু জানলাম