দূরত্ব (পর্ব-১)
১.
" ফেইসবুক,টুইটার,ভাইভার,হোয়াটস এপ প্রভৃতির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাঝে মাঝে মানুষ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন(isolated)হয়ে যায়।আবার কখনো কখনো মানুষ বিভিন্ন কারণে বিচ্ছিন্ন (isolated) হবার পর নিজের একাকীত্ব দূর করার মাধ্যম হিসেবে এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি অতিরিক্ত ঝুঁকে পড়ে।
মানুষের বিচ্ছিন্নতার নতুন নতুন কতো ধরণ,কতো প্রেক্ষাপট।পুঁজিবাদী সমাজ কাঠামোতে বিচ্ছিন্নতা বলতে শুধু আবেগিক বিপর্যয়ই নয়,বরং এখানে অন্যান্য প্রভাবকগুলোও কাজ করতে পারে!
মানসিক ভাবে,শারীরিক ভাবে,আর্থিক ভাবে,সামাজিক ভাবে,পারিবারিক ভাবে, আরো নানা ভাবেই ব্যক্তি বিচ্ছিনতায় ভোগতে পারে।"
চশমাটা টেবিলে খুলে রেখে চোখ মুছে অপু।মাস্টার্সের থিসিসের টপিক সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।আর সারাদিন এ নিয়ে বিভিন্ন বই জার্নাল ঘাটাঘাটি করতে করতে নিজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।অপু নিজেই খুব বিচ্ছিন্ন।আগের মতো আর বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডাবাজিতে মন বসে না।সারাদিন ঘুম।ক্লাস-টাসের চাপ নেই।আর সারা রাত জেগে কবিতা পড়া,কবিতা লেখা,ফেইসবুকিং আর একটু আধটু সময় পেলে থিসিসের কাজ করা।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের রাত জাগাটা তো এখন ফ্যাশনের পর্যায়ে চলে গেছে।কেউ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লে যেন তাকে নিয়ে রুমমেটরা পুরো গল্পের আইটেম ই বানিয়ে দেয়।
ভার্সিটির হলে থাকে অপু।রুমমেটটা ষাঁড়ের মতো নাক ডাকছে।রুমে দুই দুইটা লাইট জ্বলছে,ওগুলো যেন তার কিছুই বিগড়াচ্ছে না।
ড্রয়ার থেকে বেনসনের প্যাকেটটা বের করে একটা সিগারেট ধরালো।শেষ রাতে একা একা বিড়ি ফুঁকার মজাই যেন আলাদা।তাও আবার টেবিলের উপর দু'পা তুলে আয়েশ করে।
মোবাইল ফোনে চোখ বুলালেই মেজাজ খারাপ হয় অপুর।মাত্র সাড়ে তিনটা বাজে।ভার্সিটি গেইটের করিম মামার দোকান খুলে সকাল ছ'টায়।ওখানকার তেল ছাড়া পরোটা আর মুগ ডাল ভাজি মিক্স না খেলে যেন ঘুমই আসার নয়! ক্যাম্পাস জীবনের প্রায় সাড়ে ছয় বছরের অভ্যাস।এ নিয়ে তুলি কতো বকাবকি করতো।
প্রতিবার বিড়িতে একটি টানের সাথে সাথে যেন ঘাড়ে এসে ভর করে দু'টি নাম-তুলি আর নিতু।এই নিতু ই অপুকে সিগারেট ছাড়ার জন্য যতোটা ফোর্স করতো।এমনটি আর কেউ করবেও না হয়তো কখনো।আর তুলি যেভাবে ব্যাপারটা নিতো,তাতে মনে হতো সিগারেট খাওয়া কোন খারাপ কাজই নয়।
২.
মোবাইল ফোনটা ক্রমাগত বেজেই চলছে তো চলছে।ঘুমকাতুরে চোখে হাত নাড়াতে নাড়াতে খুঁজে নিল অপু।
ফোনটা কোন ভাবে রিসিভ করে কানে নিল।
'হ্যালো! আজব তো তুমি! কি পাইছো বলতো! প্রতিদিন তোমার ঘুম ভাঙানোর দায়িত্ব আমাকে কে দিছে? তোমার বাপ? নাকি তোমার বাপ আমাকে ব্যাটারি কেনার টাকা দেয়?'
অপু চোখ বন্ধ করে শুনতেই থাকে।আর এক নাগাড়ে বলতে থাকে তুলি।রোজকার রুটিন।এতো সকালে এই ঘ্যানঘ্যানানি অপুর সহ্যের বাইরে চলে যায়।তবু সুবোধ বালকের মতো ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে ক্যাম্পাসে যায় সে।প্রতিদিন এরকম তুলির ঝাড়ি শুনেই ঘুম ভাঙে তার।তুলি অপুর বেস্ট ফ্রেন্ড।সারাক্ষণ দু'টোর ঝগড়া থামাতে থামাতে বাকি সবার দম যায়!ব্জ
খুব নরম স্বভাবের মেয়ে তুলি।তবে অপুর বেলায় যেন এই সূত্র খাটে না।
' তুমি পাশে থাকলে আমি ছুঁয়ে দেখি আকাশের নীল,
তুমি পাশে থাকলে আমি হয়ে যাই গাঙ চিল'
অপু ভর দুপুরে কবিতা বুনায় মত্ত।তুলি ঘাপটি মেরে বসে আছে খুব কাছাকাছি।ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে, আর সে বসে অপুর কবিতা গিলছে,তাও আবার বিনে পয়সায়।
ক্যাম্পাসের এক পাশে বিশাল শহীদ মিনার,অনেক উঁচুতে,প্রায় তিরানব্বইটা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়।
ওরা দু'জন সিঁড়ির মাঝামাঝি বসে আছে।দুপুর বলে এখন লোকজনের আনাগোনা খুব কম।একেবারে নাই বলা যায় না।কিছু মুখ প্রেমে নির্জনতা খুঁজতে এদিকে আসে বললেও ভুল হবে না।অপু কবিতা বলে গুনগুনিয়ে,তুলি শোনে আর দু'জনের দূরত্ব যেন ক্রমশঃ কমতেই থাকে,কমতেই থাকে,মাঝে মাঝে দু'জনের শরীরের আচমকা স্পর্শে শিহরিত হয়।কাউকে কাছে টানার প্রবল এক ক্ষমতা যেন অপুর আছে।কবিতা তার বিরাট এক অস্ত্র।তার কবিতার সুর যেন যে কাউকেই কল্প লোকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে মুহূর্তেই।আর তুলি তো কাৎ হয়ে আছে সেই শুরু থেকেই।মাঝখানে বাঁধা হয়ে আছে অপুর উদাসীনতা।যে লোক নিজের যত্নই নিতে পারে না,তাকে নিয়ে আবার প্রেমের স্বপ্ন! তুলির তাই বুক ফাঁটে তবু যেন মুখ ফোটে না।অপুও বোঝেও যেন না বোঝার ভান করেই স্বস্তি পায়।
তুলির মোবাইল ফোনের ভাইব্রেশনে ঘোর ভাঙ্গে দু'জনের।কবিতার রাজ্য থেকে বেরিয়ে সে হামাগুড়ি দেয় বাস্তবতায়।
'এই আমি ক্যান্টিনে গেলাম।ক্লাস শেষ।ওরা ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছে।চল উঠো!! "এই বলে তুলি উঠতে চায় বসা থেকে।অপু খুব রোমান্স নিয়ে হাত টেনে আবার পাশে বসিয়ে দেয় তাকে। ' আমি তো চলতেই চাই যুগ-যুগান্তর ধরে, তোমার আলতো ছোঁয়ায় ভেসে যায় মন,তোমার কথায় স্বর্গের মুক্তা ঝরে,তুমি হীন সারাক্ষণ এ প্রাণে উচাটন।"
তুলি থুড়াই তোয়াক্কা করে এসব।অপুর এমন কাব্য রসে বছর খানেক থেকে অভ্যস্ত সে।অপু এমনই। উদাসীন। আবার কখনো খুব দায়িত্বশীল।ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হলে যা হয় আর কি! ক্যাম্পাসে এক ব্যাচ জুনিয়র এসেছে।নতুন সিনিয়র।ভাব-ভঙ্গীই আলাদা!
দুপুরে ক্যান্টিনের ঐতিহাসিক খিচুড়ি খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুড় তোলে সবাই।ওদের আট জনের ফ্রেন্ড সার্কেল।তিন ছেলে,পাঁচ মেয়ে।
যথারীতি তিনটার ক্লাস আজও নদীর পাড়েই কাটবে।ক্যাম্পাস থেকে মাইল তিনেক দূরে নদী।যেই ভাবনা সেই কাজ।এক ঝাঁক বাঁদরের দল হানা দেয় নদীর তীরের মনোরোম পরিবেশে।এই ফ্রেন্ড সার্কেলটা নিয়ে ক্যাম্পাসে মাতামাতির শেষ নেই।চায়ের টঙ কিংবা এখানে-ওখানে সব জায়গায় তাদের বিচরণ।সকাল দুপুর সন্ধ্যা ক্যাম্পাসের একোণ -ওকোণে।
নদীর পাড়েই সন্ধ্যা ঘনায়।ফাগুনের ঝিরি ঝিরি হাওয়া বয়।আলতো করে দোলা দেয় প্রাণে।লাইন ধরে বসে থাকে আটজন নদীর পাড়ে।আড্ডায় মাতে নতুন নতুন উচ্ছ্বাসে।নতুন নতুন গল্প শোনায় আবার এখান থেকেই নতুন নতুন গল্পের শুরু হয়।তুলি,বিথী,তনু গান ধরে একসময়।লোপা আর টুশি ঝিম ধরে বসে গান শোনে।গানের মূর্ছনায় ভাসে সিগারেটের ধোঁয়া।অপুই একমাত্র খোর।প্রদীপ আর নিশো এসব ছাইপাশ খায় না।
তুলির গানে আবেগ আর অপুর ধূম্রশলাকার ধোঁয়ায় মাতাল হয় দিগন্ত।সময় ঘনায়।আঁধারে আচ্ছাদিত হয় চারপাশ।কোলাহোল পূর্ণ দিন শেষে অশান্ত পাখিগুলো নীড়ে ফেরে।
৩.
ডেস্কটপের স্ক্রিনে মত্ত অপু।ফেইসবুকটা খুব জেঁকে বসেছে তাকে।আঙুলের কসরত চলছেই চলছে।কি-বোর্ডের লেখাগুলো মুছেই যাচ্ছে। তবু ক্ষান্ত পায় না।রুমমেট যে রুমে আছে সে খেয়াল কে রাখে! রুমে আরো দু'টো সিট খালি।এক বেডে সে,আরেক বেডে শংকর।খুব নিরীহ ছেলে শংকর।অপুর ব্যাচমেট।অন্য ডিপার্টমেন্ট।
অপু বিড়ি ধরায় আপন মনে।এক বছরের রুমমেট হলেও দু'জনের ইন্টিমেসি তেমন হয় নি।এই যতোটুকু হলেই চলে,ততোটুকুই কেবল।দু'জন দু'টাইপের।সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য হয় না বলে অপু সিগারেট ধরালেই শংকর বের হয়ে পাশের রুমে চলে যায়।এখনো তাই ঘটলো।অপু ব্যাপারটা বুঝে,তবু বাইরে গিয়ে বিড়ি খায় না।
সে নিরবধি মগ্ন চ্যাট করতে।মোবাইল ফোন বেজেই চলছে,বেজেই চলছে।নাম্বারটা দেখেই আবার জায়গায় রেখে দিল ফোন।রিসিভ করলেই ঝামেলা।
এই ভর দুপুরে কে যাবে বাইরে!! শুক্রবার একটা দিন অন্তত শান্তি বাস করুক মনে।
শংকর রুমে ঢুকলো।" এই অপু, তুলি নাকি তোকে ফোনে পাচ্ছে না।আমাকে কল দিছিলো।কি নাকি আর্জেন্ট কথা আছে।ফোন দে ওরে।"
অপু শুনলো কিন্তু কোন বিগাড় নেই যেন! " ঐ তোর কান দিয়া কথা যায় নাই?" বিরক্ত হয়ে বলতে বলতে শংকর বিছানায় শুয়ে পড়লো।ডাইনিং এ খাইতে গেছিল বোধ হয়।দুপুরে ঘুমানোটা ওর অভ্যাস।
অপু তুলিকে কল ব্যাক করলো।বিকালে ক্যাম্পাসে যেতেই হবে।খুব জরুরী আলাপ।তুলি আসবে ক্যাম্পাসের ফুড কোর্টে।তুলি শহরে থাকে। বাবা-মা'র সাথে।বাবা-মা'র একমাত্র মেয়ে।বড়োই আদরের।আবার বড়োই শাসনের।
বিকাল বেলা শান্তির ঘুম ভেঙ্গে ফুড কোর্টের দিকে গেল অপু।তুলি চলে আসছে আগেই।
"চা খাবা?" বসতে বসতে অপুর প্রশ্ন।"আমার কিছু জরুরী কথা ছিল।" তুলি উদ্বিগ্ন স্বরে বলে। দোকান থেকে একটা বেনসন কিনে তা ধরাতে ধরাতে দু'টো চায়ের অর্ডার দিয়ে দু'জন ফুড কোর্ট থেকে একটু দূরে গিয়ে বসে।এতো পোলাপাইনের ভীড়।প্রাইভেসি থাকে না কথা বলার!
" জান তুলি তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে কেন?" কথাটা যেন তুলির মনে গিয়ে তীরের মতো বিঁধলো।তুলি কিছু না বলে চা'য়ে চুমুক দেয়। " কারণ তুমিই আমার একমাত্র প্রিয় মানুষ, প্রিয় নারীও বলতে পারো,যার সামনে বিড়ি খেতে আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।" কথাটা শোনে তুলির মুখ রাগে লাল হয়।আর অপু হাসে। যে কথাটা বলতে আসা,তা যেন বলার মুড হারিয়ে ফেলে তুলি।অপু জোর করে।তুলি জরুরী কথাটা আর বলে না।আর অপুর ততো ধৈর্যও নেই।
আড্ডাবাজি,ক্লাস,ঘুরতে যাওয়া, আরো কতো কিছু করে এভাবে দিন কাটতে থাকে।কখনো কখনো তুলি আর অপুর দূরত্ব খুব বেড়ে যায় আবার কখনো দু'জন দু'জনের খুব কাছাকাছি চলে আসে।নামহীন সম্পর্ক চলতে থাকে সময়ের সাথে। পিছুটান নেই আবার সে সম্পর্কে কোন দায়িত্ববোধও নেই।
একসময় ক্যাম্পাস ছুটি হয়ে প্রায় এক মাসের জন্য।রমজান,ঈদ আর পূজোর ছুটি।ক্যাম্পাস শূন্য হয়ে যে যার বাড়ি যায়।গ্রামের বাড়ি।
৪.
ক্যাম্পাসের ছুটি শেষে একেবারে প্রথম দিন।সবাই হয়তো এসে পৌঁছায়ও নি।যারা এসেছে তাদের মধ্যে উৎসব উৎসব আমেজ।কিন্তু তুলির চোখে মুখে যেন রাজ্যের অন্ধকার।ক্যাম্পাসে এসেই সরাসরি ডিপার্টমেন্ট এ ঢুঁ মারে।তার চেহারায় অস্থিরতার ছাপ দেখে সবাই বিস্মিয় হয়।এতোটা উতলা তুলি কখনো হয় নি এর আগে।সবার কাছে সে একটা প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে।অপু ক্যাম্পাসে আসছে কি না!
তুলির এই অস্থির অবস্থা দেখে টুশি,লোপা ফোন দেয় অপুকে।সুইচড অফ।
বাড়ি যাবার পর থেকে একবারের জন্যও ফোন করে নি অপু।এমন কি তুলি দিনে শত শত বার ফোন দিয়েছে।রিসিভ করে নি।এমনটা তো কখনও করে নি। অপু মাঝে মাঝেই বাড়ি যেতো।সবার চেয়ে একটু বেশিই যেতো হয়তো।কিন্তু কখনো এরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় নি তো।ওর কোন বিপদ হলো না তো।এমনকি সে তাদের সার্কেলের কারো সাথেই যোগাযোগ করে নি এই ছুটিতে।শংকরকে ফোন দেয় ওরা।শংকরও কিছু জানে না।শংকরের কাছে থেকে অপুর মায়ের ফোন নাম্বারটা যোগাড় করে তুলি।কিন্তু ওই নাম্বারও আনরিচেবল বলছে।
অপুর চিন্তায় এবারের পূজোটা খুব খারাপ কেটেছে তুলির।কোথাও প্রতিমা দেখতে বের ই হয় নি।গত পূজোতে অপু এখানেই ছিল।দু'দিন অপুকে পূজো দেখতে নিয়েও গেছে আর এবার পুরো লাপাত্তা সে।কোন খোঁজ নাই।ওর ঈদ শেষ, পূজো শেষ, ছুটি শেষ কিন্তু অপুর কোন দেখা নেই।বিষণ্ণতায় ডুবে মগ্ন হয়ে গেছে তুলি।ক্যাম্পাস সবে খুললো,তেমন একটা ক্লাসও হবে না।তুলি বাসায় ফিরে এলো তাই।সন্ধ্যার পর,রাতে, ঘুমানোর আগে পর্যন্ত ট্রাই করলো অপুর ফোনে।কেবলই সুইচড অফ!
(চলবে)
" ফেইসবুক,টুইটার,ভাইভার,হোয়াটস এপ প্রভৃতির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাঝে মাঝে মানুষ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন(isolated)হয়ে যায়।আবার কখনো কখনো মানুষ বিভিন্ন কারণে বিচ্ছিন্ন (isolated) হবার পর নিজের একাকীত্ব দূর করার মাধ্যম হিসেবে এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি অতিরিক্ত ঝুঁকে পড়ে।
মানুষের বিচ্ছিন্নতার নতুন নতুন কতো ধরণ,কতো প্রেক্ষাপট।পুঁজিবাদী সমাজ কাঠামোতে বিচ্ছিন্নতা বলতে শুধু আবেগিক বিপর্যয়ই নয়,বরং এখানে অন্যান্য প্রভাবকগুলোও কাজ করতে পারে!
মানসিক ভাবে,শারীরিক ভাবে,আর্থিক ভাবে,সামাজিক ভাবে,পারিবারিক ভাবে, আরো নানা ভাবেই ব্যক্তি বিচ্ছিনতায় ভোগতে পারে।"
চশমাটা টেবিলে খুলে রেখে চোখ মুছে অপু।মাস্টার্সের থিসিসের টপিক সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।আর সারাদিন এ নিয়ে বিভিন্ন বই জার্নাল ঘাটাঘাটি করতে করতে নিজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।অপু নিজেই খুব বিচ্ছিন্ন।আগের মতো আর বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডাবাজিতে মন বসে না।সারাদিন ঘুম।ক্লাস-টাসের চাপ নেই।আর সারা রাত জেগে কবিতা পড়া,কবিতা লেখা,ফেইসবুকিং আর একটু আধটু সময় পেলে থিসিসের কাজ করা।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের রাত জাগাটা তো এখন ফ্যাশনের পর্যায়ে চলে গেছে।কেউ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লে যেন তাকে নিয়ে রুমমেটরা পুরো গল্পের আইটেম ই বানিয়ে দেয়।
ভার্সিটির হলে থাকে অপু।রুমমেটটা ষাঁড়ের মতো নাক ডাকছে।রুমে দুই দুইটা লাইট জ্বলছে,ওগুলো যেন তার কিছুই বিগড়াচ্ছে না।
ড্রয়ার থেকে বেনসনের প্যাকেটটা বের করে একটা সিগারেট ধরালো।শেষ রাতে একা একা বিড়ি ফুঁকার মজাই যেন আলাদা।তাও আবার টেবিলের উপর দু'পা তুলে আয়েশ করে।
মোবাইল ফোনে চোখ বুলালেই মেজাজ খারাপ হয় অপুর।মাত্র সাড়ে তিনটা বাজে।ভার্সিটি গেইটের করিম মামার দোকান খুলে সকাল ছ'টায়।ওখানকার তেল ছাড়া পরোটা আর মুগ ডাল ভাজি মিক্স না খেলে যেন ঘুমই আসার নয়! ক্যাম্পাস জীবনের প্রায় সাড়ে ছয় বছরের অভ্যাস।এ নিয়ে তুলি কতো বকাবকি করতো।
প্রতিবার বিড়িতে একটি টানের সাথে সাথে যেন ঘাড়ে এসে ভর করে দু'টি নাম-তুলি আর নিতু।এই নিতু ই অপুকে সিগারেট ছাড়ার জন্য যতোটা ফোর্স করতো।এমনটি আর কেউ করবেও না হয়তো কখনো।আর তুলি যেভাবে ব্যাপারটা নিতো,তাতে মনে হতো সিগারেট খাওয়া কোন খারাপ কাজই নয়।
২.
মোবাইল ফোনটা ক্রমাগত বেজেই চলছে তো চলছে।ঘুমকাতুরে চোখে হাত নাড়াতে নাড়াতে খুঁজে নিল অপু।
ফোনটা কোন ভাবে রিসিভ করে কানে নিল।
'হ্যালো! আজব তো তুমি! কি পাইছো বলতো! প্রতিদিন তোমার ঘুম ভাঙানোর দায়িত্ব আমাকে কে দিছে? তোমার বাপ? নাকি তোমার বাপ আমাকে ব্যাটারি কেনার টাকা দেয়?'
অপু চোখ বন্ধ করে শুনতেই থাকে।আর এক নাগাড়ে বলতে থাকে তুলি।রোজকার রুটিন।এতো সকালে এই ঘ্যানঘ্যানানি অপুর সহ্যের বাইরে চলে যায়।তবু সুবোধ বালকের মতো ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে ক্যাম্পাসে যায় সে।প্রতিদিন এরকম তুলির ঝাড়ি শুনেই ঘুম ভাঙে তার।তুলি অপুর বেস্ট ফ্রেন্ড।সারাক্ষণ দু'টোর ঝগড়া থামাতে থামাতে বাকি সবার দম যায়!ব্জ
খুব নরম স্বভাবের মেয়ে তুলি।তবে অপুর বেলায় যেন এই সূত্র খাটে না।
' তুমি পাশে থাকলে আমি ছুঁয়ে দেখি আকাশের নীল,
তুমি পাশে থাকলে আমি হয়ে যাই গাঙ চিল'
অপু ভর দুপুরে কবিতা বুনায় মত্ত।তুলি ঘাপটি মেরে বসে আছে খুব কাছাকাছি।ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে, আর সে বসে অপুর কবিতা গিলছে,তাও আবার বিনে পয়সায়।
ক্যাম্পাসের এক পাশে বিশাল শহীদ মিনার,অনেক উঁচুতে,প্রায় তিরানব্বইটা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়।
ওরা দু'জন সিঁড়ির মাঝামাঝি বসে আছে।দুপুর বলে এখন লোকজনের আনাগোনা খুব কম।একেবারে নাই বলা যায় না।কিছু মুখ প্রেমে নির্জনতা খুঁজতে এদিকে আসে বললেও ভুল হবে না।অপু কবিতা বলে গুনগুনিয়ে,তুলি শোনে আর দু'জনের দূরত্ব যেন ক্রমশঃ কমতেই থাকে,কমতেই থাকে,মাঝে মাঝে দু'জনের শরীরের আচমকা স্পর্শে শিহরিত হয়।কাউকে কাছে টানার প্রবল এক ক্ষমতা যেন অপুর আছে।কবিতা তার বিরাট এক অস্ত্র।তার কবিতার সুর যেন যে কাউকেই কল্প লোকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে মুহূর্তেই।আর তুলি তো কাৎ হয়ে আছে সেই শুরু থেকেই।মাঝখানে বাঁধা হয়ে আছে অপুর উদাসীনতা।যে লোক নিজের যত্নই নিতে পারে না,তাকে নিয়ে আবার প্রেমের স্বপ্ন! তুলির তাই বুক ফাঁটে তবু যেন মুখ ফোটে না।অপুও বোঝেও যেন না বোঝার ভান করেই স্বস্তি পায়।
তুলির মোবাইল ফোনের ভাইব্রেশনে ঘোর ভাঙ্গে দু'জনের।কবিতার রাজ্য থেকে বেরিয়ে সে হামাগুড়ি দেয় বাস্তবতায়।
'এই আমি ক্যান্টিনে গেলাম।ক্লাস শেষ।ওরা ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছে।চল উঠো!! "এই বলে তুলি উঠতে চায় বসা থেকে।অপু খুব রোমান্স নিয়ে হাত টেনে আবার পাশে বসিয়ে দেয় তাকে। ' আমি তো চলতেই চাই যুগ-যুগান্তর ধরে, তোমার আলতো ছোঁয়ায় ভেসে যায় মন,তোমার কথায় স্বর্গের মুক্তা ঝরে,তুমি হীন সারাক্ষণ এ প্রাণে উচাটন।"
তুলি থুড়াই তোয়াক্কা করে এসব।অপুর এমন কাব্য রসে বছর খানেক থেকে অভ্যস্ত সে।অপু এমনই। উদাসীন। আবার কখনো খুব দায়িত্বশীল।ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হলে যা হয় আর কি! ক্যাম্পাসে এক ব্যাচ জুনিয়র এসেছে।নতুন সিনিয়র।ভাব-ভঙ্গীই আলাদা!
দুপুরে ক্যান্টিনের ঐতিহাসিক খিচুড়ি খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুড় তোলে সবাই।ওদের আট জনের ফ্রেন্ড সার্কেল।তিন ছেলে,পাঁচ মেয়ে।
যথারীতি তিনটার ক্লাস আজও নদীর পাড়েই কাটবে।ক্যাম্পাস থেকে মাইল তিনেক দূরে নদী।যেই ভাবনা সেই কাজ।এক ঝাঁক বাঁদরের দল হানা দেয় নদীর তীরের মনোরোম পরিবেশে।এই ফ্রেন্ড সার্কেলটা নিয়ে ক্যাম্পাসে মাতামাতির শেষ নেই।চায়ের টঙ কিংবা এখানে-ওখানে সব জায়গায় তাদের বিচরণ।সকাল দুপুর সন্ধ্যা ক্যাম্পাসের একোণ -ওকোণে।
নদীর পাড়েই সন্ধ্যা ঘনায়।ফাগুনের ঝিরি ঝিরি হাওয়া বয়।আলতো করে দোলা দেয় প্রাণে।লাইন ধরে বসে থাকে আটজন নদীর পাড়ে।আড্ডায় মাতে নতুন নতুন উচ্ছ্বাসে।নতুন নতুন গল্প শোনায় আবার এখান থেকেই নতুন নতুন গল্পের শুরু হয়।তুলি,বিথী,তনু গান ধরে একসময়।লোপা আর টুশি ঝিম ধরে বসে গান শোনে।গানের মূর্ছনায় ভাসে সিগারেটের ধোঁয়া।অপুই একমাত্র খোর।প্রদীপ আর নিশো এসব ছাইপাশ খায় না।
তুলির গানে আবেগ আর অপুর ধূম্রশলাকার ধোঁয়ায় মাতাল হয় দিগন্ত।সময় ঘনায়।আঁধারে আচ্ছাদিত হয় চারপাশ।কোলাহোল পূর্ণ দিন শেষে অশান্ত পাখিগুলো নীড়ে ফেরে।
৩.
ডেস্কটপের স্ক্রিনে মত্ত অপু।ফেইসবুকটা খুব জেঁকে বসেছে তাকে।আঙুলের কসরত চলছেই চলছে।কি-বোর্ডের লেখাগুলো মুছেই যাচ্ছে। তবু ক্ষান্ত পায় না।রুমমেট যে রুমে আছে সে খেয়াল কে রাখে! রুমে আরো দু'টো সিট খালি।এক বেডে সে,আরেক বেডে শংকর।খুব নিরীহ ছেলে শংকর।অপুর ব্যাচমেট।অন্য ডিপার্টমেন্ট।
অপু বিড়ি ধরায় আপন মনে।এক বছরের রুমমেট হলেও দু'জনের ইন্টিমেসি তেমন হয় নি।এই যতোটুকু হলেই চলে,ততোটুকুই কেবল।দু'জন দু'টাইপের।সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য হয় না বলে অপু সিগারেট ধরালেই শংকর বের হয়ে পাশের রুমে চলে যায়।এখনো তাই ঘটলো।অপু ব্যাপারটা বুঝে,তবু বাইরে গিয়ে বিড়ি খায় না।
সে নিরবধি মগ্ন চ্যাট করতে।মোবাইল ফোন বেজেই চলছে,বেজেই চলছে।নাম্বারটা দেখেই আবার জায়গায় রেখে দিল ফোন।রিসিভ করলেই ঝামেলা।
এই ভর দুপুরে কে যাবে বাইরে!! শুক্রবার একটা দিন অন্তত শান্তি বাস করুক মনে।
শংকর রুমে ঢুকলো।" এই অপু, তুলি নাকি তোকে ফোনে পাচ্ছে না।আমাকে কল দিছিলো।কি নাকি আর্জেন্ট কথা আছে।ফোন দে ওরে।"
অপু শুনলো কিন্তু কোন বিগাড় নেই যেন! " ঐ তোর কান দিয়া কথা যায় নাই?" বিরক্ত হয়ে বলতে বলতে শংকর বিছানায় শুয়ে পড়লো।ডাইনিং এ খাইতে গেছিল বোধ হয়।দুপুরে ঘুমানোটা ওর অভ্যাস।
অপু তুলিকে কল ব্যাক করলো।বিকালে ক্যাম্পাসে যেতেই হবে।খুব জরুরী আলাপ।তুলি আসবে ক্যাম্পাসের ফুড কোর্টে।তুলি শহরে থাকে। বাবা-মা'র সাথে।বাবা-মা'র একমাত্র মেয়ে।বড়োই আদরের।আবার বড়োই শাসনের।
বিকাল বেলা শান্তির ঘুম ভেঙ্গে ফুড কোর্টের দিকে গেল অপু।তুলি চলে আসছে আগেই।
"চা খাবা?" বসতে বসতে অপুর প্রশ্ন।"আমার কিছু জরুরী কথা ছিল।" তুলি উদ্বিগ্ন স্বরে বলে। দোকান থেকে একটা বেনসন কিনে তা ধরাতে ধরাতে দু'টো চায়ের অর্ডার দিয়ে দু'জন ফুড কোর্ট থেকে একটু দূরে গিয়ে বসে।এতো পোলাপাইনের ভীড়।প্রাইভেসি থাকে না কথা বলার!
" জান তুলি তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে কেন?" কথাটা যেন তুলির মনে গিয়ে তীরের মতো বিঁধলো।তুলি কিছু না বলে চা'য়ে চুমুক দেয়। " কারণ তুমিই আমার একমাত্র প্রিয় মানুষ, প্রিয় নারীও বলতে পারো,যার সামনে বিড়ি খেতে আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।" কথাটা শোনে তুলির মুখ রাগে লাল হয়।আর অপু হাসে। যে কথাটা বলতে আসা,তা যেন বলার মুড হারিয়ে ফেলে তুলি।অপু জোর করে।তুলি জরুরী কথাটা আর বলে না।আর অপুর ততো ধৈর্যও নেই।
আড্ডাবাজি,ক্লাস,ঘুরতে যাওয়া, আরো কতো কিছু করে এভাবে দিন কাটতে থাকে।কখনো কখনো তুলি আর অপুর দূরত্ব খুব বেড়ে যায় আবার কখনো দু'জন দু'জনের খুব কাছাকাছি চলে আসে।নামহীন সম্পর্ক চলতে থাকে সময়ের সাথে। পিছুটান নেই আবার সে সম্পর্কে কোন দায়িত্ববোধও নেই।
একসময় ক্যাম্পাস ছুটি হয়ে প্রায় এক মাসের জন্য।রমজান,ঈদ আর পূজোর ছুটি।ক্যাম্পাস শূন্য হয়ে যে যার বাড়ি যায়।গ্রামের বাড়ি।
৪.
ক্যাম্পাসের ছুটি শেষে একেবারে প্রথম দিন।সবাই হয়তো এসে পৌঁছায়ও নি।যারা এসেছে তাদের মধ্যে উৎসব উৎসব আমেজ।কিন্তু তুলির চোখে মুখে যেন রাজ্যের অন্ধকার।ক্যাম্পাসে এসেই সরাসরি ডিপার্টমেন্ট এ ঢুঁ মারে।তার চেহারায় অস্থিরতার ছাপ দেখে সবাই বিস্মিয় হয়।এতোটা উতলা তুলি কখনো হয় নি এর আগে।সবার কাছে সে একটা প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে।অপু ক্যাম্পাসে আসছে কি না!
তুলির এই অস্থির অবস্থা দেখে টুশি,লোপা ফোন দেয় অপুকে।সুইচড অফ।
বাড়ি যাবার পর থেকে একবারের জন্যও ফোন করে নি অপু।এমন কি তুলি দিনে শত শত বার ফোন দিয়েছে।রিসিভ করে নি।এমনটা তো কখনও করে নি। অপু মাঝে মাঝেই বাড়ি যেতো।সবার চেয়ে একটু বেশিই যেতো হয়তো।কিন্তু কখনো এরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় নি তো।ওর কোন বিপদ হলো না তো।এমনকি সে তাদের সার্কেলের কারো সাথেই যোগাযোগ করে নি এই ছুটিতে।শংকরকে ফোন দেয় ওরা।শংকরও কিছু জানে না।শংকরের কাছে থেকে অপুর মায়ের ফোন নাম্বারটা যোগাড় করে তুলি।কিন্তু ওই নাম্বারও আনরিচেবল বলছে।
অপুর চিন্তায় এবারের পূজোটা খুব খারাপ কেটেছে তুলির।কোথাও প্রতিমা দেখতে বের ই হয় নি।গত পূজোতে অপু এখানেই ছিল।দু'দিন অপুকে পূজো দেখতে নিয়েও গেছে আর এবার পুরো লাপাত্তা সে।কোন খোঁজ নাই।ওর ঈদ শেষ, পূজো শেষ, ছুটি শেষ কিন্তু অপুর কোন দেখা নেই।বিষণ্ণতায় ডুবে মগ্ন হয়ে গেছে তুলি।ক্যাম্পাস সবে খুললো,তেমন একটা ক্লাসও হবে না।তুলি বাসায় ফিরে এলো তাই।সন্ধ্যার পর,রাতে, ঘুমানোর আগে পর্যন্ত ট্রাই করলো অপুর ফোনে।কেবলই সুইচড অফ!
(চলবে)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ০১/০৩/২০১৬ভালো লাগল ভাই।
-
অভিষেক মিত্র ০১/০৩/২০১৬দারুণ!
-
জয়শ্রী রায় মৈত্র ২৯/০২/২০১৬গল্প খুব ভালো । লেখার গভীরতাও আছে । কিন্তু গল্পের ভূমিকা অর্থাৎ শুরুটা একটু অন্য রকম হলে ভাল হত । অবশ্য এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত অভিমত । একবার ভেবে দেখতে পারেন । শুভেচ্ছা নেবেন ।
-
ধ্রুব রাসেল ২৯/০২/২০১৬অসাধারণ লেখনি।