ডায়েরি
"ভালবাসা!!অনুভূতি!!তবে কি শুধুই অনুভব?!জানি তোমার ভালবাসা নিখাদ।আবার তুমি তোমার ধারণায় অবিচল।কি অদ্ভুদ!!মাঝে মাঝে ভাবি।এলোমেলো ভাবনা।।ভালবাসা মানে যদি হয় শুধুই অনুভব(!) তবে তো আর সেখানে অন্যকিছুরই ঠাঁই হবে না।আর কেয়ারিং-শেয়ারিং করা নিয়ে ভাবা তো নেহাত বোকামীই।আর আমি তো বোকা।ইমোশনাল ফুল।।"
তরু ডায়েরির পাতা উল্টায়।বেশ পুরনো।প্রতিটা পাতায় লিখা।সেই পরিচিত হাতের লেখা।তরু চোখ বুলায়।আর চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুবিন্দু মুছে।কল্পনার রাজ্যে হারায় অজান্তেই।।
-তপু, তুমি তো অনেক সুন্দর লিখ।আমি তোমাকে একটা ডায়েরি দিব।তুমি মনের মাধুরী মিশিয়ে আমাকে লিখে দিবা।কি গো দিবা না??
-হুম।দিব।একটা আমার লিখা ডায়েরি তোমাকে গিফট করব আমি।আমি হয়তো থাকবা না,তবে আমার লেখায় বেঁচে থাকব আমি তোমার মাঝে।।
কিচেন থেকে পোড়া গন্ধ পেয়ে ঘোর ভাঙে তরুর।চুলার উপর দুধ গরম হচ্ছিল।যাক তেমন একটা পোড়ে নি।খেতে পারবে মেয়েটা।তরু আবার এসে ডায়েরিতে চোখ বুলায়।
" হোয়াটস এপে আমার এতো এতো মেসেজ দেখার পরও যখন তুমি রিপ্লাই দাও না,আমার কেমন লাগে তুমি জান না,আমার বিশ্বাস তা জানলে অন্তত তুমি মেসেজ দেখে ও চুপ করে থাকতা না।তোমাকে হাজার বার ফোন দিলেও তুমি যদি ধর না কিংবা ওয়েটিং এ থাক,ভুল করেও কল ব্যাক কর না।আর এমনিতে কল করা তো স্বপ্ন।একটা মানুষকে এত্ত ভালবাসার পরও,এত গুরুত্ব দেয়ার পরও যদি মানুষটা............
আমি তোমার চোখে আমার জন্য অফুরন্ত ভালবাসা দেখেছি।জানি আমাকে ও তুমি অনেক ফিল কর।।
তাই বলে তুমি ব্যস্ততার কারনে রেসপন্স করতে পার না,এটা অজুহাত বিনা আর কি হতে পারে!!
তবু ভালবাসি।
তুমিও ভালবেস।।
আমি কোন ভাবেই তরুকে ছাড়া থাকতে চাই না।।
আমি কেন তবু লাকি জান??কারন তুমিই একজন এ ভুবনে,যে আমাকে ভালবাসে,যার ভাবনায় আমি আছি,যার চোখে আমি আমার জন্য ভালবাসা দেখতে পেয়েছি।।অনেক ভালবাসা তোমার জন্য।।"
-মা বইটা পেলে আমার??
-না রে মা।পেলাম না তো।।তোর বাবাকে বলে আরেকটা আনিয়ে দিব রে মা।যা এবার একটু ঘুমা।
তরুর একমাত্র মেয়ে।কল্প নাম।প্ল্যা গ্রুপে এ বছরই ভর্তি করে দিয়েছে রাহাত।বয়স হয় নি মেয়েটার।সবে সাড়ে চার।রাহাত বলে এখন স্কুলে গেলে নাকি সাহস বাড়বে।মেয়েটার উতসাহও আছে বলে তরু আর বাঁধা দেয় না।।
দুপুর গড়ায়।রান্নার কাজ একটু আগেই শেষ করেছে সে।রাতে বাইরে খাবে।শুধু দুপুরের জন্য।রাহাত অফিসে।ব্যাংকার।সকালে যায়।আর আটটা বাজলে ফিরে।কখনো আরো দেরি হয়।আজ অবশ্য তাড়াতাড়ি ফিরবে।
কল্প'র ছড়ার বইটা খুঁজতে গিয়ে ডায়েরিটা চোখে পড়ে তরুর।উপরে ধুলো জমে গেছিল।অনেক দিন আর এটা পড়া হয় না।অথচ বিয়ের পর এক সময় একলা দুপুর এই ডায়েরিটা অনেক সঙ্গ দিত তাকে।প্রায় ছয় বছর পুরনো ডায়েরি।আজও আছে।তপুর শেষ ও একমাত্র স্মৃতি।।তপু হয়তো আজ কালের গভীরে,কিংবা আকাশে বাতাসে মিশে আছে,কিংবা পাখিদের ভীড়ে থেকে আজও তাকিয়ে রয়েছে তার প্রিয় তরুর দিকে।।
"মেয়ে তোমাকে পাশে নিয়ে নির্জনতার মাঝে হারিয়ে যাওয়াটা যে এ ভুবনের সকল সুখের উর্ধে,আজ বুঝলাম গো জানো।
তোমার উপস্থিতি সকল ক্লান্তিকে হার মানায়।জানো অনেক অভিযোগ নিয়ে আসছিলাম দেখা করতে।কিন্তু তোমার সামনে আসলেই আমি হারিয়ে যাই তোমার উন্মাদনায়; আমি তোমার নিঃশ্বাসে বাঁচি।।তুমিই আমার প্রেরণা জান।আমার ভালবাসার শেষ ও প্রথম বিন্দু তুমি।"
তপুর সাথে শেষ বারের মত দেখা হয় তরুর বিয়ের মাসখানেক আগে।সেই চির চেনা নদীর পাড়ে, যেখানে অন্তত প্রতি বিকেলে দেখা না হলে নিঃশ্বাস ভারী হয়ে যেত।কে জানতো সেদিনই তাদের শেষ দেখা।সময়ের আবর্তনে তপু হারিয়ে যাবে।পরাজয় ঘটবে আবেগের।বাস্তবতার কাছে হার মানবে সকল আকুলতা।।
তপু এমনিতে শান্ত-চাপা স্বভাবের ছিল।কিন্তু তার অই দিনের চাঞ্চল্য আজও তরুর কাছে অদ্ভুদ লাগে।যেন সে জানতো ও দেখাই শেষ দেখা।এমন ভাবে পৃথিবীর সকল ভালবাসা মেখে দিয়েছিল তরুর কপোলে, যেন এর পরে তার আর সময়ই ছিল না।।আজও তপুর ঠোঁটের শেষ ছোঁয়া অনুভব করে তরু।।
নিয়তি।।বড়ই অদ্ভুদ!! ওটাই শেষ দেখা ছিল।নদীর পাড়।শান্ত বিকেল।ঝিরি ঝিরি হাওয়া।তপু আর তরু।আকাশকে সাক্ষী রেখে শেষ চুম্বন।।
কলিং বেলের শব্দ শুনে তড়িঘড়ি করে ডায়েরিটা জায়গামতো রেখে দরজা খুলতে যায় তরু।নিশ্চই রাহাত এসেছে।আজ বিশেষ দিন।তাদের ৬ষ্ঠ বিবাহ বার্ষিকী আজ।দুজন মিলে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।সেই নদীর পাড়ে।রাতে চাইনিজ খাওয়াবে রাহাত।
এভাবেই তপু আবার হারিয়ে যায় নাগরিক কোলাহলে।মাঝে মাঝে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাসের মাঝে।খুবই অল্প সময়ের জন্য।কয়েক মুহূর্ত থমকে যায় সকল অনুভূতি।অতঃপর চলে সময়ের চাকা।
ভালবাসা তবু মরে না।অনুভূতি বদলায় না।বদলায় কেবল স্থান,কাল আর পাত্র। প্রকৃতি ই শূন্যস্থান পছন্দ করে না।আর তরু'রাও তো মানুষ।মানুষ।।আর মানুষ তো প্রেমময়।।
তরু ডায়েরির পাতা উল্টায়।বেশ পুরনো।প্রতিটা পাতায় লিখা।সেই পরিচিত হাতের লেখা।তরু চোখ বুলায়।আর চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুবিন্দু মুছে।কল্পনার রাজ্যে হারায় অজান্তেই।।
-তপু, তুমি তো অনেক সুন্দর লিখ।আমি তোমাকে একটা ডায়েরি দিব।তুমি মনের মাধুরী মিশিয়ে আমাকে লিখে দিবা।কি গো দিবা না??
-হুম।দিব।একটা আমার লিখা ডায়েরি তোমাকে গিফট করব আমি।আমি হয়তো থাকবা না,তবে আমার লেখায় বেঁচে থাকব আমি তোমার মাঝে।।
কিচেন থেকে পোড়া গন্ধ পেয়ে ঘোর ভাঙে তরুর।চুলার উপর দুধ গরম হচ্ছিল।যাক তেমন একটা পোড়ে নি।খেতে পারবে মেয়েটা।তরু আবার এসে ডায়েরিতে চোখ বুলায়।
" হোয়াটস এপে আমার এতো এতো মেসেজ দেখার পরও যখন তুমি রিপ্লাই দাও না,আমার কেমন লাগে তুমি জান না,আমার বিশ্বাস তা জানলে অন্তত তুমি মেসেজ দেখে ও চুপ করে থাকতা না।তোমাকে হাজার বার ফোন দিলেও তুমি যদি ধর না কিংবা ওয়েটিং এ থাক,ভুল করেও কল ব্যাক কর না।আর এমনিতে কল করা তো স্বপ্ন।একটা মানুষকে এত্ত ভালবাসার পরও,এত গুরুত্ব দেয়ার পরও যদি মানুষটা............
আমি তোমার চোখে আমার জন্য অফুরন্ত ভালবাসা দেখেছি।জানি আমাকে ও তুমি অনেক ফিল কর।।
তাই বলে তুমি ব্যস্ততার কারনে রেসপন্স করতে পার না,এটা অজুহাত বিনা আর কি হতে পারে!!
তবু ভালবাসি।
তুমিও ভালবেস।।
আমি কোন ভাবেই তরুকে ছাড়া থাকতে চাই না।।
আমি কেন তবু লাকি জান??কারন তুমিই একজন এ ভুবনে,যে আমাকে ভালবাসে,যার ভাবনায় আমি আছি,যার চোখে আমি আমার জন্য ভালবাসা দেখতে পেয়েছি।।অনেক ভালবাসা তোমার জন্য।।"
-মা বইটা পেলে আমার??
-না রে মা।পেলাম না তো।।তোর বাবাকে বলে আরেকটা আনিয়ে দিব রে মা।যা এবার একটু ঘুমা।
তরুর একমাত্র মেয়ে।কল্প নাম।প্ল্যা গ্রুপে এ বছরই ভর্তি করে দিয়েছে রাহাত।বয়স হয় নি মেয়েটার।সবে সাড়ে চার।রাহাত বলে এখন স্কুলে গেলে নাকি সাহস বাড়বে।মেয়েটার উতসাহও আছে বলে তরু আর বাঁধা দেয় না।।
দুপুর গড়ায়।রান্নার কাজ একটু আগেই শেষ করেছে সে।রাতে বাইরে খাবে।শুধু দুপুরের জন্য।রাহাত অফিসে।ব্যাংকার।সকালে যায়।আর আটটা বাজলে ফিরে।কখনো আরো দেরি হয়।আজ অবশ্য তাড়াতাড়ি ফিরবে।
কল্প'র ছড়ার বইটা খুঁজতে গিয়ে ডায়েরিটা চোখে পড়ে তরুর।উপরে ধুলো জমে গেছিল।অনেক দিন আর এটা পড়া হয় না।অথচ বিয়ের পর এক সময় একলা দুপুর এই ডায়েরিটা অনেক সঙ্গ দিত তাকে।প্রায় ছয় বছর পুরনো ডায়েরি।আজও আছে।তপুর শেষ ও একমাত্র স্মৃতি।।তপু হয়তো আজ কালের গভীরে,কিংবা আকাশে বাতাসে মিশে আছে,কিংবা পাখিদের ভীড়ে থেকে আজও তাকিয়ে রয়েছে তার প্রিয় তরুর দিকে।।
"মেয়ে তোমাকে পাশে নিয়ে নির্জনতার মাঝে হারিয়ে যাওয়াটা যে এ ভুবনের সকল সুখের উর্ধে,আজ বুঝলাম গো জানো।
তোমার উপস্থিতি সকল ক্লান্তিকে হার মানায়।জানো অনেক অভিযোগ নিয়ে আসছিলাম দেখা করতে।কিন্তু তোমার সামনে আসলেই আমি হারিয়ে যাই তোমার উন্মাদনায়; আমি তোমার নিঃশ্বাসে বাঁচি।।তুমিই আমার প্রেরণা জান।আমার ভালবাসার শেষ ও প্রথম বিন্দু তুমি।"
তপুর সাথে শেষ বারের মত দেখা হয় তরুর বিয়ের মাসখানেক আগে।সেই চির চেনা নদীর পাড়ে, যেখানে অন্তত প্রতি বিকেলে দেখা না হলে নিঃশ্বাস ভারী হয়ে যেত।কে জানতো সেদিনই তাদের শেষ দেখা।সময়ের আবর্তনে তপু হারিয়ে যাবে।পরাজয় ঘটবে আবেগের।বাস্তবতার কাছে হার মানবে সকল আকুলতা।।
তপু এমনিতে শান্ত-চাপা স্বভাবের ছিল।কিন্তু তার অই দিনের চাঞ্চল্য আজও তরুর কাছে অদ্ভুদ লাগে।যেন সে জানতো ও দেখাই শেষ দেখা।এমন ভাবে পৃথিবীর সকল ভালবাসা মেখে দিয়েছিল তরুর কপোলে, যেন এর পরে তার আর সময়ই ছিল না।।আজও তপুর ঠোঁটের শেষ ছোঁয়া অনুভব করে তরু।।
নিয়তি।।বড়ই অদ্ভুদ!! ওটাই শেষ দেখা ছিল।নদীর পাড়।শান্ত বিকেল।ঝিরি ঝিরি হাওয়া।তপু আর তরু।আকাশকে সাক্ষী রেখে শেষ চুম্বন।।
কলিং বেলের শব্দ শুনে তড়িঘড়ি করে ডায়েরিটা জায়গামতো রেখে দরজা খুলতে যায় তরু।নিশ্চই রাহাত এসেছে।আজ বিশেষ দিন।তাদের ৬ষ্ঠ বিবাহ বার্ষিকী আজ।দুজন মিলে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।সেই নদীর পাড়ে।রাতে চাইনিজ খাওয়াবে রাহাত।
এভাবেই তপু আবার হারিয়ে যায় নাগরিক কোলাহলে।মাঝে মাঝে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাসের মাঝে।খুবই অল্প সময়ের জন্য।কয়েক মুহূর্ত থমকে যায় সকল অনুভূতি।অতঃপর চলে সময়ের চাকা।
ভালবাসা তবু মরে না।অনুভূতি বদলায় না।বদলায় কেবল স্থান,কাল আর পাত্র। প্রকৃতি ই শূন্যস্থান পছন্দ করে না।আর তরু'রাও তো মানুষ।মানুষ।।আর মানুষ তো প্রেমময়।।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ১১/০৫/২০১৬দারুন!
-
মোবারক হোসেন ১২/১১/২০১৫ভাল লাগলো পড়ে।।
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ১২/১১/২০১৫ভালো !!