www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলার কথা - ১০১

মূল্যবোধ


নৈতিক ব্যাপারটা অনেকটা প্রশ্ন চিহ্নের মত। যেভাবে যার সামনে দাঁড় করানো হোক না কেন তা আবার অন্য আর একটা প্রশ্নের জন্ম দেবে।
কুকুর বিড়াল বাঘ সিংহ কীট পতঙ্গ সবার ক্ষেত্রে স্বভাব সহবত আচরণ আগে যা ছিল এখনো তাই আছে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে ক্রমাগত তা বদলে যাচ্ছে।
যে যার দেশ, যে যার নিয়মকানুন, যে যার মানুষ হিসেবে নৈতিকতা নির্ধারণ করে রেখেছে। কোথাও এক না। প্রতিটি পদক্ষেপে তার ধারা ও ভাবনা বদলে যায়।
পাশের জনকে জায়গা ছেড়ে দেওয়া মানুষের ধর্ম না। আমি তাহলে দাঁড়াব কোথায়? এরকম প্রত্যেকের ভাবনায় মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ ক্রমাগত অবক্ষয়ের পথে হাঁটছে।
তার উপর কোনটা ঠিক কোনটা ভুল কে ঠিক করবে? কত টাকায় কিনে কত টাকায় বিক্রি করলে সঠিক তার কি কোনো মাপকাঠি আছে? MRP-এর উপরে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ছাড় দেয়। তার মধ্যে সঠিক বা নৈতিক কোনটা?
অনেকে মারছে আবার অনেকে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে, অনেকে আবার সেটা নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে, অনেকে আবার যে কোনো একটা পক্ষ নিচ্ছে। একেবারে মাঝামাঝি কেউ দাঁড়াতে পারবে না, আবার নৈতিকতার দিক দিয়ে কোনটা ঠিক তা ঠিক করতে পারবে না।
তবু অনেকে এখনো নীতিবাগীশ না হয়েও থাকতে পারেন না।
এখনও অনেকে সিগনাল দেখে রাস্তা পার হয়, ধৈর্য ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে, সরকারি আদেশ নির্দেশ সংবিধান নিয়ম মেনে পালন করে, নিয়মিত ট্যাক্স দেয়, কষ্ট হয় তবু এক পয়সা ঘুষ দেয় না। বুকের মধ্যে এই আমার দেশ এরকম একটা গর্ব কাজ করে। অন্তত তাদের জন্য নৈতিক শব্দটি বারবার আমাদের সবার বুকের মধ্যে বেজে ওঠে।
কিন্তু তাদের সংখ্যা কমছে। ঠোক্কর খেতে খেতে তারাও বুঝে গেছে নৈতিকতার বিপরীত ছাড়া আর কোন উপায় নাই। নৈতিকতার বিপরীতে ক্ষমতা প্রয়োগ করে যথেচ্ছাচারে লোক জড়ো করে অনেকে অনেক উপরে উঠে যাচ্ছে। তারাই তখন আবার তাদের মত করে নৈতিকতার সংজ্ঞা তৈরি করছে।
এই ক্ষমতাটুকু, মানুষ মনের প্রভুত্বটুকু, আদেশকারী হওয়ার ইচ্ছেতে মানুষ নৈতিকতার ধারে কাছেও যাচ্ছে না। যে করে হোক টাকা পয়সা ধন দৌলত সুখ স্বাচ্ছন্দ্য সব সব কিছু নিজের জন্য পেতে চাইছে। তার জন্য যা যা করতে হয় তাই করছে।
সামাজিক রাজনৈতিক পারিবারিক প্রতিটি অবস্থানে নৈতিকতা শব্দটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে।
ছেলে বাবাকে মানছে না, শিক্ষার্থী শিক্ষককে মানছে না, গুরুজনের কথা ছোটোরা শুনছে না, প্রভাবশালী অন্যায় করে বিন্দাস আছে ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রে একে অপরকে দোষ দিচ্ছে।
বাবার মত কাজ করলে নিশ্চয়ই ছেলে মানত, শিক্ষা দিলে নিশ্চয়ই শিক্ষার্থী শিক্ষককে সম্মান করত, এখন গুরুজন শুধু ছোটোদের খুঁত ধরে, প্রশংসা করে না ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু সব কিছুতে সামাজিক অবক্ষয় প্রকট হয়ে উঠছে।
গুরুজন যেমন ছ্যা ছ্যা করছে তেমনি ছোটোরাও ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখাচ্ছে। পুরো সামাজিক পারিবারিক ও রাষ্ট্রগত জীবন যাত্রা নৈতিকতার বিপরীত পথে হাঁটছে।
তবে আশা সব সময় আলো জ্বালায়। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে নিজেকে নিজের দাঁড় করানোর অসীম ক্ষমতা আছে। অন্তর আত্মা ঠিক জেগে ওঠে। অন্যকে মাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার বাসনা থেকে বিরত থেকে নিজের মহিমা নিজে নিশ্চয়ই খুঁজে বের করবে। সেটাই হবে জীবনের জয়। নৈতিক জয় ।
নৈতিক অবক্ষয়ের আর একটা বড় কারণ - যা চাই এখুনি চাই। আর নিজের সীমা অতিক্রম করে আরো বেশি চাই।
চাই তো চাই। না পেলে তার প্রতিক্রিয়াও সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। ফলে তার পরিণামে লঘু গুরু বড় ছোটো জ্ঞান থাকছে না। হিতাহিত শূন্যতা ঘিরে ধরছে পুরো অস্তিত্ব জুড়ে।
পুরো সিস্টেম জুড়ে কাজ করছে - পাব না মানে? দেবে না মানে? নেবো না মানে? কে রে তুই? এবং আরো চাই আরো চাই। এই আগ্রাসন গ্রাস করছে সর্বত্র।
বন্ধুত্ব, ভাই ভাই, প্রতিবেশী এসবই শুধু সম্পর্ক হয়ে থেকে যাচ্ছে। যেটুকু মর্যাদা পরস্পরের প্রাপ্য তা আর থাকছে না। ফলে কেউ উপরে উঠলে (সে ক্ষমতায় হোক বা নিজস্ব গুণে) তার পা ধরে পেছনে টানবেই। কোনভাবেই কোন সহযোগিতা পাওয়ার কোন আশা থাকে না।
এসব আগেও ছিল। কিন্তু এখন তা আরও স্পষ্ট ও সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। নৈতিকতার লেশমাত্র দেখা যাচ্ছে না।
মানুষের এই যে মন তাতে দিবারাত্রি এক ধরনের কারুকার্য চলে। সে আঁকতে থাকে। ভাঙতে থাকে। গড়তে থাকে। সৃষ্টির অপার বিস্ময়ে নিজেকে মেলে ধরতে থাকে। এই অপার বিস্ময় ভাবনায় যত বেশি অন্য মন অন্য মানুষ অন্য ভাবনা কাজ করে তত সে কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। নিজের ভেতরের সম্ভাবনা সে কাজে না লাগিয়ে অন্যের নকল করতে অন্যের এগিয়ে যাওয়ার পথে পা বাড়াতে থাকে।
মনটুকু ছাড়া মানুষ তো আসলে পশুর মত প্রাণীর মত। ফলে মনের ভিন্নতা পশুত্ব আচরণ মানুষকে আরও সংকীর্ণ করে দিচ্ছে।
এর বাইরে মানুষের জন্য মানুষের কল্যাণকর ভাবনা নিয়ে কত মানুষ কাটিয়ে দিচ্ছে সারা জীবন। তারা মহান। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সংখ্যা শুধু কমছে। সভ্যতার এতটা পথ পেরিয়ে এসে কোথাও না কোথাও পূর্ব অর্জিত সম্পদে মানুষ নিজেকে অতি বিক্রম ভাবার চেষ্টা করছে। যেটুকু বাঁচব বাঁচার মত বাঁচব।
কিন্তু সেই বাঁচা কেন সবাইকে নিয়ে বাঁচা নয়? আমার পরে ও আগে আরো অনেক বাঁচা কেন বিন্দাস বাঁচবে না? বা আমি বা আমার সহযোগিতা তাদের বাঁচার অগ্রাধিকার দেবে না? এসব ভাবনা ধীরে ধীরে কমছে। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে মানুষ বন্দী হয়ে যাচ্ছে ছোটো ছোটো ফ্ল্যাটে, ছোটো ছোটো ঘরে, অফিস চক্করে। মুনাফা মুনাফা আর মুনাফা।
ফলে নৈতিক অবক্ষয় হাতছানি দিয়ে ডাকছে অথবা ডেকে আনছে। বেপরোয়া ভাবনার উল্লাসে মানুষের অবস্থান আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। যুদ্ধ মারামারি খুন জখম নিপীড়ন অত্যাচার যেন আরও কালো ছায়ার মত গ্রাস করছে। এ পৃথিবী শুধু আমার নয় যেমন সত্যি তেমন আমি যতক্ষণ আছি পৃথিবীর বিলাসে দূরে থাকব কেন?
বিলাসিতার ভাবনা বদলে যাচ্ছে সময়ের হাত ধরে।
তবু অবক্ষয়ের বাইরে বহু মানুষ এখনো মহান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের জন্য মানুষ আজও মহীয়ান। পৃথিবীর রঙ্গ মঞ্চে মানুষ আজও অধীশ্বর।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৪২০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/১১/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • লিখন মাহমুদ ১৯/০৩/২০২৩
    বেশ ভালো লাগলো।
  • শুভজিৎ বিশ্বাস ০৯/০১/২০২৩
    বেশ লিখেছেন।
  • ভালো লিখেছেন।
  • ফয়জুল মহী ২৭/১১/২০২২
    ভালো লাগলো
 
Quantcast