গোপলার কথা - ৯৯
কবিতা এবং আমি
ভাবুক মনের মালা গাঁথা যদি কবিতা হয় তাহলে সাহিত্যের অন্য বিভাগ যেমন গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ রম্য কৌতুক ইত্যাদি কি ভাবুক মনের ভাবনা সমৃদ্ধ লেখা নয়?
তাহলে কবিতা পড়ার পর যদি কিছুই বুঝলাম না বলি, আর আপনি যদি বলেন কবিতা বোঝার ব্যাপার নয় অনুভব করার ব্যাপার। কবিতা বুঝতে হলে আমাকে কবিতা বিশেষজ্ঞ হতে হবে, যেমন অঙ্কের বিজ্ঞানের জটিল বিষয় বুঝতে গনিতজ্ঞ বা বিজ্ঞানী হতে হয়। সাধারণের জন্য তো কোনভাবেই নয়। অল্প শিক্ষিত কম পড়া মানুষের জন্য তো নয়ই। উচ্চ মার্গের। তাহলে একই কথা গল্প উপন্যাস রম্য ইত্যাদির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তাহলে সাহিত্য ব্যাপারটাই শুধু অনুভবের। না ব্যাখ্যা করার, না বোঝানোর, না ভাব সম্প্রসারণের। পড়ো আর শুধু অনুভব করো। এইভাবে অনুভব করতে করতে অনুভব বিশেষজ্ঞ বা সাহিত্যজ্ঞ হয়ে যাও।
এই রকম প্রশ্ন অবশ্য কবিতা ছাড়া সাহিত্যের আর কোন শাখায় দেখা যায় না। কেন না কবিতা বুঝতে বুঝতে অনেকের কালঘাম ছুটছে। আমারও। অনেকে দারুণ, অসাধারণ, অনবদ্য, শ্লেষযুক্ত, ভালো লাগলো ইত্যাদি বলে তাদের ভাবুক অনুভব প্রকাশ করছেন।
আবার এমন অনেক অনেক কবিতা পেজে ব্লগে ইবুকে ম্যাগাজিনে প্রিন্টিং-এ সর্বত্র সবার প্রথমে প্রকাশিত। খুব কম ক্ষেত্রে রিভিউ হিসেবে যার ব্যাখ্যা আসছে, ভাবের সম্প্রসারণ আসছে। তাই বিবর্তনকে সাধুবাদ জানিয়ে অনেকে দূরে সরে গেছে। আমিও।
অনেকে আজও থমকে দাঁড়িয়ে মাইকেল রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দ শঙ্খ সুনীল শক্তি জয় এবং তারপরে। যেখানে সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা সবাই বুঝতে পারি, অনুভব করতে পারি এবং ব্যাখ্যাও করি। ফুলের সুবাসের মত, নিস্তব্ধ বিকেলের মত, সোনালী ডানার চিলের মত, বিদিশার নিশার মত, আমি কি ডরাই কভু ভিখারী রাঘব এর মত।
সাহিত্য মানে তো ভাবনার বিকাশ। কবি সাহিত্যিক কিংবা পাঠক সবার ক্ষেত্রে ভাবনার বিকাশ ঘটানোই সাহিত্যের উদ্দেশ্য। কোন ভাবনা ভেবে সাহিত্যিক বা কবি বা লেখক যেমন লেখেন তেমনি পাঠক কোন সাহিত্য পড়তে পড়তে কোন না কোন ভাবনায় ডুবে যান। এই ভাবনা সৃষ্টি হয় কবি সাহিত্যিক বা লেখক এবং পাঠকের মনোজগতের অন্তরীক্ষে অন্তঃস্থলে। এই ভাবনার বিস্তার ঠিকঠাক প্রস্ফুটিত না হলে মনোজগত কোন কিছুই ভাবতে পারে না। ফলে সাহিত্যের পাঠ সমাপ্ত হয়।
কবিতা গল্প উপন্যাস লেখার সময় এবং পাঠ করার সময় মনোজগতের এই অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে কবিতার ক্ষেত্রে বার বার এই মনোজগত এতটাই বিচ্ছিন্ন এবং অ-ভাবনাযুক্ত যে লেখকের মনোজগতের বিষয়টি বাইরে রেখে পাঠক হিসেবে পাঠ করে কোন মনোজগত তৈরি করতে পারছি না। ফলে এমন কবিতা পাঠ করা থেকে সরে আসি।
কিংবা কবি কবিতা লেখার সময় সত্যি সত্যি সেই মনোজগতে প্রবেশ করেছিলেন তো? আমি সরাসরি এক কবিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সেই কথা। তিনি বললেন আমি কি জানি? আমার কাজ লেখা আপনি পাঠক যা বুঝবেন তাই। আর শব্দের কারুকার্য ছাড়া আর কিছুটি বোঝা গেল না যে? তার কোন উত্তর নাই।
পৃথিবীতে বোধ হয় কষ্ট কল্পনা কথাটি এই কবিতার জন্যই প্রযোজ্য।
আমি দ্বাদশ পর্যন্ত সাহিত্যের যে কোন উত্তর এই ভাবে উপমা বসিয়ে, কঠিন শব্দ ব্যবহার করে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যাখ্যা করতাম। স্যার বলতেন, সহজ কথা সহজভাবে বলা অত সহজ না। তাছাড়া তুই নিজে সহজভাবে বুঝতে পারিস নি তাই সহজ সরল কথায় ব্যাখ্যাও করতে পারিস নি। সহজ কথা ঘুরিয়ে বলার চেষ্টা করেছিস। ভাল। তবে নম্বর পাবি দশের চার কি পাঁচ।
বর্তমানে কবিতাও তাই। দশের চার কি পাঁচ। আমিও ছয় কি পাঁচের দলে। কি করব? সাংসারিক পারিবারিক সামাজিক অফিস দেশ দশ টেনশান এর মাঝে আর যাই হোক কষ্ট কল্পনা আমার একদম ভাল লাগে না। ভাবতেও চাই না। শরৎচন্দ্রের মত আমি গাছকে গাছ দেখি, ফলকে ফল, আকাশকে আকাশ, সকাল সন্ধ্যে নিঝুম রাত, শিশির জল ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখনও গল্প পড়ি উপন্যাস পড়ি কবিতাও পড়ি গান শুনি লিখি গাই নাচি সব করি। কল্পনার ছায়া যা কিছু আকাশ আঁকে জল বাতাসে গাছ পালায় খেলা করে সেটুকুই। এর বাইরে শব্দের জটিল কঠিন আমি এড়িয়ে যাই।
ভাবুক মনের মালা গাঁথা যদি কবিতা হয় তাহলে সাহিত্যের অন্য বিভাগ যেমন গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ রম্য কৌতুক ইত্যাদি কি ভাবুক মনের ভাবনা সমৃদ্ধ লেখা নয়?
তাহলে কবিতা পড়ার পর যদি কিছুই বুঝলাম না বলি, আর আপনি যদি বলেন কবিতা বোঝার ব্যাপার নয় অনুভব করার ব্যাপার। কবিতা বুঝতে হলে আমাকে কবিতা বিশেষজ্ঞ হতে হবে, যেমন অঙ্কের বিজ্ঞানের জটিল বিষয় বুঝতে গনিতজ্ঞ বা বিজ্ঞানী হতে হয়। সাধারণের জন্য তো কোনভাবেই নয়। অল্প শিক্ষিত কম পড়া মানুষের জন্য তো নয়ই। উচ্চ মার্গের। তাহলে একই কথা গল্প উপন্যাস রম্য ইত্যাদির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তাহলে সাহিত্য ব্যাপারটাই শুধু অনুভবের। না ব্যাখ্যা করার, না বোঝানোর, না ভাব সম্প্রসারণের। পড়ো আর শুধু অনুভব করো। এইভাবে অনুভব করতে করতে অনুভব বিশেষজ্ঞ বা সাহিত্যজ্ঞ হয়ে যাও।
এই রকম প্রশ্ন অবশ্য কবিতা ছাড়া সাহিত্যের আর কোন শাখায় দেখা যায় না। কেন না কবিতা বুঝতে বুঝতে অনেকের কালঘাম ছুটছে। আমারও। অনেকে দারুণ, অসাধারণ, অনবদ্য, শ্লেষযুক্ত, ভালো লাগলো ইত্যাদি বলে তাদের ভাবুক অনুভব প্রকাশ করছেন।
আবার এমন অনেক অনেক কবিতা পেজে ব্লগে ইবুকে ম্যাগাজিনে প্রিন্টিং-এ সর্বত্র সবার প্রথমে প্রকাশিত। খুব কম ক্ষেত্রে রিভিউ হিসেবে যার ব্যাখ্যা আসছে, ভাবের সম্প্রসারণ আসছে। তাই বিবর্তনকে সাধুবাদ জানিয়ে অনেকে দূরে সরে গেছে। আমিও।
অনেকে আজও থমকে দাঁড়িয়ে মাইকেল রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দ শঙ্খ সুনীল শক্তি জয় এবং তারপরে। যেখানে সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা সবাই বুঝতে পারি, অনুভব করতে পারি এবং ব্যাখ্যাও করি। ফুলের সুবাসের মত, নিস্তব্ধ বিকেলের মত, সোনালী ডানার চিলের মত, বিদিশার নিশার মত, আমি কি ডরাই কভু ভিখারী রাঘব এর মত।
সাহিত্য মানে তো ভাবনার বিকাশ। কবি সাহিত্যিক কিংবা পাঠক সবার ক্ষেত্রে ভাবনার বিকাশ ঘটানোই সাহিত্যের উদ্দেশ্য। কোন ভাবনা ভেবে সাহিত্যিক বা কবি বা লেখক যেমন লেখেন তেমনি পাঠক কোন সাহিত্য পড়তে পড়তে কোন না কোন ভাবনায় ডুবে যান। এই ভাবনা সৃষ্টি হয় কবি সাহিত্যিক বা লেখক এবং পাঠকের মনোজগতের অন্তরীক্ষে অন্তঃস্থলে। এই ভাবনার বিস্তার ঠিকঠাক প্রস্ফুটিত না হলে মনোজগত কোন কিছুই ভাবতে পারে না। ফলে সাহিত্যের পাঠ সমাপ্ত হয়।
কবিতা গল্প উপন্যাস লেখার সময় এবং পাঠ করার সময় মনোজগতের এই অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে কবিতার ক্ষেত্রে বার বার এই মনোজগত এতটাই বিচ্ছিন্ন এবং অ-ভাবনাযুক্ত যে লেখকের মনোজগতের বিষয়টি বাইরে রেখে পাঠক হিসেবে পাঠ করে কোন মনোজগত তৈরি করতে পারছি না। ফলে এমন কবিতা পাঠ করা থেকে সরে আসি।
কিংবা কবি কবিতা লেখার সময় সত্যি সত্যি সেই মনোজগতে প্রবেশ করেছিলেন তো? আমি সরাসরি এক কবিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সেই কথা। তিনি বললেন আমি কি জানি? আমার কাজ লেখা আপনি পাঠক যা বুঝবেন তাই। আর শব্দের কারুকার্য ছাড়া আর কিছুটি বোঝা গেল না যে? তার কোন উত্তর নাই।
পৃথিবীতে বোধ হয় কষ্ট কল্পনা কথাটি এই কবিতার জন্যই প্রযোজ্য।
আমি দ্বাদশ পর্যন্ত সাহিত্যের যে কোন উত্তর এই ভাবে উপমা বসিয়ে, কঠিন শব্দ ব্যবহার করে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যাখ্যা করতাম। স্যার বলতেন, সহজ কথা সহজভাবে বলা অত সহজ না। তাছাড়া তুই নিজে সহজভাবে বুঝতে পারিস নি তাই সহজ সরল কথায় ব্যাখ্যাও করতে পারিস নি। সহজ কথা ঘুরিয়ে বলার চেষ্টা করেছিস। ভাল। তবে নম্বর পাবি দশের চার কি পাঁচ।
বর্তমানে কবিতাও তাই। দশের চার কি পাঁচ। আমিও ছয় কি পাঁচের দলে। কি করব? সাংসারিক পারিবারিক সামাজিক অফিস দেশ দশ টেনশান এর মাঝে আর যাই হোক কষ্ট কল্পনা আমার একদম ভাল লাগে না। ভাবতেও চাই না। শরৎচন্দ্রের মত আমি গাছকে গাছ দেখি, ফলকে ফল, আকাশকে আকাশ, সকাল সন্ধ্যে নিঝুম রাত, শিশির জল ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখনও গল্প পড়ি উপন্যাস পড়ি কবিতাও পড়ি গান শুনি লিখি গাই নাচি সব করি। কল্পনার ছায়া যা কিছু আকাশ আঁকে জল বাতাসে গাছ পালায় খেলা করে সেটুকুই। এর বাইরে শব্দের জটিল কঠিন আমি এড়িয়ে যাই।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জানবক্স খান ৩০/০৯/২০২১গোপালার কথা ১০০ হয়ে গেলে কি হবে জানতে ইচ্ছে করে।
-
সুব্রত ভৌমিক ২৬/০৯/২০২১ঠিক তাই...
যা বলেছেন ভাই। -
রাফিয়া নূর পূর্বিতা ২৬/০৯/২০২১sundor!
-
ফয়জুল মহী ২৫/০৯/২০২১Good