গোপলার কথা - ৯০
ভার্চুয়াল বন্ধন
-----------
মেয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য হোস্টেলে থাকে। প্রতিদিন দিনে দুবার তিনবার করে ফোনে বা ভিডিও কলিংএ কথা হয়। কখন খেল কখন শুল কখন পড়ল ইত্যাদি। এবং বাড়ি আসার সময় ঘণ্টা মিনিট ইত্যাদি জেনে আসছে যাচ্ছে। ফলে ঘরে যখন ঢুকছে তখন আর জিজ্ঞাসা করার কুশল বিনিময় করার কিছু থাকছে না। ফলে কোন উচ্ছ্বাস নেই কোন প্রাণের মিলন নেই কোন অতিরক্ত উন্মাদনা নেই। মার সঙ্গে বা বাবা কাকার সঙ্গে বা দাদা দিদির সঙ্গে একটু প্রণাম বুকে জড়িয়ে ধরা বা হায় কেমন আছিস। তারপরে যে যার ঘরে।
ব্যাস, এটুকুই। আত্মীক বন্ধন বিচ্ছিন্ন।
আবার যেই সামনাসামনি না বলা কথা ভার্চুয়ালে বলে ফেললাম, মুখোমুখি দেখা না হওয়া বুঝিয়ে দিলাম, পাশাপাশি না চলা রাস্তা দেখিয়ে দিলাম অমনি ভার্চুয়াল হয়ে গেল ডিসকান্টেক।
তখন বুঝতাম ব্যস্ততার জন্য ফোন করতে পারে নি বা ফোন ধরে নি তার মানে ভাল আছে। অসুবিধা হলে তো নিশ্চয় জানাতো। আর এখন ভার্চুয়াল অভিমান। যার মধ্যে পুরোটাই ভেসে যাওয়া আবেগ। মননের কোন প্রকার অভিব্যক্তি নেই।
এইমাত্র ভার্চুয়ালে মকর সংক্রান্তির থালাভর্তি পিঠে পুলির আপ্যায়ন পেলাম। কি ভাল লাগছে। আমিও শুভেচ্ছা ও শুভ মকর সংক্রান্তি জানালাম। অথচ কতদিন আমাদের দেখা নেই। কথা নেই। বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ নেই। খুব যে দূরে থাকে তাও নয়। তবু এই ভার্চুয়াল। আত্মীক বন্ধনহীন এই যে একাকীত্ব এই কি আমাদের প্রাপ্তি ছিল? হাতছানি দিলে যেতে পারি কিন্তু ডাকি না ডাকে না। কোথায় যেন বন্ধহীন হয়ে পড়েছে। এইমাত্র তো ফেসবুকে চ্যাট হল, হোয়াটস অ্যাপে কত কি শেয়ার করলাম, ম্যাসেঞ্জারে বার্তা পাঠালাম আমার তো সব কিছু সোস্যাল। তাহলে আবার কি কথা? আর তো কোন কথা বাকী নেই?
যে ফেসবুকে আমার ছবি দেখে Nice looking বলল তার সঙ্গে একটু পরে দেখা হল কিন্তু সে একটুও শুভেচ্ছা জানাল না হাসল না শুধু একটু হাত দেখিয়ে চলে গেল। যে সোস্যাল মিডিয়ায় আমার লেখা গল্প কবিতা বা অনুভূতির কথা পড়ে দারুণ অনবদ্য অসাধারণ বলল সে দেখা হতেই কিছুটি না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। কিংবা বলল দেশটা উচ্ছন্নে গেল। আমরা আর কি করব? ফলে আমরা প্রত্যেকেই থেকে গেলাম ভার্চুয়ালে।
এর বাইরে জনসচেনতা জনজাগরণ প্রতিবাদ প্রতিরোধ ইত্যাদি যা কিছু সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হচ্ছে তা খুবই নগন্য। বরং খারাপ দিকটাই সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। না হলে এই যে বারবার সাবধান করে দেওয়া সত্ত্বেও পাসওয়ার্ড পিন ব্যাংক অ্যাকাউন্ড ফর্ড ঠিকানা ইত্যাদি শেয়ার করে তবু কেন মানুষ বার বার বিপদে পড়ছে। কেন না ভার্চুয়ালকে কেউ খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। তার মানে সবাই ভার্চুয়ালে আছি অথচ খুব একটা গুরুত্ব দিই না। ভার্চুয়াল অবস্থানেই ফর্ড হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আর যে টুকু প্রতিবাদ হয় তাতে দেখা গেছে দু চার দিন। আর বেশির ভাগ শুধু গালাগালিতে পরিপূর্ণ। অনেকটা ঠিক মুখে মারিতং। তার চেয়ে যে আন্দোলন বা প্রতিবাদ বা জনজাগরণ বা জনসচেনতা সরাসরি মুখোমুখি হয়েছে সেই সব আন্দোলন প্রতিবাদ সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে। কেন না মুখোমুখি যে আত্মীক বন্ধন গড়ে ওঠে, অবস্থানের যে অনুভূতি অনুভূত হয় তা ভার্চুয়ালে আদৌ গড়ে ওঠে না।
বর্তমানে প্রচুর ই-বুক আসছে, ই-ম্যাগাজিন আসছে, ব্লগ আসছে কিন্তু পড়ছে ক'জন? ফলে সাহিত্যের গুরুত্বও এই ভার্চুয়ালে কেমন যেন ঠোক্কর খাচ্ছে। কেন না এর কোন সারবত্ত্বা নেই। আত্মীক বন্ধন নেই। বইয়ের পৃষ্ঠায় যে প্রাণ আছে তার স্বাদ দুধের বদলে ঘোলও নয় যেন জলে মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিংবা নিটফল শূন্য।
কত হাজারে হাজারে শুভ সকাল গুড মর্নিং চুটকি সংগৃহীত আসছে আর স্মার্ট ফোনে জমা হচ্ছে। কেউ কিছুটি গ্রহণ করছে না। ডিসপোজেবলের মত একবার একটুখানি (সম্পূর্ণ নয়) দেখে ডিলিট করে দিচ্ছে। কেন না সবাই জেনে গেছে বুঝে গেছে এগুলো সবই স্পর্শহীন আবর্জনার মত। এটা কোন শুভেচ্ছা বা শুভকামনা নয়।
ভার্চুয়াল বা ডিজিটাল আমাদের জীবনে এলেও তাকে আশীর্বাদের আত্মীকতায় আমরা যেমন বাঁধতে পারি নি তেমনি অভিশাপের পটভূমিকায় ফেলে দিয়ে ভার্চুয়াল থেকে সরে আসতে পারি নি। ভার্চুয়াল আত্মীক বন্ধন ব্যহত করছে কি করছে না তা যেমন ব্যক্তি বিশেষে উপলব্ধ তেমনি এই ভার্চুয়াল থেকে কেউ কিন্তু দূরে নয়। এর সাথে জীবন চলেছে আপন গতিতে। একে নিয়েই উন্নতির সোপানে উঠতে হবে। সে যতই একাকীত্ব একমুখীতা আত্মকেন্দ্রিকতা মানসিক যন্ত্রণা আবেগ অনুভূতিহীনতা আমাদেরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরুক।
যন্ত্র ও যান্ত্রিক অবস্থান তো বোবা। তাকে আমাদের জীবনে কতটা আত্মীক করতে পারলাম তার মাধ্যমেই যন্ত্র ও যান্ত্রিক অবস্থানের বিচার। ভার্চুয়াল তেমনি এক অবস্থান। আমরা যেন তার গতিপথ আমাদের আত্মীক বন্ধনের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিতে পারি সেই আশা রাখি।
-----------
মেয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য হোস্টেলে থাকে। প্রতিদিন দিনে দুবার তিনবার করে ফোনে বা ভিডিও কলিংএ কথা হয়। কখন খেল কখন শুল কখন পড়ল ইত্যাদি। এবং বাড়ি আসার সময় ঘণ্টা মিনিট ইত্যাদি জেনে আসছে যাচ্ছে। ফলে ঘরে যখন ঢুকছে তখন আর জিজ্ঞাসা করার কুশল বিনিময় করার কিছু থাকছে না। ফলে কোন উচ্ছ্বাস নেই কোন প্রাণের মিলন নেই কোন অতিরক্ত উন্মাদনা নেই। মার সঙ্গে বা বাবা কাকার সঙ্গে বা দাদা দিদির সঙ্গে একটু প্রণাম বুকে জড়িয়ে ধরা বা হায় কেমন আছিস। তারপরে যে যার ঘরে।
ব্যাস, এটুকুই। আত্মীক বন্ধন বিচ্ছিন্ন।
আবার যেই সামনাসামনি না বলা কথা ভার্চুয়ালে বলে ফেললাম, মুখোমুখি দেখা না হওয়া বুঝিয়ে দিলাম, পাশাপাশি না চলা রাস্তা দেখিয়ে দিলাম অমনি ভার্চুয়াল হয়ে গেল ডিসকান্টেক।
তখন বুঝতাম ব্যস্ততার জন্য ফোন করতে পারে নি বা ফোন ধরে নি তার মানে ভাল আছে। অসুবিধা হলে তো নিশ্চয় জানাতো। আর এখন ভার্চুয়াল অভিমান। যার মধ্যে পুরোটাই ভেসে যাওয়া আবেগ। মননের কোন প্রকার অভিব্যক্তি নেই।
এইমাত্র ভার্চুয়ালে মকর সংক্রান্তির থালাভর্তি পিঠে পুলির আপ্যায়ন পেলাম। কি ভাল লাগছে। আমিও শুভেচ্ছা ও শুভ মকর সংক্রান্তি জানালাম। অথচ কতদিন আমাদের দেখা নেই। কথা নেই। বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ নেই। খুব যে দূরে থাকে তাও নয়। তবু এই ভার্চুয়াল। আত্মীক বন্ধনহীন এই যে একাকীত্ব এই কি আমাদের প্রাপ্তি ছিল? হাতছানি দিলে যেতে পারি কিন্তু ডাকি না ডাকে না। কোথায় যেন বন্ধহীন হয়ে পড়েছে। এইমাত্র তো ফেসবুকে চ্যাট হল, হোয়াটস অ্যাপে কত কি শেয়ার করলাম, ম্যাসেঞ্জারে বার্তা পাঠালাম আমার তো সব কিছু সোস্যাল। তাহলে আবার কি কথা? আর তো কোন কথা বাকী নেই?
যে ফেসবুকে আমার ছবি দেখে Nice looking বলল তার সঙ্গে একটু পরে দেখা হল কিন্তু সে একটুও শুভেচ্ছা জানাল না হাসল না শুধু একটু হাত দেখিয়ে চলে গেল। যে সোস্যাল মিডিয়ায় আমার লেখা গল্প কবিতা বা অনুভূতির কথা পড়ে দারুণ অনবদ্য অসাধারণ বলল সে দেখা হতেই কিছুটি না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। কিংবা বলল দেশটা উচ্ছন্নে গেল। আমরা আর কি করব? ফলে আমরা প্রত্যেকেই থেকে গেলাম ভার্চুয়ালে।
এর বাইরে জনসচেনতা জনজাগরণ প্রতিবাদ প্রতিরোধ ইত্যাদি যা কিছু সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হচ্ছে তা খুবই নগন্য। বরং খারাপ দিকটাই সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। না হলে এই যে বারবার সাবধান করে দেওয়া সত্ত্বেও পাসওয়ার্ড পিন ব্যাংক অ্যাকাউন্ড ফর্ড ঠিকানা ইত্যাদি শেয়ার করে তবু কেন মানুষ বার বার বিপদে পড়ছে। কেন না ভার্চুয়ালকে কেউ খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। তার মানে সবাই ভার্চুয়ালে আছি অথচ খুব একটা গুরুত্ব দিই না। ভার্চুয়াল অবস্থানেই ফর্ড হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আর যে টুকু প্রতিবাদ হয় তাতে দেখা গেছে দু চার দিন। আর বেশির ভাগ শুধু গালাগালিতে পরিপূর্ণ। অনেকটা ঠিক মুখে মারিতং। তার চেয়ে যে আন্দোলন বা প্রতিবাদ বা জনজাগরণ বা জনসচেনতা সরাসরি মুখোমুখি হয়েছে সেই সব আন্দোলন প্রতিবাদ সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে। কেন না মুখোমুখি যে আত্মীক বন্ধন গড়ে ওঠে, অবস্থানের যে অনুভূতি অনুভূত হয় তা ভার্চুয়ালে আদৌ গড়ে ওঠে না।
বর্তমানে প্রচুর ই-বুক আসছে, ই-ম্যাগাজিন আসছে, ব্লগ আসছে কিন্তু পড়ছে ক'জন? ফলে সাহিত্যের গুরুত্বও এই ভার্চুয়ালে কেমন যেন ঠোক্কর খাচ্ছে। কেন না এর কোন সারবত্ত্বা নেই। আত্মীক বন্ধন নেই। বইয়ের পৃষ্ঠায় যে প্রাণ আছে তার স্বাদ দুধের বদলে ঘোলও নয় যেন জলে মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিংবা নিটফল শূন্য।
কত হাজারে হাজারে শুভ সকাল গুড মর্নিং চুটকি সংগৃহীত আসছে আর স্মার্ট ফোনে জমা হচ্ছে। কেউ কিছুটি গ্রহণ করছে না। ডিসপোজেবলের মত একবার একটুখানি (সম্পূর্ণ নয়) দেখে ডিলিট করে দিচ্ছে। কেন না সবাই জেনে গেছে বুঝে গেছে এগুলো সবই স্পর্শহীন আবর্জনার মত। এটা কোন শুভেচ্ছা বা শুভকামনা নয়।
ভার্চুয়াল বা ডিজিটাল আমাদের জীবনে এলেও তাকে আশীর্বাদের আত্মীকতায় আমরা যেমন বাঁধতে পারি নি তেমনি অভিশাপের পটভূমিকায় ফেলে দিয়ে ভার্চুয়াল থেকে সরে আসতে পারি নি। ভার্চুয়াল আত্মীক বন্ধন ব্যহত করছে কি করছে না তা যেমন ব্যক্তি বিশেষে উপলব্ধ তেমনি এই ভার্চুয়াল থেকে কেউ কিন্তু দূরে নয়। এর সাথে জীবন চলেছে আপন গতিতে। একে নিয়েই উন্নতির সোপানে উঠতে হবে। সে যতই একাকীত্ব একমুখীতা আত্মকেন্দ্রিকতা মানসিক যন্ত্রণা আবেগ অনুভূতিহীনতা আমাদেরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরুক।
যন্ত্র ও যান্ত্রিক অবস্থান তো বোবা। তাকে আমাদের জীবনে কতটা আত্মীক করতে পারলাম তার মাধ্যমেই যন্ত্র ও যান্ত্রিক অবস্থানের বিচার। ভার্চুয়াল তেমনি এক অবস্থান। আমরা যেন তার গতিপথ আমাদের আত্মীক বন্ধনের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিতে পারি সেই আশা রাখি।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এম এম হোসেন ২৩/০৩/২০২১সুন্দর
-
সেলিম রেজা সাগর ০১/০৩/২০২১সুন্দর লেখা
-
Biswanath Banerjee ১০/০২/২০২১amazing
-
আসিফ খন্দকার ০৫/০২/২০২১সাম্যবাদী কবি 💚
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ০৫/০২/২০২১চিরসবুজ কবি নজরুল।
-
ফয়জুল মহী ০৩/০২/২০২১সুন্দর একটা লেখা পড়লাম