গোপলার কথা - ৮৪
কবিতা যাপন
======
কবিতা যাপন সবাই করে। ছোট বড় গরীব ধনী মূর্খ পণ্ডিত সবাই কবিতা যাপন করে।
আমি ছোটবেলা থেকে খিদে আর খিদের সাথে লড়াই দেখে বড় হয়েছি। সেই লড়াইয়ের সততায় কিছু দেখা, না-দেখা, অদেখা, বলা, না-বলা, অবলা, শোনা, না-শোনা, অশোনার বর্ণনা আমাকে ছন্দ প্রকরণে অনেক খানি এগিয়ে দিয়েছে।
অর্থাৎ সেই সব আমি ও আমার পারিপার্শ্বিক আমার খিদের লড়াই কিছু কবিতা আঁকত। আমি তাতে আত্মস্থ হয়ে যেতাম। তাই আজ কবিতার কবিতা যাপনে সেই চিত্র খুঁজে পেয়েছি।
প্রথম যে বার 'কুলিমজুর' কবিতা আবৃত্তি করি স্কুলের প্রার্থনা শেষে, বুক দুরু দুরু করেছিল। আমাদের স্কুলে প্রতিদিন প্রার্থনা শেষে কেউ না কেউ কিছু একটা পারফর্ম করত। গান, কবিতা, বক্তৃতা, বিতর্ক ইত্যাদি।
তাতে আমাদের শ্রদ্বেয় বাংলার স্যার বললেন - কালকে তোকে আবৃত্তি করতে হবে।
তারপর ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’ বার বার সারাংশ করে, আবৃত্তি করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।সেখান থেকেই আমার কবিতা বুঝতে শেখা।
তাছাড়া স্কুল পারফর্মম্যান্স বলে একটা ২০ নম্বরের বিষয় ছিল। তাতে আমি আবৃত্তি করেছিলাম ‘দুই বিঘা জমি’।
এসব ছিল স্কুলের বিষয় ভিত্তিক অবস্থান। আর ঘরে বাবা মা দাদা দিদি এবং আমি। আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব কাজ ছিল। ঘর ব্যবস্থায় সারাদিন হাতে হাত লাগিয়ে খিদে মেটানো ব্যবস্থায় মগ্ন থাকত সবাই। আমিও। সেখানে কোথাও কবিতার নামগন্ধ ছিল না।
কিন্তু বেঁচে থাকার ছন্দ ছিল। আমাদের মনে সততার ফুলছাপ ছিল। কর্মের ধাপে ধাপে যাপন চিত্র আঁকত রোজ। তাই আমি গ্রামের মাইল পাঁচেক হেঁটে সপ্তাহে অন্তত একবার লাইব্রেরীতে যেতাম। বইয়ের গন্ধ শুকতাম। কবিতার বই নিতাম (যা সাধারণত কেউ নিত না)।
যেখানে কবিতার প্রতিযোগিতা হত, অংশ নিতাম। আবৃত্তি করতাম ও স্বরচিত কবিতা পাঠ করতাম। পুরস্কারের ঝুলি ছিল শূন্য। লোকের ভাল লাগত কি না বুঝতে পারতাম না। এখনও বুঝে উঠতে পারি না। তাই আমি এখন কবি নাকি না-কবি নাকি অকবি? কোনটা জানি না। শুধু করে যাই ইচ্ছে খুশি কবিতা যাপন।
রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রসংগীত শুনি। যে কোন বই পত্রিকা পেলে কবিতা পড়ি। কলেজস্ট্রীটে যাতায়াত করি। কবিতার বই কিছু কিছু সংগ্রহ করি। বার বার উল্টে পাল্টে দেখি। কবি কেন এটা লিখল না? ওটা কেন লিখল? এ ভাবনাটি মধুর। ও ভাবনাটি সুদূর।
আজ খিদের পেছনে দৌড়নো অনেকটাই কমে গেছে। কিন্ত ছন্দের যাত্রায় ঘটে গেছে রুঢ় আগমন। তবুও বিলের ধারে বকের চুপিসারে পা ফেলা, ছোট ছোট মাছদের শালুক বনে কিলবিল করা, সরু আল, কলমীশাকে পিঁপড়ে যাত্রা, মাঠের পর মাঠ সবুজ ধানখেত, তারপর পাকাধান, গোলা ভর্তি, পেছন উঠোনে বাঁশবন, শ্মশান কলরব আর গ্রাম্য সরল পা ফাটা হাত হাজা কাদাকাদা কথার থুতুগেলা মানুষজন আমার চিত্রপটে ধাক্কা মারে। আমাকে কি রকম যেন ছন্দে এগিয়ে দেয়।
আমি জীবনানন্দ শক্তি সুনীল জয় শ্রীজাতের প্রেক্ষাপটে তাদের মেলাই। নিজে মিশে যাই। অবাক বিস্ময়ে আরও গভীর থেকে গভীরে খুঁজে না-খুঁজে পাওয়া না-পাওয়া খোঁজার চেষ্টা করি।
দেখি অবহেলার চেয়ে বড় কবিতা আর হয় না। ‘ওরা কাজ করে’ আসলেই প্রতিটি কবিতার শিরোনাম। কর্মেই ছন্দ দোলাইত। না হলে কবিতা সাধিত জীবন অর্থহীন। জিজ্ঞাসার সমাপ্তি মাত্র।
এখন আশেপাশে না-খিদের মানুষজন এত কবিতা কাটছে, দেখে ভেতরের আমি আরও বেশি কবিতায় মেতে উঠতে চাইছে। সঙ্গী হতে চাইতে তুমি, তোমাকে।
======
কবিতা যাপন সবাই করে। ছোট বড় গরীব ধনী মূর্খ পণ্ডিত সবাই কবিতা যাপন করে।
আমি ছোটবেলা থেকে খিদে আর খিদের সাথে লড়াই দেখে বড় হয়েছি। সেই লড়াইয়ের সততায় কিছু দেখা, না-দেখা, অদেখা, বলা, না-বলা, অবলা, শোনা, না-শোনা, অশোনার বর্ণনা আমাকে ছন্দ প্রকরণে অনেক খানি এগিয়ে দিয়েছে।
অর্থাৎ সেই সব আমি ও আমার পারিপার্শ্বিক আমার খিদের লড়াই কিছু কবিতা আঁকত। আমি তাতে আত্মস্থ হয়ে যেতাম। তাই আজ কবিতার কবিতা যাপনে সেই চিত্র খুঁজে পেয়েছি।
প্রথম যে বার 'কুলিমজুর' কবিতা আবৃত্তি করি স্কুলের প্রার্থনা শেষে, বুক দুরু দুরু করেছিল। আমাদের স্কুলে প্রতিদিন প্রার্থনা শেষে কেউ না কেউ কিছু একটা পারফর্ম করত। গান, কবিতা, বক্তৃতা, বিতর্ক ইত্যাদি।
তাতে আমাদের শ্রদ্বেয় বাংলার স্যার বললেন - কালকে তোকে আবৃত্তি করতে হবে।
তারপর ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’ বার বার সারাংশ করে, আবৃত্তি করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।সেখান থেকেই আমার কবিতা বুঝতে শেখা।
তাছাড়া স্কুল পারফর্মম্যান্স বলে একটা ২০ নম্বরের বিষয় ছিল। তাতে আমি আবৃত্তি করেছিলাম ‘দুই বিঘা জমি’।
এসব ছিল স্কুলের বিষয় ভিত্তিক অবস্থান। আর ঘরে বাবা মা দাদা দিদি এবং আমি। আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব কাজ ছিল। ঘর ব্যবস্থায় সারাদিন হাতে হাত লাগিয়ে খিদে মেটানো ব্যবস্থায় মগ্ন থাকত সবাই। আমিও। সেখানে কোথাও কবিতার নামগন্ধ ছিল না।
কিন্তু বেঁচে থাকার ছন্দ ছিল। আমাদের মনে সততার ফুলছাপ ছিল। কর্মের ধাপে ধাপে যাপন চিত্র আঁকত রোজ। তাই আমি গ্রামের মাইল পাঁচেক হেঁটে সপ্তাহে অন্তত একবার লাইব্রেরীতে যেতাম। বইয়ের গন্ধ শুকতাম। কবিতার বই নিতাম (যা সাধারণত কেউ নিত না)।
যেখানে কবিতার প্রতিযোগিতা হত, অংশ নিতাম। আবৃত্তি করতাম ও স্বরচিত কবিতা পাঠ করতাম। পুরস্কারের ঝুলি ছিল শূন্য। লোকের ভাল লাগত কি না বুঝতে পারতাম না। এখনও বুঝে উঠতে পারি না। তাই আমি এখন কবি নাকি না-কবি নাকি অকবি? কোনটা জানি না। শুধু করে যাই ইচ্ছে খুশি কবিতা যাপন।
রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রসংগীত শুনি। যে কোন বই পত্রিকা পেলে কবিতা পড়ি। কলেজস্ট্রীটে যাতায়াত করি। কবিতার বই কিছু কিছু সংগ্রহ করি। বার বার উল্টে পাল্টে দেখি। কবি কেন এটা লিখল না? ওটা কেন লিখল? এ ভাবনাটি মধুর। ও ভাবনাটি সুদূর।
আজ খিদের পেছনে দৌড়নো অনেকটাই কমে গেছে। কিন্ত ছন্দের যাত্রায় ঘটে গেছে রুঢ় আগমন। তবুও বিলের ধারে বকের চুপিসারে পা ফেলা, ছোট ছোট মাছদের শালুক বনে কিলবিল করা, সরু আল, কলমীশাকে পিঁপড়ে যাত্রা, মাঠের পর মাঠ সবুজ ধানখেত, তারপর পাকাধান, গোলা ভর্তি, পেছন উঠোনে বাঁশবন, শ্মশান কলরব আর গ্রাম্য সরল পা ফাটা হাত হাজা কাদাকাদা কথার থুতুগেলা মানুষজন আমার চিত্রপটে ধাক্কা মারে। আমাকে কি রকম যেন ছন্দে এগিয়ে দেয়।
আমি জীবনানন্দ শক্তি সুনীল জয় শ্রীজাতের প্রেক্ষাপটে তাদের মেলাই। নিজে মিশে যাই। অবাক বিস্ময়ে আরও গভীর থেকে গভীরে খুঁজে না-খুঁজে পাওয়া না-পাওয়া খোঁজার চেষ্টা করি।
দেখি অবহেলার চেয়ে বড় কবিতা আর হয় না। ‘ওরা কাজ করে’ আসলেই প্রতিটি কবিতার শিরোনাম। কর্মেই ছন্দ দোলাইত। না হলে কবিতা সাধিত জীবন অর্থহীন। জিজ্ঞাসার সমাপ্তি মাত্র।
এখন আশেপাশে না-খিদের মানুষজন এত কবিতা কাটছে, দেখে ভেতরের আমি আরও বেশি কবিতায় মেতে উঠতে চাইছে। সঙ্গী হতে চাইতে তুমি, তোমাকে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জানবক্স খান ০১/০৯/২০২০দারুন ভালো লাগল। দীর্ঘ দিন ধরে লিখে চলেছেন। চালিয়ে যান।
-
Biswanath Banerjee ০১/০৯/২০২০Valo
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০১/০৯/২০২০শুভেচ্ছা
-
শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম ৩০/০৮/২০২০Monomukddkro oviggota
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ৩০/০৮/২০২০ভালো অভিজ্ঞতা।