গোপলার কথা - ৭১
সুখটান
------
বাবা তখন বাঁশের দরজার ঠেস দিয়ে আমেজ করে বিড়ি ধরিয়ে মাকে বলছে - বুঝলে গোপলার মা, এতক্ষণে মাথা থেকে যেন ভারটা নামল। সংসারের জোয়াল বলে কথা।
মা দাঁড়িয়ে ছিল। পাশে বসল। মুখে মিষ্টি হাসি। আমি একটু দূরে মাদুর পেতে হ্যারিকেনের সামনে অ্যালজেব্রা করছি। বাবার কাছে চলে এলাম। বললাম - বাবা, আমারও একটা অঙ্ক অনেকক্ষণ হচ্ছে না। মাথায় ভার হয়ে চেপে আছে। মা, আমাকেও একটা বিড়ি দাও। মাথার ভার নামাই।
উপরের সংলাপটি কাল্পনিক। কেন না ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি বড়দের সামনে বিড়ি সিগারেট মদ ইত্যাদি নেশা করতে নেই। অবশ্য বড়রা বড়দের সামনে তো অবশ্যই এমন কি ছোটদের সামনে কিংবা সবার সামনে বিন্দাস ধূমপান বা অন্যান্য নেশা করতেই পারে।
আমি যেহেতু ধূমপায়ী নই তাই অনেকের মুখে শুনেছি বিড়ি সিগারেট খেলে টেনশন কমে যায়। আরো স্বচ্ছ ভাবনা আসে ইত্যাদি ইত্যাদি। তো আমি নিজে দু একবার এবং অনেকবার দু একটা ট্রাই করে দেখেছি। কিছুটি হয় না। একদম বাজে কথা। শুধু বাহানা। সেই প্রবাদের মত - ভাই, আমি বেশি খাই না। শুধু দু দিন খাই। যেদিন বৃষ্টি হয় আর যেদিন বৃষ্টি হয় না।
আসলে সে সবদিন খায়। যে কোন বাহানায় খায়।
আসলে সে নয় আমরা অনেকেই আমাদের ভালো আমরা চাই না। ধূমপানের কোন উপকারিতা নেই। সবাই জানে। ধূমপান না করলেও কোন অসুবিধা নেই। তাও সবাই জানে। তবু খায়। কেন খায়? এমনকি সরকার থেকে সিগারেটের খাপে লেখা আছে "smoking is injurious to health"। তাও খায়। তার মানে আমার ভাল আমি চাই না বলে অন্যে এরকম লিখে দিলেও আমি শুনতে চাই না।
কেন শুনতে চাই না? কেননা আমি উদাহরণ টানি, ওই রাম একটাও সিগারেট বিড়ি খেত না তাও তার ক্যানসার হল। হেঁপো রোগীর মত শালা কেশে কেশে মরল। যার হবে তার এমনিই হবে। চল, টান মার গাঁজার মত। আরে বাবা, একটু সিগারেট বিড়ি খাব না, নেশা ভাঙ করব না তাহলে আর পুরুষমানুষ কি? ছাড় তো ওসব, ওরকম বলে। কিছু হবে না। আর যদি হয়ও যখন হবে তখন দেখা যাবে।
এই যখন হবে তখন দেখা যাবে সময়ে তার পরিবার যে অসুবিধার মধ্যে পড়ে তা তারা বা আমরা একবারও ভাবি না। বরং সিগারেট বিড়িতে টান দেওয়ার সময় ভাবি, বেশ করেছি আমি আমার নিজের পয়সায় নেশা করেছি তোর বাপের কি?
কিন্তু বাপের যে কি কে জানে? যখন হাটে বাজারে অলিতে গলিতে গাঁয়ে গঞ্জে রাজপথে মাঠের ধারে লাইন দিয়ে দেখি; আর কিছু থাক না থাক একটা পান বিড়ি গুটখার দোকান বা ঝুপড়ি আছেই আছে। দোকানদারের মুখ দেখা যাচ্ছে না। সামনে কত বাহারি রঙের গুটখার প্যাকেট আর সিগারেট বিড়ির তামাক গন্ধ। অনেকক্ষণ ঘুরলাম এককাপ চাও পেলাম না। চল ভাই, একটু জল খেয়ে একটা সুখটান দিয়ে নিই।
চাই না তাও হাতের কাছে যখন পেয়ে গেলাম দিয়েই দিই একটান। কি আর হবে? এই একটু একটু কি আর হবে ভাবতে ভাবতে অনেক টান আঙুলের ফাঁকে বার বার এসে যাচ্ছে। এখানে বোধ হয় সবচেয়ে বেশি পান বিড়ি সিগারেটের দোকান।
কতজন এই বিড়ি সিগারেট ও নেশা বস্তু তৈরিতে ব্যস্ত। সে কাঁচা মাল থেকে উৎপাদন পাইকারী খুচরো ও একেবারে শেষে সুখটান পর্যন্ত কত মানুষ করে খাচ্ছে সংসার চালাচ্ছে। আবার উল্টো করে দেখলে দেখা যাবে যারা এর সাথে যুক্ত (কাঁচামাল থেকে সুখটানকারী) তাদের অনেকেই বড় বড় রোগের বাহক ও সেইসাথে রোগ ছড়ানো হোস্ট। তাদের পেছনে আবার বড় খরচ। তার মানে যারা করে খায় তাদের ব্যয় আরও বেশি।
সরকার খুব রেভিনিউ পায় এবং বলে এইসব সংসারের কর্মসংস্থান করে দিতে পারব না। তাই আইন করে তোলা সম্ভব নয়। কিন্তু রেভিনিউয়ের অনেক বেশি এই টিবি ক্যানসার ও অন্যান্য মারাত্মক রোগের পেছনে সরকারের খরচ তার চেয়েও বেশি। তা দেখছে না। তাই সরকারের সৎ ইচ্ছে না থাকলে শুধু মানুষের সচেতনতায় যা নির্মূল করা সম্ভব নয়।
কেন না মানুষ হল দ্রুত মানসিক ভঙ্গুরশীল। যে কোন আঘাতে সে যেমন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তেমনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাতে সে যাই তাই করে ফেলতে পারে। আগে পিছে কোন কিছুই ভাবে না।
তাই অনেককেই দেখেছি সিগারেট বিড়ি খাওয়া দিনে যার এক দুই বাণ্ডিল লাগত পরবর্তীতে সে একটা সময় একটাও খায় না। আবার কেউ কিছুদিন ছেড়ে দিল আবার খেতে শুরু করল। কিছুজন তো কোন কথাই শোনে না খায় শুধু খায়। আসলে পুরোটাই মানসিক ব্যাপার। ছেড়ে দেওয়া ধরা পুরোটাই নিজস্ব ব্যাপার। মানসিকভাবে সব মানুষই যেহেতু ভঙ্গুরশীল তাই প্রশাসনিক সৎ ইচ্ছা খুব জরুরী।
কেন না বিড়ি সিগারেট গুটখা মদ গাঁজা ইত্যাদি সমস্ত নেশার কোন উপকারিতা কোন ভাবেই নেই। সবই মানুষের বদ রুচির সৃষ্টি ও বহিঃপ্রকাশ। তাকে বন্ধ করার একটাই উপায় হাতের কাছে না পাওয়া। হাতের পাওয়া যাবে না তখনই যখন উৎপাদন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা অথবা বন্ধ করা। সেটা প্রশাসন থেকে আইন করে সম্ভব।
না হলে আমি যেমন পেলে দু একটা টান দিয়েই দিই। একটা দুটো খেলে কি আর হবে? আমি বুঝি তাই আমি নিয়ন্ত্রণে থাকি। কিন্তু যে পারে না সে টান দিয়েই যায় টান দিয়েই যায় টান দিয়েই যায়...।
তাহলে? ভাবুন। আমিও একটা সুখটান দিয়ে ভাবছি।
------
বাবা তখন বাঁশের দরজার ঠেস দিয়ে আমেজ করে বিড়ি ধরিয়ে মাকে বলছে - বুঝলে গোপলার মা, এতক্ষণে মাথা থেকে যেন ভারটা নামল। সংসারের জোয়াল বলে কথা।
মা দাঁড়িয়ে ছিল। পাশে বসল। মুখে মিষ্টি হাসি। আমি একটু দূরে মাদুর পেতে হ্যারিকেনের সামনে অ্যালজেব্রা করছি। বাবার কাছে চলে এলাম। বললাম - বাবা, আমারও একটা অঙ্ক অনেকক্ষণ হচ্ছে না। মাথায় ভার হয়ে চেপে আছে। মা, আমাকেও একটা বিড়ি দাও। মাথার ভার নামাই।
উপরের সংলাপটি কাল্পনিক। কেন না ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি বড়দের সামনে বিড়ি সিগারেট মদ ইত্যাদি নেশা করতে নেই। অবশ্য বড়রা বড়দের সামনে তো অবশ্যই এমন কি ছোটদের সামনে কিংবা সবার সামনে বিন্দাস ধূমপান বা অন্যান্য নেশা করতেই পারে।
আমি যেহেতু ধূমপায়ী নই তাই অনেকের মুখে শুনেছি বিড়ি সিগারেট খেলে টেনশন কমে যায়। আরো স্বচ্ছ ভাবনা আসে ইত্যাদি ইত্যাদি। তো আমি নিজে দু একবার এবং অনেকবার দু একটা ট্রাই করে দেখেছি। কিছুটি হয় না। একদম বাজে কথা। শুধু বাহানা। সেই প্রবাদের মত - ভাই, আমি বেশি খাই না। শুধু দু দিন খাই। যেদিন বৃষ্টি হয় আর যেদিন বৃষ্টি হয় না।
আসলে সে সবদিন খায়। যে কোন বাহানায় খায়।
আসলে সে নয় আমরা অনেকেই আমাদের ভালো আমরা চাই না। ধূমপানের কোন উপকারিতা নেই। সবাই জানে। ধূমপান না করলেও কোন অসুবিধা নেই। তাও সবাই জানে। তবু খায়। কেন খায়? এমনকি সরকার থেকে সিগারেটের খাপে লেখা আছে "smoking is injurious to health"। তাও খায়। তার মানে আমার ভাল আমি চাই না বলে অন্যে এরকম লিখে দিলেও আমি শুনতে চাই না।
কেন শুনতে চাই না? কেননা আমি উদাহরণ টানি, ওই রাম একটাও সিগারেট বিড়ি খেত না তাও তার ক্যানসার হল। হেঁপো রোগীর মত শালা কেশে কেশে মরল। যার হবে তার এমনিই হবে। চল, টান মার গাঁজার মত। আরে বাবা, একটু সিগারেট বিড়ি খাব না, নেশা ভাঙ করব না তাহলে আর পুরুষমানুষ কি? ছাড় তো ওসব, ওরকম বলে। কিছু হবে না। আর যদি হয়ও যখন হবে তখন দেখা যাবে।
এই যখন হবে তখন দেখা যাবে সময়ে তার পরিবার যে অসুবিধার মধ্যে পড়ে তা তারা বা আমরা একবারও ভাবি না। বরং সিগারেট বিড়িতে টান দেওয়ার সময় ভাবি, বেশ করেছি আমি আমার নিজের পয়সায় নেশা করেছি তোর বাপের কি?
কিন্তু বাপের যে কি কে জানে? যখন হাটে বাজারে অলিতে গলিতে গাঁয়ে গঞ্জে রাজপথে মাঠের ধারে লাইন দিয়ে দেখি; আর কিছু থাক না থাক একটা পান বিড়ি গুটখার দোকান বা ঝুপড়ি আছেই আছে। দোকানদারের মুখ দেখা যাচ্ছে না। সামনে কত বাহারি রঙের গুটখার প্যাকেট আর সিগারেট বিড়ির তামাক গন্ধ। অনেকক্ষণ ঘুরলাম এককাপ চাও পেলাম না। চল ভাই, একটু জল খেয়ে একটা সুখটান দিয়ে নিই।
চাই না তাও হাতের কাছে যখন পেয়ে গেলাম দিয়েই দিই একটান। কি আর হবে? এই একটু একটু কি আর হবে ভাবতে ভাবতে অনেক টান আঙুলের ফাঁকে বার বার এসে যাচ্ছে। এখানে বোধ হয় সবচেয়ে বেশি পান বিড়ি সিগারেটের দোকান।
কতজন এই বিড়ি সিগারেট ও নেশা বস্তু তৈরিতে ব্যস্ত। সে কাঁচা মাল থেকে উৎপাদন পাইকারী খুচরো ও একেবারে শেষে সুখটান পর্যন্ত কত মানুষ করে খাচ্ছে সংসার চালাচ্ছে। আবার উল্টো করে দেখলে দেখা যাবে যারা এর সাথে যুক্ত (কাঁচামাল থেকে সুখটানকারী) তাদের অনেকেই বড় বড় রোগের বাহক ও সেইসাথে রোগ ছড়ানো হোস্ট। তাদের পেছনে আবার বড় খরচ। তার মানে যারা করে খায় তাদের ব্যয় আরও বেশি।
সরকার খুব রেভিনিউ পায় এবং বলে এইসব সংসারের কর্মসংস্থান করে দিতে পারব না। তাই আইন করে তোলা সম্ভব নয়। কিন্তু রেভিনিউয়ের অনেক বেশি এই টিবি ক্যানসার ও অন্যান্য মারাত্মক রোগের পেছনে সরকারের খরচ তার চেয়েও বেশি। তা দেখছে না। তাই সরকারের সৎ ইচ্ছে না থাকলে শুধু মানুষের সচেতনতায় যা নির্মূল করা সম্ভব নয়।
কেন না মানুষ হল দ্রুত মানসিক ভঙ্গুরশীল। যে কোন আঘাতে সে যেমন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তেমনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাতে সে যাই তাই করে ফেলতে পারে। আগে পিছে কোন কিছুই ভাবে না।
তাই অনেককেই দেখেছি সিগারেট বিড়ি খাওয়া দিনে যার এক দুই বাণ্ডিল লাগত পরবর্তীতে সে একটা সময় একটাও খায় না। আবার কেউ কিছুদিন ছেড়ে দিল আবার খেতে শুরু করল। কিছুজন তো কোন কথাই শোনে না খায় শুধু খায়। আসলে পুরোটাই মানসিক ব্যাপার। ছেড়ে দেওয়া ধরা পুরোটাই নিজস্ব ব্যাপার। মানসিকভাবে সব মানুষই যেহেতু ভঙ্গুরশীল তাই প্রশাসনিক সৎ ইচ্ছা খুব জরুরী।
কেন না বিড়ি সিগারেট গুটখা মদ গাঁজা ইত্যাদি সমস্ত নেশার কোন উপকারিতা কোন ভাবেই নেই। সবই মানুষের বদ রুচির সৃষ্টি ও বহিঃপ্রকাশ। তাকে বন্ধ করার একটাই উপায় হাতের কাছে না পাওয়া। হাতের পাওয়া যাবে না তখনই যখন উৎপাদন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা অথবা বন্ধ করা। সেটা প্রশাসন থেকে আইন করে সম্ভব।
না হলে আমি যেমন পেলে দু একটা টান দিয়েই দিই। একটা দুটো খেলে কি আর হবে? আমি বুঝি তাই আমি নিয়ন্ত্রণে থাকি। কিন্তু যে পারে না সে টান দিয়েই যায় টান দিয়েই যায় টান দিয়েই যায়...।
তাহলে? ভাবুন। আমিও একটা সুখটান দিয়ে ভাবছি।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
নাসরীন আক্তার রুবি ০১/০৪/২০১৯গল্পটি চমৎকার
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ০১/০৪/২০১৯Nice...
-
শেখ ফারুক হোসেন ৩১/০৩/২০১৯চমৎকার
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ৩১/০৩/২০১৯ভালো।