গোপলার কথা - ৬৫
উৎসব পালন
------------
সবাই বলছে, যে যার ধর্ম পালন করুন। ভাল থাকুন। শান্তিতে থাকুন। তাই যে যার ধর্ম পালনের মাত্রা সব সম্প্রদায় আরো বেশি জাঁকজমক করে পালন করছে। লক্ষ্মীপূজা, দুর্গাপূজা, কালীপূজা থেকে শুরু করে ঈদ মহরম সবেবরাতের সাথে সাথে বিবাহ অন্নপ্রাশন শ্রাদ্ধ ইত্যাদি বারোমাসে বারোশত পার্বণে বাঙালী যুক্ত হয়ে পড়ছে।
আরো বেশি ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে এই সব ধর্মীয় উৎসব। প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে এবং প্রাণবন্ত ভাবে এতে সহযোগিতা করছে। ফলে ধর্মপ্রাণ বাঙালী এইসব ধর্মাচরণে আরো বেশি করে নিয়োজিত হয়ে পড়ছে। মশগুল হয়ে পড়ছে। ভাবুক হয়ে পড়ছে। ডি জে মাইক ব্যাণ্ডপার্টি ড্রামপার্টি খোল খরতাল শোভাযাত্রা পদযাত্রা জয়ধ্বনি ধূপ ধুনো ফুল বেলপাতা উড্ডীয়মান ধ্বজা আতসবাজি আলোর ডেকোরেশন ইত্যাদিতে প্রায় প্রতিদিন মুখরিত হয়ে উঠছে বাংলার মাটি।
তার জন্য ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা একটু পিছিয়ে যাচ্ছে। যাক। ক্ষতি নেই। ক'দিন স্কুল বন্ধ থাকছে। থাক। ক্ষতি নেই। অনেক সৃষ্টিমূলক কাজের দিকে বিশেষ কোন কিছু ভাবনা বন্ধ থাকছে। থাক। ক্ষতি নেই। কিছু উন্নয়ন পিছিয়ে পড়ছে। পড়ুক। ক্ষতি নেই।
একজন ইঞ্জিনিয়র একজন ডাক্তার একজন বিজ্ঞানী একজন অর্থনীতিবিদ একজন প্রতিভাবান একজন চিন্তাশিল্পী একজন আগামী উদ্ভাবক বানাতে যে কঠোর অধ্যবসায় পরিশ্রম ভাবনা চিন্তা ও ত্যাগ লাগে সে সবে আমাদের চিন্তা করার দরকার নেই। খেয়াল করার দরকার নেই।
কেন না কয়েক হাজার বছর আগে লেখা মন্ত্র আওড়ে স্ত্রোত পাঠ করে এইমাত্র আমি অঞ্জলি দিয়ে এলাম। অদৃষ্টের বন্দনায় সমর্পিত হয়ে কায়মনবাক্যে এইমাত্র আমি সংসারের শান্তির জন্য ধর্মাচরণ করে এলাম। এতে নিশ্চয়ই দেশের দশের মঙ্গল হবে। শান্তি বিরাজমান হবে। আমি ও আমরা নিশ্চয় অগ্রবর্তী হব।
নাসায় কি হচ্ছে আমাদের জানার দরকার নেই। ভাবা বিজ্ঞান সেণ্টারের খবর আমি রাখি না। পদার্থবিদ্যা গণিতবিদ্যা ম্যাকানিক্যাল কেমিক্যাল কি চাইছে? কি ঘটিয়ে চলেছে বিশ্ব জুড়ে? রোজ কাকে ভেঙে কার সাথে যোগ করে কি সব উৎপন্ন করছে ওরা, ওরা মানে পাশ্চাত্য দেশ; তা আমাদের জেনে কোন লাভ নেই।
মন্দিরে মন্দিরে নাম সংকীর্তন, উদ্দাত্ত মন্ত্র উচ্চারণ আমাদের আধুনিক যাত্রা পথ।
পলিথিন প্লাস্টিক আবর্জনার জঞ্জালে পৃথিবী ভরে গেলে কি হবে সেসব আমেরিকা লন্ডনের বিজ্ঞানীরা ভাববে? আমার চিন্তা করার দরকার নেই? গ্লোবেল ওয়ার্মিং কি আমার জেনে কি হবে? আমি তো পলিথিনে সমস্ত উপাচার দোকান থেকে কিনে নিয়ে রোজ উপাসনালয়ে যাই। কায়মনবাক্যে প্রার্থনা করি। ওখানে কোন রকমভাবে ফাঁকি দিই নি। বোধন করি, বিসর্জন দিই। আবক্ষ মূর্তি পবিত্র গঙ্গায় ভাসিয়ে দিই। স্নান করি। কষ্ট করে অমরনাথে মানস সরোবর কেদারনাথে যাই। জীবনকে ধন্য করি।
বিজ্ঞানের অতসব আমি জেনে কি করব? আমার ছেলে মেয়েকেও এই উৎসবে সামিল করেছি। সেও যতটা সম্ভব এই নিয়ে মেতে থাকে। মন্দির মসজিদ গির্জা দেখলে প্রণাম করে। সেও তার ছাত্র জীবনের অধ্যবসায় থেকে অনেকটাই রেহাই পায়। আর কিছু না হোক তাকে এই সময়টুকু পড়াশুনা তো করতে হয় না। ছবি আঁকতে হয় না। আবৃত্তি করতে হয় না। কোন গল্পের বই পড়তে হয় না। কিছু লেখার চেষ্টা করতে হয় না। সবচেয়ে বড় কথা কোন সৃষ্টিমূলক ভাবনা তাকে ভাবতে হয় না। চিন্তা শক্তি সেই কয়েক হাজার বছর আগে লেখা মন্ত্রেই আবদ্ধ থাকছে। তার এই রেহাই যত বাড়ছে তত তার আনন্দ। তত সে নিজস্ব কিছু চিন্তা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বারমাসের বারশত পার্বণের দৌলতে।
তার "ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপ" থেকে তারও রেহাই। তাকে পরোক্ষে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্লাসের বইটুকু পড়ে নম্বর বেশি পেলেই তুমি হিরো। তুমি অগ্রবর্তী। তাকেও পাঁচালী মন্ত্রে তন্ত্রে মশগুল করে বড় হতে শিখিয়ে যাচ্ছি।
আমার এই সুন্দর ফ্ল্যাট বানানোর জন্য মাত্র তো দুটো গাছ কাটলাম, কি আর হবে? এ রকম করে কখন আমরা দু হাজার দু লক্ষ দু কোটি গাছ কেটেই চলেছি। কাটছি। তাতে কি? কি আর হবে? যদি কিছু হয়ও জাপান ভাবুক, পরিবেশবিদ ভাবুক। আমি ভেবে কি আর করব! আমি তো ফসল বাঁচানোর জন্য অষ্টপ্রহর নাম সংকীর্তন করেছি। ফসলের ক্ষেতের চারপাশে খালি পায়ে পরিক্রমা করেছি। ওতেই গ্লোবেল ওয়ার্মিং কমবে। আমার ফ্ল্যাটের একটা ঘর ভজন পূজনের জন্য তো আমি ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের শেখানো দৌড় যে এই পর্যন্ত। মন্ত্র তন্ত্র। এর থেকে বেরিয়ে আমি যে আরো বেশিদূর দৌড়তে শিখি নি। আমি আমার ছেলেমেয়েকে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শেখাই নি, ভাবাই নি, ভাবার সুযোগ করে দিই নি।
নতুন পরিবর্তনশীল ইঞ্জিনিয়রিং যন্ত্রপাতি যা কিছু চীন জাপান বানাক। আমরা কি আর ওসব বানাতে পারি? আমরা তো শুধু ওসব ব্যবহার করতে পারি। আরো প্রযুক্তি উন্নত করে ওরা সেই সব যন্ত্রপাতি আমাদের দেশে বিক্রি করে আমাদের সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে, যাক না। আমার তাতে কি? আমি তো আমার ধর্ম যাপনের উৎসব আরো নানা ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছি।
আমার মোবাইলে গায়ত্রী মন্ত্র তো বাজছে। এই আমার পরম প্রাপ্তি। নিশ্চিত স্বর্গযাত্রার ছাড়পত্র। তাছাড়া মোবাইল কি আশ্চর্য বস্তু। ওরা বানিয়েছে। কি করে বানায়? আমার ওসব খোঁজ রেখে কি হবে?
আমি তো মোবাইলে দিব্যি গেম খেলে নীল লাল ছবি দেখে কি সুন্দর আনন্দ পাই। গেম ও গেমের ফাঁদ কিভাবে ওরা তৈরি করে, সে সব আমরা মাথার মধ্যে নিতে চাই না। সারাদিন একটানা কি সুন্দর গেম খেলা যায়। নাওয়া খাওয়া পর্যন্ত ভুলে যাই। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন গাড়ি এসে আমাকে চাপা দিয়ে চলে যায় আমি বুঝতে পারি না। পরীক্ষার পড়া পড়ে থাকে, তাও গেম খেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায় বুঝতেই পারি না। এই মোবাইল আমাকে কতটা মনোযোগী করে তুলেছে। ভাবা যায়?? তবে তা শুধু আমাকে বোকা বানানোর জন্য। জীবন থেকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য। নতুন ভাবনা থেকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য।
এসব চাল আমেরিকা লণ্ডন চীন জাপানের কাজ। ওরা চাল চালছে চালুক। আমাকে বোকা বানাচ্ছে বানাক। আমরা তো পিছিয়ে থাকতে ভালোবাসি। তাই আমি আমার মাথার মধ্যে ইষ্টদেবতাকে স্মরণ করে আর একটু শান্তির ঘুম ঘুমিয়ে নিই।
আইনস্টাইন স্টিফেন হকিং এর মত অত হিজিবিজি আমাদের সইবে না। আরামে আয়েশ করে ঘুমোনো আমাদের কাজ। মাথা খাটানো, বুদ্ধির নানান কৌশল আমাদের দ্বারা হবে না। শুধু বইয়ের লেখাগুলোকে রপ্ত করে নিজেকে জ্ঞানী করে তুলতেই আমাদের মাথা ব্যথা।
তার চেয়ে মন্ত্র তন্ত্র নিয়ে থাকাই আমাদের ভবিষ্যৎ। আমি পারব না বা পারার চেষ্টাও করব না। এই আমাদের চিন্তা ভাবনা। খোল কীর্তন পাঁচালীতে আমার দিন কেটে গেলে আমার পরম শান্তি। আমার আগামী প্রজন্মকেও সেই শান্তির রাস্তা আমি বাতলে দিচ্ছি। কোথাও বেড়াতে যাওয়া মানে মন্দির মসজিত গুরদুয়ার গির্জা ইত্যাদি প্রাচীন উপাসনালয় দর্শন করা চাইই চাই।
আমাদের আদি পূর্ব পুরুষ যে বিধান দিয়ে গেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই আমাদের ধর্ম। নিয়ম মেনে নিষ্ঠা সহকারে আরো বেশি করে পালন করাই আমাদের ধর্ম। তাতেই আমাদের মুক্তি। পালন না করলে পাপ হবে। আমরা পুণ্য থেকে বঞ্চিত হব। যদিও পাপ পুণ্যের গোলকধাঁধাঁ আমরা পূর্ব পুরুষ থেকে শুধু শুনে এসেছি। ঠিক ব্যাখ্যা জানি না।
আবার লণ্ডন আমেরিকা জাপান চীনের তৈরি প্রযুক্তিতে আমাদের হারিয়ে যেতে কোন বাধা নেই। কেন না ওসব ছাড়া আমাদের যুগ অচল। আমি আমরা অচল। ওইসব প্রযুক্তিতে আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ব। কি যে আরাম পাই! কি আর বলব। কিন্তু আমরা সেইসব প্রযুক্তির মত বা প্রযুক্তি বানানোর মত সক্ষম করে নিজেদের গড়ে তুলব না। শিক্ষায় দীক্ষায় ভাবনায় আচরণে সেইসব লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সময় দেব না। কেন না আমার ধর্মাচরণ সবার আগে। ধর্মাচরণের পরে যেটুকু সময় পাব তারপর ওসব হবে। সময় যদি না পাই তাহলে হবে না। কিন্তু ভক্তিতেই মুক্তি।
তারপর বিপদে পড়লে বিপথ এলে রোগ জ্বালা ব্যাধি এলে আমি আরও বেশি করে উপাচার নিয়ে উপসনালয়ে যাব। মুক্তির প্রার্থনা করব। তাতেই আমার শান্তি আসবে।
ওদিকে লণ্ডন আমেরিকা এই বিপদ বিপথ রোগ ব্যধির সমাধানের পথ বাতলে দিয়ে আমাকে আমার রাস্তায় দাঁড় করিয়ে আমাদের থেকে কোটি কোটি আরব অর্বুদ সম্পদ কামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যাক না।
আমরা ওদের মত ভাবি না। ওরা ম্লেছ অধর্মী। আবার আমরা ওদের মত আধুনিক প্রযুক্তি বানাতে পারব না কিন্তু সামিল হব। কেন না আমরা অতটা এগিয়ে ভাবি না ভাবতে চাই না, প্রজন্মকে ভাবাতে চাই না। আমরা তো আমাদের পূর্ব পুরুষের বিধান নিয়ে ব্যস্ত থাকি। একাদশীর উপবাস, অষ্টমীর অঞ্জলি, পিণ্ডদান, সন্ধ্যারতি, কৃষ্ণপক্ষ, শুক্লপক্ষ নিয়ে মেতে আছি।
আমরা তো সবাই এখানে নিত্যপূজা করি। জপ করি তপ করি তর্পন করি। শান্তিতে থাকার চেষ্টা করি। বাঁচার জন্য সবার এতেই মশগুল হয়ে যাওয়া উচিত। আমাদের সরকারও সহযোগিতা করছে প্রত্যেকের যে যার উৎসব পালনের জন্য।
ফলে উৎসব পালিত হচ্ছে আরো দ্বিগুণ মাত্রায়। তার ফলে আমরাই পিছিয়ে পড়ছি আমাদের সার্বিক অবস্থান থেকে। সেসব কেউ ভেবে দেখছে না?
লণ্ডন প্যারিস চীন জাপানের তৈরি প্রযুক্তি নষ্ট হলে আমরাই আবার নতুন কিনে পুরনোগুলোকে আবর্জনায় জমা করি। আমার দেশ ভরে উঠছে ক্যামিক্যাল আবর্জনায়। আর সৃষ্টি হচ্ছে আরো নিত্য নতুন রোগের।
তাতে আমার কি? আমি তো আজই ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে ঢাকের তালে নেচেছি। দুধ ডাবের জলে ঈশ্বর স্নান করিয়েছি। নিশ্চয় ঈশ্বর আল্লা ভগবান এসব দেখছেন। তাই তিনি আমাকে এসব পার্থিব বিঘ্ন থেকে নিশ্চয়ই রক্ষা করবেন।
আমরা সমাজে শান্তির জন্য মুসলমানের হিন্দুর প্রতি এবং হিন্দুর মুসলমানের প্রতি কিছু ধর্মীয় আচার আচরণ দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরে প্রচার করি। যাতে যে যার ধর্মাচরণে বাধা না হয়ে আরো বেশি করে যাতে এইসব নিয়ে মেতে থাকে তার নিরন্তর চেষ্টা আমরা নিজেরাই করে চলেছি। তাহলে আগামী দিনে আরও বেশি করে ধর্মাচরণ তার পথে এগিয়ে যাবে। আরও জাঁকজমক করে দুর্গাপুজো লক্ষ্মীপূজো কালীপুজো হবে। আরো মন্দির মসজিদ গীর্জা গড়ে তুলতেই হবে। নিত্যপূজো না করলে চলবেই না। ঈদ মহরম আরও ভালোভাবে সবাইকে পালন করতে হবে। এবং সেটাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাতেই আমরা উন্নত দেশ হব।
বিশ্বের সর্বত্র কিভাবে পৃথিবীকে বাঁচানো যায়, কিভাবে অন্য গ্রহ উপগ্রহ সৌর জগতের রহস্য উদ্ধার করা যায়, কিভাবে পৃথিবীর এই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আরো উন্নত বাঁচা যায়, কিভাবে জীবনকে আরও স্বচ্ছল সুন্দর করা যায়, আগামী প্রজন্মকে আরও কিভাবে ভালোভাবে বাঁচানো যায় ইত্যাদি নিয়ে হাজার রকমের গবেষণা হচ্ছে সেখানে আমাদের কোন যোগদান না থাকে থাকুক।
আমরা আমাদের যে যার ধর্ম নিয়ে মশগুল হয়ে আছি। এতেই ধরা আছে গ্রহ নক্ষত্র সৌর ভাবনা। ধর্মের অনুশাসনে তাবিজ কবজ জড়িবুটি তন্ত্রমন্ত্রে আমরা সেইসব গ্রহ নক্ষত্র হাতের মুঠোতে করে নেব। গ্রহ শান্তির জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষ যা লিখে গেছেন তার একটু আধটু জেনে তারই উৎসবে বছরের অনেকটা সময় কাটিয়ে দেব।
এক ধর্ম আর এক ধর্মকে দেখানোর জন্য আরও জোরে বাজি ফাটাব আরও জোরে ডিজে লাগাব। আরও বড় শোভাযাত্রা করব। কেন না আমরা যে যার ধর্মাচরণ স্বাধীনভাবে করতে পারি। ইচ্ছে খুশি ধর্মাচরণ পালনের জন্য সরকারও আমাদের সম্পূর্ণ পারমিশন দিয়েছেন।
এইসব আনন্দ উৎসব মানুষের জীবনে থাকা দরকার। একটানা কোন কিছুই ভাল লাগে না। সে অফিসের কাজ হোক কিংবা ঘরের কাজ কিংবা অন্য যা কিছু। কিন্তু উৎসবের মাত্রা দিনকে দিন যে ভাবে বাড়ছে। তাতে চিন্তার বিষয় হয়ে উঠছে।
আগে দুর্গোৎসব ছিল চার দিনের। এখন মহালয়া থেকে শুরু। আবার থিমের ঠেলায় আরো আগে থেকে প্রস্তুতি। এর পরে চলে লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত। তারপরে কালীপূজা ভাই ফোঁটা ছটপূজো ইত্যাদি। এর মাঝে ঈদ মহরম সবেবরাত ও বড়দিন। শিবরাত্রি। গাজন। ঝুলন। নববর্ষ সরস্বতীপুজো হোলি।
এর মাঝে প্রতি বছর সারাদেশে কয়েক লক্ষ ছেলেমেয়ে পড়াশুনা করে। যারা আমার আপনার বাড়িতে অথবা বাড়ির পাশে বসবাস করে। এই উৎসবে পার্বণে হৈ হুল্লোড়ে বাজি মাইক ডিজে আলোতে তাদের পড়াশুনায় কতটা ছেদ পড়ে আমরা কেউ ভাবি না। ভাবতে চাই না।
কেন না আমাদের আছে বারোমাসে বারোশ পার্বণ। চলো সবাই মেতে উঠি।
------------
সবাই বলছে, যে যার ধর্ম পালন করুন। ভাল থাকুন। শান্তিতে থাকুন। তাই যে যার ধর্ম পালনের মাত্রা সব সম্প্রদায় আরো বেশি জাঁকজমক করে পালন করছে। লক্ষ্মীপূজা, দুর্গাপূজা, কালীপূজা থেকে শুরু করে ঈদ মহরম সবেবরাতের সাথে সাথে বিবাহ অন্নপ্রাশন শ্রাদ্ধ ইত্যাদি বারোমাসে বারোশত পার্বণে বাঙালী যুক্ত হয়ে পড়ছে।
আরো বেশি ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে এই সব ধর্মীয় উৎসব। প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে এবং প্রাণবন্ত ভাবে এতে সহযোগিতা করছে। ফলে ধর্মপ্রাণ বাঙালী এইসব ধর্মাচরণে আরো বেশি করে নিয়োজিত হয়ে পড়ছে। মশগুল হয়ে পড়ছে। ভাবুক হয়ে পড়ছে। ডি জে মাইক ব্যাণ্ডপার্টি ড্রামপার্টি খোল খরতাল শোভাযাত্রা পদযাত্রা জয়ধ্বনি ধূপ ধুনো ফুল বেলপাতা উড্ডীয়মান ধ্বজা আতসবাজি আলোর ডেকোরেশন ইত্যাদিতে প্রায় প্রতিদিন মুখরিত হয়ে উঠছে বাংলার মাটি।
তার জন্য ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা একটু পিছিয়ে যাচ্ছে। যাক। ক্ষতি নেই। ক'দিন স্কুল বন্ধ থাকছে। থাক। ক্ষতি নেই। অনেক সৃষ্টিমূলক কাজের দিকে বিশেষ কোন কিছু ভাবনা বন্ধ থাকছে। থাক। ক্ষতি নেই। কিছু উন্নয়ন পিছিয়ে পড়ছে। পড়ুক। ক্ষতি নেই।
একজন ইঞ্জিনিয়র একজন ডাক্তার একজন বিজ্ঞানী একজন অর্থনীতিবিদ একজন প্রতিভাবান একজন চিন্তাশিল্পী একজন আগামী উদ্ভাবক বানাতে যে কঠোর অধ্যবসায় পরিশ্রম ভাবনা চিন্তা ও ত্যাগ লাগে সে সবে আমাদের চিন্তা করার দরকার নেই। খেয়াল করার দরকার নেই।
কেন না কয়েক হাজার বছর আগে লেখা মন্ত্র আওড়ে স্ত্রোত পাঠ করে এইমাত্র আমি অঞ্জলি দিয়ে এলাম। অদৃষ্টের বন্দনায় সমর্পিত হয়ে কায়মনবাক্যে এইমাত্র আমি সংসারের শান্তির জন্য ধর্মাচরণ করে এলাম। এতে নিশ্চয়ই দেশের দশের মঙ্গল হবে। শান্তি বিরাজমান হবে। আমি ও আমরা নিশ্চয় অগ্রবর্তী হব।
নাসায় কি হচ্ছে আমাদের জানার দরকার নেই। ভাবা বিজ্ঞান সেণ্টারের খবর আমি রাখি না। পদার্থবিদ্যা গণিতবিদ্যা ম্যাকানিক্যাল কেমিক্যাল কি চাইছে? কি ঘটিয়ে চলেছে বিশ্ব জুড়ে? রোজ কাকে ভেঙে কার সাথে যোগ করে কি সব উৎপন্ন করছে ওরা, ওরা মানে পাশ্চাত্য দেশ; তা আমাদের জেনে কোন লাভ নেই।
মন্দিরে মন্দিরে নাম সংকীর্তন, উদ্দাত্ত মন্ত্র উচ্চারণ আমাদের আধুনিক যাত্রা পথ।
পলিথিন প্লাস্টিক আবর্জনার জঞ্জালে পৃথিবী ভরে গেলে কি হবে সেসব আমেরিকা লন্ডনের বিজ্ঞানীরা ভাববে? আমার চিন্তা করার দরকার নেই? গ্লোবেল ওয়ার্মিং কি আমার জেনে কি হবে? আমি তো পলিথিনে সমস্ত উপাচার দোকান থেকে কিনে নিয়ে রোজ উপাসনালয়ে যাই। কায়মনবাক্যে প্রার্থনা করি। ওখানে কোন রকমভাবে ফাঁকি দিই নি। বোধন করি, বিসর্জন দিই। আবক্ষ মূর্তি পবিত্র গঙ্গায় ভাসিয়ে দিই। স্নান করি। কষ্ট করে অমরনাথে মানস সরোবর কেদারনাথে যাই। জীবনকে ধন্য করি।
বিজ্ঞানের অতসব আমি জেনে কি করব? আমার ছেলে মেয়েকেও এই উৎসবে সামিল করেছি। সেও যতটা সম্ভব এই নিয়ে মেতে থাকে। মন্দির মসজিদ গির্জা দেখলে প্রণাম করে। সেও তার ছাত্র জীবনের অধ্যবসায় থেকে অনেকটাই রেহাই পায়। আর কিছু না হোক তাকে এই সময়টুকু পড়াশুনা তো করতে হয় না। ছবি আঁকতে হয় না। আবৃত্তি করতে হয় না। কোন গল্পের বই পড়তে হয় না। কিছু লেখার চেষ্টা করতে হয় না। সবচেয়ে বড় কথা কোন সৃষ্টিমূলক ভাবনা তাকে ভাবতে হয় না। চিন্তা শক্তি সেই কয়েক হাজার বছর আগে লেখা মন্ত্রেই আবদ্ধ থাকছে। তার এই রেহাই যত বাড়ছে তত তার আনন্দ। তত সে নিজস্ব কিছু চিন্তা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বারমাসের বারশত পার্বণের দৌলতে।
তার "ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপ" থেকে তারও রেহাই। তাকে পরোক্ষে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্লাসের বইটুকু পড়ে নম্বর বেশি পেলেই তুমি হিরো। তুমি অগ্রবর্তী। তাকেও পাঁচালী মন্ত্রে তন্ত্রে মশগুল করে বড় হতে শিখিয়ে যাচ্ছি।
আমার এই সুন্দর ফ্ল্যাট বানানোর জন্য মাত্র তো দুটো গাছ কাটলাম, কি আর হবে? এ রকম করে কখন আমরা দু হাজার দু লক্ষ দু কোটি গাছ কেটেই চলেছি। কাটছি। তাতে কি? কি আর হবে? যদি কিছু হয়ও জাপান ভাবুক, পরিবেশবিদ ভাবুক। আমি ভেবে কি আর করব! আমি তো ফসল বাঁচানোর জন্য অষ্টপ্রহর নাম সংকীর্তন করেছি। ফসলের ক্ষেতের চারপাশে খালি পায়ে পরিক্রমা করেছি। ওতেই গ্লোবেল ওয়ার্মিং কমবে। আমার ফ্ল্যাটের একটা ঘর ভজন পূজনের জন্য তো আমি ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের শেখানো দৌড় যে এই পর্যন্ত। মন্ত্র তন্ত্র। এর থেকে বেরিয়ে আমি যে আরো বেশিদূর দৌড়তে শিখি নি। আমি আমার ছেলেমেয়েকে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শেখাই নি, ভাবাই নি, ভাবার সুযোগ করে দিই নি।
নতুন পরিবর্তনশীল ইঞ্জিনিয়রিং যন্ত্রপাতি যা কিছু চীন জাপান বানাক। আমরা কি আর ওসব বানাতে পারি? আমরা তো শুধু ওসব ব্যবহার করতে পারি। আরো প্রযুক্তি উন্নত করে ওরা সেই সব যন্ত্রপাতি আমাদের দেশে বিক্রি করে আমাদের সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে, যাক না। আমার তাতে কি? আমি তো আমার ধর্ম যাপনের উৎসব আরো নানা ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছি।
আমার মোবাইলে গায়ত্রী মন্ত্র তো বাজছে। এই আমার পরম প্রাপ্তি। নিশ্চিত স্বর্গযাত্রার ছাড়পত্র। তাছাড়া মোবাইল কি আশ্চর্য বস্তু। ওরা বানিয়েছে। কি করে বানায়? আমার ওসব খোঁজ রেখে কি হবে?
আমি তো মোবাইলে দিব্যি গেম খেলে নীল লাল ছবি দেখে কি সুন্দর আনন্দ পাই। গেম ও গেমের ফাঁদ কিভাবে ওরা তৈরি করে, সে সব আমরা মাথার মধ্যে নিতে চাই না। সারাদিন একটানা কি সুন্দর গেম খেলা যায়। নাওয়া খাওয়া পর্যন্ত ভুলে যাই। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন গাড়ি এসে আমাকে চাপা দিয়ে চলে যায় আমি বুঝতে পারি না। পরীক্ষার পড়া পড়ে থাকে, তাও গেম খেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায় বুঝতেই পারি না। এই মোবাইল আমাকে কতটা মনোযোগী করে তুলেছে। ভাবা যায়?? তবে তা শুধু আমাকে বোকা বানানোর জন্য। জীবন থেকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য। নতুন ভাবনা থেকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য।
এসব চাল আমেরিকা লণ্ডন চীন জাপানের কাজ। ওরা চাল চালছে চালুক। আমাকে বোকা বানাচ্ছে বানাক। আমরা তো পিছিয়ে থাকতে ভালোবাসি। তাই আমি আমার মাথার মধ্যে ইষ্টদেবতাকে স্মরণ করে আর একটু শান্তির ঘুম ঘুমিয়ে নিই।
আইনস্টাইন স্টিফেন হকিং এর মত অত হিজিবিজি আমাদের সইবে না। আরামে আয়েশ করে ঘুমোনো আমাদের কাজ। মাথা খাটানো, বুদ্ধির নানান কৌশল আমাদের দ্বারা হবে না। শুধু বইয়ের লেখাগুলোকে রপ্ত করে নিজেকে জ্ঞানী করে তুলতেই আমাদের মাথা ব্যথা।
তার চেয়ে মন্ত্র তন্ত্র নিয়ে থাকাই আমাদের ভবিষ্যৎ। আমি পারব না বা পারার চেষ্টাও করব না। এই আমাদের চিন্তা ভাবনা। খোল কীর্তন পাঁচালীতে আমার দিন কেটে গেলে আমার পরম শান্তি। আমার আগামী প্রজন্মকেও সেই শান্তির রাস্তা আমি বাতলে দিচ্ছি। কোথাও বেড়াতে যাওয়া মানে মন্দির মসজিত গুরদুয়ার গির্জা ইত্যাদি প্রাচীন উপাসনালয় দর্শন করা চাইই চাই।
আমাদের আদি পূর্ব পুরুষ যে বিধান দিয়ে গেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই আমাদের ধর্ম। নিয়ম মেনে নিষ্ঠা সহকারে আরো বেশি করে পালন করাই আমাদের ধর্ম। তাতেই আমাদের মুক্তি। পালন না করলে পাপ হবে। আমরা পুণ্য থেকে বঞ্চিত হব। যদিও পাপ পুণ্যের গোলকধাঁধাঁ আমরা পূর্ব পুরুষ থেকে শুধু শুনে এসেছি। ঠিক ব্যাখ্যা জানি না।
আবার লণ্ডন আমেরিকা জাপান চীনের তৈরি প্রযুক্তিতে আমাদের হারিয়ে যেতে কোন বাধা নেই। কেন না ওসব ছাড়া আমাদের যুগ অচল। আমি আমরা অচল। ওইসব প্রযুক্তিতে আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ব। কি যে আরাম পাই! কি আর বলব। কিন্তু আমরা সেইসব প্রযুক্তির মত বা প্রযুক্তি বানানোর মত সক্ষম করে নিজেদের গড়ে তুলব না। শিক্ষায় দীক্ষায় ভাবনায় আচরণে সেইসব লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সময় দেব না। কেন না আমার ধর্মাচরণ সবার আগে। ধর্মাচরণের পরে যেটুকু সময় পাব তারপর ওসব হবে। সময় যদি না পাই তাহলে হবে না। কিন্তু ভক্তিতেই মুক্তি।
তারপর বিপদে পড়লে বিপথ এলে রোগ জ্বালা ব্যাধি এলে আমি আরও বেশি করে উপাচার নিয়ে উপসনালয়ে যাব। মুক্তির প্রার্থনা করব। তাতেই আমার শান্তি আসবে।
ওদিকে লণ্ডন আমেরিকা এই বিপদ বিপথ রোগ ব্যধির সমাধানের পথ বাতলে দিয়ে আমাকে আমার রাস্তায় দাঁড় করিয়ে আমাদের থেকে কোটি কোটি আরব অর্বুদ সম্পদ কামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যাক না।
আমরা ওদের মত ভাবি না। ওরা ম্লেছ অধর্মী। আবার আমরা ওদের মত আধুনিক প্রযুক্তি বানাতে পারব না কিন্তু সামিল হব। কেন না আমরা অতটা এগিয়ে ভাবি না ভাবতে চাই না, প্রজন্মকে ভাবাতে চাই না। আমরা তো আমাদের পূর্ব পুরুষের বিধান নিয়ে ব্যস্ত থাকি। একাদশীর উপবাস, অষ্টমীর অঞ্জলি, পিণ্ডদান, সন্ধ্যারতি, কৃষ্ণপক্ষ, শুক্লপক্ষ নিয়ে মেতে আছি।
আমরা তো সবাই এখানে নিত্যপূজা করি। জপ করি তপ করি তর্পন করি। শান্তিতে থাকার চেষ্টা করি। বাঁচার জন্য সবার এতেই মশগুল হয়ে যাওয়া উচিত। আমাদের সরকারও সহযোগিতা করছে প্রত্যেকের যে যার উৎসব পালনের জন্য।
ফলে উৎসব পালিত হচ্ছে আরো দ্বিগুণ মাত্রায়। তার ফলে আমরাই পিছিয়ে পড়ছি আমাদের সার্বিক অবস্থান থেকে। সেসব কেউ ভেবে দেখছে না?
লণ্ডন প্যারিস চীন জাপানের তৈরি প্রযুক্তি নষ্ট হলে আমরাই আবার নতুন কিনে পুরনোগুলোকে আবর্জনায় জমা করি। আমার দেশ ভরে উঠছে ক্যামিক্যাল আবর্জনায়। আর সৃষ্টি হচ্ছে আরো নিত্য নতুন রোগের।
তাতে আমার কি? আমি তো আজই ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে ঢাকের তালে নেচেছি। দুধ ডাবের জলে ঈশ্বর স্নান করিয়েছি। নিশ্চয় ঈশ্বর আল্লা ভগবান এসব দেখছেন। তাই তিনি আমাকে এসব পার্থিব বিঘ্ন থেকে নিশ্চয়ই রক্ষা করবেন।
আমরা সমাজে শান্তির জন্য মুসলমানের হিন্দুর প্রতি এবং হিন্দুর মুসলমানের প্রতি কিছু ধর্মীয় আচার আচরণ দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরে প্রচার করি। যাতে যে যার ধর্মাচরণে বাধা না হয়ে আরো বেশি করে যাতে এইসব নিয়ে মেতে থাকে তার নিরন্তর চেষ্টা আমরা নিজেরাই করে চলেছি। তাহলে আগামী দিনে আরও বেশি করে ধর্মাচরণ তার পথে এগিয়ে যাবে। আরও জাঁকজমক করে দুর্গাপুজো লক্ষ্মীপূজো কালীপুজো হবে। আরো মন্দির মসজিদ গীর্জা গড়ে তুলতেই হবে। নিত্যপূজো না করলে চলবেই না। ঈদ মহরম আরও ভালোভাবে সবাইকে পালন করতে হবে। এবং সেটাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাতেই আমরা উন্নত দেশ হব।
বিশ্বের সর্বত্র কিভাবে পৃথিবীকে বাঁচানো যায়, কিভাবে অন্য গ্রহ উপগ্রহ সৌর জগতের রহস্য উদ্ধার করা যায়, কিভাবে পৃথিবীর এই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আরো উন্নত বাঁচা যায়, কিভাবে জীবনকে আরও স্বচ্ছল সুন্দর করা যায়, আগামী প্রজন্মকে আরও কিভাবে ভালোভাবে বাঁচানো যায় ইত্যাদি নিয়ে হাজার রকমের গবেষণা হচ্ছে সেখানে আমাদের কোন যোগদান না থাকে থাকুক।
আমরা আমাদের যে যার ধর্ম নিয়ে মশগুল হয়ে আছি। এতেই ধরা আছে গ্রহ নক্ষত্র সৌর ভাবনা। ধর্মের অনুশাসনে তাবিজ কবজ জড়িবুটি তন্ত্রমন্ত্রে আমরা সেইসব গ্রহ নক্ষত্র হাতের মুঠোতে করে নেব। গ্রহ শান্তির জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষ যা লিখে গেছেন তার একটু আধটু জেনে তারই উৎসবে বছরের অনেকটা সময় কাটিয়ে দেব।
এক ধর্ম আর এক ধর্মকে দেখানোর জন্য আরও জোরে বাজি ফাটাব আরও জোরে ডিজে লাগাব। আরও বড় শোভাযাত্রা করব। কেন না আমরা যে যার ধর্মাচরণ স্বাধীনভাবে করতে পারি। ইচ্ছে খুশি ধর্মাচরণ পালনের জন্য সরকারও আমাদের সম্পূর্ণ পারমিশন দিয়েছেন।
এইসব আনন্দ উৎসব মানুষের জীবনে থাকা দরকার। একটানা কোন কিছুই ভাল লাগে না। সে অফিসের কাজ হোক কিংবা ঘরের কাজ কিংবা অন্য যা কিছু। কিন্তু উৎসবের মাত্রা দিনকে দিন যে ভাবে বাড়ছে। তাতে চিন্তার বিষয় হয়ে উঠছে।
আগে দুর্গোৎসব ছিল চার দিনের। এখন মহালয়া থেকে শুরু। আবার থিমের ঠেলায় আরো আগে থেকে প্রস্তুতি। এর পরে চলে লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত। তারপরে কালীপূজা ভাই ফোঁটা ছটপূজো ইত্যাদি। এর মাঝে ঈদ মহরম সবেবরাত ও বড়দিন। শিবরাত্রি। গাজন। ঝুলন। নববর্ষ সরস্বতীপুজো হোলি।
এর মাঝে প্রতি বছর সারাদেশে কয়েক লক্ষ ছেলেমেয়ে পড়াশুনা করে। যারা আমার আপনার বাড়িতে অথবা বাড়ির পাশে বসবাস করে। এই উৎসবে পার্বণে হৈ হুল্লোড়ে বাজি মাইক ডিজে আলোতে তাদের পড়াশুনায় কতটা ছেদ পড়ে আমরা কেউ ভাবি না। ভাবতে চাই না।
কেন না আমাদের আছে বারোমাসে বারোশ পার্বণ। চলো সবাই মেতে উঠি।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আনাস খান ০৩/০১/২০১৯nice
-
কামরুজ্জামান সাদ ২৬/১০/২০১৮আপনার লেখাগুলো নতুন করে ভাবতে শেখায়
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ২৫/১০/২০১৮অনেক দিন পর
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২৫/১০/২০১৮তবুও ধর্ম থাকবে, তবুও ধর্ম লাগবে।