www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলার কথা - ৫৮

নৃশংসতা
----------
দাঁতের বদলে দাঁত চোখের বদলে চোখ এই নীতি অনুসরন করলে সারা পৃথিবী একদিন অন্ধ হয়ে যাবে। - মহাত্মা গান্ধী

মানুষমাত্রেই জন্মগতভাবে পশুসুলভ। আইনের, সামাজিকতার, সম্পর্কের, শ্লীলতার বাঁধন না থাকলে মানুষ যে কতটা হিংস্র হতে পারে তা কল্পনার বাইরে। কবি সাহিত্যিক কল্পনাবিলাসী কল্পনায় যতটা সুউচ্চ সুশীল সৌন্দর্য্যের অপরূপ পৃথিবী ভাবতে পারে সেই রকম আরো আরো ভয়ঙ্কর কুৎসিত পৃথিবী মানুষই বানিয়ে ফেলতে পারে।
এই কুৎসিত অবস্থানের এক পর্যায় নৃশংসতা। আবার এই নৃশংসতা মুছে ফেলার জন্য রাষ্ট্রগতভাবে, সামাজিকভাবে (খাপ পঞ্চায়েত), রাজনৈতিকভাবে এবং আইনের মাধ্যমে আরো নৃশংসতার (যেমন ফাঁসি, পিটিয়ে মারা ইত্যাদি) আশ্রয় নিচ্ছে।
যুক্তি আসছে এ রকম অবস্থানে মানুষ ভয়ে পেয়ে আর এই অন্যায় অন্যাহ্য অনৈতিক অপ আর করবে না। কিন্তু মধ্যযুগীয় এই অবস্থানের পরে কয়েক শতক পেরিয়ে এসে মানব সভ্যতা আরো সব ভয়ঙ্করের সামনে দাঁড়িয়ে। খুন জখম যুদ্ধ গণহত্যা মানববোমা ইত্যাদি আরো আধুনিক পর্যায়ে নিয়মিত সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে।
তাহলে? কে কাকে ভয় পাচ্ছে? আইনকে? সামাজিকতাকে? সম্পর্ককে? শ্লীলতাকে? সারা পৃথিবী যেন আরো বেশি মনুষ্যবিকৃতির তপ্ত কড়াইয়ে বসে আছে। যখন তখন যা কিছু ঘটে যেতে পারে।
কেউ খুঁজে দেখছে না জনমানসে কেন এত আক্রোশ? কেন একটু ছুতো পেলে যে কেউ অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছে চরম মাত্রায়। দাও, শেষ করে দাও। এক্ষুণি শেষ করে দাও এই নৃশংস অবস্থানের। নৃশংস হয়ে। অনায়াসে কয়েকজন মিলে একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। কোন বিকার নেই। অপরাধের শাস্তি আর এক অপরাধ?
তাতে কিছু লাভ হচ্ছে না। আবার ডালাপালা মেলে নৃশংসতা আরো ভিন্ন মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
জীবন এখন বিচ্ছিন্ন।
কর্মের তাগিদে, পড়াশুনার জন্য, বেটার ফিউচারের লোভে নিজের বাড়ি ছেড়ে অনেকেই বাইরে। লজ, পেয়িং গেস্ট, ভাড়া বাড়ি ইত্যাদি বাড়ছে। ফলে ছেলে মেয়ে বাবা মা দিদি বোন ঠাকুরমা ঠাকুরদা মামা মামী পাড়াতুতো দূর সম্পর্ক ইত্যাদি সম্পর্কের ভেদ্যতা, একে অপরের প্রীতি প্রেমের মান্যতা কমছে। ব্যক্তি কেন্দ্রিক জীবন যাত্রায় পাশের মানুষটিকে আমার বাবার মত, আমার মায়ের মত, দিদির মত, ছেলের মত, মেয়ের মত কিংবা নিদেনপক্ষে মানুষের মত মনে হচ্ছে না। মনে হলেও হৃদয়ের বাঙ্মময় আলাপচারিতায় আসছে না। তাই তার একটু খুঁত, কোন অপছন্দ মানছে না। তার মিনিমাম ম্যাক্সিমাম হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে।
নৃশংসতা ভয়ঙ্কররূপ নিচ্ছে। ফলে কিছুতেই মুছে ফেলা যাচ্ছে না নৃশংসতা। দাঁতের বদলে দাঁত, চোখের বদলে চোখ তুলে নেওয়ার আক্রোশ ছড়িয়ে পড়ছে। কি আমাকে বলা - দেখাচ্ছি মজা। বৃত্তাকারে এই অবস্থান আরো প্রসারিত হচ্ছে।
এর একমাত্র সমাধান। শ্রীচৈতন্যদেবের মত 'মেরেছ কলসীর কানা তাই বলে কি প্রেম দেব না?'
আমাদের বাড়ির পাশে কাকের ডিম ফুটে দুটো বাচ্চা হয়েছে। তাদেরকে খাওয়াচ্ছে কাক। মিসেস বলল - আহা, দেখো দেখো, কাক কি রকম বাচ্চা দুটোকে খাওয়াচ্ছে। ও কিন্তু জানেই না ওটা ওর নিজের বাচ্চা নাকি কোকিলের। তাও পরম মমতায় খাওয়াচ্ছে।
তার মানে কাক বাচ্চা দুটোকে খাওয়াচ্ছে। নিজের কি পরের তা বিচার্য নয়। মানুষের ভাবনায় এমন হওয়া উচিত। স্কুলে পড়াতে গিয়ে শিক্ষক যদি ভাবে এই শিশুটি আমার শিশু আমাদের শিশু। এ যত বেশি শিখবে তত সমাজের মঙ্গল। যে কেমিস্ট ওষুধ বানায়, যে শিশুদের খাবার বানায়, যে পুল কারে নিয়ে যায়, যে বোমা বানায় সবাই যদি ভাবে যে খাবে পরবে মাখবে থাকবে সবাই আমি আমরা আর আমাদের তাহলে কাকের মত পরম যত্নে এ বিশ্ব শুধু শিশুর নয় সবার বাস যোগ্য হয়ে উঠত।
তা কিন্তু হচ্ছে না। পাল্টা নৃশংসতার বদলে এই অবস্থান বিচার করা দরকার। বিচ্ছিন্ন জীবনকে ঘরে ফেরানো দরকার। ঘরের মাটিতে যে সম্পর্ক প্রবলভাবে নিজেরা নিজেদেরকে আঁকড়ে ধরবে সেটাই পাশের মানুষটির সাথে মিলে যাবে মিশে যাবে। মারলে সবার লাগে, যাকে শেষ করার জন্য আবার নৃশংসতা তার বীজ কিন্তু মহীরূহ হবেই।
পেটে খিদে লাগলে কারোর মাথা কোন কাজ করে না। সে তখন তার বুদ্ধিতে(হতে পারে কু) যত নীচে নেমে যাওয়া যায় যাবে। তার জন্য তার কাছে শেষ হয়ে যাওয়া বাঁচা মরা ইত্যাদির কোন মূল্য নেই।
এই অবস্থান বদলাতে হবে। তাকে তার দুমুঠো দিতে হবে। কেড়ে নেওয়া চলবে না। কিংবা পেটের খিদের নৃশংসতায় আরো নৃশংস হলে চলবে না।
পাশের জন মানুষ ভাবতে হবে। এবং সে আমার সম্পর্কের কেউ। এভাবে ছড়িয়ে তার পাশে তার পাশে করে ছড়িয়ে পড়লে নৃশংসতা ঢাকার জন্য আর নৃশংসতার প্রয়োজন পড়বে না।
এবং মানুষ যে জন্মগতভাবে পশুসুলভ তাকে তাই যতটা বেশি সম্ভব সামাজিকতার বাঁধনে, আইনের বাঁধনে, সম্পর্কের বাঁধনে, রাষ্ট্রীয় বাঁধনে এবং শিষ্টতার বাঁধনে বেঁধে রাখা উচিত। তবে তা প্রত্যেকের আত্ম অভিমানের পূর্ণ মর্যাদায়।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৭৫৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/০৫/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আবু সাইদ লিপু ১৫/০৫/২০১৮
    উপদেশবহুল
  • ন্যান্সি দেওয়ান ০৫/০৫/২০১৮
    Great.
  • দারুণ ...........
  • ভাল লাগল।
  • সৌরভ ভূঞ্যা ০৪/০৫/২০১৮
    খুব সত্যি কথা তুলে ধরেছেন বন্ধু তার লেখায়।ধন্যবাদ বন্ধু।
  • পৃথিবীতে মহাত্মা গান্ধীর মতো আরো মহামানব প্রয়োজন।
 
Quantcast