গোপলার কথা - ৫৬
ভান করা
--------
না দেখার ভান করা
না শোনার ভান করা
না বলার ভান করা
না করার ভান করা
এসব অনেকেই করে। ফলে যে দেখে সে যেমন অবস্থানকে প্রশ্রয় দেয় তেমনি যে যে অবস্থানে থাকে সে ভাবে কেউ দেখে নি তাহলে আরও এগিয়ে যাই।
যে মদ খায়, যে গুণ্ডামি করে, যে ঘুষ খায়, যে অনৈতিক করে তারা সবাই বাড়ি ফেরে। তাদের বাড়ির লোক কেউ বিন্দুবির্সগ জানে না, এটা কি হতে পারে?
নাকি ছেলে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে এসে চুপিসারে শুয়ে পড়ল। বাবা, মাকে জিজ্ঞেস করল - কিগো, বীরু খাবে না?
মা জানে ছেলে মদ খেয়ে ফিরেছে। তাও জেনে না দেখার ভান করে বলল - বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ছিল, খেয়ে এসেছে।
এই অল্প অল্প জেনেও না দেখার ভান একদিন প্রকাশ্যে এসে গেল। তখন আর বাধা দেওয়ার জায়গা থাকল না। তখন বাবা মায়ের ভাবনা এরকম - ছেলেপিলেরা একটু আধটু স্ফূর্তি করবে না? তা কি হয়?
আবার মেয়ে প্রেমে মজেছে। পড়াশুনায় মন নেই। টিউশনের পরে দেরি করে বাড়ি ফিরছে। মা জিজ্ঞেস করে - কি রে তোর এত দেরি হল?
এর মাঝে টিউশনে পৌঁছতে যাওয়ার সময়, নিতে যাওয়ার সময় বাবা দেখেছে নীলেশ বলে ছেলেটার সঙ্গে মেয়ে যেন একটু বেশি সপ্রভ। তাই মেয়ের হয়ে বাবা উত্তর দিল - রাস্তায় কত কি অসুবিধা থাকে। জ্যাম হয়। সবে পড়ে এল মেয়েটা। তোমার জেরা করা বন্ধ করবে?
এই বিষয় যখন সামনে এল তখন সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে - তোর এত বড় সাহস। পড়াশুনায় মন না দিয়ে এই ছেলের ঘুরে বেড়াস?
এক মজার ঘটনা। আমি তখন হাসপাতালে। মা ভর্তি আছে। ছোট সরকারী হাসপাতাল। বছরখানিকের এক শিশু চিলচিৎকার করে কাঁদছে। তার মা কিছুতেই থামাতে পারছে না। পাশেই নার্সিং স্টাফদের বসার জায়গা। এমন কি এক নার্সিং স্টাফ পাশ দিয়ে বার কয় এলেন গেলেন।
শিশুটি যখন কাঁদতে কাঁদতে বমি করে ফেলছে তখন ওর মা ডাক্তারবাবুর কাছে গেলেন। সেখানে ওই নার্সিং স্টাফ নির্দ্ধিধায় বললেন - তুমি তো ভর্তি আছো। কোথায় ছিলে? কখন থেকে তোমার ছেলে কাঁদছে? কই শুনি নি তো।
এই হল না শোনার ভান।
আবার এই মদ খাওয়া, গুণ্ডামি, ঘুষ খাওয়া, প্রেমে পড়া ও অন্যান্য নেশা ইত্যাদি অনৈতিক শুরু হয় টিন এজ থেকে। বাড়ির লোকের সঙ্গে তখন সেই সব টিন এজের সম্পর্ক থাকে তুঙ্গে। টিন এজ না বলা যেমন শুনতে চায় না তেমনি তাদের মধ্যে না বলাটাই করার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি থাকে। করবেই। কেন না বোধ পরিণত না হলেও বাধা মানতে না চাওয়ার ভাবনাটি স্পষ্ট করে নেয়। তাই চরম বেছে নেয়ও খুব সহজে।
ফলে পরিবার বাধ্য হয় সেই সব অন্যাহ্য মেনে নিতে। দেখেও না দেখার ভান করে। শুনেও না শোনার ভান করে। ভাবে, বাধা দিয়ে কিছু বললে যদি হিতে বিপরীত কিছু হয়ে যায় বা করে বসে। তাহলে? তারপর আস্তে আস্তে সেটাই আরো বড়োর দিকে পা বাড়ায়। তখন আর কিছু করার থাকে না।
আচ্ছা, পরিবারের মধ্যে যে হিংসা হয় এই যেমন স্বামী স্ত্রীকে মারছে, বৃদ্ধ বাবা মাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে ইত্যাদি সেই পরিবারের সবাই জানে অথবা সবাই মদত দেয় বা দেখেও না দেখার ভান করে, শুনেও না শোনার ভান করে। পরিবারের কেউ না কেউ সেই হিংসাকে যদি রোধ করার উপায় ভাবে কিংবা বাধা দেয় তাহলে তা অন্য দিশা দেখাবে। হিংসা কিছুটা হলেও বন্ধ হবে। হিংসা সংঘটিত হওয়ার সময় তৃতীয় কেউ যদি না বলার জন্য, বাধা দেওয়ার জন্য দাঁড়ায়, দরজায় কড়া নাড়ে, অন্য কাজের বাহানায় কিছু জিজ্ঞেস করে, রাগের সময়টাকে আর একটু প্রলম্বিত করে দেয় তাহলে খুব সহজে পারিবারিক হিংসা রোধ করা যায়।
ঠিক একই রকমভাবে কোথাও কোন অপরাধ সংঘটিত হলে তার প্রস্তুতি অবশ্যই থাকে। হঠাৎ করে বোম ব্লাস্ট, খুন, জখম, রাহাজানি হয় না। এই প্রস্তুতি বা পরিকল্পনার জন্য সেই এলাকায় ঘাঁটি তৈরি হয়। সেই ঘাঁটি তৈরিতে সেই এলাকার কারও সহযোগিতা নিতে হয়। এবং এই সহযোগিতা চলাকালীন অনেকেই না দেখার, না শোনার বা না বলার ভান করে। অথবা এই ভান করার জন্য কিছু মুনাফা দিয়ে দেওয়া হয়। যা ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর সবাই বলে আমরা জানি না। আমরা দেখি নি। আমরা শুনি নি। আদপে কিন্তু তখন তারা না শোনা না দেখা বা না বলার ভান করে।
এখন প্রতিটি অঞ্চলে ভোটার কার্ডের জন্য, স্বাস্থ্য পরিষেবার ইমুউনাজেশনের জন্য, রেশন কার্ডের জন্য, একশ দিনের কাজের জন্য, জন গনণার জন্য, বিভিন্ন অনুদান ও প্রকল্প রূপায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মচারী আছে। যারা সেই এলাকার প্রত্যেকের বাড়ি চেনে, লোক চেনে, এলাকা চেনে, কে কি কাজ করে চেনে। এবং সর্বোপরি বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি আছেন। যারা প্রতি মুহূর্তের প্রতিটি মানুষের গতিবিধি চেনে। কি খায় কি পরে কি পার্টি করে এবং কোথায় কি কথা বলে। তাও দেশ জুড়ে বোমা গুলি গোলা খুন জখম মারামারি বেড়েই যাচ্ছে। কিভাবে সংঘটিত হচ্ছে এসব? ভুঁইফোড় কোন কিছু সম্ভব নয়।
এই সব কর্মচারীর কেউ না কেউ, না দেখা না বলা বা না শোনার ভান করে। তাই খারাপ কিছু খুব সহজেই সংঘটিত হচ্ছে।
এর আবার উল্টোদিক আছে।
কেউ ভাল কিছু করছে, ভাল কিছু ভাবছে, ভাল কিছু আনছে দেখলে শুনলে বা বললে রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তখন আবার বেশি দেখা দেখতে পায়।
তখন ভান আর থাকেই না।
--------
না দেখার ভান করা
না শোনার ভান করা
না বলার ভান করা
না করার ভান করা
এসব অনেকেই করে। ফলে যে দেখে সে যেমন অবস্থানকে প্রশ্রয় দেয় তেমনি যে যে অবস্থানে থাকে সে ভাবে কেউ দেখে নি তাহলে আরও এগিয়ে যাই।
যে মদ খায়, যে গুণ্ডামি করে, যে ঘুষ খায়, যে অনৈতিক করে তারা সবাই বাড়ি ফেরে। তাদের বাড়ির লোক কেউ বিন্দুবির্সগ জানে না, এটা কি হতে পারে?
নাকি ছেলে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে এসে চুপিসারে শুয়ে পড়ল। বাবা, মাকে জিজ্ঞেস করল - কিগো, বীরু খাবে না?
মা জানে ছেলে মদ খেয়ে ফিরেছে। তাও জেনে না দেখার ভান করে বলল - বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ছিল, খেয়ে এসেছে।
এই অল্প অল্প জেনেও না দেখার ভান একদিন প্রকাশ্যে এসে গেল। তখন আর বাধা দেওয়ার জায়গা থাকল না। তখন বাবা মায়ের ভাবনা এরকম - ছেলেপিলেরা একটু আধটু স্ফূর্তি করবে না? তা কি হয়?
আবার মেয়ে প্রেমে মজেছে। পড়াশুনায় মন নেই। টিউশনের পরে দেরি করে বাড়ি ফিরছে। মা জিজ্ঞেস করে - কি রে তোর এত দেরি হল?
এর মাঝে টিউশনে পৌঁছতে যাওয়ার সময়, নিতে যাওয়ার সময় বাবা দেখেছে নীলেশ বলে ছেলেটার সঙ্গে মেয়ে যেন একটু বেশি সপ্রভ। তাই মেয়ের হয়ে বাবা উত্তর দিল - রাস্তায় কত কি অসুবিধা থাকে। জ্যাম হয়। সবে পড়ে এল মেয়েটা। তোমার জেরা করা বন্ধ করবে?
এই বিষয় যখন সামনে এল তখন সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে - তোর এত বড় সাহস। পড়াশুনায় মন না দিয়ে এই ছেলের ঘুরে বেড়াস?
এক মজার ঘটনা। আমি তখন হাসপাতালে। মা ভর্তি আছে। ছোট সরকারী হাসপাতাল। বছরখানিকের এক শিশু চিলচিৎকার করে কাঁদছে। তার মা কিছুতেই থামাতে পারছে না। পাশেই নার্সিং স্টাফদের বসার জায়গা। এমন কি এক নার্সিং স্টাফ পাশ দিয়ে বার কয় এলেন গেলেন।
শিশুটি যখন কাঁদতে কাঁদতে বমি করে ফেলছে তখন ওর মা ডাক্তারবাবুর কাছে গেলেন। সেখানে ওই নার্সিং স্টাফ নির্দ্ধিধায় বললেন - তুমি তো ভর্তি আছো। কোথায় ছিলে? কখন থেকে তোমার ছেলে কাঁদছে? কই শুনি নি তো।
এই হল না শোনার ভান।
আবার এই মদ খাওয়া, গুণ্ডামি, ঘুষ খাওয়া, প্রেমে পড়া ও অন্যান্য নেশা ইত্যাদি অনৈতিক শুরু হয় টিন এজ থেকে। বাড়ির লোকের সঙ্গে তখন সেই সব টিন এজের সম্পর্ক থাকে তুঙ্গে। টিন এজ না বলা যেমন শুনতে চায় না তেমনি তাদের মধ্যে না বলাটাই করার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি থাকে। করবেই। কেন না বোধ পরিণত না হলেও বাধা মানতে না চাওয়ার ভাবনাটি স্পষ্ট করে নেয়। তাই চরম বেছে নেয়ও খুব সহজে।
ফলে পরিবার বাধ্য হয় সেই সব অন্যাহ্য মেনে নিতে। দেখেও না দেখার ভান করে। শুনেও না শোনার ভান করে। ভাবে, বাধা দিয়ে কিছু বললে যদি হিতে বিপরীত কিছু হয়ে যায় বা করে বসে। তাহলে? তারপর আস্তে আস্তে সেটাই আরো বড়োর দিকে পা বাড়ায়। তখন আর কিছু করার থাকে না।
আচ্ছা, পরিবারের মধ্যে যে হিংসা হয় এই যেমন স্বামী স্ত্রীকে মারছে, বৃদ্ধ বাবা মাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে ইত্যাদি সেই পরিবারের সবাই জানে অথবা সবাই মদত দেয় বা দেখেও না দেখার ভান করে, শুনেও না শোনার ভান করে। পরিবারের কেউ না কেউ সেই হিংসাকে যদি রোধ করার উপায় ভাবে কিংবা বাধা দেয় তাহলে তা অন্য দিশা দেখাবে। হিংসা কিছুটা হলেও বন্ধ হবে। হিংসা সংঘটিত হওয়ার সময় তৃতীয় কেউ যদি না বলার জন্য, বাধা দেওয়ার জন্য দাঁড়ায়, দরজায় কড়া নাড়ে, অন্য কাজের বাহানায় কিছু জিজ্ঞেস করে, রাগের সময়টাকে আর একটু প্রলম্বিত করে দেয় তাহলে খুব সহজে পারিবারিক হিংসা রোধ করা যায়।
ঠিক একই রকমভাবে কোথাও কোন অপরাধ সংঘটিত হলে তার প্রস্তুতি অবশ্যই থাকে। হঠাৎ করে বোম ব্লাস্ট, খুন, জখম, রাহাজানি হয় না। এই প্রস্তুতি বা পরিকল্পনার জন্য সেই এলাকায় ঘাঁটি তৈরি হয়। সেই ঘাঁটি তৈরিতে সেই এলাকার কারও সহযোগিতা নিতে হয়। এবং এই সহযোগিতা চলাকালীন অনেকেই না দেখার, না শোনার বা না বলার ভান করে। অথবা এই ভান করার জন্য কিছু মুনাফা দিয়ে দেওয়া হয়। যা ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর সবাই বলে আমরা জানি না। আমরা দেখি নি। আমরা শুনি নি। আদপে কিন্তু তখন তারা না শোনা না দেখা বা না বলার ভান করে।
এখন প্রতিটি অঞ্চলে ভোটার কার্ডের জন্য, স্বাস্থ্য পরিষেবার ইমুউনাজেশনের জন্য, রেশন কার্ডের জন্য, একশ দিনের কাজের জন্য, জন গনণার জন্য, বিভিন্ন অনুদান ও প্রকল্প রূপায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মচারী আছে। যারা সেই এলাকার প্রত্যেকের বাড়ি চেনে, লোক চেনে, এলাকা চেনে, কে কি কাজ করে চেনে। এবং সর্বোপরি বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি আছেন। যারা প্রতি মুহূর্তের প্রতিটি মানুষের গতিবিধি চেনে। কি খায় কি পরে কি পার্টি করে এবং কোথায় কি কথা বলে। তাও দেশ জুড়ে বোমা গুলি গোলা খুন জখম মারামারি বেড়েই যাচ্ছে। কিভাবে সংঘটিত হচ্ছে এসব? ভুঁইফোড় কোন কিছু সম্ভব নয়।
এই সব কর্মচারীর কেউ না কেউ, না দেখা না বলা বা না শোনার ভান করে। তাই খারাপ কিছু খুব সহজেই সংঘটিত হচ্ছে।
এর আবার উল্টোদিক আছে।
কেউ ভাল কিছু করছে, ভাল কিছু ভাবছে, ভাল কিছু আনছে দেখলে শুনলে বা বললে রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তখন আবার বেশি দেখা দেখতে পায়।
তখন ভান আর থাকেই না।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ৩১/০৩/২০১৮বেশ
-
আবু কওছর ১৭/০৩/২০১৮এ সমাজে যে নিখুত ভাবে ভান ধরতে পারে, তারাই বেশি সুবিধা ভোগ করে বৈকি!!
-
কামরুজ্জামান সাদ ০৬/০৩/২০১৮সবই ভানের উপরেই চলছে