গোপলার কথা - ৩৮
খাদ্যের কিছু নিজস্ব অভ্যাস
-----------------------
মানুষের জীবন লোভের ভাণ্ডার। যত পায় আরও চায়। সন্তুষ্টি তার জীবনে সাময়িক। তবু সুস্থ থাকার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। বিশেষ করে বয়স যখন চল্লিশ পেরিয়ে যায়।
১। সবসময় পরিমিত আহার করা উচিত। পেট ভরে খাওয়া চলবে না। অর্থাৎ পেটের কিছু অংশ খালি রেখে দেওয়া উচিত। কেন না আমরা বেশিরভাগ খাওয়ার খাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত। সেই খাওয়ার হজম হলেও শরীরে তা শুধু জমা হয়। জমার পরিমাণ বাড়ছে কমছে খরচ। ফলে সুগার, পেশার, ওজন বেশি, ভুঁড়ি বাড়া, হার্টের রোগ ইত্যাদি নানান রোগের বাসাও তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ যত জমা তত রোগের আমন্ত্রণ।
তাহলে কি খিদে থাকলেও খাব না। তা কিন্তু নয়। আমাদের খিদে মিটে গেলেও একটা লোভ থাকে। সেই লোভের বশে আমরা এটা ওটা একটু বেশি খেয়ে থাকি। পাকস্থলী এমন একটা ভাণ্ডার সেখানে অল্পেই ভরে যায়। কিন্তু যদি আরো ভরাতে চান তাহলেও সে ভরে নেবে। কেন না এটা একটা মাংসল ব্লাডার।
২। নিয়মিত শরীরকে কাজে লাগানো দরকার। সকালের মর্নিং ওয়াক। সম্ভব না হলে নিজের কাজের প্রেক্ষিতে হাঁটাচলা করা। প্রতিদিন কিছু না কিছু হাঁটা খুব দরকার এবং জোরে হাঁটা। হাঁটার চেয়ে বড় ব্যায়াম আর কিছু নেই। শারীরিক কসরত, যোগব্যায়াম, খেলাধুলা ইত্যাদি করতে পারলে তো ভালই। কিন্তু যদি এগুলো সম্ভব না হয় তাহলেও শুধু হাঁটা। আর জোরে হাঁটা। সকালের শীতল ছায়ায় কিংবা বিকেলের মৃদু মন্দ হাওয়ায় শুধু হাঁটা। হাঁটলেই আপনার শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া হয়। খুব জোরে হাঁটা বা দৌড়নো নয়। শুধু হাঁটা। এতেই আপনার শরীরের জমা খরচ হবেই হবে। তার মানে আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে অবশ্যই হাঁটবেন। হাঁটতে ভয় পাবেন না। যতটা সম্ভব বেশি হাঁটা। বাইরে যাওয়ার সময় সুযোগ নেই তো কি হয়েছে? ঘরেই হাঁটুন। টিভি দেখতে দেখতে সোফার চারিদিকে ঘুরুন। ওতেই হবে।
হাঁটার কোন প্রস্তুতির দরকার নেই। শুধু হাঁটা। ট্রেড-মিলে হাঁটতে হবে এমন কোন কথা নেই। শুধু হাঁটুন। মনে রাখবেন, এগারো নম্বরের (মানে আপনার দু পা) কোন বিকল্প নেই। যতদিন সে স্বাবলম্বী ততদিন হাঁটুন। তাহলে ও শেষদিন পর্যন্ত হয়তো (হয়তো কেন সত্যি সত্যি) স্বাবলম্বী থাকবে।
৩। যেখানেই যান না কেন সাথে জল এবং শুকনো খাবার (যেমন বিস্কুটের প্যাকেট) ক্যারি করবেন। জল আমাদের দেহের বাহক। অর্থাৎ আমরা যা কিছু খাবার ইনটেক করি তার অপ্রয়োজনীয় অংশ বাইরে বের করতে এই জল খুবই কার্যকরী। জলে যদি ক্রমাগত অশুদ্ধি থাকে বা কম খাওয়া হয় তাহলে শরীর সচল রাখার জন্য দেহজ জমা রাখা ও খরচ করার সুনির্দিষ্ট কাজ ব্যহত হয়।
অর্থাৎ রাস্তায় চায়ের দোকান বা অজানা সোর্স থেকে জল না খাওয়াই ভাল। ঘরের জল ক্যারি করাটাই সবচেয়ে বেটার। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুসারে - টু গুড অ্যালোপ্যাথি হোমিওপ্যাথি, বাট হাইড্রো(জল)প্যাথি ইজ দ্যা বেস্ট প্যাথি।
আর খালি পেটে থাকার চেয়ে তিন চার ঘণ্টা অন্তর অবশ্যই কিছু খেতে হবে। বাসে আছেন হাতের কাছে কিছু নেই তো কি হয়েছে আপনার সঙ্গে রাখা দুটো বিস্কুট খেয়ে নিন। শরীর সতেজ। কাজ করছেন শেষ না করে উঠতে পারছেন না। হাতের কাছে ব্যাগে রাখা দুটো বিস্কুট খেয়ে নিন। সময়ও লাগবে না আবার আপনার কাজের ব্রেক হল না। আর পেটও শান্তি।
৪। প্রতিদিন কোন না কোন ফল খাবেন তবে তা কোনকিছু খাবার খাওয়ার পর। একেবারে পরিমিত। একটা কি দুটো। চেষ্টা করবেন দুপুরের আগে খাওয়ার। ফলের কার্যকারিতার মাপকাঠি এভাবে করা যেতে পারে - সকালে ফল খেলে সোনার মত উপকারিতা, দুপুরে খেলে রূপোর মত, আর রাতে খেলে লোহার মত উপকারিতা পাবেন। কেন না দুপুরের আগে খরচের সুযোগ থাকছে। তারপরে সেই সুযোগ কম।
অন্যান্য খাওয়ারের ক্ষেত্রে একই রকমভাবে দুপুরের আগে যা খাবেন তার পুরোটাই খরচ করতে পারবেন। দুপুরের পরে কিছুটা খরচ করতে পারবেন। কিন্তু রাতের খাবার প্রায় পুরোটাই জমা। কিন্তু প্রয়োজন। তাই যেটুকু খরচ হবে তা কেবল দেহ বিশ্রামে যা খরচ হয় সেটুকুই। তাই রাতে ভারী খাওয়ার খাওয়া উচিত নয়। ভারী খাওয়ার দুপুরের আগে খাওয়া উচিত।
কিন্তু আমাদের দেশে রাতেই বেশি অনুষ্ঠান হয়। কিছু করার নেই। পরিমিতি আপনাকেই ঠিক করতে হবে। তাছাড়া জীবনের প্রয়োজনে এইসব দু একদিন তো থাকবেই।
৫। বহুল প্রচারিত খাওয়ার দু ঘণ্টার মধ্যে ঘুমবেন না। ঠিক। তবে ঘুমবেন রাত এগারোটার মধ্যে। কোনভাবে রাত জাগার কোন প্রয়োজন নেই। যারা রাত জেগে ডিউটি করেন তাদের কথা আলাদা। না হলে রাত জাগার কোন মানেই হয় না। যে কোন কাজ আপনি রুটিন পরিবর্তন করে দিনে করার চেষ্টা করতেই পারেন। আর একটা কথা, সময় থাক বা না থাক দিনে বিছানা পেতে আয়েশ করে কখনই ঘুম নয়।
বেশিরভাগ মানুষ বলে নানান চিন্তা, কি করে ঘুম আসবে? এই কথাটাই ঠিক না। তিনটে জিনিস কাওকে জোর করতে হয় না বা জোর করবেন না। প্রত্যেকে নিজের তাগিদে এবং ভাল থাকার প্রয়াসে সেই তিনটে কাজ করে অথবা করতে পারে।
খাওয়া, ঘুমানো, আর মলত্যাগ। খাও খাও, ঘুমাও ঘুমাও, যাও যাও। বলার কোন দরকার নেই। এগুলো কেউ আটকে রাখতে পারবে না। প্রথমেই বলেছি মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খায়। ফলে খাওয়ার ব্যাপারে জোর করা মানেই বিড়ম্বনা। শরীরকে খাটাবেন তবেই ঘুম আসবে। শরীরকে বিশ্রাম আর আয়েশের মধ্যে রাখলে ঘুম আসবে না। অনেকেই দুপুরে একটু গড়িয়ে নেন। আর রাতে জেগে থাকেন। একটা নির্দিষ্ট রিদমে শুধু রাতে নির্দিষ্ট সময়ে রোজ ঘুমোতে গেলে ঘুম আসবেই। ফলে জোর করার দরকার নেই। আর ঠিক একই রকম ভাবে সকালের প্রাতঃকৃত্য পাক না পাক রোজ করবেন। রিদমে তা ফলপ্রসূ।
অনেকেই তা করে না বলে পায়খানা পেলে যাব। কিন্তু কখনই বলে না খিদে পেলে খাব। খাওয়ার কিন্তু নিয়মিত তিন চার বার খেয়ে যায়, সে খিদে পাক অথবা না পাক। তাহলে মাত্র একবার সকালের প্রাতঃকৃত্য তাতে পেলে যাব কেন? সবারই পাক বা না পাক সকালের প্রাতঃকৃত্যে যাওয়া উচিত।
৬। সবার সব কিছুই খাওয়া যায়। খাওয়াতে খুব একটা বারণ নেই। কিন্তু অবশ্যই পরিমিত। চল্লিশ পেরিয়ে গেলে আপনি গ্রহণীয় খাবার হজম হয়তো করতে পারবেন কিন্তু খরচ করতে পারবেন না। এই খরচ করার মত প্রয়োজনীয় সামর্থ্য কিন্তু আপনার কমতে থাকবে। তাই গ্রহণও কমিয়ে দেওয়া উচিত। এবং কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে খাওয়া উচিত। যেমন ফার্স্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংস পুরোটাই জমার খাতায়। সব বয়সের ক্ষেত্রে এইসব যতটা খাবেন পুরোটাই জমা। খরচ নাই। কম বয়সে যদিও বা কিছু খরচ করা যায় পরে আর তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
৭। সবাই প্রায় নেশা করে। এই নেশা পরিমিত হোক বা অপরিমিত সবটাই কিন্তু বিড়ম্বনার। চল্লিশের পরে এই ইনটেক নেশা সবটাই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে যায়। এই বিড়ম্বনার আবার দুটো দিক। এক আপনার শারীরিক বিড়ম্বনা আর দুই আপনার পারিবারিক বিড়ম্বনা। অনেক সময় এর ফলে আপনি দিব্যি হাসপাতালে বেডে শুয়ে থাকলেন আর দৌড়াদৌড়ি করে বাড়ির লোক। সঙ্গে গুচ্ছের টাকা খরচ। হয়তো সবক্ষেত্রে নয় কিন্তু কিছুটা তো এর জন্য দায়ী। তার মানে আপনার কার্যকারিতা অন্যের ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে। নেশা থেকে বেরিয়ে আসার দুটো রাস্তা। এক এই নেশার মধ্যে না ঢোকা। দুই নিজেকে ভাবা ও পরিবারকে ভাবা। 'বেশ করেছি নিজের পয়সায় নেশা করেছি' এ রকম বলার দিন শেষ। কিন্তু কষ্ট এবং পয়সা আর নিজের থাকছে না। সাথে পরিবার থাকছে।
৮। আমাদের শরীর হল ব্যাধির মন্দির। অর্থাৎ শরীর থাকলে রোগ থাকবেই। কোন রোগ হলে আমরা ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তারের পরামর্শ মত চলি। আমাদের সবার ভাবা উচিত রোগ যেমন সারানোর চেষ্টা করব তেমনি রোগ যাতে না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত। অর্থাৎ রোগ যে রাস্তা দিয়ে আসতে পারে সেই রাস্তা বন্ধ করা উচিত কিংবা বন্ধ রাখা উচিত। হঠাৎ করে কোনকিছুই আসে না। প্রত্যেকটা অবস্থানে কিছু না কিছু প্রেক্ষাপট থাকে।
সবাই মনে করে অল্পেতে কিছু হবে না। মাঝে মধ্যে দু একটা সিগারেট খেলে কিছু হবে না। দু একটা মিষ্টি খেলে সুগার খুব একটা বাড়ে না। দু এক পেগ মদ সবারই নাকি খাওয়া উচিত। যতই প্রেশার থাক একটু আধটু লবণ খাওয়া যেতেই পারে। যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে গলা ভিজিয়ে নিতে চায়ের জুড়ি নেই। অথচ এই একটু একটু কখন অনেক হয়ে যায় সে খেয়াল কেউ রাখে না।
অর্থাৎ আপনার মন শরীরকে বশে রাখতে পারল না। মতি নন্দী 'কোনি' তে বলেছেন "জোর বলতে শুধু গায়ের জোরই বোঝায় না। মনের জোরেই সব হয়। ইচ্ছাশক্তি দিয়ে শরীরের দুর্বলতা ঢাকা দেওয়া যায়। শরীর যতটা করতে পারে ভাবে, তার থেকেও শরীরকে দিয়ে বেশি করাতে পারে ইচ্ছার জোরে। সেজন্য শুধু শরীর গড়লেই হয় না, মনকেও গড়তে হয়। শরীরকে হুকুম দিয়ে মন কাজ করাবে। আপনার মন হুকুম করতে জানে না তাই শরীর পারল না।"
অনেককেই জিজ্ঞেস করে দেখেছি, সারাদিন আমি প্রায় কিছুই খাই না। তাও সুগার বাড়ছে। কি যে করি।
আসলে তিনি একবারে বসে কম খান ঠিকই কিন্তু সারাদিন এটা ওটা করে মুখ চলতেই থাকে। তাতে দেখা যায় একবারে বসে খেলেই কম খাওয়া হত।
আবার সকালে একটু হেঁটে এসে বলে, কত আর পরিশ্রম করব তারপর আবার বিশ্রামে। তাতে দেখা যায় তিনি শুয়ে বসে কাটান অথচ বলেন আমি তো রোজ সকালে হাঁটতে যাই। আদপে লাভ হচ্ছে কি?
আমার এক পরিচিত সারাদিন পরিবারের কাওকে বিছানায় ঘেঁষতে দিতেন না। বিছানা শুধু রাতে শোয়ার জন্য। তখন অত্যাচার মনে হত এখন বয়স বাড়ার সাথে বুঝেছি কে কার ভাল চায়?
৯। দাঁত হল সবার প্রিয় ও প্রয়োজনীয়। অথচ আমরা দাঁতের চেয়ে চুলের যত্ন নিই বেশি। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে শোয়ার সময় সবার ব্রাশ করা উচিত। রাতে ব্রাশ করার পর জল ছাড়া আর কিছু খাওয়া উচিত নয়। আর প্রতিবার কোন কিছু খাওয়ার পর ( একটা বিস্কুট খাওয়ার পরও) অবশ্যই খুব ভাল করে কুলকুচি করা উচিত। তাহলে দাঁতের রোগ যেমন কম হবে তেমনি বার বার দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার পড়বে না। শুধু দাঁতের ডাক্তার নয় অন্য রোগও কম হবে।
কেন না আমাদের দেহে যা কিছু ইনটেক হয় তার বেশির ভাগ হয় এই মুখ দিয়ে। মুখ যদি পরিষ্কার রাখা যায় তাহলে খাওয়ার জমে পচে দাঁতের গোড়া ও লালাগ্রন্থির ক্ষতি করতে পারবে না।
১০। যে কোন খাবারের এক গ্রাস মোটামুটি ৩০ সেকেন্ড চিবানো উচিত। ছোট ছোট গ্রাসে চিবিয়ে খেলে খাবার লালার সঙ্গে মিশে খাওয়ারের পরিপূর্ণ তৃপ্তি আপনি উপভোগ করতে পারবেন। কেন না কোন খাবার পেটে চলে গেলে তার তৃপ্তি আপনি পাবেন না। তাই যত বেশি চিবোবেন তত তার তৃপ্তি উপভোগ করবেন।
তেমনি সেই সেই খাবার লালার সাথে মিশে কিছুটা পরিপাক হয়ে যাবে এবং প্রতি গ্রাসে এই পরিপূর্ণ তৃপ্তির ফলে আপনার তৃপ্তির জন্য, লোভের জন্য অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছেও চলে যাবে। যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই খাবেন।
আমরা অনেকেই কোন ভাল খাবার পেলে গপাগপ করে গোগ্রাসে খেয়ে ফেলি। ফলে অতিরিক্তই খাওয়া হয়ে যায়। তা হয়তো হজম করা যায় কিন্তু তার পুরোটাই শুধু দেহে জমা হয়। কাজে লাগে না। কিংবা কাজে লাগাতে পারি না।
আপনি বলেন, আহ! দারুণ তৃপ্তি করে খেলাম। আসলে আপনি তৃপ্তি করে নয়, বেশি করে খেলেন। তৃপ্তি মুখে, পেটে নয়। অথচ সেই মুখকে পরিপূর্ণ বুঝতে না দিয়ে 'ঘ্রাণেন অর্ধ ভোজনম' কে 'পেটায় নম' করলেন। পেট বয়ে বেড়াল অতিরিক্ত বোঝা।
১১। কোন মতে লং টাইম পেট খালি রাখবেন না। সময় সুযোগ না হলেও হাতের কাছে রাখবেন বিস্কুট ও ছোটখাটো শুকনো খাবার (আগেই বলেছি)। একটা দুটো খেয়ে জল খেলে নিলেই হবে।
বেশির ভাগ মানুষ অ্যাসিডজনিত রোগে ভোগে। এর মূল কারণ নিয়মিত সময় করে না খাওয়া। সারাদিনে যখন সময় হবে কিংবা খিদে পেলে কিংবা খেলেই হল এইভাবে খাওয়া দাওয়া করলে অ্যাসিড সমস্যা মিটবেই না। প্রথমত বাইরের খাওয়ার খাওয়া নিষেধ। যদি একান্তই খেতে হয় তাহলে তা অবশ্যই নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত।
আমাদের সারাদিনে তিনবার বা চারবার খাওয়া উচিত। ভারী এবং হাল্কা যাই হোক। সকাল দশটা দুপুর দুটো রাত দশটা। এর বাইরে চা সকাল ৭টা ও বিকেল ৭টা। ইত্যাদি। এটা একটা সময়সারণী। আমার জন্য। আর আপনার জন্য যে সময় সারণী তা আপনি ঠিক করে নিন। সেইমত খাবেন। প্রতিদিন। অবশ্যই খাবেন। একঘণ্টা আধঘণ্টা এদিক ওদিক হতে পারে। তাতে কোন সমস্যা হবে না।
কেন না, পেটে যাওয়া খাবার হজম করার জন্য যে এনজাইম পিত্তরস অ্যাসিড লাগে তা কেউ নিঃসরণ করায় না। রিদম অনুযায়ী আপনার অভ্যাসে তা নিঃসরণ হয়। আজ ন'টায় খেলেন সে নিঃসরণ হল। খাদ্য হজম করল। কাল খেলেন না সে নিঃসৃত হল কিন্তু কোন খাবার পেল না। তাহলে সে কি করবে? আপনার পাকস্থলী অন্ত্রকে হজম করবে অথবা নিজেই অ্যাসিডিক অবস্থান তৈরি করবে।
আপনি ওষুধ খেয়ে কিছুটা চাপা দিলেন কিন্তু রেহাই পাবেন না। আপনার খাওয়ার বেনিয়মে উল্টোপাল্টা সময় সারণীতে আপনি অ্যাসিড জনিত রোগ থেকে রেহাই পাবেন না। তাহলে আজই শুরু করুন সময়ে খাওয়া দাওয়া। রোজ।
১২। রোজ সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠাটাই একটা ব্যায়াম। ঘুম থেকে ওঠা মানেই শরীর নাড়াচাড়া শুরু। সূর্য পৃথিবী চন্দ্র গ্রহ নক্ষত্র এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড যে রিদমে ঘুরছে আমাদের মত ক্ষুদ্র প্রাণীদেরও সেই রিদমে তাল মিলিয়ে চলা উচিত। তাই দিনের বেলায় যেমন কাজকর্ম করার জন্য প্রশস্ত, রাতের ঘুম তেমনি জাগতিক জীবন যাত্রা।
কাজের জন্য যত রাতই হোক সকাল হয়ে যাওয়াও আপনার জীবনে আসা দরকার। ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজতে মাজতে বা একটু বাইরের দিকে তাকাতে তাকাতে পায়চারি করুন দেখবেন মনের সমস্ত ক্লেদ শরীরের সব ক্লান্তি দূর হবে যাবে।
তার পরেই পেট খালি না রেখে দু চার দানা মুখে দিয়ে কাজে লেগে পড়ুন দেখবেন আপনার শরীর বলে দেবে আপনার কি করা উচিত? পরের দিন কখন শোয়া উচিত আর কখন ঘুম থেকে ওঠা উচিত। শরীরকে কাজে না লাগিয়ে যদি বসিয়ে রাখেন তখন সে কিছু বলবে না। কারো রিদমে বা কারো মন মর্জিতে সে চলবে না। এমন কি তার নিজেরও মর্জি থাকবে না। শরীর তখন ব্যাধির মন্দির হয়ে দাঁড়াবে।
শরীর এমন তাকে যা দেবেন সে তাই সইবে তবে সাথে আরও অনেক কিছুকে ডেকে আনবে। বেশি খেতে থাকুন শরীর খেয়ে নেবে। বেশি ঘুমোতে থাকুন শরীর আলসেমিতে ঘুমিয়ে থাকবে। বেশি খাটাতে থাকুন শরীর চাঙা হয়ে খাটতে থাকবে। সাথে তার নিজস্ব বিশ্রামও খুঁজে নেবে।
-----------------------
মানুষের জীবন লোভের ভাণ্ডার। যত পায় আরও চায়। সন্তুষ্টি তার জীবনে সাময়িক। তবু সুস্থ থাকার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। বিশেষ করে বয়স যখন চল্লিশ পেরিয়ে যায়।
১। সবসময় পরিমিত আহার করা উচিত। পেট ভরে খাওয়া চলবে না। অর্থাৎ পেটের কিছু অংশ খালি রেখে দেওয়া উচিত। কেন না আমরা বেশিরভাগ খাওয়ার খাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত। সেই খাওয়ার হজম হলেও শরীরে তা শুধু জমা হয়। জমার পরিমাণ বাড়ছে কমছে খরচ। ফলে সুগার, পেশার, ওজন বেশি, ভুঁড়ি বাড়া, হার্টের রোগ ইত্যাদি নানান রোগের বাসাও তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ যত জমা তত রোগের আমন্ত্রণ।
তাহলে কি খিদে থাকলেও খাব না। তা কিন্তু নয়। আমাদের খিদে মিটে গেলেও একটা লোভ থাকে। সেই লোভের বশে আমরা এটা ওটা একটু বেশি খেয়ে থাকি। পাকস্থলী এমন একটা ভাণ্ডার সেখানে অল্পেই ভরে যায়। কিন্তু যদি আরো ভরাতে চান তাহলেও সে ভরে নেবে। কেন না এটা একটা মাংসল ব্লাডার।
২। নিয়মিত শরীরকে কাজে লাগানো দরকার। সকালের মর্নিং ওয়াক। সম্ভব না হলে নিজের কাজের প্রেক্ষিতে হাঁটাচলা করা। প্রতিদিন কিছু না কিছু হাঁটা খুব দরকার এবং জোরে হাঁটা। হাঁটার চেয়ে বড় ব্যায়াম আর কিছু নেই। শারীরিক কসরত, যোগব্যায়াম, খেলাধুলা ইত্যাদি করতে পারলে তো ভালই। কিন্তু যদি এগুলো সম্ভব না হয় তাহলেও শুধু হাঁটা। আর জোরে হাঁটা। সকালের শীতল ছায়ায় কিংবা বিকেলের মৃদু মন্দ হাওয়ায় শুধু হাঁটা। হাঁটলেই আপনার শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া হয়। খুব জোরে হাঁটা বা দৌড়নো নয়। শুধু হাঁটা। এতেই আপনার শরীরের জমা খরচ হবেই হবে। তার মানে আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে অবশ্যই হাঁটবেন। হাঁটতে ভয় পাবেন না। যতটা সম্ভব বেশি হাঁটা। বাইরে যাওয়ার সময় সুযোগ নেই তো কি হয়েছে? ঘরেই হাঁটুন। টিভি দেখতে দেখতে সোফার চারিদিকে ঘুরুন। ওতেই হবে।
হাঁটার কোন প্রস্তুতির দরকার নেই। শুধু হাঁটা। ট্রেড-মিলে হাঁটতে হবে এমন কোন কথা নেই। শুধু হাঁটুন। মনে রাখবেন, এগারো নম্বরের (মানে আপনার দু পা) কোন বিকল্প নেই। যতদিন সে স্বাবলম্বী ততদিন হাঁটুন। তাহলে ও শেষদিন পর্যন্ত হয়তো (হয়তো কেন সত্যি সত্যি) স্বাবলম্বী থাকবে।
৩। যেখানেই যান না কেন সাথে জল এবং শুকনো খাবার (যেমন বিস্কুটের প্যাকেট) ক্যারি করবেন। জল আমাদের দেহের বাহক। অর্থাৎ আমরা যা কিছু খাবার ইনটেক করি তার অপ্রয়োজনীয় অংশ বাইরে বের করতে এই জল খুবই কার্যকরী। জলে যদি ক্রমাগত অশুদ্ধি থাকে বা কম খাওয়া হয় তাহলে শরীর সচল রাখার জন্য দেহজ জমা রাখা ও খরচ করার সুনির্দিষ্ট কাজ ব্যহত হয়।
অর্থাৎ রাস্তায় চায়ের দোকান বা অজানা সোর্স থেকে জল না খাওয়াই ভাল। ঘরের জল ক্যারি করাটাই সবচেয়ে বেটার। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুসারে - টু গুড অ্যালোপ্যাথি হোমিওপ্যাথি, বাট হাইড্রো(জল)প্যাথি ইজ দ্যা বেস্ট প্যাথি।
আর খালি পেটে থাকার চেয়ে তিন চার ঘণ্টা অন্তর অবশ্যই কিছু খেতে হবে। বাসে আছেন হাতের কাছে কিছু নেই তো কি হয়েছে আপনার সঙ্গে রাখা দুটো বিস্কুট খেয়ে নিন। শরীর সতেজ। কাজ করছেন শেষ না করে উঠতে পারছেন না। হাতের কাছে ব্যাগে রাখা দুটো বিস্কুট খেয়ে নিন। সময়ও লাগবে না আবার আপনার কাজের ব্রেক হল না। আর পেটও শান্তি।
৪। প্রতিদিন কোন না কোন ফল খাবেন তবে তা কোনকিছু খাবার খাওয়ার পর। একেবারে পরিমিত। একটা কি দুটো। চেষ্টা করবেন দুপুরের আগে খাওয়ার। ফলের কার্যকারিতার মাপকাঠি এভাবে করা যেতে পারে - সকালে ফল খেলে সোনার মত উপকারিতা, দুপুরে খেলে রূপোর মত, আর রাতে খেলে লোহার মত উপকারিতা পাবেন। কেন না দুপুরের আগে খরচের সুযোগ থাকছে। তারপরে সেই সুযোগ কম।
অন্যান্য খাওয়ারের ক্ষেত্রে একই রকমভাবে দুপুরের আগে যা খাবেন তার পুরোটাই খরচ করতে পারবেন। দুপুরের পরে কিছুটা খরচ করতে পারবেন। কিন্তু রাতের খাবার প্রায় পুরোটাই জমা। কিন্তু প্রয়োজন। তাই যেটুকু খরচ হবে তা কেবল দেহ বিশ্রামে যা খরচ হয় সেটুকুই। তাই রাতে ভারী খাওয়ার খাওয়া উচিত নয়। ভারী খাওয়ার দুপুরের আগে খাওয়া উচিত।
কিন্তু আমাদের দেশে রাতেই বেশি অনুষ্ঠান হয়। কিছু করার নেই। পরিমিতি আপনাকেই ঠিক করতে হবে। তাছাড়া জীবনের প্রয়োজনে এইসব দু একদিন তো থাকবেই।
৫। বহুল প্রচারিত খাওয়ার দু ঘণ্টার মধ্যে ঘুমবেন না। ঠিক। তবে ঘুমবেন রাত এগারোটার মধ্যে। কোনভাবে রাত জাগার কোন প্রয়োজন নেই। যারা রাত জেগে ডিউটি করেন তাদের কথা আলাদা। না হলে রাত জাগার কোন মানেই হয় না। যে কোন কাজ আপনি রুটিন পরিবর্তন করে দিনে করার চেষ্টা করতেই পারেন। আর একটা কথা, সময় থাক বা না থাক দিনে বিছানা পেতে আয়েশ করে কখনই ঘুম নয়।
বেশিরভাগ মানুষ বলে নানান চিন্তা, কি করে ঘুম আসবে? এই কথাটাই ঠিক না। তিনটে জিনিস কাওকে জোর করতে হয় না বা জোর করবেন না। প্রত্যেকে নিজের তাগিদে এবং ভাল থাকার প্রয়াসে সেই তিনটে কাজ করে অথবা করতে পারে।
খাওয়া, ঘুমানো, আর মলত্যাগ। খাও খাও, ঘুমাও ঘুমাও, যাও যাও। বলার কোন দরকার নেই। এগুলো কেউ আটকে রাখতে পারবে না। প্রথমেই বলেছি মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খায়। ফলে খাওয়ার ব্যাপারে জোর করা মানেই বিড়ম্বনা। শরীরকে খাটাবেন তবেই ঘুম আসবে। শরীরকে বিশ্রাম আর আয়েশের মধ্যে রাখলে ঘুম আসবে না। অনেকেই দুপুরে একটু গড়িয়ে নেন। আর রাতে জেগে থাকেন। একটা নির্দিষ্ট রিদমে শুধু রাতে নির্দিষ্ট সময়ে রোজ ঘুমোতে গেলে ঘুম আসবেই। ফলে জোর করার দরকার নেই। আর ঠিক একই রকম ভাবে সকালের প্রাতঃকৃত্য পাক না পাক রোজ করবেন। রিদমে তা ফলপ্রসূ।
অনেকেই তা করে না বলে পায়খানা পেলে যাব। কিন্তু কখনই বলে না খিদে পেলে খাব। খাওয়ার কিন্তু নিয়মিত তিন চার বার খেয়ে যায়, সে খিদে পাক অথবা না পাক। তাহলে মাত্র একবার সকালের প্রাতঃকৃত্য তাতে পেলে যাব কেন? সবারই পাক বা না পাক সকালের প্রাতঃকৃত্যে যাওয়া উচিত।
৬। সবার সব কিছুই খাওয়া যায়। খাওয়াতে খুব একটা বারণ নেই। কিন্তু অবশ্যই পরিমিত। চল্লিশ পেরিয়ে গেলে আপনি গ্রহণীয় খাবার হজম হয়তো করতে পারবেন কিন্তু খরচ করতে পারবেন না। এই খরচ করার মত প্রয়োজনীয় সামর্থ্য কিন্তু আপনার কমতে থাকবে। তাই গ্রহণও কমিয়ে দেওয়া উচিত। এবং কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে খাওয়া উচিত। যেমন ফার্স্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংস পুরোটাই জমার খাতায়। সব বয়সের ক্ষেত্রে এইসব যতটা খাবেন পুরোটাই জমা। খরচ নাই। কম বয়সে যদিও বা কিছু খরচ করা যায় পরে আর তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
৭। সবাই প্রায় নেশা করে। এই নেশা পরিমিত হোক বা অপরিমিত সবটাই কিন্তু বিড়ম্বনার। চল্লিশের পরে এই ইনটেক নেশা সবটাই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে যায়। এই বিড়ম্বনার আবার দুটো দিক। এক আপনার শারীরিক বিড়ম্বনা আর দুই আপনার পারিবারিক বিড়ম্বনা। অনেক সময় এর ফলে আপনি দিব্যি হাসপাতালে বেডে শুয়ে থাকলেন আর দৌড়াদৌড়ি করে বাড়ির লোক। সঙ্গে গুচ্ছের টাকা খরচ। হয়তো সবক্ষেত্রে নয় কিন্তু কিছুটা তো এর জন্য দায়ী। তার মানে আপনার কার্যকারিতা অন্যের ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে। নেশা থেকে বেরিয়ে আসার দুটো রাস্তা। এক এই নেশার মধ্যে না ঢোকা। দুই নিজেকে ভাবা ও পরিবারকে ভাবা। 'বেশ করেছি নিজের পয়সায় নেশা করেছি' এ রকম বলার দিন শেষ। কিন্তু কষ্ট এবং পয়সা আর নিজের থাকছে না। সাথে পরিবার থাকছে।
৮। আমাদের শরীর হল ব্যাধির মন্দির। অর্থাৎ শরীর থাকলে রোগ থাকবেই। কোন রোগ হলে আমরা ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তারের পরামর্শ মত চলি। আমাদের সবার ভাবা উচিত রোগ যেমন সারানোর চেষ্টা করব তেমনি রোগ যাতে না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত। অর্থাৎ রোগ যে রাস্তা দিয়ে আসতে পারে সেই রাস্তা বন্ধ করা উচিত কিংবা বন্ধ রাখা উচিত। হঠাৎ করে কোনকিছুই আসে না। প্রত্যেকটা অবস্থানে কিছু না কিছু প্রেক্ষাপট থাকে।
সবাই মনে করে অল্পেতে কিছু হবে না। মাঝে মধ্যে দু একটা সিগারেট খেলে কিছু হবে না। দু একটা মিষ্টি খেলে সুগার খুব একটা বাড়ে না। দু এক পেগ মদ সবারই নাকি খাওয়া উচিত। যতই প্রেশার থাক একটু আধটু লবণ খাওয়া যেতেই পারে। যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে গলা ভিজিয়ে নিতে চায়ের জুড়ি নেই। অথচ এই একটু একটু কখন অনেক হয়ে যায় সে খেয়াল কেউ রাখে না।
অর্থাৎ আপনার মন শরীরকে বশে রাখতে পারল না। মতি নন্দী 'কোনি' তে বলেছেন "জোর বলতে শুধু গায়ের জোরই বোঝায় না। মনের জোরেই সব হয়। ইচ্ছাশক্তি দিয়ে শরীরের দুর্বলতা ঢাকা দেওয়া যায়। শরীর যতটা করতে পারে ভাবে, তার থেকেও শরীরকে দিয়ে বেশি করাতে পারে ইচ্ছার জোরে। সেজন্য শুধু শরীর গড়লেই হয় না, মনকেও গড়তে হয়। শরীরকে হুকুম দিয়ে মন কাজ করাবে। আপনার মন হুকুম করতে জানে না তাই শরীর পারল না।"
অনেককেই জিজ্ঞেস করে দেখেছি, সারাদিন আমি প্রায় কিছুই খাই না। তাও সুগার বাড়ছে। কি যে করি।
আসলে তিনি একবারে বসে কম খান ঠিকই কিন্তু সারাদিন এটা ওটা করে মুখ চলতেই থাকে। তাতে দেখা যায় একবারে বসে খেলেই কম খাওয়া হত।
আবার সকালে একটু হেঁটে এসে বলে, কত আর পরিশ্রম করব তারপর আবার বিশ্রামে। তাতে দেখা যায় তিনি শুয়ে বসে কাটান অথচ বলেন আমি তো রোজ সকালে হাঁটতে যাই। আদপে লাভ হচ্ছে কি?
আমার এক পরিচিত সারাদিন পরিবারের কাওকে বিছানায় ঘেঁষতে দিতেন না। বিছানা শুধু রাতে শোয়ার জন্য। তখন অত্যাচার মনে হত এখন বয়স বাড়ার সাথে বুঝেছি কে কার ভাল চায়?
৯। দাঁত হল সবার প্রিয় ও প্রয়োজনীয়। অথচ আমরা দাঁতের চেয়ে চুলের যত্ন নিই বেশি। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে শোয়ার সময় সবার ব্রাশ করা উচিত। রাতে ব্রাশ করার পর জল ছাড়া আর কিছু খাওয়া উচিত নয়। আর প্রতিবার কোন কিছু খাওয়ার পর ( একটা বিস্কুট খাওয়ার পরও) অবশ্যই খুব ভাল করে কুলকুচি করা উচিত। তাহলে দাঁতের রোগ যেমন কম হবে তেমনি বার বার দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার পড়বে না। শুধু দাঁতের ডাক্তার নয় অন্য রোগও কম হবে।
কেন না আমাদের দেহে যা কিছু ইনটেক হয় তার বেশির ভাগ হয় এই মুখ দিয়ে। মুখ যদি পরিষ্কার রাখা যায় তাহলে খাওয়ার জমে পচে দাঁতের গোড়া ও লালাগ্রন্থির ক্ষতি করতে পারবে না।
১০। যে কোন খাবারের এক গ্রাস মোটামুটি ৩০ সেকেন্ড চিবানো উচিত। ছোট ছোট গ্রাসে চিবিয়ে খেলে খাবার লালার সঙ্গে মিশে খাওয়ারের পরিপূর্ণ তৃপ্তি আপনি উপভোগ করতে পারবেন। কেন না কোন খাবার পেটে চলে গেলে তার তৃপ্তি আপনি পাবেন না। তাই যত বেশি চিবোবেন তত তার তৃপ্তি উপভোগ করবেন।
তেমনি সেই সেই খাবার লালার সাথে মিশে কিছুটা পরিপাক হয়ে যাবে এবং প্রতি গ্রাসে এই পরিপূর্ণ তৃপ্তির ফলে আপনার তৃপ্তির জন্য, লোভের জন্য অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছেও চলে যাবে। যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই খাবেন।
আমরা অনেকেই কোন ভাল খাবার পেলে গপাগপ করে গোগ্রাসে খেয়ে ফেলি। ফলে অতিরিক্তই খাওয়া হয়ে যায়। তা হয়তো হজম করা যায় কিন্তু তার পুরোটাই শুধু দেহে জমা হয়। কাজে লাগে না। কিংবা কাজে লাগাতে পারি না।
আপনি বলেন, আহ! দারুণ তৃপ্তি করে খেলাম। আসলে আপনি তৃপ্তি করে নয়, বেশি করে খেলেন। তৃপ্তি মুখে, পেটে নয়। অথচ সেই মুখকে পরিপূর্ণ বুঝতে না দিয়ে 'ঘ্রাণেন অর্ধ ভোজনম' কে 'পেটায় নম' করলেন। পেট বয়ে বেড়াল অতিরিক্ত বোঝা।
১১। কোন মতে লং টাইম পেট খালি রাখবেন না। সময় সুযোগ না হলেও হাতের কাছে রাখবেন বিস্কুট ও ছোটখাটো শুকনো খাবার (আগেই বলেছি)। একটা দুটো খেয়ে জল খেলে নিলেই হবে।
বেশির ভাগ মানুষ অ্যাসিডজনিত রোগে ভোগে। এর মূল কারণ নিয়মিত সময় করে না খাওয়া। সারাদিনে যখন সময় হবে কিংবা খিদে পেলে কিংবা খেলেই হল এইভাবে খাওয়া দাওয়া করলে অ্যাসিড সমস্যা মিটবেই না। প্রথমত বাইরের খাওয়ার খাওয়া নিষেধ। যদি একান্তই খেতে হয় তাহলে তা অবশ্যই নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত।
আমাদের সারাদিনে তিনবার বা চারবার খাওয়া উচিত। ভারী এবং হাল্কা যাই হোক। সকাল দশটা দুপুর দুটো রাত দশটা। এর বাইরে চা সকাল ৭টা ও বিকেল ৭টা। ইত্যাদি। এটা একটা সময়সারণী। আমার জন্য। আর আপনার জন্য যে সময় সারণী তা আপনি ঠিক করে নিন। সেইমত খাবেন। প্রতিদিন। অবশ্যই খাবেন। একঘণ্টা আধঘণ্টা এদিক ওদিক হতে পারে। তাতে কোন সমস্যা হবে না।
কেন না, পেটে যাওয়া খাবার হজম করার জন্য যে এনজাইম পিত্তরস অ্যাসিড লাগে তা কেউ নিঃসরণ করায় না। রিদম অনুযায়ী আপনার অভ্যাসে তা নিঃসরণ হয়। আজ ন'টায় খেলেন সে নিঃসরণ হল। খাদ্য হজম করল। কাল খেলেন না সে নিঃসৃত হল কিন্তু কোন খাবার পেল না। তাহলে সে কি করবে? আপনার পাকস্থলী অন্ত্রকে হজম করবে অথবা নিজেই অ্যাসিডিক অবস্থান তৈরি করবে।
আপনি ওষুধ খেয়ে কিছুটা চাপা দিলেন কিন্তু রেহাই পাবেন না। আপনার খাওয়ার বেনিয়মে উল্টোপাল্টা সময় সারণীতে আপনি অ্যাসিড জনিত রোগ থেকে রেহাই পাবেন না। তাহলে আজই শুরু করুন সময়ে খাওয়া দাওয়া। রোজ।
১২। রোজ সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠাটাই একটা ব্যায়াম। ঘুম থেকে ওঠা মানেই শরীর নাড়াচাড়া শুরু। সূর্য পৃথিবী চন্দ্র গ্রহ নক্ষত্র এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড যে রিদমে ঘুরছে আমাদের মত ক্ষুদ্র প্রাণীদেরও সেই রিদমে তাল মিলিয়ে চলা উচিত। তাই দিনের বেলায় যেমন কাজকর্ম করার জন্য প্রশস্ত, রাতের ঘুম তেমনি জাগতিক জীবন যাত্রা।
কাজের জন্য যত রাতই হোক সকাল হয়ে যাওয়াও আপনার জীবনে আসা দরকার। ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজতে মাজতে বা একটু বাইরের দিকে তাকাতে তাকাতে পায়চারি করুন দেখবেন মনের সমস্ত ক্লেদ শরীরের সব ক্লান্তি দূর হবে যাবে।
তার পরেই পেট খালি না রেখে দু চার দানা মুখে দিয়ে কাজে লেগে পড়ুন দেখবেন আপনার শরীর বলে দেবে আপনার কি করা উচিত? পরের দিন কখন শোয়া উচিত আর কখন ঘুম থেকে ওঠা উচিত। শরীরকে কাজে না লাগিয়ে যদি বসিয়ে রাখেন তখন সে কিছু বলবে না। কারো রিদমে বা কারো মন মর্জিতে সে চলবে না। এমন কি তার নিজেরও মর্জি থাকবে না। শরীর তখন ব্যাধির মন্দির হয়ে দাঁড়াবে।
শরীর এমন তাকে যা দেবেন সে তাই সইবে তবে সাথে আরও অনেক কিছুকে ডেকে আনবে। বেশি খেতে থাকুন শরীর খেয়ে নেবে। বেশি ঘুমোতে থাকুন শরীর আলসেমিতে ঘুমিয়ে থাকবে। বেশি খাটাতে থাকুন শরীর চাঙা হয়ে খাটতে থাকবে। সাথে তার নিজস্ব বিশ্রামও খুঁজে নেবে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।