গোপলার কথা - ৩৭
প্রেমের পঙক্তিকরণ
----------------
প্রেম নিয়ে দু চার পঙক্তি। প্রেম কি আসে? নাকি প্রেম করতে হয়? নাকি প্রেম হয়ে যায়?
এর পরের প্রশ্ন প্রেম করার, প্রেম হওয়ার বা প্রেম আসার বয়স কত হওয়া উচিত? কিংবা প্রেম করার জন্য বা প্রেমের জন্য বয়সের মাপকাঠি ঠিক কি? অর্থাৎ যারা ম্যাচিওর পঁচিশ তিরিশ বছরের পরে বা নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে যাদের প্রেম আসে বা প্রেম হয় তাদের বেলায় এক রকম। আবার যাদের বয়স তার নীচে তাদের প্রেম আসা বা হওয়া কতটা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সামাজিকতা বহন করে?
এর পরে মনে প্রেম আসা, প্রেমে পড়া বা প্রেম করা কি সত্যিই আকস্মিক? ওই যেমন সিনেমায় দেখায় ও এলেই গরমেও মধুর বাতাস বয়, ভিড় বাসে মনে হয় আকাশে উড়ছি, রাতে পছন্দের খাবার না পেলেও অমৃত মনে হয় - এ সব কি সত্যিই হয়? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথা বলে।
কি কথা? এসব আদ্য প্রান্ত সত্যিই মনে হয় তখন যখন সেক্সচুয়েল টান অবধারিত হয়ে যায়। অর্থাৎ স্পর্শ সাপেক্ষ দুই দেহের সংযোগ। অল্প সংযোগ পূর্ণ মিলনের অদম্য আগ্রহে উপরের সমস্ত অবস্থানের জন্য মন ছটপট করে। তার ফলে বয়স পঁচিশের নিচে যে সব অবধারিত অবস্থান প্রয়োজন হয় তা আর সম্পন্ন হয়ে ওঠে না।
যেমন ক্যারিয়ার তৈরির জন্য পড়াশুনা, নিজের মেধার শ্রীবৃদ্ধি ঘটানোর প্রয়াস সবই জলাঞ্জলি যায়। মনের মধ্যে সেই সব অনাগত আদিম গুঞ্জরিত হতে থাকে।
এর সাথে আছে টিন এজ সমস্যা। যৌবন প্রারম্ভে হরমোন্যাল মানসিকতা উদ্দাম ছোটাছুটি করে। তার পুরোটাই কিন্তু বিপরীত অথবা দুই দেহের সংযোগ হওয়ার আপ্রাণ আগ্রাসী ভাবনা। প্রেমের জ্যোতি তার মধ্যে বিন্দুমাত্র থাকে বলে মনে হয় না। এই সংযোগ যদি সময় সুযোগে আরো গাঢ়তর হয় তখন প্রেমের অবস্থানের সূচনা হয়। ততক্ষণে অবশ্য অনেকের মানুষ হিসেবে জীবনের রঙ্গমঞ্চে পরিচিতি হারিয়ে যায়। তখন শুধু প্রেম করে চোখে সর্ষে ফুল দেখা। গড্ডলিকা প্রবাহে শুধু বয়ে যাওয়া। যদিও বা কিছু করার বাসনা গড়ে ওঠে তা অনেক পরে নিজস্ব বোধ বুদ্ধি অবস্থানের পর্যায়ক্রমে।
অর্থাৎ পরিণত বোধের পরেই যে দুই দেহের মধ্যে মনের আদান প্রদান গড়ে ওঠে তাকেই প্রেম বলা যেতে পারে। রাধাকৃষ্ণ হীররাঞ্ঝা সেলিমআনারকলি এসবই সেই সব জীবনের ফসল চিত্রকলা। রাধাকৃষ্ণ তো জন্মসূত্রেই বোধ সম্পন্ন। তাছাড়া তখন জীবনের বোধ সাপেক্ষ এতটা পুঁথি নির্ভর ও জ্ঞান সঞ্চয় অবস্থানে অবস্থিত ছিল না। তাই সেইসব প্রেম তুলনা এখন অনেকটাই ফিকে।
আমাদের আশেপাশে শুধুমাত্র প্রেম চিন্তাভাবনায় কত যে বোধহীন হয়ে হারিয়ে গেছে, হারিয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। নারী পুরুষ বা দুই দেহের মন নাড়াচাড়ায় প্রেমের যে পূর্ণতা তা আকাশ অসীম অনন্তের ভাব প্রয়াস। সময় সুযোগ অবস্থান সংযোগ এবং তার অবস্থানিক বোধ পরিচালনায় প্রেমের উন্মুখ চিত্র। সিনেমার মত হুট করে ধাক্কা লাগল আর প্রেম হয়ে গেল - তা কখনই বাস্তবে হয় না।
সদ্য যৌবনের পা শুধুই ছলাকলায় ডুবে যাওয়া নাবিকের কথামালা। পাড়ে পৌঁছতে পারে অথবা হারিয়ে যেতে পারে। বোধ পরিপূর্ণ এ রকম অনেক আছে যারা প্রেম করেছেন কি না জানি না তবে একটা ধরেছেন ছেড়েছেন আবার ধরেছেন আবার ছেড়েছেন এবং আবার তাও তারা প্রতিষ্ঠিত জীবনে ও মননে। সে নারী অথবা পুরুষ, যে কেউ।
কেউ বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলতে পারবে যে স্কুল লাইফে (টিন এজ) চুটিয়ে প্রেম করেও স্কলার ফেলোসিভ বা সর্বোচ্চ হতে পেরেছেন? তাই সর্তক বাবা মা এই সময়ের প্রেম ভাবনা রোধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। যাকে অনেকেই বলে নিষ্ঠুর নির্দয় বাবা মা।
তাহলে এই স্থিতি সীমান্তে প্রেমের ভূমি রাজ্য কি? বোধ পূর্ণতা পর্যন্ত অনেকেই নিজেকে আয়ত্বে রাখতে পারে না। অন্য এক দেহের খোঁজে হন্যে হয়ে ফেরে। এই খোঁজার মাঝে যদি সদ্য যৌবন তা পেয়ে যায় তাহলে সোনায় সোহাগা। তবে তা বিপরীতমুখী। জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার অনুকুল।
তাই জীবন সম্পর্কে বোধ জন্মানোর সময় দিতে হবে। টিন এজকে সামলে রেখে প্রেমের অপরূপ মর্যাদা দিতে হবে।
ভাবনার বিষয় তাহলে শুধু প্রেম কি দেয়? আর কি পায়? জৈবিক চাহিদার অজৈবিক পার্থিব অবস্থানে?
ধরুন আমার সঙ্গে তোমার প্রেম। মানে কি? যদি ধরে নিই মনের মিল, ভাবের সংযোগ তাহলে বিয়ে করার দরকার কি? গোপনে বা প্রকাশ্যে দেহের সঙ্গে দেহের, হাতে হাত রাখার দরকার কি?
দরকার। কেন না জড়িত আছে সেক্স। সেক্স বাদ দিয়ে টান থাকে না। প্রেম হয় না। এ সম্পর্কে শরৎচন্দ্র 'চরিত্রহীন' এ আরো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নারী বা পুরুষ যতক্ষণ উৎপাদনক্ষম ততক্ষণ তার প্রতি আকর্ষণ বিপরীত দেহের থাকে। তা না এলে ( যেমন শিশুকাল) কিংবা হারিয়ে গেলে ( যেমন বয়স্ক) তা আর প্রেমের জন্য নয়। অর্থাৎ প্রেমের জন্য সেক্স সংক্রান্ত আর্কষণ জরুরী।
তাই সেক্সের অবস্থানে প্রেম এগিয়ে চলে অথবা প্রেমের অবস্থান দেখিয়ে সেক্স সংগঠিত হয়। দুটো ক্ষেত্রেই সেক্স সম্বল। দেখবেন প্রেম বাদ দিয়ে সেক্স হরদম চলে ( যেমন বেশ্যালয়) কিন্তু সেক্স বাদ দিয়ে প্রেমের কোন উদাহরণ নেই। যদিও থাকে তা যৎসামান্য।
তার মানে কি? সে এলে মনে বসন্ত আসে অর্থাৎ তার যৌন অবস্থানে আমি যৌন উৎফল্লিত হই। আমার মন যা চায় তার চেয়েও বেশি কিছু পাওয়া পেয়ে আনন্দে নেচে ওঠে।
তার মানে কি? প্রেম নেই। আছে। অবশ্যই আছে। যদি তাতে দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ ( যেমন বিয়ে করার পর), মমত্ববোধ, স্নেহ ( ছেলেমেয়ে হয়ে যাওয়ার পর) ইত্যাদি মিশে যায়। আপনি সেই অবস্থানে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়বেন। এই বোধ থেকে আপনি বেরিয়ে আসতে পারবেন না। এবং প্রেমের ফুলে পরাগ ছড়িয়ে দিগন্ত হয়ে যাবেন।
এখানে প্রশ্ন আসে। মনের মিল হল না, চিনি না, জানি না তাকে কি বিয়ে করা যায়? আর বিয়ে করলেও সংসার করা যায়? এ রকম ক্ষেত্রে দেখবেন না চেনা না জানা যার সাথে বিয়ের কথা চলছে তাকে বাদ দিয়ে অন্য জায়গায় তার ঘুঁটি (সেক্স সম্পর্কিত) বাঁধা আছে। তাই এমন বক্তব্য আসে। না হলে চেনা জানা মিল মেলানোর জন্যই তো বিয়ের মত সামাজিক বন্ধন। তারপর হনিমুন ইত্যাদি অবস্থান। তাতেই প্রেম মুক্তির অবস্থান। চিনুন জানুন। এর সঙ্গে যদি আপনি ( যদি সে অত্যাচারি না হয়) মানিয়ে নিতে না পারেন তা হলে অন্য কারও সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন তার নিশ্চয়তা কোথায়?
সে কিছু অভ্যাস ছেড়ে দেবে আপনি কিছু অভ্যাস ছেড়ে দেবেন। সে কিছু ব্যবহার শিখে যাবে মেনে নেবে আপনি কিছু সংস্কার শিখে যাবেন মেনে নেবেন। তবেই তো গড়ে উঠবে দেশ দশ সংসার। আগামী।
তাছাড়া পার্কে মলে বাসে রাস্তার মেলামেশায় দুজনে চাইবে দুজনের মন রাখার মত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে। মন ভোলানো সব রকমের চেষ্টা করবে। কোন মানুষের প্রকৃত চরিত্র জানতে হলে তার সঙ্গে পুরোপুরি মিশতে হয় দেহে মনে এবং দায়িত্ববোধ কর্তব্যবোধের সম্পর্ক তৈরি করে। দেখবেন একটি ফ্যামিলির সাথে মিশবেন কথা বলবেন প্রায়ই যাতায়াত করবেন কিন্তু সেই ফ্যামিলির কিছু ব্যক্তিগত আপনি কিছুতেই জানতে পারবেন না। শুধু সেই ফ্যামিলির সদস্যরা বা ঘনিষ্ট আত্মীয়রা জানে। তাই মেয়েটিকে জানার জন্য, ছেলেটিকে বোঝার জন্য এবং প্রেমের জন্য চেনা জানা ও পরিচিতির জন্য বিয়ের মত দায়িত্বশীল সম্পর্ক জরুরী।
আবার লক্ষ্য করবেন যার এ রকম ঘুঁটি (সেক্স সম্পর্কিত এবং রূপান্তরিত) বাঁধা স্বভাব সেই প্রেমিকবর কিন্তু কখনওই একে সন্তুষ্ট নয়। যেহেতু তিনি প্রেমের পূজারী তাই গিরগিটির মত রঙ বদল তার ধর্ম(সেক্সে এক্সপার্ট)। প্রেমের বদলও চাই। অর্থাৎ সেক্সের বদল। আজ যাকে চিনে জেনে বুঝে বিয়ে করল কালকে তাকে নির্দ্ধিধায় ছেড়েও দিল (সেক্সের অন্য বেষ্ট সুযোগে)। কোন কষ্ট নেই তার। এই স্বভাব কিন্তু সবার মধ্যে দেখা যায় না। আপনি পারবেন এসব করতে? পারবে কেবল প্রেমিকবর। মন ভোলানো কথা, মেয়ে দেখলেই মিষ্টি মিষ্টি বুলি তারাই পারে যারা একেবারে টিন এজ থেকে বেশ এক্সপার্ট। এই টিন এজে যদি কাওকে আটকে দেওয়া যায় তাহলে তার বোধ ভাবনার পরে সে আর এ রকম করতে পারবে না। তাই যে করেই হোক এই সময়টাতে প্রেম প্রেম আটকানো দরকার।
প্রেমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল বিট্রে করা। সেক্সের টানে কিছুদিন মেলামেশা করল তারপর তার চেয়ে আরও ভাল বেশী লোভনীয় পেলব পেয়ে সেদিকে ঝুঁকে পড়ল। টিন এজের সময় যা খুব বেশি দেখা যায়। আর একটা ব্যাপার আছে সেক্স যেহেতু দেহ সংক্রান্ত তাই মেলামেশার সুযোগটা যদি একটা নির্দিষ্ট বাঁধন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে প্রেমের একটা টান থেকে যেতেও পারে। কিন্তু যদি দেহ অনেকটাই বিপরীতের কাছে উন্মোচিত হয়ে যায় তাহলে নেশার ঝোঁক আরো পেলবের দিকে হাত বাড়াতে বাধ্য।
কেন না সেক্সের নব যৌবন হাতের কাছে যাকে পায় তাকে সে সেরা সুন্দরী কিংবা সেরা সুপুরুষ মনে করে। তার সঙ্গে প্রেমের নেশায় মজে যায়। আমরা সেজন্য অনেকেই এ রকম দেখে বলি - বলিহারি রুচি। এ রকম একটা পেত্নীর মত মেয়েকে ভালো লেগে গেল কি করে? কিংবা বাপরে, টেরা ব্যাঁকা ছেলেরাও তাহলে মেয়েদের পছন্দ।
আসলে তা না। প্রেম নয় শুধু সেক্স। সেক্সের টানে। এ রকম এক ছেলে পড়াশুনা করতে করতে পঁচিশ পেরিয়ে চাকরীতে। ঘুরে দেখেনি সেক্স। তারপর তার এক সহকর্মী সেই অবস্থান বুঝে সেক্স উন্মুক্ত করে দেয়। সেই পঁচিশ সেই সহকর্মীকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। আমরা ভেবেছিলাম এই মেয়ের যা রূপ কে বিয়ে করবে? আর সেইই জুটিয়ে নিল সুপুরুষ। সার্ভিসওয়ালা। আসলে সেক্স। এখন সে প্রেমিকও বটে। জড়িয়ে দায়িত্বে কর্তব্যে।
এই সম্পর্কে সুনীল গঙোপাধ্যায়ের কিছু উপন্যাস ও গল্প আছে। যেমন এক প্রেমিক একজনের সাথে প্রেম করে। কিন্তু সে কিছুতেই নিজেকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে না। ফলে প্রেমিকবর ধীরে ধীরে আরো অন্য অনেক মেয়ে পটিয়ে উন্মুক্ত করেই ছাড়ে। কিন্তু তৃষ্ণা আর মেটে না। একদিন আবার সেই প্রেমিকার কাছে আসে। সেও নাছোড়বান্দা। প্রেমিক বলে - তোমার মধ্যে এমন কি আছে যার জন্য তোমাকে আমি ভুলতে পারছি না। প্রেমিকা বলে -আমার এটুকুই সান্ত্বনা যে তুমি আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য। নিজেকে উন্মুক্ত করে আমি তা হারাতে চাই না।
এসব ক্ষেত্রে আমাদের সামাজিক বন্ধন অনুসারে মেয়েরাই বেশি বিপদে পড়ে। বিশ্বাসের সাগরে ডুব দেয় কিন্তু আর প্রেমের গোলকধাঁধা সাগরের জলের বাইরে বেরোতে পারে না। নোনা আর নোনা। কেন না মেয়েদের কাছে এর প্রমাণ থেকে যায়। যা তাদের বিপদে পড়ার কারণ।
আবার বিয়ে ভেঙে যাওয়া মূল কারণ কি শুধুই প্রেমহীনতা? না। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিয়ে ভাঙার মূল কারণ সেক্স। স্বামী বা স্ত্রী উভয়ের এই সেক্স ব্যাপারটাকে নিয়মিত ভাবা দরকার। তাহলে ডিভোর্স অনেকটাই রোধ করা যায়। অনেক সময় একটা দুটো ছেলে হওয়ার পর স্ত্রী অপত্য স্নেহে জড়িয়ে পড়ে। সেক্সের ব্যাপারে স্বামীকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। ভাবেই না। কিংবা ভাবে আমাকেই তো ভালোবাসে। কোথায় আর যাবে? সুযোগ বুঝে, সময় করে সেক্সের জন্য এগিয়ে আসে না। স্বামী বেচারা সেক্সে আরো বেশি অভিজ্ঞ। কিন্তু পাচ্ছে না। দায়িত্ব কর্ত্যবের জালে বলতেও পারছে না। ফলে এই একটু একটু না পাওয়ায় দূরে সরতে থাকে প্রেম। এই সময় যদি সেক্সের জন্য স্বামী অন্য কাওকে পেয়ে যায় তো সোনায় সোহাগা। না পেলেও একটু একটু তিতি বিরক্ত শুরু হয়। তার থেকে সেক্স মেটানোর রাস্তা সে প্রস্তুত করতে থাকে। তারপর তা বিরাট আকার ধারণ করে। এবং সেটাই বিচ্ছেদের আকার ধারণ করে।
আবার স্বামী যদি অন্য কোন কাজে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে একা ঘরে বিরহিনী স্ত্রী। তার প্রতি কোন নজর নেই। কেরিয়ার গড়ার জন্য দিনরাত দূরে আর দূরে। কিংবা অন্য কোন সেক্স অবলম্বনে জড়িয়ে তাহলেও এই অল্প অল্প সরে যাওয়া বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আবার যতক্ষণ না অন্য কোন জায়গায় সেক্সের খুঁটি পোতা হচ্ছে ততক্ষণ কিন্তু বিচ্ছেদ হয় না। হবে না। সে ছেলে হোক বা মেয়ে। যে প্রথমে বিচ্ছেদের কথা তুলবে আপনি তদন্ত করে দেখবেন সেক্সের জন্য তার অন্য জায়গায় খুঁটি পোতা হয়ে গেছে। তাই অন্য জায়গায় যাতে সেক্স সম্পর্কিত খুঁটি পোতা না হয় সেদিকে স্বামী স্ত্রী দুজনকেই নজর দিতে হবে। সময় সুযোগে সেক্সের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সেক্সই প্রেম। প্রেমের রূপ।
একটা সময় আসে যখন কেউ কাওকে আর সেই একটু একটু অল্প অল্প সরে আসার ব্যাখ্যায় জাগিয়ে তুলতে পারে না। তখন বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
আবার মনে রাখবেন, কারো ক্ষেত্রেই এই সেক্স বসে থাকে না। দেহের চাহিদা সে মেটাবেই। যে করেই হোক। এখন যা সমাজচিত্র তাতে এর অভাব হবেই না। অবশ্য ছেলেদের ক্ষেত্রে এই উদ্দামভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। সারা জীবন সেক্সবিহীন অনেক নারী পেলেও পেতে পারেন। কিন্তু ব্যাঁকা টেরা কালো কুঁজো ভাল মন্দ অফিসার খুনি বুদ্ধিজীবী বদজীবী এমন কোন পুরুষ পাবেন না যে বিনা সেক্সে সারা জীবন কাটিয়ে দিয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এটা হতেই পারে না।
তাই আপনি স্বামী স্ত্রী। সেক্সের বিষয়টি আপনি নিয়মিত নজর রাখুন। প্রায়োরিটি দিন। প্রথম যৌবনের রাখঢাক ছেড়ে উন্মুক্ত হয়ে পড়ুন। সুযোগের সময়ের সদ্ব্যবহার করুন। প্রেম আছে কি নেই ওসব পরে। আগে বোধ জীবনে সেক্স গড়ে তুলুন। সময় সুযোগের পূর্ণ মর্যাদায় সেক্সের সাথে জড়িয়ে পড়ুন। হয়ে পড়ুন লাস্যময়ী। মন ভোলানো রূপ সোহাগী। রোমাণ্টিকতার হাতে সেক্স সঁপে দিন। হোক না একটু নখরাবাজি। দেখবেন, সেক্সের হাত ধরে প্রেম আসবেই। এই রকম অবস্থায় অনেক প্রেম হৃদয়ে লালিত। অন্য কোথাও যদি আপনার সঙ্গীর সেক্স সম্পর্কিত খুঁটি বাঁধা থাকলেও তার থেকে সে সরে আসতে বাধ্য।
মন কষাকষি, আপনি যা পছন্দ করেন না ও করে, আপনার মন ও বুঝতে চায় না, আপনিও ওর মনের নাগাল পাচ্ছেন না ইত্যাদি পরে ভাববেন। একটু লাস্যময়ী হয়ে সেক্সে ব্যাপারটা মাপুন না। অন্য যার কাছে যায় তার কাছে মনের ব্যাপারে কি পায় কি পায় না সেসব না ভেবে সেক্সের ব্যাপারে আপনার চেয়ে কিছু বেশি পায় না পাবে না গ্যারিণ্টি দিয়ে বলা যেতে পারে।
প্রেমের ব্যাপারে সৌন্দর্যের ব্যাপারে মনের মতের বিনিময়ের জন্য সুন্দরতা লাগে সুন্দর নিয়ে ভাবনা আসে কিন্তু সেক্সের মূল পয়েণ্ট ভিউতে শুধু দেহের সাথে দেহ জেগে ওঠে সম্পর্পিত হতে যায়। স্বামী স্ত্রী যখন তখন এই ব্যাপারটাতে কোন বিধি নিষেধ বাধা বিপত্তি আসার কথা নয়। সামনে পেছনে উপরে নিচে কোনদিকে কিছু না ভেবে সেক্স অনুভূতিতে ঝাপটে ধরুন লেপ্টে থাকুন সঙ্গী পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা পাবে না। প্রেমে থাকতেই হবে। স্বামী স্ত্রী হিসেবে রূপে নয় গুনে নয় মনে নয় প্রাণে নয় যৌতুকে নয় শুধু সেক্সে ভাবুন অন্য সব কিছু হেঁটে হেটে দৌড়ে দৌড়ে চলে আসবে।
সেক্স মানে কিন্তু শুধু সঙ্গম নয়। খুঁনসুঁটিও ধরা যেতে পারে। একটু জড়িয়ে ধরা, ইছাকৃত অনিচ্ছুক স্পর্শ ইত্যাদি। আগেই বলেছি দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ ইত্যাদির সাথে জড়িয়ে যে প্রেম তার জন্য এইসব খুব জরুরী। যেমন বয়সকালে পুরুষ নারী এভাবেই তার প্রেম জিইয়ে রাখে। একে অপরে তাই একসাথে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে।
আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বামী বাইরে বেরনোর সময় ফিটফাট হয়ে বের হয়, স্ত্রী বেশ সেক্সি হয়ে বাইরে যায় কিন্তু কেউ কাওকে এই রকম অবস্থানে খুব একটা কাছাকাছি পায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্যকে এই সাজগোজ বাহার সেক্সি মুড দেখানোর জন্য স্ত্রী পুরুষ দুজনেই নিজেদেরকে প্রস্তুত করে। সবাই এইভাবে দেখানোর কথা ভাবলে ঐ স্বামী বা স্ত্রীও অন্যকে দেখে উত্তেজিত হচ্ছে। অর্থাৎ সেক্সের হাত প্রেমে পল্লবিত হচ্ছে অন্য পাতায়। স্বামী স্ত্রী সেই ফুলসজ্জার পরে পরে কয়েকটা দিন পেরিয়ে শুধু ঘরোয়াভাবে মিলিত হয়। তাই নিজেদের দেখানোর মত করে বাহারী সাজগোজ সেক্সি মুড থাকা বা দেখানো দরকার। তাহলেই প্রেমের ঠিকানা আরো মজ্বুত হবে।
নিজের সঙ্গীর জন্য সাজুন। বাহারি ড্রেস শুধু বাইরে জন্য নয়। ঘরে সঙ্গীর জন্য। সঙ্গী যেন বলে তোমাকে দারুণ লাগছে। দায়িত্ববোধের চাপে, ছোট বড় রাগ অভিমানে পেছন ফিরে শুয়ে নিজেদের দেহের সাথে দেহের উত্তাপ বিনিময় থেকে দূরে সরে যাবেন না। চেপে ধরুন জড়িয়ে ধরুন। প্রেম ঠিক তার জায়গা করে নেবে।
আবার সেক্সের ব্যাপারে অন্য এক রকম হিসেব। মানুষের জীবনে সেক্সের সময়কাল জীবনের ১৫/২০ বছর থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত (প্রায়)। তার পরে পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌবন থাকলেও ( তাও দায়বদ্ধ সংসারে জড়িয়ে পড়লে সে ভাবনা অতটা গুরুত্ব পায় না) নারীর ক্ষেত্রে প্রায়ই থাকে না। তার পরে পাশাপাশি দেহের সাথে দেহ, হাতে হাত লাগিয়ে থাকাটাই সেক্স অনুভূতি। যা মনের ও দেহের পরম পাওয়া।
তাহলে প্রায় সমস্ত মানুষের সেক্স জীবন মাত্র ৩০ বছর। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সেক্স সময়কাল জীবন শুরুর ১৫/২০ বছর। এই ১৫/২০ বছর যদি কারও উজ্জীবিতভাবে কেটে যায়। সেক্সের পাওয়া পরম উপলব্ধি করে তাহলে তার জীবনের বাকী ক'টা দিন আরো পরমে এগিয়ে যাবে। তা না হলে বিঘ্ন আসবে।
এই ১৫/২০ বছরের জীবনকে সযত্ন লালিত পালিত করতে জীবন শুরুর অবস্থানে টিন এজের নেশার ঝোঁক, প্রেম প্রেম খেলা বড়দেরকে দেখে রাখতে হবে। জীবন শুরু এই প্রাথমিক যতটা বড়দের ভাবনা অনুকরণে, সিনেমার মত টিন এজরা প্রেমে প্রেমে যত জড়িয়ে পড়বে ততই তাদের বাদবাকী জীবন অবান্তরে ছুটবে।
শুধু ১৫/২০ বছরের জন্য মনন বাদ দিয়ে সুন্দরের দিকে পেলব ভাবনার ঝোঁকে জীবনের পথ খোঁজা ভুল। জীবনের বাদবাকী ৬০/৭০/৮০ বছর বাঁচার জন্য যে মেধা মনন মনুষ্যত্ব প্রয়োজন সেসব ভুলে গেলে চলবে না? এই মেধা মনন মনুষ্যত্ব সংসার সচল রাখার জন্য, সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে উজ্জ্বল আগামী প্রতিষ্ঠার জন্য, এমন কি নিজের কাছে নিজের প্রেম প্রতিষ্ঠার জন্য এই মনন মেধা সম্বলিত প্রেম খুব প্রয়োজন। তাই সুন্দরী বা সুন্দর হলে তো ভালই, তার সাথে মেধা পর্যালোচনা জরুরী। মেধার প্রয়োরিটি আগে বিশেষ করে প্রেমের জন্য। প্রেমের পরশ সম্বলিত জীবনের জন্য।
তার আগে টিন এজের সময় কিংবা বিয়ে করব বলে প্রতিশ্রুতি কিংবা গভীর বিশ্বাস মর্যাদায় টিভ টুগেদারের জন্য প্রেমের নাম করে যে সেক্স সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা অবশ্যই ভাবার বিষয়। প্রথমত এতে কোন দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ থাকে না। শুধু একটা সম্পর্ক। এই সম্পর্ক হয়তো ঠিক, কেন না এখানে প্রেমের চেয়ে সেক্সের প্রায়োরিটি থাকে। যদিও প্রেমের নাম দিয়ে তা চলে।
এসব ক্ষেত্রে যত আপনি বেশি জড়িয়ে যাবেন, বাইকের পেছনে ঠেসে জড়িয়ে ধরবেন বা দেহ উন্মোচিত করবেন ততটাই পেছনে পিছিয়ে পড়বেন। প্রেম করবেন কিন্তু জীবন যৌবন উপভোগ থেকে জীবনকে দূরে সরিয়ে দেবেন তা তো হতে পারে না।
তাহলে প্রেমের জন্য জীবন না জীবনের জন্য প্রেম? ভাবার বিষয়।
এর পরে আছে বৈধ আর অবৈধ প্রেম। বৈধ অর্থাৎ সবার সামনে বুক ফুলিয়ে সমাজ সংসারকে সামনে রেখে। যেমন বিয়ে এই জাতীয় অবস্থান। আবার লুকিয়ে। কেউ যেন জানতে না পারে। সবাই গানটি জানে ' গোপন কথাটি রবে না গোপনে'। প্রকাশ্যে আসবেই আজ কাল কিংবা পরশু। কিন্তু তবু অনেকেই মনে করে কিছু হবে না চল, প্রেম ঘুরে আসি থুড়ি প্রেম করি। কেউ জানতে পারবে না।
যতদূর জানি প্রেমের এই প্রকার লুকানো ঝুকানো ধরা পড়েছেই। টিন এজ এই অবস্থান ঢুকে পড়ছে প্রেম রহস্যে। ফলে নিজস্ব কেরিয়ার বৃত্তিতে তারা নিজেদের হারিয়ে ফেলছে। বোধ না জন্মানো বড়দের মত হওয়ার প্রেম নেশায় কত যৌবন অকাল হয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই।
টিন এজ নতুন যৌবনের দূত। যৌবনের অদম্য ডাক এই সময়ে স্বাভাবিক। নিজের দেহ অন্য আর এক দেহের সাথে সেক্সের টানে প্রেম প্রেম খেলা খুঁজবেই। আবার একই সময়ে কঠোর অধ্যয়নের মাধ্যমে নিজের কেরিয়ার প্রতিষ্ঠা করার সময় এই টিন এজ। দুটো একসঙ্গে কখনই সম্ভব নয়। একবার যৌবনের অন্ধ উপবনে ঢুকে গেলে সে হারিয়ে যাবেই। কঠোর অধ্যয়ন হবেই না। শুধু চালিয়ে নেওয়া অধ্যয়ন হবে।
একটাই মন। তাকে নতুন যৌবনে দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারায় পরিচালিত করা যায় না। মনে রাখবেন সময়টা টিন এজ। এই টিন এজ পেরিয়ে গেলে অর্থাৎ কঠোর অধ্যয়নে সম্পূর্ণ ঢুকে গেলে সদ্য পাওয়া নতুন যৌবন দিশা খুঁজে পাবে। সেক্সের নেশার টানে প্রেমের মর্যাদা বুঝবে পারবে না, নিজের প্রায়োরিটি বুঝতে পারবে না।
টিন এজে সদ্য নবীন যৌবন প্রেমে না ভাসলেও চলবে কিন্তু কঠোর অধ্যয়ন থেকে দূরে সরে গেলে সমাজের সংসারের আগামীর ক্ষতি হয়ে যাবে। অর্থাৎ এই সেক্সের টান থেকে খুব যত্ন করে টিন এজ সামলানো খুব জরুরী।
তাহলে প্রেম কি দেয়? কি দিচ্ছে? প্রেমের পরাগে জীবনের কথা কতটা জীবনমুখী?
টিন এজের এই যে প্রেম একে রোধ করার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সবার। আমাদের বড়দের। পাশে থাকা, বুঝতে শেখা, বুঝিয়ে বলা ও নিয়মিত টিন এজের মত করে জীবনকে বুঝিয়ে দেওয়া। টিন এজ মেধা যা পড়াশুনার মাধ্যমেই কঠোর অধ্যয়নে বিকশিত হয়। তার সাথে সাথে সে মানবিক বোধ আহরণ করতে শেখে।
ঠিক সেই সময় প্রেমের নেশা যা পারিপার্শ্বিক অবস্থান ও বিনোদন থেকে দেখে সে শেখে এবং সদ্য তাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করে। ফলে মেধার অপচয় ঘটে যায়। তাকে রোধ করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রত্যেকের জীবনে সেক্স নেশার সাথে প্রেম প্রেম শুরু হোক ২০/২২ বছরের পর। সমৃদ্ধ বোধ ভাবনায় জারিত হয়ে। তার আগে পর্যন্ত আমাদের টিন এজকে সামলে রাখা খুব জরুরী।
বোধ পরিণত সে বয়সের মাপকাঠিতেই প্রেম জীবনের আনন্দম। অগ্রবর্তী।
----------------
প্রেম নিয়ে দু চার পঙক্তি। প্রেম কি আসে? নাকি প্রেম করতে হয়? নাকি প্রেম হয়ে যায়?
এর পরের প্রশ্ন প্রেম করার, প্রেম হওয়ার বা প্রেম আসার বয়স কত হওয়া উচিত? কিংবা প্রেম করার জন্য বা প্রেমের জন্য বয়সের মাপকাঠি ঠিক কি? অর্থাৎ যারা ম্যাচিওর পঁচিশ তিরিশ বছরের পরে বা নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে যাদের প্রেম আসে বা প্রেম হয় তাদের বেলায় এক রকম। আবার যাদের বয়স তার নীচে তাদের প্রেম আসা বা হওয়া কতটা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সামাজিকতা বহন করে?
এর পরে মনে প্রেম আসা, প্রেমে পড়া বা প্রেম করা কি সত্যিই আকস্মিক? ওই যেমন সিনেমায় দেখায় ও এলেই গরমেও মধুর বাতাস বয়, ভিড় বাসে মনে হয় আকাশে উড়ছি, রাতে পছন্দের খাবার না পেলেও অমৃত মনে হয় - এ সব কি সত্যিই হয়? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথা বলে।
কি কথা? এসব আদ্য প্রান্ত সত্যিই মনে হয় তখন যখন সেক্সচুয়েল টান অবধারিত হয়ে যায়। অর্থাৎ স্পর্শ সাপেক্ষ দুই দেহের সংযোগ। অল্প সংযোগ পূর্ণ মিলনের অদম্য আগ্রহে উপরের সমস্ত অবস্থানের জন্য মন ছটপট করে। তার ফলে বয়স পঁচিশের নিচে যে সব অবধারিত অবস্থান প্রয়োজন হয় তা আর সম্পন্ন হয়ে ওঠে না।
যেমন ক্যারিয়ার তৈরির জন্য পড়াশুনা, নিজের মেধার শ্রীবৃদ্ধি ঘটানোর প্রয়াস সবই জলাঞ্জলি যায়। মনের মধ্যে সেই সব অনাগত আদিম গুঞ্জরিত হতে থাকে।
এর সাথে আছে টিন এজ সমস্যা। যৌবন প্রারম্ভে হরমোন্যাল মানসিকতা উদ্দাম ছোটাছুটি করে। তার পুরোটাই কিন্তু বিপরীত অথবা দুই দেহের সংযোগ হওয়ার আপ্রাণ আগ্রাসী ভাবনা। প্রেমের জ্যোতি তার মধ্যে বিন্দুমাত্র থাকে বলে মনে হয় না। এই সংযোগ যদি সময় সুযোগে আরো গাঢ়তর হয় তখন প্রেমের অবস্থানের সূচনা হয়। ততক্ষণে অবশ্য অনেকের মানুষ হিসেবে জীবনের রঙ্গমঞ্চে পরিচিতি হারিয়ে যায়। তখন শুধু প্রেম করে চোখে সর্ষে ফুল দেখা। গড্ডলিকা প্রবাহে শুধু বয়ে যাওয়া। যদিও বা কিছু করার বাসনা গড়ে ওঠে তা অনেক পরে নিজস্ব বোধ বুদ্ধি অবস্থানের পর্যায়ক্রমে।
অর্থাৎ পরিণত বোধের পরেই যে দুই দেহের মধ্যে মনের আদান প্রদান গড়ে ওঠে তাকেই প্রেম বলা যেতে পারে। রাধাকৃষ্ণ হীররাঞ্ঝা সেলিমআনারকলি এসবই সেই সব জীবনের ফসল চিত্রকলা। রাধাকৃষ্ণ তো জন্মসূত্রেই বোধ সম্পন্ন। তাছাড়া তখন জীবনের বোধ সাপেক্ষ এতটা পুঁথি নির্ভর ও জ্ঞান সঞ্চয় অবস্থানে অবস্থিত ছিল না। তাই সেইসব প্রেম তুলনা এখন অনেকটাই ফিকে।
আমাদের আশেপাশে শুধুমাত্র প্রেম চিন্তাভাবনায় কত যে বোধহীন হয়ে হারিয়ে গেছে, হারিয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। নারী পুরুষ বা দুই দেহের মন নাড়াচাড়ায় প্রেমের যে পূর্ণতা তা আকাশ অসীম অনন্তের ভাব প্রয়াস। সময় সুযোগ অবস্থান সংযোগ এবং তার অবস্থানিক বোধ পরিচালনায় প্রেমের উন্মুখ চিত্র। সিনেমার মত হুট করে ধাক্কা লাগল আর প্রেম হয়ে গেল - তা কখনই বাস্তবে হয় না।
সদ্য যৌবনের পা শুধুই ছলাকলায় ডুবে যাওয়া নাবিকের কথামালা। পাড়ে পৌঁছতে পারে অথবা হারিয়ে যেতে পারে। বোধ পরিপূর্ণ এ রকম অনেক আছে যারা প্রেম করেছেন কি না জানি না তবে একটা ধরেছেন ছেড়েছেন আবার ধরেছেন আবার ছেড়েছেন এবং আবার তাও তারা প্রতিষ্ঠিত জীবনে ও মননে। সে নারী অথবা পুরুষ, যে কেউ।
কেউ বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলতে পারবে যে স্কুল লাইফে (টিন এজ) চুটিয়ে প্রেম করেও স্কলার ফেলোসিভ বা সর্বোচ্চ হতে পেরেছেন? তাই সর্তক বাবা মা এই সময়ের প্রেম ভাবনা রোধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। যাকে অনেকেই বলে নিষ্ঠুর নির্দয় বাবা মা।
তাহলে এই স্থিতি সীমান্তে প্রেমের ভূমি রাজ্য কি? বোধ পূর্ণতা পর্যন্ত অনেকেই নিজেকে আয়ত্বে রাখতে পারে না। অন্য এক দেহের খোঁজে হন্যে হয়ে ফেরে। এই খোঁজার মাঝে যদি সদ্য যৌবন তা পেয়ে যায় তাহলে সোনায় সোহাগা। তবে তা বিপরীতমুখী। জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার অনুকুল।
তাই জীবন সম্পর্কে বোধ জন্মানোর সময় দিতে হবে। টিন এজকে সামলে রেখে প্রেমের অপরূপ মর্যাদা দিতে হবে।
ভাবনার বিষয় তাহলে শুধু প্রেম কি দেয়? আর কি পায়? জৈবিক চাহিদার অজৈবিক পার্থিব অবস্থানে?
ধরুন আমার সঙ্গে তোমার প্রেম। মানে কি? যদি ধরে নিই মনের মিল, ভাবের সংযোগ তাহলে বিয়ে করার দরকার কি? গোপনে বা প্রকাশ্যে দেহের সঙ্গে দেহের, হাতে হাত রাখার দরকার কি?
দরকার। কেন না জড়িত আছে সেক্স। সেক্স বাদ দিয়ে টান থাকে না। প্রেম হয় না। এ সম্পর্কে শরৎচন্দ্র 'চরিত্রহীন' এ আরো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নারী বা পুরুষ যতক্ষণ উৎপাদনক্ষম ততক্ষণ তার প্রতি আকর্ষণ বিপরীত দেহের থাকে। তা না এলে ( যেমন শিশুকাল) কিংবা হারিয়ে গেলে ( যেমন বয়স্ক) তা আর প্রেমের জন্য নয়। অর্থাৎ প্রেমের জন্য সেক্স সংক্রান্ত আর্কষণ জরুরী।
তাই সেক্সের অবস্থানে প্রেম এগিয়ে চলে অথবা প্রেমের অবস্থান দেখিয়ে সেক্স সংগঠিত হয়। দুটো ক্ষেত্রেই সেক্স সম্বল। দেখবেন প্রেম বাদ দিয়ে সেক্স হরদম চলে ( যেমন বেশ্যালয়) কিন্তু সেক্স বাদ দিয়ে প্রেমের কোন উদাহরণ নেই। যদিও থাকে তা যৎসামান্য।
তার মানে কি? সে এলে মনে বসন্ত আসে অর্থাৎ তার যৌন অবস্থানে আমি যৌন উৎফল্লিত হই। আমার মন যা চায় তার চেয়েও বেশি কিছু পাওয়া পেয়ে আনন্দে নেচে ওঠে।
তার মানে কি? প্রেম নেই। আছে। অবশ্যই আছে। যদি তাতে দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ ( যেমন বিয়ে করার পর), মমত্ববোধ, স্নেহ ( ছেলেমেয়ে হয়ে যাওয়ার পর) ইত্যাদি মিশে যায়। আপনি সেই অবস্থানে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়বেন। এই বোধ থেকে আপনি বেরিয়ে আসতে পারবেন না। এবং প্রেমের ফুলে পরাগ ছড়িয়ে দিগন্ত হয়ে যাবেন।
এখানে প্রশ্ন আসে। মনের মিল হল না, চিনি না, জানি না তাকে কি বিয়ে করা যায়? আর বিয়ে করলেও সংসার করা যায়? এ রকম ক্ষেত্রে দেখবেন না চেনা না জানা যার সাথে বিয়ের কথা চলছে তাকে বাদ দিয়ে অন্য জায়গায় তার ঘুঁটি (সেক্স সম্পর্কিত) বাঁধা আছে। তাই এমন বক্তব্য আসে। না হলে চেনা জানা মিল মেলানোর জন্যই তো বিয়ের মত সামাজিক বন্ধন। তারপর হনিমুন ইত্যাদি অবস্থান। তাতেই প্রেম মুক্তির অবস্থান। চিনুন জানুন। এর সঙ্গে যদি আপনি ( যদি সে অত্যাচারি না হয়) মানিয়ে নিতে না পারেন তা হলে অন্য কারও সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন তার নিশ্চয়তা কোথায়?
সে কিছু অভ্যাস ছেড়ে দেবে আপনি কিছু অভ্যাস ছেড়ে দেবেন। সে কিছু ব্যবহার শিখে যাবে মেনে নেবে আপনি কিছু সংস্কার শিখে যাবেন মেনে নেবেন। তবেই তো গড়ে উঠবে দেশ দশ সংসার। আগামী।
তাছাড়া পার্কে মলে বাসে রাস্তার মেলামেশায় দুজনে চাইবে দুজনের মন রাখার মত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে। মন ভোলানো সব রকমের চেষ্টা করবে। কোন মানুষের প্রকৃত চরিত্র জানতে হলে তার সঙ্গে পুরোপুরি মিশতে হয় দেহে মনে এবং দায়িত্ববোধ কর্তব্যবোধের সম্পর্ক তৈরি করে। দেখবেন একটি ফ্যামিলির সাথে মিশবেন কথা বলবেন প্রায়ই যাতায়াত করবেন কিন্তু সেই ফ্যামিলির কিছু ব্যক্তিগত আপনি কিছুতেই জানতে পারবেন না। শুধু সেই ফ্যামিলির সদস্যরা বা ঘনিষ্ট আত্মীয়রা জানে। তাই মেয়েটিকে জানার জন্য, ছেলেটিকে বোঝার জন্য এবং প্রেমের জন্য চেনা জানা ও পরিচিতির জন্য বিয়ের মত দায়িত্বশীল সম্পর্ক জরুরী।
আবার লক্ষ্য করবেন যার এ রকম ঘুঁটি (সেক্স সম্পর্কিত এবং রূপান্তরিত) বাঁধা স্বভাব সেই প্রেমিকবর কিন্তু কখনওই একে সন্তুষ্ট নয়। যেহেতু তিনি প্রেমের পূজারী তাই গিরগিটির মত রঙ বদল তার ধর্ম(সেক্সে এক্সপার্ট)। প্রেমের বদলও চাই। অর্থাৎ সেক্সের বদল। আজ যাকে চিনে জেনে বুঝে বিয়ে করল কালকে তাকে নির্দ্ধিধায় ছেড়েও দিল (সেক্সের অন্য বেষ্ট সুযোগে)। কোন কষ্ট নেই তার। এই স্বভাব কিন্তু সবার মধ্যে দেখা যায় না। আপনি পারবেন এসব করতে? পারবে কেবল প্রেমিকবর। মন ভোলানো কথা, মেয়ে দেখলেই মিষ্টি মিষ্টি বুলি তারাই পারে যারা একেবারে টিন এজ থেকে বেশ এক্সপার্ট। এই টিন এজে যদি কাওকে আটকে দেওয়া যায় তাহলে তার বোধ ভাবনার পরে সে আর এ রকম করতে পারবে না। তাই যে করেই হোক এই সময়টাতে প্রেম প্রেম আটকানো দরকার।
প্রেমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল বিট্রে করা। সেক্সের টানে কিছুদিন মেলামেশা করল তারপর তার চেয়ে আরও ভাল বেশী লোভনীয় পেলব পেয়ে সেদিকে ঝুঁকে পড়ল। টিন এজের সময় যা খুব বেশি দেখা যায়। আর একটা ব্যাপার আছে সেক্স যেহেতু দেহ সংক্রান্ত তাই মেলামেশার সুযোগটা যদি একটা নির্দিষ্ট বাঁধন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে প্রেমের একটা টান থেকে যেতেও পারে। কিন্তু যদি দেহ অনেকটাই বিপরীতের কাছে উন্মোচিত হয়ে যায় তাহলে নেশার ঝোঁক আরো পেলবের দিকে হাত বাড়াতে বাধ্য।
কেন না সেক্সের নব যৌবন হাতের কাছে যাকে পায় তাকে সে সেরা সুন্দরী কিংবা সেরা সুপুরুষ মনে করে। তার সঙ্গে প্রেমের নেশায় মজে যায়। আমরা সেজন্য অনেকেই এ রকম দেখে বলি - বলিহারি রুচি। এ রকম একটা পেত্নীর মত মেয়েকে ভালো লেগে গেল কি করে? কিংবা বাপরে, টেরা ব্যাঁকা ছেলেরাও তাহলে মেয়েদের পছন্দ।
আসলে তা না। প্রেম নয় শুধু সেক্স। সেক্সের টানে। এ রকম এক ছেলে পড়াশুনা করতে করতে পঁচিশ পেরিয়ে চাকরীতে। ঘুরে দেখেনি সেক্স। তারপর তার এক সহকর্মী সেই অবস্থান বুঝে সেক্স উন্মুক্ত করে দেয়। সেই পঁচিশ সেই সহকর্মীকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। আমরা ভেবেছিলাম এই মেয়ের যা রূপ কে বিয়ে করবে? আর সেইই জুটিয়ে নিল সুপুরুষ। সার্ভিসওয়ালা। আসলে সেক্স। এখন সে প্রেমিকও বটে। জড়িয়ে দায়িত্বে কর্তব্যে।
এই সম্পর্কে সুনীল গঙোপাধ্যায়ের কিছু উপন্যাস ও গল্প আছে। যেমন এক প্রেমিক একজনের সাথে প্রেম করে। কিন্তু সে কিছুতেই নিজেকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে না। ফলে প্রেমিকবর ধীরে ধীরে আরো অন্য অনেক মেয়ে পটিয়ে উন্মুক্ত করেই ছাড়ে। কিন্তু তৃষ্ণা আর মেটে না। একদিন আবার সেই প্রেমিকার কাছে আসে। সেও নাছোড়বান্দা। প্রেমিক বলে - তোমার মধ্যে এমন কি আছে যার জন্য তোমাকে আমি ভুলতে পারছি না। প্রেমিকা বলে -আমার এটুকুই সান্ত্বনা যে তুমি আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য। নিজেকে উন্মুক্ত করে আমি তা হারাতে চাই না।
এসব ক্ষেত্রে আমাদের সামাজিক বন্ধন অনুসারে মেয়েরাই বেশি বিপদে পড়ে। বিশ্বাসের সাগরে ডুব দেয় কিন্তু আর প্রেমের গোলকধাঁধা সাগরের জলের বাইরে বেরোতে পারে না। নোনা আর নোনা। কেন না মেয়েদের কাছে এর প্রমাণ থেকে যায়। যা তাদের বিপদে পড়ার কারণ।
আবার বিয়ে ভেঙে যাওয়া মূল কারণ কি শুধুই প্রেমহীনতা? না। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিয়ে ভাঙার মূল কারণ সেক্স। স্বামী বা স্ত্রী উভয়ের এই সেক্স ব্যাপারটাকে নিয়মিত ভাবা দরকার। তাহলে ডিভোর্স অনেকটাই রোধ করা যায়। অনেক সময় একটা দুটো ছেলে হওয়ার পর স্ত্রী অপত্য স্নেহে জড়িয়ে পড়ে। সেক্সের ব্যাপারে স্বামীকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। ভাবেই না। কিংবা ভাবে আমাকেই তো ভালোবাসে। কোথায় আর যাবে? সুযোগ বুঝে, সময় করে সেক্সের জন্য এগিয়ে আসে না। স্বামী বেচারা সেক্সে আরো বেশি অভিজ্ঞ। কিন্তু পাচ্ছে না। দায়িত্ব কর্ত্যবের জালে বলতেও পারছে না। ফলে এই একটু একটু না পাওয়ায় দূরে সরতে থাকে প্রেম। এই সময় যদি সেক্সের জন্য স্বামী অন্য কাওকে পেয়ে যায় তো সোনায় সোহাগা। না পেলেও একটু একটু তিতি বিরক্ত শুরু হয়। তার থেকে সেক্স মেটানোর রাস্তা সে প্রস্তুত করতে থাকে। তারপর তা বিরাট আকার ধারণ করে। এবং সেটাই বিচ্ছেদের আকার ধারণ করে।
আবার স্বামী যদি অন্য কোন কাজে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে একা ঘরে বিরহিনী স্ত্রী। তার প্রতি কোন নজর নেই। কেরিয়ার গড়ার জন্য দিনরাত দূরে আর দূরে। কিংবা অন্য কোন সেক্স অবলম্বনে জড়িয়ে তাহলেও এই অল্প অল্প সরে যাওয়া বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আবার যতক্ষণ না অন্য কোন জায়গায় সেক্সের খুঁটি পোতা হচ্ছে ততক্ষণ কিন্তু বিচ্ছেদ হয় না। হবে না। সে ছেলে হোক বা মেয়ে। যে প্রথমে বিচ্ছেদের কথা তুলবে আপনি তদন্ত করে দেখবেন সেক্সের জন্য তার অন্য জায়গায় খুঁটি পোতা হয়ে গেছে। তাই অন্য জায়গায় যাতে সেক্স সম্পর্কিত খুঁটি পোতা না হয় সেদিকে স্বামী স্ত্রী দুজনকেই নজর দিতে হবে। সময় সুযোগে সেক্সের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সেক্সই প্রেম। প্রেমের রূপ।
একটা সময় আসে যখন কেউ কাওকে আর সেই একটু একটু অল্প অল্প সরে আসার ব্যাখ্যায় জাগিয়ে তুলতে পারে না। তখন বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
আবার মনে রাখবেন, কারো ক্ষেত্রেই এই সেক্স বসে থাকে না। দেহের চাহিদা সে মেটাবেই। যে করেই হোক। এখন যা সমাজচিত্র তাতে এর অভাব হবেই না। অবশ্য ছেলেদের ক্ষেত্রে এই উদ্দামভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। সারা জীবন সেক্সবিহীন অনেক নারী পেলেও পেতে পারেন। কিন্তু ব্যাঁকা টেরা কালো কুঁজো ভাল মন্দ অফিসার খুনি বুদ্ধিজীবী বদজীবী এমন কোন পুরুষ পাবেন না যে বিনা সেক্সে সারা জীবন কাটিয়ে দিয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এটা হতেই পারে না।
তাই আপনি স্বামী স্ত্রী। সেক্সের বিষয়টি আপনি নিয়মিত নজর রাখুন। প্রায়োরিটি দিন। প্রথম যৌবনের রাখঢাক ছেড়ে উন্মুক্ত হয়ে পড়ুন। সুযোগের সময়ের সদ্ব্যবহার করুন। প্রেম আছে কি নেই ওসব পরে। আগে বোধ জীবনে সেক্স গড়ে তুলুন। সময় সুযোগের পূর্ণ মর্যাদায় সেক্সের সাথে জড়িয়ে পড়ুন। হয়ে পড়ুন লাস্যময়ী। মন ভোলানো রূপ সোহাগী। রোমাণ্টিকতার হাতে সেক্স সঁপে দিন। হোক না একটু নখরাবাজি। দেখবেন, সেক্সের হাত ধরে প্রেম আসবেই। এই রকম অবস্থায় অনেক প্রেম হৃদয়ে লালিত। অন্য কোথাও যদি আপনার সঙ্গীর সেক্স সম্পর্কিত খুঁটি বাঁধা থাকলেও তার থেকে সে সরে আসতে বাধ্য।
মন কষাকষি, আপনি যা পছন্দ করেন না ও করে, আপনার মন ও বুঝতে চায় না, আপনিও ওর মনের নাগাল পাচ্ছেন না ইত্যাদি পরে ভাববেন। একটু লাস্যময়ী হয়ে সেক্সে ব্যাপারটা মাপুন না। অন্য যার কাছে যায় তার কাছে মনের ব্যাপারে কি পায় কি পায় না সেসব না ভেবে সেক্সের ব্যাপারে আপনার চেয়ে কিছু বেশি পায় না পাবে না গ্যারিণ্টি দিয়ে বলা যেতে পারে।
প্রেমের ব্যাপারে সৌন্দর্যের ব্যাপারে মনের মতের বিনিময়ের জন্য সুন্দরতা লাগে সুন্দর নিয়ে ভাবনা আসে কিন্তু সেক্সের মূল পয়েণ্ট ভিউতে শুধু দেহের সাথে দেহ জেগে ওঠে সম্পর্পিত হতে যায়। স্বামী স্ত্রী যখন তখন এই ব্যাপারটাতে কোন বিধি নিষেধ বাধা বিপত্তি আসার কথা নয়। সামনে পেছনে উপরে নিচে কোনদিকে কিছু না ভেবে সেক্স অনুভূতিতে ঝাপটে ধরুন লেপ্টে থাকুন সঙ্গী পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা পাবে না। প্রেমে থাকতেই হবে। স্বামী স্ত্রী হিসেবে রূপে নয় গুনে নয় মনে নয় প্রাণে নয় যৌতুকে নয় শুধু সেক্সে ভাবুন অন্য সব কিছু হেঁটে হেটে দৌড়ে দৌড়ে চলে আসবে।
সেক্স মানে কিন্তু শুধু সঙ্গম নয়। খুঁনসুঁটিও ধরা যেতে পারে। একটু জড়িয়ে ধরা, ইছাকৃত অনিচ্ছুক স্পর্শ ইত্যাদি। আগেই বলেছি দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ ইত্যাদির সাথে জড়িয়ে যে প্রেম তার জন্য এইসব খুব জরুরী। যেমন বয়সকালে পুরুষ নারী এভাবেই তার প্রেম জিইয়ে রাখে। একে অপরে তাই একসাথে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে।
আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বামী বাইরে বেরনোর সময় ফিটফাট হয়ে বের হয়, স্ত্রী বেশ সেক্সি হয়ে বাইরে যায় কিন্তু কেউ কাওকে এই রকম অবস্থানে খুব একটা কাছাকাছি পায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্যকে এই সাজগোজ বাহার সেক্সি মুড দেখানোর জন্য স্ত্রী পুরুষ দুজনেই নিজেদেরকে প্রস্তুত করে। সবাই এইভাবে দেখানোর কথা ভাবলে ঐ স্বামী বা স্ত্রীও অন্যকে দেখে উত্তেজিত হচ্ছে। অর্থাৎ সেক্সের হাত প্রেমে পল্লবিত হচ্ছে অন্য পাতায়। স্বামী স্ত্রী সেই ফুলসজ্জার পরে পরে কয়েকটা দিন পেরিয়ে শুধু ঘরোয়াভাবে মিলিত হয়। তাই নিজেদের দেখানোর মত করে বাহারী সাজগোজ সেক্সি মুড থাকা বা দেখানো দরকার। তাহলেই প্রেমের ঠিকানা আরো মজ্বুত হবে।
নিজের সঙ্গীর জন্য সাজুন। বাহারি ড্রেস শুধু বাইরে জন্য নয়। ঘরে সঙ্গীর জন্য। সঙ্গী যেন বলে তোমাকে দারুণ লাগছে। দায়িত্ববোধের চাপে, ছোট বড় রাগ অভিমানে পেছন ফিরে শুয়ে নিজেদের দেহের সাথে দেহের উত্তাপ বিনিময় থেকে দূরে সরে যাবেন না। চেপে ধরুন জড়িয়ে ধরুন। প্রেম ঠিক তার জায়গা করে নেবে।
আবার সেক্সের ব্যাপারে অন্য এক রকম হিসেব। মানুষের জীবনে সেক্সের সময়কাল জীবনের ১৫/২০ বছর থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত (প্রায়)। তার পরে পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌবন থাকলেও ( তাও দায়বদ্ধ সংসারে জড়িয়ে পড়লে সে ভাবনা অতটা গুরুত্ব পায় না) নারীর ক্ষেত্রে প্রায়ই থাকে না। তার পরে পাশাপাশি দেহের সাথে দেহ, হাতে হাত লাগিয়ে থাকাটাই সেক্স অনুভূতি। যা মনের ও দেহের পরম পাওয়া।
তাহলে প্রায় সমস্ত মানুষের সেক্স জীবন মাত্র ৩০ বছর। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সেক্স সময়কাল জীবন শুরুর ১৫/২০ বছর। এই ১৫/২০ বছর যদি কারও উজ্জীবিতভাবে কেটে যায়। সেক্সের পাওয়া পরম উপলব্ধি করে তাহলে তার জীবনের বাকী ক'টা দিন আরো পরমে এগিয়ে যাবে। তা না হলে বিঘ্ন আসবে।
এই ১৫/২০ বছরের জীবনকে সযত্ন লালিত পালিত করতে জীবন শুরুর অবস্থানে টিন এজের নেশার ঝোঁক, প্রেম প্রেম খেলা বড়দেরকে দেখে রাখতে হবে। জীবন শুরু এই প্রাথমিক যতটা বড়দের ভাবনা অনুকরণে, সিনেমার মত টিন এজরা প্রেমে প্রেমে যত জড়িয়ে পড়বে ততই তাদের বাদবাকী জীবন অবান্তরে ছুটবে।
শুধু ১৫/২০ বছরের জন্য মনন বাদ দিয়ে সুন্দরের দিকে পেলব ভাবনার ঝোঁকে জীবনের পথ খোঁজা ভুল। জীবনের বাদবাকী ৬০/৭০/৮০ বছর বাঁচার জন্য যে মেধা মনন মনুষ্যত্ব প্রয়োজন সেসব ভুলে গেলে চলবে না? এই মেধা মনন মনুষ্যত্ব সংসার সচল রাখার জন্য, সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে উজ্জ্বল আগামী প্রতিষ্ঠার জন্য, এমন কি নিজের কাছে নিজের প্রেম প্রতিষ্ঠার জন্য এই মনন মেধা সম্বলিত প্রেম খুব প্রয়োজন। তাই সুন্দরী বা সুন্দর হলে তো ভালই, তার সাথে মেধা পর্যালোচনা জরুরী। মেধার প্রয়োরিটি আগে বিশেষ করে প্রেমের জন্য। প্রেমের পরশ সম্বলিত জীবনের জন্য।
তার আগে টিন এজের সময় কিংবা বিয়ে করব বলে প্রতিশ্রুতি কিংবা গভীর বিশ্বাস মর্যাদায় টিভ টুগেদারের জন্য প্রেমের নাম করে যে সেক্স সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা অবশ্যই ভাবার বিষয়। প্রথমত এতে কোন দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ থাকে না। শুধু একটা সম্পর্ক। এই সম্পর্ক হয়তো ঠিক, কেন না এখানে প্রেমের চেয়ে সেক্সের প্রায়োরিটি থাকে। যদিও প্রেমের নাম দিয়ে তা চলে।
এসব ক্ষেত্রে যত আপনি বেশি জড়িয়ে যাবেন, বাইকের পেছনে ঠেসে জড়িয়ে ধরবেন বা দেহ উন্মোচিত করবেন ততটাই পেছনে পিছিয়ে পড়বেন। প্রেম করবেন কিন্তু জীবন যৌবন উপভোগ থেকে জীবনকে দূরে সরিয়ে দেবেন তা তো হতে পারে না।
তাহলে প্রেমের জন্য জীবন না জীবনের জন্য প্রেম? ভাবার বিষয়।
এর পরে আছে বৈধ আর অবৈধ প্রেম। বৈধ অর্থাৎ সবার সামনে বুক ফুলিয়ে সমাজ সংসারকে সামনে রেখে। যেমন বিয়ে এই জাতীয় অবস্থান। আবার লুকিয়ে। কেউ যেন জানতে না পারে। সবাই গানটি জানে ' গোপন কথাটি রবে না গোপনে'। প্রকাশ্যে আসবেই আজ কাল কিংবা পরশু। কিন্তু তবু অনেকেই মনে করে কিছু হবে না চল, প্রেম ঘুরে আসি থুড়ি প্রেম করি। কেউ জানতে পারবে না।
যতদূর জানি প্রেমের এই প্রকার লুকানো ঝুকানো ধরা পড়েছেই। টিন এজ এই অবস্থান ঢুকে পড়ছে প্রেম রহস্যে। ফলে নিজস্ব কেরিয়ার বৃত্তিতে তারা নিজেদের হারিয়ে ফেলছে। বোধ না জন্মানো বড়দের মত হওয়ার প্রেম নেশায় কত যৌবন অকাল হয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই।
টিন এজ নতুন যৌবনের দূত। যৌবনের অদম্য ডাক এই সময়ে স্বাভাবিক। নিজের দেহ অন্য আর এক দেহের সাথে সেক্সের টানে প্রেম প্রেম খেলা খুঁজবেই। আবার একই সময়ে কঠোর অধ্যয়নের মাধ্যমে নিজের কেরিয়ার প্রতিষ্ঠা করার সময় এই টিন এজ। দুটো একসঙ্গে কখনই সম্ভব নয়। একবার যৌবনের অন্ধ উপবনে ঢুকে গেলে সে হারিয়ে যাবেই। কঠোর অধ্যয়ন হবেই না। শুধু চালিয়ে নেওয়া অধ্যয়ন হবে।
একটাই মন। তাকে নতুন যৌবনে দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারায় পরিচালিত করা যায় না। মনে রাখবেন সময়টা টিন এজ। এই টিন এজ পেরিয়ে গেলে অর্থাৎ কঠোর অধ্যয়নে সম্পূর্ণ ঢুকে গেলে সদ্য পাওয়া নতুন যৌবন দিশা খুঁজে পাবে। সেক্সের নেশার টানে প্রেমের মর্যাদা বুঝবে পারবে না, নিজের প্রায়োরিটি বুঝতে পারবে না।
টিন এজে সদ্য নবীন যৌবন প্রেমে না ভাসলেও চলবে কিন্তু কঠোর অধ্যয়ন থেকে দূরে সরে গেলে সমাজের সংসারের আগামীর ক্ষতি হয়ে যাবে। অর্থাৎ এই সেক্সের টান থেকে খুব যত্ন করে টিন এজ সামলানো খুব জরুরী।
তাহলে প্রেম কি দেয়? কি দিচ্ছে? প্রেমের পরাগে জীবনের কথা কতটা জীবনমুখী?
টিন এজের এই যে প্রেম একে রোধ করার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সবার। আমাদের বড়দের। পাশে থাকা, বুঝতে শেখা, বুঝিয়ে বলা ও নিয়মিত টিন এজের মত করে জীবনকে বুঝিয়ে দেওয়া। টিন এজ মেধা যা পড়াশুনার মাধ্যমেই কঠোর অধ্যয়নে বিকশিত হয়। তার সাথে সাথে সে মানবিক বোধ আহরণ করতে শেখে।
ঠিক সেই সময় প্রেমের নেশা যা পারিপার্শ্বিক অবস্থান ও বিনোদন থেকে দেখে সে শেখে এবং সদ্য তাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করে। ফলে মেধার অপচয় ঘটে যায়। তাকে রোধ করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রত্যেকের জীবনে সেক্স নেশার সাথে প্রেম প্রেম শুরু হোক ২০/২২ বছরের পর। সমৃদ্ধ বোধ ভাবনায় জারিত হয়ে। তার আগে পর্যন্ত আমাদের টিন এজকে সামলে রাখা খুব জরুরী।
বোধ পরিণত সে বয়সের মাপকাঠিতেই প্রেম জীবনের আনন্দম। অগ্রবর্তী।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ২১/০৬/২০১৭অনেক কিছু জানতে পারলাম,ধন্যবাদ লেখককে।