www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গল্প

শরতের আলো
-------------
দেবকল্প-বাবুর মনে খুব কষ্ট । এই শরৎকাল এলেই কি যে করবেন খুঁজে পান না । এক ছেলে আর মেয়ে নিয়ে স্বামী স্ত্রীর স্বপ্নের সংসার । কোন কষ্ট থাকার কথা নয় । এই শহরেরে বুকে চলনসই ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছেন । মাইনে যা পান সারা মাস বেশ ভালভাবে চলে যায় ।
প্রথম প্রথম বেশি টাকা দিয়ে ইলিশ কিনতে খুব কষ্ট হত, এখন আর হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা মানিয়ে নিয়েছেন। এখন তিনি ভুলে যান যে এক সময় তাদের সারা বছর এক জামাতেই কাটাতে হত। জুতো ছিল না। তাও প্রায় মাইল খানেক দূরে রোজ স্কুলে যেতে হত। বই খাতা চেয়ে চিনতে পড়াশুনা করতে হত।
ভাল করে ভাত জুটত না দু-বেলা। যেদিন মাংস জুটত চার ভাই বোন উনুন ঘিরে বসে থাকত। আর কষার পর থেকে তুলে তুলে খেত। মা কিছুতেই দিতে চাইত না। বলত - এত কম মাংস ভাতের সঙ্গে খাবি কি? সত্যি সত্যি খাওয়ার সময় মার জন্য থাকতই না।
শরত এলেই আবার পুজো। কাছাকাছি কোথাও শিউলি ফুল, কাশবন নেই। হিমের পরশ চোখেই পড়ে না বিন্দুমাত্র। মাঝে মাঝে বেশ গরম আর ঝমঝমিয়ে নেমে আসে বৃষ্টি।
এবার ছেলের বায়না তিন চারটে জামা। মেয়ের চাই আরো বেশি। মিসেসের প্রতি বছর ফ্যাশন পালটানো শাড়ি আর চুড়িদার। শাড়ি পরবে না তাও কিনতেই হবে। এরপর আছে দাদার ছেলে মেয়ে, দুই দিদির ছেলে মেয়ে, আবার তাদের ছেলে মেয়ে, বাবা মা শ্বশুর শাশুড়ি।
এত জনের ফ্যাশন বাজারে অনেক খরচ। যা দেবকল্পবাবুর কাছে খুবই কষ্টদায়ক। এর উপর আছে টিউশন ফি, মাসের খরচ, কাজের লোকের মাইনে ও তার বোনাস। ফ্ল্যাটের কিস্তি। সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা। তাই পুরো শরৎকালটা খুব টেনশনে কাটে।
মনে হয় কেন চাকরি পেলাম? চাকরি না পেলে কারোর এ চাহিদাগুলো থাকত না। সংসারে আর কেউ চাকরি করে না বলে সারা বছর এই দাও আর ঐ দাও লেগেই আছে। আর শরৎকাল এলেই এই চাহিদা আরো বেশি বেড়ে যায়। যা দিনে দিনে অসহ্য লাগে। এই নিয়ে মিসেসের সঙ্গে ঝগড়াও হয় । তখন দেবকল্প বাবু নিজেকে সামলে নিয়ে চেপে যান।
খরচ কিন্তু জ্যামিতিক হারে বাড়তেই থাকে। দেবকল্পবাবু মানেন এসব বেশীর ভাগ বেকার খরচ। তবুও ফ্যাশন যুগ। খরচ করতেই হয়।
পূজোর বাজার করতে গিয়ে চারিদিকে ঘুরে দেখে মল ভর্তি লোক। রাস্তায় কত গাড়ি। উঁচু উঁচু বাড়ি। ঝকঝকে রাস্তা। ভারতবর্ষ কি সত্যিই গরীব? শহর শহরতলী দেখে তা মনে হয় না।
অফিসের এক কলিগের কাছে পুজোর ছুটির আগে কথাটা পাড়ল দেবকল্পবাবু। উনি সব শুনে হো হো করে হাসলেন। বললেন – বোকার মত কথা বলবেন না তো। কিছু মানুষের হাতে প্রচুর টাকা। কারো একদম নেই। আর এর মাঝে আছি আমরা। মাঝের লোকদের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়কে বুঝে শুনে চলা সত্যিই একটু কষ্টের। ভেবে লাভ নেই। তার চেয়ে পূজোটা এনজয় করুন। ও সব ভাবার জন্য কত সব অর্থনীতিবিদ আছেন।
- ঠিক কথাই বলেছেন, সুজনবাবু। কিন্তু আমি যে খরচের ভারে একেবারে নুয়ে পড়ছি।
উনি রেগে গেলেন। বললেন – দূর মশাই । আপনি কি গরীবই থাকবেন? পড়াশুনা করে শিক্ষিত হয়েছেন কিন্তু আপগ্রেড হতে পারেন নি। আনন্দ করুন। পয়সা খরচ করুন। যা আছে যতটুকু আছে। নয়া যুগের সাথে মানিয়ে চলুন। জমা যা হচ্ছে তা আপনার এই গরীব মানুষকে দেখার মনটা, ওকে মারবেন না। ওটাই আপনাকে কোন না কোন সময় বেঁচে থাকার হদিশ দেবে।
সুজনবাবুর কথা শুনে মনটা আনন্দে ভরে উঠল। মিসেস যতই বলুক – তোমার জন্য আমার অনেক সাধ আহ্লাদ পূরণ হল না। কিন্তু মনে মনে বেশ সমীহ করে। ও তো বড় ঘরের মেয়ে। তবু সুতপা দেবকল্পবাবুকে দেখিয়ে ছেলেমেয়েকে শিক্ষা দেয় – আর কারো মত হতে হবে না। তোরা শুধু তোর বাবার মত হবি।
ওরা রেগে যায়। বলে – ধুর, সবকিছুতে শুধু না আর না। কিছু একটা চাইলেই প্রথমে না বলবেই। হাত খরচ দশ বিশের বেশি দিতেই চায় না। ভাল্ল লাগে না..... আর তুমি বলছ ...
ওদের কথা শেষ হয় না, মিসেস থামিয়ে বলে – চুপ কর, কিছু বুঝিস না তোরা! তোদের বাবার জন্য আমরা অনেক পেয়েছি। চিন্তা ধারাটাই আলাদা। ভাবনা জগতের প্রকৃতির মানুষ।
মেয়ে বলতে চেয়েছিল কিভাবে? মিসেস জানিয়ে দেয় – কিভাবে? তার ব্যাখ্যা অন্তর থেকে অনুভব করতে হয়। বুঝিয়ে বলা হয়তো যায় না।
এ সব দেবকল্প বাবু প্রায়ই শুনতে পান। তাই দেদার খরচের ঠেলায় নিজেকে আনন্দেই রাখেন। টাকা পয়সা আসবে যাবে। কিন্তু এক চিলতে হাসি তো আর টাকা দিয়ে কিনতে কোথাও পাবেন না। তবুও পেছনে ফেলে আসা শৈশবের কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে হলে বুকটা কেমন করে। ফালতু খরচের টেনশন হয়।
তবু প্রতি শরৎকাল এলে বুঝতে পারেন আনন্দ কাকে বলে? ছেঁড়া ছেঁড়া তুলো পেঁজা মেঘ, শিউলি, কাশবন, টলটলে দিঘি থাক না থাক অনেকের শুভেচ্ছা আছে। ঘরে লোকজন আসে। মিষ্টি খাওয়া হয়। পুরো পরিবার খুশিতে ডগমগ করতে থাকে। ছেলে মেয়ের পিছনে পিছনে নতুন জামা প্যান্ট পরে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরতে হয়। পূজোর ক'টা দিনের হাসি দেবকল্প বাবু জমিয়ে রাখেন সারা বছরের জীবন উপভোগের জন্য। যতই টেনশন থাক।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭১৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৮/১০/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • אולי כולנו טועים ১৯/১০/২০১৩
    খুব ভালো লাগলো ll
  • অসাধারণ দাদা
  • আহমাদ সাজিদ ১৮/১০/২০১৩
    ভাল লাগল। ধন্যবাদ
 
Quantcast