গোপলার কথা - ১
কবিতা নিয়ে দু-একটি কথা
কবিতা/ছড়া দিয়েই মানুষ জীবন শুরু করে। ছোট বাচ্চাদের আমরা ছড়া শুনিয়ে শুনিয়ে পড়াশুনা শুরু করাই। যে যার মাতৃভাষার মাধ্যমে।
তখন শিশু বুঝুক না বুঝুক আমরা সেই সব ছড়া বা কবিতা ছন্দ করে বারবার বলতেই থাকি। কারণ সেই শিশুর মধ্যে একটা তাল লয় তান বা ছন্দ কাজ করে। তাই সে সহজেই সেই ছড়া বা কবিতার লাইন চটপট বলতেও পারে।
এইভাবে শিশুরা গানও মনে রাখতে পারে খুব সহজে। ধীরে ধীরে নিজস্ব ক্লাসের পড়ার বইয়ে বা আবৃত্তির জন্য ছাত্রছাত্রীরা কবিতা মুখস্ত করে।
তারপর আস্তে আস্তে পড়াশোনা বাড়তে থাকে। পড়াশুনা শেষ করে যখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে তখন কবিতা মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যায়।
ফলে কবিতার চর্চা কারা করে? যারা কবি হতে চায় বা কবির মত কিছু যারা লেখেন বা কবিতা ভালোবাসেন যে দু'চারজন।
তাদের আবার এক একটা গোষ্ঠী তৈরি হয়। তাদের মধ্যে কবিতার আলোচনা, কবিতার বই কেনাকাটা ইত্যাদি চলতে থাকে। এর বাইরে ঘরের লোককে অনেকে কবিতা শোনাতে পারে না। যদিও দু-একটা কবিতা শোনাতে পারে বা শোনাতে চায় তাতে কোন মন্তব্যই পায় না।
বাংলা ভাষাভাষী বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে আজও রবীন্দ্র নজরুল সুকান্ত কবিদের কবিতা ঘোরাফেরা করে। সবার মনের মধ্যে এইসব কবিতা জেঁকে বসে আছে।
এর বাইরেও যে কবিতা লেখা যায় অনেকে ভাবতেই পারে না। তাই ধীরে ধীরে কবিরাও তাদের অবস্থানকে বদলে ফেলেছে। আবার আধুনিকতার নাম করে কি যে লিখছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। শব্দের সঙ্গে শব্দ জুড়ে সুন্দর তাল ছন্দ তৈরি হল কিন্তু কোন বার্তা পাওয়া গেল না। কল্পনার রঙে সাদা কালো ছাড়া আর কিছু এল না। কোন ক্যানভাস নেই। কোন আর্ট নেই।
ফলে এত কষ্ট কল্পনার মাঝে কবিতা ধীরে ধীরে সাধারণের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
প্রখ্যাত কবিদের মধ্যে বেশ কিছু কবিতা একদম সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার সঙ্গে মিলিয়ে যে কোন মানুষকে ভাবনার বিষয়ে নিয়ে যায়। কল্পনায় রসবোধের যোগান দেয়।
আমরাও তখন ভাবি - বাহ, এ রকম করে তো ভাবা হয় নি। আর কিছু তো বুঝতেই পারি না এমন ভাবনা এল। আমরা যারা নতুন তারা চেষ্টা করছি সহজ করে মানুষের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে।
তবু কবিতা সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে অলীক এক জগৎ। গল্প প্রবন্ধ উপন্যাস তবুও পড়ে কবিতা নৈব নৈব চ।
আগে তো গদ্যই ছিল না। সবই ছন্দ। সেই পাঁচালী উপকথা এবং ধর্মগ্রন্থ মানুষের উপযোগী করতে গানের মত করে গাওয়া হত। ছন্দে সুরে। কাব্যরস মিশিয়ে।
এখনও এসব আছে। আর গাওয়াও হয় এই সময়ের প্রেক্ষাপটের ঘরোয়া জীবনযাত্রাকে মনে রেখে। যাতে মানুষের সহজে বোধগম্য হয়। সহজ কথাকে সহজ ভাবে বললেও কবিত্ব থাকে, যেন মানুষকে ভাবাতে শেখায়। তবে তা ধীরে ধীরে কমছে।
তাই কবিতাকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদেরই সচেষ্ট হতে হবে। যতটা সম্ভব সহজ করে নিজস্ব ভাব প্রকাশ করতে হবে তা হলে কবিতা সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। গুরুগম্ভীর অবস্থান আমার মনে হয় বদল করা দরকার।
এখন প্রশ্ন থাকতেই পারে কবিরা তো ভাব জগতের লোক তারা কেন নিজের ভাব বা ভাবনার রাস্তা ছেড়ে সাধারণের কথা ভেবে লিখবে। তাহলে তো সেটা statement এর পর্যায়ে পড়ে যাবে।
কিন্তু শব্দের প্রয়োগ যত প্রাঞ্জল হবে কবিতা ততই হৃদয়গ্রাহী হবে। যে কোন লেখার মূল বিষয় হল অবয়ব বা শরীর। লেখার মধ্যে যদি এই অবয়ব ঠিকঠাক না থাকে তাহলে পাঠক হিসেবে তাকে মনের মধ্যে গড়তে শুধু শব্দের নম্র চিত্র লাগে আর কিছু নয়।
পড়ার শেষে কি পড়লাম যদি বুঝতেই না পারি, তাহলে আমি আর পড়াটাকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব। মূল অবয়বে আমি পাঠক যদি পৌঁছতে না পারি তাহলে কল্পনা আঁকব কি করে?
তাহলে তো মানুষ সেই রবীন্দ্র/নজরুল/ সুকান্তেই আটকে থাকতে চাইবে। আজও যেমন হেমন্ত, মান্নাই বেশির ভাগ লোক শোনে। ডিসপোজেবল ব্যবহার গানে কবিতায় হরদম চলছে। একবার শুনে বা পড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। তাতে দিশাহারা হয়ে পড়ছে ভবিষ্যৎ। লেখক পাঠক অথবা গায়ক শ্রোতা।
তাই হয়তো কবিতার বিষয়বস্তু ছাত্রছাত্রী এবং কবি ও কবিতা চর্চ্চানুরাগিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে বারবার।
অবসর সময়ে পড়ার জন্য কেউ লাইব্রেরী থেকে কবিতার বই নিয়ে যাচ্ছে এ খুব কমই দেখা যায়। আর শুধু কবিতা লেখেন, সাহিত্যের অন্য কোন ধারা বা বিষয় লেখেন না এমন সাধারণত দেখা যায় না।
মূল বিষয় যদি স্পষ্ট হয় কবিত্বের মুন্সিয়ানায় তাকে সহজভাবে পরিবেশন করাই তো কবির কাজ। তাকে সাহিত্যের সমস্ত আঙিনায় ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।
ছাত্রছাত্রীরা ছাড়াও যাতে কবিতা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তার চেষ্টা কবিদেরই করতে হবে।
যেমন যদি কোন অনুষ্ঠানে (এমনকি কবিতার অনুষ্ঠান হলেও) উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এবার থেকে সে জায়গায় উদ্বোধনী আবৃত্তি পরিবেশন করার চেষ্টা করতে পারি। যদিও গানও কবিতা। তবু কাব্য রস যে আলাদা বিষয় তা মানুষের মনে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব কবি ও কবিতা চর্চা অনুরাগীদের নিতে হবে।
এই উদ্বোধনী আবৃত্তি কোন না কোন একদিন সফল হবেই হবে। কবি ও কবিতা চর্চা অনুরাগীদের হাত ধরে কবিতার আসরে পরিবেশিত হবেই হবে।
কবিতা/ছড়া দিয়েই মানুষ জীবন শুরু করে। ছোট বাচ্চাদের আমরা ছড়া শুনিয়ে শুনিয়ে পড়াশুনা শুরু করাই। যে যার মাতৃভাষার মাধ্যমে।
তখন শিশু বুঝুক না বুঝুক আমরা সেই সব ছড়া বা কবিতা ছন্দ করে বারবার বলতেই থাকি। কারণ সেই শিশুর মধ্যে একটা তাল লয় তান বা ছন্দ কাজ করে। তাই সে সহজেই সেই ছড়া বা কবিতার লাইন চটপট বলতেও পারে।
এইভাবে শিশুরা গানও মনে রাখতে পারে খুব সহজে। ধীরে ধীরে নিজস্ব ক্লাসের পড়ার বইয়ে বা আবৃত্তির জন্য ছাত্রছাত্রীরা কবিতা মুখস্ত করে।
তারপর আস্তে আস্তে পড়াশোনা বাড়তে থাকে। পড়াশুনা শেষ করে যখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে তখন কবিতা মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যায়।
ফলে কবিতার চর্চা কারা করে? যারা কবি হতে চায় বা কবির মত কিছু যারা লেখেন বা কবিতা ভালোবাসেন যে দু'চারজন।
তাদের আবার এক একটা গোষ্ঠী তৈরি হয়। তাদের মধ্যে কবিতার আলোচনা, কবিতার বই কেনাকাটা ইত্যাদি চলতে থাকে। এর বাইরে ঘরের লোককে অনেকে কবিতা শোনাতে পারে না। যদিও দু-একটা কবিতা শোনাতে পারে বা শোনাতে চায় তাতে কোন মন্তব্যই পায় না।
বাংলা ভাষাভাষী বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে আজও রবীন্দ্র নজরুল সুকান্ত কবিদের কবিতা ঘোরাফেরা করে। সবার মনের মধ্যে এইসব কবিতা জেঁকে বসে আছে।
এর বাইরেও যে কবিতা লেখা যায় অনেকে ভাবতেই পারে না। তাই ধীরে ধীরে কবিরাও তাদের অবস্থানকে বদলে ফেলেছে। আবার আধুনিকতার নাম করে কি যে লিখছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। শব্দের সঙ্গে শব্দ জুড়ে সুন্দর তাল ছন্দ তৈরি হল কিন্তু কোন বার্তা পাওয়া গেল না। কল্পনার রঙে সাদা কালো ছাড়া আর কিছু এল না। কোন ক্যানভাস নেই। কোন আর্ট নেই।
ফলে এত কষ্ট কল্পনার মাঝে কবিতা ধীরে ধীরে সাধারণের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
প্রখ্যাত কবিদের মধ্যে বেশ কিছু কবিতা একদম সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার সঙ্গে মিলিয়ে যে কোন মানুষকে ভাবনার বিষয়ে নিয়ে যায়। কল্পনায় রসবোধের যোগান দেয়।
আমরাও তখন ভাবি - বাহ, এ রকম করে তো ভাবা হয় নি। আর কিছু তো বুঝতেই পারি না এমন ভাবনা এল। আমরা যারা নতুন তারা চেষ্টা করছি সহজ করে মানুষের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে।
তবু কবিতা সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে অলীক এক জগৎ। গল্প প্রবন্ধ উপন্যাস তবুও পড়ে কবিতা নৈব নৈব চ।
আগে তো গদ্যই ছিল না। সবই ছন্দ। সেই পাঁচালী উপকথা এবং ধর্মগ্রন্থ মানুষের উপযোগী করতে গানের মত করে গাওয়া হত। ছন্দে সুরে। কাব্যরস মিশিয়ে।
এখনও এসব আছে। আর গাওয়াও হয় এই সময়ের প্রেক্ষাপটের ঘরোয়া জীবনযাত্রাকে মনে রেখে। যাতে মানুষের সহজে বোধগম্য হয়। সহজ কথাকে সহজ ভাবে বললেও কবিত্ব থাকে, যেন মানুষকে ভাবাতে শেখায়। তবে তা ধীরে ধীরে কমছে।
তাই কবিতাকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদেরই সচেষ্ট হতে হবে। যতটা সম্ভব সহজ করে নিজস্ব ভাব প্রকাশ করতে হবে তা হলে কবিতা সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। গুরুগম্ভীর অবস্থান আমার মনে হয় বদল করা দরকার।
এখন প্রশ্ন থাকতেই পারে কবিরা তো ভাব জগতের লোক তারা কেন নিজের ভাব বা ভাবনার রাস্তা ছেড়ে সাধারণের কথা ভেবে লিখবে। তাহলে তো সেটা statement এর পর্যায়ে পড়ে যাবে।
কিন্তু শব্দের প্রয়োগ যত প্রাঞ্জল হবে কবিতা ততই হৃদয়গ্রাহী হবে। যে কোন লেখার মূল বিষয় হল অবয়ব বা শরীর। লেখার মধ্যে যদি এই অবয়ব ঠিকঠাক না থাকে তাহলে পাঠক হিসেবে তাকে মনের মধ্যে গড়তে শুধু শব্দের নম্র চিত্র লাগে আর কিছু নয়।
পড়ার শেষে কি পড়লাম যদি বুঝতেই না পারি, তাহলে আমি আর পড়াটাকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব। মূল অবয়বে আমি পাঠক যদি পৌঁছতে না পারি তাহলে কল্পনা আঁকব কি করে?
তাহলে তো মানুষ সেই রবীন্দ্র/নজরুল/ সুকান্তেই আটকে থাকতে চাইবে। আজও যেমন হেমন্ত, মান্নাই বেশির ভাগ লোক শোনে। ডিসপোজেবল ব্যবহার গানে কবিতায় হরদম চলছে। একবার শুনে বা পড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। তাতে দিশাহারা হয়ে পড়ছে ভবিষ্যৎ। লেখক পাঠক অথবা গায়ক শ্রোতা।
তাই হয়তো কবিতার বিষয়বস্তু ছাত্রছাত্রী এবং কবি ও কবিতা চর্চ্চানুরাগিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে বারবার।
অবসর সময়ে পড়ার জন্য কেউ লাইব্রেরী থেকে কবিতার বই নিয়ে যাচ্ছে এ খুব কমই দেখা যায়। আর শুধু কবিতা লেখেন, সাহিত্যের অন্য কোন ধারা বা বিষয় লেখেন না এমন সাধারণত দেখা যায় না।
মূল বিষয় যদি স্পষ্ট হয় কবিত্বের মুন্সিয়ানায় তাকে সহজভাবে পরিবেশন করাই তো কবির কাজ। তাকে সাহিত্যের সমস্ত আঙিনায় ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।
ছাত্রছাত্রীরা ছাড়াও যাতে কবিতা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তার চেষ্টা কবিদেরই করতে হবে।
যেমন যদি কোন অনুষ্ঠানে (এমনকি কবিতার অনুষ্ঠান হলেও) উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এবার থেকে সে জায়গায় উদ্বোধনী আবৃত্তি পরিবেশন করার চেষ্টা করতে পারি। যদিও গানও কবিতা। তবু কাব্য রস যে আলাদা বিষয় তা মানুষের মনে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব কবি ও কবিতা চর্চা অনুরাগীদের নিতে হবে।
এই উদ্বোধনী আবৃত্তি কোন না কোন একদিন সফল হবেই হবে। কবি ও কবিতা চর্চা অনুরাগীদের হাত ধরে কবিতার আসরে পরিবেশিত হবেই হবে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ওয়াহিদ ২৪/০৯/২০১৩Valo post
-
সহিদুল হক ২৩/০৯/২০১৩লেখাটি প্রবন্ধ ক্যাটাগরিতে ফেললে ভাল হত।
-
ইব্রাহীম রাসেল ২৩/০৯/২০১৩--অভিজ্ঞতায় অনেকেই উপকৃত হবে।--
-
সুবীর কাস্মীর পেরেরা ২২/০৯/২০১৩দাদা শিক্ষামূলক লেখা
-
Înšigniã Āvî ২২/০৯/২০১৩ঠিক বলেছেন, ভাল লাগলো