www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ব্লগার হত্যা এবং সরকারের করনীয়

ব্লগার হত্যা এবং সরকারের করনীয়

দ্বীপ সরকার

ব্লগার এবং কবি লেখকদের মধ্যে নীতিগত কোন পার্থক্য নেই। ব্লগার অর্থই মূলত লেখক। যে সকল কবি লেখক ব্লগে লেখেন তারাই ব্লগার। এটা মূলত অনলাইন এ্যক্টিভিটরদের জন্য। যারা কবি তারা কবিতা পোষ্ট করে থাকেন।  যারা লেখক তারা প্রবন্ধ নিবন্ধ বিভিন্ন ফিচার লিখে থাকেন। যে যে বিষয়ে লিখতে পারেন। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, সংবাদ, ফটো ইত্যাদী।  তাই ব্লগার বলে আলাদ করে মানে খোঁজার কোন হেতু নেই।
ব্লগ সাইটগুলো উন্মুক্ত। এখানে যে যেভাবে চর্চা করতে পারেন সেটাই হতে পারে। কিছু কিছু ব্লগে মডারেটর যাচাই বাচাই করে পোষ্টটি প্রকাশ করেন। আবার কোনটাতে সরাসরি প্রথম পেজে লেখা আসে। তবে অধিকাংশ ব্লগে যাচাই বাচাই নেই বললেই চলে। অনেক নিয়ম কানুন লেখা থাকে ব্লগে।  ধর্মের বিরুদ্ধে লেখা যাবেনা, দেশের বিরুদ্ধে লেখা যাবেনা। এরকম অনেক নিয়ম থাকে। কিন্ত সেগুলোর বাস্তবায়ন নেই। সে কারনেই মুক্তমনা অর্থকে উপজীব্য করে অনেকে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেন এবং নিচ্ছেন। স্বেচ্ছাচারিতা বল্লাম একারনে যে সবকিছুরই একটা অবয়ব আছে, পরিসীমা আছে এবং বাধ্যবাধকতা আছে। থাকতে হবে। কিন্ত অনেক ব্লগার  হয়তো সেটা নাকের উপরে রেখে ব্লগ চর্চা করছেন।
দেশের সাধারন জনগোষ্টি কবি সাহিত্যিক, লেখক, গবেষককে এখনো সম্মান করেন এবং যুগে যুগে সেটা ছিলো। সামাজিক ভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে তারা সব সময় সম্মানের ব্যক্তি।  তাদেরকে সমাজের দর্পণও বলা হয়ে থাকে। কিন্ত একজন ব্লগারের নাম শুনলে অনেকে আঁতকে ওঠেন। অথচ ব্লগার আর কবি, লেখক, গবেষকদের মধ্যে নীতিগত পার্থক্য নেই। এ কারনেই কথাটা আগেই বলেছি। দেশের খুব অল্প সংখ্যক ব্লগার অাছে যারা বিতর্কিত কোন কিছু লিখে নিজেকে প্রকাশ করতে চান এবং করছেন।  নিজেকে বোদ্ধা বলে দাবি করেন। অন্যদিকে ব্লগসমাজের বৃহদাংশরাই নিজ নিজ পরিসীমায় বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করছেন। অনেকে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বিধি বিধান ও শরা শরিয়তের বিষয়াদি নিয়ে লিখছেন। বেশ ভালোও করছেন। তারা প্রশংসাও কুড়োচ্ছেন বটে। এখানে কেউ যুক্তিতে হেনস্তা করার চেষ্টা করেন আবার পাল্টা যুক্তি প্রদর্শন করছেন অনেকে। তবে বিতর্ক বা তর্ক করে নয়। এরকম অনেক ব্লগ স্পট আছে। কিন্ত মুষ্টিমেয় কিছু ব্লগার এই সুন্দর বুদ্ধি চর্চার জায়গাটাকে কলঙ্কিত করছেন। ব্লগ সমাজকে সাধারন মানুষের নিকট ভিন্ন অর্থে উপস্থাপন করছেন। সাধারন মানুষ ব্লগার বললেই নাস্তিক হিসেবে  বোঝেন । এখানেই দুঃখবোধ হয়। সুচিন্তার মানুষ মনে করেন না কেনো। এটা তো ব্লগারদের কারনেই হচ্ছে।
তাই প্রত্যেক ব্লগারকে কিছুটা বিধি নিষেধ মেনে চিন্তা করা উচিত,বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করা উচিত।

নাস্তিকতা নিয়ে কিছুটা ভুল ধারনা আছে। একই ধর্মের ভেতরে আস্তিক এবং নাস্তিকের বিষয় নিহিত। অন্য ধর্মের সাথে নয়। বিশেষতঃ ইসলাম ধর্ম পালন করতে করতে যদি কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রসুল হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে ঘিরে আক্বিদাগত প্রশ্ন তোলেন, বিশ্বাসের জায়গায় খাদ সৃষ্টি হয় তখনই ধর্ম মতে তাকে নাস্তিক বলা যাবে এবং অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হলে তখন তিনি মুর্তাদ হবেন। অন্য ধর্মের লোক নাস্তিক হবেননা। কারন তারা তো ইসলাম ধর্মাবলম্বীনয়। আদর্শগত,জন্মগত ভাবেই শির্ক করেন। একত্ববাদে বিশ্বাসী নয়, তারা বহুত্ববাদে বিশ্বাসী।

নাস্তিকবাদী লেখক গবেষক এদেশে অল্প সংখ্যক। তারা নবী সাঃ এর আদর্শকে গ্রহন করেন না বা বিভিন্ন প্রশ্ন তোলেন । ধর্মকে ওভাবে মানতে নারাজ।  আর ধর্মের পক্ষের গবেষক, লেখক সে তুলনায় অনেক বেশি। অথচ ব্লগার শুনলে একতরফা নাস্তিক বলে সমস্ত ব্লগারকে তিরস্কার করা হয়, অপবাদ দেয়া হয় । আলাদা ধর্ম পালনকারী ইসলাম ধর্মকে কুলষিত করলে তাতে ইসলাম ধর্মের যায় আসেনা। কারন তিনি অন্য ধর্মের। তিনি এই ধর্মের বিরুদ্ধেই বলবেন । তবে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এটাও করা যাবেনা। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে লাগে এমন কথা বলাও যাবেনা লেখাও যাবেনা। যখনি কেউ এই রুপ করছেন তখনি তাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিতর্কিত মনে করা হচ্ছে। বিতর্কিত লেখক হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন। আর তখনি তাদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসছে। লেখক মানেই মুক্তমনা , মুক্তচিন্তার চর্চাকারি। কিন্ত এই কথাকে ঘিরে ধর্মের আঁতে ঘা মেরে লেখা উচিত নয়। মুক্ত চিন্তা বা মুক্তমনা বা মুক্ত বুদ্ধির চর্চা মানে এই নয় যে ধর্মকারীদের বিষদগার করা ,নবী রাসুলদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করা। যে ভাষা শিক্ষিত মানুষেরা একেবারে  এড়িয়ে চলেন সেই ভাষায় আল্লাহ,নবী রাসুলদের গালমন্দ করা। এটা কখনো মুক্তমনা নয়। দেশের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গতি - অসঙ্গতি আছে সেগুলো নিয়ে তর্ক যুক্তি প্রদর্শন করা যেতে পারে। দিস্তা দিস্তা কাগজ ফুরিয়ে লেখা যেতে পারে, জন সম্মুখে উপস্থাপন করা যেতে পারে  কিন্ত কেবল ধর্মকেই বেছে নিয়ে এমনটি কেনো। ধর্মের বিরুদ্ধে কলম ধরে ধর্মপালনকারীদের উস্কে দেয়া নয় কি ?  ধর্মের বাড়াবাড়ি মুক্তমনার সংজ্ঞা নয়। একারনেই যারা ধর্মকে বেশি ভাবেন, বেশি চিন্তা করেন হয়তো তাদের ইগোতে লাগছে আর তখনি হত্যার মত জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে । আবার এটাও সত্য কোন হত্যাকান্ডই শরিয়ত বা ইসলাম ধর্ম সমর্থন করেনা। হত্যাকে পুঁজি করে মানুষকে হেদায়াত করা যাবেনা। একমাত্র কুরআন এবং নবী সাঃ এর হাদিসের রেফারেন্স ব্যবহার করে সঠিক যুক্তি প্রদর্শন করেই মানুষকে যতটুকু ভালো করা যায়। কুরআন, হাদিসের উপরে আর কোন যুক্তি নেই। কিন্ত হত্যাকারীরা সে সব যুক্তি জানেন না হয়তোবা। তাই কুরআনিক যুক্তিতে না গিয়ে হত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।  হত্যা করে মানুষকে সৎপথে আনা যায় না। হত্যা হত্যাই। এখানে ভালো বলে কিছু নেই। হত্যা করে ধর্ম পালিত হয়না। হত্যার যে পাপ এটা তার ঘাড়ে বর্তাবেই।  এটা উগ্রবাদীদের কাজ। উগ্রবাদী বা জঙ্গীবাদী কখনও দেশ বা জাতির সুফল বয়ে আনতে পারবেনা। পাকিস্তান, আফগানিস্তান এর স্বরূপ দৃষ্টান্ত।

ব্লগার হত্যার বিষয়ে সরকারের অনেক করনীয় আছে। কিন্ত সরকারের নাক গলানো দেখা যাচ্ছেনা। এ পর্যন্ত ছয় জন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার কোনটার কুলকিনারা করতে পারেনি। এটা ইচ্ছাশক্তির ঘাটতে অবশ্যই।  প্রিন্ট প্রকাশনা ভিত্তিক লেখকদের প্রতি জঙ্গীবাদীদের তেমন দৃষ্টি নেই। কারন তারা ব্লগারের আওদায় নয়। দৃষ্টি শুধু অনলাইন ভিত্তিক লেখকদের প্রতি। অনলাইন লেখকদের একটা অংশই ব্লগে লেখালেখি করেন। তারাই ব্লগার। ব্লগে লেখালেখি করেন এমন সংখ্যাও যে অনেক তাও নয়। তাই সরকারের উচিত দেশের সকল ব্লগারদের তালিকা তৈরি করা। প্রত্যেক ব্লগারের লেখা পর্যবেক্ষণ  করা। আইন তৈরী করে কিছুটা বিধি নিষেধ আরোপ করা, যাতে কেউ যত্রতত্র লিখে বিতর্ক সৃষ্টি করতে না পারে। সকল ব্লগারের নিরাপত্তা বিধান করা। কারন হত্যাকারীদের দৃষ্টি শুধু ব্লগার নয়। এদের দৃষ্টি সুদূর প্রসারি। শাসকগোষ্টিও হতে পারে তাদের নজরবন্দি।
এ দেশের মানুষ শান্তিকামী। সকল সময় শান্তি চায়। আর ব্লগার হত্যা নয়। সাধারন মানুষ যেনো ব্লগার বলে একপেশে নাস্তিক ভেবে বিষদগার না করে। ব্লগার মানে সুচিন্তার লেখক এই বুঝ মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে। এ দায়িত্ব ব্লগারদেরই নিতে হবে।
লেখাঃ১৯/৮/১৫ইং
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৮১৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/০৮/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast