মাটির পুতুল
জব্বার সাহেব মেলায় যাবার প্রস্ততি নিচ্ছিলেন। জব্বার সাহেবের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলেটা ছোট, নিতু। বয়স ৪ বৎসর। আর মেয়ে জিতু নিতুর চেয়ে তিন বৎসরের বড়। সাত বৎসর বয়স । দুই জনই বাবার সাথে মেলায় যাবার বায়না ধরলো। জব্বার সাহেব আদর করে দুজনকে দুই কাঁধে নিলেন । নিতুকে ডান কাঁধে আর জিতুকে বাম কাঁধে। মাটির রাস্তা। বাড়ি থেকে মেলা খুব বেশি দূরে নয়। তাই জব্বার সাহেব হেঁটেই মেলায় চললেন। চার পাশে ইরি ধানের সবুজ শ্যামল মন মাতানো রং। নিতু আনন্দে আত্নহারা। এমনিতে শিশুরা বাবা, দাদা,নানা,র কাঁধ পেলে তো নাওয়া খাওয়া ভুলে যায়। তার ওপর মেলা বলে কথা। সব মিলিয়ে নিতু জিতু খুশিতে আনন্দে বাবার কাঁধে লাফাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা মেলায় পৌঁছলো। জব্বার সাহেব কাঁধ থেকে দুজনকেই নামিয়ে ভীড়ের মধ্যো হাঁটা শুরু করলেন। এটা সেটা কেনা শুরু করলেন । সামনে নানান রঙের মাটির পুতুল দেখতে পেলো নিতু। নিতুর তো মাথা খারাপ। পুতুল দেখলে নিতুর আর কিছু চাইনা। বাবার হাত টেনে ওদিকেই নিয়ে যাবার চেষ্টা করলো। জিতু একটু বড় তাই নিতুর বায়নার সাথে জিতুও বল্লোঃ আব্বু পুতুল নিয়ে দাও। নিতু দেখো পুতুল নেয়ার জন্য হাত টানছে। জব্বার সাহেব সুন্দর ও মন কাড়া কারুকাজ দেখে দুজনকে দুটি পুতুল কিনে দিলেন। নিতুকে একটি লুঙ্গির কারুকাজ মন্ডিত ছেলে পুতুল আর জিতুকে একটি শাড়ীর কারুকাজ মন্ডিত মেয়ে পুতুল কিনে দিলেন । দুই ভাই বোন ছেলে আর মেয়ে পুতুল দিয়ে খেলবে। এর পর জব্বার সাহেব আরো কিছু কিনলেন । মাছ -মাংস, চিড়া -মুড়কি, মিঠাই - মন্ডাই, বেলুণ,ঘুড়ি আরো প্রয়োজনীয় কি কি সব। আকাশে মেঘের গুড় গুড় শব্দ শুনে বেশি সময়ক্ষেপণ না করে নিতু,জিতুকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলেন। এবার হেঁটে নয় ঘোড়ার গাড়ীতে চড়ে বাড়ি ফিরলেন। নিতু যতটা শান্ত ততটাই দুষ্ট। বাড়ীতে ফিরতে না ফিরতেই পুতুল নিয়ে উধাও। সাথেকার আর আর খেলার সাথীদের সাথে কখন এভাবে হারিয়ে যায় কেউ টের পায়না। অনেক খুঁজে ফের নিতুকে পায়। নিতু কেবলি ক,খ শিখছে। কথা এখনো খুব স্পষ্ট হয়নি। জিতু ক্লাস ফোরে পড়াশোনা করে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে। জিতুই স্কুল থেকে এসে নিতুকে সামলায়। মা জোলেখা একটু রাগীত প্রকৃতির। তাই নিতুকে মাঝে মধ্যে ইঁচড়ে পাকা বলে আচ্ছামত থাপড়ায়। নিতু জিতু ফুরসুত পেলেই দুই ভাই বোন পুতুল দিয়ে বিয়ে বিয়ে খেলে। নিতু পুতুলের মুখে মধ্যে মিশেলে পানি ও ভাত গুঁজে দেয়। খাও সোনা, খাও। পুতুলের গায়ে কাপড়ের টুকরো দিয়ে লুঙ্গি পড়িয়ে একা একাই আহলাদে হাসে। পুতুল খেলা নিয়ে থেকে থেকে দুই ভাই বোনের মধ্যে মারামারিও জমে বেশ। মা এসে দুজনকেই চর মেরে মারামারি থামিয়ে দেয়। জিতুকে হাতের কাজ করার জন্য একটু বেশি শাসন করে।
মেলার তিন দিন পর। বসন্ত কালের দুপুর। ঠাঁ ঠাঁ রোদ। নিতু কখন পুতুল নিয়ে বেরিয়েছে কেউ দেখেনি। বাবা জব্বার সাহেব ছোটো মোটো চাকুরি নিয়ে ব্যস্ত। সকালে যায় বিকেলে আসে। মা গৃহিণী সংসারের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। জিতু স্কুলে যায়। এই সুযোগে নিতু পুতুল নিয়ে উধাও। ইদানিং মেলার পুতুল পেয়ে ক,খ শিখেছিলো সেটাও ভুলে গেছে। পড়ার কথা বললে নাক কানে তুলে হিক হিক করে হাসে।
মা জোলেখা বেগম অনেকক্ষণ ধরে খুঁজে খুঁজে সেই বটতলার ভয়ঙ্কর জায়গা থেকে ধরে নিয়ে আসলেন।
আনার সময় রাস্তার মধ্যেই খানিকটা পিট চাপড়ালো নিতুর। নিতু কাঁদতে কাঁদতে আসলো। জোলেখা বেগম বুঝে নিলো এই পুতুলই এদেক সর্বনাশ করবে। পুতুলগুলো পুসকুনিতে ফেলে দেবে বলে মনে মনে ভাবছে আর স্বামীর জব্বার সাহেবকেও খুব বকছে। ' এই মদ্দাটা ছাওয়াল গুলোকে নষ্ট করবে তাই এই সব পুতুল টুতুল কিনে দেছে, আর পারি না বাপু। '' এর মধ্যে জিতুও স্কুল থেকে আসলো। বৃহস্পতিবার দুইটা বাজতে বাজতেই আসে। জব্বার সাহেবও লাঞ্চ করার জন্য বাড়ি আসলো। জোলেখা বেগম স্বামীকে দেখে আরো চটে উঠলো। ' মদ্দা মেলায় পুতুল ছাড়া আর কিছু আছলো না '' এ্যখন পড়া শোনা ঘুঁটে খা '' । জব্বার সাহেব এমনি তে বৌকে ভয় পায়। জিতুও মাকে ভয় পায়। এমন সময় জোলেখা বেগম জিতুর চুলের ঝুঁটি ধরে বলে, ' এই তোরকেরে পুতুলটা কই নিয়ে আয়তো আজি এ্যার কেল্লা ফতে করমো ' জিতু কাঁদতে কাঁদতে নিতুরটা এবং ওর নিজেরটা সহ দুই পুতুলই খাটের নিচ থেকে নিয়ে এসে মা,র হাতে তুলে দিলো। জিতুর পুতুল আনা দেখে নিতু ওর বোনের চোখ মুখ খামচাতে লাগলো। আর অস্পষ্ট ভাষায় পুতুল দাও পুতুল দাও বলতে লাগলো। এর মধ্য জোলেখা বেগম দুই পুতুল বাড়ির পাশের পুসকুনিতে এক ঝটকায় দূরে নিক্ষেপ করে ফেলে দিয়ে আসলো।
নিতুটা ওর মায়ের পা ছাড়ছিলোনা। শক্ত করে ধরেছে যেনো পুতুল ফেলে দিতে না পারে। তারপরেও শিশুদের মনের চাহিদা আর চোখের কান্নার দিকে না তাকিয়ে পুতুল দুইটা ফেলে দিয়ে আসলেন। জব্বার সাহেব রাগে গদ গদ করলেও মুখে কিছু বলার সাহস করলোনা। জিতু আর নিতু পুসকুনির পাশেই দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ওদের চোখে মুখে নিদারুন অবোধ শিশুর প্রলাপ।
লেখাঃ ১০/৩/১৫ইং
মেলার তিন দিন পর। বসন্ত কালের দুপুর। ঠাঁ ঠাঁ রোদ। নিতু কখন পুতুল নিয়ে বেরিয়েছে কেউ দেখেনি। বাবা জব্বার সাহেব ছোটো মোটো চাকুরি নিয়ে ব্যস্ত। সকালে যায় বিকেলে আসে। মা গৃহিণী সংসারের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। জিতু স্কুলে যায়। এই সুযোগে নিতু পুতুল নিয়ে উধাও। ইদানিং মেলার পুতুল পেয়ে ক,খ শিখেছিলো সেটাও ভুলে গেছে। পড়ার কথা বললে নাক কানে তুলে হিক হিক করে হাসে।
মা জোলেখা বেগম অনেকক্ষণ ধরে খুঁজে খুঁজে সেই বটতলার ভয়ঙ্কর জায়গা থেকে ধরে নিয়ে আসলেন।
আনার সময় রাস্তার মধ্যেই খানিকটা পিট চাপড়ালো নিতুর। নিতু কাঁদতে কাঁদতে আসলো। জোলেখা বেগম বুঝে নিলো এই পুতুলই এদেক সর্বনাশ করবে। পুতুলগুলো পুসকুনিতে ফেলে দেবে বলে মনে মনে ভাবছে আর স্বামীর জব্বার সাহেবকেও খুব বকছে। ' এই মদ্দাটা ছাওয়াল গুলোকে নষ্ট করবে তাই এই সব পুতুল টুতুল কিনে দেছে, আর পারি না বাপু। '' এর মধ্যে জিতুও স্কুল থেকে আসলো। বৃহস্পতিবার দুইটা বাজতে বাজতেই আসে। জব্বার সাহেবও লাঞ্চ করার জন্য বাড়ি আসলো। জোলেখা বেগম স্বামীকে দেখে আরো চটে উঠলো। ' মদ্দা মেলায় পুতুল ছাড়া আর কিছু আছলো না '' এ্যখন পড়া শোনা ঘুঁটে খা '' । জব্বার সাহেব এমনি তে বৌকে ভয় পায়। জিতুও মাকে ভয় পায়। এমন সময় জোলেখা বেগম জিতুর চুলের ঝুঁটি ধরে বলে, ' এই তোরকেরে পুতুলটা কই নিয়ে আয়তো আজি এ্যার কেল্লা ফতে করমো ' জিতু কাঁদতে কাঁদতে নিতুরটা এবং ওর নিজেরটা সহ দুই পুতুলই খাটের নিচ থেকে নিয়ে এসে মা,র হাতে তুলে দিলো। জিতুর পুতুল আনা দেখে নিতু ওর বোনের চোখ মুখ খামচাতে লাগলো। আর অস্পষ্ট ভাষায় পুতুল দাও পুতুল দাও বলতে লাগলো। এর মধ্য জোলেখা বেগম দুই পুতুল বাড়ির পাশের পুসকুনিতে এক ঝটকায় দূরে নিক্ষেপ করে ফেলে দিয়ে আসলো।
নিতুটা ওর মায়ের পা ছাড়ছিলোনা। শক্ত করে ধরেছে যেনো পুতুল ফেলে দিতে না পারে। তারপরেও শিশুদের মনের চাহিদা আর চোখের কান্নার দিকে না তাকিয়ে পুতুল দুইটা ফেলে দিয়ে আসলেন। জব্বার সাহেব রাগে গদ গদ করলেও মুখে কিছু বলার সাহস করলোনা। জিতু আর নিতু পুসকুনির পাশেই দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ওদের চোখে মুখে নিদারুন অবোধ শিশুর প্রলাপ।
লেখাঃ ১০/৩/১৫ইং
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জাহিদুর রহমান ১৪/০৪/২০১৫সুন্দর লিখেছেন ।
-
ফারুক নুর ০৫/০৪/২০১৫অনেক সুন্দর লিখেছেন ।
-
দ্বীপ সরকার ৩০/০৩/২০১৫সকলকে ধন্যবাদ।
-
মোঃ সাইফুল ইসলাম ২৯/০৩/২০১৫দারুণ!
-
ঐশিকা বসু ২৯/০৩/২০১৫দুঃখের গল্প। কিন্তু মনডা টানে। দোয়া রইল লেখককে।
-
সবুজ আহমেদ কক্স ২৯/০৩/২০১৫গল্প ইজ নাইস
-
তুষার রায় ২৮/০৩/২০১৫ছেলেবেলার মুহূর্তগুলো চোখের সামনে তুলে ধরল গল্পটি.........শুভ কামনা লেখক
-
অ ২৮/০৩/২০১৫সুন্দর গল্প ।
-
সাইদুর রহমান ২৮/০৩/২০১৫ভালো লাগলো গল্পটি।
অনেক শুভেচ্ছা। -
আবিদ আল আহসান ২৮/০৩/২০১৫অসাধারণ