টিকটক তিথি
বড়লোকের বেটিলো লম্বা লম্বা চুল
এমন মাথায় বেঁধে দেব লাল গেন্দা ফুল...!
হাই ভলিউমে তিথির রুম থেকে গানের স্বর ভেসে আসে ।
চোখাচোখি হয় বাবা মায়ের ।
পলকেই যেন তারা তাদের যন্ত্রণার বাকহীন চিনচিনে ব্যথাটুকু বিনিময় করে ফেলে ।
এ নখরামি নতুন কিছু নয় । তবুও স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে গজরাতে থাকেন মা---
ঐ শোন, তোমার মেয়ে আবার টিকটক ভিডিও বানাতে বসেছে ।
যত্তসব বেলেল্লাপনা ।
তুমি কি তাকে কিছু বলবে ?
অসহ্য !
বলেই খাবার টেবিল থেকে উঠে যায় ছোটন । বড় আপুকে নিয়ে বাবা মায়ের এই বাকবিতণ্ডায় সে থাকতে চায় না ।
কাল ওর ছোট মামি ফোন দিয়ে টিপ্পনী কেটে কি বলল শুনবে, বলে কি --- ভাবি তিথির নতুন টিকটক ভিডিওটা তো এক লাখ প্লাস ভিউ হয়েছে, দেখেছেন ? আপনি তো এখন সেলিব্রেটির মা...।
শুধু যে তার ভাবি একথা বলে তা নয় বরং খালা খালুসহ চেনাশোনা অনেকে এ ব্যাপারটা তোলে । যা চরম বিব্রতিকর ।
তিথি সম্পর্কে আত্নীয়-স্বজনদের মুখে বাকাবাকা কথা, প্রতিবেশীদের তেরছা দৃষ্টি, কলিগদের অশ্লীল ইঙ্গিত সব মিলে বাবা মায়ের জীবন অতিষ্ঠ ।
কিন্তু মেয়েকে কোন ভাবেই বুঝাতে পারে না ।
বড় বেয়াড়া এ সময় ।
বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে মেয়েদের মনস্তত্ত্বের খোঁজখবর তাদের জানা । মেয়েকে বুঝাতে চেষ্টা করে---
শোন্ মা, তোর যদি এতই অভিনয় করার ইচ্ছা তখন তুই কোন থিয়েটার গ্রুপে যোগ দে না । আমরা তো নিষেধ করছি না । তাহলে ভবিষ্যতে তুই ভাল কিছু করতে পারবি । এ ব্যাপারে আমরা তোকে সাহায্য করবো ।
তুই টিকটক ভিডিও করা ছেড়ে দে । লোকে নানা রকম কথা বলে । আর তুই যা করছিস তা কি কোন সভ্যতা ভব্যতার মধ্যে পড়ে ?
তুই এসব ছেড়ে দে মা ।
তিথি ভ্রুকুটি দিয়ে তার বাবা মায়ের দিকে তাকায় । যেন তারা ভিনগ্রহের বোকা এলিয়েন ।
আমার ফেইসবুকে দশহাজার ফলোয়ার, একেকটা টিকটক ভিডিও-তে ভিউয়ারের সংখ্যা ষাট সত্তর হাজার । নায়কের মত দেখতে কত ছেলে তাকে ইনবক্স করে ।
ইনিয়েবিনিয়ে কত কথা বলার কসুর করে ।
অর্থে বিত্তে তাদের কাছে তোমরা নস্যি !
তোমরা কিভাবে জানবে আমি কত বড় সেলিব্রেটি !
ভবিষ্যতে আমার পরিচয় তোমাদেরকেও ছাড়িয়ে যাবে ।
এসব কথা ভেবে মনে মনে হাসে তিথি ।
বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে দম্ভের ভঙ্গি করে ।
সবেমাত্র দশম শ্রেণিতে পড়ে সে । এই উড়নচণ্ডি সময়ে এত জনপ্রিয়তা তাকে ধন্ধে ফেলে দেয় । এটা টগবগে আবেগের সময় । চোখে সবকিছু রঙিন ঠেকে ।
এমন সময় পুরো দেশময় একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি শুরু হল ।
মহামারি ভাইরাস করোনার ভয়ে সবাই জড়সড় ।
সরকার সারাদেশে লক ডাউনের ঘোষণা দেয় ।
স্থবির যাপিত জীবন । তিথির বাবার অফিসও
অফিস বন্ধ । বাসায় বসেই অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারেন । ইদানীং ফেইসবুকেও ঢুঁ মারার সুযোগ হয় তিথির বাবার । স্কিন স্ক্রল করতে করতে একদিন তার মেয়ের একটা টিকটক ভিডিও চলে আসে । কমেন্ট বক্সের কমেন্টগুলোতে চোখ বুলাতেই চোখ ছানাবড়া ।
আল্লাহ তুমি মাটি আলগা কর আর আমি তাতে সেঁধিয়ে যাই !
যে কোন বাবা তার মেয়েকে উদ্দেশ্য করে এমন অসভ্য কমেন্ট শুনলে মাটিতে মিশে যেতে চাইবে ।
এত আতঙ্কের মধ্যেও তিনি একটা গভীর দুঃখবোধ অনুভব করলেন । কিন্তু মেয়ের সাথে ওসব নিয়ে আলাপ করা হয় না তার ।
শামুকের গতিতে কাটছিল দেয়ালবন্দি সময় ।
কাল সকালে যখন দুই বার তিথিকে ডেকেও তার মা তাকে জাগাতে পারেনি তখন তার বাবাকে ডাকতে বলে ।
দরজায় বজ্রের মত করাঘাত করে তার বাবা । তারপরও যখন ভিতর থেকে কোন সাড়া পাওয়া গেল না তখন বাবা মায়ের মন নানা রকম কু-ডাকতে আরম্ভ করল ।
দরজা কি ভাঙবে ? নাকি চাবিওয়ালে ডেকে লক খুলবে, এ নিয়ে অনেকক্ষণ সিদ্ধান্তহীনতায় থাকে তারা । তারপরের দৃশ্যটা খুবই বিভৎস !
ছোটগল্প : টিকটক তিথি
হুসাইন দিলাওয়ার
এমন মাথায় বেঁধে দেব লাল গেন্দা ফুল...!
হাই ভলিউমে তিথির রুম থেকে গানের স্বর ভেসে আসে ।
চোখাচোখি হয় বাবা মায়ের ।
পলকেই যেন তারা তাদের যন্ত্রণার বাকহীন চিনচিনে ব্যথাটুকু বিনিময় করে ফেলে ।
এ নখরামি নতুন কিছু নয় । তবুও স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে গজরাতে থাকেন মা---
ঐ শোন, তোমার মেয়ে আবার টিকটক ভিডিও বানাতে বসেছে ।
যত্তসব বেলেল্লাপনা ।
তুমি কি তাকে কিছু বলবে ?
অসহ্য !
বলেই খাবার টেবিল থেকে উঠে যায় ছোটন । বড় আপুকে নিয়ে বাবা মায়ের এই বাকবিতণ্ডায় সে থাকতে চায় না ।
কাল ওর ছোট মামি ফোন দিয়ে টিপ্পনী কেটে কি বলল শুনবে, বলে কি --- ভাবি তিথির নতুন টিকটক ভিডিওটা তো এক লাখ প্লাস ভিউ হয়েছে, দেখেছেন ? আপনি তো এখন সেলিব্রেটির মা...।
শুধু যে তার ভাবি একথা বলে তা নয় বরং খালা খালুসহ চেনাশোনা অনেকে এ ব্যাপারটা তোলে । যা চরম বিব্রতিকর ।
তিথি সম্পর্কে আত্নীয়-স্বজনদের মুখে বাকাবাকা কথা, প্রতিবেশীদের তেরছা দৃষ্টি, কলিগদের অশ্লীল ইঙ্গিত সব মিলে বাবা মায়ের জীবন অতিষ্ঠ ।
কিন্তু মেয়েকে কোন ভাবেই বুঝাতে পারে না ।
বড় বেয়াড়া এ সময় ।
বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে মেয়েদের মনস্তত্ত্বের খোঁজখবর তাদের জানা । মেয়েকে বুঝাতে চেষ্টা করে---
শোন্ মা, তোর যদি এতই অভিনয় করার ইচ্ছা তখন তুই কোন থিয়েটার গ্রুপে যোগ দে না । আমরা তো নিষেধ করছি না । তাহলে ভবিষ্যতে তুই ভাল কিছু করতে পারবি । এ ব্যাপারে আমরা তোকে সাহায্য করবো ।
তুই টিকটক ভিডিও করা ছেড়ে দে । লোকে নানা রকম কথা বলে । আর তুই যা করছিস তা কি কোন সভ্যতা ভব্যতার মধ্যে পড়ে ?
তুই এসব ছেড়ে দে মা ।
তিথি ভ্রুকুটি দিয়ে তার বাবা মায়ের দিকে তাকায় । যেন তারা ভিনগ্রহের বোকা এলিয়েন ।
আমার ফেইসবুকে দশহাজার ফলোয়ার, একেকটা টিকটক ভিডিও-তে ভিউয়ারের সংখ্যা ষাট সত্তর হাজার । নায়কের মত দেখতে কত ছেলে তাকে ইনবক্স করে ।
ইনিয়েবিনিয়ে কত কথা বলার কসুর করে ।
অর্থে বিত্তে তাদের কাছে তোমরা নস্যি !
তোমরা কিভাবে জানবে আমি কত বড় সেলিব্রেটি !
ভবিষ্যতে আমার পরিচয় তোমাদেরকেও ছাড়িয়ে যাবে ।
এসব কথা ভেবে মনে মনে হাসে তিথি ।
বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে দম্ভের ভঙ্গি করে ।
সবেমাত্র দশম শ্রেণিতে পড়ে সে । এই উড়নচণ্ডি সময়ে এত জনপ্রিয়তা তাকে ধন্ধে ফেলে দেয় । এটা টগবগে আবেগের সময় । চোখে সবকিছু রঙিন ঠেকে ।
এমন সময় পুরো দেশময় একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি শুরু হল ।
মহামারি ভাইরাস করোনার ভয়ে সবাই জড়সড় ।
সরকার সারাদেশে লক ডাউনের ঘোষণা দেয় ।
স্থবির যাপিত জীবন । তিথির বাবার অফিসও
অফিস বন্ধ । বাসায় বসেই অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারেন । ইদানীং ফেইসবুকেও ঢুঁ মারার সুযোগ হয় তিথির বাবার । স্কিন স্ক্রল করতে করতে একদিন তার মেয়ের একটা টিকটক ভিডিও চলে আসে । কমেন্ট বক্সের কমেন্টগুলোতে চোখ বুলাতেই চোখ ছানাবড়া ।
আল্লাহ তুমি মাটি আলগা কর আর আমি তাতে সেঁধিয়ে যাই !
যে কোন বাবা তার মেয়েকে উদ্দেশ্য করে এমন অসভ্য কমেন্ট শুনলে মাটিতে মিশে যেতে চাইবে ।
এত আতঙ্কের মধ্যেও তিনি একটা গভীর দুঃখবোধ অনুভব করলেন । কিন্তু মেয়ের সাথে ওসব নিয়ে আলাপ করা হয় না তার ।
শামুকের গতিতে কাটছিল দেয়ালবন্দি সময় ।
কাল সকালে যখন দুই বার তিথিকে ডেকেও তার মা তাকে জাগাতে পারেনি তখন তার বাবাকে ডাকতে বলে ।
দরজায় বজ্রের মত করাঘাত করে তার বাবা । তারপরও যখন ভিতর থেকে কোন সাড়া পাওয়া গেল না তখন বাবা মায়ের মন নানা রকম কু-ডাকতে আরম্ভ করল ।
দরজা কি ভাঙবে ? নাকি চাবিওয়ালে ডেকে লক খুলবে, এ নিয়ে অনেকক্ষণ সিদ্ধান্তহীনতায় থাকে তারা । তারপরের দৃশ্যটা খুবই বিভৎস !
ছোটগল্প : টিকটক তিথি
হুসাইন দিলাওয়ার
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অধীতি ১২/০৪/২০২০
-
মশিউর ইসলাম (বিব্রত কবি) ১১/০৪/২০২০খুব ভালো
-
জুনায়েদ বি রাহমান ০৮/০৪/২০২০সমসাময়িক প্লট। হৃদয় ছুঁয়ে শেষ হলো।
-
ফয়জুল মহী ০৮/০৪/২০২০মন আন্দোলিত হল।
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৮/০৪/২০২০বেশ!
-
স্বপ্ন নাগচৌধুরী ০৮/০৪/২০২০বা খুব ভালো
-
স্বপ্ন নাগচৌধুরী ০৮/০৪/২০২০বা
বাস্তবতা তুলে ধরেছেন