লাল ঝাণ্ডা
লাল ঝাণ্ডা
হুসাইন দিলাওয়ার
পছিয়া বাতাসে পতপত করে উড়ে লাল ঝাণ্ডা ।
হঠাৎ গ্রামে লাল ঝাণ্ডার কদর দেখে ঔৎসুক্য জাগে লাল চাঁনের ।
মাথার ওপরে ফাগুনের জ্বালাময়ী সূর্য । মাটির রাস্তায় ধুলোর আস্তরণ । বাতাসে ধুলার উড়াউড়ি । কাঁধে গামছা ফেলে খালি পায়ে হাঁটছে লাল চাঁন । যদিও রাস্তার মাটি গরমে কটকট করছে তারপরও তার হাঁটতে মন্দ লাগে না ।
লাল ঝাণ্ডা !
দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই কর, কেউ খাবে তো কেই খাবে না-তা হবে না তা হবে না, বাঁচাও গরীব বাঁচাও দেশ” !
এমন কতগুলো শ্লোগান আর মিছিলের দৃশ্যপট ভেসে ওঠে তার চোখের সামনে ।
ষাটোর্ধ লাল চাঁন যেন তার অতীতে ফিরে যায় ।
হায় খোদা !
তোমার কি লীলাখেলা । জীবনের শেষ বয়সে এসে কি তবে তুমি আমারে কমিউনিস্ট রাজত্ব দেখার সুযোগ দিলা ।
তোমার প্রতি অশেষ শুকুর মাওলা । তুমি পার না এমন কিছু জগৎডায় নাই ।
নিজে স্কুলের চৌহদ্দি না মাড়ালেও ঢাকাবাসী বামপন্থি নেতা-কর্মীদের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ।
যৌবনের একটা ঘটনা তার মনে পড়ে ।
তাদের গ্রামেই আসবে একজন বড় নেতা । নাম কমরেড ফরহাদ । যদিও তার জন্ম পাশের জেলা পঞ্চগড়ে । কিন্তু ঢাকা কলকাতায় তার নিত্য অানাগোনা । খেত মজুরদের একটি সভায় এসে তিনিই বলেছিলেন--- "কমরেডস বাংলাদেশে একদিন মেহনতি মানুষের সরকার আসবেই, আপনারা একা নন আপনাদের সাথে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী এবং অনেক বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, তারা বসে নেই ।,,
কথাগুলো মনে করে তার বুক আনন্দে ভরে ওঠে ।
একি আর আমাদের মত কামলা লোকের কাম । ঢাকার কমরেডদের শ্রমের ফসল এই লাল ঝাণ্ডা । সারাদিন ফসলের খেতে মুখ বুঁজে হাড় খাটুনি খাটা মানুষ সে । বামপন্থিদের বিভেদ বিভাজন ভাঙনের কিছুই তার কানে পৌঁছায়নি । কিন্তু সুপ্ত আশা লুকিয়ে রাখে বুকে । কইচ্চা ( কাস্তে) পাটির সরকার একদিন আসবেই ।
ঠাকুরগাঁওয়ের এই গ্রামটাকে নিখাদ অজপাড়া বলা যায় । নাই পাকা রাস্তা নাই বিদ্যুতের লাইন।
বেশ কয়েকঘরের ছেলে মেয়েরা বিদেশে গিয়ে কিছু আয় রোজগার করে । বিদেশ ফেরতদের আধিক্য একটু বেশিই কাদিমপুরে ।
গতকাল দুপুরবেলা উপজেলার ইউএনও বিদেশ ফেরতদের বাড়িতে বাড়িতে লাল ঝাণ্ডা এঁটে দেয় । যাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যায়। তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক ।
কিন্ত তখন লাল চাঁন ছিল বিলে । তাই এসব ঘটনার কিছুই জানা নেই তার ।
এবার ফরিদ মোল্লার বাড়িতেও লালা ঝাণ্ডা উড়তে দেখে অবাক হয় সে ।
ফরিদ মোল্লা কি তবে বাম রাজনীতির বশ্যতা স্বীকার করল ?
যে কিনা বিশ্বাস করে --ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যাঁয় হার কারবালা কি বাদ ।
অগত্যা ফরিদ মোল্লার দাওয়ায় গিয়ে বসে লাল চাঁন । গামছা টেনে মুখের ঘাম মুছে ।
কি খবর হে চাঁন মিয়া ? রান্নাঘর থেকে লোল্লার বউয়ের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে ।
এই তো ভাবিসাব, আসলাম একটু আপনাদের খোঁজ খবর নিতে ।
এসময় তসবিহ হাতে ঘর থেকে বের হয় মোল্লা ।
আরে লাল চাঁন তুম্রা হঠাৎ এত্তি আসলেন কেনে বাহে ?
হামার বাড়িত আপাতত বাইরের কারো আসা নিষেধ । কোন খবর রাখিস নি বুঝি !
কেনে কেনে মোল্লা বাই ? কি হইল ফের ?
স্বগত স্বরে জানতে চায় লাল চাঁন । বাম রাজনীতি সম্পর্কে মোল্লার মুখে দু-একটা ভাল কথা শোনার জন্য মোল্লার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে ।
আরে বোকা কোরোনা ভাইরাসের কথা শুনিস নি । খুব কঠিন বেরাম । একবার হলে চৌদ্দগুষ্টি শেষ । রাগত স্বরে জবাব দেয় মোল্লা ।
সুহেল তো ইতালিত আছিল । ঐ দেশের মানুষ মরে মরে এক্কেরে গোরস্তান হয়ে গিছে ।
এসময় কেউ বাহিরে বাহিরে ঘুড়িলে তারও এ রোগ হবা পারে । দেখিস নি লাল পতাকাকা খান । যা যা বাড়িত যা ।
করোনা ভাইরাসের কথা অবশ্য একটু আধটু শুনেছিল লাল চাঁন । তবে এ রোগ যে এত মারাত্মক এবং এ নিয়ে যে কাদিমপুরেও হুলস্থুল পড়ে যাবে এরকম মনে করেনি লাল চাঁন ।
মোল্লা বাড়ি থেকে বের হয়ে হাঁটা দেয় সে ।
লাল ঝাণ্ডা দেখার স্পৃহা কমে না তার ।
পথে পথে হেঁটে লাল ঝাণ্ডা উড়াউড়ি দেখে ।
বাতাসের ঝাপটায় পত পত পত শব্দ করে উড়তে থাকে লাল ঝাণ্ডা ।
হুসাইন দিলাওয়ার
পছিয়া বাতাসে পতপত করে উড়ে লাল ঝাণ্ডা ।
হঠাৎ গ্রামে লাল ঝাণ্ডার কদর দেখে ঔৎসুক্য জাগে লাল চাঁনের ।
মাথার ওপরে ফাগুনের জ্বালাময়ী সূর্য । মাটির রাস্তায় ধুলোর আস্তরণ । বাতাসে ধুলার উড়াউড়ি । কাঁধে গামছা ফেলে খালি পায়ে হাঁটছে লাল চাঁন । যদিও রাস্তার মাটি গরমে কটকট করছে তারপরও তার হাঁটতে মন্দ লাগে না ।
লাল ঝাণ্ডা !
দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই কর, কেউ খাবে তো কেই খাবে না-তা হবে না তা হবে না, বাঁচাও গরীব বাঁচাও দেশ” !
এমন কতগুলো শ্লোগান আর মিছিলের দৃশ্যপট ভেসে ওঠে তার চোখের সামনে ।
ষাটোর্ধ লাল চাঁন যেন তার অতীতে ফিরে যায় ।
হায় খোদা !
তোমার কি লীলাখেলা । জীবনের শেষ বয়সে এসে কি তবে তুমি আমারে কমিউনিস্ট রাজত্ব দেখার সুযোগ দিলা ।
তোমার প্রতি অশেষ শুকুর মাওলা । তুমি পার না এমন কিছু জগৎডায় নাই ।
নিজে স্কুলের চৌহদ্দি না মাড়ালেও ঢাকাবাসী বামপন্থি নেতা-কর্মীদের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ।
যৌবনের একটা ঘটনা তার মনে পড়ে ।
তাদের গ্রামেই আসবে একজন বড় নেতা । নাম কমরেড ফরহাদ । যদিও তার জন্ম পাশের জেলা পঞ্চগড়ে । কিন্তু ঢাকা কলকাতায় তার নিত্য অানাগোনা । খেত মজুরদের একটি সভায় এসে তিনিই বলেছিলেন--- "কমরেডস বাংলাদেশে একদিন মেহনতি মানুষের সরকার আসবেই, আপনারা একা নন আপনাদের সাথে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী এবং অনেক বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, তারা বসে নেই ।,,
কথাগুলো মনে করে তার বুক আনন্দে ভরে ওঠে ।
একি আর আমাদের মত কামলা লোকের কাম । ঢাকার কমরেডদের শ্রমের ফসল এই লাল ঝাণ্ডা । সারাদিন ফসলের খেতে মুখ বুঁজে হাড় খাটুনি খাটা মানুষ সে । বামপন্থিদের বিভেদ বিভাজন ভাঙনের কিছুই তার কানে পৌঁছায়নি । কিন্তু সুপ্ত আশা লুকিয়ে রাখে বুকে । কইচ্চা ( কাস্তে) পাটির সরকার একদিন আসবেই ।
ঠাকুরগাঁওয়ের এই গ্রামটাকে নিখাদ অজপাড়া বলা যায় । নাই পাকা রাস্তা নাই বিদ্যুতের লাইন।
বেশ কয়েকঘরের ছেলে মেয়েরা বিদেশে গিয়ে কিছু আয় রোজগার করে । বিদেশ ফেরতদের আধিক্য একটু বেশিই কাদিমপুরে ।
গতকাল দুপুরবেলা উপজেলার ইউএনও বিদেশ ফেরতদের বাড়িতে বাড়িতে লাল ঝাণ্ডা এঁটে দেয় । যাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যায়। তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক ।
কিন্ত তখন লাল চাঁন ছিল বিলে । তাই এসব ঘটনার কিছুই জানা নেই তার ।
এবার ফরিদ মোল্লার বাড়িতেও লালা ঝাণ্ডা উড়তে দেখে অবাক হয় সে ।
ফরিদ মোল্লা কি তবে বাম রাজনীতির বশ্যতা স্বীকার করল ?
যে কিনা বিশ্বাস করে --ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যাঁয় হার কারবালা কি বাদ ।
অগত্যা ফরিদ মোল্লার দাওয়ায় গিয়ে বসে লাল চাঁন । গামছা টেনে মুখের ঘাম মুছে ।
কি খবর হে চাঁন মিয়া ? রান্নাঘর থেকে লোল্লার বউয়ের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে ।
এই তো ভাবিসাব, আসলাম একটু আপনাদের খোঁজ খবর নিতে ।
এসময় তসবিহ হাতে ঘর থেকে বের হয় মোল্লা ।
আরে লাল চাঁন তুম্রা হঠাৎ এত্তি আসলেন কেনে বাহে ?
হামার বাড়িত আপাতত বাইরের কারো আসা নিষেধ । কোন খবর রাখিস নি বুঝি !
কেনে কেনে মোল্লা বাই ? কি হইল ফের ?
স্বগত স্বরে জানতে চায় লাল চাঁন । বাম রাজনীতি সম্পর্কে মোল্লার মুখে দু-একটা ভাল কথা শোনার জন্য মোল্লার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে ।
আরে বোকা কোরোনা ভাইরাসের কথা শুনিস নি । খুব কঠিন বেরাম । একবার হলে চৌদ্দগুষ্টি শেষ । রাগত স্বরে জবাব দেয় মোল্লা ।
সুহেল তো ইতালিত আছিল । ঐ দেশের মানুষ মরে মরে এক্কেরে গোরস্তান হয়ে গিছে ।
এসময় কেউ বাহিরে বাহিরে ঘুড়িলে তারও এ রোগ হবা পারে । দেখিস নি লাল পতাকাকা খান । যা যা বাড়িত যা ।
করোনা ভাইরাসের কথা অবশ্য একটু আধটু শুনেছিল লাল চাঁন । তবে এ রোগ যে এত মারাত্মক এবং এ নিয়ে যে কাদিমপুরেও হুলস্থুল পড়ে যাবে এরকম মনে করেনি লাল চাঁন ।
মোল্লা বাড়ি থেকে বের হয়ে হাঁটা দেয় সে ।
লাল ঝাণ্ডা দেখার স্পৃহা কমে না তার ।
পথে পথে হেঁটে লাল ঝাণ্ডা উড়াউড়ি দেখে ।
বাতাসের ঝাপটায় পত পত পত শব্দ করে উড়তে থাকে লাল ঝাণ্ডা ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী ০১/০৪/২০২০রক্তে উন্মাদনা আনে। ভালো লেখা।
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ০১/০৪/২০২০সুন্দর লেখা।
-
গাজী তারেক আজিজ ০১/০৪/২০২০দারুণ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ৩১/০৩/২০২০কোথায় সেই আগের কমরেড?
-
ফয়জুল মহী ৩১/০৩/২০২০খুবই ভালো লাগলো।