বিস্মরণের পদচ্ছাপ
ধানমন্ডি লেক । রাত আটটা ।
দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা ফু ফু করে
বাঁশি বাজিয়ে জানান দিচ্ছে, এখন চলে যাওয়ার সময় ৷ নাহিদ জানে এই সিগন্যালের পরও অনেকক্ষণ থাকা যায় লেকে । এরমধ্যে অনেকে আড্ডা ভেঙে ফিরে যেতে শুরু করছে ৷ বেশির ভাগই তরুণ প্রেমিক যুগল। রবীন্দ্র-সরোবরের গোল চত্বরে একটা চক্কর দিয়ে আবার ওভারব্রীজের ওপর এসে দাঁড়াল সে । পায়ের নিচে ছুটন্ত গাড়ির বহর । সাইরেন, রিকশার টুংটাং বেল, বাইকের হরেন ।
এই বেগবান ছুটন্ত গাড়ি দেখতে খুব ভাল লাগে নাহিদের । স্থিরতা তার কাছে অসহনীয় । অপেক্ষা আরো যাতনাময় ।
পাশের বাঁশিওয়ালা মামার দোকানে এক আনাড়ি বংশীবাদক বাজখাঁই সুরে বাঁশি বাজাচ্ছে । পু পু ফ ফ ফুৎ ফুৎ ! এ যেন সুরবিভ্রাট । পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে স্কিনে চোখ রাখতেই বিরক্তিতে ভুরু কুঁচকে উঠে তার ।
মেয়েটার কোন সময় জ্ঞান আছে ? এমন মানুষ নিয়ে চলা তো মুশকিল ।
রাগে বিড়বিড় করতে থাকে ।
এবার লেকের পানিতে ফোটা শাপলাগুলোর দিকে নজর পড়ে তার । ভাবালুতায় মগ্ন হয়ে যায় নাহিদ ৷
হায় শাপলা, শহুরে শাপলা !
কোনদিন হয়তো রাতের আঁধার দেখা হবে এই ফুলগুলোর । কেননা সন্ধ্যা হতে না হতেই ল্যাম্পপোস্টে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়ে দেয়া হয় । দিনের আলো থেকেও এ আলো আরো প্রকট ।
: এ্যই নাগর ! দে দশটাকা দে, এখনি দিবি । টাস টাস করে কয়েকটা হাততালি বাজিয়ে তার আরো কাছাকাছি চলে এলো হিজড়াটা । কড়া মেকাপ আর ঘামের গন্ধে অদ্ভুত একটা সুবাসের আবহ । যেন খুব চেনা তার ।
: এই নায়ক কি ভাবছিস দে টাকা দে । নাইলে চুমা দিমু কইলাম হা ।
অগত্যা মানিপ্ল্যান্ট থেকে একটা দশটাকার নোট বের করল । হিজড়াটার দিকে ভাল করে তাকিয়ে পুড়নো স্মৃতিগুলো তুমুল আলোড়ন তুলল তার স্মৃতিভান্ডারে ।
ছো মেরে টাকটা নিয়ে নিল হিজড়াটা ।
ফ্লাইং কিস দিয়ে একটা ফিচেল হাসি হেসে দুলতে দুলতে চলে গেল । নাহিদ জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ ।
কপাল ঘামে চিকচিক করতে থাকে তার ।
সেই বয়ঃসন্ধির উড়নচণ্ডী সময় ।
গ্রামের হাটে মেলা বসেছে । ফিবছর বসে এই পৌষ মেলা । সার্কাসের ড্রামস আর বাদ্য যন্ত্রগুলো শুনে তার মন উদাস হয়ে থাকে । কিন্তু সে অবধি যাওয়ার দুঃসাহস হয় না ।
তখন ক্লাস সিক্সে পড়ে নাহিদ । ডানপিটে গ্রুপের সে নিষ্ক্রিয় সদস্য । মাঝেমধ্যে অবশ্য অসক্রিয় থাকার উপায় থাকে না ।
একদিন সবাই মিলে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সার্কাস দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা । একটু দোনামোনা করে সেও সেদিন গিয়েছিল তাদের সাথে । দেখিস এবার মঞ্চে আসবে ময়না । তোকে বলেছিলাম না সুন্দরী ময়নার কথা ।
ময়না সার্কাস দলের খুদে নাচিয়ে । যার কথা বন্ধুদের কাছে শুনে শুনে উতলা হয়ে ছিল সে । সত্যি সত্যি বৃহন্নলা মেয়েটার নাচ আর ছলাকলায় অতলতায় ডুবতে থাকে নাহিদ ।
তারপর থেকে কোন অচিন প্রহেলিকায় বার বার ছুটে আসত সার্কাস পার্টির অস্থায়ী তাবূতে । পরে অবশ্যি একজন বড় ভাইয়ের তদবিরে একান্ত কথা বলারও সুযোগ হয়েছিল তার । কিন্তু সে কথাই ছিল শেষ কথা । আজ এত বছর পর কৈশোরের সেই বাঁধভাঙা আবেগ যেন ঝড় তুলে গেল নাহিদের মনের গহন গহীনে ।
দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা ফু ফু করে
বাঁশি বাজিয়ে জানান দিচ্ছে, এখন চলে যাওয়ার সময় ৷ নাহিদ জানে এই সিগন্যালের পরও অনেকক্ষণ থাকা যায় লেকে । এরমধ্যে অনেকে আড্ডা ভেঙে ফিরে যেতে শুরু করছে ৷ বেশির ভাগই তরুণ প্রেমিক যুগল। রবীন্দ্র-সরোবরের গোল চত্বরে একটা চক্কর দিয়ে আবার ওভারব্রীজের ওপর এসে দাঁড়াল সে । পায়ের নিচে ছুটন্ত গাড়ির বহর । সাইরেন, রিকশার টুংটাং বেল, বাইকের হরেন ।
এই বেগবান ছুটন্ত গাড়ি দেখতে খুব ভাল লাগে নাহিদের । স্থিরতা তার কাছে অসহনীয় । অপেক্ষা আরো যাতনাময় ।
পাশের বাঁশিওয়ালা মামার দোকানে এক আনাড়ি বংশীবাদক বাজখাঁই সুরে বাঁশি বাজাচ্ছে । পু পু ফ ফ ফুৎ ফুৎ ! এ যেন সুরবিভ্রাট । পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে স্কিনে চোখ রাখতেই বিরক্তিতে ভুরু কুঁচকে উঠে তার ।
মেয়েটার কোন সময় জ্ঞান আছে ? এমন মানুষ নিয়ে চলা তো মুশকিল ।
রাগে বিড়বিড় করতে থাকে ।
এবার লেকের পানিতে ফোটা শাপলাগুলোর দিকে নজর পড়ে তার । ভাবালুতায় মগ্ন হয়ে যায় নাহিদ ৷
হায় শাপলা, শহুরে শাপলা !
কোনদিন হয়তো রাতের আঁধার দেখা হবে এই ফুলগুলোর । কেননা সন্ধ্যা হতে না হতেই ল্যাম্পপোস্টে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়ে দেয়া হয় । দিনের আলো থেকেও এ আলো আরো প্রকট ।
: এ্যই নাগর ! দে দশটাকা দে, এখনি দিবি । টাস টাস করে কয়েকটা হাততালি বাজিয়ে তার আরো কাছাকাছি চলে এলো হিজড়াটা । কড়া মেকাপ আর ঘামের গন্ধে অদ্ভুত একটা সুবাসের আবহ । যেন খুব চেনা তার ।
: এই নায়ক কি ভাবছিস দে টাকা দে । নাইলে চুমা দিমু কইলাম হা ।
অগত্যা মানিপ্ল্যান্ট থেকে একটা দশটাকার নোট বের করল । হিজড়াটার দিকে ভাল করে তাকিয়ে পুড়নো স্মৃতিগুলো তুমুল আলোড়ন তুলল তার স্মৃতিভান্ডারে ।
ছো মেরে টাকটা নিয়ে নিল হিজড়াটা ।
ফ্লাইং কিস দিয়ে একটা ফিচেল হাসি হেসে দুলতে দুলতে চলে গেল । নাহিদ জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ ।
কপাল ঘামে চিকচিক করতে থাকে তার ।
সেই বয়ঃসন্ধির উড়নচণ্ডী সময় ।
গ্রামের হাটে মেলা বসেছে । ফিবছর বসে এই পৌষ মেলা । সার্কাসের ড্রামস আর বাদ্য যন্ত্রগুলো শুনে তার মন উদাস হয়ে থাকে । কিন্তু সে অবধি যাওয়ার দুঃসাহস হয় না ।
তখন ক্লাস সিক্সে পড়ে নাহিদ । ডানপিটে গ্রুপের সে নিষ্ক্রিয় সদস্য । মাঝেমধ্যে অবশ্য অসক্রিয় থাকার উপায় থাকে না ।
একদিন সবাই মিলে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সার্কাস দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা । একটু দোনামোনা করে সেও সেদিন গিয়েছিল তাদের সাথে । দেখিস এবার মঞ্চে আসবে ময়না । তোকে বলেছিলাম না সুন্দরী ময়নার কথা ।
ময়না সার্কাস দলের খুদে নাচিয়ে । যার কথা বন্ধুদের কাছে শুনে শুনে উতলা হয়ে ছিল সে । সত্যি সত্যি বৃহন্নলা মেয়েটার নাচ আর ছলাকলায় অতলতায় ডুবতে থাকে নাহিদ ।
তারপর থেকে কোন অচিন প্রহেলিকায় বার বার ছুটে আসত সার্কাস পার্টির অস্থায়ী তাবূতে । পরে অবশ্যি একজন বড় ভাইয়ের তদবিরে একান্ত কথা বলারও সুযোগ হয়েছিল তার । কিন্তু সে কথাই ছিল শেষ কথা । আজ এত বছর পর কৈশোরের সেই বাঁধভাঙা আবেগ যেন ঝড় তুলে গেল নাহিদের মনের গহন গহীনে ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মেহেদি হাসান আবিদ ২৪/১১/২০১৯চমৎকার
-
নাসরীন আক্তার রুবি ২১/১১/২০১৯অনবদ্য
-
Tanju H ২১/১১/২০১৯অসাধারন
-
নুর হোসেন ১৭/১১/২০১৯ভাল লাগলো, ভাল থাকুন।
-
এস এম আলমগীর হোসেন ১৫/১১/২০১৯ভাল
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ১৪/১১/২০১৯চমৎকার
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৪/১১/২০১৯বেশ!
-
নাসরীন আক্তার রুবি ১৪/১১/২০১৯গল্প ভাল লেগেছে
-
আরজু নাসরিন পনি ১৪/১১/২০১৯বাহ! সুন্দর।