গল্প হলেও সত্যি - অভিজ্ঞতা
আজকে একটা বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা বলবো । তখন আমি রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলাম ফলে স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের সমস্যার সমাধানে এদিক সেদিক যেতেই হতো । সামাজিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা, রাজনৈতিক সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি । আজকে আমার পাড়ার, না ঠিক আমার পাড়ার নয়, পাশের পাড়ার একটা সমস্যা সমাধানে গিয়ে আমি যে কি বেসামাল অবস্থায় পরেছিলাম সে কথাটাই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো তবে বিষয়টার মধ্যে একটু প্রাপ্ত বয়স্কের ব্যপার আছে, কেউ খারাপ ভাবে নেবেন না কারন সম্পুর্ণ বাস্তবে ভরা এই কাহিনী ।
পাশের পাড়ার আমার প্রায় সমবয়সী খেটে খাওয়া সহজ সরল যুবক নীলোৎপল । মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা, নিজের জমি চাষ করে পাশাপাশি অন্যের জমিতেও মজুরি খাটে । অন্য কারোর সাতে-পাঁচে থাকে না সে । বাবা মা ভাই বোন সকলেই আছেন তবে বছর তিনেক আগে বিয়ে করে একটা ছেলের বাবা হয়েছে ; এখন এই বাড়িতেই পৃথকান্নে থাকে । স্ত্রীও সাদামাটা গোছের , গায়ের রং শ্যামলা হলেও গড়নে বেশ । মুখে সব সময় একটা হাসি লেগে থাকে, কথাও বলে খুব গুছিয়ে , সে কারনেই পাড়া প্রতিবেশী সকলের সঙ্গেই তার খুব ভাব । আমি আগে থেকে খুব বেশী জানতাম না । তার বিয়েতে নিমন্ত্রণ খেয়েছি এবং তার ছেলের অন্নপ্রাশনেও গিয়েছিলাম এটুকুই । রাজনীতির সঙ্গে যেহেতু যুক্ত , সর্বোপরি শাসক দল, তার উপরে আবার পঞ্চায়েত সদস্য না হলেও পঞ্চায়েতের অন্যান্য অনেক দায়িত্বে আছি বলে আমাকে সবাই চেনে জানে এটাই স্বাভাবিক । যাই হোক, এখানে আমার বিষয়ে আর ঢোল পেটানোর কোন দরকার নেই, আজকের আসল কথায় আসি । একদিন সকালে একজন অপরিচিতা মহিলা আমার বাড়িতে হাজির । অবাক হওয়ার কিছু নেই, অনেকেই আসে । কথায় কথায় আমাকে উনার পরিচয় দিলেন যে উনি আমাদের পাশের পাড়ার নীলোৎপলের শাশুড়ি এবং উনি আমার কাছে এসেছেন উনার মেয়ের ঘর সংসার সংক্রান্ত ঝামেলার কথা জানাতে । উনার কথাতেও বার বার উঠে আসছিল, নীলোৎপল খুব ভালো ছেলে, খুব একটা ঝগড়া ঝাটি করে না তবে তার স্ত্রী যেভাবে সকলের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলে এতে করে তার একটা সন্দেহ মনে মনে রাখে সে এবং আগেও এ নিয়ে দু-একবার ঝামেলা হয়েছে যেগুলো আত্মীয় স্বজনেরা নিজে নিজেই মিটমাট করেছে । কিন্তু এবারের ঝামেলা ধীরে ধীরে বাড়ছে এমনকি সংসার ভাঙ্গার উপক্রম হয়েছে, তাই ওয়ার্ড মেম্বারের পরামর্শে আমার কাছে এসেছে একটা সুষ্ঠ সমাধানের জন্য । এবার তাহলে সমস্যাটা কি সেটা খোলে যাক ।
সমস্যাটা হলো গত সপ্তাহে দোল পূর্ণিমা গেল, গ্রামে গঞ্জে যেভাবে রং খেলা হয়ে থাকে সেভাবেই রং খেলাখেলি হয়েছে কিন্তু শেষ রং খেলার দিনে নীলোৎপল স্ত্রীএর সঙ্গে মেলামেশা করতে গিয়ে গাঁয়ের এমন এমন জায়গায় রং দেখতে পেয়েছে যে তাতে তার সন্দেহ একেবারে মাথায় উঠে গেছে । যদিও তার স্ত্রী তার সঙ্গে আগেই গল্প করেছে , পাড়ার কে কে এসেছে, কে কে রং দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি । তবুও কোনও যুক্তিতেই নীলোৎপল তার স্ত্রী’কে সতী ভাবতে পারছে না এবং যেহেতু সে এই বিষয়টা নিজে চাক্ষুষ করে ফেলেছে তাই এই স্ত্রীকে নিয়ে আর ঘর করা সম্ভব না । কথাগুলো শোনে আমার কাছে বিষয়টা বেশ রহস্যের মনে হয়েছিল নিঃসন্দেহে । তাই আমি সভা-টবা না ডেকে আগে থেকে নিজে গিয়ে আরোও গভীর ভাবে সমস্যাটাকে অনুধাবন করার লক্ষ্যে সেই অপরিচিতা মহিলার সঙ্গেই ওদের বাড়িতে গেলাম । আমাকে যথোচিত সম্মান দিয়ে ঘরে বসালো নীলোৎপল । সব কথার সারার্থ বলতে গিয়ে নীলোৎপল সাদাসিধা কথায় আমাকে বলেই ফেললো,”দাদা কনছে, রং দিছে ভালা কথা, কেউ কি গোপনাঙ্গে রং দেয় ! গোপনাঙ্গে যখন রং তখন কি আর আমার বুজতে বাকি আছে যে তাইনের নাগর আইছিল ।” কথাটা শোনে কিন্তু আমিও বেশ অস্বস্ত্বিতেই পরেছিলাম বটে । এখানে যেমন নীলোৎপলের শশুরবাড়ির লোকজন ছিল তেমনি তার বাবা-মা , যদিও ছোটরা কেউ ছিল না তবুও আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না । তবুও কূল কিনারা করতে হবে তাই পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য যা কিছু বলতে হয় সে সব বলে নিয়ে তার স্ত্রীকে এই অভিযোগ খণ্ডনের জন্য ডেকে পাঠালাম । অতঃপর তার স্ত্রীয়ের মুখে এই রং এর বিষয়ে যা শোনলাম তাতে কিন্তু আমারও আক্কেল গুড়ুম অবস্থা , সেই সঙ্গে অনেকটা বোধোদয় হলো বৈকি। ঠিকই তো এমনও তো হতে পারে ! নীলোৎপলের স্ত্রীয়ের কথাগুলো ছিল এমন, “দাদা, আমি এই বেকুব মানুষ লইয়া সংসার করতাছি এইডা কেউ বিশ্বাস করত না, পাড়ার মধ্যে রং খেলার দিন দেওর-ননদ’রা রং তো দেয়ই, আমি যখন অসুস্থ না, তারারে কি না কইর্যাো পারমু ? সবাই একটু একটু রং দিয়া গেছে, আমার শশুর- শাশুরি তারাওতো বাড়িতেই আছিল, হে’র বইনেঅ কিন্তুক আমারে রং দিছে । আমি বিকালে স্নান করছি, সইন্ধ্যা বইয়া গেছেগা, বালা কইরা দেখছি না, মাথার মধ্যে মিনা রং দিছে, মাথাত জল দিছি সারা শরিলে বাইয়া বাইয়া পরছে, আমার বুকে ও গোপন অঙ্গেঅ বাইয়া বাইয়া গেছে, আলো নাই দিক্যা আমিও দেখছি না, পরিষ্কারও করতাম পারছি না, তাইনে আইয়া হেইডা দেইখ্যাই মাথা খারাপ কইরা লাইছে, আমি কিতা করতাম কনছে ?”এই অনন্য সমস্যার সমাধান করা কতটা কঠিন ছিল সেটা ভেবেই আমি যতটা না চিন্তিত হয়েছিলাম, সমাধানটা শোনে আশ্চর্যাম্বিত হয়েছি তার চাইতে অনেক বেশী । পৃথিবীর অনেক সমস্যা থাকে যেগুলোর যুক্তি দিয়ে বুজানো অনেক কঠিন হয়ে পরে কিন্তু আমি সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা ভুলবো না কোন দিন । সমস্যার সমাধান হয়েছিল, এখনো ওরা ভালো আছে কিন্তু ওদের দেখলে, ওদের সন্তানকে দেখলে সকলের অগোচরে আমার মনের মধ্যে সব সময় উঁকি দেয় এই বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা । আরেকটা কথা, নীলোৎপলের নামটা কিন্তু আসল নাম নয়, কাল্পনিক তবে গল্পটা শত শতাংশ সত্য ।
পাশের পাড়ার আমার প্রায় সমবয়সী খেটে খাওয়া সহজ সরল যুবক নীলোৎপল । মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা, নিজের জমি চাষ করে পাশাপাশি অন্যের জমিতেও মজুরি খাটে । অন্য কারোর সাতে-পাঁচে থাকে না সে । বাবা মা ভাই বোন সকলেই আছেন তবে বছর তিনেক আগে বিয়ে করে একটা ছেলের বাবা হয়েছে ; এখন এই বাড়িতেই পৃথকান্নে থাকে । স্ত্রীও সাদামাটা গোছের , গায়ের রং শ্যামলা হলেও গড়নে বেশ । মুখে সব সময় একটা হাসি লেগে থাকে, কথাও বলে খুব গুছিয়ে , সে কারনেই পাড়া প্রতিবেশী সকলের সঙ্গেই তার খুব ভাব । আমি আগে থেকে খুব বেশী জানতাম না । তার বিয়েতে নিমন্ত্রণ খেয়েছি এবং তার ছেলের অন্নপ্রাশনেও গিয়েছিলাম এটুকুই । রাজনীতির সঙ্গে যেহেতু যুক্ত , সর্বোপরি শাসক দল, তার উপরে আবার পঞ্চায়েত সদস্য না হলেও পঞ্চায়েতের অন্যান্য অনেক দায়িত্বে আছি বলে আমাকে সবাই চেনে জানে এটাই স্বাভাবিক । যাই হোক, এখানে আমার বিষয়ে আর ঢোল পেটানোর কোন দরকার নেই, আজকের আসল কথায় আসি । একদিন সকালে একজন অপরিচিতা মহিলা আমার বাড়িতে হাজির । অবাক হওয়ার কিছু নেই, অনেকেই আসে । কথায় কথায় আমাকে উনার পরিচয় দিলেন যে উনি আমাদের পাশের পাড়ার নীলোৎপলের শাশুড়ি এবং উনি আমার কাছে এসেছেন উনার মেয়ের ঘর সংসার সংক্রান্ত ঝামেলার কথা জানাতে । উনার কথাতেও বার বার উঠে আসছিল, নীলোৎপল খুব ভালো ছেলে, খুব একটা ঝগড়া ঝাটি করে না তবে তার স্ত্রী যেভাবে সকলের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলে এতে করে তার একটা সন্দেহ মনে মনে রাখে সে এবং আগেও এ নিয়ে দু-একবার ঝামেলা হয়েছে যেগুলো আত্মীয় স্বজনেরা নিজে নিজেই মিটমাট করেছে । কিন্তু এবারের ঝামেলা ধীরে ধীরে বাড়ছে এমনকি সংসার ভাঙ্গার উপক্রম হয়েছে, তাই ওয়ার্ড মেম্বারের পরামর্শে আমার কাছে এসেছে একটা সুষ্ঠ সমাধানের জন্য । এবার তাহলে সমস্যাটা কি সেটা খোলে যাক ।
সমস্যাটা হলো গত সপ্তাহে দোল পূর্ণিমা গেল, গ্রামে গঞ্জে যেভাবে রং খেলা হয়ে থাকে সেভাবেই রং খেলাখেলি হয়েছে কিন্তু শেষ রং খেলার দিনে নীলোৎপল স্ত্রীএর সঙ্গে মেলামেশা করতে গিয়ে গাঁয়ের এমন এমন জায়গায় রং দেখতে পেয়েছে যে তাতে তার সন্দেহ একেবারে মাথায় উঠে গেছে । যদিও তার স্ত্রী তার সঙ্গে আগেই গল্প করেছে , পাড়ার কে কে এসেছে, কে কে রং দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি । তবুও কোনও যুক্তিতেই নীলোৎপল তার স্ত্রী’কে সতী ভাবতে পারছে না এবং যেহেতু সে এই বিষয়টা নিজে চাক্ষুষ করে ফেলেছে তাই এই স্ত্রীকে নিয়ে আর ঘর করা সম্ভব না । কথাগুলো শোনে আমার কাছে বিষয়টা বেশ রহস্যের মনে হয়েছিল নিঃসন্দেহে । তাই আমি সভা-টবা না ডেকে আগে থেকে নিজে গিয়ে আরোও গভীর ভাবে সমস্যাটাকে অনুধাবন করার লক্ষ্যে সেই অপরিচিতা মহিলার সঙ্গেই ওদের বাড়িতে গেলাম । আমাকে যথোচিত সম্মান দিয়ে ঘরে বসালো নীলোৎপল । সব কথার সারার্থ বলতে গিয়ে নীলোৎপল সাদাসিধা কথায় আমাকে বলেই ফেললো,”দাদা কনছে, রং দিছে ভালা কথা, কেউ কি গোপনাঙ্গে রং দেয় ! গোপনাঙ্গে যখন রং তখন কি আর আমার বুজতে বাকি আছে যে তাইনের নাগর আইছিল ।” কথাটা শোনে কিন্তু আমিও বেশ অস্বস্ত্বিতেই পরেছিলাম বটে । এখানে যেমন নীলোৎপলের শশুরবাড়ির লোকজন ছিল তেমনি তার বাবা-মা , যদিও ছোটরা কেউ ছিল না তবুও আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না । তবুও কূল কিনারা করতে হবে তাই পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য যা কিছু বলতে হয় সে সব বলে নিয়ে তার স্ত্রীকে এই অভিযোগ খণ্ডনের জন্য ডেকে পাঠালাম । অতঃপর তার স্ত্রীয়ের মুখে এই রং এর বিষয়ে যা শোনলাম তাতে কিন্তু আমারও আক্কেল গুড়ুম অবস্থা , সেই সঙ্গে অনেকটা বোধোদয় হলো বৈকি। ঠিকই তো এমনও তো হতে পারে ! নীলোৎপলের স্ত্রীয়ের কথাগুলো ছিল এমন, “দাদা, আমি এই বেকুব মানুষ লইয়া সংসার করতাছি এইডা কেউ বিশ্বাস করত না, পাড়ার মধ্যে রং খেলার দিন দেওর-ননদ’রা রং তো দেয়ই, আমি যখন অসুস্থ না, তারারে কি না কইর্যাো পারমু ? সবাই একটু একটু রং দিয়া গেছে, আমার শশুর- শাশুরি তারাওতো বাড়িতেই আছিল, হে’র বইনেঅ কিন্তুক আমারে রং দিছে । আমি বিকালে স্নান করছি, সইন্ধ্যা বইয়া গেছেগা, বালা কইরা দেখছি না, মাথার মধ্যে মিনা রং দিছে, মাথাত জল দিছি সারা শরিলে বাইয়া বাইয়া পরছে, আমার বুকে ও গোপন অঙ্গেঅ বাইয়া বাইয়া গেছে, আলো নাই দিক্যা আমিও দেখছি না, পরিষ্কারও করতাম পারছি না, তাইনে আইয়া হেইডা দেইখ্যাই মাথা খারাপ কইরা লাইছে, আমি কিতা করতাম কনছে ?”এই অনন্য সমস্যার সমাধান করা কতটা কঠিন ছিল সেটা ভেবেই আমি যতটা না চিন্তিত হয়েছিলাম, সমাধানটা শোনে আশ্চর্যাম্বিত হয়েছি তার চাইতে অনেক বেশী । পৃথিবীর অনেক সমস্যা থাকে যেগুলোর যুক্তি দিয়ে বুজানো অনেক কঠিন হয়ে পরে কিন্তু আমি সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা ভুলবো না কোন দিন । সমস্যার সমাধান হয়েছিল, এখনো ওরা ভালো আছে কিন্তু ওদের দেখলে, ওদের সন্তানকে দেখলে সকলের অগোচরে আমার মনের মধ্যে সব সময় উঁকি দেয় এই বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা । আরেকটা কথা, নীলোৎপলের নামটা কিন্তু আসল নাম নয়, কাল্পনিক তবে গল্পটা শত শতাংশ সত্য ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কবীর হুমায়ূন ১৯/০১/২০২৫সন্দেহপ্রবণতা মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে। যেখানে ভালোবাসা বেশি, সেখানেই সন্দেহের আধিক্য দেখা যায়। লেখকের জ্ঞানদীপ্ত বিচার বিবেচনায় একটি পরিবার স্বাভাবিক জীবনযাপনে এসেছে, তাই লেখক বিচারকের প্রতি ভালোবাসা জানালাম।
-
মোঃ সোহেল মাহমুদ ১১/০১/২০২৫বেশ।
-
ফয়জুল মহী ০৫/০১/২০২৫সুনির্মাণে সমুজ্জ্বল লেখা